এদের তাকে বাঁধিয়ে রাখা যেতে পারে, বুকে নয়। "ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ারস অফ সলিটিউড'-এর প্রভাব "মিডনাইটস চিলড্রেন'-এও পাই, কিন্তু সেক্ষেত্রে রুশদির টানটান গল্প বলার পটুত্ব বেঁধে রাখে শেষ অব্দি। প্রভাব থাকেই, কিন্তু তার সাথে থাকে কিছু নতুনত্ব, বক্তব্যে এবং লিখনভঙ্গীতে, সামঞ্জস্য প্রয়োজন তাদের। অন্যথায় বিপদ, যা ঘটেই থাকে। বন্ধুবর বলেছিল দেবর্ষী সারগি পড়তে, নাকি দারুণ! পড়ে ফেললুম, মনে হল মন্দ না, অন্য রকম ভাবে লিখছেন, ভালো কথা, কিন্তু কী লিখছেন, কথা নয় কাহিনি নয়, দর্শন, ঈশ্বর-মনুষ্য চিন্তা, গভীরতা কতখানি, ডোবা যায় না, চুল ভেজে না, শুধু গায়ে একটু ছিটে লাগে মাত্র। "দ্য আনবিয়ারেবল লাইটনেস অফ বিইং' পড়ে বুঁদ হয়ে ছিলুম কয়েক মাস, এই পার্থক্য, আমি বরং কুন্দেরায় ফিরে যাব বার বার। স্বপ্নময় চক্রবর্তী, ভগীরথ মিশ্র বা অনিল ঘড়ুই খুব একটা খারাপ না লাগলেও সেই অনূভুতি আসেনি যা প্রথম এবং মাঝের দিকের শীর্ষেন্দু পড়ে আসত। শুধু মোটামুটি, খারাপ না, ঠিকঠাক, এসব পড়ে আর শুনে হতাশ! পাগল করে দেবে কে, আবার? ... ...
এরপর আমার কেন জানি মনে হল তাকেও জিজ্ঞেস করা দরকার কোথায় যাচ্ছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কোথায় যাচ্ছেন?ভদ্রলোক বললেন, রশিদপুর। এখানে এই জগন্নাথপুরে আসছিলাম এক কাজে কিন্তু কাজটা হয় নাই। বাবা, আপনার বাড়ি কি এই জায়গায়?জ্বি। আপনার বাড়ি?আমার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। গাড়ি চলতে শুরু করল। ভদ্রলোক নানা বিষয়ে প্রশ্ন করা শুরু করলেন। কী করি, দেশের বাইরে যাচ্ছি কি না, ইত্যাদি। দেশের বাইরে যাবার প্রশ্নটা তিনি করলেন কারণ ভদ্রলোক জানেন জগন্নাথপুর একটি প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা। তার প্রশ্নের কারণে আমাকেও প্রশ্ন করতে হল, আপনি এখানে এসেছিলেন কোথায়?ভদ্রলোক বললেন, সে এক লম্বা কাহিনী। একটা গল্প বলি?বললাম, বলেন। ... ...
ভারতে যখন সুলতানী যুগ, তখনও পৃথিবীর বৃহত্তম গম্বুজ ছিল ১২৮ অব্দে নির্মিত রোমের প্যান্থেওন। দ্বিতীয় বৃহত্তম গম্বুজ ছিল ইস্তানবুলের আয়াসোফিয়া (তখন গীর্জা)। আয়াসোফিয়ার গম্বুজ ইঁটের। প্যান্থেওন ইঁটের গম্বুজ ছিল না, কংক্রীটের, তবে একই পদার্থবিদ্যার নিয়মে তৈরী। প্যান্থেওনের সমতুল্য মাপের গম্বুজ ভারতে তৈরী হয় অনেক পরে- সপ্তদশ শতকে- সেটিও একটি সমাধি, যার কথা আমরা পরে বলব। প্যান্থেওনের আরএকটা বিস্ময়কর ব্যাপার হল, এটিই এই বিশ্বে একমাত্র বাড়ী যা টানা ১৯০০ বছর ধরে সক্রিয়ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে- আগে রোমান মন্দির ছিল, পরবর্তীকালে গীর্জা। ... ...
কথায় কথায় বাইরের কথা আসে। আজ বিকেলের পাওয়া গন্ধ নিয়ে রাজু কথা বাড়াচ্ছে না। এইসব গন্ধ ও একটু বেশি পায় আর পেলে গুটিয়ে যেতে থাকে। এটা কখনো কখনো ওকে ভয়ঙ্কর চুপ করে তোলে। তখন বাইরের সব অন্ধকার ওর মধ্যে প্রবেশ করতে থাকে। একজনের এরকম ডিপ্রেসড অবস্থা থাকলে অন্যরাও প্রভাবিত হয়। আজও রাজু কি সেরকমই আছে? আসলে অনেকটা পথযাত্রার ক্লান্তি আমাদের ধীরে ধীরে ঘিরে ফেলছিল। বিকেলের কথা , আদমখোরের কথা, রাজুর পাওয়া গন্ধের কথা কোন কথাটা যে কেন্দ্রে থাকবে তা ঠিক করতে পারছিলাম না কেউ। ... ...
প্রথম যে কথা বলছিলো সে-ই শুরু করে আবার, ঠিকই, তবে এই সব পরিবর্তন আজকাল হয়েছে। একেবারে প্রথমের দিকে কিন্তু এখনকার ডাইনিং হলটায় শুধুমাত্র কয়েকটা বাচ্চাকে নিয়ে স্কুলটা শুরু করেছিলেন জয়িদি। তারপর বাস এলো। বাসটা আসার পর থেকে একটা দারুণ কাজ শুরু করলেন উনি, একেবারে জঙ্গলমহলের ভেতরের গ্রামগুলোর থেকে একটা একটা করে বাচ্চাকে ধরে নিয়ে এসে স্কুলে ভর্তি করে দিলেন। আমরা স্কুলের বাসে গিয়েও দেখেছি কেমন সব গ্রাম। শুনেছি তখন জলধর নামে এক সাঁওতাল যুবক ছিলো জয়িদির সঙ্গে, সে নাকি পড়াতোও ভালো। কিন্তু সে চলে যাওয়ার পর থেকে আর নিয়মিত পড়াবার মতো ভালো লোক জোগাড় করা যায়নি। ... ...
প্রতিটি দিনই তো দেবীপক্ষ ভাবতে ভালো লাগে – কেবল সেই ভোরে ওঠা নিয়ে সূর্যের সাথে রাগারাগি না হয় মাথার কাছে বাজুক চেনা সুর আধোঘুমে গুন গুন নিবিড় হয়ে এসে বাড়ি ফেরার প্রতীক্ষা ... ...
নতুন জমি/ ভূমি সংস্কার আইন এজন্যেই গুরুত্বপূর্ণ কারণ প্রশাসনের লক্ষ্য সমস্ত তথ্য নথিভুক্ত করা ও কম্পিউটারাইজ করা। এর জন্য যা দরকার জমি মালিকদের সঠিক জমির হিসেব দেওয়ার সহযোগিতা। জমির উর্ধ্বসীমা আইনের ফলে প্রচুর জমির মালিকানা গোপন ও বেনামী, অন্যদিকে সরকারি অধিগ্রহণ হলে মালিকরা অবশ্যই চাইবেন সঠিক ক্ষতিপূরণ যার জন্য জমির হিসেব ঠিকঠাক থাকা প্রয়োজন। এই ভাবেই জমি সংশোধন ও অধিগ্রহণের মধ্যে এক সহজ সম্পর্ক আছে। দ্বিতীয় অংশ ঠিকঠাক কাজ করতে হলে প্রথম অবস্থার উন্নতি প্রয়োজন, আর প্রথম ক্ষেত্রে উন্নতি হলে স্বাভাবিক ভাবেই দ্বিতীয় ক্ষেত্রে অনেক সুবিধে হবে। সঠিক পরিসংখ্যান দিতে মালিকদের উৎসাহ দিতে, কিছু পুরস্কার যেমন, সরকারি সুযোগ সুবিধে দেওয়া যেতেই পারে। সহজে সরকারি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ, NREGA, ভর্তুকি, জন বন্টন ব্যবস্থা ইত্যাদির ব্যবস্থাও করা যায়। একই ভাবে গত পঞ্চাশ বছরে জমি সংস্কার বলবৎ করতে আমাদের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে কিছুদিনের জন্য উর্ধ্বসীমা আইন কিছুটা শিথিল করা যেতেই পারে যাতে মালিকরা সঠিক তথ্য দিতে আগ্রহী হন। বিশেষত দেখা গেছে যে জমিসংস্কার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কৃষি উন্নতির পরিপন্থী হয়েছে, ও এর দায়ভাগ আরো বেশি বর্তায় জমির উর্ধ্বসীমা আইনের ওপর (Ghatak and Roy, 2007 )। এমনকি জমির রেকর্ড ঠিক করার জন্য ও সঠিক তথ্য জানালে আয়করে ছাড় দেওয়াও যেতে পারে। আদিবাসী এলাকায় কৃষি জমি বিক্রির ওপর অকারণ বিধিনিষেধ আরোপ, আদিবাসীদেরই স্বার্থের বিরুদ্ধে গেছে। এই বিধিনিষেধ তফশিলী জাতি, উপজাতি আদিবাসীদের সঠিক জমি ব্যবহারে সাহায্য তো করেই নি উপরন্তু তাদের জন্য বিকল্প জীবিকা ও গড়ে তোলে নি। আপাতদৃষ্টিতে বৈষম্যের নামে শিল্পায়নে বাধা সৃষ্টি করে আদতে কিছু লাভ হয়নি। জঙ্গল রক্ষা আইন সংরক্ষণের নীতির বিরোধী হয়ে উঠেছে । সম্পত্তি আইনে আওতায় জঙ্গল জমি আনার উদ্দেশ্য অবাধ কৃষি ও বন কাটা নয় বরং, তাদের পুরুষানুক্রমে চলে আসা শিকার ও সংগ্রহণ বৃত্তি থেকে যদি তারা উচ্ছেদ হয় তার প্রকৃত ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থাও করা। সাধারণ ভাবে বলতে গেলে, বাস্তবের সাথে আদর্শের মেলবন্ধন না ঘটাতে পারা আমাদের ব্যর্থতা, ঠিক যেরকম বন্টন ব্যবস্থা শক্তিশালী করার পাশাপাশি সমষ্টিগত উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় শিল্প স্থাপন ও বন ধ্বংস রোধ করার ভারসাম্য রক্ষা করতেও আমরা সক্ষম হইনি। সামাজিক ন্যায় বিচারের জন্য জমির বন্টন আরো সমান ভাবে হওয়ার সাথে সুষ্ঠু জমি বাজার ও জমির আরো উন্নত ব্যবহার পদ্ধতি গড়ে তোলার মধ্যে যে কোনো সংঘাত নেই সেই সত্যি যত তাড়াতাড়ি বোঝা যায় ততই মঙ্গল। ... ...
একটি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে জালিকুট্টি সিনেমাটা দেখার পর ছবিটির মূল গল্প লেখক হরিশের নামটি জানতে পারি। মূল গল্পটির নাম ‘ দ্য ্মাওয়িস্ট ‘ জানার পর কৌতূহল বাড়ে। তখনই জানতে পারি হরিশের এই উপন্যাসটির কথা যেটি মাত্রুভূমি সাপ্তাহিকে ধারাবাহিকভাবে বেরোনোর মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায় হিন্দুত্ববাদী এবং জাতভিত্তিক সংগঠনগুলির চাপে কারণ এখানে নাকি ‘হিন্দু মহিলা এবং মন্দিরের পুরোহিতদের অপমান করা হয়েছে’। পরে সম্পূর্ণ উপন্যাসটি ডি সি বুকস থেকে বেরোয় এবংহারপার কলিন্স থেকে একটি অসাধারণ ইংরেজি অনুবাদ করেন জয়শ্রী কালাথিল যেটি ইংরেজিতে লেখা বা অনূদিত সাহিত্যের জন্য ভারতের সর্বোচ্চ আর্থিক মূল্যের জে সি বি পুরস্কার লাভ করে। ... ...
এখন আর ঘর ছেড়ে এদিক ওদিক যাবার দরকার পড়ে না। পুঁটি তবু ঘরে থাকে না, অনেকদিনের অভ্যেস। তাছাড়া যত বড় হচ্ছে ততই এ ঘর যেন তার কাছে খুবই ছোট হয়ে যাচ্ছে, স্বপ্নগুলো এ ঘরে আর খেলে না। জানলা দিয়ে আকাশ দেখা যায় না, বরং পিঙ্কিদের কোঠার পাঁচিল দেখা যায় । ভাইকে নিয়ে লালবাতির বাল্যশিক্ষা কেন্দ্রে দিয়ে আসে পুঁটি, আর নিজে চলে যায় মন্টুদাদের ক্লাবে। সেখানে পট্টির বাকি ছেলেরা থাকে, ক্যারাম পিটায়, বিড়ি-সিগারেট-গাঁজা ফোঁকে, কেউ কেউ মদও খায়। পুঁটির সেখানে কোনও কাজ নেই, তবুও সেখানেই যায়, অকাজের ছেলেদের এই একটা যাবার জায়গা আছে এখানে। ... ...
গালিলেও গালিলেই। প্রথম নিখুঁত ঘড়ি, থার্মোমিটার, পতনশীল বস্তুর সঠিক নিয়ম আবিষ্কার, পৃথিবীর সূর্য প্রদক্ষিণ তত্ত্বের পক্ষে সওয়াল… । বিজ্ঞানের প্রগতিতে তাঁর অবদান বিপুল। আর এ সবকিছুর মূলে ছিল ধর্মান্ধতাকে অস্বীকার করে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসায় তাঁর অবিচল আস্থা। তবু ছিলেন রক্তমাংসের মানুষই। চার্চের সঙ্গে সংঘাতে আপাত-পিছু হটেও, ধর্মীয় বিশ্বাসের মূলস্তম্ভে আঘাত অব্যাহত রেখেছিলেন গোপনে। একটি নতুন জীবনীগ্রন্থ। পড়লেন বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের কর্মসচিব, পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় ... ...
সবাইকে নিঃশব্দে লক্ষ্য করছি। ভাবছি, কে হতে পারেন ‘স্টোরি’র চরিত্র। কে হতে পারেন সেই মেয়ে যাকে নির্বাচন বিষয়ে জিজ্ঞেস করা যায়। গাছকোমর শাড়ি পরা এক মহিলা বেশ বড় একটা ঝুড়ির কাছে এসে দাঁড়ান। পাশে আরেকটা ছোট ঝুড়ি। হলদে পাড়, লাল-কালো বেবি প্রিন্ট মলিন শাড়ির ওপর কোমরে বাঁধা রঙচটা গোলাপি গামছা। লাল ব্লাউজের হাতার সেলাই অল্প খুলে গেছে। দুহাতে দুই ক্ষয়াটে সোনালী মেটাল চুড়ি। বাঁ হাতের বাজুতে বাঁধা রঙচটা ধাগা। মাথার চুল উল্টে ছোট্ট খোঁপা। অবাধ্য কুচো চুল কপাল ও কানের প্রান্তে ছড়িয়ে। তাঁকেই জিজ্ঞেস করা গেল, “দিদি, ঝুড়ি আপনার?” ... ...
দেশের সপ্তদশ সাধারণ নির্বাচন। প্রত্যেক ভোটেই কিছু নতুন শব্দের জন্ম দেয়। তার কিছু টিকে যায়, বাকিটা হারিয়ে যায়। যেমন ২০১৪-এ ছিল সারদা, নারদা।এবারের ভোটে কতগুলো নতুন শব্দ বা বাক্যবন্ধ কানে আসছে।তার কয়েকটি এরকম। নকুলদানা, ঘুষপেটিয়া, চৌকিদার, এক্সপায়ারিবাবু, স্পিডব্রেকার দিদি, এ-স্যাট, নাকাতল্লাশি, জুমলা। দলবদলেরও একটা নতুন ঘটনা এবারে চোখে পড়ছে। বৃহস্পতিবার প্রথম দফা ভোট কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে। কোচবিহারে এবার তৃণমূল প্রার্থী একসময়ে বামফ্রন্টের মন্ত্রী পরেশ অধিকারী। উল্টো দিকে বিজেপির প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিক এই সেদিনও ছিলেন তৃণমূলের নেতা, এবারে বিজেপির প্রার্থী। আলিপুরদুয়ারেও ছবিও প্রায় এক। তৃণমূল প্রার্থী দশরথ তির্কে একসময়ের বামফ্রন্টের দাপুটে নেতা, এবারে তৃণমূলের প্রার্থী। ... ...
বিশ্বরূপা থিয়েটারের সেই বাড়ি জুড়ে ছিল শিশিরকুমারের স্মৃতি। আমি দেখেছি কী অসম্ভব শ্রদ্ধা করতেন অভিনেতারা, কলাকুশলীরা শিশিরকুমারকে। শিশিরকুমারের দুই খাস অনুচরকে আমি দেখেছি। একজন তাঁর খাস চাকর রামচরণ। আমরা বলতাম রামচরণদা আর একজন তাঁর খাস ড্রেসার গোবিন্দ অধিকারী। আমাদের গোবিন্দ কাকা। এমনই প্রভাব ছিল শিশিরকুমারের যে বিশ্বরূপার তদানীন্তন মালিকদের দুজন, দক্ষিণেশ্বর সরকার এবং রাসবিহারী সরকারকে সকলে বলতেন মেজবাবু আর ছোটবাবু। বড়বাবু? নৈব নৈব চ। সেটা একমাত্র শিশিরকুমারের প্রাপ্য। প্রত্যেকদিন, কেউ না কেউ একবার শিশিরকুমাররের নাম নিতেনই। একটা শ্রদ্ধার জায়গা, সেই সময়েই আমার মনে ঢুকে গেছিল সে সব শুনে। ... ...
কখনও মনে পড়ে – সরস্বতী পুজো হচ্ছে, সদর দরজার কাছে বাঁদিকে প্রথম ঘরে ঠাকুর। ঘর জুড়ে অনেক কিছু সাজানো। দূরে ঠাকুরের পাশে কয়েকটা বই রাখা, ওপরেরটা আমার। নীল মলাটের ওপর লাল আর সাদা দিয়ে লেখা। আমার বইটা নিয়ে নিয়েছে সবাই। এত জিনিস টপকে আমি যেতেও পারছি না যে তুলে আনব। মা সমানে বোঝাচ্ছে, যে, ঠাকুরের কাছ থেকে বই তুলে নিতে নেই। কিন্তু আমার ভবি ভোলার নয়। বারবার দরজা দিয়ে বইটা দেখছি, সদর দরজা অবধি দৌড়োচ্ছি আর প্রচণ্ড চেঁচিয়ে কাঁদছি। আচ্ছা, কী বই ছিল ওটা? দেওয়ালে ক্যালেন্ডার, মা কোলে করে ক্যালেন্ডারের সামনে আমায় নিয়ে গিয়ে বলছে, ‘এটা কে? আমি বলছি বিবেকান্দ-নন্দ।’ মা হাসছে, আমি হাততালি দিচ্ছি। ... ...
বাঙালি মাত্র বিদেশে গেলেও দেশের খাবার খোঁজে। দিল্লী স্টেশনের বাইরে বাংলা সাইনবোর্ড যারা দেখেছেন তারা জানেন। মালিক হতে পারে রাজস্থানি, দুটো বাঙালিকে কাজে রেখে দিব্বি দু পয়সা করে খাচ্ছে। আমিও এতে দোষের কিছু দেখিনা। কথাতেই বলে, আপ রুচি খানা। যা পছন্দ হবে খাও, কে কি বলবে হ্যা ! তো, ওই গাইডগিরি করার সময়, কানে কানে ফিসফিস করে সাদেক মিয়ার হোটেলের (মানে ওই, রেস্টুরেন্ট, আমরা ওটাকেই হোটেল বলি) কথা বলে দিতুম। এই সাদেক মিয়ার কথা আগেও বলেছি, এনার মাইয়ারে আমি বাংলা পড়ানোর নাম করে গল্পগুজব করতুম হফতায় দুদিন। টুরিস্টদের বলতুম, দেশের কথা মনে পড়ে যাবে, ফেরার টিকেট দু দিন এগিয়ে আনতে হবে, এতো ভালো এর খাবার। ... ...
কবিগুরুর গল্পগুচ্ছ নয়, এ হল গুরুর গল্পগুচ্ছ। বাংলা সাহিত্যে গুরুর যদি কিছু অবদান থেকে থাকে তো তার এক নম্বরে আসবে গুরুর বৈচিত্র্যময় গদ্যভাষা, যা কখনও ডোবায়, কখনও ভাসায়, কখনও উল্টেপাল্টে দেয়। দুনিয়া যখন কলতলায় পরিণত, চিন্তাহীনতাই যখন প্রকাশভঙ্গী, খেউড়ই যখন ভাষা, তখন একমাত্র নতুন এক পৃথিবীই আপনাকে অন্য আকাশ দেখাতে পারে। তারই এক ঝলক রইল এবার নববর্ষে। এতে গুরুর সমস্ত গল্পকারদের আঁটিয়ে দেওয়া গেছে তা একেবারেই নয়, বরং উল্টোটাই সত্যি, যে হিমশৈলের অপ্রকাশিত অংশ এই গল্পগুচ্ছের চেয়ে বহুগুণ বড়। সেসব সম্ভার নিয়ে আমরা মাঝে মাঝেই প্রকাশ করব আরও কিছু গল্পগুচ্ছের টুকরো। কিন্তু আপাতত এই এলোমেলো বৈশাখে, এইটুকুই। ... ...
এখন কথা হল, নারী কোন একমাত্রিক পরিচিতি নিয়ে চলে না। যোনিগত পরিচিতি ছাড়াও মেয়েদের বংশ, জাত, ধর্ম, শ্রেণী ইত্যাদি নানা পরিচয় থাকে।যত জীবন চলতে থাকে ততই মৌলিক পরিচয়গুলির সঙ্গে যুক্ত হয় তার প্রথাগত শিক্ষার তকমা, পেশার পরিচয়, তার রাজনৈতিক অথবা সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্কজনিত পরিচয়।আর এই যে লিঙ্গ, জাতপাত, ধর্মীয়, শ্রেণীগত, যৌনতা অথবা শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা বিষয়ে মেয়েদের পরিচিতি, এর মধ্যে কোন পরিস্থিতিতে কোন পরিচয়ের কারণে তাকে ধর্ষিত, নির্যাতিত হ’তে হবে, তা নির্ভর করে তার পরিচিতিগত অবস্থানের প্রান্তিকতার ওপর।অনেকসময় একাধিক প্রান্তিক পরিচিতির কারণেও মেয়েদের ওপর অত্যাচার নেমে আসে। ... ...