দেশে শক্তিশালী কোনো বিরোধী দল না থাকার মানেই হচ্ছে সুশাসনের ভারসাম্যহীনতা। রাষ্ট্র বিজ্ঞান নামক একটি শাস্ত্রে পন্ডিতগণ বলেছেন, বিরোধীদল হচ্ছে, shadow government বা ছায়া সরকার। বিরোধীদলের দ্বারা ক্ষমতাসীন সরকারের দোষ ত্রুটি কঠিন এবং সুতীক্ষ্ণভাবে সমালোচনা করার অর্থই হচ্ছে, সরকারকে পথ নির্দেশ করা। সরকারকে আরো একবার ভেবে দেখার প্রণোদনা দেওয়া। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের সামনে কথা বলে উঠে দাঁড়ানোর মত কোনো বিরোধীদল আর অবশিষ্ট নাই এই বাংলাদেশে। সবার লেঙ্গুর তেলচর্বিতে জবজবে ভারি আর টাকাখোর হয়ে গেছে। ... ...
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমি দেখেছি। আমি নিজেই বিস্মিত হই, আমাদের গদ্য সাহিত্যের তিন স্তম্ভ, তিন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্য দু'জনকে আমি দেখিনি, তারাশঙ্করকে আমি দেখেছি। দেখাটা আশ্চর্য ব্যাপার মনে হয়। ঈশ্বরকে দেখা যায়, সৃষ্টিকর্তাকে? বড় লেখক তাে সৃষ্টিকর্তা। তিনি চারপাশের বাস্তবতা থেকে নানা উপাদান সংগ্রহ করে নিজের মতাে করে একটি জগৎ নির্মাণ করেন। যা দেখেছেন লেখক তা দিয়ে তাঁর পৃথিবী নির্মাণ করেন, তার ভিতরে আমাদের না দেখা এক পৃথিবী গড়ে ওঠে। বড় লেখক, বড় শিল্পী তা করেন। বাস্তবতা আর কল্পনা মিলে মিশে যায় সেখানে। সীমাহীন কল্পনাই তাে এই ব্রহ্মান্ডের সৃষ্টিসূত্রে নিয়ে গেছে। ... ...
কাফকা কেন এখনও প্রাসঙ্গিক, এবং পূর্বইউরোপেও ভীষণভাবে সমসাময়িক, তা নিয়ে কুন্দেরা একদা একটি লম্বা প্রবন্ধ লিখেছিলেন। সে পূর্ব ইউরোপ অবশ্য আর নেই। কুন্দেরাও আর নেই। তাই এবার আমাদের লেখার সময়। ওইসব পুরোনো পুরোনো লেখা, যার বহুলাংশই সোভিয়েত-যুগ নিয়ে লেখা, সেসব কি আদৌ প্রাসঙ্গিক আর? মার্কেজ, কুন্দেরা আর একো, এই তিনজন আমাদের যৌবনের বিদেশী হিরো ছিলেন, হলিউডি ক্লিন্ট ইস্টউড যেন, কিন্তু সেটা তো কুন্দেরা পড়ার কোনো কারণ হতে পারেনা। সেই সোভিয়েত নেই, সেই বার্লিন পাঁচিল নেই, সেই লৌহ-যবনিকা আর নেই, এমনকি প্রাহার সেই বসন্তও আর নেই। তাই, কেন কুন্দেরা? ... ...
মহীনের ঘোড়াগুলির যখন জন্ম হয় তখন তাদের সামনে কিছুই ছিল না, শুধু ছিল ধু ধু ফাঁকা বিস্তীর্ণ অঞ্চল আর ছিল তাদের ফেলে আসা পথের অভিজ্ঞতা। এই ফেলে আসা পথের অভিজ্ঞতা নিয়ে তারা বিস্তীর্ণ চারণ ভূমিতে সবাই মিলে এলোমেলো ভাবেই ছোটাছুটি শুরু করে দিয়েছিল। তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছোটার আরও ছিল বিভিন্ন ঘরানার জনা তিরিশেক ছুটন্ত ঘোড়া যারা মূলত ছেলেবেলায় একসাথে বেড়ে উঠেছিল কোন অঞ্চলে। ঘোড়াদের আস্তাবল ছিল নাকতলায় এবং তার দেখাশুনো করতেন আমাদের মা ও পিসি, যথাক্রমে বিভা দেবী ও রতনপ্রভা – যাঁরা স্নেহ দিয়ে, ঘোড়াদের সবরকম বেপরোয়া দুরন্তপনাকে উৎসাহ দিয়ে, তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছিলেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল ঘোড়াদের কোন কোন বান্ধবীরাও। তারাও সমান তালে ছুটতে শুরু করেছিল দলের বিভিন্ন রকম দায়িত্ব নিয়ে। ... ...
বড় ঘটনাবহুল গেল... কিছু মনখারাপ, কিছু অভিমান, কিছু আনারস সময়, কিছু মিষ্টি মারামারি, কিছু ঝগড়া, কিছু ভুল, এবং অবশ্যই এক ভালোবাসা সহ দুর্ধর্ষ দুশমন নিজস্ব শ্লাঘা খানের অতর্কিত আক্রমণ, অনর্গল ঘটতে ঘটতে কাটিয়ে ফেললাম গতজন্ম। বিরক্তিতে তিতির অপেক্ষায় ছিলাম, অনেক শিহর অনেক ম্যাজিক ও আলোদের ফটোগ্রাফ কোন খবর না দিয়ে বেজিঝক চলে এলো। সঙ্গে তার দুই ভাই, বেইন্তেহা আর বেপনাহও ছিল। আমার বড্ড বাসি হলো রে, মায়া ও মায়াবী দুজনেই হলো। এক মানুষ লম্বা স্থান অধিকার করে আছি, শুধু এই কারণেই কত নতুন মানুষ হলো আমার। গর্বের জন্য মিনিমাম কোয়ালিফিকেশান অনেকটা বেড়ে গেল। আমি যে এক বিচিত্র ঘটনা, তা খুব একটা অজানা নেই আমার। তবু এ্যাতো এ্যাতো জনের অপরিচয় কেটে গেল, ভাবা যায়না... সেই ফাঁকতালেই খুঁখার উগ্রপন্থী শ্লাঘা খান ঢুকে গেছিল... চৌকন্না থাকতে হয় খুব.... তবে চৌকন্না ছিলাম বলেই বহুদূর থেকে ভেসে আসা এক জিনিয়াসিনির স্পর্শে ফিসফিস হয়ে গেলাম....কিছু পরে তাও নয়, খালি ঠোঁটনৃত্যের সাহায্যে বাজে বকা নামিয়ে রাখলাম তার পায়ে... কিন্তু কী বিতিকিচ্ছিরি এই মানবমনের সংস্কার, একজন ঠোঁটনৃত্য বা ফিসফিস করলে অন্যজনও ফিসফিসে মগ্ন হয়ে যায়। কী আপদ, এতে যে ভেঙানো হচ্ছে বোঝে না?? ... ...
কাহিনীর সারাংশ হচ্ছে হিন্দু রাষ্ট্রের প্রকল্প যত এগোচ্ছে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের নিরাপত্তা ততো বিঘ্নিত হচ্ছে। মুসলিমরা সব সময়ই টপ টার্গেট, নানা ফন্দি করে তাঁদের টাইট দেওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত। বিভিন্ন রাজ্য নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করছে কে কত এই সম্প্রদায়কে কোণঠাসা করতে পারে। কেউ সরকারি মাদ্রাসা বন্ধ করে দিচ্ছে, কেউ প্রকাশ্যে নামাজ পড়া বা মসজিদের মাইক লাগানো নিষিদ্ধ করে দিচ্ছে, কেউ কসাইখানা বন্ধ করে গোশালা খুলছে... ... ...
চলছে খিচুড়ি মহারহস্য অ্যাডভেঞ্চার। আগের কিস্তিতে দেখেছিলাম খাঁটি ভারতীয় খিচুড়িতে কীভাবে আফগানিস্তান পার করে এসে মিশেছিল ইরানি ‘শোলে’। এ কিস্তিতে আমরা সেই জাহাঙ্গিরি খিচড়ি আর বাজরা খিচড়ির রহস্যভেদের তাগিদে নেতি নেতি করতে করতে হাজির হব ইরান ফিরতি দিল্লি হয়ে সোজা বর্ধমান! নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
ডাক্তারদাদা আর ওই মহিলা কারোরই নাম লিখলাম না। দাদার ফুটেজ খেতে ভয়ানক অপছন্দ। আর ঐ মহিলার লকডাউনে এমনিতেই একটা কাজ চলে গেছে। পরোপকারী কাজের মাসি অনেকের পছন্দ নাও হতে পারে। মোদ্দা কথা হলো হতাশা ক্লান্তি এরাও বেশিক্ষণ সুবিধা করতে পারছে না। আশেপাশের কিছু মানুষ এমন সব কাণ্ড ঘটাচ্ছেন, ঠিক পজিটিভ হয়ে যাচ্ছি। ... ...
পরনের ফতুয়াটি দুইমাসাধিক ধীরেও নয় ধৌতি, মাদনে গন্ধ, মাতনে নালকৃষ্ণ হে মাতঃ, তত্রাচ এই গোকুল সন্ধ্যা এই ঘিরি ঘিরি কর্দম মর্তম পালং জুড়িয়া বেডশিটে সমাসীনা কার্পাস কল্লকাগুলি, শ্রীলঙ্কার নিকট অই নিউ বেঙ্গল বস্ত্রালয় ব্লকছাপখানি, এ নেহাৎ ঘন্টাঘরের কেন্দ্ররূপ বৈ ত নয়। মনোময় সেই কেন্দ্রগতে দণ্ডবৎ হইবার পারে। তাহার হস্তের অঙ্গুলিমাল নখাগ্রে ওতপ্রোত, নখাগ্র টিউলাইটের ম্লানালোকে থিরকম্প্র। আজ দুইদিবস কেহ দরোজাকরে আঘাত করে নাই। আজি মাসাধিক দ্বারদ্রুম বন্ধ। ... ...
সেদিন সকাল থেকেই মনটা কু গাইছিলো। কারখানা বন্ধ থাকায় কাজে যেতে হয়নি। আগের দিন মালফাল খেয়ে রাত করে বাড়ি ফিরলাম। মা ফালতু বাওয়াল দিলো, যদিও ঘুমচোখে বেশিক্ষণ টের পাইনি। সকাল থেকেই মাথাটা টলছিলো। বমি। বিকেলে ওরা ডাকতে এলো, ভাসানের প্রসেশন। একটু গুমোটের মত ছিলো দিনটা, আকাশটা ঝুলে নেমে এলে যেমন হয়, মেঘলা দলা দলা চিটচিটে আকাশ। আমার জানার কথা না, জানিওনা, যে এইরকম লিকুইড বোতলে ভরে বোমা বানানো হয়। কিন্তু আমি না জানলেও ঐ লোকটা জানতো। ফিনিশ-সোভিয়েত যুদ্ধের কথা, অ্যান্টি ট্যাঙ্ক গান্স কম পড়ার কথা, সে সালা ঊনিশশো ঊনচল্লিশ-চল্লিশের ঘটনা। লোকটা অত জানে, তবু পুজোকালের দিকে টেলিফোন বুথে দাঁড়িয়ে টাইমপাস করছিলো। কপাল মাইরি! অথচ আমার দেখা অল্পস্বল্প পাসফাস করা লোকজন দিব্যি বউবাচ্চা নিয়ে ভাসান দেখে চাউমিন খেয়ে নালেঝোলের জীবন কাটিয়ে গেল। যাই হোক, ফিনিশ শুনে আমার হেভি হাসি পেয়েছিলো। মজার নাম, না? ফিনিশ! সেদিন আরেকটু হলেই আমিও ফিনিশ হয়ে যাচ্ছিলাম। মুখে পেট্রলটা নিয়ে সবে ছুঁড়তে যাবো, আড়চোখে দেখি বেগুনি সালোয়ার পরে একটা মেয়ে, সাধনদার শালীফালি হবে মনে হয়, হাসছে। ব্যস, পেটে চলে গেল একঢোঁক। তখনই বসের সাথে আলাপ। হেঁচড়ে টেনে নিয়ে গিয়ে বাঁচিয়েছিলো। ... ...
একটা ব্যাপার খেয়াল রাখবেন, টেকাপো শুধু ক্রাইস্ট চার্চ থেকে শুরু করলে তবেই পথে পড়বে, পুকাকি হ্রদ আপনি যে পথেই আসুন দেখতে পাবেন। পুকাকি থেকে ৫০ কিলোমিটার সড়কপথে মাউন্ট কুক, হাইওয়ে ধরুন। তবে পারলে আর কারও হাতে স্টিয়ারিং-এর ভার তুলে দিন, কারণ বাঁদিকে লেক পুকাকি পড়বে একটু পরেই, আর তার পর সারাটা পথ জুড়ে শুধু মাউন্ট কুক দেখতে পাবেন। সে এক অপার্থিব মনভোলানো দৃশ্য, এক গগনচুম্বী পর্বতমালা আপনার গোটা পথের সামনেটায়, একপাশে লেক পুকাকি, তারপর দু-পাশে উঠেছে অজস্র পাহাড়ের সারি, তাদের কারও কারও মাথায় বরফের চাদর, কোথাও খরস্রোতা নদী আর ব্রিজ পেরিয়ে একসময় আদিগন্ত বিস্তৃত উপত্যকার মাঝখান দিয়ে গাড়ি চলে দাঁড়াবে মাউন্ট কুক শহরের মাঝখানে। ... ...
২০১৯ এ তাঁরা ক্ষমতায় ফিরবেন কিনা এই প্রশ্ন তোলায় প্রধানমন্ত্রী কিছুক্ষণ নীরব থাকেন। এইসময় দৃশ্যতই ঘর্মাক্ত প্রধানমন্ত্রীকে গলায় জড়ানো জাতীয় পতাকায় ঘাম মুছতে দেখা যায়। এরপর তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে তাঁর হয়ে প্রশ্নের উত্তর দেবার জন্য ইশারা করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং আবেগঘন কণ্ঠে ‘একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি’ গানটি পরিবেশন করেন। ... ...
তবে শেষপাতে বলতেই হয়, কলকাতার পথঘাটের আনাচে কানাচে যতটা স্বচ্ছন্দে বিহার করেছেন হার্ট, লোক বা সংস্কৃতি নিয়ে তাঁর ধারণা ততটাই অস্বচ্ছ, অস্পষ্ট এবং নেড়াতথ্যের ভারে জর্জরিত। কাহিনি উঠে আসে না সেই থেকে; বড়জোর কিছু কিছু টুকরো ছবি দেখতে পাওয়া যায় বড়জোর। যেমন জানা যায়, ইংরেজদের আসারও আগে পর্তুগিজদের শুরু করা ক্রীতদাস প্রথা কিভাবে কোম্পানির শাসনকালেও বহাল তবিয়তে ছিল, ১৭৮৯ সন অব্দি। দাসপ্রথার সঙ্গে জড়িত বর্বরতার প্রতীক বা অমানবিকতার ইতিহাস, কোনোকিছুই মান্য হয় নি সেকালে। দিব্যি চলেছে দৈনিকে দাস কেনাবেচার, বা পালিয়ে গেলে সেই কারণে দেওয়া বিজ্ঞাপন। কেউ দাস কিনলে কাছারিতে রেজিস্ট্রেশন করাতে হতো সেই দাসের। তারপর নিংড়ানো শুরু। ... ...
ঢাকায় মদ বেশ দামী। বিশেষত বিদেশী মদের ওপর আবগারী শুল্কের হার অত্যন্ত বেশি। অবশ্য, রেজিস্টার্ড বারের বাইরে শস্তার মদও মেলে। ঢাকাতে আমি সর্বত্র দেখেছি “বাংলা মদ” নামে ঘরে তৈরি সবচেয়ে শস্তার মদ তৈরি এবং বিক্রি হতে। ঢাকার পুরনো এলাকাগুলোতে এই বাংলা মদ এখনও মেলে। এক লিটারের দাম ৩০০ টাকা। এর মূলত খরিদ্দাররা হল ঝাড়ুদার, চামার, ডোম, দেহব্যবসায়ী এবং ইঞ্জিনীয়ারিং আর মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা। আসলে এটা হল জীবনদায়ী ওষুধ বানাবার জন্য শস্তায় বিদেশ থেকে আমদানী করা মিথাইল মেশানো অ্যালকোহল। প্রত্যেক বছর এই বিষাক্ত মেথিলেটেড স্পিরিট খেয়ে প্রচুর লোকের মৃত্যু ঘটে। অবশ্য, ঢাকায় খানদানী মদ্যপায়ীর সংখ্যাও কম নেই। তাদের কেউ কেউ সামাজিক স্তরের অনেক ওপরের দিকে বাস করেন, ঢাকার খানদানী এলাকায় তাঁদের বাড়ি, দামি গাড়ি, বিদেশি পাসপোর্ট থাকে তাঁদের কাছে, অথবা খানদানী ক্লাব বা ডিলারদের সঙ্গে তাঁদের ওঠাবসা থাকে। বাকিরা হল মুখ্যত নতুন প্রজন্ম, যারা কর্পোরেট মিডিয়া হাউস, মোবাইল ফোন কোম্পানি, এনজিও বা বিজ্ঞাপন এজেন্সির হাত ধরে বড় হয়েছে। এই বিশাল মাইনের প্রফেশনালরা খুব দ্রুত বেড়ে উঠেছে ১৯৯০-এর মাঝামাঝি থেকে, সামরিক শাসনের শেষ হবার পরে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের সাথে সাথে। ... ...
"পশ্চিমবাংলার বর্ধমান জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের এক মুসলিম পরিবারের দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতার মধ্যে লেখক সুকৌশলে বুনে দিয়েছেন – সাতচল্লিশের আগের অখণ্ড ভারতের উত্থান-পতন, তদানীন্তন রাজনীতি, বিশ্বযুদ্ধের অস্থিরতা, দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গা, দেশভাগ, দেশগঠন ও সামাজিক অবক্ষয়ের আখ্যান। এ কাহিনীর নায়ক সময়। সমাজ, ইতিহাস ও রাজনীতি মিলেমিশে গেছে এ উপন্যাসে। একটি পরিবারের নানা ওঠাপড়ার ছবি আঁকতে আঁকতে গোটা একটি সমাজের উত্থান-পতনের চিত্র এঁকে দিয়েছেন কাহিনীকার। বইটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সুঠাম গদ্য পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করে। লেখক আগাগোড়া উপন্যাসটিতে রাঢ়বঙ্গের আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করেছেন।" হাসান আজিজুল হকের ‘আগুনপাখি’ নিয়ে লিখলেন রঞ্জিতা চট্টোপাধ্যায়। ... ...
নোটের খাতা বন্ধ করছি। ছাতা-পার্স ভরছি ব্যাগে। এ সময়ে হঠাৎ একটা অন্য গলার স্বরে একখানা প্রশ্ন এল আমার দিকে। প্রশ্নটা মেয়েদের গলার স্বরে। মাথায় ঘোমটা। গলাটা সরু। ভাঙা ভাঙা। খাজার বৌ সাবিনা কখন যেন ঘর থেকে বেরিয়ে এসে নিচু টালির বারান্দায় মাথাটা ঝুঁকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে। সেখান থেকেই জিজ্ঞাসা করল, দিদি, কী হবে এসব লিখে? আমদের কোনও লাভ হবে? এতক্ষণ যারা খাজার দিকে তাকিয়ে, খাজার কথার উপর দিয়ে কথা বলে চলেছিল, তারা থেমে গেল। খাজার থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে নিল একবার। সবাই চুপ। যেন আমার উত্তরের অপেক্ষার সেকেন্ড-মিনিট গোনা চলছে এখানে। হঠাৎ যেন একটা পরীক্ষার বেল পড়েছে। পরীক্ষক এখানে অনেকজন। তারা সবাই তাকিয়ে আছে একদিকে। পরীক্ষার্থী আমি একলা। হাঁ করে বসে আছি। কী বলব আমি এ প্রশ্নের উত্তরে! ... ...
কেল্লায় যে এত ভূতের বসবাস আমি নিজেও তা জানতাম না আগে, আমি তো সপ্তাহে অন্তত পক্ষে একদিন হলেও কেল্লায় যাই, কিন্তু কেল্লার ভেতরে জ্বিন দেখার সৌভাগ্য আমার এখনও হয়নি। একবার তো কেল্লার জঙ্গলে ঢাকা বেগম মহলে ভরা শীতের সময় প্রায় সন্ধ্যা ৮টা পর্যন্ত ছিলাম, কিন্তু সেদিনও সেখানে কিছুই দেখতে পাইনি—তবে নিশ্চয় কোনো না কোনো দিন ঠিকই কেল্লার ভেতরে জ্বিনের দেখা পাবো—এই আশা রাখি। ... ...
১৯৭৭-এ বামফ্রন্ট এল রাজ্যে। দেশে তখন জনতা সরকার। দিল্লিতে বামফ্রন্ট জনতা সরকারকে সমর্থন করছে। রাজ্যে জনতা দল ও কংগ্রেসের সঙ্গে জোর লড়াই। বলাই হয়, ১৯৭৭-এ জনতা দলের প্রফুল্লচন্দ্র সেন এবং সেই দলে থাকা সঙ্ঘ পরিবারের হরিপদ ভারতীরা গোঁয়ার্তুমি না করে কয়েকটি আসন বেশি ছাড়লেই রাজ্যে জনতা দল ও বামফ্রন্টের কোয়ালিশন সরকার হতো। এবং সেই সরকারে জ্যোতি বসু এবং হরিপদ ভারতী দুজনেই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হতেন। বর্ধমানে কিন্তু জনতা দল, কংগ্রেস, এবং আর এস এস একযোগে সিপিএম বিরোধী। এর প্রতিফলন দেখা গেল, ১৯৮২-র কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচনে। ... ...