তাদের রান্নাঘরেও আম ঢুকে পড়ল। কাচ্চে আমকা ক্ষীর তার মধ্যে একটি। আমের মরশুমে সকাল সন্ধে রাত সবসময় আম খেতে কোনো আপত্তি নেই তাদের। শেহেরয়ালি রন্ধন খুবই জমকালো। নিরামিষ। শুদ্ধ শাকাহারী। বৈচিত্র্যে ভরপুর। জাফরান, গোলাপজল, বাদাম পেস্তার দরাজ ব্যবহার। গোলাপজলের মিঠে সুবাস জড়িয়ে থাকবে প্রায় সব খাবারেই। আর হ্যাঁ, ওদের রান্নাঘরে ঢুকে পড়েছিল বাংলার পাঁচফোড়ন। আর পিঠা। বাংলার পিঠে। পেটে খেলে পিঠে সয়! ওদের পেটে সয়ে গিয়েছিল মোচা আর কদবেলও। শেহেরওয়ালিরা রাজস্থানি উর্দু হিন্দি ভাঙা বাংলা মিশিয়ে কথা বলত। জল বই গাছ তরকারি এইসব বাংলা শব্দ ওদের কথায় পাওয়া যাবে। ... ...
মাথা বিশাল গরম – ব্রেড কোথায়, পাগলের মত খুঁজছি, ক্রসো দেয়নি? সেই খেয়েই পেট ভরাতে হবে। শেষে দেখি হাসপাতালে সদ্যোজাত বাচ্চাকে যেমন কাপড়ে জড়িয়ে রাখে তেমন ভাবে তিন-চার পিস ব্রেড রাখা। সেই খেয়ে পেট ভরাচ্ছি এমন সময় ট্রলি ফিরিয়ে নেবার জন্য মাসুদ এল – তাকে দেখে আরো মাথা খারাপ হয়ে গেল – বেশ রাগি মুখে বললাম, “বাঙালি হয়ে আরেক বাঙালির মুখের খাবার কেড়ে নিতে লজ্জা করে না?” ... ...
প্রথমে কালো টাকা বা কালো ধন কাকে বলে তা পরিষ্কার হওয়া দরকার। কালো টাকা বা কালো ধন বলতে কিন্তু আমরা অজান্তেই দুটো পৃথক জিনিসের কথা বলি। একটা হলো কালো আয় অন্যটা কালো সম্পদ। কালো আয় হলো সেই আয় যা আয়করের আওতায় পড়া সত্ত্বেও তার ওপর কোনো কর দেওয়া হয়নি অথবা অবৈধ কারবার থেকে করা আয়। কালো সম্পদ হলো কালো আয় জমে জমে যে ধনসম্পদ হয়েছে সেটা। একজন মানুষ কার্যক্ষেত্রে প্রতি মুহূর্তে আয় করছে আর সেই আয়ের একটা অংশ জমে জমে হচ্ছে সম্পদ। যেমন কল থেকে যদি টিপ্ টিপ্ করে জল পড়ে সেই পড়ন্ত জল হলো আয় আর সেই কলের নিচে যে বালতিটা রয়েছে আর তাতে যে জল জমা হচ্ছে সেটি হলো সম্পদ। ... ...
চরের মানুষের জীবন সংগ্রামের এই গল্প জাদু-বাস্তবের ঘরানা অনুসারী না বাস্তবতা-নির্ভর তা তর্কযোগ্য। কিন্তু এই উপাখ্যানে অবিসংবাদিত ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নারীসত্তার প্রাধান্য, জল জঙ্গম ও মানবমনের রক্ষাকর্ত্রী নারীশক্তির উন্মেষ ও প্রতিষ্ঠা। অমর মিত্রের ধনপতির চর, পড়লেন প্রতিভা সরকার। ... ...
আমি কিন্তু বড়ো পত্রিকায় লেখার পক্ষে বিপক্ষে সওয়াল করছিনা। যে সব গুরুত্বপূর্ণ বই প্রতিষ্ঠানের আলো পাইনি, সেই বই যদি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশিত হতো তবে তা খারাপ হয়ে যেত না। অন্য দিকে প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশিত (যদিও খুব কম, বাংলা ভাষায় তো বটেই) বইমাত্রই পড়া যায় না এমনটিও নয়। প্রতিষ্ঠানে সমস্ত লেখকদের লেখার গণতন্ত্র ফিরে আসুক এমন অদ্ভত দাবিও আমি করছিনা। আমি বলছি একটা প্রতিরোধ ব্যবস্থার কথা যা একটি ছোট পত্রিকার লেখকরাই ঠিক করবেন। খারাপ লাগে, যখন রানাঘাটের একটি পত্রিকা, বীরভূমের একটি পত্রিকা কলকাতার চেনা লেখকগোষ্ঠী নিয়েই আত্মপ্রকাশ করে। ... ...
অভিবাদন করে বিদুর বেরিয়ে যান। বাইরে রাত গভীর হয়েছে। শাস্ত্রী মহাশয় কিছুক্ষণ আপন ভাবনার মধ্যে ডুবে গেছিলেন। চটক ভাঙলো কতগুলো পাখির ডাকে। সম্ভবত তারা আক্রান্ত। হয় বাসায় সাপ উঠেছে অথবা প্যাঁচা। কান পাতলেন তিনি। না, পেঁচা না। কারণ তার কোনো শব্দ শোনেননি তিনি। তাহলে সাপ। এখানে অজগরের উপদ্রব বেশি তা তিনি জানেন। শব্দহীন অমেরুদন্ডীটি আততায়ী হিসেবে অত্যন্ত নির্মম। একদম সামনে হাজির না হলে সে যে এসেছে তাই জানা যায় না। প্রকৃতিগতভাবে পাখিগুলি দুর্বল, আর অজগর শক্তিমান। পাখীদের কলরব বাড়তে বাড়তে চূড়ান্ত হচ্ছে। একবার ইচ্ছে হল বাইরে বেরিয়ে দ্যাখেন যদি কিছু করতে পারেন। তারপরে গাভালগণ চলে এলেন জানালা থেকে। প্রকৃতি নিত্য নির্মমতার রাজ্য। তিনি মাথা নাড়লেন। যার যার জীবনের নিরাপত্তা মূলত তার তার হাতেই। তাকেই শিখতে হবে নিরাপদ হতে। নতুবা...! ... ...
কয়েকশ বছর সুখে কাটল, তৈরি হল সলমনের মন্দির। কপালে শান্তি নেই, মন্দির ভাঙলেন নতুন রাজা, ইহুদিরা নির্বাসিত হলেন ব্যাবিলনে (আজকের ইরাক)। ঘরে ফেরার অনুমতি পেলেন আরেক সহৃদয় পারসিক রাজার কাছ থেকে। আবার গড়লেন দ্বিতীয় মন্দির। তারপরে জুডিয়াতে রোমান রাজত্ব, বিদ্রোহ। পুনর্বার বিধ্বস্ত হল মন্দির যার পশ্চিম দেয়ালটুকু এখনো দাঁড়িয়ে আছে, যার নাম ক্রন্দনের প্রাচীর (ওয়েলিং ওয়াল / ক্লাগে মাউয়ার)। জেরুসালেমে ইহুদির প্রবেশ নিষিদ্ধ। অতএব আবার পোঁটলা বাঁধো। পথে এবার নামো সাথী। ... ...
সবার্না গ্রুপের তিনটি ভ্যাকসিন নিয়ে ফেজ থ্রি ট্রায়ালের কাজ শুরু হয়ে গেছে। তবে কাজটা করা খুব সহজ ছিল না। আমেরিকার অর্থনৈতিক অবরোধের জন্য ভ্যাকসিন তৈরির মেডিক্যাল ইকুইপমেন্টই তারা কিনতে পারে নি। বড়দার চোখরাঙানি উপেক্ষা করে কে তাকে যন্ত্র বেচবে? কিউবা করোনাপীড়িত আমেরিকার দিকেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। বছর বছর আমেরিকার ছেলেমেয়েদের স্কলারশিপ দিয়ে ইলাম মেডিক্যাল স্কুল থেকে শিখিয়ে পড়িয়ে আমেরিকা পাঠাচ্ছে। আর তার প্রতিদানস্বরূপ ট্রাম্প প্রশাসন অর্থনৈতিক অবরোধের ফাঁস আরো শক্ত করেছে। বারাক ওবামা যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, সেই সময় সম্পর্ক ভালো করার একটা চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু, ট্রাম্পের সময় তার অবনতি হয়। নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও এখনো পর্যন্ত কোনো সদর্থক পদক্ষেপ নেন নি। ... ...
যদি ধরেও নিই যে আগামী তিনটি ত্রৈমাসিকেই বৃদ্ধির হার ০ তে আটকে রইল (অর্থাৎ সংকোচন বা বৃদ্ধি কোনোটাই হল না)—যদিও সেটা বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রায় অবাস্তব ভাবনা, তাহলেও বার্ষিক সংকোচনের হার অন্তত ৬% তে গিয়ে দাঁড়াবে। অর্থাৎ বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে দেখা যাচ্ছে ২০২০-২১ সালে ভারতীয় অর্থনীতির সংকোচনের পরিমাণ স্বাধীনতা-উত্তর ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক ইতিহাসে সর্বাধিক হতে চলেছে। ... ...
ভয় পেয়ে গিয়েছিল ছোট্ট মেয়েটা। অনেক লোকের মাঝে তাকে সকাল থেকে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। এই পাড়াতে, এইরকম বাড়িতে আগে কোনোদিন আসেনি সে। তার বাড়ির লোকেরাও কোনোদিন আসেনি। তাকে আসতে দিতেও মন চায়নি তাদের। প্রায় জোর করেই চলে এসেছে ছোট্ট মেয়েটি। কারণ সে জানে তার ওপর এবার সংসারের অনেকটা দায়িত্ত্ব। কিছুদিন আগেই বাবা মারা গেছেন। মাকে সঙ্গে নিয়ে তাকে উঠে আসতে হয়েছে দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাড়িতে। সেখানে সারাদিন, সারা রাত অমানুষিক পরিশ্রম করেও বাড়ির লোকের মন পায়নি তারা। চলে আসতে হয়েছে সেই অপমানকর আশ্রয় থেকেও। মায়ের সেই দুঃখ ছোট্ট মেয়েটি ভুলতে পারেনি কোনোদিন। ভুলতে পারেনি পড়শিদের সেই কানা-ঘুষো। আসলেই যাকে বাবা বলে ডাকতো, আদতে সেই কি ছিল তার বাবা? নাকি মায়ের অন্য কেউ...? লজ্জায় রাঙা হয়ে যেত ছোট্ট সেই মেয়েটার মুখ। দারিদ্র্য ছিল। কিন্তু দারিদ্র্যের সাথে সম্মানবোধ ছিল খুব তীব্র। ছোট্ট মেয়েটা মনে মনে পণ করেছিল আর যাইহোক দিদি, মা, এই সংসারটাকে সে কোনোদিন ভেসে যেতে দেবে না। সবাই যাতে দুবেলা খাবার পায়, পড়ার কাপড় পায়, মাথা গোঁজার জায়গা পায়, সন্মানের সাথে জীবন নির্বাহ করতে পারে তার জন্য ছোট্ট মেয়েটা নিজের সমস্ত শখ, আহ্লাদ, নিজের ছোটবেলাটা বিসর্জন দিয়ে একলা একলা প্রতীক্ষা করছে। অনেক আলো, অনেক যন্ত্রপাতি আর বেশ কিছু রঙ-চঙে মানুষের মাঝে। মনে হচ্ছে আজ তার অগ্নি পরীক্ষা। হ্যাঁ, এই ছোট্ট বয়সেই। ... ...
সেই শুরু। তারপরে দীর্ঘ্য সময় গর্গ ভ্রমণ করেছেন মথুরা রাজ্যের প্রতিটি অংশ। যাদবদের রাজনীতি কেন্দ্রীভূত ছিল গণসভার অস্তিত্বের মধ্যে। সেই অস্তিত্বকে যখন কংস উপড়ে ফেলে দিল, রাজা উগ্রসেনকে বন্দী করলো, বন্দী করলো নিজ ভগিনী দেবকী এবং বান্ধব বসুদেবকে তখন মথুরা নগরে কোনো বিরোধী কেন্দ্র রইলো না। কংস ভেবেছিল বসুদেব তাকে সমর্থন করবে। কিন্তু তা না হওয়ায় সে ক্ষিপ্ত হয়। এই সূত্রটা ধরলেন গর্গ। বসুদেবের মিত্রতা ছিল গোপেদের সঙ্গেও। সে বৈষ্ণবদের ‘বাসুদেব’ হতে চলেছে তখন এবং গোপেরা মূলত বৈষ্ণব। তাছাড়া সে স্বভাব বশতই মিষ্টভাষী। শ্বশুর উগ্রসেন রাজা থাকাকালীন গোপেদের রাজনৈতিক এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধার প্রতিনিধিত্ব সেই করতো মথুরাপুরে। প্রথমে গর্গ গোপেদের মধ্যে নিজের অবস্থান শক্ত করলেন। কণাদের পরমাণুবাদ ছাড়লেন। নিজেকে রূপান্তরিত করলেন বৈষ্ণবে। একমাত্র ধর্মই সমাজকে চালনাকারী রাজশক্তির সমকক্ষ হতে পারে। আর সেই ধর্ম বেদ, ন্যায়, সাংখ্য এ সব দিয়ে চললে হবে না। ধর্মের জনপ্রিয়তা ও শক্তির মূল ভিত্তি যে মানুষ তার কাছে সহজ হতে হবে ধর্মকে। বৈষ্ণব ধর্মের মধ্যে আছে সে বীজ। তাই পরিবর্তিত গর্গ বৈষ্ণব হলেন। তারপরে মথুরাপুরে খুঁজে বের করলেন কংস বিরোধী গণসভ্যদের। দ্বিতীয় কাজে তাঁর সাহায্য করেছেন কদম। যেহেতু কংসের নজর বেশী থাকবে গর্গের উপরে, তাই তিনি রাজধানীতে আসতেন না। আসতো কদম। অক্রুর, পৌল সাত্যকীরা ধীরে ধীরে মেনে নিয়েছেন একমাত্র উপায় অভ্যুত্থান। কিন্তু সামরিক অভ্যুত্থান হওয়া অসম্ভব। কংস নিজের হাতে রেখেছে সৈন্যবাহিনীকে। তাদের প্রতিপালনে সে যথেষ্ট মনোযোগীও। সাধারণ মানুষ সেই বাহিনীর সঙ্গে সমরবিদ্যায় পেরে উঠবে না। তাহলে? রাস্তা ছিল একটাই। কংসের দম্ভকে কাজে লাগানো। ঠিক সেই কাজটাই হয়েছে। ... ...
জাঁ-মারি গুস্তাভ ল্য ক্লেজিও। নোবেলজয়ী ফরাসি সাহিত্যিক। কিন্তু হৃদয়ে তাঁর আফ্রিকা। নিরন্তর লিখেছেন আফ্রিকান নানা জনগোষ্ঠীর ওপর ফরাসি ঔপনিবেশিক শক্তির মর্মান্তিক হামলার কথা। সংশয় প্রকাশ করেছেন ইওরোপীয় সংস্কৃতির মূল্য নিয়েই। আত্মজৈবনিক একটি প্রবন্ধসংকলন। পড়লেন পার্থপ্রতিম মণ্ডল ... ...
আমরা জানি ৫৫% ভোট পেয়ে গ্যাব্রিয়েল বোরিক, ছাত্র আন্দোলনের বহু ব্যারিকেড পেরিয়ে, পুলিশি দমনপীড়নের মোকাবিলা করে, নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ৪৬ লক্ষ ভোট পেয়েছেন যা তাঁর যে কোনও পূর্বসুরিদের চেয়ে বেশি। বোরিক দেশে গণতন্ত্র রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি নিও লিব্যারাল অর্থনীতির প্রবল বিরোধী। “চিলি নিও লিব্যারিলজমের জন্মভূমি ছিল, এখানেই সেটার কবর খোঁড়া হবে,” তিনি ডাক দিয়েছেন। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পেনশন এবং কর সংস্কার করতে তিনি বদ্ধপরিকর। তিনি সামাজিক ন্যায়ের আওয়াজ তুলেছেন। তাঁর সরকারে মহিলা, মূলবাসী এবং এলজিবিটিকিউদের উল্লেখযোগ্য প্রতিনিধিত্ব থাকবে। তাঁর দল বামপন্থী; তিনি মার্কসবাদী কিনা, তার কোনও ইঙ্গিত এখন অবধি পাওয়া যায়নি। তিনি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র নির্মাণ করার পক্ষপাতী। ... ...
নিজের খুন হওয়ার পিছনে পাখির যে একেবারে কোনও অবদান নেই, এমনটা কিন্তু বলা যাবে না| খুনের মত এতবড় একটা বেআইনি কাজে সেও যে ইন্ধন যুগিয়েছিল তার খবর পাওয়া যাবে রাজারহাট এলাকায় বৌ-ঝিদের এককাট্টা করে সে-ই যে প্রথম জমি বাঁচানোর আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিল সেই বিবরণ খুঁজে কিম্বা খুঁড়ে বের করতে পারলে| তার প্রায় হিস্টিরিয়াগ্রস্ত হাত পা ছোঁড়া, এক দালালকে একসময় ঝাঁটাপেটা করার ইতিবৃত্ত জন্ম দিতে পারে নি কোনও বড়্সড় আন্দোলনের| তাই পাখি হঠাৎ লাশ হয়ে যেতে তার সোয়ামি বালু সর্দার ছাড়া আর কেউ তেমন নড়েচড়ে বসে নি| আর বসে নি বলেই অঞ্চলের বা পার্টির কেউ ভাবেই নি 'প্রোমোটার হটাও, পার্টি বাঁচাও' শ্লোগানের মধ্যে এই পাখি বৃত্তান্তটি ঢুকে পড়বে| এমনিতে বালুর অভিযোগ থানায় জমা হওয়ার পরও কেটে যাওয়ার কথা অনেক দিনরাত, আসামী ফেরার এবং কোর্টের ডেট বছরে, দুবছরে একবার করে পড়তে পড়তে আসামীটির একসময় ৬৩ বা ৭৭ বছর বয়সে সিরোসিস অব লিভার বা উচ্চরক্তচাপজনিত কারণে নির্বিঘ্নে মারা যাওয়ার কথা, কিন্তু বৃত্তান্তটির এমন সরল হওয়ার পথে বাধ সাধল ননী সাহা| রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় তার ঘোর প্রতিদ্বন্দী এবং পার্টির 'ভদ্র লবির নেতা'কে নাস্তানাবুদ করতেই ননীর নাকটি তেরচা করে ঢোকে পাখি উপাখ্যানে| ... ...
অ্যাক্রস্টিকের সঙ্গে অ্যাক্রোব্যাটের শব্দগত মিল দেখে অভিধান খোলা গেল। তাতে অ্যাক্রোব্যাটের মানে লেখা আছে মল্ল, মত পরিবর্তনকারী, দড়াবাজিকর, ব্যায়ামবিদ, ঘনঘন দলপরিবর্তনকারী, রজ্জুনর্তক, ব্যায়ামকুশলী। শব্দের মিলটা কিছু না, তবে অ্যাক্রস্টিক লেখার সঙ্গে মল্লযুদ্ধ, দড়াবাজি, রজ্জুনর্তন, ব্যায়াম - এইসবের অল্প মিল আছে। সমবেতভাবে মনে হল, পুজোর ফুর্তি, হাঁটাহাঁটি, জুতোয় ফোস্কা, বাঁকা এয়ারগানে বেলুন - এসব তো সুদূর, শব্দ, ছন্দ নিয়ে একটু রজ্জুনর্তনই না হয় হোক। ভাবের ঘরে চুরি হলে কী, আমাদের ভঙ্গীও কম নয়। পাঠক যদি আমোদ পান তাহলেই ধন্য। ... ...
কালের নিয়মে একদিন বিয়ে করলাম। নতুন বৌকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছি। রাস্তায় দেখা লালি পিসির সঙ্গে। হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন বাড়িতে। দেখলাম কাল্টুদের বেড়ার ঘর পাকা হয়েছে, ছাদ হয়েছে। আমাদের দুজনকে বসিয়ে প্লেটে করে দুটি সন্দেশ আর জল দিলেন। তাকের ওপরের কৌটো থেকে একটা দোমড়ানো ময়লা কুড়ি টাকার নোট বার করে দিলেন আমায় বৌয়ের হাতে। বললেন, "বৌমা, কিছু কিনে খেও"। বৌকে নিয়ে গেলাম একদিন ইমাম সাহেবের ডেরায়। আমার স্ত্রীর মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করলেন। হাতে তুলে দিলেন একটি দশ টাকার নোট। চলে আসবার সময়ে বৃদ্ধ মানুষটার চোখের কোনাটা কি চিকচিক করছিল। ... ...
সময় হলে মৌলানাসায়েব নামাজ শুরু করবেন।নামাজে আমরা সবার জন্যে মঙ্গলকামনা করবো। আমাদের চলে যাওয়া সবার ভালো চাইবো। যে বৃদ্ধ মানুষটি ভয় পাচ্ছেন যে আগামী ঈদের নামাজে তিনি হয়ত থাকতে পারবেন না তিনি সবার কাছে কোনো ভুল করে থাকলে ক্ষমা চাইবেন। আমরা তার দীর্ঘ জীবন চাইবো।মৌলানা প্রতিটি মানুষের মঙ্গল চাইবেন খোদাতলার কাছে।আপনি দেখবেন এইসময় আমাদের প্রবীণ মৌলানা মানুষটি কেঁদে ফেলেন।আমার মতন উদাসীন লোকেরও বুকের বাম দিকে কোথাও হাল্কা ব্যথা শুরু হয়। নামাজ শেষ। আসুন, এবার আমরা একে অপরের সাথে কোলাকুলি করি। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে। সমস্ত বৈরিতা দূর হোক। আমার-আপনার সবার কুশল হোক। এবার চলুন বাড়ির দিকে হাঁটি।আব্বার জন্য দাঁড়াতে হবেনা। উনি সবার শেষে ঈদগাহ থেকে বের হবেন। প্রত্যেকটি মানুষের সাথে আলিঙ্গন ক'রে। ... ...
কুফরি থেকে ফাগু দুই বা সওয়া দুই কিলোমিটার রাস্তা ঘোড়া চলাচলের জন্য নির্দিষ্ট। বোধহয় পৃথিবীর নিকৃষ্টতম রাস্তা এটা! পুরো রাস্তা এক – দু বিঘৎ পরিমাণ পাথরে ভরা। উঁচু-নিচু আঁকা-বাঁকা ছয় সাড়ে ছয় ফুট চওড়া রাস্তার দুধারে কোথাও কোথাও পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। কিছুটা রাস্তা গেলে দেখা গেল পাঁচিল আর নেই, তবে সে জায়গায় রাস্তা বলেও কিছু নেই। পাথরের চাঙর ভর্তি ঢালু ভূমি,আর পাইনের জঙ্গল। রাস্তা কর্দমময়। বেশ খানিকটায় ঘোড়ার পুরীষ আর কাদা মেশানো ঢলঢলে একটা স্তরে প্রায় হাঁটু ডুবে যায়। সীতারামের হাঁটু তক গামবুট থাকলেও সওয়ারিদের পায়ে সেই কাদা ছিটকে আসে। প্রতি মুহূর্তে ভয়। একটি ঘোড়া পড়লে সওয়ারীসহ বাকিগুলোও সেই কাদার নালায় পপাত ধরণীতল হবার সমূহ সম্ভাবনা ষোলো আনা। ... ...
এঁরা কোন সবজান্তা একপক্ষীয় আলোচনা না করে সমস্যার উপর বহুকৌণিক আলো ফেলেছেন। দেখিয়েছেন সমস্ত হাতে গরম সমাধানের সীমাবদ্ধতা। অথচ সবগুলোই প্রাসঙ্গিক। জমির মালিকানার একচেটিয়া অধিকারের ভিত্তিতে সামন্ততান্ত্রিক শোষণ যেমন কৃষির উন্নতির বাধা, কিন্তু আজকে তার চেয়ে বড় বাধা ভারতের কৃষকসমাজের ছোট এবং প্রান্তিক চাষিদের (ভারতে গড় ৮০% এবং বাংলায় ৯০%) জন্য সরকারি ব্যাংকের সেকেলে আইন এবং গরীবকে তাচ্ছিল্য করার সংস্কৃতি; যার ফলে ওদের জন্যে সুলভ সার, বীজ, এবং ট্রাক্টর বা হাল বলদের জন্য ঋণ পাওয়ার দরজা বন্ধ হয়ে থাকে। ... ...
“সেইটা বলা খুব মুশকিল, বুঝলি। এটাই হল এই বিষটার মজা। সাঙ্ঘাতিক টক্সিক এই বিষটা কোনও পরীক্ষায় চট করে ধরা পড়ে না। আর কতক্ষণে কাজ করবে সেটা নির্ভর করে কীভাবে আর কতটা প্রয়োগ করা হয়েছে তার ওপর। তবে যেহেতু কয়েক ঘণ্টা আগেও পার্টিতে ও একেবারে স্বাভাবিক ছিল, তাই অনুমান করা যেতে পারে বেশ খানিকটাই শরীরে ঢুকেছে। তবে বেশ খানিকটা মানে আবার কয়েক গ্রাম ভাবিস না যেন। একটা আলপিনের মাথায় যতটুকু ধরে ততটা রাইসিনই একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষকে মেরে ফেলতে যথেষ্ট। ওই পরিমাণ বিষ যদি ইনজেক্ট করা হয়, তবে তিন থেকে ছ’ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু হতে পারে।” ... ...