প্রসঙ্গ - টাকার খেলা কে কে খেলেছে। আমাদের জানা নেই। তবে টাকার খেলা ছাড়াও অনেক ঘটনাই ঘটা সম্ভব। মামলায় অপরাধী দোষী সাব্যস্ত হলে পুলিশের ক্রেডিট মেলে, সরকারি আইনজীবীরও। এই পরিস্থিতিতে সহজে যাকে দোষী প্রমাণ করা যায়, পুলিশের তাকেই পছন্দ হবে। ফ্ল্যাটবাড়িতে খুন হয়ে সিকিউরিটি এজেন্সি যদি চাপে পড়ে থাকে, তারা পুলিশকে সাহায্য করবে নিজের স্বার্থেই। আর আদালত এই মামলার রায়ে নিজেই বলেছে - মেয়েদের উপর আক্রমণ বেড়ে চলেছে, বহু দোষী ছাড়া পেয়ে যায়, সমাজ সুবিচার চায়, তার আকুতিতে সাড়া দেওয়ার দায় আছে আদালতের, ধনঞ্জয়ের শাস্তিবিধান হয়েছে এইসব বিবেচনা করে। অর্থাৎ যে-খেলা এই মামলায় চলেছে, তা এই সব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব লজিকের দৈনন্দিন খেলা। ধনঞ্জয়ের জন্য বিশেষ করে এবং অর্থব্যয় করে এর আয়োজন হয়েছিল এমন নাও হতে পারে। ... ...
পরের গান মিশ্র পাহাড়িতে একটি দাদরা। 'ছোড় ছোড় বিহারি নারি দেখে সগরি'। দুই ধৈবতকে নিয়ে খেলছেন, পাহাড়ি ধুনে মন উদাস। 'ম্যায় জল যমুনা, ভরন গয়ি বিন্দা, লপট ঝপট সে মে ফোরি গাগরি'। রাধার কলসি ভাঙে, মনও কি ভাঙে? ভাঙন কি একদিনের? একটু একটু করে ভাঙে নদীর পাড়। বিরহ অক্ষয় হবে, প্রিয় ফিরবে না কোনোদিন। তারই প্রস্তুতি চলে যেন, পাহাড়ির আকুল করা সুরে। এটি প্রচলিত কথা ও সুরের দাদরা। আগেও শুনেছে। কিন্তু এমন করে মন হারায়নি। সে নিশ্চিত, বিরজু মহারাজ জাদু জানেন। ... ...
নাহ্...আর ভাবিবে না দুলালী বেওয়া! আর কিছু মনে করিবে না! টোকানি তখন ছয় বছরের। টোকানির হাত ধরে সে, রঞ্জিতা মুর্মু আর ধিরতুর বউ শান্তি কুমারী বর্মন মিলে ছুটেছিল চোদ্দ মাইল মূল সড়কের সামনে। সেখানে তার বড় বেটি কুড়ানী যে ছিল। ভ্যানগাড়ির উপর হাত-পা মেলে। মুখে রক্ত। টোকানি হাতে তালি দিয়ে বলেছিল, ‘বুবু- বুবু এ্যাংকা ঘুমায় রছে, মাও!’ আর তখন মেয়ের সদ্য ওঠা দুই কিশোরী বুকের মাঝে মুখ গুঁজে সে যেমন চিৎকার করেছিল, তেমন চিৎকারই কি ভেসে আসছে বর্মন পাড়া থেকে? কার্তিকের দুপুরে চিল ছানা হারিয়ে ফেলা সোনালী রঙা মা চিলের আর্তনাদের মত? টোকানি ঘুমে কাদা। মেয়েকে ঘুম থেকে তুলে মা-মেয়ে এক সাথে ছুটবে নাকি দুলালী একাই যাবে? আল্লা চাহে ত’ টোকানির কোন ক্ষতি হবে না। কোন বাঘডাঁশ এসে তার এই হাঁসের ছানার মত মেয়ের পালকে কামড় দেবে না! আল্লাহ চাহে তো? বাইরে থেকে শেকল তুলে দিয়ে সেই মাঝ রাতে সে ছুটেছিল শান্তি-ধিরতুদের বাড়ি। শান্তি দুলালীর ছোট বেলার সই। মাটির শিব গড়ে ভাল বরের পূজা করতে করতেই ধিরতুকে তার ভাল লেগেছিল। শান্তির বিবাহ ঠিক হয়েছিল অংপুর শহরে ‘নিউ লক্ষ্মী বস্ত্রভান্ডার’-এর আড়তদার লক্ষ্মীনারায়ণ বর্মনের সাথে। কিন্তু অন্ধ হলেও দারুণ ফর্সা ধিরতুর কম্পনহীন সবুজাভ-নীলচে চোখের মণি, একহারা দীর্ঘ গড়ন টেনেছিল শান্তিকে। গায়ে হলুদের সন্ধ্যায় হবু শাশুড়ি সন্ধ্যামালতী মাসীর পায়ে পড়ে সে কেঁদেছিল। পাজি দুলালীরা এ নিয়ে শান্তি কুমারীকেও কম কথা শুনায় নি, ‘তুই এ্যালা গান্ধারির মতো চোখে একখান কাপড় বান্ধিব্যি শান্তি? তোর বরের যে চক্ষু নাই! গান্ধারির মত একশ’ চ্যাংড়ার মা হবি?’ শান্তি কুমারী এ কথার উত্তরে হাত জোড়া করে কপালের কাছে নমস্কার করে বলতো, ‘ওনারা স্বর্গের দেবী।’ ... ...
মাঝে মাঝে এই এক দুদিনের জন্য ঝটিকা সফরে গিয়ে অন্য সব শহরে পাঁচতারা হোটেলগুলোতে থাকা অচিনের বিশেষ পোষায় না। তবু পরিচালক হিসেবে তার নিজেরই বানানো ছবি আর ওয়েব সিরিজের প্রচারের দায়িত্ব ফেলে দেওয়াও যায় না, তাই সেগুলো মুক্তির কয়েক সপ্তাহ আগে সময়মতন প্রযোজকদের অফিস থেকে ফোন পেলে ছোট কেবিন ব্যাগটা নিয়ে তাকে বেরিয়ে পড়তে হয়। সব ব্যবস্থা তারাই করে রাখে , অচিনকে শুধু তাল মেলাতে হয়। ... ...
সারি মস্ত আবার তৈরি হয়েছে – কিন্তু সে কি পারে মানুষকে মানুষের কাছে ফিরিয়ে আনতে? তিন বছরের গৃহযুদ্ধ বিনষ্ট করেছে পাঁচশো বছরের সহাবস্থান। ক্রোয়াট ও বসনিয়াক ছেলেমেয়েরা একই স্কুলে যায়, কিন্তু আগের মতো এক ঘরে একই ক্লাসে বসে না: সিলেবাস এক, ভাষা এক। কিন্তু ক্রোয়াট ও বসনিয়াক ছেলে মেয়েদের স্কুলে ঢোকার গেট আলাদা – মাঝে কাঁটাতারের বেড়া। ক্লাসরুম আলাদা। এক নতুন বৈষম্য। ... ...
অমন দূরত্ব নির্মাণের অদূরপ্রসারী ফল যে কতটা মারাত্মক হতে পারে, বুদ্ধির বৈকল্যে তা যুদ্ধবিশারদদের কাছে ধরা পড়ে না। আমরাও হয়তো এইভাবে সমাজবিচ্ছিন্ন কোনও উৎকট জীবে পরিণত হয়ে যাব। আমরা কি অজান্তে সেই পথই খনন করে, নতুন অসভ্যতার রিহার্সাল দিচ্ছি? অথচ যুদ্ধের যে-কঠোর কৌশল আমরা এখন বাধ্য হয়ে মানছি তা এড়িয়ে যাওয়া যেত, যদি সময়মতো কর্তব্যগুলো কঠোরভাবে পালন করা হত। অন্তর্জলি যাত্রার দৃশ্যকল্প না-লিখে ভিয়েতনাম, কিউবা, থাইল্যান্ড বা দক্ষিণ কোরিয়া তা করে দেখিয়েছে। কারণ, সেখানে স্বাস্থ্য পরিষেবার কাঠামোটা মজবুত। আমরা নিধিরাম! গলাবাজী আর ধূর্তামি ছাড়া আমাদের রাষ্ট্রনীতিতে আছেই বা কী! ... ...
সামাজিক প্রকল্পগুলির জোরেই নিজস্ব ভোট ধরে রেখেছে তৃণমূল। অতিরিক্ত ভোট মিলেছে সুস্পষ্ট বিজেপি-বিরোধী অবস্থানে। সুচিন্তিত ভাবে মহিলা ও সংখ্যালঘুদের বড়ো অংশ বেছে নিয়েছেন এই দলকেই। বিজেপি-র সর্বভারতীয় বিপদ সম্যক ভাবে বুঝতেই পারছেন না মূলধারার বাম নেতৃত্ব। বিরোধী ভূমিকাপালনের বদলে নিজেদের ভেবেছেন ‘গভর্নমেন্ট ইন ওয়েটিং’। জনবিচ্ছিন্নতা চরমে। বামশূন্য বিধানসভায় বিজেপি-র উত্থান দুশ্চিন্তার। জানালেন দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। আলাপে নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
রিচার্ড ডেভিড উল্ফ। মার্কসবাদী অর্থনীতিবিদ ও তাত্ত্বিক। সহজ ভাষাতে আমজনতার কাছে মার্কসবাদ তুলে ধরতেও সচেষ্ট তিনি। ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর একটি বই ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং মার্কসিজম’। এবার বাংলা তরজমায়। পড়লেন অর্থনীতির অধ্যাপক দেবর্ষি দাস। ... ...
আমার একরত্তি একাদশী দিদিমা, ঘটিবাড়ির মেয়ের বাঙাল ঘরে বিয়ে হয়ে আসাটা যেন তার জীবনের ভোল পাল্টে দিয়েছিল রাতারাতি। ঐটুকুনি মেয়ে বিয়ের কি বোঝে! সে আবিষ্কার করতে শুরু করেছিল গ্রাম্য পরিবেশের মাধুর্য্য। গাছের ফলপাকড়, টাটকা শাকসব্জী, নদী-পুকুর থেকে মাছ ধরে আনা সেই বিবাহিতা কিশোরীর কাছে যেন বিস্ময় তখন। শহর বরানগর তখন অনেকটাই আটপৌরে গেঁয়োপনা ছেড়ে সবেমাত্র শহুরে হতে শিখেছে। কাজেই প্রকৃতি, সবুজের মাঝে অবাধ বিচরণ সেই কিশোরীর জীবনে অধরা ছিল । শ্বশুরবাড়িতে সকাল হতেই ঘি অথবা কাঁচা সরষের তেল ছড়িয়ে আতপ চালের ফেনাভাত খাওয়া তার কাছে অপার আনন্দ বয়ে আনত। বরানগরে তিনি শিখেছিলেন সকালের প্রাতরাশ হিসেবে পাঁউরুটি-মাখন খাওয়া অথবা লুচি-পরোটা কিম্বা রুটি তরকারী । বাংলাদেশে এসে সেই ফেনাভাত তার কাছে অবাক করা এক ব্রেকফাস্ট সেই মুহূর্তে। দুপুর হলেই পুকুরে ছিপ ফেলে মাছ ধরা ছিল তার কাছে এক আশ্চর্য্যের বিষয়। ... ...
কলকাতা টেলিফোন ভবন। ডালহৌসি স্কোয়ার, যাকে এখন বিবাদী বাগ বলা হয় সেইখানে লালদীঘির পাড়ে সুউচ্চ অট্টালিকা। তার সাত তলায় ট্রাঙ্ক এক্সচেঞ্জ। যে সময়ের কথা বলছি তখন কলকাতা থেকে দুবরাজপুর কথা বলতে হলেও ট্রাঙ্ক কল বুক করে অপেক্ষা করতে হত কখন টিলিফোনের ঘন্টি বাজবে। আবার কানেকশন লাগলেও শান্তি ছিল না, কেন না যান্ত্রিক গোলযোগে প্রায়ই লাইন কেটে যেত। সেইসব দূরবর্তী ফোন ও মনের কানেকশন জোড়ার কাজ যারা দিনে রাতে ২৪ ঘন্টা করতেন তাঁদের পোষাকি নাম ছিল টেলিফোন অপারেটরস। কোনো এক অজ্ঞাতকারণবশত: তাঁরা সবাই ছিলেন মহিলা। যার মধ্যে আমার মা ছিলেন একজন। তাই সেইসব অপারেটররা সবাই ছিলেন আমার অমুক মাসি, তমুক মাসি। সংখ্যায় প্রায় তিনশো ছুঁই ছুঁই। অজস্র নাম আর তাঁদের জীবনের অজস্র গল্প। হাসি-কান্না-লড়াই। জয়ের গল্প। হারেরও। সেই সব গল্পই মায়ের মুখে শোনা। মায়ের তেত্তিরিশ বছরের চাকরি জীবনে, অর্থাৎ বিংশ শতকের শেষ তৃতীয়াংশে টেলিফোন ভবনের ট্রাঙ্ক এক্সচেঞ্জে কাজ করা মানুষীদের জীবনের সেই সব সিনেমাকে হার মানানো টুকরো-টাকরা সত্যি গল্প নিয়ে এই সিরিজঃ "এক ট্রাঙ্ক গল্প"। পাত্রপাত্রীদের নাম পরিবর্তিত। ... ...
রোগ থেকে আরোগ্যের এমন বৈজ্ঞানিক প্রমাণের পরাকাষ্ঠা শুনে ডাক্তার হ্যারিস মৃদু হাসলেন। বললেন, ‘আপনাদের মতো গ্রীষ্ম প্রধান দেশে শুধু নয়, স্নান সবার পক্ষেই একটি আবশ্যিক প্রাত্যহিক অনুষ্ঠান। তবে ইহুদিদের কাছে নয়! তাদের একটা ঐতিহাসিক জলাতঙ্ক আছে! আমি যদি রুগীকে স্নান করতে বলি, সে খুব চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করবে, স্নান করতে হবে কেন? আমার অসুখটা কি এতোই কঠিন?’ এ নিয়ে গল্পের শেষ নেই । কারলসবাদ (কারলোভি ভারি, আজকের চেক) সেখানে মাটি ফুঁড়ে উঠে আসে খনিজ জল। জলের দ্বারা স্বাস্থ্য – সানুস পের আকুয়াম । এস পি এ - স্পা ! ইলান গেছে জল চিকিৎসার টিকিট কাটতে । কাউন্টারের মহিলা : একটা কেন, একসঙ্গে যদি বারোটা টিকিট কাটেন, সস্তা হবে। এগারোটার দামে বারোটা পাবেন । ইলান (দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে ) :আমি কি আর বারো বছর বাঁচবো ? ... ...
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর স্তরে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে মঞ্জু রায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগে গবেষণায় যোগ দিলেন প্রফেসর অমরনাথ ভাদুড়ির কাছে। তারপর গবেষণাই করেছেন সারাজীবন। গবেষণার বিষয় ছিল ক্যান্সারের ওষুধ আবিস্কার। ডঃ মঞ্জু রায় এবং তাঁর স্বামী ডঃ শুভঙ্কর রায় একসঙ্গে কাজ করে কর্কট রোগ বা ক্যান্সারের চিকিৎসায় মিথাইল গ্লাইওক্সাল নামক যৌগটির কার্যকারিতা প্রমাণ করেছিলেন এবং ক্যান্সারের ওষুধ হিসেবে এই যৌগটিকে সাধারণ মানুষের নাগালে আনতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। কাজ করেছেন ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দি কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স (IACS, যেখানে সি ভি রমনও কাজ করেছেন) এবং বসু বিজ্ঞান মন্দিরে; শান্তিস্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার সহ বহু পুরস্কার এবং সম্মানও পেয়েছেন সারাজীবনে। ... ...
আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদের তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর থেকে, জ্যোর্তিবিজ্ঞানের পরিসীমার মধ্যে কালক্রমে এমন অনেক নতুন নতুন ধারণা যুক্ত হতে থেকেছে যা সনাতনী আইনস্টাইনীয় ধারণাকে বদলে ফেলতে বাধ্য করেছে বা সেই ধারণাকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। সনাতনী আইনস্টাইনীয় ধারণাকে এমনই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছিলেন বাঙালি পদার্থবিদ অমল কুমার রায়চৌধুরী। আপেক্ষিকতাবাদ সংক্রান্ত আইনস্টাইনের ফিল্ড ইকুয়েশন থেকে শুরু করে নিজস্ব পদ্ধতিতে গাণিতিক ভাবে এগিয়ে নতুন একটা সমীকরণ তৈরি করেন তিনি, যা রায়চৌধুরী ইকুয়েশন নামে খ্যাত। কি লিখেছিলেন তিনি সেই সমীকরণে? ... ...
একথা নিশ্চিত, রাজলক্ষ্মী দেবী মূলত ভালোবাসারই কবি। তাঁর কবিতার প্রধান ভরকেন্দ্র অন্তর্নিহিত এক গোপন ভালোবাসা। তার যন্ত্রণা আছে কিন্তু আশাতীত কোনো নিরাপত্তা নেই। কখনও সে অযাচিত কড়া নাড়ে জীবনের দুয়ারে। তবু বরণের দুঃসাহস নেই। ... ...
সকালগুলো মনোরম এ সময়। বাতাসের গায়ে ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়তে শুরু করে। উৎসবের ফুল শিশিরভেজা ঘাসে ছড়িয়ে দেয় গাছ, একটা মনকেমনের সুগন্ধ শরীরময় আনচান করে। এসময় সূর্য ওঠার আগে বিছানা ছাড়তেও আলস্যি নেই। গ্রামের বাড়িতে থাকলে পুকুরঘাটের ভাঙা পাথরের ধাপে বসে জলে ভাসা কুয়াশা দেখতাম। সেই কুয়াশা কেমন মৃদু বাতাসে ধোঁয়া কেটে কেটে উড়ে গিয়ে স্থির হত ওপারে শুরু হওয়া হৈমন্তী ধান-জমির এক মাথায়। রাতের জল লেগে আছে ধানের শিষের আনত শিরে, যেন ঘুমভার জড়িয়ে আছে সারা খেতে । কবে পড়া ইলিয়াসের ‘খোয়াবনামা’-র লাইনগুলি মনে পড়ে, ‘কোলে ধান, কাঁখে ধান নিয়ে একেকটি গাছ নিঃসাড়ে ঘুমায়। কুয়াশা চুঁইয়ে শিশিরের একেকটি বিন্দু শীষের ওপর স্বপ্নের তরল ফোঁটার মতো পড়লে ধানগাছের ঘুম আরও গাঢ় হয়।’ সদ্য কচি ধানে দুধ আসার সময় ধানের ভারী ঘুম হয়। তার আগে দীর্ঘ শ্রমের ইতিবৃত্ত। মাটি তৈরি হবে বলে কৃষক তার ভাঙা গাল নিয়ে নীচে নয় আকাশের দিকে তাকায়। শুরুতে কয়েক পশলা বৃষ্টি পেলে মাটির কঠোর বুক ভেজে, নরম হয়। লাঙল দিতে সহজ তখন। এক ফসল তুলে নিয়ে আর-এক বোনার আগে জমিতে থেকে যায় কেটে নেওয়া ফসলের অবশেষ। খড়ের নড়ার গোড়ায় জল পেলে সে মাটি চষতে কষ্ট নেই। তবু এক-এক শীতের সন্ধ্যায় জমির পর জমিতে ধু ধু আগুন জ্বলে, নড়ায় ধরানো আগুন। চাষির অন্ধবিশ্বাসে নড়ার ছাই জমিতে মিশে উর্বর হয়! সন্ধে-নামা বাতাসে তার ধোঁয়া কুয়াশার মতোই স্থির হয়ে থাকে বহুক্ষণ। ... ...
মধ্যবিত্ত নাগরিক সমাজ যতই উন্নাসিক হোক না কেন, স্বাস্থ্যসাথী, কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, সমব্যাথী, সবুজ সাথী প্রকল্পগুলি গরিব মানুষের পছন্দের। যে কোন নির্বাচনে গরিব মানুষের ভোট নির্ণায়ক হয়। এবারও যাবতীয় দুর্নীতি সত্ত্বেও গরিব মানুষ মনে করেছেন তৃণমূল থাকলে তাঁর প্রাপ্তিযোগ হবে। কারণ বিজেপি দীর্ঘ দিন ধরেই বড়লোকদের পার্টি বলে পরিচিত। ... ...
১৬ মার্চ হু-র ডিরেক্টর জেনারেল এখনও আমরা যে জায়গায় উপযুক্ত ফোকাস করতে পারছিনা সেদিকে দৃঢ়ভাবে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন – (১) টেস্টের সংখ্যা আরও অনেক বাড়ানো, (২) আক্রান্ত এবং সন্দেহভাজন আক্রান্তকে আলাদা/বিচ্ছিন্ন করে রাখা, এবং (৩) যারা আক্রান্তের সংস্পর্শে এসেছে তাদের খুঁজে বের করা। তাঁর ভাষায় - Social distancing measures can help to reduce transmission and enable health systems to cope... But the most effective way to prevent infections and save lives is breaking the chains of transmission. And to do that, you must test and isolate. তাঁর সর্বশেষ আহ্বান - Once again, our key message is: test, test, test. হু-র তরফে ১২০টি দেশে দেড় কোটি টেস্ট কিট পাঠানো হয়েছে। ডিরেক্টর জেনারেল স্মরণ করিয়েছেন, এরকম সংকটের সময়েই মানুষের মহত্তম এবং কুৎসিৎতম দুটি চেহারাই ধরা পড়ে। ... ...
ইদের দিনের সবচেয়ে জরুরি কাজ যেটা, মানে নামাজটা পড়ার পরে যখন ইদের আর কোন আইনকানুন থাকে না তখন যা থেকে যায় তা হচ্ছে খাওয়া দাওয়া! এক মাস রোজা রাখার পরে মুখ খুলে গেল, এবার খাও। এই খাওয়ার নানা তরিকা আছে, নানা রঙের আছে। এক জেলা থেকে অন্য জেলায় গেলেই চেহারা ভিন্ন হয়ে যায়। ... ...
'হায়দার'-এর রিস্কগুলি আখেরে ছবিটিকে উতরেছিল না ডুবিয়েছিল তা নিয়ে তর্ক থাকবে। কিন্তু বিশালের ওই মারাত্মক ডিপার্চারটি অঞ্জনের ভালো লাগেনি – হায়দার খুররমকে হত্যা করতে পারে না। আমি তো আগেই বলেছি 'হায়দার'-এর প্রোজেক্টই ছিল মূল প্লটের নিষ্পত্তিকে বিপর্যস্ত করা, মায়ের ইন্টারভেনশনে। আর একটা পয়েন্ট ভাবুন - সেই ছেলেবেলায় জেনেছি হ্যামলেট procrastinator, সে ভাবে খালি, অ্যাক্ট করতে পারেনা। বিশাল কি করলেন? হ্যামলেটকে সেই সংজ্ঞাতেই ফ্রিজ করে দিলেন। তার অ্যাক্টের আর কোনো মূল্যই থাকলো না। বরং কাকা-ভাইপো একটা ভূতগ্রস্থ পরিবারের অবশিষ্ট হয়ে ঘুরে বেড়াবে উপত্যকাময় যাদের আত্মীয়তার সূত্র হল একজন নারীর প্রতি তাদের প্রেম, যে নারী আর দেশ এখন একাকার হয়ে গেছে রক্তে-মাংসে-বরফে। এই রিস্কগুলো, এই ডিপার্চারগুলো নতুন ইন্টারপ্রিটেশন হয়ে অবলম্বনে মূল্য বাড়ায়। আর অতিরিক্ত আবেগ তৈরি করে। 'হেমন্ত'-এ সেই আবেগ নেই; 'হেমন্ত' বড্ড sane ও যৌক্তিক। ... ...
চান্দু ঠাকুমা সুন্দরবন লােকালে যখন ভােরবেলা ওঠে, তখন ভিড় একেবারেই নেই বললেই চলে। বিশেষ করে লেডিজ কম্পার্টমেন্টে। চান্দুটা আজও খুব বায়না ধরেছিল-আমি তাের সঙ্গে কলকাতা যাব। কিন্তু এক বস্তা শাকপাতা ঘাড়ে করে, নাতির হাত ধরে শহরের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানাে চাট্টিখানি কথা না। তাই আসবার সময় জিলিপি আনবাে, ব্যাটবল আনবো এই সব প্রলােভন দেখিয়ে কোনােরকমে ঠেকিয়ে রেখে এসেছে। একটানা ভুগতে ভুগতে চান্দুর স্বভাবটাও বড় খ্যান খ্যান হয়ে গেছে। চার মা মােমিনার এক কথাপ্রতিদিন ঐসব ঘতামাতার শাক-পাতা গিলিয়ে গিলিয়ে ছেলেটার আমের ধাত কাটতে দেয় না বুড়িটা। মােমিনা যখন মুখ ছােটায়, তখন ঠিক একইভাবেই বলে। শয়তান বুড়ি, ভাতার খেয়েছিস। ... ...