কবি পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল। প্রয়াত হলেন সম্প্রতি। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলা কবিতাকে বাংলা কবিতার দিকে ফিরিয়ে আনার কাজের তিনি ছিলেন অন্যতম প্রধান পথিকৃৎ। দৈবশক্তি ও গুহ্যবিদ্যার প্রতি কবির দুর্মর টানের সঙ্গে তাঁর সকল পাঠক পরিচিত। তেমনই আবার সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনে উদ্দীপ্ত তাঁর লেখনী নিরন্তর লিখে গিয়েছে ‘রাজনৈতিক’ কবিতা, জীবনের অন্তিম লগ্ন পর্যন্ত। আগামী দিনে পাঠকের উন্মোচনের জন্য বহুস্তরে তাঁর চিন্তাসূত্র সযত্নে রেখে গেছেন নিজের রচনার ভাঁজে-ভাঁজে। লিখছেন কবি গৌতম বসু। ... ...
হাথরস ঘটনার প্রতিবাদে পথে নেমেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। গোটা দেশ আজ অন্ধকারে ডুবে গেছে বলে হাতে টর্চ নিয়ে গোটা দেশে আলো জ্বালানোর বার্তা দেন তিনি। তাঁর কথায়, 'আমরা নাকি পুজো করতে দিই না, যোগীজি কেন দুর্গাপুজো করতে দিচ্ছেন না? মমতা দি মন্দির, মসজিদ, গীর্জা নিয়ে রাজনীতি করে না। সবাইকে নিয়ে চলি আমরা। ওয়ান নেশন, ওয়ান পলিটিক্যাল পার্টির দিকে এগোচ্ছে। রাষ্ট্রপতি শাসনের দিকে এগোচ্ছে দেশে। ... ...
কালিবাড়ির মোড় পেড়িয়ে বাড়ির রাস্তা ধরতেই আমার আবদার, দাদু রঙিন কাঠি লজেন্স নেবো। মোল্লা দাদুর দোকান থেকে আনারস আঁকা কাগজে মোড়ানো কাঠি লজেন্স হাতে নিয়ে দাদুকে পেছনে ফেলে আমি প্রায় দৌড়ে আমাদের তাঁতঘরের সামনে চলে আসি। ততক্ষণে প্রায় ফাঁকা আইনুল চাচার মোষের গাড়ি। দাদুকে রাস্তার কোণায় দেখা যেতেই আমি কাঠি লজেন্স মুখে পুড়ি, দাদু বস্তা আরোও আছে কিন্তু। আমি দাদুর হাত ধরে বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই বাড়ির উঠোনে মাষকলাই আর সরিষা গায়ে গা লাগিয়ে পড়ে আছে। আর বাটি ভরা মুড়ি, মুড়কি, গুড় নিয়ে আইনুল চাচা লাল বারান্দায় বসে আছে। ঠাকুমা গ্লাস ভরে চা এনে দিতেই আইনুল চাচার লাল দাঁতগুলো ঝিলিক দেয়, মা একটা পান দিয়েন। ... ...
মনে রেখো, এ এমন এক দেশ যেখানে বেশি মেধা দেখাতে যাওয়ার চেয়ে বিপজ্জনক আর কিছুই হতে পারে না। কেউ তোমাকে বুঝবে না। কেউ তোমার প্রতি সহানুভূতি দেখাবে না। সবাই মিলে তোমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। তোমাকে পিষে দলে ছিবড়া করে দিতে চাইবে। তোমার এমন হাল করবে যে, তোমার নিজের প্রতিই আর কোনো আস্থা থাকবে না। পাগল বা ভিখিরি হয়ে তোমাকে গোটা জীবন কাটাতে হবে। এখানে কম মেধা নিয়ে জন্মানো আশীর্বাদের মতোই... অচ্যুৎ লম্বা হয়ে শুয়ে বাবার পায়ে কপাল ঠেকিয়ে প্রণাম করল। ... ...
সকালের আলোয় নন্দাদেবী, ত্রিশূল অন্নপূর্ণা লালে লাল হয়ে বলে ওঠে, আজ যে হোলি। আমি অমনি শুনতে পাই পাহাড়ে ঢোলের আওয়াজ। দূর থেকে ভেসে আসছে। আজ তেওহার। এখানে বাড়ি বাড়ি ঘুরে সবাই রং মাখায়। সবাই একজায়গায় জড়ো হয়ে একে অন্যকে রং লাগিয়ে দিচ্ছে। কেউ তোমাকে জোর করে রং দেবে না। হাতে হাতে মিঠাই, আঙুর। মিঠাই-এর কথায় মনে হল, আজ হোলি। ঘরে কিছু মিছু আনিয়ে রাখা দরকার। অবিশ্যি কেই বা আসবে আমার বাড়ি। কিন্তু আয়োজনটি যে সম্পূর্ণ হওয়া চাই। যদি আমায় পড়ে তাহার মনে …। ভালো মিষ্টি কিনতে হলে আলমোড়া যেতে হবে। এই জায়গাটা তো একেবারেই গ্রাম। আলমোড়া বাজারে খিম সিং মোহন সিং রোউতালার দোকান থেকে বালমেঠাই, চকোলেট আর সিঙ্গোরি কিনে আনতে হবে। সিঙ্গোরি ভারী মজার। ... ...
হাওড়ায় এক নতুন জগতের মধ্যে এসে পড়লো যদুগোপাল। এতদিন পর্যন্ত সারিখোল গ্রাম আর নবদ্বীপের বাইরের জগৎ সম্বন্ধে কোন ধারণাই ছিলো না তার, এই তার প্রথম নাগরিক জীবন। শশধর বেদান্তবাগীশের বাড়িটি পাকা, চওড়া রাস্তার উপর ত্রিতল ইমারত। বাড়ির নীচের তলার সামনের অংশে, একেবারে রাস্তার উপর তাঁর দু কামরার চতুষ্পাঠী বা টোল। সাইনবোর্ডে লেখা শশধর শাস্ত্রীয় সংস্কৃত শিক্ষালয়। ঘর দুটোয় দুটো করে দরজা, কোনাকুনি। একটার সামনে দাঁড়ালে অন্যটা পেরিয়ে চোখ যায় না। একটা রাস্তার সঙ্গে সংযোগ করে, অন্যটা অন্দরের সঙ্গে। সেই দরজা পেরিয়ে অন্দরে ঢুকলে দেখা যাবে আরও তিনটে ঘর, সামনে টানা বারান্দা। বারান্দার সামনে উঠোন, পেরিয়ে রান্নাঘর। এই ঘর তিনটের একটা ব্যবহার করা হয় টোলের আবাসিক ছাত্রদের বাসস্থান হিসেবে, টানা চৌকিতে যেখানে শুতে পারে পাঁচ-ছ জন ছাত্র। বাকি ঘর দুটোর মধ্যে একটার ব্যবহার ভাঁড়ার ঘর হিসেবে, যে ভাঁড়ার উল্টো দিকের রান্নাঘরে ব্যবহৃত হয়। ... ...
২০১৭ সালের ঐ রায় কিন্তু মাইনিং কোম্পানিগুলিকে সতর্ক করে দিয়েছিল। ওই বিপুল ক্ষতিপূরণ উঠে এসেছিল কেবল উড়িষ্যার তিনটে জেলা থেকে, তাও শুধুমাত্র লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ আকরিক বেআইনি ভাবে নিষ্কাশনের জন্য। অন্য রাজ্যে অন্য আকরিকের জন্য এই হারে ক্ষতিপূরণ ধার্য হলে সরকারি কোষাগারে কত টাকা জমা পড়ত? এই রায় দেখিয়ে যারা ক্রমাগত বে আইনি খননে ব্যস্ত, তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা যেত না? কিন্তু গেরুয়া ভারতে তা না করে অবাধ লুন্ঠনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে। আর তা করা হচ্ছে ভীষণ তাড়াহুড়ো করে। যেন এই অতিমারির পর্দা সরে যাবার আগেই ঘোলা জলে মাছ ধরে ফেলতেই হবে। ... ...
আমি কিন্তু বড়ো পত্রিকায় লেখার পক্ষে বিপক্ষে সওয়াল করছিনা। যে সব গুরুত্বপূর্ণ বই প্রতিষ্ঠানের আলো পাইনি, সেই বই যদি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশিত হতো তবে তা খারাপ হয়ে যেত না। অন্য দিকে প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশিত (যদিও খুব কম, বাংলা ভাষায় তো বটেই) বইমাত্রই পড়া যায় না এমনটিও নয়। প্রতিষ্ঠানে সমস্ত লেখকদের লেখার গণতন্ত্র ফিরে আসুক এমন অদ্ভত দাবিও আমি করছিনা। আমি বলছি একটা প্রতিরোধ ব্যবস্থার কথা যা একটি ছোট পত্রিকার লেখকরাই ঠিক করবেন। খারাপ লাগে, যখন রানাঘাটের একটি পত্রিকা, বীরভূমের একটি পত্রিকা কলকাতার চেনা লেখকগোষ্ঠী নিয়েই আত্মপ্রকাশ করে। ... ...
"আমি উচ্চারণ করছি না হর্ষ আমি উচ্চারণ করছি না বিষাদ শুধু ধীর ও অনিবার্য হাতে তোমার বিসদৃশ মাথা ছিঁড়ে ফেলছি" ... ...
যে চোখ সব কিছু দেখে, সে কিন্তু নিজেকে দেখতে পায় না, তাই চোখে পোকা পড়লে আমরা পাশের লোকটাকে বলি দেখতে। ডাক্তার সবার অপারেশন করে, তার পেটে ব্যামো হলে? জোনাকির নিজের বুকে আলো, তবু সে ধেয়ে আসে আলোর উৎসের দিকে। এ উদাহরণ অন্তহীন। জ্ঞানী লোকেরা হলে উদাহরণ দিয়েই বুঝিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু আপনি পড়েছেন আমার পাল্লায়। অত জ্ঞানী হলে আজ আমি প্রফেসর হতুম। সে যাক গে। ... ...
এর মধ্যে লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেছেন এনকাউন্টার চই। 'দোষীদের রাস্তার মাঝখানে সবার সামনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে দেওয়া উচিত।' লকেট বলেছেন যখন, খুবই যুক্তিযুক্ত কথা। কিন্তু কাকে মারা হবে খুব পরিষ্কার নয়। প্রসঙ্গত যোগী প্রশাসনের ময়নাতদন্তের রিপোর্টের কোথাও ধর্ষণের উল্লেখ নেই। বলা হয়, মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যাওয়ার কারণেই তীব্র শ্বাকষ্টের সমস্যা তৈরি হয়েছিল। দু'টি পা এবং হাত অসাড় হয়ে যায়। জিভের একাংশে যে গভীর কামড়ের ক্ষত ছিল, তা-ও ময়নাতদন্তের রিপোর্টে আছে। নেই শুধু ধর্ষণের উল্লেখ ... ...
১৯৭০-এর গোড়া। বাঁকুড়ার ছোট্ট মফস্সল শহর বিষ্ণুপুর থেকে বেরিয়ে পড়লেন তিন তরুণ। দুনিয়া ঘুরে দেখতে হবে। সাইকেলে। ইন্টারনেট নেই। জিপিএস নেই। গুগ্ল ম্যাপ নেই। অর্থবল নেই। মাতৃভাষা বাংলা বই দুটি ভাষা জানা নেই। সম্বল স্রেফ স্বপ্ন। আর জেদ। হাল ছাড়লেন দুজন। ঘুরতে থাকল তৃতীয়জনের সাইকেলের চাকা। ১৭ বছর। ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলোমিটার। ১৫৪ টি দেশ। আজও এ কীর্তিতে তিনি অদ্বিতীয়। এই প্রথম দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে সে পরমাশ্চর্য সফরের অনুপুঙ্খ কাহিনি শোনাচ্ছেন জয় মণ্ডল। এ পর্বে চম্বলের ডাকাতের খপ্পর ও ইন্দিরা গান্ধির সঙ্গে সাক্ষাৎ। আলাপে নীলাঞ্জন হাজরা। ... ...
বাংলা লিখিত সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদের যুগ থেকে কোম্পানি-রাজের পত্তন পর্যন্ত রচিত নানা বাংলাগাথা চর্ব্যচোষ্যলেহ্যপেয়র রঙিন বিবরণে ভরপুর। উঠে আসে বাঙালির রসনা-সংস্কৃতির বিবর্তনের ছবি। এ কিস্তিতে নিরামিষ ভূরিভোজ। লিখছেন ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়। ... ...
ডেভিড লিভিংস্টোন। আফ্রিকায় বেপাত্তা। কিংবদন্তি মানুষটির খোঁজে আফ্রিকা পৌঁছেছেন মার্কিন সাংবাদিক হেনরি মর্টন স্ট্যানলে। জাঞ্জিবার থেকে শুরু হবে আফ্রিকার গভীরে অভিযান। আপাতত তিনি সেই শহরে। তারপর? স্ট্যানলের সেই বিখ্যাত সফরনামা ‘হাও আই ফাউন্ড লিভিংস্টোন’। শুধু সফরের অ্যাডভেঞ্চারই নয়, শ্বেতাঙ্গ উপনিবেশ-বিস্তার এবং একজন অবনেদি নীচুতলা থেকে উঠে আসা শ্বেতাঙ্গের চোখে ঊনবিংশ শতকের অফ্রিকা এবং সেখানে উপস্থিত ঔপনিবেশিক শাসনকর্তাদের জীবনের এক অমূল্য দলিল। এই প্রথম বাংলায়। তরজমায় স্বাতী রায়। ... ...
ধন্য খিচুড়ি। চাল-ডালের কিংবা বাজরার, নাকি তিলের? নিরামিষ বা আমিষ, হিন্দু নৈবেদ্য, জৈন মহাপণ্ডিতের শাস্ত্র, বৌদ্ধ মঠের অনুশাসন, মুসলমান বাদশাহি মহল-ই-খুরাক পাজ়ি, চিকিৎসকের ভেষজালয়, অকিঞ্চনের হেঁশেল, ভোজের একান্ন পাত—সর্বত্র বিরাজমান এ পাকোয়ানে কী বিপুল বৈচিত্র্যে আমরা ভারতবাসীরা যুগে যুগে একাত্ম হলাম! সে এক মহারহস্য বটে… কম রঙিন নয় কালাপানি পার করে তার বিলেত মায় মিশর পাড়ির কিস্সা। শুরু হল খিচুড়ি মহারহস্য অ্যাডভেঞ্চার। নীলাঞ্জন হাজরা। ... ...
এ কদিন তুমি আসোনি কেন গো?অসুখবিসুখ করেছিল নাকি? সে বলল - না রে বাপ,ছেলেটা মরে গেল। এই কথাকটি বলে জল থাবড়াতে থাবড়াতে সে চিৎকার করে বাটা মাছ,কাৎলা মাছ,পাঙাশ,সিলভার কাপ বলে খদ্দের ডাকতে লাগল। নোয়াপাড়া থেকে আসা আমার প্রতিদিনের দেখা মা, শোককে জলে ডুবিয়ে মাছ বেচতে এসেছে। নাহলে পেটের খাবার জুটবে না।খিদের কাছে ম্লান হওয়া শোক আমার চেতনার ধুড়ধুড়ি নেড়ে দিয়েছে। ... ...
এই তথ্যগুলোর বিচারে বলা যায়, নীতি আয়োগের কৃষি, কৃষক ও কৃষিপণ্য মূল্য নিয়ে যে ধারণা তা অত্যন্ত মায়োপিক। আমাদের কৃষির সমস্যা সমাধানের জন্য নয়, শুধুমাত্র কৃষিপণ্য বাজারে কিছু অ্যাগ্রিগেটরকে জায়গা করে দেওয়ার জন্য এই আইন করা হয়েছে। নতুন আইন কোনো সমাধানই নয়। তেমনি এখনই এর জন্য কৃষকের ভয়ানক সর্বনাশ হয়ে যাবে এমনও নয়। আবার ফড়ে বলে যে সম্প্রদায়কে চিহ্নিত করা হচ্ছে, তারা ভয়ানক অপরাধ করে যাচ্ছে তাও নয়। এটা ঠিক মধ্যস্বত্বভোগী বা ফড়েরা ভোক্তা যে মূল্য পণ্যের জন্য দেয় তার ১০-৭০% বিভিন্ন পণ্যের জন্য পেয়ে থাকে। কিন্তু এই ব্যবস্থা একটি অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে জন্ম নিয়েছে। অর্থনীতিতে কিছু ভূমিকা এরা পালন করেছে, তা নানা কারণে কৃষকের পক্ষে যায়নি। যতক্ষণ না সেই প্রক্রিয়ার পরিবর্তন হয় মধ্যস্বত্বভোগী থাকবেই, তা সে ধুতি পরা গ্রাম্য হোক আর কর্পোরেট সংস্থাই হোক। এই মুহূর্তে কর্পোরেট সংস্থার মাধ্যমে কৃষিপণ্যের বাজারজাত করা শুরু হলে খুব দ্রুত হওয়ার সম্ভাবনা নেই, পণ্যসংগ্রহের জন্য কর্পোরেটকে সেই ফড়েদের ওপরেই নির্ভর করতে হবে। নীতি আয়োগের আলোচনায় আরও যা লক্ষ করা হয়নি তা হল অকৃষি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ। ভারতের অর্থনীতির যা চেহারা তাতে একে লুম্পেন অর্থনীতি আখ্যা দেওয়াই যায়। কৃষিতে অবাঞ্ছিত শ্রমিক বা এরপর উপার্জন হারানো ফড়ে (ধরে নিলাম হবে) কোথায় যাবে? গ্রামে শুধু নয়, আমাদের শহরেও লুকোনো রয়েছে বেকারত্ব। এসব দেখেও না দেখার ভান করা কৃষিনীতি ও তার ওপর ওপর বিরোধিতা আসলে নিজেদের সামগ্রিক ব্যর্থতা ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা, সরকারের এবং বিরোধী পক্ষের। ... ...
যতবার আপনি নিজের ধারণার পক্ষে আওয়াজ তোলেন, ততবারই আসলে আপনি তথ্য সরবরাহ করেন বিপক্ষের প্রচারের হাতে। আপনি নিজেকে চিনিয়ে দেন। বিপক্ষ আপনাকে প্রচারের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেয়। আপনি নিজের জগত তৈরি করে তাতে বসবাস করতে থাকেন, বিদ্রোহ, বিপ্লব করতে থাকেন। আপনার বন্ধুবৃত্তের ছোট্টো বৃত্ত তাতে আপনাকে প্রশংসায় ভরিয়ে দেয়। বিপক্ষ এসবে হস্তক্ষেপ অবধি করেনা। বরং তাদের প্রচার আরও নিখুঁত হয়ে ওঠে। আপনি আপনার বৃত্তে বন্দী হয়ে থাকেন, আপনার এলাকার সম্পূর্ন বাইরে বিপক্ষের প্রচার চলতে থাকে, চুপচাপ। আপনি জানতেও পারেননা। এর জন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য একমাত্র আপনার। কারণ আপনি জেনেবুঝেই সমস্ত তথ্য তুলে দিয়েছেন ওই সর্বগ্রাসী ব্যবস্থার হাতে ... ...
কয়েকটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচিত হয়নি, ধরা যাক, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা কোভিডের মতো কোনো আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিত বিপদের সময় কীভাবে শিক্ষাব্যবস্থাকে বহাল রাখা যাবে? বন্যা অথবা ঝড় হলে (একটি শহর যেভাবে মোকাবিলা করবে একটি প্র্যত্যন্ত গ্রাম সেভাবে বাস্তবিকভাবেই পারবে না, কোনো দুর্গম অঞ্চলে অবস্থা আরও শোচনীয়) বা এজাতীয় কোনো অস্বাভাবিক ও কঠিন সময়ে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলির কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত? জুলাই মাসে যখন এই নীতিটি প্রকাশ করা হচ্ছে, তখন কোভিডের সর্বাধিক সীমা ছোঁওয়ার একটা পূর্বাভাষ পাওয়া যাচ্ছে, মাসের পর মাস যেখানে স্কুল বন্ধ, তখন শিক্ষাব্যবস্থায় কী বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণ করা দরকার, এমতাবস্থায় শিক্ষকরা কীভাবে পড়াবেন এরকম কোনো প্রসঙ্গ উত্থাপন করা হয়নি। অনলাইন এবং অফলাইন লার্নিং-এর কী পদ্ধতি এরকম পরিস্থিতিতে কেমনভাবে ব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠতে পারে তার কোনো উল্লেখ নেই। ইন্টারনেট না থাকলে শিক্ষা কীভবে বহাল থাকবে? এরকম কোনো বিষয়ই উঠে আসেনি। এই প্রসঙ্গে বলি, আমি আপ্লুত, যে কোভিডের এই আস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গে কিছু নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক আজ সফল। এই কঠিন সময়ে, কোনো সাহায্য ব্যতীত, নিজস্ব উদ্যোগে নতুন শিক্ষণকৌশল উদ্ভাবন করে শিশুদের কাছে পৌঁছোতে পেরেছেন। ... ...
ঋতুপর্ণ ঘোষ বললেন যে “আমি আগুনের মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে এসেছি— যা পোড়বার তা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, যা বাকি আছে তার আর মরণ নেই।”— এই লাইনটি 'ঘরে বাইরে' উপন্যাসে নেই। সত্যজিৎ রায়ের নিজের রচনা। তিনি উপন্যাসে কোথাও খুঁজে পাননি। ঋতুপর্ণ ঘোষের নিজের কথায়— "আমি যখন ছবিটা দেখি, আমি ভীষণ অবাক হয়ে গিয়েছিলাম যে এতো ইম্পর্ট্যান্ট একটা লাইন আমি মিস্ করে গেছি! আমি পাইনি! আমি আবার 'ঘরে বাইরে' পড়তে লাগলাম, দেখলাম লাইনটা নেই। তখন আমি বুঝলাম লাইনটা সত্যজিৎ রায়ের বানানো।… ওই জায়গাটা খাঁটি রাবীন্দ্রিক মনে হয়।" কিন্তু এই লাইন দু'টি পাওয়া যাবে 'ঘরে বাইরে' উপন্যাসে বিমলার শেষ আত্মকথায়। এটি উপন্যাসেরও শেষ আত্মকথা। 'ঘরে বাইরে' উপন্যাস মোট আঠারোটি আত্মকথার সমাহার। আত্মকথাগুলি হচ্ছে বিমলা, নিখিলেশ আর সন্দীপের। এর মধ্যে সাতটি আত্মকথা বিমলার। উপন্যাস শুরু হয় বিমলার আত্মকথা দিয়ে আবার শেষও। মজার কথা কেবলমাত্র ওই দু'টি লাইনই উপন্যাসে আছে বাকিটা সত্যজিৎ রায়ের বানানো। ভয়েস-ওভারে সত্যজিৎ রায়ের নিজস্ব সংযোজনটুকু হল— ... ...