অবিনাশই অনিল বাবুকে দেখা করাল বুধন কাঠুরিয়ার সাথে। সে একগাল হেসে অনিল বাবুকে বলল "হে হে, চিন্তা করবেননি বাবু রাতের অন্ধকারে যা কাজ করবাে না কাকপক্ষীতেও টের পাবেনি। শুধু এইটা পাবাে তাে?" বুধন দুবার হাতের তর্জনী দিয়ে বুড়াে আঙ্গুলে টোকা দিল। অনিল বাবু ইঙ্গিতটা বুঝে গেলেন, পার্স থেকে একটা দুহাজার টাকার নােট বার করে বুধনের হাতে দিয়ে বললেন "এটা অ্যাডভান্স, এরপর আরাে পনেরাে আছে।" "তা, কবে কাজটা করব বাবু?" টাকাটা নিয়ে বুধন জিজ্ঞেস করল। "এই মঙ্গলবার রাতে" বললেন অনিলবাবু। ... ...
যারা জেলাশহর বা সদরে পরিবারের সঙ্গে বাস করে তাদের রোজ দীর্ঘ জার্ণি, এমনিতেওকাজের লম্বা সময়, ওষুধ পত্রের অপ্রতুলতা ছাড়াও অন্যন্য হাঙ্গামাও পোহাতে হয়। যেমন নিবিড় গ্রামে রোগী দেখতে যাবার সময় হাতির পথ জুড়ে দাঁড়ানো বা পাহাড়ি ঝোড়ায় হঠাত হরপা বান আসা। এ ছাড়া অশিক্ষা ও নানা কুসংস্কারের সঙ্গে লড়াই। এই সবটা এরা করে বর্তমান সময়ের নিরিখে অতি অল্প টাকার বিনিময়ে। যেমন আশাকর্মীরা প্রতিমাসে ফিক্সড স্যালারি পায় ৩৫০০ টাকা। তারপর কিছু ইন্সেন্টিভ আছে, যেমন গর্ভিণীকে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের জন্য হাসপাতালে নিয়ে গেলে কেস প্রতি ৩০০ টাকা পায়। এ এন এম রা আরো কিছু বেশি পেলেও পরিশ্রমের তুলনায় কিছুই না। ... ...
কংগ্রেস নেতৃত্ব থেকে বিচ্ছিন্ন, ব্যথিত বৃদ্ধ ঠিক করেন নোয়াখালির গ্রামে গ্রামে, বিহার-কলকাতা-দিল্লি-পাঞ্জাবের দাঙ্গা-বিদ্ধস্ত বস্তিতে তিনি শেষ চেষ্টা করে দেখবেন। তাঁর সারাজীবনের আদর্শ - অহিংসা দিয়ে হিংসাকে জয় করবেন। সঙ্গী তাঁর অক্ষয় সাহস আর হাতে-গোনা কয়েকজন অনুগামী। বিহারে হিন্দুরা তাঁদের আচরণ পরিবর্তন না করলে তিনি আমরণ অনশনের হুমকি দেন '৪৬-এর নভেম্বর মাসে। আর '৪৭ এর জানুয়ারি মাসে তিনি শুরু করেন তাঁর নোয়াখালি ভ্রমণ। দাঙ্গার শিকার নোয়াখালির সংখ্যালঘু হিন্দুদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের মনোবল জোগানো আর সংখ্যাগুরু মুসলমানদের মন পরিবর্তনের জন্য এই তাঁর যাত্রা-সাত সপ্তাহের এই যাত্রায় ১১৬ মাইল তিনি পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়ান। জল-কাদার মধ্য দিয়ে, ভাঙা বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে, বিরুদ্ধ-ক্রুদ্ধ মানুষের ঘৃণা পেরিয়ে, সংশয়-অবিশ্বাস পেরিয়ে, মৃত্যুভয় পেরিয়ে খালিপায়ে তাঁর এই হাঁটা - এ হাঁটার তুলনীয় নজির পৃথিবীর মানুষ খুব বেশি একটা দেখে নি। তাঁর পথে ক্রুদ্ধ মুসলমানদের ছড়ানো ময়লা তিনি একবার নিজের হাতে পরিষ্কার করেছিলেন। প্রতিদিন সকালে তাঁর যাত্রা শুরু হত রবীন্দ্রনাথের 'যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে' গান দিয়ে। সুমিত চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন - 'সেটি হয়ে উঠেছিল তাঁর প্রিয় স্তোত্র।' শুরুতে কিছু প্রতিরোধ ছিল - সাংবাদিক শৈলেন চ্যাটার্জি লিখেছেন - মুসলমানরা তাঁকে বিশ্বাস করত না; পরে তারা বুঝতে শুরু করল - এই মানুষটি সাধারণ একজন মুসলিমবিদ্বেষী হিন্দু নয়, এ অন্য কিছু। লাইন দিয়ে মানুষ তাঁকে দেখতে আসত, তাঁর চলার পথে ভিড় করে জোড়হাতে দাঁড়িয়ে থাকত তারা - তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে পীড়িত মানুষজনকে সান্তনা দিতেন, প্রার্থনা করতেন, সম্প্রীতির কথা বলতেন। ... ...
স্নানের আগে মাথায় ঢালা হবে তেল। সর্ষের তেল। একটা ছোট নোড়া দিয়ে গড়িয়ে সেই তেল পড়বে সিঁথিতে সেখানে ঠেকানো থাকে পান পাতা। সেই পাতা দিয়ে তেল পড়বে কুলোয়। কুলোয় রাখা থাকে চাল আর বিউলির ডাল। বর বা কনে তেল দিয়ে তা মাখাতে হয়। হিন্দু মুসলমান দুই সম্প্রদায়েই এই রীতি। গায়ে হলুদের আগে হিন্দু মুসলিম দুই বাড়িতে বর বা কনে পক্ষ থেকে তত্ত্ব আসে। তত্ত্ব নিয়ে আসা লোক হয় ধুরন্ধর। আসলে গোয়েন্দাও। বুঝে নিয়ে যায় আসল হালচাল। বন্দোবস্ত। নাপিতদের পাঠানো হতো বেশিরভাগ জায়গায়। মুসলমানদের বেলায় হাজাম। রঙ্গ রসিকতায় চাপান উতোরে এই লগ্নযাত্রীরা মাত করে দিতেন। বিকেল হলে মেয়ে বঊদের দল আসতো লগন দেখতে। কী কী দিয়েছে--কী কী দেয়নি তার বিদেন বা টীকা ও ব্যাখ্যান চলতো। ... ...
এদেশটার নাম ভারত, তাই আশা করি না, কিন্তু অন্য দেশে হলেও হতে পারে, হওয়া উচিত, তাঁর ইতালির বারবিয়ানা স্কুলের ছাত্রদের সম্মিলিত চিঠিভিত্তিক গ্রন্থের অনুবাদ, "আপনাকে বলছি স্যার" বইটির অবশ্যপাঠ। অন্তত শিক্ষকদের শিক্ষাদান করবার আগে এ বই পড়াই উচিত। শিক্ষা যখন পণ্য, আর শিক্ষার্থীরা বাজার নামক দাবাবোর্ডে দিব্যি জ্যান্ত বোড়ে, তখন বিকল্প শিক্ষার ওপর এ বই হয়তো কাউকে অন্য পথের সন্ধান দেবে। আরেকজন সলিল বিশ্বাস তৈরি হবেন যাঁর মনন জুড়ে থাকবে বিকল্প শিক্ষা ভাবনা। ব্রাজিলের নিপীড়িতের শিক্ষাবিদ পাউলো ফ্রেইরি হবেন যাঁর দিগদর্শক। ... ...
ছবি নিয়ে তিনি আঁচড় কাটতে কাটতে যে গভীরতায় পৌঁছেছিলেন, আজীবন সাঁতারু বহু শিল্পীর সে জলে পৌঁছানো হয়ে ওঠে না। অতএব, প্রত্যাশিতভাবেই, ইউরোপীয় চিত্রদর্শনে অভ্যস্ত চোখ বা প্রাচ্য চিত্ররীতিতে অভ্যস্ত অনুভূতি – দুইয়ের কেউই রবীন্দ্র-অনুভবে গভীর অবগাহনে সক্ষম হলেন না – হওয়া সম্ভবই ছিল না, হয়ত। একটি সাক্ষাৎকারে এই সময়ের শিল্পী লালুপ্রসাদ সাউ বিমূর্ত শিল্পকলা প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন, রবীন্দ্রনাথের ছবি, তাঁর মননটাই সম্পূর্ণ আলাদা স্তরের – সেই চেতনার স্তরে উত্তরণ সবার পক্ষে সম্ভব নয়। ... ...
রোহার অফিস ঘরের অর্ধেকটা জুড়েই ট্রোফি ক্যাবিনেট। বছর ষাটের ভদ্রমহিলা। গোলগাল, সাদা ফুরফুরে চুল। দেখে মনে হয় মিষ্টি দিদিমাটি। কিন্তু বাপ রে কী মেজাজ তাঁর! আর কথার ধার! কিন্তু ওঁর কাছেই আমাদের মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হবে। উনি আমাদের শপ-লিফটিং এর ঘাঁতঘোঁত শেখাবেন। ... ...
স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন আসছিল – এমন চিত্রকর্মের সলতে পাকানো পর্বটি কেমন ছিল এবং গুহার দেওয়ালে, পিলারে এবং ছাদে এমন মসৃণ চিত্রকর্ম কীভাবে সম্ভব হল? বিভিন্ন চিত্র গবেষণা থেকে যেটুকু জানা গেছে, তা হল মাটি-কাদার সঙ্গে গোবর ও তুষের গুঁড়োর মিশ্রনের প্রলেপ দিয়ে প্লাস্টার হত, তার ওপর চুণের আস্তরণ দিয়ে মসৃণ করে তার ওপর চিত্রিত হয়েছে সেইসব অমূল্য চিত্রাবলী। রং তৈরি হত মূলত বিভিন্ন লতাগুল্ম, গাছের রস, খনিজ পদার্থ, iron oxide, manganese di oxide এবং কাঠকয়লা। এইসব মিশ্রিত রং টেম্পারা পদ্ধতিতে চিত্রায়ণ হয়েছিল। ভাবতে অবাক লাগে, প্রায় ২ হাজার বছর ধরে সময়ের ঝড়ঝাপ্টা সহ্য করে এখনও অনেকটা রয়ে গেছে। ... ...
শ্যামলবাবুর সঙ্গে মেশা আমার জীবনের এক মহার্ঘ স্মৃতি। তা ছিল অম্ল এবং মধুরতায় মেশানো। প্রথমে শ্যামলবাবু ধরেই নিয়েছিলেন আমার দ্বারা তেমন লেখা হবে না। বন্ধুরাই বলে। আর শৈবাল বলে। একদিন তো আমাকে বলেই বসলেন, লেখা অভ্যাস করো, প্রতিদিন লেখো, তবে তুমি এদের সঙ্গে মেলামেশার উপযুক্ত হয়ে উঠবে। ভয় করতাম খুব। একদিন তুষার সমীরের সঙ্গে সন্ধ্যায় গিয়েছি শ্যামলদার বাড়ি। ওরাই টেনে নিয়ে গিয়েছিল। পান করা হল। শ্যামলদা আমাকে নিয়ে পড়লেন। আমার কাছে কুলটিকরির খবরাখবর নিলেন। হাটের খবর, চালের দর, সবজির দর ইত্যাদি। সুবর্ণরেখা এবং ডুলং নদীর কথা শুনলেন। তিনি বললেন বিদ্যাধরীর মৃত্যুর কথা। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় যা দেখেছিলেন। তাঁর রাখাল কড়াই, চন্দনেশ্বরের মাচানতলায় ইত্যাদি গল্পে আর কুবেরের বিষয়আশয় উপন্যাসে যা আছে। ... ...
কিন্তু ওরা বোঝেনি আমরাও ভেতরে ভেতরে তৈরি ছিলাম। ন্যাকড়ার বল বানিয়ে কেরোসিনে চোবানো হল। বোমা বাঁধা হল। এমনকি টেরিটরিয়াল আর্মিতে কাজ করে এরকম কিছু লোক বন্দুকের যোগান দিল। বোমা-লাঠি-বন্দুক নিয়ে গঠিত হল প্রতিরোধ বাহিনী। এরপর বাবা কী বলবে আমি জানি। বাবা আজ সংক্ষেপে বলছে, তবু আমি জানি বাবা কী বলবে। ছেলেটি কঠিন চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার বুকের ভেতর ছটফট করছে হাওয়া। বাবাকে থামাতেই হবে। গলা তুলে ডাকার চেষ্টা করি, বাবা, বাবা ও... । বাবা হুঙ্কার দিয়ে ওঠে, বন্দে মাতারম! ফিয়ার্স লেনে, সাগর দত্ত লেনে প্রচুর হিন্দু মরছে। ঠিক হল একটা হিন্দুর লাশ দেখলে দশটা মুসলমানের লাশ ফেলতে হবে। একদিকের হিন্দুদের রেসকিউ করলাম, অন্যদিকে হিন্দু হত্যার বদলা। লাশে লাশে ভরে গেল কলকাতা। আর এ সময়েই লুটে এনেছিলাম এ ঘড়ি। এক মুসলমানের অন্দরমহল থেকে। সেই ১৯৪৬! আজ কত বছর? কত বছর হল? ... ...
হাজারে হাজারে লোক যাচ্ছে নিমোর উপর দিয়ে দল বেঁধে হেঁটে – ঘরে ফিরছে চাইছে তারা, জি টি রোড বরাবর, রেললাইন বরাবর হেঁটে যাচ্ছে তারা কলকাতার দিক থেকে ঝাড়খন্ড, বিহারের দিকে। পিঠে, কোলে বাচ্ছা – বড় বড় বাক্স-ব্যাগ নিয়ে ফিরছে। নিমোর রাস্তার ধারে প্রতিদিন প্রায় ১৫০-২০০ জন লোক খাচ্ছে – চাল, আলু ইত্যাদি জোগাড় হয়েছে। কিন্তু শেল্টার? ইচ্ছা করলেই আপনি ২৫-৫০ জনকে নিয়ে ভাবলেন গ্রামের কোথাও রেখে দেবেন, খাওয়াবেন – সেসব অত সোজা নয়। প্রশাসনের অনুমতিই মোষ্ট লাইকলি আপনি পাবেন না। যে হেঁটে যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে, তাকে যেতে দাও – শ্রমিক-মজুর এদের কষ্ট-মৃত্যু নিয়ে মাথা ঘামাবার মতন সময় নেই বড়কর্তাদের। ... ...
আচ্ছা এটা মনে রাখবেন, যে হট পটের সাথে ওই ফন্ডু বলে যে জিনিসটা আছে – তার একটা বেসিক পার্থক্য আছে। হট পটে আপনি খাবার বানাবেন বা ফোটাবেন একটা জলীয় স্যুপে – আর ফন্ডুতে রান্নার তেল ব্যবহার করা হয়। হট পটের স্ট্যান্ডার্ড রান্নার উপাদানগুলি হল – খুব পাতলা করে কাটা মাংসের টুকরো, সবুজ পাতার সবজি, মাশরুম, নানা প্রকারের ন্যুডল্স্, কাটা আলু, টফু, নানাবিধ বিনস্, মাছ বা সি-ফুড। এই সব উপাদানই সরু সরু করে কাটা থাকে – তা না হলে ওই মৃদু আঁচে ফুটতে থাকা স্যুপে সিদ্ধ হয়ে খাওয়ার মত হতে রাত হয়ে যাবে! তা ছাড়া এক্সট্রা সস রাখা থাকে পাশে – আপনি নিজের ইচ্ছেমতন খাবার স্পাইসি বানিয়ে নিতে পারবেন সিদ্ধ হয়ে যাবার পর। ... ...
এখন এই এজমালি উঠোনে বলা সব কথা আমায় উদ্দেশ্য করে নয়, আমার বলাও নয়, বলাই বাহুল্য। সেখানে উচ্চারিত কোনো শব্দপ্রয়োগ কাউকে আঘাত করলে – ঔচিত্যবোধ বলবে -বাপু হে, এগিয়ে যাও – প্রতিবাদ রাখো। কিন্তু তা তো করিনা বেশিরভাগ সময়ে। প্রতিবাদ খুব বেশি হয়ে ওঠে না, সেই অনীহার পিছনে এক লোভ থাকে। আমার আড্ডার মৌতাত নষ্ট হয়ে যায় যদি। আরো একটা ব্যাপার থাকে – সেটা হল যাকে বা যাদের উদ্দেশ্যে বলা কথা ভালো লাগেনি, তার হয়ে বলতে গেলে যদি তার মনে হয় তার বা তাদের ব্যক্তিসত্তাকে অহেতুক করুণা দেখাচ্ছি – যদিও এটা অযুহাত হিসেবে রাখা গেল এখানে। ... ...
অনিকেত এই চিকিৎসকদের সন্তান। অয়ন, সুমন, হিল্লোল এই চিকিৎসকদের উত্তরাধিকার। সুযোগ্য উত্তরাধিকার। অনিকেতরা সেই ডাক্তারিছাত্রদের প্রতিনিধি যারা ১৯৮০-র দশকে স্বাস্থ্য আন্দোলনে পথে নেমেছিলেন সরকারি হাসপাতালে ২৪ ঘন্টা এক্স-রে, ই সি জি ও অন্যান্য জরুরি পরিষেবা চালু করার জন্যে। অয়নরা সেই ডাক্তারিছাত্রদের উত্তরসূরি যারা নব্বই এর দশকে কলকাতার বিভিন্ন বস্তি এলাকায় স্বাস্থ্য পরিষেবা দিয়ে গেছেন, বস্তিবাসী মানুষদের স্বাস্থ্যের হাল হকিকতের খোঁজ তাঁদের মধ্যে গিয়ে নিয়ে এসেছেন। আর তাই শুধু বর্তমান নয়, যে কোন শাসক দলের কাছেই এই উত্তরাধিকার একটা বড় দু:স্বপ্ন। আসন্ন স্বাস্থ্য আন্দোলনের একটা প্রচ্ছন্ন হুমকি। এইটা মেনে নিতে চাইছেনা রাষ্ট্র। এইটা মানতে রাজি নয় কর্তৃপক্ষ। তাই চাইছে একদম ফার্স্ট ইয়ার থেকে, একদম 'তৃনমূল' স্তর থেকে এই সম্ভাবনা সমূলে বিনাশ করতে। অনিকেতদের এই আন্দোলন এই মূহুর্তে তাই এতখানি গুরুত্বপূর্ণ, এতখানি সময়োচিত, এতখানি জরুরি। ... ...
সমস্যা সম্ভবত সিপিএমের দৃষ্টিভঙ্গিতেই লুকিয়ে আছে। কদিন আগে একটা মিম, সিপিএমের লোকজন হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকে ছড়িয়েছে, কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে কোনও এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, কেরালার কোনও এক জায়গায় বিজেপি মিউনিসিপালিটির এক আধটা আসন জিতেছে, কী ভাবছেন বিজয়ন? তিনি নাকি বলেছেন, ঐ এলাকার মানুষের শিক্ষাগত মান বাড়ানোর ব্যাপারটা আমরা চিন্তা করছি। বিজেপির মত এক ফ্যাসিস্ত দল, কেরালায় সামান্য হলেও সংগঠন বাড়াচ্ছে কারণ মানুষ অশিক্ষিত, মানুষের বোধ বুদ্ধি নেই, মানুষ ভুল করছেন। এই ঔদ্ধত্য কোথা থেকে আসে? ... ...
মারাঠীতে নাকুশা মানে নাকি অবাঞ্ছিত বা অপয়া, বিনীতা বলেছিল। নাকুশার মা তখন ওদের ঘর ঝাড়ুপোছা আর বাসন সাফ করত। তারপর তো মা’টা মরেই গেল আর নাক্কিকে এলাকার এক কর্পোরেটার লাগিয়ে দিল পাহাড় পাতলা করার কাজে। চুপচাপ গিয়ে রাস্তা থেকে একটু উপরে উঠে মাটি কেটে কেটে জমা করবে আর হপ্তায় একদিন কর্পোরেটারের গাড়ি এসে নিয়ে যাবে জমা করা মাটি। এমনি করে করে পাহাড়টা যখন রোগা হয়ে যাবে, বেঁটে হয়ে যাবে, পাহাড় বলে আর চেনা যাবে না, তখন কর্পোরেটার এসে সেখানে মস্ত আলিশান সব বাড়ি বানিয়ে ফেলবে। নাক্কিয়া তদ্দিনে বড়সড় হয়ে সেই সব বাড়িতে কামওয়ালি বাঈ হয়ে কাজে লেগে যেতে পারবে, চাই কি বিয়ে শাদিও হয়ে যেতে পারে। ... ...
শুক্রবার দোল। শনিবার হোলি। এবার শুক্রবার দোলের রঙের সঙ্গে পড়েছে শবে বরাত। চলে যাওয়া মানুষদের স্মরণে দান ধ্যান করেন মানুষ। এছাড়া বাড়িতে তৈরি করা হয় চালের আটার রুটি, পোলাও (বিরিয়ানি হতো না এভাবে ঢালাও আকারে)। নানা রকম হালুয়া, ছোলার ডালের হালুয়া, গাজরের হালুয়া ছিল বিখ্যাত। হতো ফিরনি। এ-রকম শহুরে টাইপ না। ... ...
গুরুচন্ডালির পাঠক দের বৃহদংশের কাছে এই কথোপকথন আগ্রহ জাগাতে পারুক বা না পারুক, ব্যক্তিগত ভাবে এই ভাবেই এই বিচিত্র অতিমারীর প্রকোপে মানুষের মধ্যে সংযোগহীন অবস্থায় এই ভাবেই ভদ্রলোক কে স্মরণ করলাম, তাঁর মৃত্যুর বেশ কিছু বছর পরে। ... ...
জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ভারতে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের লক্ষ্যে, সেই ১৯১৯ সালে। জাতীয়তাবাদী এবং বরাবর দেশভাগের বিরুদ্ধে থাকা এই গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনের কথা দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাঙালির ইতিহাসে উল্লেখিত না হওয়ায় বেশিরভাগ বাঙালি তাঁদের অবদানের কথা জানেন না। যদিও পশ্চিমবঙ্গে জমিয়তের লক্ষাধিক সদস্য এবং কয়েকশ মাদ্রাসা আছে। বহু হিন্দু বাঙালি জমিয়াতের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামিকে গুলিয়ে ফেলেন। ধরে নেন এটি বাংলাদেশে অবস্থিত কোনো সংগঠনের শাখা। বিড়ম্বনার কথা এই যে, বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসাবে রামকৃষ্ণ মিশন সেক্যুলার বুদ্ধিজীবীদের কাছে সমাজ সংস্কারক ও শিক্ষা প্রসারের মর্যাদা পেয়ে থাকেন, কিন্তু, সেই সমাজে একই রকম কাজে যুক্ত থাকা জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ সাম্প্রদায়িক হিসাবে চিহ্নিত হয়ে যায়। আমাদের দুর্ভাগ্য ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে জমিয়তের ভূমিকা নিয়ে পাঠ্যপুস্তকে একটি লাইনও খরচ করা হয়নি। ... ...
ফড়িংচাঁদরা যেদেশে থাকতেন, বেস্পতি নামটা সেখানকার । এর সঙ্গে নির্দেশ করা হতো বিভিন্ন যুগের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন রচনায় খেলানো পৌরাণিক চরিত্রকে। সে দেশের সনাতন সাহিত্যমতে বেস্পতি তাদের বৈদিক যুগের একজন ঋষি, যিনি দেবতাদের পরামর্শ দিতেন। মধ্যযুগের বইতে এই বেস্পতি গ্রহকেও ইঙ্গিত করত। বৈদিক বইতে উনি হলেন বাগ্মিতার দেবতা, আর কখনও কখনও তাঁকে অগ্নিদেবতার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলতো প্রাণবায়ুরা।ঋগবেদে লিখেছিল, কে যে লিখেছিল কে জানে, পৃথিবীর প্রথম উজ্জ্বল আর পবিত্র মহাআলোক থেকে বেস্পতির জন্ম যিনি সব অন্ধকার দূর করে দ্যান । কোথাও কোথাও তার মূর্তি দেখেছে ফড়িংচাঁদ, হাতে দন্ড ও পদ্ম আর জপমালা, আরেকটা পুরাণে প্রাণবায়ুরা লিখেছিল বেস্পতি তারাকে বিয়ে করেছিলেন আর সেই তারাকে নাকি চাঁদ কিডন্যাপ করে একটা ছেলে পয়দা করে তার নাম বুধ। ব্রহ্মা চাঁদের উপর চাপ দিয়ে তারাকে তাঁর স্বামী বেস্পতির কাছে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য করেন। ফড়িংচাঁদরা কুলকিনারা পান না যে এতো পাওয়ারফুল হয়েও বেস্পতি কেন বদলা নেয়নি । ... ...