অধিকাংশ ইতিহাসবিদের মোটামুটি গ্রহণযোগ্য মত হলো সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সাধারণভাবে শান্তিপূর্ণই ছিলো, এমনকি হিন্দু-মুসলিম মিলন, পরস্পরের সংস্কৃতি সম্পর্কে শ্রদ্ধা ও উপভোগের অজস্র দৃষ্টান্তও ইতিহাসে পাওয়া যায়। মমতাজুর রহমান তরফদার ভাষায় "হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে সম্পর্ক ছিল আন্তরিকতাপূর্ণ এবং ধর্মান্ধতার ঘটনা ছিল বিরল।" যদিও "সতর্কতার সাথে এসব গ্রন্থ পড়লে মনে হয় যে কিছু কিছু মুসলমান কর্মকর্তার ব্যক্তিগত খেয়াল ও ধর্মান্ধতা এসব সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের জন্য দায়ী ছিল। আবার, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামার ঘটনাও ঘটেছিল" ( হোসেনশাহী বেঙ্গল)। অর্থাৎ প্রাকবৃটিশ আমলে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের তুলনায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিই প্রধান প্রবণতা ছিলো, এই মতটি একভাবে মেনে নেয়া যায়, কিন্তু জিনিসটা ব্রিটিশরা আসার আগে এ দেশে ছিল না, এই মতটি মেনে নেয়ার মত না। ... ...
‘রক্তকরবী’র অনুপ্রেরণায় ছবি এঁকেছিলেন পরিতোষ সেন, শ্যামল দত্ত রায়, প্রকাশ কর্মকার, রবীন মণ্ডল, বিজন চৌধুরী, হিরণ মিত্র, ঈশা মহম্মদ, সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়, ওয়াসিম কাপুর, রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, শিপ্রা ভট্টাচার্য, শুভাপ্রসন্ন, যোগেন চৌধুরী, ‘রক্তকরবী’র নাট্যাভিনয়ের প্রাপ্তি, পরীক্ষা ও সমস্যা বিষয়ে লিখেছিলেন থিয়েটারের প্রবীণ ও তরুণ নির্মাতা কুমার রায়, বিশাখা রায়, সুমন মুখোপাধ্যায়, শিব মুখোপাধ্যায়, শুভাশিস গঙ্গোপাধ্যায় (শুভাশিস পরে দৃষ্টিহীন শিল্পীদের নিয়ে ‘রক্তকরবী’র একটি অসামান্য প্রযোজনা তৈরি করেছিলেন)। মণিপুরের রতন থিয়াম তাঁর নিজস্ব নাট্যভাবনাকে রূপ দিয়েছিলেন একটি রেখাচিত্রে। ... ...
“আকণ্ঠ কুয়োয় ডুবে আছে যে মানুষ সে জানে তার আকাশ বৃত্তাকার। তাকে দিগন্তরেখার লোভ দেখিও না।” পড়ে খটকা লাগলো যে আমার আকাশও কি বৃত্তাকার দেখছি বহুদিন? যে চিন্তা এতদিন টনক নড়ায় নি! স্মৃতি হাতড়ে মনে করার চেষ্টা করি আকাশের অন্য কোন আকার দেখেছিলাম কি না! কিন্তু এই স্মৃতিও খুব সহজে মনে পড়ার নয়। এ গত জন্মের আচ্ছন্নতা নিয়ে ইহজন্মে মাতৃ-জঠরে ভাসমান থাকার স্মৃতি। যা স্মৃতি আর বিস্মৃতির মাঝের গোধূলি! যা হৃদয়েরও যে একটি মস্তিষ্ক আছে, হৃদয় যার খোঁজ রাখে না, তাকে মনে করিয়ে দেয়। ... ...
‘হারবার্ট’ আর ‘কাঙাল মালসাট’। ‘হারবার্ট’ আমার মতে বাংলা ভাষার উপন্যাসের একটা মাইলস্টোন। সাধারণত মার্কামারা স্ত্রীপাঠ্য উপন্যাসের মধ্যে পড়ে বলে মনে হয় না। প্রসঙ্গত, ‘স্ত্রীপাঠ্য’ শব্দটি আমার গালাগাল হিসেবে ব্যবহৃত বলেই মনে হয়। কারণ আপনারা সম্ভবত জানেন, আর সন্দেহ থাকলেও সেকথা পরে হবে। এখন ‘হারবার্ট’ যে আমার বেশ সুখপাঠ্য লাগে এবং তাকে সেই লজিকে ‘স্ত্রীপাঠ্য’ এর দলে ঢুকিয়ে দেওয়া হল কিনা সে আপনারা ঠিক করুন। হারবার্টের মতো কোন লোকের কাছাকাছি আসার ভাগ্য আমার হয় নি তাই সত্য-মিথ্যা-কল্পনার তুলনা দিতে পারবো না। ব্যক্তিগতভাবে বামপন্থী, যুক্তিবাদী পরিবেশে বড় হয়েছি, চিরকাল যুক্তিবাদীদের দলের পাল্লাই ভারী করেছি। কিন্তু হারবার্ট-এ যুক্তিবাদীদের অসংবেদনশীলতা ছাপ রেখে যায় আমার মনে। পাঞ্চলাইন ‘কখন কীভাবে বিস্ফোরণ ঘটবে এবং তা কে ঘটাবে সে সম্বন্ধে জানতে রাষ্ট্রযন্ত্রের এখনও বাকি আছে’ –র থেকেও বেশি। হারবার্ট নিয়ে আবার কথা হবে। ... ...
গভীরে ক্ষতটা আমরা দেখি, যারা দুই সম্প্রদায়ের মানুষদের অন্দরমহলের বাইরে থেকে গেছি। পূজা ও ঈদের মাঝে আমরা কোথাও খুঁজে পাইনি নিজেদের।যে একফালি চাঁদ এত আনন্দের তাকে ছুঁতে পারিনি আবার বিসর্জনের সময় দুর্গামাকেও সাথ দেওয়া হয়নি একবার।উৎসবে অবগাহন অধরা থেকে গেছে।মানুষ হওয়ার বোধহয় এটাই ট্রাজেডি।তাকে হিন্দু নয় মুসলিম হতেই হয়।মুসলিম জন্মায় না।মুসলিম হয় বিশ্বাসে।সে বিশ্বাসের আবার ৫ স্তম্ভ।তা চর্চার বাইরে আমি।তাই চাঁদ রাত আমার কাছে এক গল্পমাত্র ।আর আমি যদি বলি সিন্ধুর তীরের হিন্দু আমি, কে দেবে আমায় দুর্গা ঠাকুর পছন্দ করে মণ্ডপে আনতে? বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সেই সরস্বতীদেবীকে তো হোষ্টেল সুপার আনতে দিতে বাদ সেধেছিলেন।জানিয়ে দিয়েছিলেন এক অহিন্দুর কখনো ঠাকুর চয়েস করার কাজ করতে পারে না!আমার মত অনেকের উৎসবের চেনা পথ তাই নির্জন,ব্যতিক্রমী।তবু আনন্দ জাগে………… ... ...
হুট করে লিখতে বললেই কি পাট করে প্রবন্ধ নেমে যায়? সব সময় হয়তো না। কিন্তু, কিছু কিছু বলার মতো কথা তো থাকেই যা অন্তত না বলে থাকা অনুচিত। অনুরোধ একান্তই ফেরাতে পারেননি যাঁরা, তাঁদের দু-কলম অনন্যোপায় লেখা এখানে একসঙ্গেই থাকল, নাহোক নিজেদের মধ্যে গল্পগুজব করার অছিলাতেই। ... ...
রাত সাড়ে এগারোটা। প্রচণ্ড জোর আওয়াজ আসছে নিচ থেকে। বিল্ডিং-এর একেবারে নিচে লোহার মেইন গেট। ওই গেটে প্রচণ্ড ধাক্কা মারছে কারা যেন! ঝন ঝন - খট খট - ধড়াম ধড়াম। নানারকমের আওয়াজ হয়ে চলেছে গেটে। সঙ্গে চিৎকার। শোনা যাচ্ছে না ভালো মত। কী যেন বলে চলেছে উগ্র চিৎকারে। হলঘরের ভেতর আর কোনও কথার শব্দ নেই। যা শব্দ, এখন কেবল বিল্ডিং-এর নিচ থেকে। মেইন দরজার বাইরে কি কথাবার্তা চলছে - কান পেতে শুনছে ওরা। কথাগুলো ফার্সিতে। হুমকি দিয়ে চলেছে। বোঝা যাচ্ছে, ওরা সেই কোম্পানির মালিকপক্ষের লোক। ওদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। ওদের সেই ফার্সি কথাগুলো বাংলা করলে হয়, সব কটাকে মেরে ফেলব। পুঁতে দেব এখানেই। কেউ ফিরতে পারবে না দেশে। দরজা খোল…। কথাগুলো হয়ে চলেছে অনেকগুলো কন্ঠস্বরে। এবার সঙ্গে অন্য একটা আওয়াজ। বুকের ভেতরগুলো কেঁপে উঠলো। ফাঁকা ফায়ারিং হচ্ছে নীচে। কেউ নামছে না ওরা নিচে। গেট ভেতর থেকে লক করা। ওরা বুঝতে পারছে লক একবার খুলে দিলে আর উপায় নেই। আজ রাতেই মরতে হবে সবার। কেউ খোলেনি লক। কিন্তু ওই লোহার গেট কতক্ষণই বা বন্ধ করে রাখা যাবে? ভেঙে ফেলার চান্স আছে। বেরোতে তো হবেই কখনও না কখনও। বেরোলে যে কী হবে সেটা আর ভাবতে পারছে না ওরা। বাইরে চলল চিৎকার। ... ...
কালিবাড়ির মোড় পেড়িয়ে বাড়ির রাস্তা ধরতেই আমার আবদার, দাদু রঙিন কাঠি লজেন্স নেবো। মোল্লা দাদুর দোকান থেকে আনারস আঁকা কাগজে মোড়ানো কাঠি লজেন্স হাতে নিয়ে দাদুকে পেছনে ফেলে আমি প্রায় দৌড়ে আমাদের তাঁতঘরের সামনে চলে আসি। ততক্ষণে প্রায় ফাঁকা আইনুল চাচার মোষের গাড়ি। দাদুকে রাস্তার কোণায় দেখা যেতেই আমি কাঠি লজেন্স মুখে পুড়ি, দাদু বস্তা আরোও আছে কিন্তু। আমি দাদুর হাত ধরে বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই বাড়ির উঠোনে মাষকলাই আর সরিষা গায়ে গা লাগিয়ে পড়ে আছে। আর বাটি ভরা মুড়ি, মুড়কি, গুড় নিয়ে আইনুল চাচা লাল বারান্দায় বসে আছে। ঠাকুমা গ্লাস ভরে চা এনে দিতেই আইনুল চাচার লাল দাঁতগুলো ঝিলিক দেয়, মা একটা পান দিয়েন। ... ...
কটা একটা করে বছর আব্বুলিশ বলতে যখন ব্যস্ত, আড়ম্বরের কাছে সরলতা কোটোয় বন্দী বোকা-জীবন তখন রকমফেরের পরখ পেতেই ঈদ সে যাপনমুখী। এখানে হলে সলমন থাকে, গুজরাটে - কেরালায় কাজ করা আজিজুল- মোক্তার এরা থাকে সপ্তাহ খানেকের ছুটির আনন্দে। এখানে মাঠে সার্কাস বসে, বিকেলে চপ-রোল-চাউমিন-জিলিপি-বাদামের মেলা থাকে। ঈদগাহ সাজানোর রঙিন কাগজী বেলাভূমিতে মিতায়ু সুর্মা উদ্বেল থাকে আনন্দে - তিতিক্ষায়। এখানে লালবাগে প্রেম থাকে ফুরফুরে, ইতিহাস মেখে উথালপাতাল অধুনা থাকে বেমিশাল....। আদতে তো একটাই দিন। সমস্ত কুশল সংবাদ, ভালবাসা, খুশি, মুহূর্ত সময় আগলে অহেতুক প্রশ্রয় দেওয়ার দিন...এমন গচ্ছিত মায়াদিন - ... ...
আমরাও বাবার শুনে শুনে খুব জোরে জোরে চেঁচিয়ে আলক্ষ্মী বিদায় করে দিতুম। তারপর বাবা তালপাতার পাখা আর বেতের কুলো নামিয়ে আনত। এগুলো ঠাকুরের জায়গায় তোলা থাকত। তিনজন মিলে সেগুলো নাড়িয়ে নাড়িয়ে ছড়া কেটে বাতাস দিয়ে দিয়ে রাস্তায় গিয়ে অলক্ষ্মীকে তাড়িয়ে দিতুম। কুলোর বাতাস আর পাখার বাতাস দিতে আমাদের দু’ বোনের এত উৎসাহ আর তিড়িং বিড়িং লাফালাফি দেখে বাবা হা হা করে হাসত। বাবা খুব শান্ত, চুপচাপ মানুষ ছিল। কিন্তু ঐ লক্ষ্মীপুজোর দিন বাবা যেন আমাদের সমবয়সী ছেলেমানুষ হয়ে যেত। এখন বুঝি, ঐ সব রীতি বাবার ছোটবেলার স্মৃতিতে মিশে ছিল। আমাদের সঙ্গে নিয়ে বাবা নিজের ছোটবেলায় ফিরে যেত। ... ...
শব্দহীন সাইকেল আসে৷ বেল বাজেনি ক্রিং৷ বেল বেজেছে ক্রিং। ঘরঘর করে আহ্লাদে ডেকে ওঠেনি পোষ মাদীটা। টের পায় সাড়ে তিন বছর৷ খুলে দেয় কাঠের পৌনে চার ফুটে হুড়কা আর চেয়ার টেনে ছয় ফুট উঁচুতে লোহার ছিটকিনী৷ "আব্বু আসছে"৷ এইবার গলাগলি ঘুম- ফজর আমার.. ফিশফিশানি দুপুর আসে৷ রঙিন ফড়িং, বোয়ামে নীল চোপড়া মাছ! ঘুম আর ভলো লাগে না৷ মনেহয় দিনমান খেলি "ঘুঘু'র তোর তরকারি" খেলতে খেলতে জহর গড়িয়ে আছর৷ পালানো বাছুর। সুতো ছিড়া ঘুড়ি৷ সন্ধ্যায় রুলটানা খাতা বেঁকে বেঁকে যায়৷ ক্লাস ফাইভের পদ্য লেখার রোগ… ... ...
আইডিওলজি ব্যাপারটা তো কোনও বিমূর্ত, ওপর থেকে চাপানো প্রত্যয়ের বিন্যাস নয় । আর আমাদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অনুমানসমূহ এবং ভাবনা ও অভ্যাস কেবল অন্যের দ্বারা কলকাঠি নাড়ার ফলাফল নয় । কিংবা তা প্রত্যক্ষ প্রশিক্ষণ নয়, যে, যখন ইচ্ছে থামিয়ে দেয়া চলে বা গুটিয়ে নেওয়া যায় । তা যদি হতো তাহলে সংস্কৃতিকে যেদিকে যেমন ইচ্ছে চালনা করা যেতো । ইরানের শাহ শত চেষ্টা করেও নিজের ইচ্ছেমতন চেহারা দিতে পারেননি সেদেশের সংস্কৃতিকে । আবার খোমেইনিও সফল হননি । সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত চাপের দরুন পাকিস্তান রাষ্ট্র ভেঙে দু’টুকরো হয়ে গেল । সোভিয়েত দেশও ভেঙে টুকরো-টুকরো হয়ে গেল এবং টুকরোগুলো নিজের সংস্কৃতিতে ফিরে গেল । যোগোস্লাভিয়া ছিৎরে গেল । অথচ চাপিয়ে দেয়া নান্দনিকতার রেশ থেকে সংস্কৃতিটির বিশুদ্ধ মুক্তি বেশ কঠিন, বলা যায় অসম্ভব — পদাবলী বা মঙ্গলকাব্যে আর ফেরা যায় না । পক্ষান্তরে, তৃণমূল স্তরে প্রতিরোধগুলো যতদিন টিকে থাকে ততদিন সংঘর্ষ চালিয়ে যায়। ... ...
বহু প্রতীক্ষার পর যখন ২০১৭ তে এসে এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিদের মানবাধিকার রক্ষার জন্য তৈরী হওয়া এইচআইভি ও এইডস আইন ২০১৭ পাশ হয়েছে। এই আইন সারা দেশে ১০ই সেপ্টেম্বর ২০১৮ থেকে কার্যকর করা শুরু হয়ে গেছে। চলুন সংক্ষেপে জেনে নিই কি বলছে আইন... ... ...
বিপদ নয় তো আমার ভয় ফুরিয়ে আসা দিনে, তরতর করে এগিয়ে আসা ফিরে যাবার দিনে। তাই নবমী ফুরিয়ে দশমীর সকাল আসতেই আমার চোখে কষ্ট জমে জল হয় বারবার। আর আমার সে কষ্টকে বুঝেই ঢাকেও সুর ওঠে, ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ, ঠাকুর যাবে বিসর্জন… ... ...
ভদ্রলোকের বয়স প্রায় ৮৩ বছর। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ইনিই মুর্শিদাবাদের নবাব বাহাদুর পদের বৈধ উত্তরাধিকারী। মুর্শিদাবাদ শহরবাসী তাঁকে নবাব বাহাদুর হিসেবে যথেষ্ট সম্মান করেন। ভদ্রলোকের নাম নবাব সৈয়দ মুহাম্মদ আব্বাস আলি মির্জা। তিনি থাকেন কেল্লা নিজামতের ভেতরে দক্ষিণ দরজার পাশে অবস্থিত একটি পুরনো বাড়িতে। তবে নবাব সাহেবের দেখা পাওয়া মুশকিল, অনেকেই তাঁর সাথে দেখা করতে চান কিন্তু তিনি খুব একটা দেখা দিতে চান না। এতে অবশ্য কোনো অস্বাভাবিকতা নেই, কারণ আজ যদি নবাবী আমল হতো আর উনি যদি নবাব হতেন তবে তো নবাব সাহেবের সাথে দেখা করা মোটেই সহজ সাধ্য হতো না। আজ হয়তো নবাবী আমল নেই ঠিকই কিন্তু নবাব সাহেবের শরীরের মধ্যে তো এখনও তাঁর পূর্ব পুরুষদের রাজকীয় রক্ত বইছে।ফলে তাঁর কিছুটা প্রভাব তাঁর আচরণে দেখা দেওয়া দোষের কিছু নয়। ... ...
এ তো গেল রাজ্য সরকার। কেন্দ্র সরকার কেন FCI যোগান বন্ধ করতে গোঁ ধরে বসে আছে সে আরেক রহস্য। দ্বিমত নেই শ্রমিকদের রেশন দেওয়ার দায়িত্ব মালিকের। কিন্তু মালিককে তার দায়িত্ব স্মরণ করানোর কাজে কংগ্রেসের রাজ্য সরকার বা ভাজপার কেন্দ্র সরকার, কারোই কষ্মিণকালে আগ্রহ দেখা যায় নি। হরেদরে শস্তা খাদ্য আসছে FCI-এর গুদাম থেকে, অর্থাৎ সরকারি পয়সাতে। যখন সেই যোগান বন্ধ হতে যাচ্ছে মজুরের রেশন মার খাবে, মালিকের কেশাগ্র বঙ্কিম হবে না। হুট করে বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, আর মালিকের কী করা উচিত উপদেশ বিতরণ করার বদলে, কেন্দ্র সরকার বিভিন্ন পক্ষের (অবশ্যই মালিক ও মজুরপক্ষ) সাথে আলোচনায় বসে সমাধান সূত্র বার করার চেষ্টা করতে পারত। আসলে শ্রমিকের অধিকার কর্তন করাতে কংগ্রেসে ভাজপায় বিশেষ মতভেদ নেই। এই মুহূর্তে ওপরের ঘটনাবলী কংগ্রেসকে ঘ্যানঘ্যান করার সুযোগ দিয়ে দিয়েছেঃ NFSA লাগু করার জন্য প্রয়োজনীয় টাকা কেন্দ্র সরকার এখনো দেয় নি। মানে, জানুয়ারি থেকে ECA বাদ দিন, NFSA-এর রেশনও পাওয়া যাবে না। ... ...
সমাজতন্ত্র সংকটে। আজ আর এই নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। একদিন ছিলো। কিন্ত অন্য একটা বিতর্ক আছে - আবার নেইও বটে। সংকটের শুরু কোথায়? বির্পযস্ত সমাজতন্ত্রের তলায় চাপা থাকা এই বিতর্ক খুঁড়ে আনা যাক। পুরোনো কাসুন্দি নেহাৎ খারাপ কিছু নয়। ... ...
একবার মামারা রাজরাপ্পার মন্দির থেকে বলির মাংস নিয়ে এল। বড়দিদা রান্না করল পেঁয়াজ-রসুন ছাড়া। ওভাবে যে পাঁঠার মাংস রান্না করা যায়, সেও আমার রাঁচীতেই দেখা। আর মাংস রাখতে হলে আমরা তো ফ্রিজে রাখি। রাঁচীতে শীতকালে কাঁচা মাংস একরাত রাখতে হলে বালতি করে ঢাকা দিয়ে বারান্দায় রাখা হত। বাইরে যা ঠান্ডা, ওটাই ফ্রিজের কাজ করবে বলে। আরও একটা জিনিস রাঁচীতে শিখেছিলাম। যদি দু’-তিন দিন ধরে ট্রেন বা বাস জার্নি করতে হয়, আর বাইরের খাবার খেতে অসুবিধে থাকে, তাহলে দুধ দিয়ে ময়দা মেখে লুচি করতে হয়। তিনদিন ঠিক থাকে, খারাপ হয় না। সঙ্গে আচার নিতে হবে। নইলে তরকারি অতদিন তো থাকবে না। ... ...
আমরা যেন মাথায় রাখি, বঙ্গভাগের পর বছরের পর বছর ভূমিভাগের ব্যথা সহ্য করে বাংলার নানান অঞ্চল উদ্বাস্তুদের আত্মীকরণের লড়াই চালাচ্ছিল, সে সময় বিপুল সংখ্যক প্রায় সব হারিয়ে আসা মানুষ পথকে বেছে নিয়েছিলেন জীবিকার পাথেয় হিসেবে। কলকাতা, অন্যান্য অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল শহুরে নিম্নবিত্তদের জন্যে বিপুল স্বাভাবিক বাজার এবং ক্রমশ কলকাতার কপালে উঠেছিল শস্তাতম শহরের তকমা। ... ...