শিলচরে বড় হবার সুবাদে ছেলেবেলা থেকে দেখতাম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর দিন কতক পরেই পাড়ায় পাড়ায় আরেকটি দিন উদযাপনের ধুম পড়ে যেত, সেটি ১৯শে মে। ১১ শহীদের ছবি একটা চেয়ার বা অস্থায়ীভাবে তৈরি বেদীর উপর রেখে ফুলে ধূপে সাজিয়ে রাখা হতো, কেউ কেউ পাশে বাংলা দেশাত্মবোধক গান মাইকে বাজিয়ে দিত, কেউ নয়। এই রীতিতে দিবস উদযাপনের রীতিটি বোধ করি শিলচরীয়, বা কাছাড়ি ব্যাপার। কেননা, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকাতে ওমন দেখা যায় না। রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীতে বা নেতাজী জয়ন্তীতে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রভাত ফেরি হতো, স্কুল থেকেই যোগ দিতে বলা হতো। কিন্তু ১৯শের কোনো পথ চলাতে গেছি বলে মনে পড়ে না। কলেজে গিয়ে জেনেছি যে ১৯শের দিনে খুব সকালে শিলচর শ্মশানে জড়ো হওয়া আর বিকেলে গান্ধিবাগ শহীদ বেদীতে –একটি নিয়মিত প্রথা। ... ...
যার হবার কথা ছিল মাথার মণি, সে হয়ে গেল গলার কাঁটা। ভূস্বর্গ কাশ্মীর, তার অবস্থান, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, শান্তিকামী জনগণকে নিয়ে যে কোন রাষ্ট্রের সাধনার ধন হতে পারত। কপালদোষে তাকে নিয়েই গলার কাঁটা বেঁধে যাওয়ার মতো হাঁসফাঁস অবস্থা ভারতের। না পারা যাচ্ছে গিলতে, না ওগরাতে। আর এই দুরবস্থার পেছনে আছে দীর্ঘদিনের পারস্পরিক অবিশ্বাস, শাসকের ভ্রষ্টাচার, দমন ও শাসিতের মরীয়া বিদ্রোহ, চরমপন্থার জলঘোলা করা এবং অবশ্যই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের লম্বা নাক ঘন ঘন গলানো। দুই দেশই নিজের স্বার্থে যে ভূখণ্ডকে ব্যবহার করে চলেছে তার নাম কাশ্মীর। তবে এখন আর সে ভূস্বর্গ নয়, রক্তাক্ত, অসন্তুষ্ট এক নরকসদৃশ ঠাঁই যেখানে আত্মঘাতী জঙ্গী নিরাপত্তার ঘেরাটোপ অনায়াসে টপকে বিস্ফোরণে খতম করে দিতে পারে সেনা জওয়ানদের, আবার অন্যদিকে পাঁচশর বেশি নিরপরাধ নাগরিক শিকার হন নির্বিচার পেলেট গানের। তাদের মধ্যে শিশু, নারী, বৃদ্ধ অনেক। মৃত্যু, বিকলাঙ্গতা, অবিশ্বাস, সন্ত্রাস আর ষড়যন্ত্র যেখানে রাজ করে সেই ভূখণ্ডই আজকের কাশ্মীর। ... ...
অতিমারি এবং লক ডাউনের আড়ালে, পার্লামেন্টকে এড়িয়ে এই নতুন শিক্ষানীতি পাস করিয়ে নেওয়া হল। আয়তনে বিশাল, বাইরেটা কথার ফুলঝুরিতে উজ্জ্বল এই নীতিকে টুকরো টুকরো করে বোঝার চেষ্টা হয়েছে। দেখা হয়েছে কী ভাবে স্কুল লেভেল থেকেই শিক্ষা ব্যবস্থাকে দাস বানাবার যন্ত্রে পরিণত করা হয়েছে। এই নীতির শুরুতেই বলা হয়েছে অতি উচ্চ গুণমানসম্পন্ন শিক্ষা দেওয়া হবে নার্সারি থেকে ১২ ক্লাস অব্দি ভারতীয় শিশু, কিশোর-কিশোরীকে। বিশ্বব্যাংক ঋণ দেবে, ফলে তার মনমতো করেই তৈরি হল এই পলিসির আগাপাশতলা। তবে টাকা দেওয়া হবে কিন্তু কেবলমাত্র বিশেষ বিশেষ প্রোগ্রামে। তেমনি একটি প্রিয় প্রোগ্রাম STARS যা আগেই চালু করে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের মস্তিষ্কপ্রসূত এই ব্যাপারটি কী সেটা অনেকেই জানেন। ... ...
বাইনারি দুনিয়ায় কোনও লিঙ্কে ক্লিক করতে না করতেই দেখি, পর্দাজুড়ে হুটোপাটি করছে শেয়ার করার বিভিন্ন আয়োজন। আমার এক কবিবন্ধুর কথায়, “সুরাসিক্ত লিঙ্ক আঁকশি বাড়িয়ে বিষ-আলিঙ্গনের কথা বলে।” যখন কোনও খবর পড়ি, পনেরো সেকেন্ড যেতে না যেতেই দেখি, লাইক করার হরেক টুল নেমে আসছে স্ক্রিন জুড়ে। পড়া স্তব্ধ করে দিয়ে বলে, লাইক করো আগে। কিভাবে করতে চাও বলো। তুবড়ির ফুলকির মতো উড়ে আসে হোয়্যাটসঅ্যাপ, ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম আর ইমেলে শেয়ার করার আইকন। কোনও বিষন্ন খবরে তুমুল রেগে এমন অপশন বন্ধ করে দিয়ে দেখেছি, দশ সেকেন্ড পরে ফের হাজির হয়েছে অপশন অমনিবাস। মানেটা হল, শুধু আমি পড়লেই হবে না, মেঘের ওপাশ থেকে গর্জনের মতো তা বিলিয়ে দিতে হবে বিশ্বচরাচরে। আমি জানি, প্রতিটি লিঙ্কের পর্দার ওপারের ডেটাবেস আমার শেয়ার করার দলিলের খবর রাখে। যত বেশি শেয়ার করব, সংস্থার আরও বড় প্রিয়পাত্র হব আমি। আমার সোশ্যাল মিডিয়ার দেওয়ালে ফুটে উঠবে ওই সংস্থার এমন খবরের আরও, আরও ফিড। পালাবার পথ নেই। ... ...
গল্প খোঁজার জন্যে “ছবির সাথে সহবাস”-এর প্রয়োজন। দিনের অনেক সময়, বারবার যাতে চোখ যায়, এমন জায়গায় ছবিটি থাকা প্রয়োজন। যাঁদের বাড়ির দেওয়ালে ছবি রয়েছে (আবারও বলি, এইখানে ছবি বলতে প্রিন্ট বা ওরিজিন্যাল সবকিছুকেই বোঝাতে চেয়েছি), তাঁদেরকে এই বিষয়টি আলাদা করে বোঝানোর কিছু নেই। এইটা অনেকাংশেই, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতানির্ভর। কিন্তু, যাঁদের বাড়িতে ছবি নেই, তাঁরা একবার চেষ্টা করে দেখুন। আগেই বলেছি, অনলাইন স্টোরে বেশ উঁচু মানের প্রিন্টের দাম তো তেমন কিছু নয়। শুধুই পশ্চিমের নয়, ভারতীয় মাস্টারদের ছবির প্রিন্টও পাওয়া যায় সেইখানে। আর, ওরিজিন্যাল ছবি ঝোলাতে পারলে তো কথা-ই নেই। ... ...
মেজ নন্দাই যখন শ্বশুর বাড়িতে আসতেন, আমাকে বক্সীবাজারে নিয়ে যেতেন। কতরকম যে নোনামাছ বাজারে, তাদের চেহারা, আকৃতি সব কিছু অদ্ভুত। আমি অবাক হয়ে যেতাম। মাছগুলো বেশ স্বাদু, কিন্তু দামে কম। কম তো হবেই, স্থানীয় সমুদ্রের মাছ স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয়। শহরের মানুষ তো খেতে জানে না, তাই দামও ওঠে না। কিন্তু এই মাছগুলো এখানকার মানুষের শরীরে সস্তা প্রোটিনের যোগানদার। আর দীঘা-মোহনায় ইলিশ উঠলে, বাড়িতে ফোন চলে আসে। তখন বর, দেওর, আরো কয়েকজন বন্ধুবান্ধব মিলে কাকভোরে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায়। কারখানা থেকে থার্মোকলের বাক্স কিনে রেখেছে বেশ কয়েকটা। তার মধ্যে টাটকা ইলিশ ঠেসে বরফ দিয়ে চওড়া সেলোটেপ দিয়ে সিল করে নিয়ে আসে। শহরেও এভাবে ইলিশ নিয়ে আসি আমরা। প্রতিবেশী, নিকটজন ইলিশ উপহার পেলে খুবই খুশি হয়। হাওড়া স্টেশনের পাশে ইলিশের নিলাম হয়। সেখানেও যাওয়া হয় কখনো-সখনো। ... ...
বাংলার মঙ্গলকাব্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন যুগের সাহিত্য, লোকাচার, প্রবাদ-প্রবচনে নানা ভাবে আমরা পান্তাভাতের উল্লেখ পাই। সাহিত্য ছাড়াও সপ্তদশ শতকের নথিপত্রেও এর হদিস রয়েছে। আর তা থেকে সমসাময়িক আর্থ-সামাজিক চিত্রটি আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ প্রচলিত প্রবাদে আমরা এটাকে গরিবের খাবার বলেই জানি। কিন্তু পান্তাভাত যে কেবল সর্বহারা শ্রেণীর বেঁচে থাকার রসদ তা নয়। মুঘল আমলে সম্রাটের প্রাসাদের মুক্তাঙ্গনে যে গান বাজনার আসর বসত, তাতে হাজির থাকতেন অভিজাত শ্রেণীর নাগরিকেরা। তাঁদের আপ্যায়নের জন্যে ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে বিশেষ করে থাকত পান্তাভাত। ... ...
ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে, আর বাউন্ডুলে ফ্রান্স গেলেও ঘুরেই বেড়ায়। আমারও তাই দশা। ছুটিছাটা পেলেই প্যারিসের লং ডিসটেন্স বাস ডিপো থেকে কোনো একটা বসে উঠে অজানা জায়গায় যাই। কদিন আরামে নিজের সাথে কাটিয়ে আবার ফিরে আসি। এবারে ভাবলুম, ট্রেন ব্যবহার করি। বাসওয়ালাগুলোও বোধয় এতো দিনে চিনে গেছে আমাকে। তাছাড়া ট্রেনের ভাড়া বাসের থেকে বেশ কম শুনেছি। আমার তখন সম্বল বলতে ফ্রান্স সরকারের দেওয়া কটা ইউরো আর এক বাংলাদেশী মাইয়ারে বাংলা পড়াইয়া যা কিছু পাই, তাই। তার অর্ধেক তো চলে যায় ওরই বাপের রেস্তোরাঁতে ইলিশ ভাত, মাংস ভাত খেতে। কত আর পাউরুটি চিবোবো। বইটি হস্তগত করে, একটা ছোট ব্যাগ নিয়ে দুগ্গা দুগ্গা বলে বেরিয়ে পড়লুম। দেখি চোখ কোন দিকে যায়, আমিও সেই দিকগামী হবো। তবে দুগ্গার কৃপাকে এইভাবে abuse করলে মাও যে আর বেশিদিন রক্ষে করবেননে সেটা বুঝি। কোথায় যাচ্ছি ঠিক করার একটা দারুণ উপায় মাথায় এলো। ট্রেন স্টেশনে মানচিত্র দেখে যে অজানা নামটা বেশ সুন্দর লাগলো, সেটার একটা টিকেট কেটে উঠে বসলাম। ... ...
স্বামী তো অদ্ভুত আচরণ করছে, সে দেখল। অপারেশনের দিন দেখতে এল, তারপর কেমন বিচ্ছিন্ন হয়ে, অন্যমনস্ক হয়ে, কেমন যেন উদাসীন, বাড়ি চলে গেল, একটু মিষ্টি কথাও না বলে। গলা আটকে এল কান্নায়, মেয়েটির। বাচ্চাটা আমাদের দুজনের তো। তাহলে কেন আমাকেই শুধু থাকতে হবে ঠান্ডা সাদা এই নার্সিং হোমটায়। আর তুমি ভিতু আত্মীয়ের মত, অসুস্থা গিন্নিকে দেখে কাষ্ঠ হাসি হেসে চলে যাবে, তারপর পরদিন বলবে, সারা সন্ধে ছেলে বন্ধুরা তোমাকে ঘিরে রেখেছিল মালের আড্ডায়, কেননা, বাচ্চা হলেই গিন্নির প্রেম চলে যাবে, সব অ্যাটেনশন কেন্দ্রীভূত হবে বাচ্চার দিকে, তাই একলা হয়ে যাবে স্বামী, এই ভয়ে সে পারছিল না একা একা সন্ধেটা কাটাতে। ... ...
বিজেপির ‘ভারতীয় মানব’ নির্মাণের বিপরীতে আমাদের দেশের বুর্জোয়া লিবারেল, সরকারী বাম, অনগ্রসরদের প্রতিনিধি সকল পার্টিই মনে করেছিলেন ‘সংবিধান’ হবে একটি সমকক্ষ ভাবনা। ‘সংবিধান’ অর্থাৎ “আম্বেদকর এবং তাঁর রচনা করা আধুনিক, ধর্মনিরপেক্ষ, প্রগতিশীল, সামাজিক ন্যায় সুরক্ষিত করা রাষ্ট্রকাঠামোটিই শেষ হয়ে যাবে বিজেপির হাতে”, এই ছিল তাদের বয়ান এবং প্রধান বয়ান। অর্থাৎ এর মধ্যে দিয়ে যাকে উঁচুতে তুলে ধরা হয় তা হল আধুনিক ভারতের রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং তার ভাবনা। বলা বাহুল্য এই আইডিয়াটির গায়ে এখনো পর্যন্ত যতটা পরিমাণ আমদানি করা মালের গন্ধ লেগে আছে এবং ভারতের সিংহভাগ জনমানসে এটা এখন পর্যন্ত এতটাই অসম্পৃক্ত যে, এটার মধ্যে দিয়ে কখনই বিজেপির সাধারণীকৃত ভারতীয়ত্বের ভাবনাটিকে প্রতিহত করা যায় না। এর জন্য ভারতীয় সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য এবং ভারতবর্ষে বিকৃত এবং অসম পুঁজিবাদী উন্নয়নের ইতিহাস একান্তভাবে দায়ী। বরং বলা যায়, এই সংবিধান যে বিষয়টিকে ভারতবাসীর মনে এবং আর্থ-রাজনৈতিক ব্যবস্থায় জগদ্দল পাথরের মতন অপরিহার্য করে তুলেছে তা হল সংসদীয় গণতন্ত্র। ... ...
এটা ধর্মের ব্যাপার নয় - এটা পুরোটাই ক্ষমতা দখলের রাজনীতি। ধর্ম এখানে একটি অজুহাত মাত্র। যদি এই লোকগুলি নিরীশ্বরবাদী হতো তাহলেও এই হিংসার ঘটনা ঘটতো। এই সব হিংসার জন্য শুধু ধর্মকেই দায়ী করতে গিয়ে তারা ভুলে যাচ্ছেন যে মানুষকে নিজের দখলে আনতে হলে সব ইডিওলজিকেই হিংসার পথ ধরতে হয়েছে, অবশ্যই ধর্ম তার থেকে বাদ নেই। এটা শুধু কোনো ধর্মের দোষ নয়।নিশ্চয়ই এটা নিয়ে তর্ক ও আলোচনার সুযোগ রয়েছে কিন্তু শুধু ধর্মকে কাঠগড়ায় চাপালে মূল কারণটাকে আমরা বাদ দিয়ে ফেলব। বিশেষত; যখন আমাদের বোঝাতে হবে পাকিস্তানের আম জনতাকে যে এটা আমাদের এক যুদ্ধ। যেটা পরিষ্কার করে বলতে হবে যে টিটিপি যা করছে তা ধর্ম নয়, এটা ধর্মের বিকৃতি। আরো যেটা বোঝানো জরুরি যে টিটিপি এখন ধর্মকে ব্যবহার করছে, কেন না সেটা এখন তাদের পক্ষে সুবিধাজনক। ... ...
বলাই বাহুল্য, আমাদের নবতিপর ঠাকুমার ভালো নাম সুষমা হলেও শাকপাল্হার নামেই ডাক নাম ছিল ‘শুশনি’। বয়সে ছোট ছিল বলেই আমরা ‘ন্যাঙটা ভুটুঙ সাধের কুটুম’ তার ছোট বোনকে ‘ছুটকী ঠাকুমা’ বলেই হাঁকাহাঁকি করতাম। আমাদের দলে ভিড়ে বড়ঠাকুমাও সময় সময় তার ছোটবোনকে ‘ছুটকী' নামেই সম্বোধন করত। তা, ঘাসের ডগায় ‘কাঁকর-পড়া’ শুরু হলে, ‘বিরি বাইগন’ গাছে মাকড়শার জালের উপর হিলঝিল করে ‘কাঁকর’ পড়লে – সুবর্ণরেখা নদীধারে কারিকুরি পাখিরা এসে মেলা বসালে, হি-হি ঠান্ডা হাওয়া চালালে – আমাদের নবতিপর ঠাকুমাও কেমন যেন আনচান করে – - এই বুঝি সে আসে – আসে – - কে? কে ঠাকুমা? - কে আবার! তোদের ছুটকী ঠাকুমা। অ্যাই! অ্যাই ললিন! অ্যাই অ্যাই ছিমন্ত! যা না রে! টিক্কে আগেই যা, দেখবু ‘ধঁচা-বঁধা’ গাড়ি করি ছুটকি আসেটে। ... ...
প্রথম কথা লকডাউন ম্যানেজমেন্ট নিয়ে। এই রাজ্যের একটা বড় জনভারের অংশ ইতিমধ্যেই গত লকডাউনের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তার উপর রাজ্যের উপর দিয়ে গেছে আম্ফানের মতন বড় দুর্বিপাক। গ্রামে-গঞ্জে দিকে দিকে কোভিড ছড়িয়ে পড়েও রুটি-রুজি মার খেয়েছে অনেকের। তার উপর এই আচমকা একদিনের নোটিসে লকডাউন। পেটের ভাত জুটবে তো সকলের? উপোষী পেটে কোভিড সংক্রমণ কিন্তু প্রায়-নিশ্চিত মৃত্যুর প্রেসক্রিপশন। কেন “দুয়ারে রেশন” এর মত সুবিধার কথা ভাববে না সরকার? আর শুধু তো রেশন নয়, বেঁচে থাকতে লাগে আরও কিছু জিনিস। যেসব মানুষ লকডাউনের চক্করে সাময়িক জীবিকাহারা হলেন বা আগেই জীবিকা হারিয়ে অসহায় বিপন্নতার দরজায়, সেই অজস্র অসংগঠিত কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত / একদা-জড়িত মানুষদের জন্য কেন সরাসরি সাময়িক আর্থিক ভাতা দেওয়া হবে না? এবং কেন নিশ্চিত করা হবে না যে সেই অর্থ বিপন্ন মানুষ পাবেন ‘দাদা’ না ধরে, কাউকে তার থেকে ভাগ না দিয়ে? ... ...
ধর্ম যেরকম, কেউ চাইলে মুসলমান থেকে হিন্দু হতে পারে কোর্টে গিয়ে কাগজপত্রের বিধান নিয়ে। তারপরে ধরুন কেউ ভারতীয় থেকে ক্যানাডিয়ান হয়ে যেতে পারে যেমন অক্ষয় কুমার হয়েছে। কেউ আবার ব্রিটিশ থেকে ভারতীয় হয়ে যেতে পারে, যেরকম এককালে বিখ্যাত বিজ্ঞানী জেবিএস হ্যাল্ডেন হয়েছিলেন। কিন্তু বাঙালি থেকে মাড়োয়ারি হওয়ার কোন কাগজ হয় না কারণ এটা অসম্ভব, তাই বাঙালি হচ্ছে একটি জাতি। ... ...
প্রতিবছর গরম বেড়ে উঠলেই মানুষজন ব্যস্ত হয়ে পড়েন ‘চলো গাছ লাগাই, এক্ষুণি লাগাই’ করে। আমাদের বাঙালবাড়ির ভাষায় যাকে বলে লোকে একেবারে ‘উসুইল্যা উঠে’। তা গাছ লাগানো খুবই ভাল উদ্যোগ। তবে পরিবেশ রক্ষায়, পরিবেশের উন্নতিকল্পে গাছ লাগাতে হলে দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনার মাধ্যমে বনসৃজন করা প্রয়োজন। আমি যে সংস্থায় কাজ করি তাদের সিএসআর প্রোগ্রামের সূত্রে ২০১৬ থেকে কোভিড লক ডাউনের আগে পর্যন্ত পুণে ও পুণের আশেপাশে এবং আহমদনগর জেলায় এরকম বনসৃজন প্রকল্পের সাথে যুক্ত ছিলাম। এই সময় আমরা প্রায় ১৮ হাজার গাছ লাগিয়েছি, এলাকা ভেদে যার ৭০-৭৫ শতাংশ বাঁচিয়ে রাখতে পারা গেছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই কয়েকটা কথা বলি। ... ...
১৯৯৫ সাল নাগাদ শুরু হলো চরম উত্তেজক অধ্যায় যাকে ভালো বাংলায় ক্লাইম্যাক্স বলে। সেপ্টেম্বরে গণেশ দুধ খেয়ে জানালেন আর দেরি নেই। অক্টোবরে ডিডিএলজে মুক্তি পেলো, আর ডিসেম্বরে পুরুলিয়ায় ঈশ্বর পুষ্পকরথ থেকে অস্ত্রবৃষ্টি করলেন। অন্যান্য অস্ত্রের সাথে ইউরেনিয়ামে রাঙানো একটা জাঙিয়াও পড়েছিলো, তার রং বলার জন্য একটি টক শোয়ের আয়োজন হয়। সেই লাইভ অনুষ্ঠানে সমস্ত জাতি গলার শির ফুলিয়ে বলে "রং দে মোহে গেরুয়া"। সমগ্র জাতি জাঙিয়া পরতে শুরু করে তাই ঈশ্বরকে উলঙ্গ হতে হয়। ঈশ্বর জাঙিয়াহীন দেখে দ্যাবাপৃথিবী একত্র হয়ে এক অপূর্ব আলখাল্লা রচনা করে, যার সুতো ইতালির আর বোতাম প্যালেস্টাইন থেকে আনা। ... ...
সৌম্য বলল, “এটাকে আসলে বলে ইন্টার্নালাইজড হোমোফোবিয়া। অনেক হোমোফোবিক মানুষ আসলে নিজেরাই গে বা লেসবিয়ান। নিজেদের ওরিয়েন্টেশনকে ঢাকতে এরা ওভার কম্পেনসেশন করে আরো বেশি বেশি হোমোফোবিক হয়ে যায়। এরা সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকে, যে যদি এরা কুইয়ার মানুষজনকে সাপোর্ট করে, তবে লোকে এদের কুইয়ার ভাববে। তুষারবাবুও তাদের মধ্যে একজন। তার সাথেই ছিল কনজারভেটিভ ভোটব্যাংক হারানোর ভয়। সব মিলিয়ে উনি ওই রকম হোমোফোবিক হয়ে উঠেছিলেন। তবে শুধু তুষারবাবু নন, মনে রাখিস আমাদের পলিটিশিয়ানদের অনেকেই এর শিকার। আমি ধরে ধরে এরকম বেশ কয়েকজন পলিটিশিয়ানের নাম বলে দিতে পারি। বিশেষত দিল্লি আর ব্যাঙ্গালোরের। আর আনন্দের মত এরকম অল্পবয়সী, আকর্ষক ছেলেরা এইসব হাই এন্ড ক্লায়েন্টদের গোপনে সার্ভিস দেয়, ফর সাম ক্যুইক ক্যাশ। অল গোজ ওয়েল যতক্ষণ না কোনও গোপন ক্যামেরায় কিছু রেকর্ড হয়ে যায়।” ... ...
প্রফুল্লচন্দ্রের রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে ব্যস্ত অধ্যায় ছিল খুলনার দুর্ভিক্ষ, উত্তরবঙ্গের বন্যায় কংগ্রেসের হয়ে সেবাকার্যে প্রবেশ করা। সুভাষচন্দ্র বসু প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ায়, এই সেবাকার্যের মূল দায়িত্ব প্রফুল্লচন্দ্রের উপর আসে। তিনি মন্তব্য করেন যে এর মাধ্যমে কংগ্রেস বাংলার সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারবে এবং ভোটদেওয়া হোক বা আন্দোলন হোক, এই জনসাধারণ ‘গান্ধী মহারাজের’ শিষ্যদের হাত ছাড়বে না। এর পাশাপাশি তিনি এও দেখেন, যে এই সব দুর্গতিই সরকারি নীতির প্রত্যক্ষ ফল। যেমন, রেলের জন্য অবিবেচনাপ্রসূত বাঁধ দেওয়া বন্যার জলকে নামতে দিচ্ছে না। সাধারণ মানুষ তাঁদের প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতায় এই সমস্যাগুলি বোঝেন, কিন্তু হোয়াইট ম্যানস বার্ডেন কাঁধে নেওয়া সরকারি অফিসাররা বোঝেন উল্টোটা। গ্রামের নিজস্ব সামাজিক সংগঠন ভেঙে যাওয়াই এই বিভিন্ন দুর্গতির পিছনে একটা বড় কারণ হিসেবে তিনি চিহ্নিত করেন। এবং সেই সংগঠনের উপর জোর দেওয়া, কংগ্রেসের কর্মসূচীর মূল ফোকাসে গ্রামপুনর্গঠনের কাজকে গুরুত্ব দেওয়া, ইত্যাদির উপর তিনি জোর দেন। হিন্দু-মুসলিম বৈরিতার সমাধানের পথও এর মধ্যে তিনি দেখতে পান। আসলে, গান্ধি-রাজনীতি বলতে আমরা যা বুঝি, তার একজন চ্যাম্পিয়ন ছিলেন প্রফুল্লচন্দ্র। গান্ধিজি প্রচারের জন্য, আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য যে যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তার অনেকগুলিকে বৈজ্ঞানিকের অনুসন্ধিৎসা দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র। এর একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ আত্মচরিতে চরকা বিষয়ক অনুচ্ছেদটি। চরকা এমন এক প্রশ্ন, যেখানে জাতীয়তাবাদী বিজ্ঞানী প্রফুল্লচন্দ্র বিশ্বমানবতাপন্থী সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথকে রেহাই দেন নি। চরকা-খদ্দরে অনাস্থাশীল কবি প্রফুল্লচন্দ্রের পত্রাঘাতের উত্তরেই চরকার সমালোচনায় নিয়ে তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধটি লেখেন। কিন্তু, রবীন্দ্রনাথের চরকা-স্মালোচনা যেখানে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের, মুক্ত মানবতার প্রশ্নে, প্রফুল্লচন্দ্রের আত্মচরিতের চরকা অধ্যায়টি বস্তুনিষ্ঠ। ... ...