পপুলার ছবি, তার জন্মলগ্ন থেকেই, দায় নিয়েছে ভারতের অতি-জটিল রাজনীতির মুখ্য প্রবক্তা হবার, আবার সে রাজনীতির বিনোদনের যোগান দেবারও বটে।ভারতীয় রাজনীতি-- এবং তার বিনোদনের চাহিদা-- পালটায় প্রতি দশকে, পালটায় তার জননীতি, জনসমর্থন এবং অনুভাগগুলি। সংস্কৃতির এক বিচিত্র নিয়মে অন্তত পঞ্চাশের দশক থেকেই হিন্দি ছবি তাল মিলিয়ে চলছে এই পরিবর্তনশীলতার সঙ্গে। একে শুধু রাষ্ট্রীয় রাজনীতির অনুগমন বললে ভুল হবে, বরং হিন্দি ছবির রূপান্তর অনেকসময়েই তার সহোদরা-- দেশীয় রাজনীতির সাথে সম্পূর্ণ সমান্তরাল, কখনও কখনও মাসেরও বিলম্ব হয় না, উনিশশো পঁচাত্তরের জরুরী অবস্থার (জুন) বজ্রনির্ঘোষের ক’মাস আগে পরের মধ্যে রিলিজ করে যায় ‘দিওয়ার’ (জানুয়ারী) এবং ‘শোলে’ (অগস্ট)। দুটি ছবিই প্রবল প্রতিষ্ঠানবিরোধী এবং ভিজিল্যান্টিজমের সমর্থক; একপাশে দস্যুরূপী অসুরদলনের রূপকথা, অন্যদিকে সমসাময়িক ধূমায়িত গণ-অসন্তোষের আগুনে হাত সেঁকা। গব্বর সিং আপাত-অরাজনৈতিক, কিন্তু সে কী সত্তরের ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রশক্তির প্রতিভূ নয়? ... ...
আমার মনে হয় ২০২০ দেখে আমরা বুঝতে পারি মানুষ ইচ্ছে করলে কঠিন সময়েও প্রায় সব কিছু করতে পারে। ... ...
আমি বর্তমান শাসককে মহম্মদ বিন তুঘলকের সঙ্গে তুলনা করতে চাই না, কারণ পরবর্তীতে ইতিহাসচর্চা দেখিয়ে দিয়েছে তুঘলক প্রজারঞ্জক ছিলেন। তার সমস্ত কল্যাণমুখী কার্যকলাপ নষ্ট হয়ে যায় যত না তাঁর অদূরদর্শিতায়, তার থেকে বেশি অন্য অন্য কারণে, যার মধ্যে সুলতানের মন্দভাগ্যও একটি। আমাদের বর্তমান শাসক তুলনাহীন, একমেব অদ্বিতীয়ম ! নোটবন্দীর সময়ের কথা মনে আছে তো ? কিরকম হাহাকার পড়ে গেছিল চারদিকে ? সবচেয়ে বেশি অসুবিধেয় পড়েছিল এই গরীবগুর্বোরাই, যারা এখন প্রাণ হাতে করে পথ হাঁটছে। রুজি হারিয়ে অনাহারক্লিষ্ট তাদের কান্না এখনো কানে বাজে। ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়েই ঢলে পড়েছে কতো লোক। এবার আবার এই লকডাউন। ... ...
একই জিরা,ধনে,লংকা,হলুদ (একটু গ্যাপ দিয়ে পড়বেন প্লীজ) ঐ সব দিয়ে একই ঘ্যাঁট রেঁধেছি আর খেয়েছি- দিনের পর দিন। তা ও ভালো ইউ টিউব আসায় গুল তাপ্পি মারা সহজ হয়েছে। কিন্তু মাসের পর মাস - কতোই বা লিখবো? সুবিধের মধ্যে এই, যে আপনেরাও বিশেষ পড়েন টড়েন না। তা ও, কথা যখন দিইছি, তখন লিখবোই। এইবারের থিম হচ্ছে "হারিয়ে যাওয়া খাবার"। জানেননি তো, যাদের আর কিছু নেই, তাদের নস্টালজিয়াই সম্বল। ... ...
হিলগার্ড আর ওয়াইৎসেনহফার তৈরি করেন স্ট্যানফোর্ড হিপনোটিক সাসেপটিবিলিটি স্কেল। তাঁরা দেখেন মোটের ওপর ৮-১০% জনতা আছে, যারা হাইলি হিপনোটাইজেবল। ৮৪-৮৮% মডারেট আর ৪-৬% লো। ওই হাই এবং কিছু মডারেট লোকের মধ্যেই সেই বৈশিষ্ট্যাবলী আছে যাতে তারা খুব সহজে হিপনোটাইজড হতে পারে, এবং তাদের ক্ষেত্রেই হিপনোসিস খুব কার্যকরী চিকিৎসাপদ্ধতি হতে পারে কিছু কিছু রোগের জন্য। তাঁরা আরো দেখলেন যে এই বৈশিষ্ট্যগুলোও স্ট্যাটিক না, বয়সের সাথে একটু আধটু পাল্টায়। সাধারণত ৯-১২ বছর বয়সের জনতা যারা বেশি কল্পনাপ্রবণ, ফ্যান্টাসিতে থাকে, এবং যাদের কনক্রিট অপারেশনাল থিঙ্কিং তৈরি হচ্ছে, তারা বেস্ট ক্যান্ডিডেট। মজার ব্যাপার, সাময়িকভাবে এলেসডি বা এমডিএমএ জাতীয় ড্রাগ বা সেনসরি ডিপ্রাইভেশন কিছুক্ষণের জন্য এই হিপনোটাইজেবিলিটি বাড়িয়ে দিতে পারে, যদিও সেটা বেশিক্ষণ টেকে না। আর হ্যাঁ, কোন ধরনের লোক সহজে হিপনোটাইজড হবে আন্দাজ করার কোনো নিখুঁত রুল অব থাম্ব নেই, মোটামুটি মনোসংযোগদক্ষতা, একাগ্রতা, কল্পনাপ্রবণ ও অনুভূতিপ্রবণ মানুষের সম্ভাবনা বেশি থাকে। আমার সামনের লোকটি হাই হিপনোটাইজার কি না, তা বোঝার স্কেল থাকে, এবং সাধারণত তা বোঝার পর হাই জনতাদেরই হিপনোসিস অফার করা হয় চিকিৎসার ক্ষেত্রে। পাতি লক্ষ্মণবিচার আর কি। সেইসব টেল টেল সাইন দেখে বোঝার চেষ্টা করা হয় সামনের ইনি সেই গিফটেড ৮% এর মধ্যে পড়েন কিনা। মার্কিনীরা সেইসব লিস্টির গালভরা নাম দিয়েছে - "হিপনোসিস ইন্ডাকশন প্রোফাইল", " স্ট্যানফোর্ড হিপনোটিক সাসেপটিবিলিটি স্কেল", "হার্ভার্ড গ্রুপ স্কেল অব হিপনোটিক সাসেপটিবিলিটি", "বারবার সাজেস্টিবিলিটি স্কেল" ইত্যাকার। এর মধ্যে ঐ হিপনোসিস ইন্ডাকশন প্রোফাইলটায় তো মাথার ওপর দিকে তাকাতে বলে চোখে স্ক্লেরার ভিজিবিলিটি দেখেই কিসব বোঝা যায় বলে দাবী করে। আর তার মেডিক্যাল ব্যাখ্যাওয়ালা হাইপোথিসিস রয়েছে গুটিকয়, যদিও এভিডেন্স বেসড নয়। সবার ওপরে, যিনি করবেন, তাঁর মানুষ চেনার এতদিনের অভিজ্ঞতা। ... ...
জামাইসুলভ তমুকবাবু পরপর এত পোলাও কালিয়া খেয়ে একেবারে গলদঘর্ম হয়ে গেছিলেন। তিনি সকাল থেকেই মুখিয়ে আছেন নতুন কিছু খাবেন। বিলেতে থেকে স্যুপ আর সেদ্ধ মাংস, স্যালাড খেয়ে অভ্যেস হয়েছে তাঁর। এইবার রাত্রিবেলা আসনপিঁড়ি করে তাঁকে খেতে বসানো হয়েছে। বাঙালি মাত্রেই জানেন যে পান্তা কখনো ডাইনিং টেবলে বসে খাওয়া যায়না। রাজস্থানের গাঁয়েঘরে একটা রীতি আছে। ঘোর গরমের দুপুরে শুধু কাঁচা পেঁয়াজ খেতে হয়। কিন্ত সেটা খেতে হবে ক্ষেতের পাশে বসে। দুইহাতের মধ্যে পেঁয়াজ নিয়ে এমনভাবে তাকে থ্যাঁৎলাতে হবে যে শুধু পেঁয়াজ আর রুটি মনে হবে অমৃত। কিন্ত ঐ পেঁয়াজ ঘরে বসে খেলে স্বাদ নেই। অবশ্যই থ্যাঁৎলানোর মারপ্যাঁচ আছে। ওমনি পান্তা রাখার ও মাখার জন্য হাত ও মারপ্যাঁচ জানা চাই। আর ফটফটে পরিষ্কার মেঝে চাই। ... ...
চাঁদপানা মেয়েটি আজ হাওয়াইয়ান ব্রিজ ও ল্যাভেন্ডারের মিশ্র সুবাস পরে এসেছে। এই সুবাস তৈরি হয়েছে বহুদূরের এক সমুদ্রশহরে ... ...
লোকটা হাত নেড়ে বলে, বাতাস না, বাতাস না—ওসব হল গুহ্য কথা—বুঝলেন কিনা! কানের পাশ দিয়ে ফিসফিস করে বয় আর বলে যায়, সাবধান, সাবধান! লোকটা চোয়াল শক্ত করে বলে, হোমে দুটি ছেলে থাকে না? মাজু আর কেল্টু? হারামির হাড় একটা! এই তো সেদিন এদিকের পরিচিত পাগল, নিত্যকে পিটিয়ে মেরে দিল—কেউ কিছু করল না, জানল না, বুঝল না—মেরে খালের জলে ভাসিয়ে দিল দেহ—গুহ্যকথা, গুহ্যকথা! ... ...
আমি যেদিন তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম বরিশালের যোগেন মণ্ডলে, বরিশাল কেন রাখলেন? তিনি তো বরিশালে সীমাবদ্ধ ছিলেন না। জটিল সাহিত্যবোধে, অনেক গভীরতর কথা বলা যেতো, কিন্তু দেবেশ রায় প্রথমেই বললেন তখনকার সময়ে জায়গার নাম দিয়েই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষ চেনানো হতো। যেমন বরিশালের যোগেন মন্ডল, তিস্তাপারের বাঘারু , জলপাইগুড়ির দেবেশ এরকম। এর বেশি কোন কারণ তখন আমার মাথায় ছিলনা। আমার মাথায় ছিল একটা ঘোর, যে ঘোরে আচ্ছন্ন হয়ে আমি দিস্তার পর দিস্তা বরিশালের যোগেন মন্ডল লিখেছি, শুধু প্রাকৃতিক কর্ম ছাড়া লেখা থেকে চোখ সরাইনি। অসুস্থ হয়ে পড়তাম, একটু সুস্থ হয়ে আবার লিখতে বসতাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম ঐরকম একটা জায়গায় যেখানে যোগেন মন্ডল পাড়ি দিচ্ছেন পাকিস্তানে, সেখানে বইটা শেষ করলেন কেন? তাঁর উত্তর ছিল, আমি শুধু ঐটুকুই বলতে চেয়েছি। তার পরের অংশে আমার কোন আগ্রহ বা দায়িত্ব নেই। আমি তো ইতিহাস লিখছি না উপন্যাস লিখছি। ... ...
২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দ্বারা প্রকাশিত জনসংখ্যা সম্পর্কিত পূর্বাভাসের দলিলটি এই দুই মুখ্যমন্ত্রী বা তাদের উপদেষ্টারা কেউই পড়ে দেখা জরুরি মনে করেননি বলেই মনে হয়। এই দলিল অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে উত্তরপ্রদেশের জন্মহার (১৫-৪৯ বছর মহিলাদের গড় সন্তানের সংখ্যা) স্বাভাবিকভাবেই “প্রতিস্থাপনযোগ্য জন্মহার”-এ (যেই জন্মহার দেশে বা রাজ্যে স্থাপিত হলে জনসংখ্যার বৃদ্ধি স্থিতিশীল হয়), অর্থাৎ, প্রতি মহিলার গড়ে ২.১ সন্তান থাকবে। আর আসামের ক্ষেত্রে ২০২০ সালেই সেই হারে পৌঁছে যাওয়া গেছে। তাহলে আসামে যদি সেই হার ইতিমধ্যেই অর্জিত হয়ে গিয়ে থাকে এবং উত্তরপ্রদেশেও ২০২৫ এর মধ্যে এমনিতেই তা অর্জনের পূর্বানুমান রয়েছে, তাহলে হঠাৎ করে এই কঠোর জন্মনিয়ন্ত্রণ নীতির প্রয়োগের কারণ কী? ... ...
বড় লম্বা উঁচু পাঁচিলটাকে দেখলে মনে হয় প্রেসিডেন্সি জেল। টুকনু প্রেসিডেন্সি জেলের কথা কী করে জেনেছে সেটা তাকেই জিজ্ঞেস করো বরং। সেই পাঁচিলের গা বেয়ে যেটুকু রোদ এসে পড়েছে সেই রোদে একটু একটু করে বসার জায়গা করে নেবে ওপার থেকে আসা মানুষ গুলো।দিদা নেই কাজেই বড়দিনটা এই বালির বাড়িতেই কাটাতে হয়।টুকনুর এখন ক্লাস এইট। পাড়ার ছেলেদের সাথে ফিস্ট করতে যাওয়ার পারমিশান পাওয়া যায়নি বাড়ি থেকে।পাটিসাপটা নেই।একমাত্র ডাক্তার কাকিমা কিস্কু পাঠিয়েছেন বাড়িতে বানানো কেক।কয়েকটা চকলেট।সেই দিয়ে কিছুতেই মন ভরছে না।গোরা কাকুর চিলেকোঠায় গিয়ে বিস্তর নালিশ জানিয়েছে সে।এই নাকি তোমাদের সাম্যবাদী সমাজ? প্রত্যেকের সমান অধিকার?বাড়িতে আসলে টুকনুর কোন ভয়েজ নেই। কেউ শোনেনা তার কথা। “ওরা আমাদের গান গাইতে দেয় না...ভিয়েতসংগ্রামী পল রবসন...”।গোরাকাকু কিছু বলে না। ... ...
নীলাঞ্জন হাজরার ইরান ভ্রমণ। বইয়ের নাম ‘ইরানে’। ৯৫ পাতার বই। ছেপেছে দীপ প্রকাশন। ছবি, অলঙ্করণ, প্রচ্ছদ করেছেন হিরণ মিত্র। ... ...
পীরদিদি, কায়রুবুড়া, ধীরজুদাদা তিনজন হেঁটে আসছিল। তিনজন হাসছিল। তিনজনের হাতেই পাঁপড়ভাজা। পাঁপড়ভাজাগুলো হাতের চাপে ভেঙ্গে পড়ছিল, কিছু কিছু চলে যাচ্ছিল জিভের ডগায় সুস্বাদ জানিয়ে, যেন জীবনের সুখের দিনগুলো। মচমচে সহজেই ভাঙ্গে, অচিরেই গুঁড়িয়ে যায়। আজকে তলব বার। ভাষাতত্বের কি নিয়মে কে জানে সাপ্তাহিক বেতনকে বলে তলব। যে বারে সপ্তাহের বেতন হয় সেটা তলববার। খুশির দিন, সেদিন হাট বসে চা বাগানের মাঠে। মহানিমের ছায়ায় ছোট ছোট চালার নীচে কত কি রূপোর গয়না, গালার চুড়ি, পুঁতির মালা, মাছ, মাংস, সবজির পসরা। সবাই কিছু কিছু কিনবে। তারপর রাত হলে চাঁদের নিচে বা অন্ধকারের আঁচলের তলায় ভাতের পচুই কি মহুয়া। প্রথম নাচগান, তারপর মারপিট, কান্না, বিলাপ, শাপশাপান্ত, তারপর একঘুম, সব গ্লানি হজম। পরেরদিন ভরে আবার পাত্তিতোলা, ফ্যাকট্রিতে মেশিনের আওয়াজে আগুনের তাপে বিরাট কর্মযজ্ঞ ... ...
আমার নিজের জন্য কষ্ট হয় না। কষ্ট হয় সেইসব লোকদের জন্য, যারা নিজেদের জানা দুনিয়াটুকুর বাইরের কোনো কিছুকে বুঝতেই পারে না। অমুক অমুক লক্ষণ থাকলে ইনি পুরুষ, অমুক অমুক থাকলে ইনি নারী। খুব বেশি হলে উভলিঙ্গ অবধি বোঝা যায় (মেনে নেওয়া অবশ্য চলে না, তবু বোঝা যায়), ব্যস! আমার আয়নার মধ্যে একটা পুরো দুনিয়া আছে যেখানে জেন্ডার, বৃষ্টির পরের নরম আলোর মত অনেকগুলো রং ছুঁয়ে ছুঁয়ে যেতে পারে। আমার এই দুনিয়ায় ভালোবাসার জন্য আমাকে শুধু পুরুষে আবদ্ধ থাকতে হয় না, শুধু নারীতেও না। ভালোবাসা কোমল জলের মত আকার বদলাতে পারে অবিরত। আকৃতি, রূপ, সৌন্দর্য্য। রোদ্দুরের গুঁড়ো আর জলের কণা পলকে এক রং থেকে অন্য রঙে গড়িয়ে যেতে পারে। এই বেগুনি, এই নীল, এই সবুজ, কমলা, লাল। যারা চোখ বন্ধ করে রাখে, অসুবিধা তাদের। তাদের সাদাকালো, সীমাবদ্ধ দুনিয়ার কথা ভাবলে আমার কষ্ট হয়। ... ...
ভট্টাচার্য মশাই ভেতর থেকে একটা তলোয়ার নিয়ে আসেন। খুব ধারালো। খুব পুরোনো। তাতে প্রার্থনা খোদাই করা আছে। মিরকাশিমের তলোয়ার নাকি? কে জানে! এই ভাঙা মহল, ওই তীব্র বুনো গন্ধ, নেতিয়ে পড়া শিমুল, এলিয়ে থাকা সাপের খোলস, তার মধ্যেই উনি এনে দেখান এক সুন্দর বৌদ্ধ তারা মূর্তি। সন্ধে ঘন হচ্ছে জঙ্গলের মাথায়। হাতের কবজিতে তখনও লেগে আছে সকালের আতরের মৃদু গন্ধ। পথে ছোটে নবাবের সঙ্গে দেখা। বর্তমান নবারের ভাই। দুর্গা পুজো কমিটির সভাপতি। ভাগীরথীর ভরসন্ধ্যার বাতাস, পুরোনো হাভেলির সামনে চওড়া মাঠ। ... ...
সাত কি আট শতাব্দীর যে লিগ্যাসি আজ ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট-ময়মনসিংহ-বরিশালের রাস্তায় আগুন হয়ে জ্বলছে, সেই অগ্নি নির্বাপণের সদুত্তর আমাদের কারো কাছেই নেই। বাঙালীর প্রদোষকাল আজো শেষ হয় নি। শওকত আলী আমাদের সেই মহত্তম লেখকদের একজন যিনি শ্যামাঙ্গ ও লীলাবতীর এই সংলাপের ভেতর দিয়ে বর্তমান বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আত্ম-পরিচয়ের সঙ্কট তুলে ধরেছেন। এই বই দুই বাংলার বাঙালী হিন্দু ও বাঙালী মুসলিম উভয়ের অবশ্যপাঠ্য গ্রন্থ। বাঙালী মুসলিমের যে অংশ আজ এদেশকে আফগানিস্থান বানানোর স্বপ্নে দিশাহারা, তাকে পড়তে হবে আত্ম-পরিচয়ের প্রশ্নে। যে বাঙালী হিন্দু ওপারে গিয়ে সর্বভারতীয় আশ্রয়ে কোনমতে মাথা গুঁজে আত্মতৃপ্ত হয়ে ভাবছেন, ‘যাক, ওপারের মুসলিম গুন্ডাদের হাত থেকে পালিয়ে বেঁচেছি’ তারও এই বই পাঠ জরুরি আত্ম-বিশ্লেষণ ও আত্মশুদ্ধির জন্য। দু’জনকেই দু’জনের সঙ্কট-সমস্যা বুঝতে হবে। তবেই মিলতে পারবে শ্যামাঙ্গ আর লীলাবতীর ধর্মান্তরিত ও অ-ধর্মান্তরিত সন্তানরা। কারণ মা প্রকৃতি ত’ আমাদের চেহারায় এমন ছাপ দিয়েইছেন যা কিছুতেই মালা-দাড়ি, তিলক-টুপিতে ঢাকার যো নেই। ... ...
উনি বললেন, শুনুন তবে। আমাদের ডিভিশনের এক কাস্টমার ভুটান বাম্পার লটারিতে ফার্স্ট প্রাইজ পেয়েছে। টিকিটটা সে আমাদের দিয়ে গেছে, প্রোসীড্স কালেক্ট করতে। এদিকে ইনসিয়োর্ড পোস্ট করতে গিয়ে জিপিও বলছে, দেশের বাইরে ইনসিওর হয়না। আমি বললাম, হ্যাঁ, তাও তো বটে, ভুটান তো অন্য দেশ। গাঙ্গুলী সাহেব বললেন, তখন সবাই আলোচনা করে ঠিক হল, আমাদেরই একজন চলে যাবে টিকিট নিয়ে। তখন দত্ত যাবে বলে ঠিক হ’ল, তার প্লেনের টিকিট ফিকিটও কাটা হয়ে গেল, তারপর শুরু হ’ল ঝামেলা। ঘোষ এসে বলল, ও কেন যাবে? আমাদের কাডারের কেউ যাবে। দত্তই বা ছাড়বে কেন, এই নিয়ে তুলকালাম। দুটো দল হয়ে গেল ডিভিশনে। যত বোঝাই, মশাই, এটা প্লেজার ট্রিপ নয়, সোজা গিয়ে কাজ ফুরোলেই চেক নিয়ে রিটার্ন। এতে এক দিনও বাড়তি নেই, যে একটু ঘুরেঘারে দেখবেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা। আসলে দু পক্ষেরই জেদ চেপে গেছে, কেউ ছাড়বেনা। ব্যাপারটা এমন হ’ল, যে বাইরে বেরোলে দেখে নেব টাইপের জায়গায় চলে গেল। এদিকে আমারও জেদ চাপতে শুরু করল, তবেরে, দুদলের কাউকেই পাঠাবনা। এদিকে দিন তো বসে থাকবেনা, সোমবার হচ্ছে টিকিটের প্রাইজ মানি ক্লেম করার শেষ দিন। তাই তো বলি, এবার রামনাম জপতে জপতে কোনও রকমে আপনি প্লেনে চেপে- আমি বললাম, দাঁড়ান স্যার, সবই তো বুঝলাম কিন্তু এর মধ্যে আমি এলাম কোত্থেকে? আমি তো আপনাদের এপাড়ার লোক নই, এই দু দলের কোনওটাতেই বিলং করিনা, তবে? ... ...
আমিও সেদিন তাই করলাম। পাশ দিয়ে ওয়েটার যাচ্ছিল, তাকে বললাম, “আচ্ছা ওমলেট পাব কোথায়”? সে বলল ওমলেট স্টেশনে চলে যান! ওমলেটের যে আবার স্টেশন হয়, তা কে জানত! তো যাই হোক, যেন বেমানান না লাগে – এমনভাবে দুলকি চালে ওমলেট স্টেশন খুঁজতে বেরুলাম। সেই প্রকাণ্ড জায়গা পাক দিয়ে, প্রায় হাল ছেড়ে দেওয়ার সময় দেখতে পেলাম, এক শেফ এক গাদা ডাঁই করে রাখা ডিমের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। বুঝতে পারলাম এই সেই মোক্ষ স্থান! গিয়ে চাইলাম ওমলেট – ব্যস, প্রশ্নবাণে গেলাম ফেঁসে! প্রায় ৫ মিনিটের ইন্টারভিউ দিয়ে, ১০ মিনিট বাদে ওমলেট নিয়ে টেবিলে ফিরলাম। ... ...
রাগের মুহূর্তে জামাল সাহেবের কথা বলার সুরটি অবিকল সেই খরিস সাপের মতো, আর তার মুখের সামনে দাড়িয়ে শাহিদা তখন সত্যিকার অর্থেই কাঁপতে থাকে, নারকেলের লম্বা পাতায় শয়তান ভর করলে যেমন অনবরত কাঁপতে থাকে, ঠিক তেমনই। শাহিদাদের নারকেল গাছের আর সব পাতাগুলো যখন নিথর থাকে, শুধু একটি মাত্র পাতা যখন অনবরত কাঁপতে থাকে তখন ওর দাদি বলেন, “শয়তানের ভর হইছে, একখান কাচি পোড়া দিয়া থো”– শাহিদা তখন একটা কাচি চুলোর ভেতর গুজে দিত। সেসব দিন শাহিদা আখতার ভুলে যাচ্ছে আস্তে আস্তে, আজকাল তো সে আর শুধু শাহিদা নয়, শাহিদা আখতার। জামাল সাহেব কখনওই তাকে শুধু শাহিদা ডাকেন না, ডাকেন শাহিদা আখতার বলে। ... ...
প্রকাশিত হল জয় গোস্বামীর কবিতার বই, 'দগ্ধ'। কবির হাতেই। কবিতার বই কি বলা যায় একে? কবি যেখানে নিজেই বলছেন, "এই ঘটনার পর কবিতা বলে কি কিছু বাকি থাকে নাকি?" ... ...