যতই হোক, কাকভোরে ওঠাটা তিরিশ বছরের অভ্যাস বলে কথা। সে অভ্যাস তার জীবনের সঙ্গী হয়ে গেছে। এসব নানা ভাবনার মাঝেই কুরুরু কুরুরু করে রাতের শেষ পালার বা দিন শুরুর ঢ্যাড়া-ঘোষণ দিতে প্যাঁচা ডেকে ওঠে। রাইসমিলের পুব দিকের গেটের পাশের আমড়াগাছে একজোড়া কোটরেপ্যাঁচা থাকে। সুকুমণি শব্দ শুনে নির্ভুল দিক গণে দিতে পারে। সেই ডাকে শেষ রাতটা কেমন ঝমঝম করে ওঠে। উসখুশ ভাব জাগে আকাশে বাতাসে। মিল থেকে লরীর শব্দ আসে। ইঞ্জিন গর্জে উঠে খানিক মকসো করে বেরিয়ে যায় লোড করা চাল নিয়ে কোন হিল্লিদিল্লি। ড্রাইভার খালাসীদের গলা খাঁকারি শোনা যাবে তখন। কারও বা আচমকা জোরে ডেকে ওঠায় কেমন যেন পরিবেশটা সজাগ হয়ে উঠে চোখ কচলে বড় করে তাকাবে। আরও বেশ খানিক পরে মশাগ্রাম থেকে বাঁকুড়াগামী দিনের প্রথম ট্রেনটিও এসে পড়বে হুড়মুড়িয়ে। ... ...
ব্যাঙ্কসি কে, বা তাঁকে কেমন দেখতে, তিনি শ্বেতাঙ্গ নাকি তাঁর গাত্রবর্ণ গাঢ় - সেকথা কেউ জানেন না। অথচ, তিনি ভুবনবিখ্যাত। ক্যামেরার সামনে নিজের মুখটিকে অষ্টপ্রহর ভাসিয়ে রাখার এই ঐকান্তিক প্রচেষ্টার যুগে, তিনি নিজেকে আড়ালে রাখেন - এবং, অনেকে বলেন, এই আড়ালে রাখার সচেতন প্রয়াসই, সম্ভবত, তাঁর বিপণন-কৌশল - আর, সেটাকে যদি কৌশল বলে মেনেই নেন, মেনে নিতেই হয়, সে কৌশল অসম্ভব কার্যকরীও বটে। তিনি পথশিল্পী - রাস্তার ধারের দেওয়ালে তিনি ফুটিয়ে তোলেন নিজের শিল্প - তিনি গ্রাফিত্তি-শিল্পী - এক নিজস্ব ধাঁচের স্টেনসিলে দেওয়ালে আঁকেন সময়ের ধারাভাষ্য। গ্যালারিতে নিয়মিত শো না করেও তিনি বিশ্ববিখ্যাত। ... ...
সত্যি বলতে কি খবরটা পড়ে প্রথমে বেশ রাগ হয়েছিল। কাজল লাগাতে না পারা আত্মহত্যার কোন কারণ হল! তারপর ভাবলাম আমিই বা তবে খুঁজেপেতে স্মাজ-ফ্রি কাজল কিনি কেন? রোজ না হোক, যেদিনগুলোতে পড়াতে হয়, সেমিনার দিতে হয়, কমপ্যাক্ট দিয়ে তেলতেলে মুখ মেরামত করি কেন? হয়ত কাজল ধেবড়ে গেলে আত্মহত্যার ইচ্ছে জাগে না। কিন্তু নিজেকে সুন্দর দেখানোর মহাযজ্ঞে আমিও নাম লিখিয়েছি এবং এর মধ্যে কোথাও আমার নিজস্ব সৌন্দর্যাকাঙ্খা লুকিয়ে নেই। যদি চুল না আঁচড়ে, টি-শার্ট আর র্যাপ অ্যারাউন্ড পরে, তেলতেলে মুখে ক্লাসে ঢুকলে আমার একটুও সমালোচনা হবে না এমন ভরসা কেউ দিত, তাহলে আমি একদম এসব করে সময় নষ্ট করতাম না। ... ...
পরলোকের জীবনকে পান-ভোজনের মাধ্যমে উদযাপনে বিশ্বাস করত এট্রাস্কানরা, তাই কফিনের ঢাকনা আর দেয়ালচিত্র দুই জায়গাতেই এই ছবি। যৌনতা ও নাচগানের দেয়ালচিত্রও সমাধিগৃহে থাকত। দুই, নারী-পুরুষের বৈষম্যও এট্রাস্কান সমাজে কম ছিল। কীভাবে বোঝা যায়? এই ধরনের পানভোজনের দৃশ্যে, গ্রীক সংস্কৃতিতে নারী-পুরুষকে কখনওই একসাথে দেখা যেত না। গ্রীক নারী ছিল মূলতঃ অন্তঃপুরবাসিনী- রাজনীতি ও সমাজে তার ভূমিকা ছিল সীমিত। অতএব গ্রীক কুমোরশিল্পে গোষ্ঠীগত পানভোজনের দৃশ্যগুলোতে পুরুষেরাই একে অপরের সাথে থাকত। রোমানরাও এই ব্যাপারে গ্রীকদের থেকে খুব আলাদা ছিল না। অন্যদিকে এট্রাস্কানদের পানভোজনের দৃশ্যে নারী-পুরুষ একত্রে সামাজিকতা করত। ... ...
বগটুই গণহত্যাকাণ্ডের অব্যবহিত পরে কবি জয় গোস্বামীর লেখা কবিতা নিয়ে ‘দগ্ধ’ নামে একটি পুস্তিকা আমরা প্রকাশ করেছিলাম। বগটুই এবং তার পরবর্তীকালে আরও কয়েকটি নারীনির্যাতন, ধর্ষণ এবং হত্যার প্রতিক্রিয়ায় জয় গোস্বামী আরও কিছু কবিতা লিখেছিলেন। সেই সবকটি লেখা নিয়ে আমরা প্রকাশ করতে চলেছি আরেকটি বই – ‘নিজের বিরুদ্ধে’। পার্টি-প্রশাসন-পুলিশের হাতে আক্রান্ত অসহায় নির্যাতিতা এবং তার পরিজনদের দুরবস্থার এক দলিল হয়ে থাকবে এই কবিতাগুলি। এই লেখাগুলির প্রেক্ষিত সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা হলেও, পরিসর আরও ব্যাপ্ত। যে শাসনকাঠামোয় আমরা জীবন কাটাচ্ছি, তার সুযোগ-সুবিধাগুলি নিয়ে দুধেভাতে সংসার প্রতিপালন করছি, সেই কাঠামোর নৃশংসতা নিশ্চিতভাবে আমাদের নিজেদের দিকেও আঙুল তুলে দেয়- এই উপলব্ধির আয়না আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন কবি। ... ...
পায়ের তলে পদ্মরেণু, মুঠোয় গহন দীঘি চোখের ভিতর উড়ছে আকাশপ্রদীপ আফ্রোদাইতি,ম্যাজিক ছিলো,তোমার গ্রীবাস্থলে ... ...
আমার বন্ধুদের মধ্যে যেন বোমা পড়ল। কেউ ভাবতে পারেনি আমি ওই সম্পর্কে কখনও থাকব না, এমন হতে পারে। আর কারণটা জানাতে শুরু করলাম সবাইকেই, কিছু না লুকিয়ে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে কিছু মানুষের সঙ্গে আলাপ হল। সমকামী ও রূপান্তরকামী নারীপুরুষ সকলে। একটা অদ্ভুত জগৎ। সবটার সঙ্গে নিজেকে না মেলাতে পারলেও, চেষ্টা করতাম – যতটা পারা যায় জ্ঞান সঞ্চয় করতে। মনে হত, আর কোনও পরীক্ষা কি আছে, যা থেকে বোঝা যাবে আমি কী? আমার তো কোনও সমকামী সম্পর্কও নেই। কী করে প্রমাণ দেব, যে আমি সমকামী? কী করে বাকিদের বোঝাব, যে আমার সম্পর্ক ভাঙার আর কোনও কারণ নেই এটা ছাড়া? কী করে জাস্টিফাই করব আমার দাবি? ... ...
বন্যার জলের মত অভিযোগ আসতে লাগল। ভুল চিকিৎসায় পা কেটে বাদ দেওয়া, যে সব চিকিৎসা করাই হয়নি তার অর্থ আদায় করা, বিদেশে ভ্রমণরত...... , মৃত রোগীকে বাড়ির লোকের অমতে ভেন্টিলেটরে চাপিয়ে দশ লক্ষ টাকার ফর্দ ধরানো, হৃদধমনীর মধ্যে যে ‘স্টেন্ট’ বসানো হয়েছে বলে টাকা নেওয়া হয়েছে – রোগীর মৃত্যুর পর ময়নাতদন্তে সেই বস্তুগুলির অস্তিত্ব খুঁজে না পাওয়া, এককথায় গুণতে গেলে গুণের নাই শেষ। বহু দিনের পুঞ্জীভূত অবরুদ্ধ অভিযোগ, অশ্রু, ক্ষোভ, ভুল চিকিৎসায় বা অবহেলায় স্বজন হারানর যন্ত্রণা এবং বারবার প্রতারিত হওয়ার ক্রোধ হড়পা বানের মতো নেমে এল মুদ্রিত ও বৈদ্যুতিন মাধ্যমের পাতায় পাতায়। সাংবাদিক মহলে হৈ হৈ পড়ে গেল – কে কত রোমাঞ্চকর, অশ্রুসিক্ত, ভয়াবহ ঘটনা তুলে ধরতে পারেন এই বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবসাকে কেন্দ্র করে। ... ...
বরযাত্রীরা হিন্দুদের বিয়েতে ছাদনাতলাতেই খেতেন। মাথায় শামিয়ানা টাঙানো হতো। চারদিক সমান মাথা। সেখানে। গ্রামের মানুষদের বাড়ির দাওয়া বা আঙিনায়। কেউ কেউ গোয়াল ঘর পরিষ্কার করেও খাওয়াতেন। হিন্দু মুসলমান আলাদা বসানোর রীতি তেমন ছিল না, কিন্তু জাতপাত মানা হতে দেখেছি। শ্রাদ্ধ বাড়িতে বামুন তো আগে খেতোই, বিয়ে বাড়িতে শেষে খেতে দেওয়া হতো তফশিলি জাতির মানুষদের। বিশেষ করে বাগদি মুচিদের। আমাদের গ্রামের প্রশান্ত মজুমদার নামে ব্রাহ্মণ সন্তানের বিয়েতে এই ভেদ উঠে যায়। ... ...
ট্রপিকাল থেকে ছাড়া পেয়েছি প্রায় দু’মাস। এখনও দুই সপ্তাহান্তে একবার যেতে হয় হাসপাতালের আউটডোরে। লাইন দিতে হয়। টিকিট কাটতে হয়। অপেক্ষায় থাকতে হয়, কখন খিটখিটে দিদিটা নাম ধরে ডাকবে। কোন ডাক্তার যে দেখবে, ভগা জানে। কমবয়সী ডাক্তারগুলো হেসে কথা বলে, আমার সঙ্গে নয় সবার সঙ্গে। মৃদু কথা বলে। কেন? এখনও তালেবর হ’য়ে ওঠেনি তাই ? আমাকে ওরা পরীক্ষা করে, তারপর বসিয়ে রাখে ডাক্তার সাহার জন্য। তিনি এলে আবার পরীক্ষা করেন। ওষুধ লিখে দেন। সে ওষুধের জন্য ফার্মাসীতে দীর্ঘ লাইন দিতে হয়। তারপর উইণ্ডোতে পৌঁছালে ভোরিকোনাজল আছে কি না সেটা দেখতে স্টোরে পাঠানো হয়। থাকলে পেয়ে যাই। নৈলে পরদিন লাইন। একদিন তো অধৈর্য হয়ে বেরিয়ে যাবার মুখে ডাক্তার সাহার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। ‘দাঁড়ান, দাঁড়ান, কোথায় যাচ্ছেন’ বলে রাস্তার পাশে একটা হাফ ওয়ালে বসেই পেট টিপে, স্টেথো লাগিয়ে, অজস্র প্রশ্ন করে তবে ছাড়লেন। লাইনে দাঁড়ানো অসংখ্য রুগী সাক্ষী রইলেন এই অপূর্ব চিকিৎসার। ... ...
বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিত মাথায় রেখে রাজ্যের সব রাজনৈতিক দলগুলি এই ধর্নামঞ্চের দিকে যে লক্ষ্য রাখছে সে কথা নিশ্চিত করে বলা যায়। সংগঠকদের কথা মত গ্রাম ও শহরতলি থেকে ক্রমশ কৃষক ও তাঁদের সমর্থক, অন্যান্য সাংস্কৃতিক ও গণআন্দোলনের কর্মীরা নিয়ত আসা-যাওয়া শুরু করলে যে মেলবন্ধন তৈরি হবে, তা অতীব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। ... ...
সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার যেটা, সেটা হল রায়া সরকার এবং আরও কয়েকজন, যারা মেহমুদ ফারুকি আর খুরশিদ আলম ধর্ষণ মামলায় সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান নিয়েছিলেন, তাঁদের ভোল বদলানো বা পালটি খাওয়া। কিছু স্বাক্ষরকারীর মতে উভয় ক্ষেত্রেই যেহেতু বিশেষভাবে ধর্ষণের অভিযোগই করা হয়েছে, তাই তার বিচারের ক্ষেত্রে নির্ধারিত পদ্ধতিতেই এগোন দরকার। মেহমুদ ফারুকির মত খুরশিদ আলমও আমাদের অনেকের কাছেই পরিচিত ছিলেন। উভয়ক্ষেত্রেই যে নারীবাদীরা অভিযোগ সমর্থন করেছিলেন, উদার বামপন্থী নারীবাদী বৃত্তের ভেতর থেকেই তাঁদের ‘ফেমিনাজি’ বলে আক্রমণ করা হয়েছিল। ‘ফেমিনাজি’ অর্থাৎ কোনও প্রমাণ ছাড়াই যারা পুরুষের বিরুদ্ধে আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিন্তু আমাদের অবস্থানটা হল এইরকম যে যেকোন অভিযোগকে বিচার পাওয়ার দিকে এগিয়ে দেবার আগে আমরা তার ‘প্রমাণ’ চাইব না কিন্তু আশা করব যে কি ধরণের অভিযোগ জানানো হছে সে বিষয়ে অভিযোগকারীর যেন পরিষ্কার ধারণা থাকে। আমরা জানি খুরশিদের ক্ষেত্রে অভিযোগকারিণী মধু কিশওয়র অভিযুক্তের সঙ্গে তাঁর একটা ভিডিও রেকর্ডিং বানিয়েছিলেন আর প্রথামাফিক অভিযোগ জানানোর আগেই সেটা গণমাধ্যমে ছেড়ে দিতে প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু এঁরা যখন অন্য নারীবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তখন তাঁরা এইভাবে এগোনোর বদলে সঠিক পদ্ধতিতে অভিযোগ দায়ের করতে উৎসাহিত করেছিলেন। দুঃখজনকভাবে খুরশিদ আত্মহত্যা করায় এই মামলা বন্ধ হয়ে যায়। যে নারীবাদীরা এই দুই ক্ষেত্রে অভিযোগকারিণীদেরসমর্থন করেছিলেন, তাদেরই ফেমিনাজি বলা হয় কারণ তাঁরা গণমাধ্যমের বিচারে (মিডিয়া ট্রায়ালে) আগ্রহী, যার সবটা তাঁদের আয়ত্তে থাকে না। আশ্চর্যজনকভাবে রায়া সরকার, যিনি একদিন কবিতা কৃষ্ণণকে সাম্প্রদায়িক আর ফেমিনাজি হওয়ার জন্য ব্যক্তিগত আক্রমণ পর্যন্ত করেছিলেন (সেই সব পোস্ট অবশ্য পরে ডিলিট করে দিয়েছেন), তিনিই আজ কোনও প্রেক্ষিত বিচার না করেই যেকোনও পুরুষের ওপর যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনাকে উৎসাহ দিচ্ছেন। অন্য নারীবাদীরা যারা সেই সময় আমাদের আক্রমণ করেছিলেন আশ্চর্যজনকভাবে তাঁরাও দিক বদলে অন্য দিকে চলে যাচ্ছেন অতি দ্রুত। তাহলে কে এই দুই বিপরীত পক্ষ তৈরী করে তাদের লড়িয়ে দিল আর কোন দিকটাই বা বেশি ক্ষমতাবান! ... ...
গাজন - সোমনাথ রায় লিটলমেঘ মেলা - শুভ্রনীল সাগর গণেশ পাইনের রানি - শিবাংশু দে না-হওয়া কথারা -সোনালি সেনগুপ্ত দৃষ্টিকোণ - শান্তনু রায় মামুলি কথা -মলয় ভট্টাচার্য মুকুর - শ্ব মর্স কোড - অধীশা সরকার গুহালিপি - চিরন্তন কুণ্ডু মনান্তর - নিশান চ্যাটার্জী স্বগতভাষণ - সুমন মান্না ফেরা - মিঠুন ভৌমিক ... ...
ভারত সরকারের প্রাথমিক কর্তব্য এদেশের সমস্ত নাগরিককে সন্ত্রাস বিধ্বস্ত আফগানিস্তান থেকে সুষ্ঠভাবে দেশে ফিরিয়ে আনা। সেইসঙ্গে ভারতের সরকার ও বর্তমান শাসক দলের উচিত এই পরিপ্রেক্ষিতে সি এ এ আইনটিকে গভীরভাবে পুনর্বিবেচনা করা। এই আইন যখন মুসলিমদের শরণার্থী হিসেবে নাগরিকত্ব প্রার্থীর তালিকা থেকে বাদ দিয়েছিল, তখনই এর প্রতিবাদ হয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে আফগানিস্তানের মুসলিমদের ভারত সহ বিভিন্ন দেশে তালিবানি সন্ত্রাসের পরিপ্রেক্ষিতে আশ্রয় ও পুনর্বাসন কতটা প্রয়োজন। তালিবানকে দেখিয়ে সমস্ত মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে নিশানা করার ঘৃণ্য অপচেষ্টাও কোনও কোনও শিবির থেকে লক্ষ করা যাচ্ছে। যদিও বাস্তবে যে বিশ্ব জনমত তালিবানি বর্বরতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে, তার মধ্যে মুসলিম সমাজের মানুষজন রয়েছেন বিরাট সংখ্যায়। এই ঘৃণা বিদ্বেষের রাজনীতিকে শক্ত হাতে মোকাবিলা করা দরকার। তালিবানি শাসনের প্রত্যাবর্তন দেখিয়ে দিচ্ছে রাষ্ট্রের সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক তৈরির চরম ক্ষতিকর চেহারাটি কেমন হতে পারে। বিশ্বের যেখানেই আধুনিককালে রাষ্ট্র ও ধর্মের নৈকট্য সৃষ্টির চেষ্টা হয়েছে, সেখানেই গণতন্ত্র ও আধুনিকতা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। ধর্ম ও বিশ্বাসকে ব্যক্তিগত পরিসরে আবদ্ধ রেখে রাষ্ট্রকে ধর্মমুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালনা কতটা দরকারি – বর্তমান আফগানিস্তান তা আরেকবার চোখে আঙুল দিয়ে দিচ্ছে। ... ...
বাংলাদেশে নারীদের পথ খুব একটা সোজা না। নারী কে প্রতি পদে পদে প্রমাণ করে তারপর তার ন্যায্য হিস্যা বুঝে নিতে হয়। একজন নারী এগিয়ে যাবে আর তার সামনে কোন প্রতিবন্ধকতা আসবে না এমন তো শুধু বাংলাদেশে না, পুরো দুনিয়া জুড়েই হয় না। কম আর বেশি, নারীর অবস্থা করুণ। যেখানে সোজা রাস্তায় হেঁটে গেলে কথা শুনতে হয় সেখানে একজন নারী খেলবে ক্রিকেট? এশিয়া কাপ জেতার পরে এখনো অকল্পনীয় মনে হয় ব্যাপারটাকে। যারা ওই সব প্রবল বাঁধা অতিক্রম করে এগিয়ে গেছে তারা জয়ী হবে না তো কে হবে? ... ...
কোভিড-১৯ মহামারীর সামগ্রিক প্রভাব বুঝতে গেলে, শুধুমাত্র কতজন আক্রান্ত হয়েছেন, এই রোগের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা, কোভিড-১৯ কেস সনাক্ত করতে পরীক্ষার সংখ্যা- এই সূচকগুলোর ওপর জোর দিলে হবে না। এপিডেমিওলজিক্যাল মডেলগুলোর পূর্বাভাসও একটি অসম্পূর্ণ চিত্রই প্রকাশ করে, কারণ মডেলগুলো বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন বয়েসের এবং পেশার মানুষ- মহিলা ও পুরুষ- কিভাবে সামাজিক ভাবে মেলামেশা করে সেই জটিল ব্যাপারটাকে একত্রিত করতে পারে না কারণ ডেটা নেই। আবার মহামারীটির প্রভাবের ভয়াবহতা বর্ণনা করতে গিয়ে মডেলগুলো শুধুমাত্র উপরোক্ত সূচকের কথাই বিবেচনা করে- ফলে স্বাভাবিক ভাবেই এপিডেমিওলজিক্যাল মডেলগুলো বলে যে দু-সপ্তাহ লকডাউনের থেকে চার-সপ্তাহ লকডাউন ভালো, চারের থেকে আট ভালো ইত্যাদি। কিন্তু সার্বিক বিচারে সেটা ঠিক নাও হতে পারে, দেখা যাক আমাদের সার্ভে কি বলে। ... ...
বহু সংগঠন, সরকারি ও বেসরকারি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক, বহুদিন ধরে কাজ করছে, রিপোর্ট জমা দিচ্ছে। নীতি নির্ধারণ হচ্ছে, আইনকানুন লেখা হচ্ছে। তবু কেন মেটে না সমস্যা? তাবৎ বিশ্বের সব দেশ হাতে হাত রেখে চলতে কেন এতো অপারগ? কারণ, যেমন বাড়ির মধ্যে আমি আর আমার গৃহসহায়িকার দায়িত্ব আর ভূমিকা একরকম নয়, তেমনিই ধনী আর দরিদ্র দেশগুলির গপ্পোগুলোও আলাদা আলাদা। ... ...
রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠনগুলোর লক্ষ্য কী? মোটা দাগে ৪টি লক্ষ্য : এক. আরাকানে রোহিঙ্গাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, দুই. রোহিঙ্গাদের আবাসভূমি হিসেবে আরাকানকে স্বাধীন করা, তিন. বাংলাদেশের কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু অংশ ও আরাকান নিয়ে একটি স্বাধীন ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। চার. আরাকানে ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা। এই লক্ষ্যে যেসব সংগঠন কাজ করছে সেগুলো হচ্ছে―রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), হরকাতুল ইয়াকিন, আকামুল মুজাহিদিন আরাকান, ফেইথ মুভমেন্ট অব আরাকান, রোহিঙ্গা আজাদি ফোর্স, জমিয়তে ইত্তেহাদুল রোহিঙ্গা, জমিয়তে ইত্তেহাদুল ইসলাম, আরাকান রোহিঙ্গা ইউনিয়ন, বার্মা আরাকান অর্গানাইজেশন ইউকে, ভয়েস অব রোহিঙ্গা ইউনাইটেড, রোহিঙ্গা রিফিউজি হিউম্যান রাইটস, আরাকান পিপলস ফ্রিডম পার্টি, অ্যাসেম্বলি অব রোহিঙ্গা অ্যাসোসিয়েশন, আরাকান রোহিঙ্গা স্টুডেন্ট ডেমোক্রেসি অ্যাসোসিয়েশন, আরাকান ইউনাইটেড ফোর্স, আরাকান আর্মি (এএ), আরাকান লিবারেশন ফ্রন্ট (এএলপি), আরাকান পিপলস আর্মি, আরাকান রোহিঙ্গা ফোর্স, সাওতুল্লাজিন, ইত্তেহাদুল ইসলাম প্রভৃতি। ... ...
আড়া হয়ে মুচিপাড়া ফেরার পথে, আড়া হোস্টেল মোড়ের কাছে মাঝের পাড়ার আর একটা পথ। রিক্সায় বসেছিলেন ষাটোর্ধ্ব চালক। নাম অজয় যাদব। কাকে ভোট দেবেন? "দেবো। কংগ্রেস, বিজেপি, তৃণমূল, দেব একজনকে।" প্রতিবার এক একটা দলকে সে ভোট দেয়। এবার এখনও সে ঠিক করেনি কাকে ভোট দেবে। ... ...
বেবী সাউ-এর কবিতা ... ...