আমার একটা চেষ্টা থাকে, আমার পদ্ধতিতে কিছু বায়ো অর্গানিক বস্তু নষ্ট হলেও, কিছু যাতে অ্যামিনো অ্যাসিড তৈরি হয়। কোন কোন মাঠে অন্য পদ্ধতি অবলম্বন করি। কিন্তু মূল উদ্দেশ্য হল নানা ধরনের ডেটা জেনারেট করা। কোথাও কোন ডেটা নাই, পাঁচবিঘে জমিতে কতটা চুনোমাছ হতে পারে, কেউ বলতে পারে না। পুঁটি, মৈয়ে মাছে কতটা পুষ্টি কী আছে, তার কোন হিসেবও নেই কোথাও। গুণীন চ্যাটার্জি, মৃত্তিকা বিজ্ঞানী, কিছু কাজ করেছিলেন, কেঁচোর চাষ করেছিলেন, জমির উপকারে লাগবে বলে, ধান মাঠে মাছের চাষ কিছু করেছিলেন। ... ...
গত শতকের শেষ আর চলতি শতকের শুরুর দিকে কলকাতা ও আশপাশের মফস্সলে রাতারাতি প্রায় স্ক্র্যাপের দরে বিক্রি হয়ে যেতে থাকল লেটারপ্রেসগুলি, তার জায়গায় ভুঁইফোঁড়ের মতো গজিয়ে উঠল ডিটিপি ইউনিট। আপাতভাবে মনে হবে, তাতে তো ভালোই হল। ঠিক, কিছু ভালো হলও। মুদ্রণের শ্রম কমল, সময় কমল, হয়তো খরচও খানিক কমল। প্রযুক্তির যে ব্যবহারিক সুফলগুলি অবশ্যকাম্য। কিন্তু এই যে মুদ্রণ ব্যাপারটিকে ‘আপাতভাবে’ বেশ সহজ মনে হতে লাগল, মনে হতে লাগল চাইলেই ছাপাছাপির ছোটোখাটো ব্যাবসা শুরু করে ফেলা যায়, এমনকী পাঞ্জাবি পরে সম্পাদক বা প্রকাশকও হয়ে ওঠা যায় বেমালুম, তাতে ঠিক কী কী ক্ষতি হল বাংলা বাজারে, তা আজ চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো একটু অশ্লীলই হবে। সে-প্রসঙ্গ থাক বরং। তবে, গ্রুমড হওয়ার, শিক্ষানবিশি করার, হাতে-কলমে কাজ শেখার প্রসঙ্গ যে একপ্রকার উঠেই গেল, তা অনেক ক্ষেত্রে বোঝা যায়। ... ...
প্রতিবন্ধকতা নিয়ে ততক্ষণই মাথা ঘামাব, যতক্ষণ তা সেলেবল, এবং যতক্ষণ তা টোকেনিজমের গন্ডীর ভেতরে থাকে- উৎসবের প্রাঙ্গনে এর চেয়ে বড় বৈষম্য আর কী হতে পারে? যাক্, যেকথা দিয়ে শুরু করেছিলাম, "অন্যরকম পুজো" বা চলতি কথায় নিউ নর্মালের পুজো, অনেক নেই-এর পুজো -এ আমাদের, প্রতিবন্ধী মানুষদের বাৎসরিক অভিজ্ঞতা। ... ...
আমি একটি গল্প লিখে নিয়ে নকুলদাদের কাছে গেলাম। নকুলদার বস্তিবাড়িতে রবিবার সকালে সাহিত্যের আড্ডা হত। সেই আড্ডায় একদিন সুবিমল মিশ্র এলেন। দুটি গল্প শোনালেন। আমি শিহরিত। তখন তাঁর হারাণ মাঝির মড়া… প্রকাশিত হয়েছে একাল প্রকাশনীর বই হিশেবে। একালের আড্ডায় আর আসতেন গল্পকার, ডাক্তারির ছাত্র কৃষ্ণ মণ্ডল, দিলীপ সেনগুপ্ত, অজু মুখোপাধ্যায়, যিশু চৌধুরী, আমার স্কুলের বন্ধু রণজিৎ দত্ত এবং অতি নবীন লেখক তপনজ্যোতি মিত্র। রণজিৎ এবং তপনজ্যোতি যাদবপুরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ত। এই সময়ে আমি একটি গল্প লিখেছিলাম মৃত্যুর প্রতীক্ষায়। কিছুই হয়নি এখন বুঝি। সেই গল্প ছাপাও হয়নি। এরপর ‘একটি আত্মহত্যার বিবরণ’। সেই গল্প অনেকের পছন্দ হয়েছিল। ছাপা হলো একাল পত্রিকায়। ... ...
সেই প্রথম চিত্রকরের ঘরে প্রবেশ। রঙের ভিতরে প্রবেশ। তাঁর সেই ঘরখানিতে ছিল যেন রঙিন বাতাস। আমাদের বন্ধুর দাদা শ্যামল বরণ বালক লাল্টু ওই ঝিলের জলে ডুবে গিয়েছিল ক’বছর আগে, তার নামে একটি পাঠগার করব, শুধু ছোটদের বই থাকবে সেখানে, তিনি যদি একটি ছবি এঁকে দেন বা পোস্টার। তিনি তো এঁকে দিলেন, পয়লা বৈশাখের সকালে এসে উদ্বোধন করলেন সেই পাঠাগার। আমাদের সঙ্গে মিশে গেলেন বালকের মতো। সেই আমার প্রথম আড্ডা বড় মানুষের সঙ্গে। ... ...
ব্রিটেনে তো তুলো হয় না। ইউরোপে কোথাও না। তা হলে সে মহাদেশে কী করে অষ্টাদশ শতক থেকে গড়ে উঠেছিল এত বিপুল সংখ্যক সুতিবস্ত্র কারখানা—উন্নত অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি? যুগ যুগ ধরে তুলো চাষের প্রধান ক্ষেত্র ভারতীয় উপমহাদেশ। কীভাবে সেই ভারতীয় তুলো পৌঁছে গেল ইউরোপীয় কারখানা হয়ে দুনিয়ার বাজারে? মর্মন্তুদ সে ইতিহাস। একটি সাম্প্রতিক বই। পড়লেন বিশ্বেন্দু নন্দ ... ...
অর্থবল, মিথ্যাচার শেষ হাসি হাসবে নাকি আমাদের ভাষা, প্রগতিশীল ঐতিহ্যের, সহাবস্থানের অহংকার, আমাদের শিরদাঁড়া সোজা হবার পথ বেছে নেবে, তা সময়ে বোঝা যাবে, তবে দেশ জুড়ে বিজেপির পরাক্রমের তত্ত্ব খ্যাখ্যা হাস্যরবে পরিত্যাগ করুন। আর বিজেপি (আদি) ও বিজেপি (নব্য) সততার দাবি করলে, কাটমানির দুঃখ ভোলার জন্য তিনদিন বিশ্রাম নিয়ে, অট্টহাস্যের সঙ্গী উপযুক্ত ঘোড়া ভাড়ায় পেতে ময়দানে, ভিক্টোরিয়ার সামনে থেকে ঘুরে আসুন। ... ...
ফ্রম আলপিন টু আল কায়দা – বিবিধ বিষয়ে প্রবন্ধ ফাঁদতে ঘুরে-ফিরে আসতে লাগল সম্পাদকের পছন্দের তালিকায় থাকা একই নাম। ফলে অধিকারীভেদ রইল না, বই কিংবা উইকি-টোকা রচনায় মৌলিকতা পৌঁছোল তলানিতে। লেখক-সম্পাদক ভাই-ভাই হয়ে উঠল আর বিনা বাক্যব্যয়ে লেখা আসামাত্রই চলে গেল কম্পোজে, সামান্যতম কাটাছেঁড়া ছাড়াই। কফির টেবিলে তুফান উঠল না, উঁকি দিয়ে গেল না সারস্বত মতান্তরের লেশমাত্র। কেবল অধ্যাপকের চাঁদমারি হয়ে প্রচ্ছদে আইএসএসএন আর ভিতরে আমাদের নাম ছাপা হতে থাকল ঈষৎ বড়ো পয়েন্টে, সম্পাদক হিসেবে। ... ...
শুরু অনেক আগেই হয়েছে। সে কারণেই সম্ভবত গুজরাট দাঙ্গার সময়ে যিনি দেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন, সেই কে আর নারায়ণন অবসরের পর বলেছিলেন, তিনি সব থেকে বেশি পীড়িত হয়েছিলেন এটা দেখে যে, এত বড় একটা গণহত্যা ঘটে গেল, সারা দেশ ছিল প্রায় নীরব। সেই সাক্ষাৎকারে ইউটিউবে যে কেউ দেখে নিতে পারেন। ... ...
গোলেনূর দাদির বড়ঘরের বারান্দায় পাটি পড়েছে দুপুরের খানার। হাঁড়ি ভরা ভাত, বাটিতে বাগারের রসুন ভাসা মসুর ডাল আর শাকের ডগা ভাজি। অন্য একটা বাটিতে কাঁচামরিচ আর পেঁয়াজ। কৈ মৌরি দেখে গোলেনূর দাদির চাপা দীর্ঘশ্বাস, কোহিনূরের আব্বা খুব ভালো খায় কৈ মৌরি। উটকো বাতাসের হিসহিস শব্দ। সাথে একটু একটু মেঘের ডাক। আমরা দাঁড়াই না।কৈ মৌরির থালটা গোলেনূর দাদির হাতে দিয়েই বাড়ির পথ ধরি। পা চালিয়ে ভেতর বাড়িতে চলে আসতেই দাদুর ডাক, গিন্নি তোমার জন্য ওল সেদ্ধ ভাত মাখিয়ে বসে আছি তো। কাঁচামরিচ ভাতে মাখিয়ে নেবার আগে ওল মাখানো অল্প ভাত দাদু আমার পাতে তুলে দেয়। আমি কাঠের পিঁড়িতে বসে তা মুখে তুলতেই ঝমঝম করে নেমে আসে বৃষ্টি। উঠোনের বুকে জমে থাকা কালো মেঘের ছায়া বৃষ্টি জলে একটু একটু করে মুছে যেতে থাকে। তাঁতঘরে বাঁশির সুর, ... ...
মাদের দেশে ‘দর্শন’ বলে আলাদা কোনো বিষয় কখনও ছিল কি? বেদে, উপনিষদে যা আছে বা মহর্ষি কপিল, কণাদ, জৈমিনি, ব্যাস, মধ্বাচার্য, রামানুজম, শঙ্করাচার্য ইত্যাদিরা যা বলে বা লিখে গিয়েছিলেন তৎকালে তা ‘দর্শন’ নামে বিবেচিত হতো কি? সম্ভবত না। প্রকৃতপক্ষে বৃহৎ ও অপার বৈচিত্র্যময় এই জগতের দিকে তাকিয়ে যুগপৎ বিস্মিত ও কৌতূহলী হয়েছিলেন অগাধসলিলা সরস্বতী নদীর তীরের আমাদের সুপ্রাচীন পূর্বপুরুষেরা। তারই ফল স্বরূপ যেগুলি বিবেচিত হয়েছে সাংখ্য, বৈশেষিক, পূর্বমীমাংসা, উত্তরমীমাংসা, দ্বৈতবাদ, অদ্বৈতবাদ, বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ ইত্যাদি হিসেবে, এগুলির ভিতর দিয়ে তাঁরা যা বলতে চেয়েছিলেন নিজেদের জীবন-চর্যায় তাই তাঁরা প্রতিভাত করে গিয়েছিলেন, যার অন্ত বোধিতে বা মুক্তিতে। এমনকি বস্তুবাদী চার্বাকেরাও চর্যায় ছিলেন বস্তুবাদী দর্শনানুগ। অর্থাৎ, আদিতে দর্শন আসলে জীবন-চর্যার নামান্তর ছিল ও পরিশেষে জীবনের অন্তিম লক্ষের সন্ধানী। এসব দূর অতীত বা সুপ্রাচীন কালের কথা। স্বতন্ত্র একটি বিষয় হিসেবে ‘দর্শন’-এর আত্মপ্রকাশ ঘটেছে বহু পরে মূলত পাশ্চাত্যের হাত ধরে। আমাদের নিকটবর্তী সময়ে বিংশ শতাব্দীর দর্শন বলে যা পরিচিত বলা বাহুল্য তা জোরালো ভাবে পাশ্চাত্যেরই অবদান। এর সূত্রপাত মোটামুটি ভাবে George Edward Moore-র আধুনিক বাস্তববাদের হাত ধরে, প্রসারিত হাল আমলের Slavoj Zizek পর্যন্ত। ... ...
মধ্যযুগে হুগলি বন্দর ঘিরে গড়ে উঠেছিল গমগমে নানা জনপদ। বাণিজ্যের টানে এখানে যেমন ছিল পাকাপাকি মুঘল উপস্থিতি, তেমনই পরবর্তী কালে শুরু হয় ইউরোপীয় নানা ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানির আনাগোনা। বিবিধ গবেষণাগ্রন্থে উঠে এসেছে এই জেলার ইতিহাস। তেমনই বাংলা গবেষণাগ্রন্থগুলির হদিশ এবার দুই মলাটের মধ্যে। পড়লেন রামামৃত সিংহ মহাপাত্র ... ...
শিউলিকে বোঝাতে পারি না, যা দেখি তা নয়—সত্য তাই যা আমরা দেখি না। সে তখন হো হো করে হাসে। বলে, তুমি সেই তেমনি রয়ে গেলে—আগের মতই। পাল্টালে না, বদলালে না—এমন লোককে নিয়ে আর পারি না। ওকে বলি, এমন কথা তো ছিল না শিউলি। কথা ছিল, তোমাকে একটি নদী উপহার দেব। সঙ্গে একটি নৌকা। নদীতে ভেসে যাবে নৌকা, জলের উপর সূর্যাস্তের আলো—এমতাবস্থায় কত পাখি উড়ে যেতে পারে আকাশ দিয়ে—কল্পনা করে দ্যাখো একবার। ও বলে, আমি কল্পনা করতে পারি না। তুমি যা তোমাকে আমি তাই দেখি। দেখি শুনি, একা-একা কথা বলি। তার মধ্যে নদী নেই, সূর্যাস্ত নেই, নৌকা নেই। মাটির দোতলাবাড়ি’র পিছনে আমাদের চাষজমি। আমরা সেখানে মৌরি চাষ করি। ধনে আর জিরে। এই যে চাষজমি, এই যে চাষজন্ম—যেন তা আমাদের হাতে আছে অনন্তকাল। চাষ করতে করতে আমরা যখন সেই মাটির নীচে চলে যাই—দেখি সেখানে প্রাচীন জ্যোৎস্নাসকল পড়ে আছে। আর আমি অবাক হয়ে যাই শিউলির কথায়। এই তো কী সুন্দর কবিতার মত কথা বলে সে, কবিতার মতন চলন তার—কবিতার মত জীবন। অথচ সে বলে, আমি কবিতা লিখতে পারি না, কারণ আমি তা লিখিনি কখনও। কবিই সত্য আর জগত মিথ্যে—একথা তাকে বোঝাতে পারি না। সে একপাক ঘুরে গিয়ে বলে, ওসব হল তোমার কল্পনা। কবি হয়েই হয়েছে তোমার মুসকিল। জানো তো, কবিরা গজদন্তমিনারে বাস করে? আবোলতাবোল লেখে—আসলে ওসব কোনো কবিতাই নয়! অবাক হয়ে বলি, এসব কী বলছ তুমি শিউলি? জানো আমি কী ঠিক করেছি? এই গোটা ডিসেম্বর মাসটা তোমাকে উপহার দিতে চাই। একী কম কথা হল? হাত উল্টে শিউলি বলে, ঠিক আছে, দিলে না-হয়—কিন্তু তার পর? এই গোটা ডিসেম্বর নিয়ে আমি কী করব? ডিসেম্বরের সমস্ত শিশির আমার গায়ের উপর ঝরবে। সমস্ত শীত আমাকে কাঁপাবে। প্রজাপতিরা আমার গায়ে বসবে। বলো, তখন আমি কী করব? ... ...
"আমরাই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত। তাই স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়বে সেটাই স্বাভাবিক। তার জন্য সরকারকে দায়ী করা মোটেই উচিত নয়!” – ভক্তদের এই প্রচার নিশ্চয়ই আপনার মোবাইলস্ক্রিনে ভেসে উঠেছে বেশ কিছু বার। ভক্তদের চরিত্রই হল অর্ধসত্যর উপর নিজেদের নির্মাণকে খাড়া করা। ওপরের তথ্যটাই যদি আপনি দেশের জনসংখ্যার নিরিখে দেখেন, তাহলে, একদম শুরু, মানে ২০২০-র প্রথম থেকে ৬ মে ২০২১ পর্যন্ত ভারতে ১০ লাখ মানুষ প্রতি (per million) সর্বমোট আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা *১৫,৪২৯ / ১৬৮*। বিশ্বে আমাদের স্থান *১১৩ / ১১০* নম্বরে। এই পরিসংখ্যান অর্থাৎ প্রতি ১০ লাখ জনসংখ্যার কতজন সংক্রমিত / মৃত - অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে একবার দেখে নেওয়া যাক। ... ...
আশ্চর্য এক বিদেশি পথে আগন্তুক, কিন্তু পথ হারানোর কোনো ভয় নেই, আমি এই কবিতাগুলিকে ছুটতে দিই আমার আগে আগে এবং একটি মাত্রার জন্যও তাদের অনুসরণ করা ছাড়ি না, চলি যেখানে তারা আমাকে নিয়ে যায়। একটি ধীর পদক্ষেপের পর আর-একটি ধীর পদক্ষেপে ‘পার্কস্ট্রিট থেকে গড়িয়ায় / আর তার মুক্তদেশে সোনালি সপ্তর্ষিরেখা রেখে’! চলে যাই গ্রামে গ্রামান্তরে, শহরে শহরে, ময়দানে, সেইসব জায়গায় যেখানে কোনোদিনই যাইনি। গান্ধর্ব কবিতাগুচ্ছে সওয়ার হয়ে আমি চলি, তিলমাত্র ভয় নেই যে পৌঁছাব না হয়তো। ... ...
-দুনিয়ার সেরা ইঞ্জিনিয়ারেরা বসে এমন একটা জায়গা বানিয়ে দিতে পারবে? এখানে যে জড়িবুটি হয়, তাই খেয়ে আমাদের বাপদাদা পরদাদারা বেঁচেছে, আমরা বাঁচছি, আমাদের ছেলেপুলে নাতিপুতি বাঁচবে। কিন্তুই খাদান হলে? যা বক্সাইট আছে সেটা তুলে ফেলতে নাকি পঁচিশ বছর লাগবে। তারপরে কী হবে? পঁচিশ বছরের জন্য কশো বছর বন্ধক রাখব আমি? কুমুটি মাঝির গলায় ছিল অনাগত প্রজন্মের ভার। অস্ত সূর্যের আলো এসে পড়েছিল তাঁর মুখে। পায়ের কাছে গর্তগুলো চেয়েছিল অক্ষিবিহীন কোটরের মতো। বনে কোথাও একটা কাঠঠোকরা ঠক ঠক করে শব্দ করছিল। আপাতত ভবিষ্যৎ বন্ধক রাখতে হবে না কুমুটি মাঝিদের। তবে, "তারপর তারা সুখে শান্তিতে বাস করিতে লাগিল" - রূপকথার এই শেষ লাইন লেখার সময় আসেনি এখনও। নিয়মগিরি পাহাড়ের নীচে লাঞ্জিগড়ে রয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকার রিফাইনারি, তার জঠরে খিদে, পাহাড়ের গা বেয়ে কনভেয়ার বেল্ট করিডোর পড়ে আছে অজগরের মতো। ... ...
হাট। বাঙলার গ্রামীণ ও গঞ্জ-সংস্কৃতির এক দুরন্ত জমায়েত। হরেক কিসিমের সামগ্রী কেনা-বেচা সেই বিচিত্র ক্রিয়াকাণ্ডের একটি অংশমাত্র। তবেই না হাট ঘিরে এমন অজস্র প্রবচন মুখে মুখে ফেরে বাংলা ভাষায়। নদীয়ার হাটের ইতিহাসকে কেন্দ্র করে বোনা এক রঙিন সাংস্কৃতিক ছবি। একটি বই। পড়লেন রামামৃত সিংহ মহাপাত্র ... ...
গতবারে করোনার কারণে গাজন হয় নি, সব লকডাউন ছিল। কেবল মাত্র টিম টিম করে দুজন সন্ন্যাসী হতে হয় বলে হয়েছিল – এটা নাকি নিয়ম, যাদের বলা হল নীলে আর মূলে। তো গতবার গাজনের চারদিনের দুদিন রাতে বিশাল ঝড়ে কারেন্ট ইত্যাদি ছিল না, আর এদিকে জমকালো উৎসব হচ্ছে না বলে জেনারেটর ভাড়া করা হয় নি। ফলে ওই দুই সন্ন্যাসী, বিটু আর উদয় ঘুটঘুটি অন্ধকারে শিবতলায় শুয়ে ছিল প্রবল গরমে আর বিশাল মশার কামড় খেয়ে। মশার কামড় খেয়ে এত খিস্তি দিচ্ছিল দুজনে শিবদুয়ারে যে সেই খিস্তি রাতের বেলায় নিঃস্তব্ধতার জন্য বহুদূর শোনা যাচ্ছিল। কোন এক গুরুজন থাকতে না পেরে নাকি বলতে এসেছিল, “এই তোরা সন্ন্যাসী হয়ে ঠাকুর দুয়ারে বসে এত মুখ খারাপ করছিস, এই চারটে দিন মুখ খারাপ না করলেই কি নয়! ... ...
বিদ্যা ভারতী নিজেদের “বিশ্বের সর্ব বৃহৎ শিক্ষা সংগঠন” হিসাবে দাবী করে থাকে। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে “একটা জাতীয় শিক্ষা পদ্ধতি নির্মাণ করা যেটা নারী পুরুষের একটা তরুণ প্রজন্ম গড়ে তুলবে যারা হিন্দুত্বর প্রতি দায়বদ্ধ, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ এবং যারা প্রাণবন্ত ও শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক ভাবে পরিপূর্ণ উন্নত………” ... ...
বাঙালির ব্যবসার ইতিহাসে প্রথম যে বিদেশীরা সমুদ্র পাড়ি দিয়ে বর্ধিষ্ণু বাংলার বিখ্যাত বন্দর চট্টগ্রাম ও সপ্তগ্রামে গ্রামে ব্যবসা করতে আসে, তারা হল পর্তুগীজ। পর্তুগীজরা বাংলায় এসেছিল ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দে। কিন্তু তারও বছর কুড়ি আগে উত্তমাশা অন্তরীপ প্রদক্ষিণ করে এদেশে অর্থাৎ ভারতবর্ষে পৌঁছে গিয়েছিল ভাস্কো-ডা-গামা। যদিও এর অনেককাল আগে থেকেই বাংলার বণিকেরা পৌঁছে গিয়েছিল ইউরোপে। তা হলে বাঙালির ব্যবসার বিমুখতার কথাটা চালু হলো কবে? মোটামুটি ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে কথাটার সূত্রপাত অষ্টাদশ শতকের প্রথম থেকে। এর প্রধান কারণ বিদেশী বণিকদের কুচক্র। বাঙালি বণিকের জয় গান শোনা গিয়েছিল গুপ্ত যুগেরও আগে, ফা-হিয়েন এর ভ্রমণকালে, অর্থাৎ ৩৯৯ থেকে ৪১৪ খ্রিস্টাব্দের সময়ে। সমুদ্রবন্দর তাম্রলিপ্তের রমরমা তারও আগে। কালিদাস, পাল যুগের কবি সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিত কাব্য, মনসামঙ্গল, কবিকঙ্কণ, ডাক ও খনার বচনে বাণিজ্যনিপুণ বাঙালির জয় গান শোনা গেছে। সবই তো আর কবির কল্পনা নয়। একটু ইতিহাস ঘাঁটলেই দেখা যায়, বাঙালি কোনোকালেই ব্যবসাবিমুখ, অলস বা ফাঁকিবাজ ছিলনা। ফা-হিয়েন এর লেখা থেকে জানা যায়, তাম্রলিপ্ত থেকে ১৪ দিনের পথে সিংহল পৌঁছে যেত বাঙালি বণিকের দল। মুক্ত ব্যবসায়ী বণিকেরা, তেজপাতা পিপুল মসলিনের সওদাগরেরা এই বন্দর থেকেই বিদেশ রওনা হতেন। পান সুপারি ও নারকেলের চাহিদাও ছিল প্রচুর। তখন থেকেই 'সোনার বাংলা' কথাটা চালু। সোনার বাংলা এমনি এমনি বিনা পরিশ্রমে গড়ে ওঠেনি। যুগ যুগ ধরে বাংলায় ব্যবসা করতে বিদেশীরা বিনা কারণে আসেনি। ‘সোনার বাংলা’র কথা তারা জেনেছিল বাংলার বণিকদের কাছ থেকেই। ... ...