দেশভাগ বিষয়টি কোনো রাতারাতি ঘটে যাওয়া আকস্মিক ঘটনা নয়, অনেকদিন ধরেই একটু একটু করে তার প্রেক্ষিত তৈরি করা হয়েছিল – ঠিক সেইরকমই, সেই সময়ের ভারতীয় শিল্পীদের কাজে তার যে প্রতিফলন রয়েছে তাও ঠিক একদিনের ঘটনা নয়। .... আশ্চর্যের ব্যাপার হল, বাংলার নাটক, সাহিত্য, ফটোগ্রাফি এবং চলচ্চিত্রের মধ্যে দেশভাগের বিষয়টির যে জোরালো উপস্থিতি, তা কিন্তু চিত্রকরদের কাজের মধ্যে নেই। দেশ ভাগ হয়েছে, হাজার হাজার মানুষ বাস্তু হারিয়ে শেষ সম্বল নিয়ে এপার বাংলায় চলে আসছে – এমন দৃশ্য আমরা সমকালীন ফোটোগ্রাফ এবং কিছু পরে নির্মিত চলচ্চিত্রে দেখতে পেলেও খুব কম শিল্পীই এই বিষয় নিয়ে সরাসরি ছবি এঁকেছেন। চিত্রকলা এমনই এক দৃশ্যভাষা, যেখানে কেবলমাত্র চোখে দেখা দৃশ্যের একটা চটজলদি ডকুমেন্টেশন করে দিলেই চলে না, শিল্পীর নিজস্ব ভাবনা, মনন এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির বিশ্লেষণ কাজের অঙ্গ হয়ে যায়। চলচ্চিত্রের মত ন্যারেটিভ মিডিয়াম নয় বলেই, চিত্রকলার ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া বেশ জটিল এবং যথেষ্ট ম্যাচিওরিটি দাবি করে। ফলে চিত্রকরদের কাজে আমরা দেশভাগ যতটা পেয়েছি, তার থেকে অনেক বেশি পেয়েছি তার রাজনৈতিক এবং আর্থসামাজিক পরিপ্রেক্ষিতের অনুসন্ধান। .... ... ...
আমরা জানতাম, এই রোগে সারা পৃথিবীতেই চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা বেশী করে আক্রান্ত হচ্ছেন - আক্রান্ত হলে মৃত্যুহারও তাঁদের মধ্যে বেশী - ঝুঁকির কথা আমাদের মাথায় থাকে না, এমন তো নয়। আমরা জানতাম, হাসপাতালে মাস্ক-স্যানিটাইজার অকুলান হলেও আপনাদের মধ্যে অনেকেই বাড়িতে যে বিপুল পরিমাণ মাস্ক-স্যানিটাইজার জমিয়েছেন, তা দিয়ে একটা হাসপাতালের একটা বিভাগের মাসখানেক চলে যেতে পারে। এ-ও জানতাম, আপনাদের সমাজসেবার অদম্য তাগিদ - একেকজন হাজার মাস্ক বা কুড়ি লিটার স্যানিটাইজার কিনে উচ্চবিত্ত হাইজিং-এ প্রতিবেশীদের মধ্যে বিলিয়ে যাচ্ছেন - এবং আপনাদের এবম্বিধ সমাজসেবার প্রত্যক্ষ ভুক্তভোগী আমরা, যারা কিনা মাথা খুঁড়েও হাসপাতাল বা দোকান কোথাওই এগুলো পাচ্ছি না - তবুও, সিরিয়াসলি বলছি - খুব ভালো লেগেছিল সেদিন প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীর কথায়। ... ...
শুরু হল রাহুল দাশগুপ্ত'র ধারাবাহিক উপন্যাস - সার্টিফিকেট। ... ...
ফোনটা পেয়েই এই সাত-সকালে বের হতে হলো। জিরো পয়েন্টে একটা ডেড-বডি পাওয়া গেছে। আপাতত এটুকুই জানতে পেরেছি। সাব-ইন্সপেক্টর কল করে জানালেন বিষয়টি। এ আর নতুন কী! প্রথম প্রথম এ-ধরনের সংবাদ শুনে বেশ ঘাবড়ে যেতাম, মনটা বিষিয়ে উঠত, আবার এক ধরনের অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদও জেগে উঠতো ভেতরে ভেতরে। এখন হই বিরক্ত— সময়মতো না ঘুমাতে পারার বিরক্ত; খাওয়া-দাওয়া, বিশ্রাম ঠিকঠাক না হওয়ার জন্য বিরক্ত, স্ত্রী-সন্তানদের সময় দিতে না পারার কারণে বিরক্ত। গিয়ে দেখি একঝাঁক মানুষ জটলা পাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কারও কারও চোখ থেকে ঘুমের ঘোর তখনো কাটেনি। কেউ কেউ বেরিয়েছিল হাঁটাহাঁটি করতে, লাশটা দেখে সংগত দূরত্ব রেখে দাঁড়িয়ে গেছে। সবার দৃষ্টি খানিকটা ওপরে। জিরো পয়েন্টের মাঝামাঝি পরিত্যক্ত পোলের সাথে গলাই দড়ি পেঁচিয়ে ঝুলে আছে মাঝবয়স্ক এক লোক। লোকটির কাঁধে বসে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে একটি কাক। এতগুলো লোক তার দিকে তাকিয়ে আছে দেখে সে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। নিজেকে নিরাপরাধ প্রমাণ করার জন্যই কিনা কা-কা-কা করেই যাচ্ছে; কিংবা ঘটনার সাক্ষী দিচ্ছে কি সে? আমাদের পরিভাষায় লোকটার নাম এখন ডেড-বডি। বোঝা গেল কেউ মেরে এখানে টাঙিয়ে রেখেছে। খুনিরা মাঝে মধ্যে পাবলিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যে এ-ধরনের প্রকল্প হাতে নেয়— কখনো আবার শরীর থেকে হাত-পা-মাথা আলাদা করে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ছড়িয়ে দেয়। একবার আমাকে সেরকম একটা কেস সামলাতে হয়েছিল— শরীর মেলাতে মেলাতে হয়রান। মাথাটাই পাওয়া যায় না। শরীর দেখে সরকারি পক্ষের একটা পরিচয় দাঁড় করানো হলো, কিন্তু মাথা পেয়ে দেখা গেল ... ...
কৌশিক বাজারীর চারটি কবিতা ... ...
কিছু লোককে আপনাকে জাস্ট জমি চাষ করার থেকে বাইরে বার করতে হবে। সেটা ঠিকই। কিন্তু তাদের আপনি ইন্ডাস্ট্রিতে এনে চাকরি দেবেন এটা আপনি অত্যন্ত বোকা বা কাণ্ডজ্ঞানশূন্য না হলে বলবেন না। ... ...
দুটো ছবি আমার মনের মধ্যে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় কেবলই: সারা দুনিয়া থেকে আসা পিকচার পোস্টকার্ড খচিত দেয়াল থেকে দেয়ালে ঠাসা বইয়ের আলমারি ঘেরা তাঁর ‘বই’ঠকখানায়(!) কথপোকথন চলছে রবীন্দ্রসংগীত ঘিরে, শুনছি মন্ত্রমুগ্ধের মতো, দেখছি তাঁর অনুপম শরীরী ভাষার নানা ভঙ্গিমা—এই এক ছবি; আর-এক ছবি—স্থিতি, গতি, লয়—এই তিনের ধারণার রকমফেরে কবি ও সুপণ্ডিত শঙ্খ ঘোষ রবীন্দ্রনাথ পাঠের যে পথরেখা তৈরি করেছেন, তা থেকে উৎসারিত কাব্যরস নিয়ে নাগাড়ে বলে চলেছেন প্রবাল দাশগুপ্ত। ... ...
ভাষা তার নিজের সুবিধার্থেই অর্থের সীমা সম্প্রসারণ করে, প্রয়োজনের চাপে নতুন শব্দও নির্মাণ করে, প্রয়োজনের তাপে অশুদ্ধ শব্দকে শুদ্ধিকরণ করে নেয়। ব্যকরণের আদালতের রায় যাই হোক না কেন ‘সাহিত্যিক’ আর ‘ভাষাভাষী’ উভয়টির প্রয়োগ নিয়ে যেমন আজ আর কেউ প্রশ্ন করবেন না, তেমনি আদালতের নিয়োগপ্রাপ্ত সম্মানিত তদাকরকারীদের রায় যাই হোক না কেন, অন্যতম শব্দটির অর্থের যে সম্প্রসারণ ঘটে গেছে, তাকে আর পুরনো সীমায় বেধে রাখা যাবে না। কী ক্ষতি ‘অন্যতম ব্যক্তি’ বলতে ব্যক্তির বেলায় যেমনটা আমরা বুঝি, ‘অন্যতম গ্রন্থ’ বলে ব্যক্তির কীর্তিকে তেমনি আমরা বোঝাতে পারি? ভাষা এইভাবেই নিয়ত তার অর্থ সম্প্রসারণ করে চলে। বরং বাংলা ভাষার সত্যিকারের বিপদ যদি কোনদিক দিয়ে থাকে, সেটা সমাজের উচ্চক্ষেত্রগুলোতে তার চর্চা না করার ফল। শৌখিন রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চা দিয়ে তাকে সামান্যই রক্ষা করা যাবে। আমরা কি খেয়াল করছি রবীন্দ্র-নজরুলের ব্যবহার করা শব্দগুলোও তরুণতর প্রজন্মের কাছে অস্পষ্ট ঠেকছে, ক্রমে তারা ধূলিমলিন হয়ে পড়বে? জায়গীর বাদ যাক, কেন না প্রথাটাই নেই, কিন্তু বাংলাভাষা এখন শুধুমাত্র আটপৌরে জীবনেই ব্যবহৃত হচ্ছে, সমাজের-রাষ্ট্রের উচ্চস্থানগুলো থেকে সে কোন রসদ সরবরাহ পাচ্ছে না। উচ্চশ্রেণির সন্তানেরা যদি শিক্ষার প্রধান অংশ ইংরেজিতে সম্পন্ন করেন, আমলাতন্ত্র-সামরিকতন্ত্র-বনিকতন্ত্র সর্বত্র যদি ইংরেজিই দাপুটে ভাষা হয়ে থাকে, মায় আদালতে পর্যন্ত যদি প্রায় সমুদাংশ সওয়াল-জওয়াব মাতৃভাষায় না হয়; তো বাংলার ওপর ইংরেজির প্রভাব শুধু হুকুম বলে নড়ানো যাবে না, তার আগেই অজস্র হাকিম সরে যাবেন। কিন্তু যদি কোন হাকিমের হুকুমে যদি এই আদেশ কার্যকর করা যায় যে, বঙ্গদেশে আজ থেকে সরকারি-বেসরকারী কোন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে উপযুক্ত কারণ না দর্শিয়ে বাংলা ছাড়া আর কোন ভাষায় পরীক্ষা নেয়া যাবে না, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কোনো কর্মক্ষেত্রে-আদালতে সাধারণ মানুষের অবোধ্য কোন ভাষায় আলাপ করা যাবে না, সকল পাঠ্যগ্রন্থ অবিলম্বে বাংলায় প্রণয়ন করা হবে -- হুকুম করে ভাষাদূষণ বন্ধ করতে হবে না, আপনাতেই সেখানে প্রাণের স্রোত বইতে থাকবে। ... ...
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আর ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের অনেক কাজ। মাত্র দশ মাসে বর্ণবাদী মিথ্যাপ্রবণ বিজ্ঞান বিরোধী অকর্মণ্য প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের দৌলতে প্রায় চার লক্ষ আমেরিকান মৃত, আরও মারা যাবেন। চার বছর ধরে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আমেরিকার গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণ চালিয়েছিলেন মিথ্যেকে মিথ্যে না বলে “অল্টারনেটিভ ট্রুথ” নাম দিয়ে। ... ...
বেসরকারি হলে পরিষেবা ভালো হবে আর কর্পোরেটের স্ট্রেসগরিমা ইত্যাদি ভাষ্যের অন্তরালে প্রকৃত ভারতবর্ষের মানব সম্পদের পরিচর্যায় সরকারি ব্যবস্থার অবদানকে ভুলতে থাকার কারণ বিবিধ হতে পারে। সরকারের নিজের দায়িত্ব থেকে হাত ধুয়ে ফেলার ইচ্ছা, সর্বগ্রাসী মুনাফাপিপাসা, জনগণের সঙ্গত ক্ষোভ - এইসব অনেক কিছুই তার মধ্যে থাকা সম্ভব। তার পরেও, যেসব জায়গায় পৌঁছে যাওয়া পুঁজির কাছে লাভজনক নয়, সেসব জায়গায় পৌঁছনোর দায় রাষ্ট্রযন্ত্রের। সেই যন্ত্রকে সচল রাখার দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে প্রতিকূল পথে চলতে গেলে শুধু চাকরির দায়ের বাইরেও, মানুষের প্রতি পারস্পরিক মমতা এক আবশ্যিক উপাদান হয়ে দাঁড়ায়। সরকারি বা অলাভজনক সংস্থায় কাজের অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করে রাখা আমাদের অভিপ্রায়। আজকের পর্বে থাকছে সত্তরের দশকের ত্রিপুরায় সমাজ কল্যাণ দপ্তরের আধিকারিক জয়া বর্মনের অভিজ্ঞ্তা। আপনিও আপনার অভিজ্ঞ্তা নিয়ে লিখুন খেরোর খাতা অথবা হরিদাস পাল বিভাগে, কিংবা সম্পাদকীয় বিবেচনার জন্যে ইমেল করুন [email protected] ঠিকানায়। ... ...
এই ধুতি পাঞ্জাবি কখনো কাছ থেকে আমরা দেখিনি। দেখার সুযোগই দেননি। ঠাকুরদা সবার স্পর্শ বাঁচিয়ে তাদের রাখেন। বলেন, অতিথি এলে তিনি পরবেন। হলুদ ইলিশ রাঁধা শেষ হলে তাকে নিয়ে খেতে বসবেন। অতিথি তখন কাঁসার থালায় হাত দিয়ে গিয়ে আলাদা এক সম্ভ্রম নিয়ে দেখবেন এই প্রাচীন বংশের নিঃস্ব সন্তানকে। দেখবেন, চাঁদ নম্র হয়ে নেমে এসেছে ঠাকুরদার মাথার উপরে। মলয় পাহাড় থেকে ছুটে এসেছে স্নিগ্ধ হাওয়া। কোথাও বেজে উঠেছে পাখোয়াজ। অতিথি খাওয়া ভুলে যাবেন। একটু বেশি রকম ঝুঁকে বলবেন, আপনাকে কুর্নিশ করি। কুর্নিশ গ্রহণ করুণ হে মান্যবর। ... ...
প্রথমবার অফশোর সারভাইভ্যাল ট্রেনিং করতে যাচ্ছি – আমাকে ঠিকানা দিয়ে দেওয়া হল ট্রেনিং সেন্টারের – ম্যাপ দেখে যাচ্ছি তো যাচ্ছিই, জঙ্গলের মধ্য দিয়ে। শেষে গিয়ে পোঁছলাম – এখানে আমাদের কোম্পানির হাজারো কিসিমের ট্রেনিং হয় – জঙ্গলের মধ্যে একটা নদীর পাশে। এই ট্রেনিং নিয়েই আলাদা করে লেখা যায় – তবে আজকের লেখা প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি অফশোর সারভাইভ্যাল ট্রেনিং এক সপ্তাহের হয়। থিওরি থেকে শুরু করে প্রচুর প্র্যাক্টিক্যাল – পাশ করলে তবেই সার্টিফিকেট। অনেক কিছু শিখতে হত – আগুন কেমন করে নেভাবেন, ফার্স্ট-এড, এক বোট থেকে অন্য বোটে কি ভাবে দড়ি দিয়ে ঝুলে ট্রান্সফার করবেন নিজেকে, প্ল্যাটফর্মে বিপদ হলে জলে কেমনভাবে ঝাঁপ মারবেন, লাইফ-বোট কি ভাবে অপারেট করবেন – ইত্যাদি। পাঁচ দিনের মধ্যে দুই দিন প্রায় জলেই কাটাতে হত – বিশাল সুইমিং পুলের মত ব্যবস্থা আছে, যদিও গভীরতা সাধারণ সুইমিং পুলের থেকে অনেক বেশি। সেখানে শেখানো হত জলে বেঁচে থাকার পদ্ধতি – লাইফবোট না থাকলে কতক্ষণ জলে ভেসে থাকা যায় গ্রুপ করে ইত্যাদি। ... ...
মাহুতেরা বলাবলি করছিল এই অরণ্য তো কেবল ট্যুরিস্টদের মনোরঞ্জনের জন্য নয়। এটা পাখি,বাদুড়, বাঁদর,কাঠবেড়ালি এবং অন্য অনেক প্রাণীর বসতি। ডুমুর গাছ খুবই উপকারি, কারণ বছরে অনেকবারই এতে ফল আসে আর যখন অন্য কোনও ফল পাওয়া যায় না, তখন শুধুমাত্র ডুমুর ফলে বেঁচে থাকে এমন প্রাণীও আছে। এই যে যথেচ্ছ এই গাছের ডালপালা ভাঙছি, এক মাহুত আরেক জনকে বলল, এতে কিন্তু বনের বিরাট ক্ষতি হচ্ছে । আমাদের ভেবে দেখা উচিত এটা আমরা চালিয়ে যাব কিনা। ... ...
ঋষভ তখন এক মূর্তি থেকে অন্য মূর্তিতে কাঠবিড়ালির লাফিয়ে বেড়ানো দেখছে। চারিদিকে এত দেবদেবী যক্ষযক্ষীদের মূর্তি আছে সে আগে লক্ষ করেনি। কাঠবিড়ালিটাই লাফিয়ে লাফিয়ে ঋষভের চোখকে ভাঙা মন্দিরের এই কোণ থেকে ঐ কোণে নিয়ে যাচ্ছে। স্বর্গলোক কেমন হয় তার বিশেষ ধারণা ছিল না। ছোটবেলায় একটা কল্পনা তার ছিল। তার সঙ্গে এই ভাঙাচোরা জায়গাটা মিলছে না, কিন্তু চারদিকে দেবদেবী যক্ষযক্ষীদের ভিড়ে মনে হচ্ছে এটাই দেবলোক। সব দেবতারা সাক্ষী হয়ে থাকছে আজকের ঘটনার। শরীরের কোনায় কোনায় যে সুখ সে উপলব্ধি করছে তা স্বর্গসুখের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। ... ...
রাঘব বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা মানেই কিছুটা আলো-আঁধারি ভাষা এবং স্মার্টনেস। এই-ই মোটামুটি বোঝাপড়া। আরেক ধাপ এগোলে বড়জোর রাঘব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরানা কমলকুমার মজুমদারের। আলোচনা মোটামুটি এই স্তরেই ঘোরাফেরা করে। কমলকুমারের ভাষাশৈলী নিয়ে রাঘব বন্দ্যোর কাজকর্মও সেই ভাবনাটিতেই জল-হাওয়া দেয় বটে। এই লেখা সেই ভাবনাধারা থেকে একটি ছেদ ঘটায়, অন্য আরেক চিন্তাভুবনে পাঠককে নিয়ে যেতে চায়। সে বৃত্তান্ত অন্য বটে, এবং অনন্যও। ... ...
ষোড়শ শতক। বাধার বিন্ধ্যাচল টপকে মধ্যযুগীয় দক্ষিণি খিচুড়ির খোঁজ। এক আশ্চর্য কুকবুক সুপশাস্ত্র। কন্নড় ভাষায় রচিত। রচনাকার তৃতীয় মঙ্গরস। বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সেরা সময়ের খানদানি খানাদানার সাক্ষী সে কুকবুক। আর আমরা যাকে খিচুড়ি বলে চিনি, কন্নড়ে তাই হুগ্গি! নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
নিজের সঙ্গে কথা বলেন কবিরা অনেকসময়ই। ম্যানিফেস্টো লেখেন। কবিরা যে ম্যানিফেস্টো লিখে নিয়ে তারপর কবিতা লিখতে বসেন তা আদৌ নয়, কবিতা লিখতে লিখতে হয়তো কোনো ম্যানিফেস্টোর প্রয়োজন বোধ করেন। এমন মুহূর্ত আসে যখন নিজের সঙ্গে একটা কড়ার করে নিতে হয়। তার আগে পরে যা আছে তা যে সাধনধন নয়, তা নয়। তবু নিজের সঙ্গে নিজের সাধনা নিয়ে কথা বলতে হতে পারে। আপন মনে কথা, সত্তো ভোচে। কবি শঙ্খ ঘোষের প্রয়াণদিনে তাঁর তেমনই একটি কবিতা স্মরণে অমিয় দেব ... ...
১৯৭৬ সালের ২৬নভেম্বর। বাঁকুড়ার ছোট্ট মফস্সল শহর বিষ্ণুপুর থেকে বিশ্বভ্রণে বেরিয়ে পড়লেন দুই তরুণ। আফ্রিকা। একজন হাল ছাড়েন কিছু পরেই। অন্যজন চলতে থাকেন—১৭ বছর। ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলোমিটার। ১৫৪ টি দেশ। আজও এ কীর্তিতে তিনি অদ্বিতীয়। এই প্রথম দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে সে পরমাশ্চর্য সফরের অনুপুঙ্খ কাহিনি শোনাচ্ছেন জয় মণ্ডল। আলাপে নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
১৯৫৬ সাল, স্যরের নির্দেশমতো, উইক ইন্টারেকশন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলেন সুদর্শন। পড়লেন এনরিকো ফের্মি, বারনিস ওয়েল্ডন সার্জেন্ট, হিডেকি ইউকাওয়া, সাং-ডাও লি, চেন-নিং ইয়াং প্রমুখ। এই সমস্ত পদার্থবিদদের রচনা মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়ে চলেছেন সুদর্শন। যত পড়ছেন ততই যেন একটা ভাবনা তাঁর মাথায় চেপে বসছে। পড়ছেন যতটুকু ভাবছেন তার চেয়েও গভীরে। উইক ইন্টারেকশনের বেনিয়মের মুখে লাগাম পরাতে মনে মনে বুনে চলেছেন এক নতুন যুক্তিজাল। ... ...