মোদী ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের এ এক অসীম লজ্জা ও অপমানের প্রহর। কারণ কৃষকের দাবি যে মূহুর্তে মেনে নেওয়া হল, সেই মুহূর্তেই এই চরম প্রতিক্রিয়াশীল সরকারকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার ইষ্টমন্ত্র – নয়া উদারবাদের বিরুদ্ধে যেতে হল। তাকে প্রকারান্তরে বুঝিয়ে দিতে হল, সে কার পক্ষে – আন্তর্জাতিক বৃহৎ ব্যবসার, নাকি দেশীয় মার-খাওয়া কৃষকের। আপাতত বাধ্য হয়ে সে কৃষকের – ভবিষ্যতের কোনো ষড়যন্ত্র যদি না পাশা উলটে দেয়। ... ...
সুমনের কোন গন্ধবাতিক নেই। যেখানে সেখানে যে কোন গন্ধ তার নাকে লাগে না। বিশেষত যে গন্ধ যেখানে লাগবার কোনো প্রশ্নই উঠে না। ভালো কিংবা মন্দ হোক যে কোন রকম। গন্ধ তার প্রাত্যহিকতাকে কোনো ভাবেই প্রভাবিত করে না। গন্ধকে প্রিয় কিংবা অপ্রিয় কোনো সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করার বাতিক ও তার নাই, যেমন ছিল দুলালের। দুনিয়ার তাবৎ ভালো গন্ধকেই তার লাগতো হাসনাহেনা ফুলের মতো। কিন্তু এই ঝামেলা সুমনের নাই, পাশের দোতালা বাসায় পোলাও রান্না হলে ঘি গরম মশলা ফোড়নের গন্ধই নাকে লাগে তার, মেসে শুঁটকি রান্না হলে শুঁটকির। রোজ রাতে মধুবন রেস্তোঁরার পাশ দিয়ে ফেরার সময় ড্রেনে জমে পচে উঠা বাসি খাবারের নাড়ি-ভুড়ি উল্টে আসা গন্ধ আর বারান্দায় শিককাবাব ভাজার পেটের তীব্র ক্ষুধা জাগিয়ে দেয়া গন্ধ মিলেমিশে যে খানিক গন্ধময় ঘোর তৈরি করে তার ক্লান্ত ক্ষুধার্ত শ্রান্ত দেহ ঘিরে, তাও খুব স্বাভাবিকই বোধ হয় সুমনের। মোটেই তা বাতিকগ্রস্ততার পর্যায়ে পড়ে না। কিন্তু আজ ২৫ মাইল সি এন জি চালিত যান আর বর্ষার কাদা প্যাচপ্যাচে রাস্তায় ১০ মাইল রিক্সায় আদিত্যপুর গ্রামে দুলালের বাড়িতে পৌঁছে প্রথমেই তার চোখ যায় বাড়ির শেষ মাথায়। ... ...
মূল শিল্পীর অনুষ্ঠানে জাঁকজমক এবং শব্দের মাত্রা আরো কয়েককাঠি ওপরে। কেউ যে নিজের গাওয়া অত্যন্ত বিখ্যাত কিছু গানের পিণ্ডি এইভাবে চটকাতে পারেন—তা না শুনলে বিশ্বাস হওয়ার কথা নয়। শিল্পীর যত না গানে মনোযোগ, তার কয়েকগুণ বেশি মনোযোগ কেশসজ্জায় কিংবা লাফালাফিতে। তবে যে পুজোর যা মন্ত্র—যেরকম মাল দু-তিন কোটি টাকায় বিক্রি হবে, গায়ক তো তেমন জিনিসই উপহার দেবেন। সুরমণ্ডল সহযোগে সঠিক সুরে গাওয়া গানের দাম যদি দু্-তিন কোটির সামান্য ভগ্নাংশ মাত্র হয় (এবং তাও যদি সঠিক সময়ে না পাওয়া যায়), তবে কর্কশ চেঁচামেচির রাস্তা বেছে নেওয়াই ভালো। ... ...
' উচ্চবর্ণে জন্ম নেওয়া শিশুর মনেও শৈশব থেকেই ঢুকিয়ে দেওয়া হয় এই ধারণা যে দলিত মানেই 'নির্বোধ', 'বোধবুদ্ধি হীন', 'অযোগ্য', 'অকর্মণ্য'! 'আমাদের জেনারেলদের সব চাকরি ওরাই খেয়ে নিলো'! আর, মুসলমান মানেই 'নোংরা', 'নৃশংস', 'হিংস্র', 'মীরজাফরের জাত', 'পাকিস্তানী', 'দেশদ্রোহী', ' সন্ত্রাসবাদী'...! 'মুসলমান মানেই চারটে বিয়ে আর গন্ডা গন্ডা বাচ্চা!' দলিত এবং মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ সম্পর্কে এইসব ধারণাও ওই সাদা চামড়ার মানুষদের মতোই আমাদের 'উচ্চবর্ণের' বড় অংশের মানুষের মধ্যে বংশপরম্পরায় প্রবাহিত! এইসব ধারণা থেকে মুক্ত নন তথাকথিত 'শিক্ষিত' কিংবা 'বাম-মনস্ক' বহু মানুষও! ... ...
ব্রিজভূষণ উত্তর প্রদেশের গোন্ডা জেলার কাইজারগঞ্জ থেকে শাসকদলের সাংসদ। কুস্তি নিয়ে বরাবরের একটা আগ্রহ ছিল, তাই বিভিন্ন আখড়ায় স্থানীয় কুস্তির প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে করতে সর্বভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি হয়ে গেছেন সে প্রায় এক দশক হল। তবে তাঁর বায়োডেটার দুটি উল্লেখযোগ্য অঙ্গ হল, ১৯৯২তে দায়ুদ ইব্রাহিমকে সাহায্য করার অভিযোগে টাডায় গ্রেফতার হন, ছাড়া পান ১৯৯৯তে। আর অবশ্যই বাবরি মসজিদ ধ্বংসের অভিযোগে সিবিআই দ্বারা অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত। যদিও ২০২০তে সুপ্রিম কোর্ট থেকে ক্লিন চিট পেয়ে গেছেন। তবুও অভিযোগগুলো ছিল। ... ...
অর্থবল, মিথ্যাচার শেষ হাসি হাসবে নাকি আমাদের ভাষা, প্রগতিশীল ঐতিহ্যের, সহাবস্থানের অহংকার, আমাদের শিরদাঁড়া সোজা হবার পথ বেছে নেবে, তা সময়ে বোঝা যাবে, তবে দেশ জুড়ে বিজেপির পরাক্রমের তত্ত্ব খ্যাখ্যা হাস্যরবে পরিত্যাগ করুন। আর বিজেপি (আদি) ও বিজেপি (নব্য) সততার দাবি করলে, কাটমানির দুঃখ ভোলার জন্য তিনদিন বিশ্রাম নিয়ে, অট্টহাস্যের সঙ্গী উপযুক্ত ঘোড়া ভাড়ায় পেতে ময়দানে, ভিক্টোরিয়ার সামনে থেকে ঘুরে আসুন। ... ...
প্রান্তিক কৃষকেরা মোটেই এই লড়াইয়ের মুখ্য অংশ নন। এই যুদ্ধ একচেটিয়া পুঁজির বিরুদ্ধে সম্পন্ন কৃষক এবং মধ্যস্বত্বভোগী মাঝারি পুঁজির। অর্থাৎ সরকারের কাছে ঋণ নেওয়া দু-একজন লক্ষ কোটি টাকার মালিক এক দিকে, আর সরকারি সহায়তা পাওয়া কয়েক লক্ষ জন লক্ষ বা কোটি টাকার মালিক অন্যদিকে। সুতরাং সারা দেশের কৃষক আন্দোলন হিসেবে এই লড়াইকে অভিহিত করা শক্ত। ... ...
Tame birds sing of freedom, wild birds fly.... হাওয়াবিহীন দিনগুলিতে আকাশকে চুপসানো বেলুনের খণ্ড মনে হয় - ফ্রেমে আটকানো; যেদিন বাতাস ওঠে, নীল বেলুনের টুকরো ঢাউস শামিয়ানা হয়ে উড়তে থাকে, মেঘ আর ডানারা মোটিফ তৈরি করে - সাদা কালো লাল নীল মেঘ ছেনে ছোটো ডিঙি, বড় বড় পালতোলা নৌকো, বিশাল সব দুর্গ, হাতি, উট আর বুড়ো মানুষ। তার ওপর ঘুড়িরা লাট খায়, জেট চলে যাওয়ার ঘন সাদা লাইন ফিকে হতে হতেই একগুঁয়ে উড়োজাহাজরা উড়ে যায় আচমকা। পাখিরা চক্কর কাটে আর চক্কর কাটে, শেপ ফর্ম করে - ভি, ওয়াই, এম, এ, ডব্লিউ; কখনও তারা মানুষের কাছাকাছি নেমে আসে এমন, যেন ডানার কথা ভুলেই গিয়েছে। ঘাসের ওপর শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখি- ডান হাত মাথার নিচে, বাঁ হাত শুরু হয়েই শেষ হয়ে গিয়েছে, কাঁধের খুব কাছেই চেটো- তাতে তিনটে আঙুল। যেন ডানা। আমি হৃদয়রাম, পঁয়ত্রিশ বছরের এক্ট্রোড্যাকটাইলি পেশেন্ট। উড়তে পারি না অথচ বাঁ কাঁধে কারো হাত ঠেকলে খাঁচায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় পাই। আসলে এ'সবই ডানার গল্প। ... ...
গতবারে করোনার কারণে গাজন হয় নি, সব লকডাউন ছিল। কেবল মাত্র টিম টিম করে দুজন সন্ন্যাসী হতে হয় বলে হয়েছিল – এটা নাকি নিয়ম, যাদের বলা হল নীলে আর মূলে। তো গতবার গাজনের চারদিনের দুদিন রাতে বিশাল ঝড়ে কারেন্ট ইত্যাদি ছিল না, আর এদিকে জমকালো উৎসব হচ্ছে না বলে জেনারেটর ভাড়া করা হয় নি। ফলে ওই দুই সন্ন্যাসী, বিটু আর উদয় ঘুটঘুটি অন্ধকারে শিবতলায় শুয়ে ছিল প্রবল গরমে আর বিশাল মশার কামড় খেয়ে। মশার কামড় খেয়ে এত খিস্তি দিচ্ছিল দুজনে শিবদুয়ারে যে সেই খিস্তি রাতের বেলায় নিঃস্তব্ধতার জন্য বহুদূর শোনা যাচ্ছিল। কোন এক গুরুজন থাকতে না পেরে নাকি বলতে এসেছিল, “এই তোরা সন্ন্যাসী হয়ে ঠাকুর দুয়ারে বসে এত মুখ খারাপ করছিস, এই চারটে দিন মুখ খারাপ না করলেই কি নয়! ... ...
আমার একটা বিশ্বাস আছে। তাকে আমি সত্য মনে করি। সত্য আপেক্ষিক হলেও, এই সত্যে পৌঁছতে পেরেছি আমি। একে ধরে থাকি। ক্ষমতাকে মনে করি অন্ধকারের পথে যাত্রা। ছিল না, তাই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পেরেছি হয়ত। সিভিল সার্ভিসে না যাওয়াও তাই হয়ত। ধ্রুবপুত্র উপন্যাস এই কথাই বলেছে শেষ পর্যন্ত। বুদ্ধের দর্শন তাইই ছিল। নিজেকে নিঃশেষ করতে করতে, শূন্যের কাছে আত্মসমর্পণ। ‘হে নবীন সন্ন্যাসী’ উপন্যাসটি সেই কথা বলতে চেয়েছে। আমি কলহ করি। সুনাম আছে। কিন্তু যখন বুঝি ভুল হয়েছে, আবার এগিয়ে যাই। হে বন্ধু, কাছে এস, হাত ধরো। বন্ধুদের অনেকে ফেরে। ফেরেও না দেখেছি। না ফিরে অপমানও করেছে সত্য। ... ...
দিন যায়, কাল যায়। ঢেউ ওঠে, ঢেউ পড়ে। চোখের ভুল সবটাই। কেউই যায়না কোত্থাও। দিন, মাস, বছর, জীবন, জোয়ার, ভাঁটা। সবকিছু চোখের ভুল। মনের ভুল। অন্ধ মানুষ কী দেখে কী ভাবে। হয় এক, মানুষগুলো বোঝে আরেক। বোকা মানুষ সব। বোকা নাহলে কেউ সুখ খোঁজে? সুখ জিনিষটা কিনতে প্রচুর দাম দিতে হয়। এমনি এমনিইই পাওয়া যাবেনা কিছুতেই। অ-নে-ক দাম। অথচ মজা এমন, যা দিয়ে তুমি দাম দেবে সেই জিনিষটা মিনিমাগনায় সারাক্ষণ এসে পড়ছে তোমার কাছে। সুখ কিনতে হয় দুঃখ দিয়ে। যন্ত্রনা দিয়েও পাওয়া যায়। কান্না দিয়ে। সেগুলো বিনি পয়সায় ঢের করে পাবে তুমি। নিয়ে যেও সুখ কিনতে। যদি সে বাজারের ঠিকানা জানা থাকে। দুঃখ এসে ওর সব কিছু উজাড় করে দেয় আমার কাছে। নিঃশেষে। আমার শরীর, মন, সত্বা, তারও আড়ালে আরো যা কিছু অদেখা হয়ে রয়েছে, সব কানায় কানায় ভরিয়ে দেয় দুঃখ। অকূল দুঃখ। আকূল। ... ...
২৫ শে জানুয়ারি, মঙ্গলবারের আনন্দ বাজার পত্রিকার প্রথম পাতায় স্কুল খোলা সংক্রান্ত বিষয়ে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য পড়ার পর প্রাণে ঠান্ডা বাতাস লাগলো, মনে আনন্দের জোয়ার উঠলো। নিন্দুকেরা অনেক তেরা বেঁকা কথা বলছেন বটে, যেমন তাঁরা বলেই থাকেন। সেই নিন্দুকদের বিরুদ্ধেই এই প্রচেষ্টা। এক এক করে আসি? ... ...
ধন্য খিচুড়ি। চাল-ডালের কিংবা বাজরার, নাকি তিলের? নিরামিষ বা আমিষ, হিন্দু নৈবেদ্য, জৈন মহাপণ্ডিতের শাস্ত্র, বৌদ্ধ মঠের অনুশাসন, মুসলমান বাদশাহি মহল-ই-খুরাক পাজ়ি, চিকিৎসকের ভেষজালয়, অকিঞ্চনের হেঁশেল, ভোজের একান্ন পাত—সর্বত্র বিরাজমান এ পাকোয়ানে কী বিপুল বৈচিত্র্যে আমরা ভারতবাসীরা যুগে যুগে একাত্ম হলাম! সে এক মহারহস্য বটে… কম রঙিন নয় কালাপানি পার করে তার বিলেত মায় মিশর পাড়ির কিস্সা। শুরু হল খিচুড়ি মহারহস্য অ্যাডভেঞ্চার। নীলাঞ্জন হাজরা। ... ...
হস্তিমূর্খের চোখের উপরেই কত কি বদলে গেল! বিমানবন্দরের ভোরের ব্যস্ততাটাও কেমন এখন অন্য রকম লাগে। ... ...
আমরা কাকের ডাক শুনছি। আমি আর ঝুনু। আর কোনো পাখি নেই, একটাই কাক কেবল কাঁটা কুলগাছের ডালে। ছাদের কার্নিসে বসে দু’জন তাকিয়ে আছি পশ্চিম আকাশের দিকে। গাঁথনি করা দুটো ফ্ল্যাটবাড়ির তরতর উঠে যাওয়ার ফাঁকে খণ্ড আকাশ, কয়েকটা লাল আঁচড় তার গায়ে। এত মন দিয়ে আমরা শেষ কবে কাকের ডাক শুনেছি? কাকটা একবার করে ডাকছে, পরের ডাকের আগে এক দীর্ঘ নিশ্চুপ। সেই স্তব্ধ আমাদের ভেতর অস্থির করছে। আমি একটা খুন করতে যাচ্ছি। ... ...
প্রতীককে একটি সংক্ষিপ্ত চিঠি ধরিয়ে তাতে সই করে দিতে বলা হয়। চিঠিতে লেখা আছে ‘ব্যক্তিগত কারণে প্রতীক সান্যাল আজ এই মুহূর্তে এই সংস্থা থেকে পদত্যাগ করছে’। প্রতীকের বিভ্রান্ত মুখ দেখে উপস্থিত দুজনের একজন বলেন, কোভিডজনিত কারণে সংস্থার ব্যবসায় মন্দা দেখা দেওয়ায় তাঁরা প্রতীককে আর রাখতে পারছেন না। ... ...
কাজে লাগে না বলে সাধারণ চাকুরিজীবী মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত যখন নিজের সংস্কৃতিকে বাতিলই করে দিয়েছেন তখন আর ভয় কী? ছেলেমেয়েকে বাংলা বই পড়ানো দূরে থাক, বাংলা টিভি চ্যানেল পর্যন্ত দেখতে বারণ করেছেন। তা কেন্দ্রীয় সরকার আর আপনার হিন্দিভাষী প্রতিবেশীরা যদি বাংলা বলাটুকুও বন্ধ করে দেন, সে তো ভালই, তাই না? আসলে এত দিনে মাথায় ঢুকেছে যে শক্তিশালী জাতিবিদ্বেষী যখন মারতে আসে তখন স্রেফ নামটা দেখেই মারে। ... ...
খাপ পঞ্চায়েত প্রেম, বিয়ে, জাতপাত, নারী বিষয়ক অবস্থান থেকে সরে খানিক অন্য ধারণায় উপনীত হবে কিনা আড্ডা আর সেদিকে গড়ায় না। নওদীপ ঘুম থেকে উঠে আমাদের মাঝে এসে বসে। ওকে নিয়ে ‘সাথী’রা রসিকতা করতে থাকে, ‘হামারে নওদীপ সেলিব্রিটি বন গ্যায়ি।’ সবাই মিলে হো হো হেসে ওঠে। নওদীপ–এর হাসিতে মিশে থাকে লাজুক আভা। ... ...
রবিবুড়োর ডাকঘর থেকে একটা ছোট অংশ ছিল আমাদের পাঠ্যবইয়ে, অমল ও দইওআলা শিরোনামে। দিদিমণিরা সেটাই বেছে নিলেন মঞ্চস্থ করার জন্য। সম্ভবত: প্রচুর পটর-পটর করার যোগ্যতায় আমি মনোনীত হলাম অমল-এর ভূমিকায়। চতুর্থ শ্রেণীর এক শ্রীমান হল দইওআলা।সেই প্রথম জেনেছিলাম রিহার্সাল কাকে বলে। শেষ ক্লাস-এর পরে শুরু হত। ভাল লাগত, তবে একটু ক্লান্ত হয়ে যেতাম – আমার তো কবে সব মুখস্ত হয়ে গেছে, ভাব ভঙ্গী সহ! দিদিমণিরা মাঝে মাঝে আলোচনা করতেন কেমন করে মঞ্চসজ্জা করলে বা আর কি কি করলে নাটকটা একেবারে সত্যির মত করে তোলা যায়। সেই সব কিছু কিছু শুনে আমার ধারণা হয়েছিল যে আসল অনুষ্ঠানের দিন আমাকে দইওআলা ছেলেটির হাত দিয়ে একটা সত্যি দই-য়ের ভাঁড় দেওয়া হবে। আমার কাছে নাটকের আসল আকর্ষণ ছিল সেটা এবং সেই নিয়ে ভিতরে ভিতরে খুব উৎফুল্ল থাকতাম। ... ...
যেহেতু লঘু-গুরুর প্রসঙ্গ হাঁটি-হাঁটি-পা-পা করে এসে থেবড়ে বসেই পড়ল, তখন বলেই ফেলি, অফিস- কাছারিতে একটা দিনও যে ঈদের জন্য বরাদ্দ নেই (ফ্লেক্সি আছে খালি) - এইটা সারারাত পুজোয় ঘুরে রোল-বিরিয়ানি-আইসক্রিম-চাউমিন-ফুচকা একসাথে হজম করার থেকেও সত্যি বেশ কষ্টকর। শুধু এটুকুই 'অভিযোগ' ভেবে যেসব চরমপন্থী হনুর আঁতে হওয়া ঘা'য়ে কয়েক চিমটে নুন পড়ে গেছে বলে রে-রে করতে আসবেন ভেবে আস্তিন গুটাচ্ছেন, তাদের বলি, বাংলাদেশে এই লঘু-গুরুর হিসেবটা এ বঙ্গদেশের মাপে এক্কেরে লুডোর গুটি - ছক্কা আর পুঁটের মাপজোখ : সেখানে পুজোর বদলে তাই ঈদসংখ্যা বেরোয়, তিনদিন ছুটি বরাদ্দ, সাথে টিভিতে বিশেষ অনুষ্ঠান এবং 'দ্য কাউন্টডাউন বিগিন্স' জাস্ট লাইক বঙ্গদেশের পুজো। কিন্তু তবুও ঈদ, দুর্গাপুজোর মতো 'সার্বজনীন' হয়ে উঠতে পারেনি ধর্মীয় বেড়াজালে অক্সিজেন লেভেল কমিয়ে। ... ...