চোখ ধাঁধানো স্পট লাইটের নীচে রাজা বিশ্বাসকে না খোঁজাই ভাল। বরং খেয়াল করুন, ঝকঝকে শপিং মলের পিছনের বস্তিগুলোর অন্ধকার গলি। প্রথমে আমাদের শিখে নিতে হবে আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়ার পরও ঘন অন্ধকারে কীভাবে দেখতে হয়। আমরা ছোট থেকে বিজ্ঞানের বইয়ে পড়ে এসেছি কোনও বস্তুতে আলো পড়ে সেই আলো আমাদের চোখে আঘাত করলে তবেই আমরা নির্দিষ্ট বস্তুকে দেখতে পাই। এবার এই ধারণার বিপরীতে দাঁড়িয়ে অন্ধকারের ভেতর কী ভাবে দেখতে হয় – সেই প্র্যাকটিস করা যাক, বন্ধুরা। ... ...
অত্যাচার দমন পীড়ন, সবই চলছে চলবে, তার মধ্যেই দাঁড়িয়ে থাকবেন এই মানুষগুলো, অকুতোভয়, উন্নতশির। ভারতীয় সাংবাদিকতার ওপর যতটা কালি অর্ণব গোস্বামী অ্যান্ড কোং দরাজ হাতে ঢেলেছে, তার থেকেও বেশি কলঙ্ককে ধুয়ে সাফ করতে পারেন কাঙাল হরিনাথের এই সন্তানসন্ততিরা। ... ...
এবারের ই-পত্রিকা, এমনিই গল্পসংখ্যা। এমনিই, কারণ, গুরুর পরিচিত বৃত্তের বাইরে থেকে আমাদের কাছে গল্প আসে কিছু। কিছু গল্প এদিক-সেদিক পড়িও আমরা। কেবলমাত্র সেসবেরই টুকরো-টাকরা নিয়ে তৈরি করে ফেলা হয়েছে এই সংকলন। স্বয়ংসম্পূর্ণ কোনো গল্পসংকলন তো তৈরি করা সম্ভব না। এই সংকলনেরও তেমন কোনো দাবি নেই। পৃথিবীর শেষতম বা শ্রেষ্ঠ গল্পসংকলনও এ নয়। গুরুর নিয়মিত ই-পত্রিকার এটি একটি সংখ্যা মাত্র। ... ...
নীল কপোতাক্ষ। টলটলে। আলপাইন বন। সুইশ আল্পসের মাথায় বরফ জমে আছে। নির্ভেজাল সুন্দরী। সে সুন্দরী বসেছিল নন্দানো সোপ্রানোর জন্য। আমরা ব্যাগ মাটিতে ফেলে দৌড়ে তার কাছে চলে গেলাম। ছবিতে দুটো ব্যাগ দেখা যাচ্ছে। ধুমসোটা আমার, ওর মধ্যে ওই ঘ্যাঁট থুড়ি স্ম্যাশড ইত্যাদি আছে। আমরা চুপ করে বসে থাকলাম। ছোট্ট ছোট্ট ঢেউ উঠছে জলে। মৃদু বাতাসে তিরতির করে সেই জল কাঁপছে। স্বর্গের হাঁসেরা মা সরস্বতীর কাছ থেকে ছুটি নিয়ে দু-দণ্ড খেলে বেড়াচ্ছে। আমরা কথা ভুলে গেছি। ... ...
সেদিন থেকেই শুরু। রাতের বেলায় উপর নীচ করতে থাকা ঘামাচি ভরা পিঠে হাত রেখে মালতী ভাবে উত্তমকুমারের পিঠে হাত রেখেছে। স্তনের মোচড়েও ব্যথা লাগে না আর। বরং শরীর গলে গলে পড়ে। সব থেমে গেলে তেলচিটে বালিশে মাথা রেখে বচ্চন মুখ হাঁ করে ঘুমায়। মুখের গড়ানো লালে বালিশ ভেজে। পাশে শুয়ে মালতীর কিছুই চোখে পড়ে না। ঠোঁটের উপর ঘামের বিন্দু জমে। আঙুলের ডগা দিয়ে আলতো হাতে মুছে দেয়। উত্তমকুমারের নরম ছোঁয়ার মত । ঘরে অলীক সুবাস ঘোরে। ইচ্ছে করেই বুকে কাপড় টানে না। একটুকরো চাঁদের আলো এসে পড়ে গলায়, পেটে, স্তনবৃন্তে। যেন ওই পুরু ঠোঁট ঘুরে বেড়ায় তার শরীরে। কল্পসুখে সে শিউরে শিউরে উঠে। তারপর কখন ঘুমের অতলে তলিয়ে যায়। স্বপ্নে সুচিত্রাকে সরিয়ে দেয় মালতী, ঢুকে পড়ে উত্তমকুমারের বাহুর মধ্যে। উত্তমকুমারই অবশ্য থেকে যান। মাত্র দেড় বছরের মাথায় লাথি মেরে মেরে বচ্চন একদিন ঘর থেকে বার করে দেয়। ততদিনে ভাইরা ডাগর হয়েছে। নিজের নিজের কাজ-কর্ম শুরু করেছে। তারা দিদির পাশে দাঁড়ায়। বলে, “বাড়িতে এসে কদিন বসে থাক। দেখবি, সুড়সুড় করে ল্যাজ নাড়তে নাড়তে আবার এসে তোকে নিয়ে যাবে।” প্রথম প্রথম মালতীও তাই ভাবে। কিন্তু দেখে বচ্চন ফেরত নিতে এলে, বাড়ির সকলের বিগলিত মুখ। আর শোনে, “মায়ের শরীর খারাপ, রান্নাবান্না নিয়ে বহুত ক্যাচাল। রোজ রোজ ভাল লাগে না। নাহলে কোন শ্লা ...।” আবার বচ্চনের হাত ধরে নদী পেরোয়, শ্বশুরবাড়ি যায়। শরীরের ঘা এতদিনে শুকিয়েছে। আরেকবার উত্তমকুমারকে আঁকড়ে ধরে হাত । ... ...
কয়েকটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচিত হয়নি, ধরা যাক, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা কোভিডের মতো কোনো আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিত বিপদের সময় কীভাবে শিক্ষাব্যবস্থাকে বহাল রাখা যাবে? বন্যা অথবা ঝড় হলে (একটি শহর যেভাবে মোকাবিলা করবে একটি প্র্যত্যন্ত গ্রাম সেভাবে বাস্তবিকভাবেই পারবে না, কোনো দুর্গম অঞ্চলে অবস্থা আরও শোচনীয়) বা এজাতীয় কোনো অস্বাভাবিক ও কঠিন সময়ে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলির কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত? জুলাই মাসে যখন এই নীতিটি প্রকাশ করা হচ্ছে, তখন কোভিডের সর্বাধিক সীমা ছোঁওয়ার একটা পূর্বাভাষ পাওয়া যাচ্ছে, মাসের পর মাস যেখানে স্কুল বন্ধ, তখন শিক্ষাব্যবস্থায় কী বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণ করা দরকার, এমতাবস্থায় শিক্ষকরা কীভাবে পড়াবেন এরকম কোনো প্রসঙ্গ উত্থাপন করা হয়নি। অনলাইন এবং অফলাইন লার্নিং-এর কী পদ্ধতি এরকম পরিস্থিতিতে কেমনভাবে ব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠতে পারে তার কোনো উল্লেখ নেই। ইন্টারনেট না থাকলে শিক্ষা কীভবে বহাল থাকবে? এরকম কোনো বিষয়ই উঠে আসেনি। এই প্রসঙ্গে বলি, আমি আপ্লুত, যে কোভিডের এই আস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গে কিছু নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক আজ সফল। এই কঠিন সময়ে, কোনো সাহায্য ব্যতীত, নিজস্ব উদ্যোগে নতুন শিক্ষণকৌশল উদ্ভাবন করে শিশুদের কাছে পৌঁছোতে পেরেছেন। ... ...
খিচুড়ির পূর্বজ কৃসর-র খোঁজে ভরতমুনির রুদ্ধশ্বাস নাট্যশাস্ত্র পার করে এবার পার করতে হবে মনুর ধর্মশাস্ত্র—মনুষ্য রসনাকে একদিকে ভয় অন্যদিকে লোভ দেখিয়ে শৃঙ্খল-বদ্ধ করার সে রোমহর্ষক প্রয়াস। খাবার রইল না কেবলই পেট-ভরানোর বস্তু, তা হয়ে গেল একটা বিশেষ আর্থসামাজিক ব্যবস্থা কায়েম রাখার অন্যতম হাতিয়ার। সেই খাদ্যাস্ত্র হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছে কৃসর। নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
সোনা রোদ্দুরে আবিল দুপুর পশমিনা শালে ঝোল কলঙ্ক, কিন্তু কেমন স্মৃতিভারাতুর, ভাঁড়ের ছ্যাঁদায় কাছা কোঁচা ময়। বে'বাড়ির ভোজে আঁচাবো কোথায়, অম্বল সুধা, ধূমপানে মন? যত্নে প্রত্ন খুঁড়ে দেখাবেন সঙ্গে আছেন ডিডি মহাশয়। ... ...
শ্যামলবাবুর সঙ্গে মেশা আমার জীবনের এক মহার্ঘ স্মৃতি। তা ছিল অম্ল এবং মধুরতায় মেশানো। প্রথমে শ্যামলবাবু ধরেই নিয়েছিলেন আমার দ্বারা তেমন লেখা হবে না। বন্ধুরাই বলে। আর শৈবাল বলে। একদিন তো আমাকে বলেই বসলেন, লেখা অভ্যাস করো, প্রতিদিন লেখো, তবে তুমি এদের সঙ্গে মেলামেশার উপযুক্ত হয়ে উঠবে। ভয় করতাম খুব। একদিন তুষার সমীরের সঙ্গে সন্ধ্যায় গিয়েছি শ্যামলদার বাড়ি। ওরাই টেনে নিয়ে গিয়েছিল। পান করা হল। শ্যামলদা আমাকে নিয়ে পড়লেন। আমার কাছে কুলটিকরির খবরাখবর নিলেন। হাটের খবর, চালের দর, সবজির দর ইত্যাদি। সুবর্ণরেখা এবং ডুলং নদীর কথা শুনলেন। তিনি বললেন বিদ্যাধরীর মৃত্যুর কথা। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় যা দেখেছিলেন। তাঁর রাখাল কড়াই, চন্দনেশ্বরের মাচানতলায় ইত্যাদি গল্পে আর কুবেরের বিষয়আশয় উপন্যাসে যা আছে। ... ...
প্রাথমিক ভাবে বিভিন্ন বোর্ডের বাংলা সিলেবাসের নির্মিতি অংশ নিয়েই আমার মনে এমন প্রশ্ন জাগে। ধরা যাক, সমার্থক শব্দ পড়াতে গিয়ে জলের প্রতিশব্দ শিখিয়েছি- অপ, সলিল,অম্বু, উদক, তোয়, পয়ঃ, নীর, পানি, ইলা ইত্যাদি। বা কন্যা শব্দের প্রতিশব্দ শেখাতে হয়েছে তনয়া, দুহিতা, আত্মজা, নন্দিনী, মেয়ে, দারিকা, ইত্যাদি। বা পৃথিবীর প্রতিশব্দ শেখাতে গিয়ে শিখিয়েছি- ধরা, ধরণী, বসুধা, ভূ, ধরিত্রী, মেদিনী, ক্ষিতি, জগত ইত্যাদি। এত সমার্থক শব্দ মুখস্থ করিয়ে পড়ুয়াদের লাভ কী! কিন্তু আমরা যারা পড়াই তাদের শেখাতেই হবে। অন্ধের মতো মুখস্থ করা ছাড়া ছোটোদের কাছেও কোন উপায় থাকে না! ... ...
সত্যি কথা বলি কাজীদা, আস্তে আস্তে কেমন ভালই লেগে গেল শিবপুরকে। ননী জেঠুর অনুমতি নিয়ে আরও দুয়েকটা বাচ্চাকে পড়াই, হাতখরচের টাকা উঠে যায়। নানা মানুষের সঙ্গে মিশি, সাহিত্য সভায় যাই, লাইব্রেরিতে কিছু কাজের দায়িত্ব পাই, গান্ধি বিফল হলে যে লড়াই লড়তে হবে, তার আঁচ গায়ে লাগে, মিছিল-মিটিংয়েও যাই। পিংলার সঙ্গে তো সেইভাবেই বন্ধুত্ব হয়ে গেল একদিন। করাচির কথা, আপনার কথা সব শুনেছি। একদিন বলল আপনার ‘নবযুগ’-এর কথা। মাঝেমধ্যে গঙ্গা পেরিয়ে ‘নবযুগ’ কিনেও আনে। সেই ‘নবযুগ’ পড়িয়েছি একজনকে। আপনার সঙ্গে তিনি আলাপ করবেন। কাল আসবেন একবার? ... ...
এ তো গেল সামাজিক আচার-বিচার সংক্রান্ত চাপ, যা রবীন্দ্রনাথকে সামলাতে হয়েছিল। কিন্তু এর পাশাপাশি শিক্ষার সামগ্রিক ব্যবস্থাটাকেই ভিতর থেকে বদলে দেবার জন্য রীতিমত অন্তর্ঘাত চলতে থাকে। বস্তুত রবীন্দ্রনাথের নোবেল পাওয়ার পর থেকেই শান্তিনিকেতনে এই মারণ-জীবাণু প্রবেশ করে। নোবেল-প্রাপকের বিদ্যালয়ে সন্তানকে পড়িয়ে আত্মপ্রসাদ ও সামাজিক গরিমাবৃদ্ধির তাড়নায় সেখানে সামাজিকভাবে উচ্চ আর ধনী অভিজাত শ্রেণীর ভিড় বাড়তে থাকে। এই শ্রেণীটির অর্থ এবং তজ্জনিত ক্ষমতার জোর ছিল প্রবল। মূলত তাঁদের চাপেই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনেক অবাঞ্ছিত পরিবর্তনেও সায় দিতে বাধ্য হন। আগে এখানে মণ্ডলীপ্রথায় শিক্ষা হত, অর্থাৎ ছাত্র-শিক্ষক একই সঙ্গে মাটিতে বসে পড়াশুনা হত। তিরিশের দশকেই তার পরিবর্তে শিক্ষকদের জন্য উঁচু মাটির বেদী তৈরি হয়। খাওয়াদাওয়ার পর ছাত্রদের নিজেদের বাসন মেজে নেবার রীতিও উঠে যায়। ছবি আঁকা, গান, হাতের কাজ, গ্রামসেবা ইত্যাদি বিষয়গুলোকে মূল পাঠক্রম থেকে সরিয়ে ‘আনুষাঙ্গিক পাঠক্রমে’ পরিণত করা হয়। ১৯৩১ সালে বিশ্বভারতীর তরফে আনন্দবাজার পত্রিকায় একটা বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। তাতে শান্তিনিকেতন ওই সময় কী কী বিষয়ে পঠন পাঠন হয় এবং কী কী পরীক্ষা বা ডিগ্রি দেওয়া হয়, তার উল্লেখ ছিল। তাতে এও জানানো হয়েছিল যে, বিশ্বভারতীর ছাত্রদের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে আই.এ এবং বি.এ পরীক্ষা দেবারও ব্যবস্থা আছে। মহান রাবীন্দ্রিক শিক্ষাদর্শ থেকে মুখ ঘুরিয়ে এই যে বিশ্বভারতীর কেরানী-গড়ার প্রথাগত শিক্ষার দিকে চলন, তা-ই রবীন্দ্রনাথকে হতাশ করে তুলেছিল। ১৯২৫ সালে লেখা একটি চিঠিতে তিনি জানাচ্ছেন, “একদিন এই কলেজের বিরুদ্ধে মাথা তুলেই একলা আমার তরী ভাসিয়েছিলুম --- কিন্তু তরী ঘুরেফিরে এলো সেই কলেজের ঘাটেই। বসে বসে দেখছি … শান্তিনিকেতন আপন আইডিয়ালের গর্ব ভাসিয়ে দিয়ে ছেলে পাশ করাচ্ছে। … ভাগ্যে ছিল আমার কলাভবন এবং শ্রীনিকেতন। আমার শেষ বয়সের সমস্ত চেষ্টা যদি ঐ কলাভবন সংগীত ভবনের জন্য দিতে পারতুম … মনে করতুম জীবন সার্থক হয়েছে।“ ... ...
চলার গতি বাড়ে। সেই সঙ্গে বাড়ে কোমরের দুলুনি। ওই দুলুনি জল বাঁচানোর জন্য। জল, খাবার জল। এই সোঁদরবনের গাঁ গেরামে বড়ো মহার্ঘ এই জল। কেউ একফোঁটা খরচ করে না অকারণে। করতে নেই। কেননা জল এখানে মাথা কুটলেও মিলবে না কোথাও। কেমন মজা বোঝো! মজাটি নিয়ে শরিফা আর ওর মিতেনি জীবন ঢালির বউ নেকি এক সময় খুব হাসাহাসি করত। জলের দেশের মেয়ে ওরা। জলের অভাব ব্যাপারটা মাথায় ঢোকে না কিছুতেই। মুখে বলেও, ধুস তাই আবার হয় নিকি! ভাত নি, কাপড় নি সে তো বুঝি, তা বলে পানি নি! শরিফার স্বামী ময়জুদ্দি হেসে বলে, হয় হয়। এটাই তো মজা র্যা। সোঁদরবনে পানি আছে, তবে লোনা, খাবার পানি খুব কম। হ্যাঁ, দেখেছে শরিফা, উলার চকে আট-আটটা টিউকল বসল। পানি উঠল বালি গোলা। খাওয়া দূরে থাক, মুখে দিলে ওয়াক থুঃ। পুকুরের পানি! সে তো তিন-চার মাস। খেলে পেটে ঘা হয়। বলে আর্সেনিক। তবে পানি কোথায়! হুই ডাঁসা নদী পার হও। ভবানীপুরে ডিপ টিউকল করেছে পঞ্চায়েত। সেখান থে পানি নে এসো। কিন্তু যাবে কীভাবে? বড়ো বাধা যে নদী। ছোটো-বড়ো নাও যা আছে, সব মাছ মারতে যায় বাদায়, চালানি যায় হাসনাবাদে। দু-একখানা নাও যা আছে, সেখানে ফ্যালো কড়ি মাখো তেল। কলসি-বালতি পিছু এক টাকা, নগদা-নগদি। টাকা দাও আর পানি নাও। কার আছে পয়সা! উলার চকের মানুষের চাষবাসের উপর জীবন। ছ-মাস কাজ, বাকি সময় জোন খাটো, নাও চালাও নয়তো বিশপুরের হাটে মাল বও। না হলে উঞ্ছবৃত্তি করে চালাও। তাই পানি নিয়ে চলে টানাপোড়েন। কখনও মারপিট, মেয়ে হলে ইজ্জতের উপর হামলা। অনন্ত ঢালির বউ আয়না এক কাণ্ড ঘটিয়েছে। সে শরীরের রং ঢং দেখিয়ে মাঝিদের বশ করে পানি আনত। কিন্তু রসিক মাঝি সেয়ানা খুব, সুযোগ বুঝে একদিন হামলে পড়ল ওর উপর। আর আয়নাও তেমনি৷ ইজ্জত বাঁচাতে দিল হালের বাড়ি কষিয়ে। এক ঘায়ে কাত রসিক। আয়না এখন জেলে। ওর রুগ্ন ছেলেটা মা মা বলে উলার চকের আকাশ বাতাস ভারী করে চলেছে। ... ...
আশ্চর্যজনক ভাবে পুলিশ আগমনের কয়েক ঘন্টার মধ্যে লিখে ফেলা এই প্রতিবেদনের সঙ্গে রামধনির খারিজ হওয়া বয়ান হুবহু মিলে যায়। এই মিল আপতিক বা সাজানো হওয়া কঠিন, কারণ সংবাদপত্রের প্রতিবেদকের পক্ষে বহুদিন পরে রামধনি আদালতে গিয়ে কী বলবেন সেটা আন্দাজ করা অসম্ভব। যেটা সম্ভব, সেটা হল, রামধনি হয়তো আদালতে সত্যি কথাই বলছিলেন। এটি অবশ্য একটি সম্ভাবনাই, কিন্তু সেটা ফেলে দেবার মতো নয়। এবং আদালতে সংবাদপত্র প্রসঙ্গটি আসেইনি। রক্তের দাগের প্রসঙ্গটি অবশ্য এসেছিল। হাইকোর্টে ধনঞ্জয়ের কৌঁসুলী প্রশ্ন তোলেন, যে, এই নৃশংস খুনের(হেতালের শরীরে ২১ টি আঘাত ছিল) পরেও কোনো সাক্ষীই কেন ধনঞ্জয়ের হাল্কা রঙের জামাকাপড়ে কোনো রক্তের দাগ দেখতে পায়নি? সরকারপক্ষের আখ্যানে এর কোনো উত্তর নেই। বিচারক রায়দানের সময় এই ধাঁধার সমাধান করেন এই ভাবে, যে, যেহেতু খুনের আগে ধর্ষণ হয়েছে, তাই খুনের সময় ধনঞ্জয়ের শরীরে জামাকাপড় ছিলনা। এবং সেখানে রক্তের দাগ লাগার তাই কোনো প্রশ্নই নেই। ... ...
মোড় থেকেই বিশ্বনাথ মন্দিরে যাওয়ার লোহার রেলিং-ঘেরা হাঁটার রাস্তা, লোকে ডালি-ফালি নিয়ে লাইন দিয়ে চলেছে। এদিকে একইরকম আরও একটা রাস্তার মসজিদে ঢোকার মুখে, যদিও সেখানে কেউ নেই। পাশে কয়েকজন পুলিশ জটলা করছে। পূর্বঅভিজ্ঞতা থেকে বুঝলাম জিজ্ঞেস করে লাভ নেই। তাই হেলতে দুলতে ওই রেলিং-ঘেরা জায়গাটা দিয়ে চলতে শুরু করলাম। কয়েকপা এগোতেই জটলাকারী পুলিশের দল ছুটে এসে জেরা শুরু করে দিল। ততক্ষণে বেশ রাগ হচ্ছে। কোথায় যাচ্ছেন, কেন যাচ্ছেন এসবের উত্তরে বললাম আর্কিওলজিকাল সাইট, তাই দেখতে এসেছি। খুব বিশ্রীরকম সন্দেহজনক দৃষ্টিতে দেখে নিয়ে, যাওয়ার নিয়ম নেই, বলে ভাগিয়ে দিল ওখান থেকে আমাদের। ... ...
সোনালী কাবিন কাব্যে ছিল যে তীব্র প্রেম আর আদিমতা, আল মাহমুদ আসলে সেই কবিই। রক্তমাংসের এমন নোনা গন্ধ বাংলা সাহিত্যে বিরল নিশ্চয়। আল মাহমুদের গল্প সেই গল্পই। নর নারীর জৈবিক প্রেম, আদিমতার সাহসী উচ্চারণ যেমন তাঁর কাব্যে দিয়েছিল অচেনা এক সুষমা, গল্পেও তাই। পানকৌড়ির রক্ত, কালো নৌকো, রোকনের স্বপ্নদোলা, নীল নাকফুল, বুনো বৃষ্টির প্ররোচনা… আল মাহমুদ যে গল্প লিখেছেন, সেই গল্পে সোনালী কাবিনের কবিকে চেনা যায়। চেনা যায় তীব্র প্রেম, যৌনতা, আদিমতার এক অচেনা রূপ। আমি যতবার পড়েছি পানকৌড়ির রক্ত কিংবা জলবেশ্যা, পেয়েছি নতুন মাত্রা। জলবেশ্যার কথা নতুন করে বলি। নতুন করে বলি পেঁয়াজ, রসুন, লঙ্কার গন্ধ জড়ান মেঘনা তীরের লালপুর হাটের কথা। সেই হাট আমার অচেনা। আমি দেখিনি। মেঘনা ফেলে এসেছি ওপারে, লালপুর হাটও। কী করে চিনব? চিনেছি আল মাহমুদ এ। ... ...
আমরা আজকের রাজনৈতিক পরিস্থিতির নিরিখে তৃণমূল কংগ্রেসকে বিজেপি বিরোধী এক শক্তি হিসেবে দেখি। সিপিএম যেভাবে তৃণমূল ও বিজেপিকে একাকার করে বিজেমূল নামে একটি কাল্পনিক দল তৈরি করে ফেলেছে বা বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে আগে তৃণমূলকে হারাতে হবে এমন এক অদ্ভুত রাজনৈতিক উপসংহার টেনেছে আমরা তাকে ভ্রান্ত মনে করি। ... ...
মন দিয়ে শুনছেন যে শ্রোতা তিনি হয়তো এই কবিতায় দুটি বিসংবাদী সুর শুনে চমকে উঠছেন! আজ্ঞার সুর যে এখানে বড়ো বেশি প্রকট এবং সুতীব্র, আবার কাতর কণ্ঠের কোমল সুরও। পরস্পরবিরোধী সুর সব, কবি শঙ্খ ঘোষের এমনই কাব্যরীতি যে এই দুই অতি ভিন্ন সুরের মেলবন্ধনেই তিনি রচনা করে চলেছেন এক অনবদ্য রাগিণী— যেন পাঠকের কাছে পেশ করছেন কোনো সিম্ফনি। ... ...
প্রকাশিত হল জয় গোস্বামীর কবিতার বই, 'দগ্ধ'। কবির হাতেই। কবিতার বই কি বলা যায় একে? কবি যেখানে নিজেই বলছেন, "এই ঘটনার পর কবিতা বলে কি কিছু বাকি থাকে নাকি?" ... ...
গোপন কথাটি রবে না গোপনে এমন তো নয় যে আমেরিকা সারা বিশ্বের শান্তিরক্ষার ইজারা নিয়েছিল কোনোদিন। কিন্তু বাংলাদেশ নিয়ে যখন দুনিয়া উত্তাল তখনও আমেরিকা একবারও মুখ ফুটে কোনো প্রতিবাদের ধার কাছ দিয়েও যায়নি কেন? সামান্য হিপোক্রেসিও কি আশা করা যেত না? লেখক বাস তিনটি কারণ বলেছেন। প্রথম দুটি গৌণ। প্রথমত, নিকসন আর ইয়াহিয়া, দুজনের কেউই যখন নিজের নিজের দেশের প্রেসিডেন্ট নন, তখন থেকেই দুজনের মধ্যে একটা সখ্যতা ছিল। নিকসনের অন্তরঙ্গ কথোপকথনের যে টেপ পাওয়া যায় তাতে দুজনের সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ হয়েছে একাধিক বার। দ্বিতীয়ত, নিকসন, ইন্দিরা গান্ধিকে রীতিমতন অপছন্দ করতেন। রাশিয়ার সাথে মাখামাখি, ইন্দিরা সোস্যালিস্ট ঝোঁক—শুধু এগুলিই নয়। মানুষ হিসেবেই ইন্দিরাকে নিকসন পছন্দ করতেন না। এর আগে একবার দুজনের মিটিং হয়েছিল দিল্লিতে মিনিট কুড়ির জন্য। ইন্দিরা নাকি যথেষ্ট উৎসাহ তো দেখানইনি, তায় তাঁর এক সহকর্মীকে হিন্দিতে প্রশ্ন করেন, “এ আরও কতক্ষণ টাইম নেবে?” নিকসনের আর-এক পরামর্শদাতার মতে নিকসন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে কোনো মহিলাকে হজম করতে পারতেন না। তো সে কথা বলতে কী, নিকসন গোটা ভারতীয় জাতিকেই অপছন্দ করতেন, বলেছিলেন ভারতীয়রা ‘Slippery and treachorous’। পাকিস্তান ও তার অধিবাসীদের ক্ষেত্রে কিন্তু প্রশংসাই বরাদ্দ ছিল। ... ...