যজ্ঞবাহারের নামে শুনে, আমার পেটের ভিতরে টিম টিম করে জ্বলতে থাকা খিদের আগুনটা যজ্ঞের আগুনের মত দপ করে উঠল। ঘনঘন হাতের ঘড়ি দেখছি। বউয়ের নজরে সেটা চলে আসতে জেরা শুরু হল: - এত ঘন ঘন ঘড়ি দেখার কি আছে? কিসের এত তাড়া তোমার? - না, মানে চারে চারটের মধ্যে হোটেলে ফিরতে হবে। - হোটেলে ফিরতে হবে? কেন? - তোমার মনে নেই, চেক ইন করার সময় বলে দিল যে বিকেল চারটে থেকে ছ’টার মধ্যে টেরাস রেস্টুরান্টে ফ্রি-তে স্ন্যাকস্ এবং ড্রিঙ্কস্ দেবে? - হ্যাঁ, শুনেছিলাম তো। কিন্তু এত সুন্দর মন্দিরের সামনে তোমার এখন খাওয়ার কথা মনে এল? এই তো খানিক আগে গন্ডেপিন্ডে লাঞ্চ করলে। এর মধ্যেই আবার এক্ষুনি বিকেলের স্ন্যাকসের দিকে নজর? আর তা ছাড়া মন্দির-স্থাপত্য দেখার থেকে তোমার বিকেলের স্ন্যাকস কি বেশি গুরুত্বপূর্ণ? ... ...
চমকে উঠলাম। ওর ঘুম জড়ানো ঘোলা দু’চোখে বিরক্তি রাগ আর ভয় দেখে। যিনি আমাকে নিয়ে গেছিলেন তিনি খানিক ভূমিকা করে রেখেছিলেন মেয়েটি সম্পর্কে। ওর প্রথম কাজে যাওয়া চৌদ্দ বছর বয়সে। ২০০২ সাল। পাড়ার কোনো মেয়ে এই পাড়া থেকে মেয়ে জোগাড় করত। বলেছিল, কাজে যাবি? কাজ আছে। - পাঠাও না কাকা তোমার জামাইয়ের সাথে। খেতে পাবে, পরতে পাবে, মায়না পাবে। ... ...
আজাদির ৭৫ বছরের অমৃত মহোৎসব, খিদের সূচকে আমাদের দেশকে শেষ বেঞ্চের ছাত্র-র তকমা দিয়েছে। তবে আত্মহত্যাকারীদের সংখ্যায় আমরা জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন পেয়েছি। ‘বেটি বঁচাও বেটি পড়াও’-এর দৌলতে মুখ ঢেকেছে সরকারি বিজ্ঞাপনে, পোস্টার-ব্যানার-ফ্লেক্সে। কিন্তু সেই একই দেশের মহিলাদের মধ্যে আত্মহননের হার বাকি পৃথিবীর মহিলাদের দ্বিগুণ। এনসিআরবি-র রিপোর্টের প্রতিটা পাতার প্রতিটা অক্ষর আমাদের কার্যত মুখ লুকোবার জন্য হাতছানি দেয়। এক পরিচিত মনোবিদকে বলতে শুনেছিলাম, ‘এক সুস্থ ব্যক্তিকে অবসাদগ্রস্ত করে তোলার জন্য এই রিপোর্টের পাতাগুলোর সঙ্গে এক ঘণ্টার সান্নিধ্যই যথেষ্ট।’ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, শূন্যের দিকে তাকিয়ে এর পরে বলেছিলেন, ‘অথচ আমরা কিছুই করতে পারছি না।’ ... ...
কখনো কখনো দুয়ের মধ্যে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন এক তৃতীয়জন, ‘লার্কিং ভেরিয়েবল’ অথবা ‘কনফাউণ্ডার’। চাদ্দিকে এর মেলাই উদাহরণ, এই যেমন আপনার মাইনেও বাড়ছে আর পাল্লা দিয়ে ব্লাড প্রেশার, হয়তো দেখা যাবে, মাইনে বাড়ছে বয়সের সাথে, রক্তচাপ-ও তাই ... আবার কিছু মাথামুন্ডু নেই এমন জিনিষেও কোরিলেশান বেশি হতেই পারে, Zআনতি পার না। আই-এস-আই-এর একটা মজার গল্প আছে এই নিয়ে। দেবপ্রিয়বাবুর কোর্স, মিড-সেমেস্টারে প্রশ্ন এসেছে, 'মানুষের উচ্চতাও যেমনি বাড়ছে, মাথার চুলের ঘনত্ব তেমনি কমছে ... ক্যায়সে?' আমার এক প্রিয় জুনিয়র দুর্ধর্ষ উত্তর লিখে এলো, 'লম্বা লোকের টাক সূর্যের অনেকটাই কাছে, সেখানে গরম বেশী, খুব ঘাম ... ঘেমো টাকে অল্প চুল যদি না-ই পড়লো, তা'লে আর ঘেমে লাভ কি?' (বলাই বাহুল্য, আসলে হাইট আর জেন্ডারের সম্পর্ক আছে, ‘জেণ্ডার’ এখানে লার্কিং ভেরিয়েবল।) ... ...
সবচেয়ে আকর্ষণীয় ইভেন্ট স্থানীয় মহিলাদের বেকিং কম্পিটিশন। তা নিউজিল্যাণ্ড বেকিং এর সবচেয়ে তুখোড় উদাহরণ পাভলোভা আর পাই। আমাদের যেমন রোল, পাটিসাপটা, সিঙারা, যাকে সাদা বাংলায় পথের খাবার বা স্ট্রীট ফুড বলা যেতে পারে, নিউজিল্যাণ্ডের স্ট্রীট ফুড বলতে যদি কিছুকে নির্দেশ করতে হয়, সে হবে পাই | যে কোন মাংস (বীফ, পর্ক, ল্যাম্ব, মুরগী, মাছ, মায় মেটে) এবং শাকসবজি আর মিশিয়ে রান্না করে পাইয়ের খোলের মধ্যে ভরে দিন; তারপর তার ওপরে চীজ কুরিয়ে বা কেটে পরতে পরতে রাখুন, এবার পাইয়ের ময়দার খোলের “ঢাকনা” বন্ধ করে দিন, বন্ধ করার পর ২০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে ৩০ মিনিট রেখে বেক করুন | পাই তৈরী। ... ...
আমি খেজুর চাচার তাঁতঘর পাড় হয়ে থানার ঘাটের দিকে হাঁটা শুরু করি। তাঁতঘরে একজন দু'জন তাঁতী এরইমধ্যে চলে এসেছে। মাকুরের খটাস খটাস শব্দ সকালের বাতাসে কেমন উদ্দেশ্যহীনভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। আমি মনিপিসির জন্য আর দেরী করি না। দ্রুত হাঁটতে থাকি থানার ঘাটের দিকে, মনিপিসিটা কিচ্ছু বোঝে না। ডলি ফুপুদের বাড়ি থেকে গন্ধরাজ ফুল নিতে হবে তো আমার। কিন্তু থানা ঘাটের মোড় আসতেই মনিপিসি গলা চড়ায়, মনি ওদিকে না, আগে কলমি ফুল নিয়ে আসি চল্। আমি চোখে প্রশ্ন নিয়ে তাকাই। উত্তরে শুধু মনিপিসিকে অনুসরণ করার ইঙ্গিত পাই। আমি পায়ে পায়ে থানা ঘাটের ঠিক পাড়ে এসে দাঁড়াই। ওটা নদী নাকী পুকুর আমি ঠিক বুঝতে পারি না। ... ...
প্রায় এক সপ্তাহ সেই ফোনের অপেক্ষা করেছিল শতদ্রু। আসে নি। আর এই এক সপ্তাহে ধীরে ধীরে ওই অজানা অবয়বটা আকৃতি নিয়েছিল ওর মাথায়। সেই অবয়বটার দেহ সুগঠিত ও পিচ্ছিল, দুটো বাড়ানো সরু হাতের শেষে আঁকশির মত দাঁড়া, ঘন ভুরুর নীচে দীঘল চোখে মায়া ও মোহ, আর শ্রীলেখা মিত্রর মত ভারী ঠোঁঠের তলায় তীক্ষ্ণ মাদকভরা একটা লুকোনো হুল। শতদ্রু এরপর আর দেরি করে নি। বহুদিন ধরে লুকিয়ে রাখা সেই বিছের ছবিগুলো এয়ারমেলে পাঠিয়ে দিয়েছিল কলকাতায় রাজীব ঘোষের অফিসের ঠিকানায়। এক ঝটকায় বিছেটার সমস্ত চিহ্ন মুছে দিয়েছিল নিজের জীবন থেকে। তখন কে জানত, আবার ন বছর বাদে এভাবে বিছেটা ওর সামনে এসে দাঁড়াবে? এই রকম করুণ, থ্যাঁৎলানো, মৃতপ্রায় অবস্থায়? ... ...
মোটের ওপর চন্দ্রদেব এখন মহাজাগতিক বিশ্বের কসমিক সেলিব্রিটি। পেজ থ্রি পুরো কাঁপিয়ে দিয়েছেন। চন্দ্রযানে চেপে মিডিয়ার মেগা প্রজেক্ট এখন চাঁদের বাড়ি অভিযান। paparazziরা এবার সোজা ধাওয়া করেছে টিম নিয়ে। আর কোনো ছাড়ানছেড়েন নেই। চন্দ্রদেব সেখানে বসে বসে ঠিক কী যে করে তা দেখবে, শুনবে আর জানবে বলে। সে পূর্ণিমার আলোয় বসে পা ছড়িয়ে রোমান্টিক কবিতা লেখে না জাল নোট ছাপে? না কী অমাবস্যার অন্ধকারে মেয়েদের ফুঁসলিয়ে প্রেম করে না ড্রাগ পেডলিং করে? চাঁদ বা সোম হয়ত সেখানে বসে illicit সোমরস বানাতে বানাতে মশগুল হয়ে থাকে দ্রাক্ষারসের মদিরায়। সব খোঁজ নেবে ওরা। এমনিতেই অনেক allegations চন্দ্রদেবের বিরুদ্ধে। ... ...
ফোন করতে যাবে ঠিক সেই সময়ে ধড়মড় করে উঠে বসলো কাক ভিজে হওয়া চিমসে একটা লোক। সামনের লুকিং গ্লাসে ঠিক মতো মুখটাও দেখতে পেল না বল্টু। গাড়ি বুকিং হয়েছে খাল পাড় পর্যন্ত। “দাদা একদম ভিজে গেছেন। আমার কাছে একটা পরিষ্কার তোয়ালে আছে। একটু মুছে নেবেন?” বল্টুর কোন কথার উত্তর দেয় না লোকটা। বল্টু নিজেও কোন কথা বাড়ায় না। একেই অনেক রাত। চারপাশে গাড়ির সংখ্যা কম। নেশা-টেশা করে আছে কিনা সেটাও বোঝা যাচ্ছে না। যাক তার চেয়ে তার নতুন গাড়ির সিট ভিজুক। কিছুক্ষণ পরে শুধু হাওয়ার মতো ফিসফিস করে লোকটা বলে “আপনার বইটা একটু দেখতে পারি?” বল্টুর মনেই ছিল না তার সিটের পাশেই রাখা বই। ‘কলকাতার গোলকধাঁধা’। কিন্তু এই অন্ধকারে বৃষ্টি আর বিদ্যুতের মাঝে লোকটা বইটা দেখতে পেল কী করে? ... ...
আমাদের দেশের রাজনীতিকরা যেমন ‘দেশ সেবা’ করার জন্য রাজনীতিতে যোগ দেন, আমাদের শিক্ষক চিকিৎসক ইত্যাদি পেশাগুলিও মানুষের কাছে যথেষ্ট ‘সম্মানের’। দুঃখ হল দেশ সেবাটা যেমন শিশুপাঠ্যের মধ্যেই বন্দী থাকে। বাস্তবে শিক্ষকদের সম্পর্কে জনমানসের মনোভাব রাস্তাঘাটে কান পাতলেই বুঝতে পারবেন। আমি শিক্ষক বলতে প্রাথমিক শিক্ষক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষক সকলকেই রেখেছি। কেউ কেউ বলতেই পারেন, না গবেষকদের প্রতি শ্রদ্ধা এখনো অটুট আছে। একটু খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন গবেষকদের প্রতিও শ্রদ্ধা আর অবশিষ্ট নেই। তাঁরা শুধু অর্থের অপচয় করেন বা স্বজন পোষণ করেন এরকম অভিযোগ সর্বত্র শুনতে পাবেন। মোদ্দা কথা পেশা হিসাবে শ্রদ্ধা আর অবশিষ্ট নেই। তাই চলচ্চিত্রের নায়ক বা নায়িকা, ক্রিকেট খেলোয়ার বা রিয়েলিটি শো-র গায়ক, এরাই কিশোর-তরুণদের চোখে আইডল, মডেল, আদর্শ। ... ...
'এই ধরনের অপরাধে সেদিনই ছিল আমার হাতেখড়ি, যেজন্য বিপদটা হল।...' (শীতবন্দরে)। 'গোলমালটা ঠিক কীভাবে শুরু হল বলা খুব কঠিন।..' (পাইথনের গপ্পো)। 'কেলোটা হল বড়দিনে।...' (বড়দিন)। 'আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ঝড় আসার কথাই ছিল।...'(ক্যাম্পফায়ার, আমাদের রাতের উৎসব)। এই জাতীয় সূচনা লেখকের একটি বিশেষ স্টাইল। শুরুর এই কৌতূহল না মেটা পর্যন্ত পাঠক স্বস্তি পাবেন না। কিন্তু চিত্তাকর্ষক হল সেটা মিটে যাওয়ার পরে পাঠক টের পাবেন অতিরিক্ত কি একটা যেন বলা হল, যা প্লটের চাইতেও বেশি করে বেরিয়ে আসছে লেখকের অননুকরণীয় নির্মাণকৌশল থেকে! ... ...
যে চোখ সব কিছু দেখে, সে কিন্তু নিজেকে দেখতে পায় না, তাই চোখে পোকা পড়লে আমরা পাশের লোকটাকে বলি দেখতে। ডাক্তার সবার অপারেশন করে, তার পেটে ব্যামো হলে? জোনাকির নিজের বুকে আলো, তবু সে ধেয়ে আসে আলোর উৎসের দিকে। এ উদাহরণ অন্তহীন। জ্ঞানী লোকেরা হলে উদাহরণ দিয়েই বুঝিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু আপনি পড়েছেন আমার পাল্লায়। অত জ্ঞানী হলে আজ আমি প্রফেসর হতুম। সে যাক গে। ... ...
শিরীন, একমাত্র ভারতীয় খেলোয়াড় যিনি একটি-দুটি নয়, তিন -তিনটি খেলায় আন্তর্জাতিক স্তরে দেশের জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন… বিদেশের কিংবদন্তি ইয়ান বথাম, ভিভ রিচার্ডস, জন্টি রোডস…আর বিস্মৃত শিরীন কন্ট্র্যাক্টর কিয়াসের মধ্যে কোন মিল কি আদৌ আছে?... অথবা ভারতের কোটার রামস্বামী, সোমনাথ চোপড়া, ইফতিকার আলী খান পতৌদি বা হালের সোহিনী কুমারী বা যুজবেন্দ্র চাহালের সঙ্গেই বা শিরীন কন্ট্র্যাক্টর কিয়াসের কতখানি মিল বা অমিল?? ... ...
অগাস্টের আট তারিখ, লকডাউনের দিন বেহালার এক পরিচারিকা হেঁটে কাজে যাচ্ছিলেন। পর্ণশ্রী থানার পুলিশ তাঁকে আটক করে। রাতে তিনি ছাড়া পান। পরের দিন ওই বাড়িতে কাজে গেলে লকডাউনের দিন না আসার অজুহাত দেখিয়ে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। ... ...
মানুষ কেন ভোট দেয়? নব্বই কোটি ভোটারের দেশে এ প্রশ্নের অন্তত এক কোটি আলাদা উত্তর পাওয়া যাবে। বছর পাঁচেক আগে চমকে দিয়েছিলেন একজন রেলের হকার, বলেছিলেন ভোট না দিলে ভোটার কার্ড ভ্যালিড থাকবে না. পরবর্তীতে জানতে পারি এইরকম অদ্ভুত গুজব গ্রামেগঞ্জে প্রচলিত, এমনকি শহরেও। ভোটার কার্ড ভ্যালিড না-থাকাটা খেটে খাওয়া মানুষের কাছে এক দু:স্বপ্নের ব্যাপার। ... ...
কুমুদি রইলেন তাঁর গ্রন্থিত-অগ্রন্থিত গল্পে, প্রবন্ধে, কবিতায়, স্মৃতিতে। স্মৃতিস্তম্ভের স্থবিরতাকে ভালবাসিনি আমরা, চাইছি স্মৃতির চলমানতা। অক্ষর বেয়ে বেয়ে পরের প্রজন্মে পৌঁছে যাক কুমুদি- তারা চিনুক আমাদের কুমুদিকে, ভালবাসুক, লেখা পড়ুক, পড়াক বন্ধুদের। কুমুদিও তাদের চিনতে চাইবেন- বলাই বাহুল্য। স্মিত সহাস্য মুখে জিগ্যেস করবেন- কই , কী লিখচ , শোনাও দেখি। এই সব অলীক চেনাজানাকে বাস্তব করতে গুরুচণ্ডা৯ শুরু করছে বার্ষিক 'কুমুদি পুরস্কার' - কিশোর কিশোরীদের গল্প লেখার প্রতিযোগিতায়। এবার কুমুদির জন্যে গল্পের দ্বিতীয় বছর। ... ...
জনগনের ভোটে ক্ষমতায় আসা নির্বাচিত সরকার কি সত্যি সত্যি নাগরিকের ভুখা পেটে ব্যথিত হয়? তবে বালিকা কিস্কুদের দেশ কোথায়? সারাবছর বালিকাদের খাবার জোটে না। অভাব যায় না। কেননা নির্দিষ্ট উপার্জন নেই। এদের মাথায় উপরে কেউ হাত রাখার নেই। এবারে এসেছে ভাইরাসের দাপট। নতুন পরিস্থতি। এখন প্রতিদিন সকাল হলেই ভয়। অভাব আর অবসাদ। বালিকা কিস্কুর জীবিকা বলতে সাঁওতালি নাচ প্রদর্শন। বছরের বাকি দিন বালিকা দিনমজুরি করে। মাঝে মাঝে জমিতে চাষের কাজে ডাক পায়। স্বামীও লেবার খাটে। তিন সন্তান ও শাশুড়ি নিয়ে এভাবেই চলে সংসার। শাশুড়ির ভাতাও বন্ধ । দুইবার পেয়েছে এক হাজার করে টাকা। বালিকা কিস্কুর বিদ্যালয়ের মুখ দেখা হয়নি। তবু নিজের ছেলেমেয়েদের নিয়ে বালিকা খুব সচেতন। ছেলে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছে এবার। মেয়ে একাদশ শ্রেণি। অভাবের সংসারে এক নতুন পরিস্থিতি লকডাউন। বালিকা কিস্কু খুব সহজেই বলছে, “ভাইরাসের লেগে খাওয়া বন্ধ। দিনে আটা গুলে খাচ্ছি। রাতে ভাত।” ... ...
উনি কি আমাদের পি জি উডহাউস? না; উনি একান্ত ভাবে আমাদের অনাবিল বাঙালি হিউমারের ঘরানার। অল্প শিব্রাম, অনেকটা পরশুরাম আর একটুখানি প্রভাত মুখুজ্যে। ওঁর ধর্মবিশ্বাস কী ছিল জানিনা, কিন্তু সমস্ত রচনার শেষে মধুরেণ সমাপয়েৎ আমাদের ভাবতে বাধ্য করে –আছে দুঃখ আছে মৃত্যু; কিন্তু এ’সবের মধ্যেও আনন্দ ও সুন্দরের খোঁজ পাওয়া যায়। লেখার মধ্যে ফুটে ওঠে লেখকের প্রশান্তি । এই প্রশান্তির খোঁজ আমি আজও পাইনি, কিন্তু উনি আমার চেয়ে বয়েসে অনেকটা ছোট হয়েও পেয়ে গেছলেন। কীভাবে? সে রহস্য সমাধানের চাবি বরাবরের মত হারিয়ে গেছে। ... ...
পরীক্ষকের মুখে কোন বাক্যি নেই, পাতা ওলটাচ্ছেন। আমি বললাম আমার ইসরায়েলি ভিসার কাগজটা ওর ভেতরেই আছে আর যদি ব্রিটিশ ভিসা খুঁজছেন আমি সেই পাতাটা খুলে দেখাতে পারি। নিরুত্তরে চোখ তুলে তাকিয়েই আবার পাসপোর্টে মনোনিবেশ করলেন। এতো মন দিয়ে আমি দস্যু মোহন বা দীপক চ্যাটারজির বিশ্বচক্র সিরিজের বই পড়ি নি। পিছনের ভদ্রমহিলাকে আমার সুটকেসটি দিয়েছিলাম আমার অনুমতির অপেক্ষা না রেখে তিনি সেটি খুলে দেখেছেন। ... ...