বিজয় তেণ্ডুলকর, মহেশ এলকুঁচওয়ার অথবা সতীশ আলেকারের মত নাট্যকারের নাট্যকৃতি দেখা বা পড়ার সুযোগ থাকায় মারাঠি নাটক সম্পর্কে আমাদের একটা ধারণা আছে। মারাঠি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত গায়ক বা গায়িকাদের বিরাট ঐতিহ্য সম্পর্কেও আমরা সশ্রদ্ধ অনুরাগ পোষণ করি। কিন্তু মারাঠি চলচ্চিত্র বিষয়ে আমাদের বিশেষ কিছু জানা নেই। তার একটা কারণ বোধহয় এই যে আমাদের দেশে আঞ্চলিক ভাষার চলচ্চিত্রের প্রসার এখন ভীষণ অবহেলিত। তার মধ্যে আবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের সর্বোৎকৃষ্ট ছবির শিরোপার ৭১ শতাংশ হিন্দি, বাংলা এবং মালয়ালম ছবির দখলে এসেছে গত ৬৯ বছরের ইতিহাসে। সত্যজিৎ রায় সমেত দশ জন পরিচালক তাঁদের প্রথম ছবিতেই এই সম্মান পেয়েছেন। সেই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন মারাঠি পরিচালক চৈতন্য তামহানের নাম ২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘কোর্ট’ ছবিটির জন্য। ... ...
The Economics of Biodiversity: The Dasgupta Review সেই সচেতনতা শিক্ষণের পাঠ নিয়ে এসেছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে প্রকাশিত এই রিপোর্টটি জীববৈচিত্র্যের অর্থনীতি বিষয়ে একটি পথপঞ্জী। প্রথম যে বইটি হাতে নিয়ে পরিবেশের অর্থনীতি শিখতে শুরু করেছিলাম, তার নাম The Control of Resources, লেখক পার্থ দাশগুপ্ত। তারপর ওঁর অনেক লেখা পড়েছি, বক্তৃতা শুনেছি। ইংল্যান্ডবাসী স্যার পার্থ দাসগুপ্ত পরিবেশের অর্থনীতি চর্চায় একটি অনিবার্য নাম। ব্রিটিশ সরকারের জন্য তৈরি এই রিপোর্টটি তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও অসীম মনীষার স্বাক্ষর বহন করে। বর্তমান সংকটের মুহূর্তে এই রিপোর্টটি দিগ্দর্শন করে, মানবজাতিকে এগিয়ে চলার পথ দেখায়। ... ...
মুর্শিদাবাদের একটি বর্ণাঢ্য ইতিহাস ছিল। একসময় দিল্লিকে পাল্লা দেবার ক্ষমতা রাখত মুর্শিদাবাদ। ব্যাংকিং হাউস হিশেবে তার এতো প্রতিপত্তি ছিল যে খোদ দিল্লির বাদশা তার দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সুরম্য সৌধ মিনার অট্টালিকা, নহবতের সুর, আড়ম্বর বিলাসব্যসন নিয়ে যে একটি জবরদস্ত জনপদ গড়ে উঠছিল ভাগীরথীর তীরে তার ছায়া বিলীনপ্রায়। সংরক্ষণের অভাব কেড়ে নিচ্ছে বহু গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান। সংরক্ষণের জন্য সচেতনতার অভাব তার থেকে অনেকগুণ বেশি। কত মূল্যবান স্মারক এইভাবেই আমরা হারাতে বসেছি এককালীন বাংলার রাজধানী মুর্শিদাবাদে। ... ...
লেখক সঠিকভাবে দেখিয়েছেন যে বৃটিশ কলোনিয়ালিস্টদের ভারত দখল করার লড়াইয়ে ক্রমশঃ দিল্লির মুঘল, দাক্ষিণাত্যের টিপু আদি মুসলিম শাসক ও বঙ্গে সিরাজদৌল্লাদের প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। তাদের কাছে মুসলিম শাসকেরা ছিল ভবিষ্যতের কাঁটা। সেই মানসিকতায় এশিয়াটিক সোসাইটিতে উইলিয়ম জোন্সের নেতৃত্বে ভারতাবিদেরা গড়ে তোলে হিন্দু রাজত্বের স্বর্ণিম যুগ ও মুসলিম রাজত্বের মধ্যযুগীয় অন্ধকারের এক সরলীকৃত আখ্যান যা চলে আসে ২০০ বছর ধরে আমাদের পাঠ্যপুস্তকে। এদিকে হ্যালহেড বাংলাভাষার কাঠামো বাঁধতে গিয়ে ব্যাকরণ লিখলেন, কিন্তু প্রচলিত বাংলাভাষার থেকে (অশুদ্ধ?) ফারসী ও দেশি শব্দ ছেঁটে বাংলা ভাষাকে সংস্কৃতের কন্যা সিদ্ধ করে সংস্কৃত শব্দ ঢুকিয়ে ‘শুদ্ধ’ করতে উঠে পড়ে লাগলেন। এ’ব্যাপারে তাঁদের প্রবল সমর্থক ও সহায়ক হলেন ফোর্ট উইলিয়ম ও সংস্কৃত কলেজের পন্ডিতেরা। এঁদের চোখে ভাষাকে হতে হবে উচ্চবর্ণের এলিট, কাজেই সংস্কৃত ঘেঁষা। ... ...
সুবিনয় রায়ের গান শুনতে গিয়ে দেখলাম সেখানে বিভূতিভূষণ উপস্থিত। " কী অচেনা কুসুমের গন্ধে" জেগে উঠছে ছবি, আর আমি ভাবছি একের পর এক মৃত্যুমিছিলের কথা। যে মানুষ চলে গেলেন, তাঁদের যাওয়া নয়, তাঁদের সঙ্গে সামান্য কিছু কথা, দেখা, কয়েকটি মুহূর্ত। ছোটবেলার বন্ধু, বন্ধুদের বাড়ির লোক চলে গেলেন খুবই অলক্ষ্যে। আরো এমন অনেক মানুষ যাঁদের চিনিনা। কিন্তু শোক ছাপিয়ে এই ভাবনা প্রবল যে এই এঁদের সঙ্গে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে সেইসব জমানো মুহূর্তেরা থেকে গেল। এইসব যখন হয়েছে, তখন ভাবিনি কোন কোন পথের বাঁকে আনন্দময় স্মৃতি জমে উঠছে। হেলায় কুড়িয়ে বইয়ের ভাঁজে রাখা সেসব ফুলই অপূর্ব রূপ নিয়েছে এখন। ... ...
১৮৫০-এর লণ্ডন। তার একদিকে বর্ণিল সন্ধ্যার মায়াবী হাতছানি, আর একদিকে ঘিঞ্জি গলিতে আবর্জনার মধ্যে পিলসুজের তলার মানুষের লড়াই। এর-ই মধ্যে বারেবারে হাজার-হাজার মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে কলেরার দৈত্য। রোগের কারণ অজানা, মনে করা হত দূষিত বাতাস বা মায়াজমা থেকেই কলেরা ছড়ায়, যদিও মায়াজমা ঠিক কি জিনিস তা অবশ্য কেউ-ই জানতেন না। ঠিক সেই সময়েই লন্ডনের এক তরুণ ডাক্তারবাবু, জন স্নো, ঝাঁপিয়ে পড়লেন কলেরার মোকাবিলায়, দীর্ঘদিনের চেষ্টায় প্রমাণ করলেন মায়াজমা নয়, দূষিত জল-ই এই রোগের বাহক। আজকের যদুবাবুর টিউশনিতে সেই জন স্নো-র গল্প, এক মহামারির দানবের চোখে চোখ রেখে সত্যি খোঁজার রূপকথা। ... ...
পেট পেতে পড়ে থাকতে থাকতে মনে হয় মাটির তলার ঐ কাঁপুনি ওর পেটে একটা বিরাট খোঁদল তৈরি করছে -যেন বিরাট এক হাঁ যেখানে সব ঢুকে যেতে পারে সব কিছু- এই দোকান বাজার, বাড়ি ঘর, কাঁসি, পটল, সুনীল, মা কালী - সব, সব। প্রফুল্ল ধড়মড় করে উঠে আলো জ্বলা বাড়ি খুঁজে বেড়ায় তখন। আগে, এ'অঞ্চলে ব্যান্ডপার্টির চল ছিল- সে' দলের পিছন পিছন চলে যেতে পারলেই টুনি বাল্বের জ্বলা নেবা আর লুচির গন্ধ। গেটের পাশে ঘাপটি মেরে থাকলেই মাংসের ঝোল ভাত একদম গ্যারান্টিড। সুনীলের দোকানের উল্টোদিকেই একটা ব্যান্ড ছিল- জয় মা ব্যান্ড। দোকানের ফুটপাথের ওপর লাল কোট রোদে দিলেই প্রফুল্ল বুঝে যেত আজ মাংস ভাতের দিন তারপর পিছু নিত। মেরে ইয়ার কে শাদি হ্যায় গুনগুন করতে করতে পাড়ায় ফিরত ভর পেটে। ... ...
অস্বস্তিকর নীরবতাটা ভাঙাতেই বোধ হয় কবিদের মধ্যে একজন বলে ওঠে, আচ্ছা জয়মালিকাদি, একটা কথা জিজ্ঞেস করবো আপনাকে? আমরা তো অনেকদিন ধরেই আসছি এখানে, দুটো পরিবর্তন খুব চোখে পড়ে আজকাল। প্রথমটা হলো আপনার রুচির পরিবর্তন। আমরা বরাবর দেখেছি আপনি মাছ-মাংস ভালোবাসতেন, বিশেষ কোরে খাসির মাংস। এখানে খাসির মাংস ভালো পাওয়া যায় না, কতোবার বেড়াতে বেড়াতে কোন গ্রামের হাটে ভালো মাংস দেখে আমরাই নিয়ে এসেছি আপনার জন্যে, মনে আছে? অথচ এখন সেই আপনিই মাছ-মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন, এটা কেন? আর দ্বিতীয় যে পরিবর্তন সেটা তো একেবারে মূলে। ... ...
অনেক কিছু বদলে যেতে দেখলাম। নয়ের দশকে জেরুসালেম থেকে বেথলেহেম বা বেথানি (শেষ বারের মত জেরুসালেম আসার আগের রাতটি সেখানে কাটান যিশু) অথবা তেল আভিভ থেকে হাইফা, সেখান থেকে বাস বদলে নাজারেথ যাওয়া যেতো সহজেই। কখনো কোথাও পাসপোর্ট দেখাতে হতো না। প্যালেস্টাইন আর ইজরায়েল যে দুটো আলাদা দেশ তা সব সময় বোঝা যেত না। ইহুদি ধর্মের পবিত্রতম স্থান সলোমনের ভগ্ন মন্দিরের প্রাচীরের (ওয়েলিং ওয়াল) পাশ দিয়ে ভারা বাঁধার মত সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেছি টেম্পল মাউন্টে, স্বর্ণ মণ্ডিত ডোম অফ দি রক চত্বরে। সেটি ইসলামের দ্বিতীয় পবিত্রতম ভূমি। তারপর মুসলিম মহল্লা দিয়ে চলে গেছি গলগথা- যেখানে যিশুকে ক্রুশ বিদ্ধ করা হয়। ফিরে এসে লোককে বলেছি একবার জেরুসালেমে যাও – দুই কিলো মিটারের মধ্যে তিনটি মহান ধর্মের ছায়া মিলে মিশে একাকার হয়ে আছে। এখন সেটি সম্পূর্ণ অসম্ভব। এবার মায়াকে নিয়ে বেথলেহেম যেতে পার হতে হয়েছে কাঁটা তারের বেড়া, সুড়ঙ্গের মতো সীমান্ত। বারে বারে প্রমাণ করতে হয়েছে আমাদের পরিচিতি। ডোম অফ দি রকে যাওয়া অসম্ভব – অনেক জায়গা থেকে অনুমতি নিতে হয়। পদে পদে প্রহরী। ... ...
এনআরএসে তখন যন্ত্রণাকাতর যাত্রীদের আর্তনাদ, পরিজনের কান্না৷ রেডিও, টিভিতে খবর পেয়ে বাড়ি না ফেরা যাত্রীর পরিজনের ভিড় থিক থিক করেছে৷ আহতদের রক্ত দরকার৷ হাসপাতালে রক্ত নেই৷ অদূরে মানিকতলার সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকেও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে বেশ কয়েক জনকে৷ দেওয়ালে দেওয়ালে তখনও সিপিএমের ছাত্র-যুবদের লেখা সবটা মুছে যায়নি, ‘রক্ত দিয়ে গড়ব মোরা সাধের বক্রেশ্বর৷’ বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র রাজ্য সরকারের উদ্যোগে গড়ার অঙ্গীকার৷ কাগজে খবর হয়েছিল, বক্রেশ্বরের জন্য দেওয়া বিপুল রক্ত মজুতের ব্যবস্থা না থাকায় নর্দমায় ফেলে দেওয়া হয়েছে৷ অথচ হাসপাতাল সেদিন রক্তশূন্য৷ এনআরএসের এমার্জেন্সির ভিড়ে হঠাৎ সেই তরুণের সঙ্গে দেখা, বিকালে যাকে রেলকর্তার ঘরে দেখেছি৷ তার সঙ্গে নানা বয়সের আরও জনা দশ-পনেরো লোক৷ ছেলেটি গলা চড়িয়ে হাঁক পাড়ছে, ‘ডাক্তারবাবু কার রক্ত দরকার? কার দরকার, কার দরকার? আমরা রক্ত দেব৷’ ... ...
চারজনে চলল সার দিয়ে। মাথায় দুটো পেটি, পিঠে একখান বোঁচকা, দুই হাতেও দু’টো করে পোঁটলা। একেকজনকে দেখে মনে হচ্ছে চলমান গন্ধমাদন পর্বত। জোয়ান ছেলে, তাকতদার, গাঁ-গঞ্জে এমন বয়েছে ঢের। ওরা মোকসাদকে বেশি কিছু নিতেই দেয়নি। পথ চিনিয়ে নিয়ে যাবে তো সেই, তার উপর বুজুর্গ মানুষ। বুঝলে মিয়া, এই শহরের পথের নিশান বেশ সিধা সিধা, ক্ষেতের আলের মত। সার দিয়ে এইসব ইস্ট্রিট গেছে, ওদিক থেকে আবার তাঁতের মাকুর মত আভেনু এয়েচে সব। নাক বরাবর চলতে থাকো। ... ...
দেশভাগ বিষয়টি কোনো রাতারাতি ঘটে যাওয়া আকস্মিক ঘটনা নয়, অনেকদিন ধরেই একটু একটু করে তার প্রেক্ষিত তৈরি করা হয়েছিল – ঠিক সেইরকমই, সেই সময়ের ভারতীয় শিল্পীদের কাজে তার যে প্রতিফলন রয়েছে তাও ঠিক একদিনের ঘটনা নয়। .... আশ্চর্যের ব্যাপার হল, বাংলার নাটক, সাহিত্য, ফটোগ্রাফি এবং চলচ্চিত্রের মধ্যে দেশভাগের বিষয়টির যে জোরালো উপস্থিতি, তা কিন্তু চিত্রকরদের কাজের মধ্যে নেই। দেশ ভাগ হয়েছে, হাজার হাজার মানুষ বাস্তু হারিয়ে শেষ সম্বল নিয়ে এপার বাংলায় চলে আসছে – এমন দৃশ্য আমরা সমকালীন ফোটোগ্রাফ এবং কিছু পরে নির্মিত চলচ্চিত্রে দেখতে পেলেও খুব কম শিল্পীই এই বিষয় নিয়ে সরাসরি ছবি এঁকেছেন। চিত্রকলা এমনই এক দৃশ্যভাষা, যেখানে কেবলমাত্র চোখে দেখা দৃশ্যের একটা চটজলদি ডকুমেন্টেশন করে দিলেই চলে না, শিল্পীর নিজস্ব ভাবনা, মনন এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির বিশ্লেষণ কাজের অঙ্গ হয়ে যায়। চলচ্চিত্রের মত ন্যারেটিভ মিডিয়াম নয় বলেই, চিত্রকলার ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া বেশ জটিল এবং যথেষ্ট ম্যাচিওরিটি দাবি করে। ফলে চিত্রকরদের কাজে আমরা দেশভাগ যতটা পেয়েছি, তার থেকে অনেক বেশি পেয়েছি তার রাজনৈতিক এবং আর্থসামাজিক পরিপ্রেক্ষিতের অনুসন্ধান। .... ... ...
একটা সময় ছিল যখন এই নবাবি কেল্লার জৌলুশ ছিল দেখার মত। কেল্লার প্রধান ফটক থাকত উচ্চ নিরাপত্তায় মোড়া। সেই নিরাপত্তা ভেদ করে কোনও মাছিরও কেল্লার ভেতরে প্রবেশের অধিকার ছিল না। কেল্লার সেই প্রধান ফটকের পাশেই ছিল নবাবি সেপাইদের বসবাস করার ঘর। ভাগ্যের পরিহাসে আজ সেই ঘরে বসবাস করেন মুর্শিদাবাদের বর্তমান নবাব বাহাদুর সৈয়দ মহাম্মদ আব্বাস আলি মির্জা ও তার পরিবার পরিজন। নবাবি আমলে কেল্লায় প্রধান ফটক ‘দক্ষিণ দরজার’ মাথায় থাকত নহবৎখানা। সেখানে নবাবের শাহি বাদকরা সকাল-সন্ধ্যা সানাই বাজাত। সানাই-এর সেই সুর কেল্লা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ত দূর-দূরান্তে। আজ সেই দক্ষিণ দরজা অক্ষুণ্ণ থাকলেও, নেই সেই বাদকেরা। শোনা যায় না সানাইয়ের মন মাতানো সেই সুর। ... ...
আমাদের পদযাত্রা এবং অভিজ্ঞতার দৈনন্দিন বিবরণীতে পথচলার সময় সে দেশের প্রকৃতি যেমন ভাবে আমাদের চোখে ধরা দিয়েছে তার একটা ছবি আঁকার চেষ্টা করেছি। ঘোর মাসিকার মরশুমে আমরা উপকূল এলাকা দিয়ে গিয়েছিলাম। বর্ষাকাল যত গড়ায়, আমরাও ঘাসের উপর বৃষ্টির প্রভাব লক্ষ্য করতে থাকি। মাসিকা ঋতু শুরুর সময়ে কদাচিৎ হাঁটুর উপরে ঘাস দেখা যেত; কিন্তু বর্ষার শেষের দিকে, তারা লকলকিয়ে পুরো বেড়ে উঠেছে। বর্ষাশেষের মাসখানেক পরে, ঘাসেরা যখন বেশ রোদে ভাজা ভাজা হয়ে যায়, তখন দেশীয়রা ঘাসে আগুন ধরিয়ে দেয়, আর এর পরের দিনগুলোতে সারা দেশে শুধু ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের শব্দ শোনা যায়, কাল ধোঁয়ার ঘন আস্তরণে দেশ ঢেকে যায়, এমনকি ধোঁয়ার থেকে রং ধার করে আকাশও কাল হয়ে যায়। ... ...
আচ্ছা এটা মনে রাখবেন, যে হট পটের সাথে ওই ফন্ডু বলে যে জিনিসটা আছে – তার একটা বেসিক পার্থক্য আছে। হট পটে আপনি খাবার বানাবেন বা ফোটাবেন একটা জলীয় স্যুপে – আর ফন্ডুতে রান্নার তেল ব্যবহার করা হয়। হট পটের স্ট্যান্ডার্ড রান্নার উপাদানগুলি হল – খুব পাতলা করে কাটা মাংসের টুকরো, সবুজ পাতার সবজি, মাশরুম, নানা প্রকারের ন্যুডল্স্, কাটা আলু, টফু, নানাবিধ বিনস্, মাছ বা সি-ফুড। এই সব উপাদানই সরু সরু করে কাটা থাকে – তা না হলে ওই মৃদু আঁচে ফুটতে থাকা স্যুপে সিদ্ধ হয়ে খাওয়ার মত হতে রাত হয়ে যাবে! তা ছাড়া এক্সট্রা সস রাখা থাকে পাশে – আপনি নিজের ইচ্ছেমতন খাবার স্পাইসি বানিয়ে নিতে পারবেন সিদ্ধ হয়ে যাবার পর। ... ...
১৪ কোটি রেশনের ব্যাগে তাঁর ছবি ছাপা হচ্ছে, ৫ কোটি পোস্টকার্ডে লেখা হচ্ছে ‘ধন্যবাদ’। তারপর দেশের নানান প্রান্তের বিভিন্ন বুথের অন্তর্গত পোস্ট অফিস থেকে সেই পোস্টকার্ড ঠিক সময়মত যাতে তাঁর কাছে পৌঁছয়, তার বন্দোবস্ত করা হয়েছে, তাঁর দল এবং সরকারের পক্ষ থেকে। দেশের ৭১টি গঙ্গা-সংলগ্ন ঘাট পরিষ্কারের কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে, কারণ তিনি ৭১ বছরে পদার্পণ করবেন। তিনি যে সে মানুষ নন, তিনি আমাদের প্রধান সেবক নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদি। ... ...
জুলাইয়ের মাঝামাঝি আমাদের ফ্ল্যাটে এক ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি এসেছিলেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম স্কুল খোলার দরকার আছে কিনা? তিনি বলেছিলেন “স্যার, এটা কোনো প্রশ্ন হল? বাচ্চা দুটো বরবাদ হয়ে যাচ্ছে”। SCHOOL এর গবেষকের একই প্রশ্নের উত্তরে প্রত্যন্ত গ্রামের মহিলা অবাক হয়ে বলেন “ইয়ে পুছনে-ওয়ালি বাত হ্যায়? বাচ্চা কা জিন্দেগি তো খতম হো রহা হ্যায়”। পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড় শহরের এক অসহায় বস্তিবাসী বাবার আকুতির সাথে বিহার/ঝাড়খণ্ডের এক প্রান্তিক পরিবারের মায়ের হাহাকার কি আমাদের বাধ্য করবে না খান দশেক “পুছনে-ওয়ালা বাত” সব ফোরামে তোলার জন্য? ... ...
কুমুদি রইলেন তাঁর গ্রন্থিত-অগ্রন্থিত গল্পে, প্রবন্ধে, কবিতায়, স্মৃতিতে। স্মৃতিস্তম্ভের স্থবিরতাকে ভালবাসিনি আমরা, চাইছি স্মৃতির চলমানতা। অক্ষর বেয়ে বেয়ে পরের প্রজন্মে পৌঁছে যাক কুমুদি- তারা চিনুক আমাদের কুমুদিকে, ভালবাসুক, লেখা পড়ুক, পড়াক বন্ধুদের। কুমুদিও তাদের চিনতে চাইবেন- বলাই বাহুল্য। স্মিত সহাস্য মুখে জিগ্যেস করবেন- কই , কী লিখচ , শোনাও দেখি। এই সব অলীক চেনাজানাকে বাস্তব করতে গুরুচণ্ডা৯ শুরু করছে বার্ষিক 'কুমুদি পুরস্কার' - কিশোর কিশোরীদের গল্প লেখার প্রতিযোগিতায়। ... ...
আমাদের সবাইকে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত অনেকগুলো অধ্যায় অতিক্রম করতে হয়। প্রতিটি অধ্যায় হলো এক একটি জীবন। হোক তা ক্ষণস্থায়ী বা দীর্ঘস্থায়ী। ছোট্ট এই জীবনে সুখে দুঃখে পাশে থাকার কত আলপনাই আমরা এঁকে ছিলাম, কত ছেলে মানুষই না করেছি, ভাবলে এখন অবাক হই। এই লেখাটি কোনো একাডেমি ধাঁচের রচনা নয় জাস্ট একটা ডায়েরির মতো। জয়ন্তীকে নিকট থেকে দেখার এবং ওর গভীর সান্নিধ্যের কিছু বিশেষ সময়ের, বিশেষ মুহূর্তকে, ছোট ছোট গদ্যের কোলাজে এক ফ্রেমে তুলে ধরার প্রয়াস। ... ...
এরকম আকস্মিক চলে যাওয়ার ঘটনা আমি কানে বহুবার শুনে থাকলেও কখনও চোখে দেখিনি।। এমন একজন মানুষ যিনি আগের মুহূর্তে ছিলেন প্রাণমন দিয়ে জিজ্ঞাসু, ছিলেন হাসিখুশি, প্রাণচঞ্চল, একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি বলে বেরিয়ে গেলেন হলের বাইরে, তারপর প্রায় হাঁটতে হাঁটতে পাড়ি দিলেন কোন নক্ষত্রলোকের উদ্দেশে সেই প্রশ্নের উত্তর আমি আজও খুঁজছি। নিশ্চয়ই আরও অনেকেই খুঁজছেন। ... ...