ডেভিড লিভিংস্টোন। আফ্রিকায় বেপাত্তা। কিংবদন্তি মানুষটির খোঁজে আফ্রিকা পৌঁছেছেন মার্কিন সাংবাদিক হেনরি মর্টন স্ট্যানলে। জাঞ্জিবার থেকে শুরু হবে আফ্রিকার গভীরে অভিযান। প্রস্তুতি প্রায় শেষ। বেরোনোর আগে সুলতানের শুভেচ্ছা নেওয়ার পালা। স্ট্যানলের সেই বিখ্যাত সফরনামা ‘হাও আই ফাউন্ড লিভিংস্টোন’। এই প্রথম বাংলায়। তরজমায় স্বাতী রায় ... ...
বাংলা লিখিত সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদের যুগ থেকে কোম্পানি-রাজের পত্তন পর্যন্ত রচিত নানা বাংলা গাথা চর্ব্যচোষ্যলেহ্যপেয়র রঙিন বিবরণে ভরপুর। উঠে আসে বাঙালির রসনা-সংস্কৃতির বিবর্তনের ছবি। এই শেষ কিস্তিতে রইল বাঙালির ‘টিফিন’ আর শেষপাতে ‘অম্বল’ ও পিঠে-পায়েস-মেঠাইয়ের মেলা। লিখছেন ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় ... ...
চলছে খিচুড়ি মহারহস্য অ্যাডভেঞ্চার। আগের কিস্তিতে দেখেছিলাম খাঁটি ভারতীয় খিচুড়িতে কীভাবে এসে ভিড়েছিল ‘শোলে’, খিচুড়ির আফগানি চলন। এ কিস্তিতে আমরা এই শোলে-ধারার খোঁজে আফগানিস্তান পার করে পৌঁছে যাব ইরানে! নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
"ঘরে চল, এইখানেই দাঁড়ায়ে থাকবি নাকি ছেমড়ি?" হানিফার ডাকে হুঁশ ফেরে সাকিনার। ব্যাগটা তুলে হানিফার পিছন পিছন ভিতরে ঢোকে সে। ঘরের ভিতরটা কিছুটা বদলেছে বটে। উঠোনের ওপারে আগে কাঁটাগাছের বেড়া ছিল, মাঝে মাঝে ফাঁকা। ওখানটায় একটা ঘর উঠেছে। পাকঘরটা ছিল ডান দিকে, বাম দিকে খালপাড়ে খাটা পায়খানা। এখন ওখানে পাকা পায়খানা হয়েছে, রাস্তাটায় একটু সিমেন্ট দেওয়া। রান্না হচ্ছে এদিকের বারান্দার এক কোনে, সেখানে দুটি বউ কাজ করছে। সম্ভবতঃ জলিল আর খলিলের বিবি ওরা। ওদের আসতে দেখে একটু অবাক হয় দুজনেই। তাদের কাছে ডাকে হানিফা, "এই দেখ ছেমড়িরা, আমার একখান মাইয়া আছে কইছিলাম না? এই হইল সাকিনা বানু - আমার সই জারিনার মাইয়া। কিন্তু আসলে আমারই। ছালাম কর" ... ...
আমার প্রজন্ম নতুন করে দেশভাগ-মন্বন্তর-মহামারী দেখছে। নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হচ্ছে আবার স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময়ের পর। আমার ঘরে এসে আমাকেই ভাড়াটে বানাতে যায় আগন্তুক! বাংলাদেশের বরিশালের বাসিন্দা ছিলেন আমার দাদামশাই। মুকুন্দ দাসের দলে গান করতেন। ব্রিটিশ বিরোধী গান করে জেলে গেছেন। এপারে এসে দক্ষিণ কলকাতার এই কলোনির বাসিন্দা হন তিনি। এই উদ্বাস্তু কলোনি তখন দিকে-দিকে ছড়িয়ে পড়ছে। ঋত্বিক ঘটকের ছবিতে আমরা দেখেছি আজাদগড় কলোনি। ঋত্বিক ছাড়াও বিজন-দেবব্রত-জ্যোতিরিন্দ্র-সলিলদের কাজে বারবার ধরা দিয়েছে এই যন্ত্রণা। ... ...
আপনি যদি বিশালকায় হোল্ড -অল আর স্যুটকেস নিয়ে নেমেছেন তো লালজামা লালগামছা কুলিদের শরণাপন্ন হতেই হবে। আজকের নীল বা সবুজ জামা কোথায়? হারিয়ে যাবার ভয় নেই , সবার হাতে তাবিজের মত করে বাঁধা পেল্লায় এক একটি পেতলের চাকতি, তাতে নম্বর লেখা। ওটা মনে রাখলেই হবে। ট্যাক্সির প্রি-পেড বুথ বা স্ট্যান্ড কিস্যু নেই। মিটারে যায়, শেয়ারে যায় । কখনও সামান্য দরাদরি। দুই থেকে পাঁচটাকায় হাওড়া থেকে পার্কসার্কাস। ... ...
ধরা যাক, সন্ধের কালবৈশাখীর পর ঝিরঝিরে বৃষ্টিটাও থেমে গিয়েছে। এখন শুধু ক্লান্ত পাতাগুলো থেকে টিপটিপ করে জলের ফোঁটা পড়ছে। বাগান ছন্নছাড়া। ভেঙে পড়া পাখির বাসায় ইঁদুরেরা হামলা চালিয়েছে। আর ঠিক এসবের মধ্যিখানে, একটি মা মরা ছেলে, ঘুম থেকে উঠে দেখছে, তার বাবা ও মা কোনো একটি গাছের মগডালে নবদম্পতির সাজে পা ঝুলিয়ে বসেছে। খুনসুটি করছে। সরষে রঙের আলো এসে পড়েছে তাদের শরীরে। তারা রস ও রতিতে বিভোর। এতই বিভোর যে তাদের ক্রিয়া মসলিনের মতো গাছের ডালপালায় বিঁধে গিয়ে বারবার ছিঁড়ে ছিঁড়ে যাচ্ছে। তবু সন্তানের দিকে তাদের খেয়াল নেই। ... ...
বাপে আমার মন বুঝত মানুষের। আকবর প্রায়ই বাপের কাছ থেইকা পাখি কিনে। মনে মনে কিনে। বাপে বলে, আকবরের কাছে ম্যালা পাখি হইছে। অর বুকের ভিতর পাখিগুলা ফড়ফড়ায়.. সক্কালবেলা দ্যাশের পাখি জাগার আগে অর বুকের পাখি কিচিরমিচির করে। আমি বাপের কথা ধুন ধইরা শুনি। এমন আশ্চর্য কথা শুধু আমার বাপেই কইতে পারে। পাড়ার খালায় বলে, তোর বাপের মাথায় ছিট আছে। তুইও কি ওই রকম ছিটাহি হইবি? খাওন দাওনের ঠিক নাই। বয়স হইতাছে কত খিয়াল আছে? তর ফ্রকে যে উড়না দেওন লাগে সেই চোখও নাই কি তর বাপের? ... ...
জায়গার নাম চক ইসলামপুর। বহরমপুর থেকে কিলোমিটার পঁচিশেক দূরে শহুরে ভাষায় এক হদ্দ মুদ্দের 'গণ্ডগ্রাম'। সেই গ্রাম, যা নবাব থেকে হালের আমল পর্যন্ত সকলেবরে অক্ষত 'মুর্শিদাবাদ সিল্ক' এর প্ৰথম প্রাণকেন্দ্র; খাদি এবং রেশম যেখানে হাত ধরাধরি করে বাঁচে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে যা কিছু রোশনাই, নহবত ছিল, ১৯২৯ এর বিশ্বজুড়ে মন্দার গ্রাসে সেসব ভয়াবহ ধাক্কা খায় । সেসময় গ্রামের ললিতমোহন সাহা, তৎকালীন বোম্বে প্রদেশের অল ইন্ডিয়া স্পিনার্স অ্যাসোশিয়েশন ও খাদি ভান্ডারের প্রতিষ্ঠাতা-কর্তা এবং স্বয়ং গান্ধীর খাদি দ্রব্যাদির বাণিজ্যিকরণের দায়িত্বে থাকা শ্রী জেরাজিনিজির সাথে যোগাযোগ করে রেশমশিল্পকে খাদির সাথে বিবেচনা করবার জন্য বারবার বোঝাতে থাকেন। ভারত জুড়ে অসহযোগ আন্দোলনের সৌজন্যে গ্রামীণ শিল্পের কদর তখন তুঙ্গে। ললিতমোহন বাবু দূরদর্শী। তিনি আন্দাজ করেন, গ্রামের মানুষের নিজের হাতে তৈরি রেশম শিল্পও যে খাদির সমতুল্য "খাঁটি ভারতীয়"; এটা গান্ধী-জেরানিজিদের একবার বোঝাতে পারলেই মুখ থুবড়ানো সিল্ক-ইন্ডাস্ট্রি শ্মশানের আগেই কল্কে পাবে। ... ...
"দরজার উল্টোপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ওর নাম ধরে ওরা ডাকছিল। “দরজা খুলে দে আমাদেরর না হলে ওটা ভেঙে ফেলব আমরা”। সে দরজা খুলেছিল। অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অনেক লোকজন ঘরে ঢুকে পড়েছিল। ওদের মাথা ঢাকা। বাচ্চারা ভয়ে জেগে উঠতেই চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করেছিল। রোসা বাচ্চাকে এক হাতে নিয়েছিল আর মেয়েটাকে দু পায়ের ফাঁকে। যে লোকটা আলো জ্বালিয়েছিল তার পরনে অন্যদের মতই কালো পোশাক। বুট জুতো পরা। কারো কারো মুখে লাল রঙের রুমাল বাঁধা আর কালো টুপি দিয়ে মুখ ঢাকা। " ... ...
দেড়শো বছরের পুরোনো অশথ তলা এসে গেল। পুরোহিত মশাই-- সইত্য পুরোইত -- এসে গুছিয়ে নিয়েছেন। এবার পূজো শুরু। বেশ ঘটাপটা করে মন্ত্র ফলমূলের নৈবিদ্য দিয়ে সময়সাপেক্ষ পূজো। প্রতিবারই কেউ না কেউ সংক্ষেপ করার আবেদন জানায় এবং " সইত্য ঠাকুর " সেটি মঞ্জুরও করেন। ছেলেদের কপালে হলুদ ছুঁইয়ে, হলুদ রঙের ষাট সুতো তাদের হাতে বেঁধে দেন। মেয়েদের বাঁহাতে তাগা বাঁধা হয়। উলু আর শাঁখ ঘনঘন বেজে ওঠে। এবার শুরু হবে ব্রতকথা। ... ...
খুব বেশিদিন নয়, মাত্র অর্ধশতক আগের কথা এসব। কোন্ বিত্তে এই ফুলের শিশুদের অবস্থান তা বোঝার বয়স তাদের ছিলনা। তাদের পাপড়ি মেলে জীবনের দিকে প্রথমবার চোখ তুলে তাকানোর সেই মধুর কালপর্বে মুখে মুখে ছড়ার অবাধ গতায়াত ছিল। যে বাংলা ছড়ায় তাদের বর্ণপরিচয়ের হাতেখড়ি সেই অ-এ অজগর সত্যিই তেড়ে আসে কিনা বা আ-এ আমটি পেড়ে খাওয়া কতটা সহজলভ্য তা তাদের কল্পনা শক্তিকে উস্কে দিতে যথেষ্ট ছিল। যে কল্পনায় রং তুলির কাজটা অনায়াসে করে দিত তাদের ঠোঁটের ফাঁক আলগা হয়ে বেরোনো মরমী বাংলা ছড়া। বা, বাস্তবের হাটের যে অতুলনীয় রূপকল্প যেমন, উচ্ছে বেগুন পটল মুলো/ বেতের বোনা ধামা কুলো/ সর্ষে ছোলা ময়দা আটা / শীতের রাপার নক্শা কাটা.., তা কি সংসার যাপন সম্পর্কে শিশু হৃদয়ে এক আবিলতা এনে দেয় না ? জীবনের সহজিয়াকে বুঝতে কোমল হৃদয়কে কি ছড়ার এই ছবি যথেষ্ট উৎসাহ দেয় না ? যে ছড়াতে পল্লীবাংলার ঋতুবদলের ছবি শিশুমনকে প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে আসে তা তো স্মৃতিতে অমর হয়ে থাকার কথা। আমরা কি কোনো দিন ভুলে যাবো- আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে/ বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে..। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ জড়িয়ে আছে যার পরতে পরতে। চিক্ চিক্ করে বালি, কোথা নাই কাদা,/ একধারে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা। অথবা, আষাঢ়ে বাদল নামে, নদী ভর ভর/ মাতিয়া ছুটিয়া চলে ধারা খরতর। এ তো গেল রবীন্দ্রনাথ জানার সহজপাঠ। বাংলার শিশু সমাজ যাঁকে এক কথায় হৃদয়ে জায়গা করে দিয়েছিল। কে যেন ততক্ষণে আমাদের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে অন্য কাড়ানাকাড়া। রিন্ রিন্ করে বেজে চলেছে সুকুমারের আবোল তাবোল। ... ...
ছড়া মূলত গ্রাম্য সাহিত্য, মানুষ তাদের বাচিক ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ছন্দোবদ্ধ ভাবে কথা বা মনের ভাব প্রকাশ করে এই ছড়ার মাধ্যমে। আবার এই ছড়াগুলি পরম্পরায় প্রচলিত ও প্রচারিত। আঞ্চলিক প্রভাবের কারণে এইসব ছড়ার পাঠভেদও দেখা যায়। আশ্চর্যের বিষয় এই যে এইসব ছড়া গুলি কে, কবে রচনা করলেন তা কেও জানে না, কিন্তু সমাজে এগুলি চিরকাল ধরে প্রচলিত। ব্যক্তিক সৃষ্টির এরকম সার্বিক স্বীকৃতি খুবই বিরল। এই ছড়ার রূপরেখা দেখলে বোঝা যায় প্রায় সব এলাকাতেই ছড়া মূলত দু’রকম- ছেলে ভুলানো ছড়া ও সর্বজনীন ছড়া। এখানে আমাদের আলোচ্য বিষয় ছেলে ভুলানো ছড়া, আরও নির্দিষ্ট করে বললে বলতে হয় পুরুলিয়াতে প্রচলিত ছেলে ভুলানো ছড়া। ... ...
সে এক ঝলমলে দিন ছিলো গ্রীষ্মকালে। বাকেট্লিস্টের একটা বাক্সে টিকচিহ্ন দেবার জন্য আমি সাঁতার কাটতে গেছিলাম । গ্রেট লেকগুলোর মধ্যে একটায়। মিশিগান। গভীর অন্ধ্কার জল, তার মধ্যে আস্তে আস্তে নিজের বল্গা খুলে দিতে হয়। আমি টের পেয়েছিলাম জল আমার সাথে কথা বলছে। না, ওর কথা 'শোনা' যায়না। তোমায় বুঝতে হবে, সারা শরীর দিয়ে। ও স্রোতের ভাষা বলে। ঢেউ এর ভাষা। অতলের ভাষা। তরলের। আর আরো কতকিছুর, পৃথিবীর শব্দ দিয়ে যার নাম বলা যায়না। বিশাল গভীর মিশিগান, আমার সাথে কথা বলেছিলো। আপনজনের মত। সেই থেকে আমি জলের সঙ্গে কথা বলতে পারি। মিসিসিপি নদী ভয়ানক রেগে থাকে। মানুষরা ওকে এমন বিষিয়ে দিচ্ছে। রাগবে না তো কি করবে? হুরন লেক আবার খুব লক্ষ্মী মতো। মিশুকে, হাসিখুশি। মস্ত লেক সুপিরিয়র কি গম্ভীর! আমার সেই কঠিন নিষ্ঠুর শিকারী কাকুর মত। যিনি এককথায় আমার জন্য নিজের প্রাণটা দিয়ে দিতে পারতেন! ডেড সী ও চুপচাপ খুব। ইন্ট্রোভার্ট। সমাহিত। অথচ ভূমধ্য সাগর? ভূমধ্য সাগর আমাকে বলেছিলো ওকে 'খাতুনা' বলে ডাকতে। এক নম্বরের ফ্লার্ট একটা! না, এসব আমি বলতে যাইনা কারুর কাছে। বলে কী হবে? আমি যে জলের সঙ্গে কথা বলতে পারি কেউ তো আর বিশ্বাস করবে না? ... ...
ফড়িংচাঁদরা যেদেশে থাকতেন, বেস্পতি নামটা সেখানকার । এর সঙ্গে নির্দেশ করা হতো বিভিন্ন যুগের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন রচনায় খেলানো পৌরাণিক চরিত্রকে। সে দেশের সনাতন সাহিত্যমতে বেস্পতি তাদের বৈদিক যুগের একজন ঋষি, যিনি দেবতাদের পরামর্শ দিতেন। মধ্যযুগের বইতে এই বেস্পতি গ্রহকেও ইঙ্গিত করত। বৈদিক বইতে উনি হলেন বাগ্মিতার দেবতা, আর কখনও কখনও তাঁকে অগ্নিদেবতার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলতো প্রাণবায়ুরা।ঋগবেদে লিখেছিল, কে যে লিখেছিল কে জানে, পৃথিবীর প্রথম উজ্জ্বল আর পবিত্র মহাআলোক থেকে বেস্পতির জন্ম যিনি সব অন্ধকার দূর করে দ্যান । কোথাও কোথাও তার মূর্তি দেখেছে ফড়িংচাঁদ, হাতে দন্ড ও পদ্ম আর জপমালা, আরেকটা পুরাণে প্রাণবায়ুরা লিখেছিল বেস্পতি তারাকে বিয়ে করেছিলেন আর সেই তারাকে নাকি চাঁদ কিডন্যাপ করে একটা ছেলে পয়দা করে তার নাম বুধ। ব্রহ্মা চাঁদের উপর চাপ দিয়ে তারাকে তাঁর স্বামী বেস্পতির কাছে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য করেন। ফড়িংচাঁদরা কুলকিনারা পান না যে এতো পাওয়ারফুল হয়েও বেস্পতি কেন বদলা নেয়নি । ... ...
‘আজাদি ঝুটা’ ছিল কিনা জানিনা, তবে তারাশঙ্করের ‘আরোগ্য নিকেতন’ উপন্যাসে ১৯৫০-র দশকের পটভূমিতে বাংলায় কলেরার বিবরণে, আর শরৎচন্দ্রের ব্রিটিশ আমলের বাংলায় কলেরার বিবরণের মধ্যে মূলগত কিছু ফারাক দেখা যায়। ‘আরোগ্য নিকেতন’-এ কলেরা আটকাতে ‘শিক্ষিত ছেলেরা’ ‘কোদালি ব্রিগেড’ নামে পরিশ্রুত জলের জন্য কুয়ো খুঁড়ছে। সরকারি ‘স্যানিটারি ইনস্পেক্টরেরা পুকুরে ব্লিচিং পাউডার গুলে দিয়ে জলকে শোধন’ করছে, ‘অ্যান্টি-কলেরা ভ্যাকসিন ইনজেকশন’ বা ‘কলেরার টিকে’ দিচ্ছে।৩ এই ধরণের জনস্বাস্থ্যের কিছু তৎপরতা ও জনসচেতনতা কিন্তু বাংলায় কলেরা মোকাবিলায় দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি ককের ভিভরিও কলেরির বিষের ধারণার সাত দশক পরে স্বাধীন ভারতে ১৯৫১ সালে তা নিয়ে গবেষণায় এগিয়ে এলেন এক বাঙালিই। কোলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক, অধ্যাপক ও বিজ্ঞানী শম্ভুনাথ দে। শম্ভুনাথ খরগোশে পরীক্ষা করে দেখলেন, কলেরার আক্রমণ স্থল অন্ত্র। ভিভরিও কলেরি থেকে তিনি কলেরার বিষ আলাদা করে খরগোশে প্রয়োগ করে ডায়রিয়া ঘটাতে সক্ষম হলেন। এটা কলেরা গবেষণার ক্ষেত্রে নতুন এক দিশা দিল। এর আগে ধারণা ছিল, কলেরা টক্সিন আসলে ব্যাকটিরিয়ার কোষ প্রাচীরে থাকা এন্ডোটক্সিন থেকে হয়। শম্ভুনাথ প্রমাণ করলেন, কলেরা টক্সিন ব্যাকটিরিয়ার কোষ থেকে নিঃসৃত হয় (এক্সোটক্সিন)। তাই ব্যাকটিরিয়া ছাড়াও খালি এই বিষই ডায়রিয়া ঘটাতে সক্ষম। শম্ভুনাথ দের এই আবিষ্কারের পর দু দশকের মধ্যেই কলেরা টক্সিনের গঠন, প্রকৃতি সবই জেনে ফেলা সম্ভব হয়। কোলকাতায় নিজের গবেষণাগারে যৎসামান্য যন্ত্রপাতির ওপর ভর করে ‘ভারতীয় কলেরা’র গবেষণায় বাঙালির এই অবদান স্বীকৃতি পায় বিশ্বে। ১৯৫৯ সালে বিখ্যাত ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর এই কাজ। তাঁর কাজ এতটাই আলোড়ন ফেলে যে নোবেলজয়ী মার্কিন বিজ্ঞানী জসুয়া লিডারবার্গ শম্ভুনাথকে নোবেল পুরস্কারের জন্যেও মনোনীত করেন। শম্ভুনাথের দেখান পথে হেঁটে পরবর্তী কালে কলেরা গবেষণার দৃষ্টিকোণ পালটে যায়। এবং পরের ষাট বছরে সারা পৃথিবীতে কলেরা টক্সিনের ওপর হাজার হাজার গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। অবশ্য বাঙালি স্বাভাবিক ভাবেই শম্ভুনাথের কথা বিশেষ জানেও না, আর জানলেও মনেও রাখেনি। সে ভিন্ন প্রসঙ্গ। ... ...