যাঁরা নানা কারণে লিখতে পারলেন না নবারুণারী তে, ফেসবুক ও গুরুচন্ডা৯ সাইটে তাদের নতুন-পুরোনো পোস্ট থেকে কিছু মতামত, কিছু আলাপ-আলোচনার নির্যাস রাখা রইল এই অংশে। এর অনেকগুলোই ভাটিয়া৯ অংশে অনেকের সাথে আলোচনার অংশ হিসেবে লেখা বলে এখানে একত্রে একটি লেখা হিসেবে পড়তে খানিক অদ্ভুত লাগতে পারে। সামান্য কিছু এডিটও করতে হল কথোপকথন থেকে বক্তব্য ও সময়কালের সাযুজ্য বজায় রেখে লেখাগুলো আলাদা করতে, তবু, যাঁরা লিখেছেন, তাঁদের মনোভাব আর বক্তব্যের সারবত্তা ধরে রাখা জরুরি মনে হাওয়ায় এবং অন্য কোন উপায় না থাকায় এগুলি এভাবেই রইল। আশা রাখি পরবর্তীতে এঁরা অন্যত্র কখনো নিজের দৃষ্টিভঙ্গি বিস্তারিত লিখবেন। যাঁরা লিখলেন না আত্রেয়ী মিঠু সায়নী সিনহা রায় সঙ্গীতা দাশগুপ্ত রায় সুচেতা মিশ্র শুচিস্মিতা সরকার মীনাক্ষী মন্ডল পারমিতা দাস ... ...
কিন্তু দ্বিতীয় ও সচেতন পাঠে আমি দেখতে পাই এই সব ক্রিয়াকর্ম। ঠিক যেভাবে ছোটবেলায় আস্বাদন করে, প্রায় চেখে চেখে চেটে চেটে পড়া উপেন্দ্রকিশোরের টুনটুনির গল্প-এর বাঘের বাচ্চাদের মেরে কেটে ঝুলিয়ে রেখে তেলের মধ্যে টপ টপ রক্ত পড়ার ছ্যাঁক ছোঁক আওয়াজ ও বাইরে বসে বাঘ বাবাজির সে আওয়াজে পিঠে ভাজা হচ্ছে ভাবার ঘটনা, আজকের আমার সচেতন দৃষ্টিতে, পরিবেশপ্রীতি ও পশুপ্রীতির দৃষ্টিতে বিষম, অসহ্য, পলিটিকালি ইনকারেক্ট, গ্রহণীয় নয়। ঠিক যেভাবে প্রায় অধিকাংশ রসালো প্রাচীন কাহিনি আজ হয় পাগল, নয় শারীরিকভাবে অক্ষম, নয় কোন না কোন ভাবে শোষিত মানুষের অ-সংবেদনশীল বিবরণের কারণে পরিত্যাজ্য হয়ে যাচ্ছে। ... ...
মুম্বাই এটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। মার্চের শেষ হপ্তাতেও পজিটিভ কেস পাওয়া যাচ্ছিল কেবল উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত এলাকাগুলিতে। হয় তারা বিদেশ প্রত্যাগত বা বিদেশ থেকে আসা কারো সংস্পর্শদোষে দুষ্ট। কিন্তু এই একমাস বাদে ছবিটা সম্পূর্ণ পালটে গেছে। পশ এলাকা গুলিতে রোগী ক্রমশ কম, গরীব বেশি পজিটিভ। এখন ধারাভিতে ৩৪৪, কিন্তু বড়মানুষদের ওয়ার্ডগুলি থেকে মাত্র ৬৫ টি কেস রিপোর্টেড হয়েছে। বস্তিগুলির ঘর ছোট, গাদাগাদি বেশি, জল কম, কমন টয়লেট। করোনার মহা স্ফূর্তি। পরিস্থিতি এতোটাই খারাপ যে BMC পুলিশকে বেছে বেছে বস্তিগুলিকে সিল করে দিতে বলেছে। আমি /আপনি হলে বাড়ি ফেরবার জন্য মরিয়া হয়ে পড়তাম না ? বসে থাকতাম কবে রাজ্য কেন্দ্রের নির্দেশে নোডাল অথরিটি গড়ে আটকে পড়াদের লিস্ট বানাবে, সেইজন্য ? ... ...
কেরালার সেন্টার ফর পাবলিক পলিসি রিসার্চের সিনিয়র ফেলো জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ রিও জনও দ্য ল্যান্সেট এর কাছে একই রকম সন্দেহ প্রকাশ করেছেন কোভিড - ১৯ এর টেস্টিং এর তথ্য নিয়ে। তাঁরমতে বিভিন্ন রাজ্য বিভিন্ন ধরনের টেস্ট ব্যবহার করছেন; ক্রমশঃ র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টিং করার ঝোঁক বাড়ছে। এই ধরনের টেস্টে ফলস নেগেটিভের অনুপাত বেশি। অনেক রাজ্য ঠিক কী কী ধরনের টেস্ট কতবার করেছেন সেই তথ্য স্পষ্ট করছেন না। ফলে বিভিন্ন রাজ্যের তুলনা করার কোনো মানে দাঁড়াচ্ছে না। সব ধরনের টেস্টিংকে একত্রিত করে যে সংখ্যাটি প্রকাশিত হচ্ছে রোজ তার থেকে আমরা কেমন আছি, সেটা স্পষ্ট করে বোঝা যাচ্ছে না। ... ...
প্রশ্ন উঠতে পারে, এই ছোট ছেলেমেয়েদের রাস্তাদখল আর কর্তৃত্বের অধিকার কে দিল? আসলে এই অধিকার দিল তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা আর মালিকানাবোধ। তারা এখন বড়দের শেখাচ্ছে এইদেশের মানুষ প্রজা নয়, তারা নাগরিক, নাগরিকের অধিকার লুন্ঠিত হলে তা প্রতিষ্ঠার অধিকার ও দায়িত্ব তাদের আছে। এই দেশের মালিক এই দেশের মানুষ, কিছু লোভী ব্যক্তি আর নিপীড়ক গোষ্ঠী নয়। বড়রা যদি এই মালিকানা দাবি করতে না পারেন, তাহলে ছোটরাই এগিয়ে এসে বড়দের পথ দেখাবে। আসলে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে যে গণজাগরণ ঘটেছিল, সেটি ছিল প্রজন্ম ’৭১র বিদ্রোহ। মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় প্রজন্ম সেদিন যুথবদ্ধ হয়ে পথ দেখিয়েছিল দেশকে। আর এখন যারা আন্দোলন করছে, এই ছোটরা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের তৃতীয় বা চতুর্থ প্রজন্ম, যাদের হাতে আগামীতে দেশের স্টিয়ারিং থাকলে, কখনোই পথ হারাবে না বাংলাদেশ! ... ...
ইহুদি মতে ঈশ্বর আদি ঘটক। তিনি স্থির করেন কার সঙ্গে কার বিবাহ হবে (রব নে বানাই জোড়ি স্মরণ করুন)। কিন্তু তিনি তো আর এই দুনিয়ার সব জায়গায় হাজির থেকে এতো মানুষের মধ্যে যোগাযোগ করাতে পারেন না। তাঁর আরও হাজারটা কাজ আছে। অতএব মর্ত্যভূমিতে এই মহান ব্রতটি সম্পন্ন করার ভার নিয়ে যিনি অবতীর্ণ হয়েছেন তিনি হলেন শদখেন, ঘটক। ... ...
১৮৫০-এর লণ্ডন। তার একদিকে বর্ণিল সন্ধ্যার মায়াবী হাতছানি, আর একদিকে ঘিঞ্জি গলিতে আবর্জনার মধ্যে পিলসুজের তলার মানুষের লড়াই। এর-ই মধ্যে বারেবারে হাজার-হাজার মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে কলেরার দৈত্য। রোগের কারণ অজানা, মনে করা হত দূষিত বাতাস বা মায়াজমা থেকেই কলেরা ছড়ায়, যদিও মায়াজমা ঠিক কি জিনিস তা অবশ্য কেউ-ই জানতেন না। ঠিক সেই সময়েই লন্ডনের এক তরুণ ডাক্তারবাবু, জন স্নো, ঝাঁপিয়ে পড়লেন কলেরার মোকাবিলায়, দীর্ঘদিনের চেষ্টায় প্রমাণ করলেন মায়াজমা নয়, দূষিত জল-ই এই রোগের বাহক। আজকের যদুবাবুর টিউশনিতে সেই জন স্নো-র গল্প, এক মহামারির দানবের চোখে চোখ রেখে সত্যি খোঁজার রূপকথা। ... ...
যেমন বলি উনিশ বছরের কালো অল্প পোড়া মেয়ে সুখবাঁশির কথা। এমন রোমান্টিক নাম তার বাপ মা কি ভেবে রেখেছিল কে জানে, কিন্তু আটবোনের এক বোন সে ছোটবেলায় ধানসেদ্ধ করার উনোনে পড়ে গিয়ে অল্প পুড়ে যায়। তাতে তার দীঘল চোখ বা সরল মনের কোথাও কোন কমতি হয়নি, কেবল পাত্রপক্ষের তাকে নিতান্ত অযোগ্য ভাবা ছাড়া। তাই ক্লাস এইট অব্দি পড়বার পর গরীব বাপমা তার বিয়ে দেয় নিজেদের ক্ষমতার বাইরে গিয়ে ! ৮০ হাজার টাকা, কাঁসার বাসন, গয়না দেবার পরও বিছানাপত্র দেওয়া হয়নি বলে তাকে শুতে হত মাটিতে। বিয়ের পর সুখবাঁশি প্রেগন্যান্ট হলে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় জেলাশহরের এক মেডিক্যাল সেন্টারে। সেখানে 'ছবি' তোলা নির্বিঘ্নে সাঙ্গ(কি করে হয় কে জানে !) হলে তার সব সুখ উবে যায়। স্বামী, শাশুড়ির উগ্র মূর্তিতে হতভম্ব মেয়েটি প্রতিবেশীর কাছে জানতে পারে তার পেটে রয়েছে যমজ বাচ্চা এবং তারা মেয়ে। অত্যাচার চূড়ান্ত মাত্রায় পৌঁছলে একদিন তাকে ফ্যানে ঝুলিয়ে দেবার চেষ্টা সে কি করে ব্যর্থ করে বাপের ঘরে পালিয়ে আসে সেকথা এখন নিজেও ঠিকমতো বুঝিয়ে বলতে পারেনা। ... ...
... এই লাইনে এ লেখার সমালোচনা হওয়া খুবই সম্ভব ছিল। কিন্তু সেটা হয়নি। হয়নি, সেটাই এই লেখার উপজীব্য। হয়নি, কারণ, একটা বড় অংশের লোক, যাঁরা হইচই করছেন, তাঁরা উপন্যাস এবং গল্প, কোনোটাই পড়েননি। কী পড়েছেন? না, ফেসবুক আর আনন্দবাজারের চিঠি। কনিষ্কর অভিযোগ, শ্রীজাতর উত্তর। হয় প্রোফাইলে গিয়ে পড়েছেন, কিংবা তাও নয়, স্ক্রিনশট পেয়েছেন, হাতের গোড়ায়, এবং চোখ বুলিয়ে উদ্ধার করেছেন। এরকমও লোকজন গর্ব করে বলছেন, যে, দু’পক্ষের বক্তব্যই পড়লাম, অমুকেরটা আমার বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। অতএব অমুক চোর (অথবা নয়)। এ যেন, “জানলার বাইরে কি বৃষ্টি পড়ছে?” – এই প্রশ্নের উত্তরে আপনি বলছেন, “গুগল আর ইয়াহু দু’জনেরই বক্তব্য পড়লাম। আমার জানলার বাইরে বৃষ্টি পড়ছে কিনা, এ ব্যাপারে ইয়াহুর বক্তব্যই অধিকতর গ্রহণযোগ্য মনে হল”। ... ...
এমিল সিওরান আয়রন গার্ডকে সমর্থন করেছিলেন বলে তোমার পলিটিক্যালি কারেক্ট পাছা ফেটে যাচ্ছে? ব্লাডি ইউনিভার্সিটি কালচার! এরপরে ঘূর্ণির মতো একটা প্রবল বিতর্ক শুরু হয়ে যায়; উগো টোনিকে ফ্যাসিস্ট শুয়োর বলে। উত্তরে টোনি উগোকে একটা ধাক্কা দিয়ে বলে লিবারাল পুসি এবং উগোর যৌনাঙ্গ সম্পর্কে সন্দেহপ্রকাশ করে। উগো টোনির চোয়ালে একটা ঘুষি বসিয়ে দেয় এবং ওদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। বাকিসকলে ওদের থামানোর জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অনেকেই বিরক্ত হয়ে বিদায় নেয়; এরপরে পার্টি ভেঙে যায়। সেইরাতে মনজা থেকে মিলানে ফেরার সময় শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ টোনিকে লক্ষ্য করছিলেন। গাড়ির ব্যাকসীটে জানলার ধারে চুপচাপ বসেছিল সে। মিলানে ঢোকার কিছুটা আগে হাইওয়ের ধারে গাড়িটা পেট্রোল পাম্পে দাঁড়িয়েছিল এবং সবাই গাড়ি থেকে নেমে এদিকওদিক ঘোরাফেরা করছিল। দূরে অন্ধকার রাতের প্রেক্ষাপটে মিলান শহরের আলোকোজ্জ্বল সিটিস্কেপ। টোনি সান্তোরো সেদিকে তাকিয়ে দ্রুত একটা সিগারেট টানছিল। হঠাৎ সে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখের দিকে ফিরে বলল, ওরা আমাকে ইউরোসেন্ট্রিক বলে। ... ...
নিজের নাম লেখা কার্ড দিয়েছিলো পরিস্থিতি। আইভরি ফিনিশের ওপর কালো টানা অক্ষরে লেখা। 'ব্ল্যাকআউট ডাইনিং'। নামটা মনের মধ্যে বেশ বড় মাপের একটা কৌতুহলের ঢেউ তোলে। শুধু নামে আজকালকার দিনে আর কী-ই হয়? পরিচয় চাই না একটু? তা পরিচয়ও দিয়েছিলো বই কি। নাহলে লোকে আসবে কেন ওর কাছে? নামেই অনেকখানি বলা আছে, তবু কনসেপ্টটা বোঝা দরকার। এটা একটা রেস্টুরেন্ট যেখানে তোমাকে খেতে দেওয়া হবে সম্পূর্ণ অন্ধকারের মধ্যে। ইন্দ্রিয়দের মধ্যে আমরা সচরাচর সবথেকে বেশি যাকে কাজে লাগাই সেই চোখকে এখানে ইচ্ছে করেই অকেজো করে দেওয়া, যাতে খাবারকে পুরোপুরি বুঝতে তোমায় বাকি ইন্দ্রিয়দের সাহায্য নিতে হয়। "দেখবেন আজকাল", পরিস্থিতি বলে চলে, "আজকাল বেশির ভাগ রেস্টুরেন্টে মানুষ খাবারের থেকেও খাবারের ছবি তোলার ওপরে বেশি মন দেয়। ইনস্টা-ওয়র্দি হলো কিনা। আমি যে খাচ্ছি তা সবাই জানলো কিনা। কিম্বা টেবিলে বসে সবাই যে যার ফোনের পর্দাতে বন্দি হয়ে থাকে। খাবার আসে, খাবার যায়। কেউ তাকে তার প্রাপ্য সম্মান দেয়না। এই অন্ধকারে কি আপনি খাবারকে 'খাবার' হিসেবে চিনতে শিখবেন? সেটাই দেখার। হা হা, স্যরি, সেটাই 'না দেখার'।" ... ...
জুলাইয়ের মাঝামাঝি আমাদের ফ্ল্যাটে এক ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি এসেছিলেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম স্কুল খোলার দরকার আছে কিনা? তিনি বলেছিলেন “স্যার, এটা কোনো প্রশ্ন হল? বাচ্চা দুটো বরবাদ হয়ে যাচ্ছে”। SCHOOL এর গবেষকের একই প্রশ্নের উত্তরে প্রত্যন্ত গ্রামের মহিলা অবাক হয়ে বলেন “ইয়ে পুছনে-ওয়ালি বাত হ্যায়? বাচ্চা কা জিন্দেগি তো খতম হো রহা হ্যায়”। পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড় শহরের এক অসহায় বস্তিবাসী বাবার আকুতির সাথে বিহার/ঝাড়খণ্ডের এক প্রান্তিক পরিবারের মায়ের হাহাকার কি আমাদের বাধ্য করবে না খান দশেক “পুছনে-ওয়ালা বাত” সব ফোরামে তোলার জন্য? ... ...
এইই বিভ্রমের গল্প। এগারো বছর আগে একজন ঘুমপাড়ানী বুড়ো এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে যে উপহার দিয়ে গেছিলেন সেই গল্প। এখনও আমার ব্রেনে এনকেফালোম্যালেশিয়া আসন পেতে রয়েছে। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় এই নিয়ে আরো জানি। পড়ে ফেলি অনেক কিছু। জিজ্ঞেস করি যাঁরা জানেন তাঁদের। আবার পরের মূহূর্তে ভাবি -- থাক। ভালো লাগে এই অন্য দুনিয়ায় মাঝে মাঝে পা রেখে ফিরে আসতে। ম্যাজিক দুনিয়ার সমস্তটা জেনে ফেলে কী লাভ? ভালো লাগে এইই। ভালো লাগে যখন বিভ্রম আমার ঘাড়ের ওপর ফুঁ দেয়। আমার কানে কানে হাওয়ার স্বরে ফিসফিস করে বলে-- 'আলোহোমোরা'। ... ...
এইসময় তো বাবার ব্যাঙ্কে অনেক কাজ থাকে, চেয়ার থেকে ওঠার সময়ই থাকে না , এইসময় হঠাৎ বাবা বাড়ী এল কেন --- এইসব ভাবতে ভাবতেই যুঁইয়ের স্নান সারা হয়, গোয়ালঘরের পাশ দিয়ে ঘুরে অন্দরের ঘরে এসে ঢুকে চুল আঁচড়ায়, কাজল দিয়ে কপালে একটা টিপ পরে ছোট্ট – আধা অন্ধকার ঘরের দেরাজ আয়নায় নিজেকে দেখে একবার এপাশ ফিরে, একবার ওপাশ ফিরে। মা ঘরে ঢোকে বাচ্চুকে কোলে নিয়ে, ওকে দেখেই চাপা গলায় একবার বাইরের বৈঠকখানার ভেতরদিকের দাওয়ায় আসতে বলে। যুঁই ভারী অবাক হয়, বাইরের লোক থাকলে বৈঠকখানার দিকে ওর যাওয়া মানা তো, মা’কে প্রশ্ন করার সাহস ওর নেই, যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই মা’র চোখ পড়ে ওর কপালের টিপের দিকে, চাপা গলায় প্রায় ধমকে মা ওকে টিপটা মুছে বাইরে যেতে বলে। যুঁইয়ের চোখে জল আসে – কোথাও তো একটু বাইরে যায় না কতদিন হল, ইস্কুলে যাওয়াও বন্ধ, বাড়ীর মধ্যে একটা ছোট্ট মুসুর দানার মত টিপ – তাও মুছতে হবে! মা ততক্ষণে অধৈর্য্য হয়ে এগিয়ে এসে নিজের আঁচল দিয়ে ঘষে ঘষে মুছে দেয় টিপটা – একটু পিছিয়ে গিয়ে দেখে নেয় কপালে টিপের কোনও চিহ্ন থেকে গেল কিনা – বাচ্চু হাত বাড়ায় যুঁইয়ের কোলে আসবে – মা হাত টেনে নিয়ে শক্ত করে বাচ্চুকে কোলে চেপে ধরে হাঁটা দেয়। যুঁই কেমন আবছামত বুঝতে পারে কোথাও একটা কিছু গোলমাল হয়েছে, বড় গোলমাল। ... ...
দেড়শো বছরের পুরোনো অশথ তলা এসে গেল। পুরোহিত মশাই-- সইত্য পুরোইত -- এসে গুছিয়ে নিয়েছেন। এবার পূজো শুরু। বেশ ঘটাপটা করে মন্ত্র ফলমূলের নৈবিদ্য দিয়ে সময়সাপেক্ষ পূজো। প্রতিবারই কেউ না কেউ সংক্ষেপ করার আবেদন জানায় এবং " সইত্য ঠাকুর " সেটি মঞ্জুরও করেন। ছেলেদের কপালে হলুদ ছুঁইয়ে, হলুদ রঙের ষাট সুতো তাদের হাতে বেঁধে দেন। মেয়েদের বাঁহাতে তাগা বাঁধা হয়। উলু আর শাঁখ ঘনঘন বেজে ওঠে। এবার শুরু হবে ব্রতকথা। ... ...
বিখ্যাত মানুষজন এসেছিলেন অনেকে, যাদের মিডিয়া বিদ্বজ্জন বলে টলে। বললেনও তাদের মধ্যে অনেকে, ভালই বললেন, তাদের অনেকেই সুবক্তা। বললেন কমলেশ্বর ভট্টাচার্য, অনীক দত্ত, বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, কোশিক সেন, বোলান গঙ্গোপাধ্যায়, পল্লব কীর্তনীয়ারা। ছাত্র রাজনীতিকে "অরাজনৈতিক" করে দেওয়ার কথা উঠে এল বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের বক্তব্যে, কৌশিক সেন অবশ্য বললেন ছাত্রদের তোলাবাজির রাজনীতি দেওয়ার কথা। পরিচালক অনীক দত্ত বললেন নিজের হারিয়ে ফেলা শহর কলকাতাকে ফিরে পেতেই তিনি এ আন্দোলনের পাশে, এই কলকাতা তাকে বিশ্বাস যোগায় এ শহরে থাকতে চেয়ে ভুল করেননি তিনি। কিন্তু যে বয়স্ক মানুষটি বললেন আমরা অনশন করব তোমাদের পাশে দাঁড়িয়ে তিনিই বোধহয় গোটা সভাগৃহটাকে এক্সুরে বেঁধে দিলেন , কিংবা যে অভিভাবক বললেন আমরা আছি তোমাদের পাশে, থাকব এ লড়াইয়ের শেষ পর্যন্ত। অন্যান্য কলেজ থেকে আসা পড়ুয়ার দল যারা স্লোগান তুলল গলা মেলাল স্লোগানে, তারাই আজকের কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে উঠল ক্রমশ। ব্যাকগ্রাউন্ডে পল্লব গাইলেন 'হোক লড়াই'। মৌসুমী গাইলেন তাঁর ক্লাসিক বহুস্বরের গান 'তুমি কোথায় ছিলে অনন্য'। গান আর স্লোগান, ভিড়ে ঠাসা সভাগৃহে ছাত্রছাত্রীদের অঙ্গীকার, এর পরে কনভেনশনই পরিণত হল মিছিলে। না হয়ে আর উপায় ছিলনা। ... ...
বিলিতি সংস্কৃতির প্রভাবে বদলে যেতে থাকা বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজের খাদ্য-রুচির দারুণ বিবরণ দিয়েছিলেন পরশুরাম তাঁর ছোটগল্প 'রাতারাতি'তে। সেখানে দেখি, হারিয়ে যাওয়া পুত্র বাঁটুলের খোঁজে কলকাতার আংলো-মোগলাই কাফেতে হাজির হন চরণ ঘোষ যেখানে বাঁটুলের সমবয়সী তরুণ-তরুণীদের তারিয়ে তারিয়ে মুরগির ফ্রেঞ্চ মালপোয়া খেতে দেখা যায়। আবার বাঁকুড়া ও বর্ধমানের মানুষের কলাইয়ের ডাল-প্রীতির সুখ্যাতি করে প্যারীমোহনের আর একটি গানে বলা হয়েছে, ওই ডালের বড়া খাওয়ার জন্যে বৈকুণ্ঠ থেকে নেমে এসে থালা হাতে ভগবানও লাইন দেবেন। ... ...
বাঙালির নববর্ষ নিয়ে অদ্ভুত কিছু বিতর্ক উত্থাপন করা হয়েছে। কে এই নববর্ষের উদ্গাতা—আকবর, নাকি শশাঙ্ক? এর পুরোটাই চলছে, প্রায় হাওয়ায় হাওয়ায়—হোয়াটস-অ্যাপ প্রচার যেমন হয়। তাই ঝট করে একবার দেখে নেওয়া যাক, আইন-ই-আকবরি-তে এই নিয়ে কী লেখা আছে। ... ...
কেন্দ্র হল জমিদার, যাদের কাছে এ রাজ্যের অস্তিত্ব কেবল খাজনা আদায়ের সময়ে, এ বাস্তবতা বহুদিনের। ফলে আজ কেন্দ্রীয় সরকারের মুখে কুলুপ, সর্বভারতীয় মিডিয়ার অভ্রংলিহ নীরবতা, নতুন কিছু নয়। আকাশ থেকে পড়ারও কিছু নেই। এটাই চালু পদ্ধতি। এই পদ্ধতিকে আমরাও মেনে নিয়েছি এবং স্বীকৃতি দিয়েছি। মেনে নিয়েছি, যে, করের টাকা আসলে কেন্দ্রের প্রাপ্য, রাজ্যের কাজ হল কাকুতি-মিনতি করা। বাবু দুটো কলামুলো দিন না। বাবু কখনও দিয়েছেন, কখনও দেননি। আমরা এই লাথিঝাঁটাকেই স্বাভাবিক বলে মেনে নিয়েছি। হিন্দুস্তানকে জাতি, দিল্লির মিডিয়াকে "জাতীয়" মিডিয়া, লুঠকে ন্যায়সঙ্গত এবং হাত কচলানোকে ভবিতব্য মনে করেছি। "বঞ্চনা" নিয়ে খিল্লি করেছি। বলিউড আর ক্রিকেট দেখে নিজেকে মূল ধারার ভারতীয় প্রমাণ করতে চেয়েছি। কিন্তু সবই একতরফা। আমরা দিল্লির অপরাধের ঘটনায় গর্জে ওঠাকে মূল ধারায় ঢোকার উপায় ভেবেছি, দিল্লির স্লোগান আওড়ানোকে "কুল" ভেবেছি, দিল্লির আবহাওয়ার বিপর্যয়কে সারা ভারতের বিপর্যয় ভেবেছি। সবেতেই "জাতীয়" মিডিয়া ধোঁয়া দিয়েছে। কারণ জমিদারের সমস্যা গোটা তালুকের সমস্যা। ... ...
দশ বছর পরে এইবার সুরাট গেলাম প্লেনে করে। জীবনে প্রথমবার। আমেদাবাদ থেকে সুরাটে পৌঁছালাম সেই মাঝরাতেই প্রায়। আমাকে একজন নিয়ে গিয়েছিলেন নতুন কাজ শেখানোর ট্রেনিং দিতে। কখন পৌঁছালাম টেরই পেলাম না। উঠেছিলাম সেই সুরাট স্টেসানের কাছেই লিফট আছে এই রকম এক হোটেলে। সেখানে সকালের খাওয়াও ফ্রি। জানেন অনেকক্ষণ ধরে হেঁটে হেঁটে খুঁজে বেড়ালাম আমার সেই দশ বছর আগে একই শহরে একই এলাকায় ফুটপাথে রাত কাটানোর জায়গা টা। দেখলাম আমারই মত কত আলপনা এখনো ফুটপাথে শুয়ে আছে – কে জানে তারাও সুন্দরবন থেকে কিনা। ... ...