আমি একটা ফেসবুকের পাতা বানিয়েছিলাম, সেখানে নানা ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরা লেখা, আঁকা, মোবাইলে তোলা ফটো, নিজের করা হাতের কাজ, রান্নার ছবি, গান, নাচ বা আবৃত্তির ভিডিও - লকডাউনে যে যা পাঠাত, সেগুলো আপলোড করতাম। এছাড়া ওদের মন ভাল করার অন্য কীই বা উপায় ছিল! বেশিরভাগ তো সব দূরদূরান্তে অজ পাড়াগাঁয়ে বাড়ি, কলেজের কাছে মেস করে থাকে। নিজেরা হাত পুড়িয়ে রান্না করে খায়। একবার একটা পিজি ব্যাচ পাশ করে মেস ছাড়ার আগে আমাদের নেমন্তন্ন করে মাংস ভাত খাইয়েছিল। যা হোক, আলটপকা দু সপ্তাহের লকডাউন হতে দু তিনটে জামাকাপড় নিয়ে সব বাড়ি চলে গিয়েছিল। বই খাতা মেসে পড়েছিল, আর যে ওগুলো নিতে ফিরতে পারবেনা, তা তো স্বপ্নেও ভাবেনি। বাড়িতে বসে লেখা পড়া যে করবে, উপকরণ ছিলনা। আমি যখন বলতাম এই তো রবীন্দ্র জয়ন্তী এসে গেল, কিছু লিখে পাঠাও। অনেকে বলেছিল, ঘরে কাগজ নেই ম্যাডাম। তখন আমি বললাম, যে ওমা! লিখতে বুঝি সব সময়ে কাগজ লাগে? আমি তো মোবাইলে লিখি। তখন আর্জি এলো কোন, জয়ন্তী নয়, শুধু আমাদের জন্য মোবাইলে লিখুন ম্যাডাম। ... ...
ভারত পাকিস্তানের ম্যাচ দিল্লিতে বসে দেখলে উত্তর ভারতের পাকিস্তান বিরোধী মনোভাবটাও বেশ টের পাওয়া যায়। কয়েকটা স্লোগান তো বেশ পরিষ্কারভাবে ধর্মবিদ্বেষী। আমার পিছনেই বসেছিলেন সাঙ্গোপাঙ্গো নিয়ে একজন, বন্ধুরা তাকে পন্ডিতজী বলে ডাকছিলেন। আমার টীম পাকিস্তানের টী শার্ট পরাটা তার আর কিছুতেই হজম হচ্ছিল না। আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলছিলেন, "পাকিস্তান আজ জিতলে আর জ্যান্ত ফিরতে হবে না" বা "কাসভের মতন সব পাকিস্তানীকেই ফাঁসিতে লটকে দাও"। শুধু পাকিস্তান বিরোধী নয়, স্লোগানগুলো ছিলো মুসলিম বিরোধীও। লাহোরে শেষ যে ইন্ডিয়া পাকিস্তান ম্যাচ হয়েছিলো তার সুর কিন্তু অন্যরকম ছিল। সচীন মাঠে নামলে গোটা স্টেডিয়াম উঠে দাঁড়িয়ে তাকে সম্মান জানিয়েছিল। সেই খেলায় ভারত জিতলে লাহোরবাসীরা ভারতীয়দের আলিঙ্গন করতেও ভোলেন নি। স্টেডিয়ামের বাইরে ভারতীয়রা খেলা জিতে নাচতে শুরু করলে লাহোরের ঢোলওয়ালারা সোৎসাহে ঢোল পিটিয়ে ছিলো। ক্রিকেট তো সবাই ভালোবাসে কিন্তু স্টেডিয়ামে এসে পরস্পরের জাতি বিদ্বেষটাকে কি না উগরে দিলেই নয়? খুব কি একটা উপর উপর ব্যাখ্যা দিলাম? আমার বন্ধুরা, যারা এর আগে দিল্লিতে ইন্ডিয়া পাকিস্তানের ম্যাচ দেখেছিল, তাদের অভিজ্ঞতাও কিন্তু আমারই মতন। ... ...
পথ চলতে চলতে হঠাৎ দেখা সেই লাস্যময়ী নারীটির সাথে, যার নাগরটি গোপনে প্রণয়াবদ্ধ হয়েছে আমার দয়িতার সাথে। হ্যাঁ, এরকম তো হতেই পারে, তখন আমরা কি করবো? “কি করি আজ ভেবে না পাই, পথ হারিয়ে কোন বনে যাই”। বাধনহীন যৌনকামনা আমাকে প্রতি মুহূর্তে আচ্ছন্ন করে, কখনো বা ভাবি আমাদের দুজনের এই উভয়সঙ্কট বুঝি জন্ম দেবে এক মৌন অমর ভালবাসার। হয়তো কাল আমাদের ক্ষমা করে দেবে আমাদের মত এমন দুটি ব্যথিত হৃদয়ের গল্প শুনে সবাই হর্ষাবিষ্ট হবে। নিভৃত হৃদয় যুগলে লুকিয়ে থাকা বিষাদসিন্ধুর সন্ধান কারই বা জানা আছে? এমন দুটি ব্যকুল হৃদয়ের দৌর্মনস্য, নিবিড় গোপনীয়তা আবার আলিঙ্গনাবদ্ধ হয়ে নতুন করে প্রেমের ইতিহাস লেখার যে ক্ষণস্থায়ী সুযোগ রচিত হয়েছিল Wong Kar-Wai এর 'In the Mood for the Love' ছবিতে, তা দেখে এক কথায় হতচকিত না হয়ে উপায় নেই। একজন অর্কেস্টার নির্দেশক যেমন, Wong Kar-Wai ও ঠিক তেমনভাবেই সেই ব্যথিত যুগলের মনের মণিকোঠা থেকে উদ্ধার করেছেন এক আবেগবিহ্বলতা, এক চেতনাময় সংগীত, যা ধরা পড়েছে ছবিটির পরতে পরতে, প্রত্যেকটি শটে। ... ...
হেপাটাইটিস-সি। বিশ্বে আনুমানিক সাত কোটি মানুষ এই রোগে ভুগছেন। তাঁদের মধ্যে কুড়ি শতাংশেরও কম মানুষ হেপাটাইটিস-সি সম্পূর্ণ সারিয়ে ফেলার মতো ওষুধ পেয়েছেন। এই প্রেক্ষিতে এ বছর চিকিৎসাবিজ্ঞানের নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন তিন বিজ্ঞানী হেপাটাইটিস-সি ভাইরাস আবিষ্কারের জন্যে—হার্ভে অল্টার, মাইকেল হটন এবং চার্লস রাইস। এই গবেষণায় তাঁদের অবদান কী? আলোচনায় চিকিৎসক বিষাণ বসু। ... ...
বেগুনের ভরের চেয়েও, বেগুনের জিন এর এই গুরুত্ব কিন্তু এর আগে বোঝা সম্ভব হয় নি। আসলে ভেবে দেখতে গেলে, জিএম বেগুনের জিনে এত বেশি রকমের তারতম্য, যে এগুলি বেগুনের উপসর্গ মাত্র। প্রকৃত প্রস্তাবে, এটি একটি সম্পূর্ণ নূতন প্রজাতির সিন্থেটিক সব্জি। এই তো কদিন আগেই বিদেশমন্ত্রী জুবেদা খাতুন রাষ্ট্রসংঘের বক্তৃতায় বললেন যে অর্গ্যানিক বেগুন চাষ বাংলাদেশের কৃষি স্বাধীনতা এবং সামাজিক পছন্দ (সোসাল চয়েস) এর দৃঢ় প্রতীক। কৃত্রিম উপায়ে প্রস্তুত জিএম বেগুন যে শুধু মুনাফালোভী চক্রান্ত তাই নয়, সেগুলি বেগুনই নয়। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সদ্ভাব রক্ষা ও গবেষণায় সম্পূর্ণ সাহায্যে বাংলাদেশ সম্পূর্ণ প্রস্তুত। মহামান্য আদালতের রায়ের পরে আশা করা যেতে পারে যে এ নিয়ে কোনওরকম ভুল বোঝাবুঝি থাকবে না ও প্রকৃতির দান প্রকৃতির কাছেই থাকবে। এ নিয়ে যেন দুই দেশের মৈত্রী ও সৌভ্রাতৃত্ববোধে আঘাত না লাগে। এমন কি তিনি এও বললেন - লেট বাইগনস বি বাইগনস। ... ...
যখন খবরের অভাব ঘটে তখন সাধারণ মানুষকেও সেলিব্রিটি করার চেষ্টা হয়। তবে তার জন্য সাধারণ মানুষদের বড় বেশি মূল্য দিতে হয়। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় কারখানা থেকে বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে বহু মানুষের মৃত্যু হলে সর্বভারতীয় খবর হয়। তবে তা দিন দুয়েকের জন্য। একজন অভিনেতার আত্মহত্যার ঘটনায় ঘন্টার পর ঘন্টা টিভিতে আলোচনা চলে। সঞ্চালক নিজেই রীতিমতো মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠেন। কিন্তু প্রতিদিন গড়ে আঠাশ জন কৃষক আত্মহত্যা করলেও তাঁদের পরিবার ছাড়া কেউই চোখের জল ফেলেন না। ... ...
১৯৭৬ সালের ২৬ নভেম্বর। বাঁকুড়ার ছোট্ট মফস্সল শহর বিষ্ণুপুর থেকে বিশ্বভ্রণে বেরিয়ে পড়লেন দুই তরুণ। গন্তব্য—আফ্রিকা। একজন হাল ছাড়েন কিছু পরেই। অন্যজন চলতে থাকেন—১৭ বছর। ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলোমিটার। ১৫৪ টি দেশ। আজও এ কীর্তিতে তিনি অদ্বিতীয়। এই প্রথম দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে সে পরমাশ্চর্য সফরের অনুপুঙ্খ কাহিনি শোনাচ্ছেন জয় মণ্ডল। আলাপে নীলাঞ্জন হাজরা। ... ...
মনে পড়ে যায়, রবি একদিন বলেছিল গল্পটা। বড় নিকাশি নালা গায়েব, যেটুকু বেঁচে, পরিষ্কার হয় না। একবার জনপদের, এমনকি স্কুলের মাঠের জল কিছুতেই নামে না। পাবলিকের হল্লায় নালা পরিষ্কার করতে লোক লাগাল পঞ্চায়েত। একদিনের কাজ শেষ হয় তিনদিনে। নালা সিল হয়ে ছিল কোটি কোটি প্লাস্টিকের চিকচিকি, ব্যাগ, মোড়ক, গ্লাস আর থার্মোকলের ট্যুরিস্ট বাটি-থালায়। আটাত্তর, দু’ হাজার, আয়লা, আম্পান, ইয়াস। একের পর এক বন্যা। সন্দেশখালির নালার হাজার মেগাটন প্লাস্টিক তুলে নিয়ে যেতে লরি লেগেছিল গোটা কুড়ি। ... ...
জানা গেছে খিচুড়ির এক পূর্বজর নাম কৃসর। ভরতমুনির নিদানে নাট্যমঞ্চ নির্মাণে সে খানার আছে বেশ জরুরি ভূমিকা। কিন্তু মুশকিল হল, এ খাদ্যের সঙ্গে যে আজকের খিচুড়ির কোনোই মিল নেই! নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
জাহেরা কসাই বাড়ির মেয়ে। তাঁর হাঁকডাক কম নয়, দরকারে ছুরি-চাপাতিও চালাতে পারেন। চাইলে তিনি প্রবল প্রতিরোধ করতে পারতেন, হৈচৈ করতে পারতেন, কিন্তু তিনি সেসবের কিছুই করলেন না। তাঁর সকল প্রতিরোধের শক্তি গত কয়েক মাসে একটু একটু করে নিঃশেষ হয়ে গেছে। যেদেশে নারীর পরিধেয় ব্লাউজ, পেটিকোট বা শেমিজ বিহীন শাড়ি আর পুরুষের পরিধেয় ধুতি বা লুঙ্গি—সেদেশে তাদের যৌনকর্মে লিপ্ত হতে বেশি আয়াসের দরকার হয় না, সম্পূর্ণ বিবস্ত্রও হতে হয় না। নাজির খাঁ’র ভারি দেহের নিচে নিষ্পেষিত হতে হতে জাহেরা ভাবলেন, উদয়াস্ত পরিশ্রম করলে তাঁদের তিন জনের দু’বেলার খাবার হয়তো জোটানো যাবে, কিন্তু সবার নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বাড়তি কিছু মূল্য দিতে হবে। বাইরের দুনিয়ায় শেয়াল শকুনের খাবার হবার চেয়ে এটা হয়তো মন্দের ভালো হল। ... ...
মাছ কটা সোমারীর হাতে, কাপড়ের বালতি নিয়ে বুড়ি লালমাটি আর পাথরের পথে কষ্টে হাঁটে। জলছেঁড়া সূর্য্যিটা বড় তাপ ছাড়ছে, কপালটা ঘামছে, অথচ এখনই ডুবচান দিয়ে উঠল। বড়রাস্তায় উঠতেই ট্র্যাক্টর চালিয়ে থামল চাবাগানের নার্সারির রোজারিও। একপ্যাকেট ডঙ্কা আগরবাতি হাতে দিয়ে বলল - একটা মোমও দিল - মৌসী, মেরীজুনের নামে পাত্থরঠাকুরের কাছে একটু প্রে কোর। রোজারিও তেজপুরের চার্চে যায় ফি-রোববার। ওর ঘরে যীশুবাবার ক্রুশবেঁধা ছবি। আহা, ভগবানের এত দুখ, তো মানুষের হবে না কেনে! রোজারিওর দুঃখও সুরিয়া জানে। ওর মেয়েদুটি খুব ধলা। একটা বারো একটা চৌদ্দ। মিসামারির ম্যাথুসাহাব ফৌজিসাহাব - সেও খিরিস্তান। লেখাপড়া শিখিয়ে বিয়া দিব বলে কোচিন না কই নিয়া গেল। গরিব রোজারিও বলে এংলোইন্ডিয়ান সাহেবের জাত। মেয়ে দুটি ভালো খাবে পরবে বলে দিয়ে দিল। এখন শুনছে জুন নাকি লুকিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে তারা দুই বহিন বহুত খারাপ আছে। গরিব সাহেব রোজারিও এখন চার্চে মোম দেয়, উদালগুড়ি পীরের মাজারেও মোম দেয়। এই চারহাত ভগবানকে মোম ধূপকাঠি দিতে চায় বুড়ির হাতে। হ্যাঁ, সুরিয়া কালকে গোলাপফুলের মত মেয়েদুটির নাম করে দিয়ে দেবে বৈকি ঠাকুরের কাছে। এটা চা বাগান - কার নানা পরনানা কোন জাত কোন গেরাম কোন জেলা থেকে কোন আড়কাঠির সঙ্গে এখানে ওখানে এসে পড়েছিল তারা জানেনা। তাদের সন্তান সন্ততিরা সবাই কুলি। এখন অবশ্য কুলি বলেনা, লেবার বলে। তারা এত জাতজন্মের খোঁজ রাখেনা। ঘামে শ্রমে হাঁড়িয়ার ঠেকে ওঠাবসা একসঙ্গে। তাদের দেবদেবীরাও একাকার। পাতি তোলে বাগানে নিড়ানি দেয়, চাঘরে ডায়নামো চলে, ড্রায়ারের আগুন গরম তাতে খাটে। দুপুরে একই পাত্র থেকে লাল চাহাপানি খায়। ওদের বামুন শুদ্দুর নাই, ওসব আছে বাবু কোয়ার্টারে। ডাক্তারবাবু বামুন, চাঘরবাবু শুদ্দুর, বাগানবাবু বড়গোঁহাই। তাদের খাওয়া ছোঁয়া ঠাকুরদেবতায় একটু আধটু নিয়ম নিষেধ আছে। বেচারী রোজারিও একুল ওকুল কোন কুলেরই নয়। ... ...
কলকাতা মেট্রো এক ভয়াবহ দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়ে থাকল আজ। দুর্ঘটনাটি ঘটে সন্ধ্য়ে পৌনে সাতটা নাগাদ। কসবা এলাকার এক বাসিন্দা সজল কাঞ্জিলালের হাত মেট্রোর একটি ট্রেনের দরজায় আটকে যায়। সাধারণ অবস্থায় এরকম আটকে যাওয়া সম্ভব নয়। দরজা এই অবস্থায় বন্ধই হয়না। কিন্তু যান্ত্রিক গোলমালের জন্য়ই এমন হয় বলে আন্দাজ করা হচ্ছে। চালক কিছু টের পেয়েছিলেন কিনা জানা যায়নি। কিন্তু ওই অবস্থাতেই ট্রেন চলতে শুরু করে। যাত্রীটিকে ট্রেন ছ্য়াঁচড়াতে ছ্য়াঁচড়াতে নিয়ে চলে বহুদূর। তিনি গুরুতর ভাবে আহত হন। পরে মারা যান। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন কিনা জানা যায়নি। ... ...
১৯৭৬ সালের ২৬ নভেম্বর। বাঁকুড়ার ছোট্ট মফস্সল শহর বিষ্ণুপুর থেকে বিশ্বভ্রণে বেরিয়ে পড়লেন দুই তরুণ। আফ্রিকা। একজন হাল ছাড়েন কিছু পরেই। অন্যজন চলতে থাকেন—১৭ বছর। ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলোমিটার। ১৫৪ টি দেশ। আজও এ কীর্তিতে তিনি অদ্বিতীয়। এই প্রথম দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে সে পরমাশ্চর্য সফরের অনুপুঙ্খ কাহিনি শোনাচ্ছেন জয় মণ্ডল। আলাপে নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
সাহিত্য নয়, কথকতা। পড়তে পড়তে মনে হয়, কথকতাও নয়, চিত্রনাট্য। সাবলীল গদ্যের টানে টেনে নিয়ে যাওয়া চলচ্চিত্রই যেন। প্রতিটি ছোট ছোট অভিজ্ঞতা আর তার আগে-পরে বহু ফ্ল্যাশব্যাক মুহূর্তকে লেখক ধরেন কখনও ক্লোজ শট, কখনও মিড শট, কখনও লং শটে। তাঁর ক্যামেরার চোখে কখনও ভি শান্তারাম, কখনও বিমল রায়, কখনও গুলজার। ছোটখাটো চেহারার ধুতি-পাঞ্জাবি পরিহিত আদ্যন্ত বাঙালি যে মানুষটি বাংলা সাহিত্যের পুনর্নির্মাণ করেছেন সেলুলয়েডে, তাঁর নির্ভার স্মৃতিচারণে কী অবলীলায় ধরা পড়েছে ষাট-সত্তর দশকের বোম্বে থেকে কলকাতা। শচীনকর্তার বাড়ি থেকে হেমন্ত কুমারের সঙ্গে আড্ডা, বিমল রায় থেকে সত্যজিৎ রায়ের সাহচর্য, ম্যাডাম কাননবালা থেকে মিসেস সেনের কাছের মানুষ, মহানায়ক উত্তম থেকে ম্যাটিনি আইডল রাজ কাপুরের সখ্যতা... বর্ণময় জীবন কি একেই বলে? ... ...
প্যারিস। ২০০৬। বৃষ্টিমুখর সকাল। একটি রেস্তোরাঁ। শিল্পীদের ভিড়। চকিতে একটা প্লেট হাওয়া। হিরণ মিত্র ... ...
চিররহস্যের আড়াল থেকে মনকে অনাবৃত করার প্রচেষ্টা দার্শনিকেরা করেই চলেছেন। গত পঞ্চাশ বছরে কম্পিউটার ও স্নায়ু বিজ্ঞানের অগ্রগতি মনোদর্শনের চর্চাকে যে ভাবে উজ্জীবিত করেছে, তার অভিঘাত বাংলা প্রকাশনার জগতে সে ভাবে পড়েনি বললেই চলে। বহু বিচিত্রপথে বিশ্বের জ্ঞানচর্চার জগতে প্রায় সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া আলাপ-আলোচনার সঙ্গে বাংলাভাষার আগ্রহী পাঠকদের পরিচয় হবে এই গ্রন্থটির মাধ্যমে। অমিতাদেবী ভূমিকাতেই রবীন্দ্রনাথ থেকে ডেনেটের উক্তি তুলে ধরে দেখিয়েছেন, তাঁর উদ্দেশ্য মনোদর্শনের সরটুকু কল্পগল্পে ফুটিয়ে তোলা। প্রশ্ন ওঠে, গল্পের আগে কল্প কেন? এখানেও লেখক রবীন্দ্রনাথের শরণ নেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘গল্পমাত্রেই কি কল্পলোকের অধিবাসী নয়? ক্বচিৎ কখনও গল্প যদি সত্য হওয়ার দাবি রাখে, তবে অধিকাংশ গল্পই কেবল সত্য নয়, ‘আরও-সত্যি’।’’ ... ...
প্রায় উনিশ বছর আগে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে দূরভাষে জয় গোস্বামীর এই সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন চিরন্তন কুন্ডু । জয় তখন ছিলেন আইওয়া-তে একটি রাইটার্স ওয়ার্কশপে। চিরন্তন এবং জয়-এর অনুমতিক্রমে সাক্ষাৎকারটি এখানে প্রকাশ করা হল। ... ...
হয়তো নিজেদের অজ্ঞাতেই, আমরা (পদার্থবিদরা) পদার্থবিদ্যা-র পেশাকে, ‘যোগ্যতমের উদ্বর্তন’-এর একটি উদাহরণ হিসেবে দেখি – যে রূপকে সর্বদাই, অনেক লড়াইয়ের পর, সবচেয়ে কেঁদো বাঘটিই জঙ্গলের রাজা হয়ে ওঠে। সেই কারণে, পড়ানোর বা আলাপচারিতার সময়, নিয়োগের সময় এবং সর্বোপরি নিজেদের মাথার মধ্যেই, আমরা পদার্থবিদদের একটি তালিকায় ক্রমানুসারে সাজাই, আর “সর্বোত্তম”-এর সন্ধান করতে থাকি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের বোধ, রাশিবদ্ধ এবং অঙ্কের ভাষায় প্রকাশিত না হচ্ছে, আমাদের শান্তি নেই। স্বভাবতই, পদার্থবিদদের নিয়ে চিন্তা করতে বসেও, আমরা অভ্যাসবশত সেই চিন্তাকে ‘গাণিতিক’ মাপজোকে ফেলি। ঠিক তখনই আমাদের বক্তব্য হয়, “যদি আমাদের সাজানো লিস্টে শ্বেতাঙ্গ পুরুষ প্রার্থী ‘ক’, সংখ্যালঘু প্রার্থী ‘খ’-এর উপরে থাকে, তবে আমরা ‘ক’-কে নিতে বাধ্য, আর সেই কারণেই, ‘বৈচিত্র্যে’র জন্যে আমাদের পক্ষে কিস্যুটি করা সম্ভব নয়!” এর থেকে বড় ভুল কথা আর হয় না! ... ...
মাত্র চার বছর আগে অবধি আমরা আইনত বলতে পারতাম না, যে আমরা এলজিবিটিক্যু+ সম্প্রদায়ের মানুষ বা তাঁদের অধিকার নিয়ে কাজ করি। একটা লার্জার হিউম্যান রাইটস ছাতার তলায় ‘জেন্ডার’-এর আওতায় আমাদেরকে ফেলা হত। ফলে যা হওয়ার তাই হল – মানবাধিকার কমিশনের এক রিসার্চে যা উঠে এল, তা হল ৯২% ট্রান্সজেন্ডার মানুষ কোনোরকমের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত নয়। অথচ সরকারি স্তরে এই মানুষদেরকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার কোনো পরিকল্পনাই নেই। ২০২১ সালে ভারত সরকারের সোশ্যাল জাস্টিস অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট মন্ত্রক সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর স্বশক্তিকরণ বাবদ যদি ১০০ টাকা খরচ করে থাকে, তার মধ্যে মাত্র ৪ পয়সা খরচ করেছিল ট্রান্সজেন্ডার মানুষদের জন্য – প্রায় ১২,০০০ কোটি টাকার মধ্যে মাত্র পাঁচ কোটি। অপরদিকে ভারতের কর্পোরেটগুলো সিএসআর বাবদ যে বিপুল অর্থ খরচ করে সামাজিক কারণে, সেখানে নারী কল্যাণ বা উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট জায়গা পেলেও, ট্রান্সজেন্ডার বা লার্জার এলজিবিটিক্যু+ সম্প্রদায়ের মানুষেরা জায়গা পাননি এখনও। ... ...
সরমা ঘরে ঢুকে দরজা ভেজিয়ে দিল। এক পা বাড়িয়ে আবার ফিরে গিয়ে আঁট করল দরজার ছিটকিনি। অনাবশ্যক, কারণ গোটা বাড়িতে আর কেউ তো নেই। টাবুদির বিয়েতে গেছে সবাই। সামনে সরমার পরীক্ষা তাই ওর না যাওয়াই সাব্যস্ত হয়েছিল। সরমা অবশ্য এতসব কিছু ভাবছিল না, একটা ঘোরের মধ্যে রয়েছে এখনো। তার মধ্যেই দক্ষিণের জানালায় এসে জংলাসবুজ পর্দার স্প্রিং টেনে নাবিয়ে দেখল একবার বাইরেটা। আকাশে বেশ রং ধরেছে এখন, এই সময়টাকেই কি গোধূলি বলে? দূরে দূরে অনেক আলো জ্বলতে শুরু করেছে যদিও। সরমার চোখ গেল হাঁদুলের চায়ের দোকানে। ওরা কি এদিকেই তাকিয়ে আছে? এর পর কি প্যাঁচ কষবে তার হিসাব নিকাশ করছে? সরমা কি ভুল করল এইভাবে রিয়াক্ট করে? ... ...