নর্মাল ডেলিভারির সুফল অনেক বেশি । কিন্তু মেডিক্যালি প্রয়োজনীয় হলে সিজার করতে হবে। এর বাইরে ডাক্তারের "ইচ্ছে" বা মায়ের/বাড়ির লোকের "ইচ্ছে"কে আমরা যত বেশী মর্যাদা দেব, তত বেশী মা ও শিশুর স্বাস্থ্যহানি ঘটবে। ... দিনের শেষে সিজার নামক এপ্রোপিয়েট টেকনোলজি বা যথোপযুক্ত প্রযুক্তিকে কাঠগড়ায় তুলে লাভ নেই। প্রযুক্তির ব্যবহার বা অপব্যবহার, সবটাই আমাদের হাতে। সচেতন হওয়ার সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। ... ...
এতো গলি কথা থেকে এলো? সরু সরু, অন্ধকার, দম আটকে আসা গলি, সাপের মতো এঁকেবেঁকে একটার গায়ে আর একটা জড়িয়ে, দুদিকে ছায়া ছায়া গঠন যতো, বাড়ি, নাকি আর কিছু? প্রানপনে দৌড়োচ্ছিলো ভোলানাথ, গলি ধরে। দ্যাখে উল্টো দিক থেকে কে যেন এসে দাঁড়িয়েছে নিশ্চুপে। আরে এ কী! এ যে অলড্রিন লিংডো ! শিলং থেকে এসেছিলো, আগ্রার রেস্তোঁরায় কাজ করতো, লকডাউনে টাকা না পেয়ে ২রা এপ্রিল ঝুলে পড়েছিল মাঝরাতে, আগ্রার ভাড়া বাড়িতে। কি সর্বনাশ! সে এখানে কেন? পাগলের মতো ঘুরে অন্য দিকে দৌড়োতে শুরু করে ভোলানাথ। পালাতে পারবে না বোধহয়, বুঝেছিলো। তাও দৌড়োচ্ছিলো, প্রানপনে দৌড়োচ্ছিলো, গলি থেকে গলিতে, আরো গলিতে, গলির গলি তস্য গলিতে। যতক্ষণ না আবারো আরো একটা গলির মুখ থেকে ধীরপায়ে হেঁটে আসতে থাকে নতুন দিল্লির এক রেস্টুরেন্টের ডেলিভারি বয় রণবীর সিং। দিল্লি থেকে মধ্যপ্রদেশের মোরেনা গ্রামের উদ্যেশ্যে রওনা দিয়েছিলো পায়ে হেঁটে, কাজ খুইয়ে। প্রায় সোয়া দুশো কিলোমিটার হাঁটার পরে, যখন তার বাড়ি আরো প্রায় একশো কিলোমিটার দূরে, আঠাশে মার্চ রাস্তায় মুখ থুবড়ে পড়ে। হৃদযন্ত্র সেখানেই বন্ধ হয়ে যায়। আতঙ্কে আবার গলি পাল্টায় ভোলানাথ, দৌড়োতে থাকে পাগলের মতো, হাঁফায়, মুখ দিয়ে মোটা মোটা সুতোর মতো লালা ঝরতে থাকে, বুক যেন ফেটে আসবে। ... ...
প্রতিভা কুড়ুলকে কুড়ুল বলেন। সরকার ও কর্পোরেটের মিলিজুলি আঁতাত খুলে দিতে তাঁর দ্বিধা নেই। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে উন্নয়নের নামে যে অরণ্য ধ্বংস, বন্য প্রাণ হত্যা চলছে, নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে প্রকৃতির স্বাভাবিকত্ব,তার বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন তিনি। প্রতিবছর উৎসবের সময় ভাবি, এত অতিরিক্ত আলো কেন, এত শব্দ কেন। নেহাতই কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হবে এই আতিশয্যের ফলে, সে বড় ছেলেভুলানো কথা। ... ...
আজ বাড়িতে নিরামিষ পদ হবে সব। তাই দাদুর আজ বাজারে যাবার তাড়াহুড়ো নেই। বাইরবাড়ির কাঠের বেঞ্চিতে বসে পান চিবোচ্ছে আর আইনুল চাচার সাথে জমিজমার গল্প করছে। তবে দাদুর এই আয়েসী সময়ে ঠাকুমার কাজ বেড়ে যায় দ্বিগুণ। খানিক সময় পরপর হয় পান সেজে দেবার আবদার নয়তো চায়ের জন্য হাঁকডাক। কিন্তু আজ ঠাকুমার এসব বাড়তি কাজের সময় কই? ... ...
বঙ্কিমচন্দ্রের বিখ্যাত উপন্যাস আনন্দ মঠ পুস্তকাকারে প্রথম প্রকাশের (১৮৮২ সাল) প্রায় ১৫০ বছর পরে আজ নতুন করে একথা বলার প্রয়োজন নেই যে যে সামান্য কয়েকটি পুস্তক সময়ের সীমাকে অতিক্রম করে আসমুদ্র হিমাচলকে প্রভাবিত করেছে – বিশেষ করে এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত সংগীত বন্দেমারতম্ – শুধু ভারতে কেন, সমগ্র বিশ্বেই এর তুলনা মেলা ভার। James Campbell Ker-এর কথায় – “The greeting “Bande Mataram became the war-cry of the extremist party in Bengal; it was raised at political meetings to welcome the popular leaders and ... also occasionally as a shout of defiance of Eropeans in the street.” ... ...
সব ভালো জিনিসই এক সময় শেষ হয়। ভোটদান শেষ হলো। আবারো নানাবিধ হিসাবনিকাশ ও কাগজপত্রের পর, এবার ফেরার পালা। সব পাখী ঘরে ফেরে, কবি এরকম অযৌক্তিক দাবি করে থাকলেও, সব ভোটকর্মী ঘরে ফিরবেন এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। ফেরার সময় হলে দেখা যায়, সোনার তরীর মত ট্রেকারের স্থান অকুলান। আসার সময় একটা ট্রিপে পাঁচজনকে নিয়ে এসেছে ট্রেকার, ফেরার সময় পাঁচজন এবং খেলার ফল সমেত ইভিএম ---সবার জায়গা নেই। ... ...
এ লেখার নাম, ‘ধানাই পানাই’। দু হাজার তিন সাল থেকে ডায়েরির পাতায় হিজিবিজি লিখে গেছি, প্রধানতঃ নিজেই অবসরে পড়ব বলে। ডায়েরির পাতায় লিখলেও ডায়েরির মত ক্রোনোলজি নেই। মাঝে মধ্যে তারিখের উল্লেখ থাকলেও আগের বা পরের ঘটনা উল্টে পাল্টে গেছে। আমার তখন গোটা দুয়েক বাসস্থান ছিল। একটা ফ্ল্যাট ছিল, যাতে আমার পরিবারের অন্য সদস্যরা থাকত, আর আমার পৈত্রিক বাড়িটার তখন জরাজীর্ণ দশা, সেখানে থাকতাম আমি একা। কিছুটা সময় কাটানোর তাগিদেই লিখতে শুরু করেছিলাম ধানাই পানাই। ... ...
মনিকা ভিত্তিকে আন্তনিওনির মানসকন্যা বলার কারণ শুধুমাত্র এই নয় যে ওঁর একক নির্দেশিত চোদ্দ পনেরটি ছবির মধ্যে পাঁচটিতেই মনিকা অভিনয় করেছিলেন। সত্যজিৎ রায়ের প্রধানতম ছবি গুলির তালিকায় নিশ্চয়ই সব ছবি পড়বে না। পড়বে ‘অপুত্রয়ী’, পড়বে ‘চারুলতা’, পড়বে ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ ইত্যাদি। কারণ, এগুলিতেই সত্যজিৎ-বীক্ষার সর্বোত্তম প্রকাশ ও বিকাশ দেখা গেছে। একই ভাবে আন্তনিওনির ক্ষেত্রে নাম করতে হবে তাঁর প্রখ্যাত ট্রিলজি – ‘লাভেন্তুরা’(১৯৬০) , ‘লা-নত্তে’(১৯৬১), ‘লা-এক্লিপ্স’(১৯৬২)-এর, নাম করতে হবে ‘দি রেড ডেসার্ট’(১৯৬৪)-এর। মনিকা ভিত্তিকে ছাড়া এই ছবিগুলোর কথা স্রেফ ভাবা যায় না! ... ...
আটের দশকের একটি ঘটনা মনে পড়ে। লেবাননে তখন গৃহ যুদ্ধ চলছে। ইউনি লিভারের মাইক ডার্বিশায়ারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনারা যে লেবাননে সাবান শ্যাম্পু বেচছেন তার টাকা ডলারে বা পাউনডে ফেরত পাবেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কিত নন? যে সব দেশে মাল বিক্রির ঝুঁকি নিয়ে আপনারা চিন্তিত সে তালিকায় লেবাননের নাম দেখি না! মাইক হেসে বললেন আমরা সে দেশে কোন ব্যাঙ্ক নয়, সরাসরি একটি লেবানিজ পরিবারের সঙ্গে বাণিজ্য করি। যুদ্ধ হোক আর শান্তি বারি বর্ষিত হোক, তারা ঠিক দাম মিটিয়ে দেবে। শুনে খুব অবাক হয়েছিলাম। ইউনি লিভারের মতো কর্পোরেট ব্যাপারী মনে করেন লেবাননের একটি পারিবারিক সংস্থা তাঁদের আস্থার যোগ্য। সবাই তাহলে একই ম্যানেজমেন্ট মন্ত্রে বিশ্বাসী নন। একই ইস্কুলে এম বি এ করেন নি। ... ...
এগলি ওগলি পেরিয়ে পৌঁছলাম তাঁর সমাধির কাছে। হাওয়া দোল দেওয়া নিম গাছের ডাল , তার নিচে শুয়ে আছেন একা বিসমিল্লা খান।২০০৬ সালে ২১ আগস্ট হার্ট আ্যটাকে মারা যান । জন্ম ২১ মার্চ ১৯১৬। নব্বই বছরের দীর্ঘ জীবন তাঁর সানাইয়ের সাথে। যে সানাইকে তিনি বিয়ে বাড়ির বাদ্যযন্ত্রের তকমা থেকে বের করে বিশ্বের দরবারে তার মাহাত্ম্য প্রতিষ্ঠা করেছেন। আবার অটোতে চড়ে বসলাম, অবশেষে পৌঁছলাম ডালমন্ডি, উল্টোদিক রাস্তা পেরিয়ে সেই মসজিদ, পেছনের রাস্তা গেছে ওঁর বাড়ির সামনে। সরু গলির আরও সরু হয়ে যাওয়া ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সর্পিল চলনের মত। হারিয়ে যেতে যেতে মনে হয় সেই গলি আর সানাইয়ের সুরের ঘোরের এক ভুলভুলাইয়া যা থেকে কোনোদিনও বেরতে পারব না। খুব ঘিন্জি আর অন্ধকার গলি। কী নেই সেখানে, জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ সব চলেছে। ... ...
নিঝুম রাতের বেলা হেঁটে হেঁটে ফেরা। বোম্বে বাজারে ফেরার রাস্তায় ওই অন্য রাজ্যে কাজে যাওয়া বাঙালি ছেলে দেখলে চুরি-ছিনতাই-গালাগাল ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। আর এই সোনার কারিগরদের আর একটা প্রাপ্তি প্রায় কমন। সামান্য কিছু ভুলভ্রান্তি বা এধার ওধার দেখলেই পিঠে পড়বে মার। অবাঙালি শেঠ মালিকদের হাতে বা লাঠিতে পেটানি। সঙ্গে অবাঙালি মুখের অন্য ভাষার গালাগাল। ওই টাইট রুটিনে সোনার কাজের কারিগরি শিখতে শিখতে মইনুদ্দিন হয়ে উঠল পাকা কারিগর। ওর হাতদুটো ওই সোনালি ধাতুতে কারুকার্য তুলতে হয়ে উঠল পারদর্শী। মইনুদ্দিনের পড়াশোনার বুদ্ধিটা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের স্ট্যাম্পমারা রেজাল্টের ছাপা কাগজে ছাপ না ফেললেও বারবার সে বুদ্ধি ছাপ ফেলেছে ওর লেবার জীবনে। ... ...
একাত্তরে বাংলাদেশ যুদ্ধের পর সেই ইতিহাসটা আবার রিপিট হল। দুর্ভাগা এই রাজ্য! এমনিতেই জমি বাড়ন্ত, ব্যবসাবাণিজ্য সব চলে যেতে শুরু করেছে তখন, কলকারখানাগুলো ধুঁকছে। তার ওপর এসে আছড়ে পড়ল এই বিপুল মানুষের ঢেউ। ফের একটা বেঁচে থাকার লড়াইয়ে শামিল হওয়া। তারপরে তো ক্ষমতায় এল পার্টি। অপারেশান বর্গা হল। দশটা বছরে ভূমিহীনদের মধ্যে যত পাট্টা বিলি হয়েছে, স্বাধীনতার পর এতগুলো বছরে সারা দেশে আর কোথাও হয়েছে কি? খোঁজ নিয়ে দেখো। যদিও সেটা শেষ কথা নয়। সেটা হতে পারত একটা শুরু। হল না। কিন্তু মেজকা, ভূমিসংস্কার করতে গিয়ে গ্রামের আসেপাশে সব পতিত নাবাল জলা জংলা জমিগুলোকে খাস করে নেওয়া হল। ওর মধ্যে কিন্তু নদীর প্লাবনভুমিও ছিল, বছরের পর বছর পড়ে থাকত ওড়কলমি শেয়াকুল বনডুমুরের ঝোপঝাড়ে ভরা। সবার জন্য অবারিত - গ্রামের আতুরি বুড়িরা পাতালকোঁড় হিঞ্চে-ব্রাহ্মী-গিমে শাক শাপলা তুলে নিয়ে বাজারে আসত। পুজোপার্বণে গরীবগুর্বো মেয়েবউরা তুলে আনত আকন্দকুঁড়ি ধুতরোর ফুল, দুর্ভিক্ষের সময় গেঁড়িগুগলি। পাঁচ-দশ বছরে একবার বড়োসড় বন্যা হলে জলে ভরে গিয়ে বসতিগুলোকে বাঁচাত, কিন্তু ... ... ...
আমার ঠিক সামনে দুটি চোখ। টানা টানা। ঠাকুরবাড়ির মেয়েদের মতো। এ কার চোখ? শুনেছি। এই সামনের পোর্টেটটি রাজকুমারী রুক্মিণীদেবীর। যাঁর নামে এই কলেজ। ভদ্রমহিলা বেশ সুন্দরী ছিলেন। চোখ দুটি জীবন্ত। কখনও এত স্পষ্ট করে দেখিনি। সোজাসাপটা শাড়ি। কাঁধে ব্রোচ। বছর কুড়ি বয়স মনে হয় ছবিতে। চোখ দুটি কী উজ্জ্বল। যেন টানছে। সামনে ওই চোখ। পায়ের নীচে সর্পিল বাঁধন। আমি ক্রমশ তলিয়ে যেতে থাকি। হাহাকারের মতো কুয়াশা যেন ঢুকে পড়ে ঘরের মধ্যে কোনো ফাঁক দিয়ে। যত উঠে দাঁড়াতে চাই সর্পিল অদৃশ্য ফাঁস তত আঁটো হয়। রুক্মিণীদেবীর চোখ । কী মায়াময়। যেন চুম্বক। টানছে। আর তাকাতে পারি না। ... ...
“আপনার নির্বাচনী কেন্দ্রে বিজেপি বিরোধী যার জয়ের সম্ভাবনা বেশি তাকে ভোট দিন”—এই স্লোগানের কার্যকারিতা নিয়েও আমাদের সন্দেহ আছে, সাধারণ মানুষ সেফোলজিস্ট নন জ্যোতিষও নন। তাহলে তাঁরা কীভাবে জানবেন কে জিতবে? গত লোক সভা নির্বাচনে ভাবা গিয়েছিল কংগ্রেস ফিরছে, কিন্তু বিজেপি আরও শক্তি নিয়েই ফিরেছে। ... ...
তিনি কিভাবে জানবেন একই ঘরে অবস্থানকারী পরিবারের সদস্যদের কাছে সম্পূর্ণ আলাদা ভিডিও আসে? কিছুতেই বুঝতে পারেন না কিভাবে একটি বাচ্চা যে মানসিক অবসাদে ভুগছে তার কাছে অজস্র ভিডিও নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে আসতে থাকে, আস্তে আস্তে যা আত্মহত্যায় পথে ঠেলে দেয়? একটা ক্লিক, একটা সার্চের থেকেই তৈরী হতে থাকে এই অ্যালগরিদিমের জাল। আর ধীরে ধীরে গ্রাস করে ফেলে অপরিণত মস্তিস্ক। কিছুক্ষণ একটা বিষয় দেখলে বা সার্চ করলে আকৃষ্ট করার উপাদান দিয়ে সময় বাড়ানো- আর বিজ্ঞাপন থেকে আরো আরো রেভিনিউ। ... ...
"সকল শোকের কাছে পড়ে থাকে পাথরের হাত একটি বিষণ্ণ গাছ ছায়া নামে সূর্য ডুবে যায় কোথা যায়, কার কাছে নামিয়ে রেখেছে তার সারা দিন ভার" শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের চারটি কবিতা ... ...
বেশ কয়েকদিন ধরেই কানে আসছিলো যে মালদা মেডিক্যাল কলেজেও কিছু একটা চলছে। কানে আসছিলো বলার চেয়ে চোখে পড়ছিলো বলা ভালো বরং, সোশ্যাল মিডিয়ায় দু-একটা মন্তব্য দেখা যাচ্ছিলো। কিন্তু বিশদে বোঝা যাচ্ছিলো না কিছুই। খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, মেডিক্যাল নয়, একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। কিন্তু কলেজ কি বলা যায়? নাকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান? নাকি শুধুই কয়েকটি বিল্ডিং যার কোথাও কোনোদিন সঠিকভাবে নিবন্ধীকরণই হয়নি। এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর হয়তো পাওয়া যেতে পারতো প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষের থেকে, কিন্তু মজার বা ভয়ের ব্যাপার হলো, তাঁরা নিজেরাও এ বিষয়ে সম্যক ধারণা রাখেন না। ২০১৬ থেকে ধরলে সেখানকার ছাত্রছাত্রীরা এই নিয়ে তৃতীয় দফায় আন্দোলনে নেমেছে। কিন্তু শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো সদুত্তর তারা পায়নি কর্তৃপক্ষের থেকে। ... ...
বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তি (diversity and inclusion) জরুরি কেন? কারণ হল বৈষম্য ও প্রতিবন্ধকতা – যার মুখোমুখি সংখ্যালঘুরা হয়। এছাড়া কর্পোরেটের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যাক এতে কর্পোরেটের কী লাভ: ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির কর্মী কর্মক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ভাবনা ও কর্মপদ্ধতি নিয়ে আসে। দশজনের মস্তিষ্ক একইরকম ভাবে কাজ করলে সেটা দশটা মস্তিষ্ক হয় না, দশের কম হয়। আগে মানুষ ভাবনার বৈচিত্রকে ভয় পেত, এখন সেটাকে কাজে লাগাতে জানে। পশ্চিমী দুনিয়ার কর্পোরেটগুলো এখন মানববৈচিত্র বিষয়টাকে বুঝতে শিখেছে। তবে এমন নয় যে সবাই বৈচিত্রের গুরুত্ব বোঝে, বা বুঝলেও কর্মক্ষেত্রে মানববৈচিত্র্য আনার বিষয়ে সক্রিয়। বৈচিত্র আনার ও রক্ষার উপায় কী? উত্তর হল, কর্মীনিয়োগের ক্ষেত্রে বৈচিত্র আনা, আর যে কর্মীরা আছে তাদের জন্য অনুকুল কর্মক্ষেত্র তৈরি করা। এই অনুকুল কর্মক্ষেত্র কিরকম? সেখানে কী আশা রাখা যায়? ... ...
আমি একটা ফেসবুকের পাতা বানিয়েছিলাম, সেখানে নানা ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরা লেখা, আঁকা, মোবাইলে তোলা ফটো, নিজের করা হাতের কাজ, রান্নার ছবি, গান, নাচ বা আবৃত্তির ভিডিও - লকডাউনে যে যা পাঠাত, সেগুলো আপলোড করতাম। এছাড়া ওদের মন ভাল করার অন্য কীই বা উপায় ছিল! বেশিরভাগ তো সব দূরদূরান্তে অজ পাড়াগাঁয়ে বাড়ি, কলেজের কাছে মেস করে থাকে। নিজেরা হাত পুড়িয়ে রান্না করে খায়। একবার একটা পিজি ব্যাচ পাশ করে মেস ছাড়ার আগে আমাদের নেমন্তন্ন করে মাংস ভাত খাইয়েছিল। যা হোক, আলটপকা দু সপ্তাহের লকডাউন হতে দু তিনটে জামাকাপড় নিয়ে সব বাড়ি চলে গিয়েছিল। বই খাতা মেসে পড়েছিল, আর যে ওগুলো নিতে ফিরতে পারবেনা, তা তো স্বপ্নেও ভাবেনি। বাড়িতে বসে লেখা পড়া যে করবে, উপকরণ ছিলনা। আমি যখন বলতাম এই তো রবীন্দ্র জয়ন্তী এসে গেল, কিছু লিখে পাঠাও। অনেকে বলেছিল, ঘরে কাগজ নেই ম্যাডাম। তখন আমি বললাম, যে ওমা! লিখতে বুঝি সব সময়ে কাগজ লাগে? আমি তো মোবাইলে লিখি। তখন আর্জি এলো কোন, জয়ন্তী নয়, শুধু আমাদের জন্য মোবাইলে লিখুন ম্যাডাম। ... ...
ভারত পাকিস্তানের ম্যাচ দিল্লিতে বসে দেখলে উত্তর ভারতের পাকিস্তান বিরোধী মনোভাবটাও বেশ টের পাওয়া যায়। কয়েকটা স্লোগান তো বেশ পরিষ্কারভাবে ধর্মবিদ্বেষী। আমার পিছনেই বসেছিলেন সাঙ্গোপাঙ্গো নিয়ে একজন, বন্ধুরা তাকে পন্ডিতজী বলে ডাকছিলেন। আমার টীম পাকিস্তানের টী শার্ট পরাটা তার আর কিছুতেই হজম হচ্ছিল না। আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলছিলেন, "পাকিস্তান আজ জিতলে আর জ্যান্ত ফিরতে হবে না" বা "কাসভের মতন সব পাকিস্তানীকেই ফাঁসিতে লটকে দাও"। শুধু পাকিস্তান বিরোধী নয়, স্লোগানগুলো ছিলো মুসলিম বিরোধীও। লাহোরে শেষ যে ইন্ডিয়া পাকিস্তান ম্যাচ হয়েছিলো তার সুর কিন্তু অন্যরকম ছিল। সচীন মাঠে নামলে গোটা স্টেডিয়াম উঠে দাঁড়িয়ে তাকে সম্মান জানিয়েছিল। সেই খেলায় ভারত জিতলে লাহোরবাসীরা ভারতীয়দের আলিঙ্গন করতেও ভোলেন নি। স্টেডিয়ামের বাইরে ভারতীয়রা খেলা জিতে নাচতে শুরু করলে লাহোরের ঢোলওয়ালারা সোৎসাহে ঢোল পিটিয়ে ছিলো। ক্রিকেট তো সবাই ভালোবাসে কিন্তু স্টেডিয়ামে এসে পরস্পরের জাতি বিদ্বেষটাকে কি না উগরে দিলেই নয়? খুব কি একটা উপর উপর ব্যাখ্যা দিলাম? আমার বন্ধুরা, যারা এর আগে দিল্লিতে ইন্ডিয়া পাকিস্তানের ম্যাচ দেখেছিল, তাদের অভিজ্ঞতাও কিন্তু আমারই মতন। ... ...