বিগত দশ দিন যাবৎ দেশের আকাশ বাতাস "মার মার" "ধর ধর" "কাট কাট" শব্দে পুনরায় মুখরিত হইয়াছে। বীরভোগ্যা বসুন্ধরার মাঝে যে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা - তাহার যে বীরের অভাব নাই তাহা এক্ষণে সর্বজনবিদিত। সুকুমার রায় ইহাদের কথা ভাবিয়াই একদা বলিয়াছিলেন - "বীর বলে বীর! ঢাল নেই তরোয়াল নেই খামচা মারেঙ্গা"। সেই খামচার ঠেলায় অস্থির ভারতবাসী অতঃপর অস্থিতে অস্থিতে টের পাইয়াছেন বীরত্ব কাহাকে বলে। কলেজ ছাত্র হইতে ইস্কুল মাস্টার, গৃহবধু হইতে চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার হইতে আইটির ভাইটি - কেহ বিন্দুমাত্র দেশদ্রোহের আভাসমাত্রও দেখাইলেই বীরপুঙ্গবগণ লাঙ্গুল শক্ত করিয়া তথায় উপস্থিত হইয়া নিজ বীরত্ব প্রদর্শনপূর্বক কদলী ভক্ষণ করিয়া পাকিস্তানকে সমঝাইয়া দিয়াছেন। ... ...
আমরা, দুর্গাপুর ই এস আই হাসপাতালের চিকিৎসকবৃন্দ, চিকিৎসাক্ষেত্রে বহিরাগত এবং দুর্বৃত্তদের নিরন্তর এবং অসহনীয় উৎপীড়নের বিষয়ে সাধারণ জন সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সাধারনভাবে প্রায় সমস্ত সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রকেই প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল পরিকাঠামো নিয়ে চিকিৎসা করতে যেয়ে জনরোষের মুখে পড়তে হচ্ছে। ই এস আই-এর ক্ষেত্রে এই অত্যাচার অমানবিক পর্যায়ে পোঁছে যাবার দুটো নির্দিষ্ট কারণ আছে। এক, শ্রমিক এবং কর্মচারীর দেওয়া মাসিক চাঁদার পরিবর্তে ই এস আই সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দেয়। দুই, এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত করার জন্য ই এস আই বিভিন্ন বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করেছে যার মাধ্যমে বিমাকারিরা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সব রকম চিকিৎসা পেতে পারেন। ... ...
নিউমার্কেট এবং কলকাতা কর্পোরেশনের নিকটেই রক্সি সিনেমা হলটা নিশ্চয় অনেকেই চেনেন। ওর সামনে দিয়ে কতোবার হেঁটে গেছেন অতীতে,যেখানে ওই সিনেমা হলটার উলটোদিকের ফুটপাতে সাব্বির ব্যাগওয়ালা বসতো নানানরকমের জুটের এবং কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে! মনে আছে? যেটাতেই হাত দিতেন, ঝাঁকড়াচুলো সাব্বির বলতো "ওনলি থ্রি হান্ড্রেড।" ওই রক্সি সিনেমা হলটা এখন কলকাতা কর্পোরেশনের স্থায়ী কোভিড টেস্টের সেন্টার। দারুণ ব্যবস্থা। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। প্রত্যেক কর্মীই ভীষণ সহানুভূতি সহকারে এবং সুশৃঙ্খলভাবে নিজের নিজের কাজ করে যাচ্ছেন। অনেকে এই সেন্টারটার কথা জানেন না বলে গিজগিজে ভীড় নেই। আর সবচেয়ে বড়ো কথা ওই বড়ো বড়ো ঘরগুলোর কোথাও কোনো মন খারাপের ছায়া বা বিষণ্ণতা লুকিয়ে নেই। যাঁর কোভিড পজিটিভ ধরা পড়বে, তিনি ওখান থেকে ভয় নিয়ে বেরোবেন না। তাঁর মনে হবে কোয়ারেন্টিনে থাকলেই সুস্থ হয়ে যাবো। আর হবেনও তাই। উচ্চবিত্তরাও কিন্তু নিশ্চিন্তে যেতে পারেন। পুরসভা,সরকারি,ঘিনঘিনে, গন্ধ,জানোয়ারের মতো ব্যবহার, ছোটলোকদের জায়গা...ওখানে গিয়ে দাঁড়ালে এসব কথা মনেই হবে না। ছুটি এবং লকডাউনের দিন ছাড়া বাকি সব দিন খোলা। ... ...
বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের রাজ্য সভাপতি সামিরুল ইসলাম বলেছেন, “কৃষকদের জন্য আইন হলেও কৃষকেরা এই আইন চাইছেন না, এরপরেও কেন বিজেপি সরকার এই আইন প্রত্যাহার করছে না স্পষ্ট, কারণ আইন বানানো হয়েছে আম্বানি-আদানিদের জন্য। এই লড়াই শুধুমাত্র কৃষকদের না, সাধারণ মানুষেরও। কারণ এই আইনের জেরে কৃষকের পাশাপাশি আম-জনতা বিপুলভাবে আক্রান্ত হবেন।” ... ...
সাইকেল আর বই, এই তাঁর জগৎ। রাজাবাজারের বাড়িতে বইয়ের ভিড়ে বাকি সব কিছুই অদৃশ্য বলা চলে। সে বাড়িতে প্রথম যে দিন গেলাম, বিচিত্র অভিজ্ঞতা। রূপদার গলা শুনতে পাচ্ছি, মানুষটাকে দেখতে পাচ্ছি না। অনেক পরে নজর করি, দুটি বইয়ের তাকের ফাঁকে এক চিলতে জায়গায় গা এলিয়ে রূপদা। কথায় কথায় বললেন, দেশের বাড়ি থেকে সে দিনই সকালে ফিরেছেন। জানতাম, দেশের বাড়ি ভগবানপুর। অনুমান করতে পারছিলাম, রূপদা কীভাবে গিয়ে থাকতে পারেন। তবু, খানিক মজা করার জন্যই বললাম, এই গরমের মধ্যেও কি নন-এসি বাসে…। বাক্যটি শেষ করার ফুরসত পেলাম না। রূপদা যেন রীতিমতো অপমানিত বোধ করলেন। পাল্টা প্রশ্ন, ‘কেন, বাস কেন? সাইকেল থাকতে বাস কেন?’ মার্জনা চেয়ে বললাম, সব ঠিক আছে। কিন্তু বম্বে রোডে ঝড়ের গতিতে চলা গাড়ির মধ্যে সাইকেলে চলাফেরা ঝুঁকি হয়ে যাচ্ছে না! রূপদা কথাটা কানেই তুললেন না। ... ...
কাজী উত্তর দেবার আগেই উঠে দাঁড়ান ডঃ শহীদুল্লাহ্, বলেন, আমার এবার যাবার সময় হল। যাবার আগে একটা কথা তোমাকে বলি কাজী। আমার মনে হয় রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে এখন তোমার পরিচয় হওয়া দরকার। সুধাকান্তবাবু বলেছেন রবীন্দ্রনাথ নিজেও তোমার সঙ্গে পরিচিত হতে চান। কবে যে ওঁকে পাওয়া যাবে আমি ঠিক জানি না। শুনেছি, বিদেশ থেকে কয়েকদিন আগে ফিরেছেন। ইদানীং প্রায়ই বিদেশে যাচ্ছেন, কাজেই এর পরের বিদেশ যাত্রার আগেই ধরতে হবে। আমি যোগাযোগ করছি, এক-দেড় মাসের মধ্যেই ধরতে চাই। জোড়াসাঁকোয় নয়, চেষ্টা করব শান্তিনিকেতনে গিয়ে দেখা করতে, সেখানে উনি অনেক খোলামেলা। তুমি আমার সঙ্গে আসবে তো? ... ...
এবছর ডেমোক্র্যাটদের প্রচারে তরুণ ভারতীয়রা ওপিনিয়ন পিস লিখেছেন, টেলি কলিংয়ের মাধ্যমে প্রচারে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অংশ নিয়েছেন এবং তথ্যপ্রযুক্তিগত কাজে সহায়তা করেছেন। অন্যদিকে রিপাবলিকানদের নির্বাচনী প্রচারে যেসব ভারতীয়রা ছিলেন তাঁরা ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই তাঁর চিরভক্ত। ধরে নেওয়াই হয়েছিল হিন্দু জাতীয়তাবাদের ভক্ত ভারতীয়রা আগেরবারের রিপাবলিকান প্রার্থীদের চেয়ে ২০২০ সালে আরও বেশি করে ট্রাম্পকে সমর্থন জানাতে পারেন। ... ...
ফোনটা পেয়েই এই সাত-সকালে বের হতে হলো। জিরো পয়েন্টে একটা ডেড-বডি পাওয়া গেছে। আপাতত এটুকুই জানতে পেরেছি। সাব-ইন্সপেক্টর কল করে জানালেন বিষয়টি। এ আর নতুন কী! প্রথম প্রথম এ-ধরনের সংবাদ শুনে বেশ ঘাবড়ে যেতাম, মনটা বিষিয়ে উঠত, আবার এক ধরনের অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদও জেগে উঠতো ভেতরে ভেতরে। এখন হই বিরক্ত— সময়মতো না ঘুমাতে পারার বিরক্ত; খাওয়া-দাওয়া, বিশ্রাম ঠিকঠাক না হওয়ার জন্য বিরক্ত, স্ত্রী-সন্তানদের সময় দিতে না পারার কারণে বিরক্ত। গিয়ে দেখি একঝাঁক মানুষ জটলা পাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কারও কারও চোখ থেকে ঘুমের ঘোর তখনো কাটেনি। কেউ কেউ বেরিয়েছিল হাঁটাহাঁটি করতে, লাশটা দেখে সংগত দূরত্ব রেখে দাঁড়িয়ে গেছে। সবার দৃষ্টি খানিকটা ওপরে। জিরো পয়েন্টের মাঝামাঝি পরিত্যক্ত পোলের সাথে গলাই দড়ি পেঁচিয়ে ঝুলে আছে মাঝবয়স্ক এক লোক। লোকটির কাঁধে বসে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে একটি কাক। এতগুলো লোক তার দিকে তাকিয়ে আছে দেখে সে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। নিজেকে নিরাপরাধ প্রমাণ করার জন্যই কিনা কা-কা-কা করেই যাচ্ছে; কিংবা ঘটনার সাক্ষী দিচ্ছে কি সে? আমাদের পরিভাষায় লোকটার নাম এখন ডেড-বডি। বোঝা গেল কেউ মেরে এখানে টাঙিয়ে রেখেছে। খুনিরা মাঝে মধ্যে পাবলিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যে এ-ধরনের প্রকল্প হাতে নেয়— কখনো আবার শরীর থেকে হাত-পা-মাথা আলাদা করে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ছড়িয়ে দেয়। একবার আমাকে সেরকম একটা কেস সামলাতে হয়েছিল— শরীর মেলাতে মেলাতে হয়রান। মাথাটাই পাওয়া যায় না। শরীর দেখে সরকারি পক্ষের একটা পরিচয় দাঁড় করানো হলো, কিন্তু মাথা পেয়ে দেখা গেল ... ...
সবকিছু শেষ হয়ে আসছে শ্যামলী জানে। সুবিমলের মাথার ভেতরের ঐ আলোআঁধারি জগত একদিন ওকে গিলে নেবে; আর ফিরতে দেবে না এই ক্ষয়াটে শহরের বাস্তবতায়। সুবিমল টের পায় সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। বাসে উঠতে গিয়ে পা টলে যায়। ভুল রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে আধঘন্টা পরে বুঝতে পারে ঠিকানা ভুলে গেছে। মাঝে মাঝে মাথার ভেতরটা ছিঁড়ে যায় যন্ত্রণায়। কোনোকিছুতে মন বসাতে পারে না। গভীর রাতে কী যেন অজানা ভয়ে জেগে উঠে শুনতে পায় সারা ঘরময় খুকির খেলনাগুলো, বাঁকুড়ার ঘোড়াগুলি ঠকঠক শব্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ধীরে ধীরে একলা হয়ে যাচ্ছে ও। ... ...
টোটোদের না-পাওয়ার তালিকা দীর্ঘ। খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের সমস্যা খানিক সামাল টোটোরা দিতে পেরেছেন নিজেদের চেষ্টায়। কিন্তু আজও বর্ষার দিনে হাউরি, বাংরি, তিতি নদীতে পাহাড়ি স্রোতের ঢল নামে। নদীগুলির উপর সেতু না থাকায় বর্ষার দুর্যোগে টোটোরা বিচ্ছিন্ন থাকেন সংলগ্ন শহরাঞ্চল থেকে। ভোটের আগে আর্থসামাজিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির একাধিক প্রতিশ্রুতির কথা শুনে আসছেন টোটোপাড়ার বাসিন্দারা। ... ...
তুমি উৎসব, তুমিই সেই চাঁদ দেখে ছুটি দিয়েছো কত চাঁদকে আঁকার ঘরে তোমাকে ঘিরে ছিল যারা সবাই এতক্ষণ ঘুমিয়ে গেছে ওদের চুলে হাত বুলিয়ে শুতে গেছে অন্য কেউ এঁকেছে চোখের পাতায় চুম্বন ... ...
বিরান ঘাটে সেই সময় নজর পড়লো ত্রপার ওপর। বুকের কাছে কয়েকটা বই, একটা লম্বা খাতা জড়ো করে দাড়িয়ে আছে। স্কুল ড্রেস পরণে ছিলো না। তাই অনুমান করা গেলো যে, কলেজ ছাত্রী। একবার ভেবেছিলাম, কথা শুরু করা যাক। কিন্তু সেটা বড্ড বেশী সিনেমাটিক হয়ে যেতো। তাই চুপ করে রইলাম। কথাটা শুরু হলো দূর্ঘটনাচক্রে। দূর্ঘটনা আমিই ঘটলাম। ... ...
ফের এবছর ভয়াবহ বন্যার কবলে নিম্ন দামোদর এলাকা। ১৯৭৮ এবং ২০০১ সালের বন্যাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে এর তীব্রতা। তীব্র প্রশ্নের মুখে পড়েছে ডিভিসি-র বাঁধগুলির কার্যকারীতা এবং পরিচালনা। একটি বড়ো দৈনিকে হেডিং হয়েছে, ঝাড়খণ্ডের জলে ডুবল বাংলা। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী দুটো প্রশ্ন তুলেছেন, এক) ডিভিসির জলাধারগুলোতে ড্রেজিং করছে না কেন কেন্দ্র সরকার? দুই) জল ছাড়ছে ডিভিসি। এই অবস্থায়, বন্যাদুর্গতদের মধ্যে ‘ডিভিসি-র ছাড়া জলে বন্যা হলো’ – এটা লব্জে পরিণত হয়ে গেছে যেমন, তেমনি সম্ভবতঃ সামনের দিনে আরেকটি লব্জ তৈরি হতে চলেছে, ‘ঝাড়খণ্ডের জলে বন্যা বাংলায়’। মুশকিল হলো, এই কথাটা বলা আর ‘সূর্যের তাপে খরা বাংলায়’ বলার মধ্যে কোনো তফাত নেই। এই ধরনের কথা, সমস্যাটি ঠিক কী, তা গুলিয়ে দেয়। সমস্যাটির সমাধান করার উদ্যোগ নিতে বাধা দেয়। এবং একইসাথে ভেতরে ভেতরে, এটা কোনো সমস্যা না, এই বোধও তৈরি করে। যার অবশ্যম্ভাবী ফল নিষ্ক্রিয়তা। আমরা একটা উদ্যোগ নিয়েছি, সমস্যাটি ঠিক কী, তা প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে তুলে ধরার। এবং তা এখনও পর্যন্ত দামোদরের বন্যা নিয়ে যা যা গবেষণা হয়েছে, সেগুলোর ওপর দাঁড়িয়ে। তার মধ্যেই থাকবে, কী করা যায়, কতটা করা যায়, সেসবও। আমরা অবশ্যই বাস্তবের মাটিতে দাঁড়ানোর পক্ষপাতী। সমস্যাটিকে বর্তমানের নিরিখে বোঝার পক্ষপাতী। এবং আমরা প্রশ্ন তীক্ষ্ণতর এবং সূক্ষতর করার পক্ষপাতী, যাতে ফারাকটিকে চেনা যায়। মোটা দাগের কোনো মতামতের তুলনায় সূক্ষতর প্রশ্নের মধ্যেই সমস্যাটি এবং তার মোকাবিলার ভবিষ্যৎ নিহিত বলে আমরা মনে করি। তাই পাঠকরাও যদি পারেন, সাহায্য করুন, সূক্ষতর প্রশ্ন করে। বা তার উত্তর দিয়ে। ... ...
ডাঃ খান বললেন, “বাজে বকিস নে ঐন্দ্রিল। বাষট্টি পেরিয়ে তেষট্টি হল। আমার এখন এক এবং একমাত্র লক্ষ পঁয়ষট্টি ক্রস করে এই হেলথ সার্ভিস থেকে পালানো। মাঝরাতে এসব ঝামেলার রোগী দেখলে কাউন্সিলিং তো দূরের কথা, গালি দিতে ইচ্ছে করে।” ... ...
কলকাতা-কেন্দ্রিক ন্যাকাচিত্তির সাহিত্যের এঁদো কপচাবাজি এবং তার ভেক্টর প্রতিষ্ঠানের মুখে জোর থাপ্পড় মেরে তার গিল্টি-করা দাঁত উখড়ে তার ভেতরকার মালকড়ি ফাঁস করে দিতে আজ থেকে তিপ্পান্ন বছর আগে দানা বেঁধেছিল বাংলা সাহিত্যের প্রথম আভাঁগার্দ আন্দোলন ----- হাংরি জেনারেশন। যা ছিল আক্ষরিক অর্থেই কলকাতার বাইরের কবি-লেখকদের নয়াল সংযোজন। তাঁরা এসেছিলেন এমন এক মিলিউ থেকে যেখানে বাংলার তথাকথিত ভদ্রায়তনিক সংস্কৃতির কোনও শিস-ই গজাবার নয়। জীবনের অনেকরকম শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থাকতে হয় যেখানে। হাংরি সাহিত্যের কলিন অধ্যয়নে এই প্রেক্ষাপটটি সর্বাগ্রে মাথায় রাখতে হবে। এই হাঙ্গামার প্রধান স্রষ্টা মলয় রায়চৌধুরীর শৈশব অতিবাহিত হয়েছিল বিহারের ভয়ঙ্কর কুচেল অধ্যুষিত বাখরগঞ্জ বস্তিতে। তাঁর টায়ার ছোটবেলা অতিক্রান্ত মুসলিম অধ্যাসিত দরিয়াপুর মহল্লায়। সেই অস্বাচ্ছন্দ্য, অখল জ্বালা, ক্ষোভ আর বিদ্রোহকে বুকে করে মলয়ের বেড়ে ওঠা। সংস্কৃতির একেবারে নিচেকার পাদানি থেকে আসা, নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে ওঠার প্রতিটি মানুষী শঠতার সাক্ষী, স্পেঙলারের সংস্কৃতি ও অবক্ষয়কালীন সর্বগ্রাস তত্ত্বে তা-খাওয়া একজন বাইশ-তেইশ বছরের কৃষ্টিদোগলা বা কালচারাল বাস্টার্ড লেখালেখির মাঠে এলে যা ঘটবে, সেটা তো রফা হয়েই ছিল। ... ...
এটাই নাকি চিত্রকর গ্রাম। ভরতপুর। মোটে পনেরো ঘর চিত্রকর। হুড়মুড় করে ঢুকে পড়তে গেলাম প্রথম বাড়িতেই। সঙ্গে দেবাশীষ মুখার্জি ভাই--- আগে এসেছে কিনা। বলল--দাঁড়ান ওই খানটায় , অনিলকে ফোন লাগাই। একটা পুরোনো গরীব কুয়ো --ডুমুর অশথ গাছের শেকড় জল ছোঁয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করছে। ঝুঁকে দেখতে দেখতেই ডাক এল। গাঁয়ের একটি সিমেন্ট বাঁধানো দাওয়ায় ওরা ছবি বিছিয়ে দিচ্ছে। এটাই নিয়ম। বাইরের কেউ এলে পনেরো ঘরে কানাকানি করেই খবর পৌঁছে যায়--যার যেটুকু পুঁজি এনে সাজায় সেই দাওয়ায়। ... ...
গঙ্গাধর গ্যাডগিল মরাঠী সাহিত্যে ছোট গল্পের জন্য খ্যাতনামা। সেদিন তাঁর সঙ্গে আলাপের পর বেরিয়ে এসে বন্ধুদের অভিজ্ঞতার কথা বলতে, তুষার বলল, কেঁচিয়ে দিয়েছিস, এখান থেকে আমেরিকায় যাওয়ার সাহিত্য প্রতিনিধি নির্বাচন করবে, তোর হলো না। হাসাহাসি হলো। সেদিন ছিল শেষ দিন। ইউথ হোস্টেলে ফেরার বাসে সঙ্গে ছিলেন তামিল ভাষার প্রবীণ লেখক অশোক মিত্রণ। এটি তাঁর লেখার নাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, গ্যাডগিলের সঙ্গে কী কথা হলো ? আমি বলতে, তিনি পরামর্শ দিলেন, “তোমার লেখার পদ্ধতি তোমার, তা নিশ্চয় মিঃ গ্যাডগিল দেখতে যাবেন না, কিন্তু এই সমস্ত মানুষের কথাকে সাময়িক সমর্থন করতে হয়, উনি তো তোমাকে নিয়ে বিরক্ত হয়ে থাকলেন।” ... ...
উপসংহারে লেখকরা লিখছেন, “ফাঁসীর আগে ধনঞ্জয় বলেছিল সে নিরপরাধ। গরিব বলে তার ফাঁসী হচ্ছে।" অতি সাধারণ কথা। যেকোনো ফাঁসীর আসামীই একথা বলতে পারে। পুরো বইটা পড়বার পরে এই বাক্যের অভিঘাত কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা। একটা সিস্টেমের কাছে মানুষ কি পরিমাণ অসহায়, সেটা বারবার মনে হচ্ছিল এই লাইনটা পড়ে। বইটা যেদিন শেষ করি, সেটা কালীপূজোর রাত। যেরকম হয়, রাতের স্তব্ধতা ভেঙে মাঝে মাঝে পটকা কি তুবড়ির আওয়াজ আসছে। আমার কাছে তখন কিরকম অবাস্তব লাগছিল সবকিছু। একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। আমার ধারণা, বইটা পড়লে যে কারোর মধ্যেই এই ঘোরটা তৈরি হবে। মানুষ যে framework এ বাস করে, তার ভিত ধরে টান দিলে এরকম হয়। ... ...
প্রশ্ন করা যাক, এই সংস্কারে কাদের লাভ, কতখানি লাভ। ভারতে এখনও সত্তর শতাংশ বিদ্যুৎই তাপবিদ্যুৎ। সবচেয়ে বেশি কয়লা খরচ হয় তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজেই— ২০১৭-১৮ সালের হিসেব বলছে, ভারতে শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছিল মোট ৮৯৬.৩৪ মিলিয়ন টন কয়লা, তার মধ্যে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবহৃত হয়েছিল ৫৭৬.১৯ মিলিয়ন টন, অর্থাৎ ৬৪.৩% । কাজেই, কয়লাখনি বিক্রি হলে কাদের লাভ, সেই খোঁজ করতে গেলে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থার খোঁজ না নিয়ে উপায় নেই। ভারতে সবচেয়ে বড় বেসরকারি বিদ্যুৎ সংস্থার নাম আদানি পাওয়ার লিমিটেড— মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১২,৪১০ মেগাওয়াট। আছে অনিল অম্বানির রিলায়েন্স পাওয়ার— উৎপাদন ক্ষমতা ছ’হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি। সস্তায় কয়লার ব্যবস্থা হলে মন্দ কী? এ ছাড়াও লাভবান হবে টাটা পাওয়ার, জেএসডব্লিউ। প্রসঙ্গত, বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলির জন্যও বিবিধ সুবিধার ব্যবস্থা করেছেন অর্থমন্ত্রী। এটা অনুমান করার জন্য কোনও নম্বর নেই যে দেশের পয়লা নম্বর বিদ্যুৎ সরবরাহ সংস্থার মালিকের নামও গৌতম আদানি। ... ...
উনিশ শতকে নারীর লেখক হয়ে ওঠার যুদ্ধ বহুমাত্রিক অবদমনের গল্প, যার প্রারম্ভে আছে লেখিকার নির্বাসিত মননকল্পনার জিজ্ঞাসা আর অন্য পিঠে এর পরিণামে তার creative unity র ভেতর থেকে উঠে এসেছে বিবাহিত জীবনের ক্লীবত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিশোধস্পৃহা। ... ...