আজ গুজার কাটা মাছের রসা হবে। আর হবে পুঁটি মাছের জ্বালের ঝোল। ডালে এবার কাটা পড়ল, তা ঘুরানো হল নরম হাতে। যেন কিছু ডাল আস্ত থেকে যায়। জলে ভালোভাবে সেদ্ধ ডাল মিশে যেতেই তাতে পড়ল কতগুলো বুক-চেরা কাঁচামরিচ। কাঁচামরিচ আর ডাল ফুঁটে হাওয়ায় মিশতে শুরু করল ঘ্রাণ। রান্নাঘরের কালো ঝুল কালি মাখা কালো জানালা পেরিয়ে সেই ঘ্রাণ গিয়ে দাঁড়াল উঠোনে। উঠোনে তখন বারবেলার রোদ সবে গা মেলেছে। সেই রোদে পেয়ারা গাছের ডাল দুলে দুলে ছায়ার আল্পনা আঁকতে। ... ...
আপনি যখন আপনার ফোনে কোন অ্যাপ ইনস্টল করেন তখন নানারকম টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনকে মেনে নিতে হয় (সময় বাঁচাতে আমরা এই টার্মসগুলো না পড়ে I accept –এ ক্লিক করে ফেলি)। সংশ্লিষ্ট অ্যাপটি (উদাহরণ স্বরূপ ধরুন ফেসবুক) আপনার ফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন ডেটাতে অযাক্সেস পেয়ে যাইয়, যেমন আপনার লোকেশন,মেল আইডি,আপনার ক্লিকিং হ্যাবিট, বন্ধুবৃত্ত, আপনার রোজকার যাতায়াতের রুট, বাইং হ্যাবিট, ফোনের গ্যালারি এবং অবাক লাগলেও সত্যি ফোনের ক্যামেরা এবং মাইক্রোফোনেও অ্যাক্সেস পায় কিছু কিছু অ্যাপ। অর্থাৎ আপনি কী শুনছেন, কী বলছেন বা কি দেখছেন সবই সেই কোম্পানিগুলো দেখতে/শুনতে/অ্যাক্সেস করতে পারে।এখন প্রশ্ন হল আপনি আপনার স্পাউসের সাথে কোন রেস্তরাঁয় খেতে যাবেন সেই নিয়ে আলাপ আলোচনা করছেন অথবা অন্য শহরে থাকা মা-বাবার সাথে তাঁদের মেডিক্লেমের টপ আপটা বাড়িয়ে নেওয়া বিষয়ে কথা বলছেন জেনে সেই কোম্পানির লাভ কী? ... ...
আমার এক কাকু মারা গেলেন। খারাপ লাগা কালকে অটো না পাওয়ার মতো ফেলে দেওয়া মদের বোতলের মতো...ফাঁকা রাস্তায় কলেজ থেকে ফেরা তিনটি মেয়ের ধরিয়ে নেওয়া সিগারেট...তারপর বোসপুকুর ছাড়িয়ে কসবা থানার আগে একটা ওয়াইন শপে একটি মেয়ের কিনে নেওয়া হাফ লিটার...বয় ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া করার রোপোয়ে...কিন্তু চারদিকের আলো হাতের মেহেন্দির মতো...পায়ের হিলের ছুঁচলো যৌনতায় শহর স্লিপ খায়...যেভাবে অভাবের গায়ে গায়ে উঠে এসেছে আরেকটা দিন...যেখানে অনেকদিনের কাজ করা প্রতিবাদ নিশান বদলে পাঁচিলে উঠে দেখছে...আমার রুচি মিলছে না...আমি এখানে আমি বাফার হয়ে গেছি...আমি বিষাদের বাগানে বেঁজির মতো বিষাক্ত সাপ...যার চোখের মধ্যবিত্ত লেন্স নেই...খুলে গেছে কবে...তবে এই ঘষা-খাওয়া কালচারে আমি নেই...রেপ্লিকা...ম্যানুয়াল লেবার হয়ে গোপনীয়তা বলছে...বাহ কি বানিয়েছে গুরু...কিন্তু প্রথম দিন থেকেই আমি প্রথমের দলে নেই...আমার তো আর সবার মতো ছকে চলে না...সিস্টেমকে অলটার করতে এসে দেখি ওই তো পায়রার বাসা...ওই তো বেলে-ঘাটা,প্রিটোরিয়া স্ট্রিট...কিন্তু জীবন বি-এস-এন-এল...সারা জীবনে বাজে লোকদের সাথেই লড়ে গেলাম।ভালোমানুষ গোটা কতক...যদিও আমার ভিতর ভাল্লুক ও বেড়াল দুজনেই আছে।আমারও সব কিছু করতে ইচ্ছে করলেও সমাজ জানলা টেনে ধরে...কিন্তু আমি যে তাইওয়ানের মতো বেঁচে থাকতে চাই...আমি শেষ সর্ট-এ জেতে ম্যাচ...তবু গিটার বাজাবো ভেবেছিলাম...ভেবেছিলাম নতুন কিছু করবো...সেই আলাদা হতে গিয়ে বিপদে পড়েছি...কারণ সোসাইটি একটা ক্লাবের মতো...এইবার প্ল্যাস্টিক ছেড়ে বেড়িয়ে আসা দালাল স্ট্রিট ...এইবার সব গলি উন্নয়নের মেকি স্বপ্নিং কম্প-প্লেক্স...আমি সাউথ-সিটি কোয়েস্টমল যেতে চাইনা...বাইরের বিশ্বায়ন আমার নয়...আমার কাছে ভিতরটাই দামি...ভিতরে তবু সবাই পিছিয়ে পড়ে আছে/বাইরে আগামি... আবার ভিড়ে ক্লান্ত শহরের গুটিপোকা সুন্দরী...প্রেম-ভাঙা প্রেম-জাগা প্রেমময়...এশিয়ান গেমস...কি হচ্ছে কি হচ্ছে না জানি না...করাপশন...মিডিয়াহাইপ...পেজ থ্রি...জানি না...তাও কবিতা জেগে থাকে...মামমামময়...আমার সততা...উড়ে যাওয়া রেবেল...আমি জানাই...আমি যতই মাথা নিচু করে থাকি,সময় হলেই চে হয়ে যেতে পারি...আমি আপাতত কিছুই জানি না...নকল...ভণ্ডামি আর মধ্য-মেধার বিছুটিতে আমি নেই...আমার খারাপ লাগে।খারাপ লাগে বলেই লিখতে বসে...লেখার উদারতা আমাকে অনেক শিখিয়েছে...তাই এতো কিছুর পরেও জীবনে প্রথম আজ রাত ৭টা থেকে সারা কলকাতা ঘুরবো...কোথাও তোমাদের সাথে দেখা হয়ে যাবে...সিনেমার পর্দায় এখন হাত ডুবিয়েছে মহাকাশ...আপাতত সব সৃষ্টিরা মিশে যাক...যাক মিশে। ... ...
জনপ্রিয় সিনেমা আসলে সমাজের মূলধারার চিন্তার প্রতিফলন।আমাদের সমাজে বেশীরভাগ তথাকথিত উদার মানুষ, যারা সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং যারা সাম্প্রদায়িক বিভেদের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন, দূর্ভাগ্যজনকভাবে তারা অনেকসময়ই নিজেদের বিশ্লেষণকে এই সিনেমাটির মত করেই সীমিত করে রাখেন।আমরা অনেক সময়ই নিজেদের সুবিধাভোগী অবস্থান থেকে, ‘উচ্চ’ অবস্থান থেকে, ভুক্তভোগীদের, এক্ষেত্রে নির্দিষ্টভাবে মুসলমান সমাজের অবস্থা বিশ্লেষণ করতে চাই।এটি খুবই বিপজ্জনক ঝোঁক।যেমন, অনেক সভা-সমিতিতে দেখি, হিন্দু মৌলবাদের কথা বললেই, লোকজন বলেন যে, সব মৌলবাদই খারাপ। সমান গুরুত্ব দিয়েই নাকি মুসলমান মৌলবাদের কথা বলতে হবে।নিশ্চই মৌলবাদ মাত্রই খারাপ।কিন্তু আমাদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে হিন্দু মৌলবাদ বেশী বিপজ্জনক কারণ মুসলমানরা এদেশে সংখ্যালঘু।সংখ্যাগুরুর মৌলবাদ এবং সংখ্যালঘুর মৌলবাদ কখনই এক নয়। ... ...
বোড়ো সাহিত্যে আর সব ভারতীয় ভাষার সাহিত্যের মতোই সৃজনেরই সুবাস। কিন্তু এতদিন বাঙালি পাঠকের কাছে সে সৌরভ এসে পৌঁছোয়নি। সেই অভাব কিছুটা দূর করল বাংলা তরজমায় বোড়ো গল্পের একটি সংকলন। পড়লেন সাহিত্যিক ও তরজমাকার তৃষ্ণা বসাক ... ...
ঈদের পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে আমার কাছে সেরা লাগে হচ্ছে ঈদের বাড়ি ফেরা। ঈদের দুই একদিন আগে কেউ যদি মফস্বল কোন শহরের বাসস্ট্যান্ডের দিকে খেয়াল করে তাহলে দেখতে পাবে ঘরে ফেরা কিছু মানুষের মুখ। এই মুখ গুলো ভ্রমণের ধকলে ক্লান্ত। সাথে কয়েকটা ব্যাগ, আণ্ডা বাচ্চা নিয়ে বিধ্বস্ত একেকজন। বাস থেকে নেমে রিক্সা নিলো হয়ত, ব্যাগ নিয়ে গুছিয়ে রিক্সায় বসার পরে রিক্সা ছেড়ে দেওয়ার অল্প কিছুক্ষণ পরে এই যাত্রীদের যে চেহারা হয় তা আমার কাছে সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য। ক্লান্ত কিন্তু কী একটা আলাদা আনন্দ, আলাদা সুখানুভূতি খেলা করে যায় একেকজনের চেহারায়। হয়ত ঢাকায় থেকে পড়াশোনা করে কোন তরুণী, একটা ব্যাগ নিয়ে রিক্সায় ক্লান্ত চেহারা নিয়ে যখন বাড়ির দিকে যেতে থাকে তখন তার মনের অনুভূতি ব্যাখ্যা করে এমন কেউ কী আছে? ... ...
নেনোরা ছিল বেশ কয়েকভাই। নেনোর ব্যবহার ছিল খুব মিষ্টি। সবসময় হেসে কথা বলতো। সেই নেনো অসুস্থ জেনে এবং কলকাতা নিয়ে গিয়ে ডায়ালিসিস না করালে ছেলেটা বাঁচবে না জেনে জোর ছোটাছুটি শুরু করে দিলাম। পার্টি অফিসের মালেকদা চিঠি লিখে দিলেন। বললেন, কলকাতায় কার্তিকদাকে দিতে। ... ...
জিন-শেরি-শ্যম্পেন-রাম-হুইস্কি-ভদকা— কে না জানে? কিন্তু দ্ব-চুনি, মুলি, চুজাংগি, মাতে, সিংগানি, পিস্কো…? অরণ্য-বৈচিত্র্য অন্তর্হিত হওয়ার সঙ্গে আদিবাসীদের সুপ্রাচীন পানীয় হারিয়ে যাওয়ার পরিতাপের কথা? কিংবা ঢাকা-কলকাতায় স্রেফ খাঁটি পরিশ্রুত জল সরবরাহের কিস্সা-কাহিনি? একটি আদ্যোপান্ত পানাসক্ত সংকলন। পাঠ করলেন রসনারসিক কলমচি দীপ্তেন। ... ...
সেই সকালে, বাবুদা যে দিন দু’টাকা চেয়ে আমাকে বিড়ম্বনায় ফেলে দিয়েছিলেন, আমার হাতে সে দিন অনেক টাকা৷ কিন্তু আমার নয়, স্কুলে এনসিসি-র অনুষ্ঠানের জন্য সহপাঠীদের চাঁদার টাকা৷ রবিবার সকালে এনসিসি স্যারের হাতে তুলে দেওয়ার কথা৷ সাত-পাঁচ না ভেবে, একটু যেন দয়াপরবশ হয়ে স্কুলে ঢোকার মুখে, চার ধারে কেউ কিছু বুঝতে না-পারে, এমন ভাবে বাবুদার হাতে পাঁচ টাকার একটা নোট গুঁজে দিয়ে হাঁটা দিলাম৷ ... ...
থ্রি নট থ্রি রাইফেল বাগিয়ে ধরে আড়ষ্ট কনস্টেবল বললেন- 'স্যার, আমাকে একটু গার্ড দিয়ে রাখুন। গুলি চালানোর অর্ডার নেই, শুনেছি এইসব অঞ্চলে বন্দুক ছিনতাই হয়। বন্দুক গেলে চাকরিতে টান পড়বে' ২০২৩ এর ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটকর্মীদের নিরাপত্তা দিতে আসা রাজ্যপুলিশের নিরাপত্তারক্ষীরা নিজেরাই নিরাপত্তাহীনতায় অস্থির, ভোটার বা ভোটকর্মী কোন ছাড়? অঞ্চলটি আমডাঙা। পুলিশের মুখে এ-কথা শুনে ভোটকর্মীরা হাসবেন না কাঁদবেন বুঝে উঠে পারছেন না। কিংকর্তব্যবিমূঢ় দশা তাঁদের। ... ...
বিষয় নির্বাচন, ঘটনাবহুল দ্বন্দ্ব-সংঘাতপূর্ণ সেই বিষয়কে পর্বে পর্বে বিন্যস্ত করা, চরিত্রনির্মাণ, তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক এবং সংঘাতের চিত্রণ, বিশেষত নারীচরিত্রের রহস্য, সৌন্দর্য, সংকীর্ণতা এবং মহত্বের অসাধারণ উন্মোচন, নদী-জল ভিত্তিক জীবনের ছবিকে তার নিজস্বতায় প্রতিষ্ঠিত করা এবং সর্বোপরি জীবনকে জয় করা এবং তাকে প্রতিষ্ঠার জন্য জোটবদ্ধ লড়াইয়ের অনিবার্যতা - এ সবই অসামান্য স্বাভাবিকতায় প্রতিষ্ঠিত এই উপন্যাসে। লেখকের মুন্সিয়ানার মূলে আছে এই নিপীড়িত, নিঃস্ব মানুষগুলোকে খুব কাছ থেকে দেখে পরম মমতা এবং ভালবাসায় তাদের আত্মীয় করে নেওয়া। নইলে এই উপন্যাস রচনা করা সম্ভব হত না। বিশেষত ওপার বাংলার মানুষের কথ্য ভাষার এমন নিপুণ ব্যবহার গভীর বন্ধুত্ব ছাড়া কিছুতেই সম্ভব নয়। গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়ার উপলব্ধ সত্য যে কত খাঁটি তা অসিত কর্মকারের এই গভীর এবং নিবিড় কর্মে ছত্রে ছত্রে প্রতিফলিত। একেবারেই ত্রুটি নেই,এ কথা আমি বলব না। রাজনীতি, দল এই প্রসঙ্গগুলো এসেছে তবে তাৎপর্যপূর্ণভাবে নয়। সে যাই হোক, অসিত কর্মকার তাঁর যে সৃষ্টি আমাদের উপহার দিলেন তার জন্য আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ থাকব। ... ...
এইসব অর্বাচীনদের লাল চোখকে ভয় পেয়ে তো আর প্রশ্ন না করে থাকা যায় না। প্রশ্ন করাই ভারতবাসীর স্বভাব। নচিকেতা যমকে পর্যন্ত প্রশ্ন করতে ছাড়েনি, আর জিভ কেটে দেওয়ার হুমকি দিয়েও ক্ষণার প্রশ্নবান থামানো যায়নি। তাই আসুন, কয়েকটা সোজা প্রশ্ন করি, তার সোজা উত্তর চাই। রাতারাতি কেন এত টাকা বাতিল করা হল? ... ...
কুমুদি রইলেন তাঁর গ্রন্থিত-অগ্রন্থিত গল্পে, প্রবন্ধে, কবিতায়, স্মৃতিতে। স্মৃতিস্তম্ভের স্থবিরতাকে ভালবাসিনি আমরা, চাইছি স্মৃতির চলমানতা। অক্ষর বেয়ে বেয়ে পরের প্রজন্মে পৌঁছে যাক কুমুদি- তারা চিনুক আমাদের কুমুদিকে, ভালবাসুক, লেখা পড়ুক, পড়াক বন্ধুদের। কুমুদিও তাদের চিনতে চাইবেন- বলাই বাহুল্য। স্মিত সহাস্য মুখে জিগ্যেস করবেন- কই , কী লিখচ , শোনাও দেখি। এই সব অলীক চেনাজানাকে বাস্তব করতে গুরুচণ্ডা৯ শুরু করছে বার্ষিক 'কুমুদি পুরস্কার' - কিশোর কিশোরীদের গল্প লেখার প্রতিযোগিতায়। ... ...
জন্মপরিচয়ের উপর এত গুরুত্ব কেন? তার কারণ দারায়ুস সাইরাসের বংশজাত ছিলেন না, আর সাইরাস এবং তিনি একই বংশজাত সেটা প্রমাণ করার দায় তাঁর ছিল। তার জন্য আমাদের দেখতে হবে দারায়ুস কীভাবে সিংহাসনে বসেন। সাইরাসের মৃত্যুর পর সিংহাসনে বসে তাঁর পুত্র দ্বিতীয় ক্যাম্বিসেস, আর তার মৃত্যুর পর সাইরাসের অন্য পুত্র বরদিয়া। কিন্তু রাজদরবারের সাতজন সম্ভ্রান্ত মানুষ দাবি তোলেন এই বরদিয়া সত্যিকারের বরদিয়া নয়, সে আসলে একজন ম্যাজাই (জাদুকর), যে ছদ্মবেশ ধরে বরদিয়া সেজে বসে আছে- যার আসল নাম গৌমাত। সাতজন সম্ভ্রান্ত মিলে এই গৌমাতকে হত্যা করে- দারায়ুস তাদেরই একজন। ইতিহাস কোনওদিনই জানতে পারবে না এই গৌমাত আদৌ কোনও ছদ্মবেশী বহুরূপী ছিল, না কি সিংহাসনের ন্যায্য উত্তরসুরী বরদিয়াই ছিল, যাকে ছলনা করে সরানো হয়। ... ...
বাস্তবের অন্তরালবর্তী হাজার অনুভূতির আবিষ্কার-পুনরাবিষ্কার কিংবা পরীক্ষণ-পুনর্নিরীক্ষণই হয়তো শঙ্খ ঘোষের কবিতার সহজ সংজ্ঞা। তাঁর নীচু গলার প্রায় প্রতিটি উৎসারণে যেন ধ্বনিত হয়েছে পাস্কেল-কথিত সেই অন্তহীন মহাশূন্যের আবহমান নীরবতা। তাঁর কবিতাময় উচ্চমানের গাম্ভীর্য, সন্দেহ নেই: কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ক্রীড়া-র অনায়াস ও স্বচ্ছন্দ প্রয়োগের দৃষ্টান্তগুলি এইরকমের— অনুভূতির সঙ্গে অনুভূতির খেলা, শব্দের সঙ্গে শব্দের এবং অনুপ্রাস আর অন্ত্যমিলের নিরবচ্ছিন্ন অন্বেষণের অভেদ তুলে আনে এক অনন্য সৃষ্টিশীলতা ... ...
ব্যথা যে অন্য রোগের উপসর্গ মাত্র নয়, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথাকে রোগ হিসেবে গণ্য করা দরকার এই উপলব্ধি আসে এই চিকিৎসকের মননে। তারপর নিজেকে শিক্ষিত করা, স্বীকৃতি অর্জন করা, সরকারি ব্যবস্থার লাল ফিতে ছিঁড়ে ব্যথা চিকিৎসার এক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা ইএসআই হাসপাতালে, ভারতের প্রথম ব্যথা চিকিৎসা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র-ই এস আই ইনস্টিটিউট অফ পেইন ম্যানেজমেন্ট। ব্যথা চিকিৎসার এই পুরোধা পুরুষ চলে গেলেন ২০২৩-এর ৫ই জুলাই। ... ...
সুভাষদা, সুভাষ গাঙ্গুলিকে নিয়ে লিখতে গেলে এখন এই বয়সে এসে ঝাপসা হয়ে যাওয়া স্মৃতি ধূসর পাণ্ডুলিপির মত ভেসে চলে যায়। এই তো সেদিন এপিডিআরের পঞ্চাশ বছর উপলক্ষে সাক্ষাতকার নিতে গেছিলাম সুভাষদা-ভারতীদির ফ্ল্যাটে। সেদিনও সেই প্রথমদিনের মত উষ্ণ গলায় সাদর ডাক। সেদিনও সেই প্রথমদিনের মত খাদির পাঞ্জাবী আর বড় ফাদের পাজামা। সেই প্রথমদিনের মত কদমছাঁট চুল, নাঃ সেবার ছিলো একমাথা কালো এবার পাক ধরেছে তাতে। সেই একই রকম ছিপছিপে অবয়ব, কালো ফ্রেমের চশমা। ... ...
আজ ঠাকুমা চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে দিয়ে জোলাপাড়ায় ঢুকে যায়। জোলাপাড়ার বাড়িগুলোর উঠোনে উঠোনে চরকি। আর সুতো ভরা লাল নীল নলিগুলো বারান্দায় স্তুপ করা। ও ঠাকুমা, আমার পুতুলের জামায় সুতোর ফুল তুলে দেবে বলেছিলে। দেবো দিদি, ঠাকুমা খেজুর চাচার বাড়ি পেরিয়ে যায়। করিম জোলার বাড়ির উঠোনে মুরগীগুলো খোঁপ থেকে বেরিয়ে আসছে। পেছন পেছন ছানাগুলোও। করিম জোলার বাড়ি ছাড়ালেই কলেজের মাঠ। সে মাঠের ওই কোণায় মান্দার গাছ। ... ...
রোগীরা সবাই শেষে একটাই প্রশ্ন করেন, ‘ডাক্তারবাবু, ভয় নেই তো?’ উত্তর দিতে গিয়ে ইদানীং মেজাজ হারাচ্ছি। বলছি, ‘আমি জ্যোতিষী নই।’ এই প্রথম মাঝে মাঝে অন্যদের দেখে হিংসে হচ্ছে। মনে হচ্ছে আমি যদি ডাক্তার না হয়ে অন্য কিছু হতাম, বেশ হতো। বাড়িতেও সকলের মুখ ভার। রাতে ফিরে যেটুকু সময় বাড়িতে থাকছি সেটুকু সময়েও অজস্র ফোন। একটা ফোনে কথা বলতে বলতে তিনটে মিসকল হয়ে যাচ্ছে। অনেকেই হাসপাতালে বেডের জন্য, অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য, ভ্যাকসিনের জন্য ফোন করছেন। এসব ব্যাপারে আমার কিছু করার ক্ষমতা নেই বলতেও খারাপ লাগছে। আমি সারাদিন রোগী দেখে বাড়ি ফিরে স্নান করি। ফোনের ঠ্যালায় স্নান করতে করতে রাত বারোটা বাজছে। ... ...
যেখানে প্রথাগত সাংবাদিকতা ব্যর্থ,যুদ্ধের ময়দানে অনুপস্থিত, নির্দিষ্ট মিডিয়া হাউসের রাজনৈতিক অবস্থান অনুযায়ী খবরকে বিকৃত উপায়ে পরিবেশন করতে বাধ্য,সেখানে স্বাধীন আমজনতার সাংবাদিকতা এখন ভবিষ্যতের নূতন প্রহরী। নাজি জের্ফের মত এই সমস্ত স্বাধীন দেশপ্রেমী সাংবাদিকরা সংবাদের দুনিয়ায় গণতন্ত্র বজায় রাখছেন। রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রবিরোধীদের ভূমিকার তদন্তমূলক প্রতিবেদন প্রস্তুত করছেন। সরকার এবং বিদ্রোহীরা যাতে গণতান্ত্রিক অবস্থান বজায় রাখে এবং আরও স্বছ ভাবে কাজ করতে বাধ্য হয় তার জন্য নিরলস কাজ করছেন। আর মধ্য প্রাচ্যের এই নূতন মিডিয়ার দুনিয়ায় নাজি জের্ফ এক অনবদ্য ব্যক্তিত্ব। আজকের দুনিয়া যেখানে জনসেবা ক্রমশ ক্ষীয়মাণ এবং সাংবাদিকতার চরিত্র পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে দ্রুত,সেখানে মধ্যপ্রাচ্যের এই সমস্ত স্বাধীন নাগরিক সাংবাদিকদের গ্রুপ, ক্রমে আরও বেশি বিশ্বস্ত, বেশি নিরপেক্ষ এবং প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক মতামত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ক্রমশ নিজেদের জায়গা করে নিচ্ছেন। অন্তত মধ্যপ্রাচ্যে নাগরিক সাংবাদিকতা প্রথাগত মিডিয়ার জায়গা সক্ষম ভাবে প্রতিস্থাপিত করতে সক্ষম হয়েছে। নাগরিক সাংবাদিকতার এই হটাৎ বিস্ফোরণ সাময়িক কোন ঘটনা নয় বরং এইটাই ভবিষ্যতের ছবি হতে চলেছে। নাজি জের্ফ যেমন বলেছিলেন “To defeat us, they would have to shut down the Internet. And they can’t do that because all of them use the Internet.” ... ...