কিছু ঠিকই, কিন্তু সেই কিছুটা কী? খুলেই দেখা যাক, বলতে বলতে বাটিটা তুলে নিয়ে চাপা দেওয়া থালাটা সরিয়ে দেয় নজরুল। এক বাটি আলুর দম, কড়া মশলায় বেশ লালচে দেখাচ্ছে। দে গোরুর গা ধুইয়ে – উচ্ছ্বসিত নজরুলের চিৎকৃত কণ্ঠস্বর শোনা যায়, মাহ্মুদের দোকান থেকে রুটি নিয়ে আয় শৈলজা, রাত্তিরের ডিনারটা জমে যাবে। তারপর মোহিতলালের দিকে ফিরে বলে, স্যার, ক’খানা রুটি আপনার জন্যে? ... ...
ছোটে নবাব সাহেবের সাথে বিশাল আকৃতির জরাজীর্ণ বালাখানার সামনে এসে দাঁড়ালাম। প্রাসাদের ভাঙা সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় ওঠার সময় নবাব সাহেব জানালেন, বর্তমানে এই বালাখানাই নাকি কেল্লা নিজামতের সব থেকে পুরনো প্রাসাদ। এই প্রাসাদ নিয়ে একটি গল্পও শোনালেন, বালাখানা প্রাসাদের নির্মাণকাজ চলাকালীন, কোনো এক জরুরি কাজে নবাব হুমায়ুন জা-কে নাকি ইংল্যান্ড যেতে হয়েছিল। ইংল্যান্ডে তিনি উঠেছিলেন মহারাণী ভিক্টোরিয়ার বাকিংহাম প্যালেসে। অল্পবয়সী নবাব প্যালেস দেখে মুগ্ধ হয়ে যান, এবং মুর্শিদাবাদে বাকিংহাম প্যালেসের মত একটি প্রাসাদ নির্মাণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। হুমায়ুন জা তাঁর সেই ইচ্ছের কথা একদিন সময় সুযোগ বুঝে রাণী ভিক্টোরিয়ার কাছেও প্রকাশ করেন, এবং সেই মর্মে মহারাণীর কাছ থেকে একটি লিখিত অনুমতিও চেয়ে নিয়ে আসেন। মুর্শিদাবাদে ফিরেই তিনি বালাখানা প্রাসাদের নির্মাণকার্য বন্ধ করে, বাকিংহাম প্যালেসের আদলে একটি নতুন প্রাসাদ নির্মাণ করার আদেশ দেন। সেদিনের সেই প্রাসাদটিই নাকি আজকের হাজারদুয়ারি। ... ...
একটা সময় ছিল যখন এই নবাবি কেল্লার জৌলুশ ছিল দেখার মত। কেল্লার প্রধান ফটক থাকত উচ্চ নিরাপত্তায় মোড়া। সেই নিরাপত্তা ভেদ করে কোনও মাছিরও কেল্লার ভেতরে প্রবেশের অধিকার ছিল না। কেল্লার সেই প্রধান ফটকের পাশেই ছিল নবাবি সেপাইদের বসবাস করার ঘর। ভাগ্যের পরিহাসে আজ সেই ঘরে বসবাস করেন মুর্শিদাবাদের বর্তমান নবাব বাহাদুর সৈয়দ মহাম্মদ আব্বাস আলি মির্জা ও তার পরিবার পরিজন। নবাবি আমলে কেল্লায় প্রধান ফটক ‘দক্ষিণ দরজার’ মাথায় থাকত নহবৎখানা। সেখানে নবাবের শাহি বাদকরা সকাল-সন্ধ্যা সানাই বাজাত। সানাই-এর সেই সুর কেল্লা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ত দূর-দূরান্তে। আজ সেই দক্ষিণ দরজা অক্ষুণ্ণ থাকলেও, নেই সেই বাদকেরা। শোনা যায় না সানাইয়ের মন মাতানো সেই সুর। ... ...
মৃত্যু বলতে চাই, মৃত্যু লিখতে চাই। শুরুতে না হয় শেষে, সমস্ত চেতনা জুড়ে থাকার মতো এই মৃত্যুর নিদারুণ অপচয়। যতো জীবনে লগ্ন হবার স্বপ্ন দেখবো, ততোই মৃত্যুর অধিক যন্ত্রণা নিয়ে আসবে স্ট্যান স্বামীর এই অনর্থক মৃত্যু, নির্দয় হত্যা। ভারত রাষ্ট্রকে এই হত্যার দায় নিতে হবে। জবাবদিহি করতে হবে। জানাতে হবে কেন সাজানো মামলায় তাঁকে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল, কেনই বা মাওবাদী যোগের মিথ্যা অপবাদ আনা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে। কর্পোরেটের পথ নিষ্কন্টক করার জন্য আর কতো বলিদান চাই, উত্তর দিতে হবে। ... ...
করোনা অতিমারির সময়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার অসামান্য গুরুত্ব আমাদের সবার দৃষ্টিপথ, শ্রুতি এবং ভাবনার ক্ষেত্রপথের একেবারে বাইরে চলে যাচ্ছে। অতি উচ্চ মুল্যের আইসিইউ পরিষেবা, উচ্চচাপের অক্সিজেনের ব্যবস্থা, ECMO ইত্যাদি জন মানসিকতায় ক্রমশ গ্রাহ্য হয়ে উঠছে, মান্যতা পাচ্ছে। মনে ক্ষোভ পুষে রেখেও সাধারণভাবে মানুষ চাইছে বেশি দামের রেমডেসিভিরের চিকিৎসা – নিতান্ত কমদামের এবং একমাত্র “improved survival” ঘটাতে পারে ডেক্সোমেথাসোনের চিকিৎসা নয়। চিকিৎসকেরাও এই সোশ্যাল সাইকি বা গণমানসিকতার বশে থাকছেন বেশিরভাগ সময়েই। বাজারের, মিডিয়ার এবং বিজ্ঞাপনের দুর্মর শক্তি উভয়কেই নিয়ন্ত্রিত এবং প্রভাবিত করছে। ফলে চিকিৎসা আরও বেশি করে হাই-টেক হয়ে উঠছে, ভার্টিকাল প্রোগ্রামের দিকে ঝুঁকছে। এবং ক্রমাগত ঝুঁকবে। ... ...
আমার একটা বিশ্বাস আছে। তাকে আমি সত্য মনে করি। সত্য আপেক্ষিক হলেও, এই সত্যে পৌঁছতে পেরেছি আমি। একে ধরে থাকি। ক্ষমতাকে মনে করি অন্ধকারের পথে যাত্রা। ছিল না, তাই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পেরেছি হয়ত। সিভিল সার্ভিসে না যাওয়াও তাই হয়ত। ধ্রুবপুত্র উপন্যাস এই কথাই বলেছে শেষ পর্যন্ত। বুদ্ধের দর্শন তাইই ছিল। নিজেকে নিঃশেষ করতে করতে, শূন্যের কাছে আত্মসমর্পণ। ‘হে নবীন সন্ন্যাসী’ উপন্যাসটি সেই কথা বলতে চেয়েছে। আমি কলহ করি। সুনাম আছে। কিন্তু যখন বুঝি ভুল হয়েছে, আবার এগিয়ে যাই। হে বন্ধু, কাছে এস, হাত ধরো। বন্ধুদের অনেকে ফেরে। ফেরেও না দেখেছি। না ফিরে অপমানও করেছে সত্য। ... ...
আমি গেছি দূর মফঃস্বলে চাকরি করতে। তখন যা দিন, মোবাইল ফোন কেন সেই মফঃস্বলে ইলেকট্রিকের আলো ছিল না, পোস্ট অফিস ছিল না। চিঠি ফেলতে ভিন গাঁয়ে যেতে হত। চিঠি দিলে একমাস আগে কলকাতা পৌঁছত না। বাস থেকে নেমে এক ঘন্টা পঁয়তাল্লিশ মিনিট হাঁটতে হত অফিস মানে হল্কা ক্যাম্পে পৌঁছতে, এমনই সে জায়গা। ছোটনাগপুরের মালভূমির লেজা সেই অঞ্চল। তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্রের একটি কন্যা। বয়স তার আড়াই তিন। সে তার ঠাকমাকে বলল, ছেলেধরা নিয়ে গেছে বাবুজিকাকাকে। হারিয়ে গেছে, আর ফিরবে না। শিশু যা শোনে তাই বলে। তাকে যা বলে ভয় দেখান হয়, সেও তাই বলে ভয় দেখায় ঠাকমাকে। মা তখন পিতামহী। মায়ের ঘুম আসে না। ছুটিতে বাড়ি এলে জিজ্ঞেস করে মা রাধারানি, কী খাই, কেমন জায়গা। ডাল আলু সেদ্ধ আর কুঁদরি পোস্ত ? মাছ হয় না? মাংস ? সকাল বিকেল মুড়ি, কেন পরোটা লুচি করে দিতে পারে না ? জানেই না মা ওসব। আমাদের দেশটা আসলে খুব গরিব। গ্রামটা আরো গরিব। শুনতে শুনতে মা চুপ। বুঝতে চাইছিলেন দেশটাকে আমার চোখ দিয়ে। ধরা গলায় বললেন, তুই বরং চাকরি ছেড়ে দিয়ে আয়, অন্য কিছু দেখ। না, চাকরি আমার কাছে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে, দেশটাকে আমি চিনতে পারছি দিনে দিনে। মা চুপ করে থাকলেন, অবশেষে বললেন, দেশ সব জায়গা থেকে চেনা যায়। জমি মাটি মানুষ না চিনলে বড় হওয়া যায় না। মা বলল, বড় হবি তুই ? কী করে, প্রমোশন কবে হবে ? প্রমোশন না মা, লিখতে চাই, গল্প লিখছি, শুনবে? আমি কী বুঝব, কিন্তু তুই যদি নিজে বুঝিস হচ্ছে, তবে ছাড়বিনে, ধরে রাখবি, ছাড়বিনে একদম। মন্ত্র পেয়ে গিয়েছিলাম। ... ...
১৯৭৫। বাঁকুড়ার ছোট্ট মফস্সল শহর বিষ্ণুপুর থেকে বেরিয়ে পড়েছেন দুই তরুণ। দুনিয়া ঘুরে দেখার আগে সাঙ্গ করছেন ভারতভ্রমণ ইন্দিরা গান্ধির পরামর্শ মতো। সাইকেলে। কিছু পরে হাল ছাড়লেন দ্বিতীয় জন। ঘুরতে থাকে তৃতীয়জনের সাইকেলের চাকা। ১৭ বছর। ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলোমিটার। ১৫৪ টি দেশ। আজও এ কীর্তিতে তিনি অদ্বিতীয়। এই প্রথম দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে সে পরমাশ্চর্য সফরের অনুপুঙ্খ কাহিনি শোনাচ্ছেন জয় মণ্ডল। এ পর্বে দিল্লিতে ঋত্বিক ঘটকের সঙ্গে হঠাৎ পরিচয় আর শুভ্রা মুখোপাধ্যায়ের স্নেহের স্মৃতি। আলাপে নীলাঞ্জন হাজরা। ... ...
দুনিয়ায় এখন আর্থিক অসাম্য যতখানি, টমাস পিকেটি সাক্ষী, শিল্প বিপ্লবের পর আর কখনও অসাম্য এতখানি বাড়েনি। অসাম্য জিনিসটা তার নিজের কারণেই খারাপ— জিনিসটা অন্যায়, অনৈতিক। কিন্তু, পুঁজিবাদের একটা কু-অভ্যাস, তা নৈতিকতার যুক্তিকে স্বীকার করতে চায় না। কাজেই, চাহিদা-জোগানের দিক থেকেও যে অসাম্য জিনিসটা খারাপ, সেটা মনে করিয়ে দেওয়া ভাল।ধরুন, মোট ১০০ টাকা আছে, সেটাকে দু’রকম ভাবে ভাগ করা যায়— দশ জনের মধ্যে দশ টাকা করে; আর, এক জন ৯১ টাকা, বাকি ন’জন এক টাকা করে। দ্বিতীয় বিকল্পে শেষ ন’জনের ক্রয়ক্ষমতা বলে কার্যত কিছু নেই, ফলে তাঁদের চাহিদাও নেই। প্রথম জনের হাতে অনেক টাকা, কিন্তু ভোগব্যয়ে খরচ করার প্রথমত একটা সীমা আছে; আর দ্বিতীয়ত, প্রাথমিকপ্রয়োজন মেটানোর পর যে ভোগব্যয়, তাতে খরচ হওয়া টাকার বণ্টনও এই দ্বিতীয় বিকল্পের মতোই অসম। ... ...
ইহুদি মতে ঈশ্বর আদি ঘটক। তিনি স্থির করেন কার সঙ্গে কার বিবাহ হবে (রব নে বানাই জোড়ি স্মরণ করুন)। কিন্তু তিনি তো আর এই দুনিয়ার সব জায়গায় হাজির থেকে এতো মানুষের মধ্যে যোগাযোগ করাতে পারেন না। তাঁর আরও হাজারটা কাজ আছে। অতএব মর্ত্যভূমিতে এই মহান ব্রতটি সম্পন্ন করার ভার নিয়ে যিনি অবতীর্ণ হয়েছেন তিনি হলেন শদখেন, ঘটক। ... ...
বিভিন্ন বিমানবন্দর এবং দপ্তর এ যে তাপীয় স্ক্যানারগুলি লাগান হয়েছে তা দিয়ে শুধুমাত্র জ্বর হয়েছে কিনা তা সনাক্ত করা যায় তবে কারো করোন ভাইরাস আছে কিনা তা সনাক্তকরণের একমাত্র স্বীকৃত পদ্ধতি হল RTPCR। আর সমস্ত ভাইরাল সংক্রমিত অসুখের যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা এ, ইনফ্লুয়েঞ্জা বি, সার্স (SARS) এবং এইচ১এন১ (H1N1) মতনই COVID19 নিশ্চিত করতে সুচারু ভাবে সুনির্দিষ্ট ল্যাবরেটরি তেই রুগীর গলার পেছন থেকে সোয়াব, বা লালা নমুনা, এবং নিম্ন-শ্বাসনালী এর তরল নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়। ... ...
ছবি নিয়ে তিনি আঁচড় কাটতে কাটতে যে গভীরতায় পৌঁছেছিলেন, আজীবন সাঁতারু বহু শিল্পীর সে জলে পৌঁছানো হয়ে ওঠে না। অতএব, প্রত্যাশিতভাবেই, ইউরোপীয় চিত্রদর্শনে অভ্যস্ত চোখ বা প্রাচ্য চিত্ররীতিতে অভ্যস্ত অনুভূতি – দুইয়ের কেউই রবীন্দ্র-অনুভবে গভীর অবগাহনে সক্ষম হলেন না – হওয়া সম্ভবই ছিল না, হয়ত। একটি সাক্ষাৎকারে এই সময়ের শিল্পী লালুপ্রসাদ সাউ বিমূর্ত শিল্পকলা প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন, রবীন্দ্রনাথের ছবি, তাঁর মননটাই সম্পূর্ণ আলাদা স্তরের – সেই চেতনার স্তরে উত্তরণ সবার পক্ষে সম্ভব নয়। ... ...
রজতাভ দত্ত বা গৌতম ঘোষ ধৈর্য্য ধরার কথা বলছেন বটে, কিন্তু তাঁরাও জানেন, তেমন অবকাশ টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রির অনেকেরই নেই। ... ...
ব্রজ রায়দের লড়াই থামে না। একের পর এক বাধা পেরোতে হয়। ব্রজ রায় মনে করতেন, আদর্শ কমিউনিস্ট হতে গেলে একজন ব্যক্তিকে নিজের সঙ্গেও লড়াই করতে হয়। জীবনচর্যায় নিরন্তন চাই সেই বোধের অনুশীলন। অনাড়ম্বর জীবন যাপনই কেবল নয়, জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে তিনি ছিলেন সেই আদর্শের সৈনিক। আন্দোলন যাতে বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ গড়ার কাজ থেকে সরে না আসে, সরকারি বা বিদেশি অনুদান নির্ভর সংগঠনে পরিণত না হয় সে বিষয়েও শেষদিন পর্যন্ত সচেষ্ট ছিলেন। কারণ এন জি ও’র নামে অরাজনীতির রাজনীতিকে তিনি ঘৃণা করতেন। অভ্যাসবশত আমরা অনেকেই এমন শব্দ ব্যবহার করি, ভাববাদী ধারণা থেকেই যেগুলির জন্ম। কোনো ব্যক্তির মৃত্যু হলে প্রয়াত শব্দটি আমরা প্রায়শই ব্যবহার করি। কিন্তু তাঁর এই শব্দে আপত্তি ছিল। শব্দটির সঙ্গে চলে যাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। যাওয়া মানেই তো গন্তব্যস্থল রয়েছে। তাঁর মতে মৃত্যুর পর ইহলোক থেকে পরলোকে যাওয়ার ধারণা থেকেই মৃত ও প্রয়াত কে সমার্থক করা হয়েছে। তাই এই শব্দের ব্যবহার মানে, পরলোকের ধারণাকে মেনে নেওয়া। আমরা অনেকেই ভাগ্যবাদী না হয়েও সৌভাগ্য, দুর্ভাগ্য এসব কথা ব্যবহার করি। তাঁর সামনে কেউ এসব শব্দ ব্যবহার করলেই তিনি আপত্তি করতেন। অভ্যাস ভাঙ্গাই তো এগিয়ে চলার শর্ত। সারা জীবন তিনি পথ খুঁজে এগিয়ে গেছেন, অনতিক্রম্যকে অতিক্রম করে। মৃত্যুর পরে তাঁর উত্তরসূরীরা সেই কাজই করলেন। করোনায় মৃত্যুর পর তাঁর দেহ রোগ নির্ণায়ক ময়নাতদন্তের কাজে লাগলো। গণদর্পণের কমরেডদের প্রচেষ্টা ও রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের সদিচ্ছা ছাড়া একাজ হত না। প্যাথলজিক্যাল অটোপ্সির জন্য তাঁর লড়াই কয়েক কদম এগিয়ে গেলো। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজেই রাজ্যের প্রথম মরণোত্তর দেহদান হয়েছিল আর সেখানেই হল প্যাথলজিক্যাল অটোপ্সি। দুটি ঘটনার সঙ্গেই জড়িয়ে আছেন ব্রজ রায়। এভাবেই এগিয়ে চলে ইতিহাস। ... ...
খাবার গল্প করতে গিয়ে সৌন্দর্য্য বোধের কথা উঠছে কেন? এটাই মূল কারণ – যদি নামী কোন ফ্রেঞ্চ রেষ্টুরান্টে খেতে যান, তাহলে সেটা নিজেই টের পাবেন। ধরুণ – একটা বিশাল স্টাইলের সাদা প্লেট দেবে – কিন্তু মাঝখানে ১০ গ্রাম মাংস, দুটো বীনসের দানা, এককাছি সবুজ পাতা চেরা। আর সেই মাংসের অর্ডার নেবার সময় আপনাকে ওয়েটার/ওয়ের্টেস সেই চিকেনের (যদি চিকেন অর্ডার করেন) বাল্যকাহিনী শোনাবে! চিকেন এই খেত, বনেবাদাড়ে খেলে বেড়াতো, তার মামারবাড়ি ওখানে, জবাই করার আগে সে এই এই জায়গা ভ্রমণ করেছে ইত্যাদি। প্রথম দিকে ঘাবড়ে যেতাম – এখন আলতো করে বলে দিই, চিকেনের জীবনগাথা শোনায় আমার ইন্টারেষ্ট নেই! ... ...
মতুয়াদের অসন্তোষ যে বিজেপি দলের বাংলা দখলের পথে সব থেকে বড় অন্তরায় হতে চলেছে এই আশঙ্কা করেই নরেন্দ্র মোদী ওড়াকান্দিতে গিয়ে হরিচাঁদ-গুরুচাঁদকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। তিনি মনে করছেন যে, মতুয়া বিধিমতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে পারলেই ভারতের মতুয়াদের মধ্যে একটি আলাদা আবেগ সঞ্চারিত হবে এবং মতুয়াদের সামনে রেখে বাংলা দখল সহজ হয়ে যাবে। ... ...
মনে পড়ে গেল পরের কথা। বলেই নিই। এখন ফেব্রুয়ারি চলছে। ২১ আসছে। আন্তর্জাতিক বাংলা ভাষা দিবস। আমাদের পশ্চিমবঙ্গে স্বাধীনতার আগে যত না বাংলাচর্চা ছিল, এখন তা কমেছে। ক্রমশ কমেছে। বাংলা ভাষার প্রতি মমত্ব কম আমাদের এখানে যত সরকার এসেছে, সকলের। কংগ্রেস, বামফ্রন্ট, বা বর্তমান সরকার কেউ বাংলা ভাষাকে আলাদা ভাবে মর্যাদা দেয়নি। ১৯৯৩ সাল ছিল বাংলা ১৪০০ সালের আরম্ভ। নতুন শতাব্দী। আমরা একটি আন্দোলন করেছিলাম, সরকারি কাজে বাংলা ব্যবহার, কলকাতা সহ সমস্ত পশ্চিমবঙ্গে বাংলা ভাষা স্কুলশিক্ষায় আবশ্যিক করা, বাংলা ভাষাকে দূরদর্শনে হিন্দি ও অন্য ভাষার সম-মর্যাদা দেওয়া। তখন কেবল টিভি আসেনি। দূরদর্শন ভরসা। দূ্রদর্শনে বাংলার সময় কমিয়ে দিয়ে হিন্দির আধিপত্য বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই আন্দোলনের কথা লিখিত থাকা উচিত। আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিক আশিস ঘোষ, এবং সমাজকর্মী রতন বসু মজুমদার ছিলেন আন্দোলনের নেতৃত্বে। আমি ছিলাম, আফসার আমেদ ছিলেন, প্রবুদ্ধ মিত্র, কবি গৌতম চৌধুরী, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, সব নাম এখন আর মনে নেই। ভাষা শহিদ স্মারক সমিতির উদ্যোগে এই আন্দোলন। আমরা দূরদর্শনের সামনে ধর্না দিয়েছিলাম মঞ্চ বেঁধে। স্মারকলিপি প্রদান করেছিলাম। দুই বাংলার শিল্পীদের নিয়ে একটি অপূর্ব অনুষ্ঠান করেছিলাম। সেখানে আমজাদ আলি সরোদে ‘আজি বাংলা দেশের হৃদয় হতে কখন আপনি…’ বাজিয়ে মুগ্ধ করে দিয়েছিলেন। এই আন্দোলন সমস্ত কলকাতায় ছড়িয়ে গিয়েছিল। আমি শিয়ালদা স্টেশনে পথসভায় বক্তৃতা করেছিলাম। আমাদের আন্দোলনের চাপে সরকারি কাজে বাংলা ভাষা ব্যবহারের এক উদ্যোগ নিয়েছিলেন তৎকালীন তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তখন আমি আলিপুরে চাকরি করি সদর মহকুমা ভূমিসংস্কার আধিকারিকের দপ্তরে। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় (বর্তমান মুখ্যসচিব) ছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক, অতিরিক্ত জেলা শাসক ( ভূমি সংস্কার )। । তাঁর একটি অসামান্য গুণ, এক ঘণ্টা বক্তৃতা দিলেও একটিও ইংরেজি বা অন্য ভাষার শব্দ ব্যবহার করবেন না। তাঁকে দেওয়া হয়েছিল এই কাজের দায়িত্ব। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি তাঁর সঙ্গে এই কাজে যুক্ত হতে চাই কি না। যুক্ত হয়েছিলাম। আমাদের প্রথম কাজ ছিল পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত ব্লক অফিসে কত বাংলা টাইপ রাইটার লাগতে পারে এই কাজের জন্য, তা হিসেব করা। কম্পিউটার আসেনি তখন। তারপর পরিভাষা তৈরি। বাংলাদেশে পরিভাষা তৈরি আছে, তার সাহায্য আমরা নিতে পারি। কত মিটিং করেছি আমরা। তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরেও গিয়েছি। তারাপদ রায় তখন ডিরেকটর অফ কালচার। তিনিও পরামর্শ দিতেন। কাজ অনেকটা এগিয়েছিল। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এই কাজে আমাকে যুক্ত করে রাইটার্স বিল্ডিং থেকে আদেশনামা বের করতে উদ্যোগী হলেন। এক সকালে অফিসে গিয়ে শুনি এডিএম (এলআর) আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে এডিএম (জেলা পরিষদ) করে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। ... ...
আমার শীতলপাটি মাড়িয়ে চলে যায় মনিপিসি। হাতে কোহিনূর ফুপুর রেখে যাওয়া সেই কাঁসার গ্লাস। যতই গোলেনূর দাদীর বাড়ির ভেতর ঢুকতে থাকে মনিপিসি, ততই আবছা হতে থাকে তার ছায়া। একটি জামবাটি ভরা মেশানো মুড়ি আর মুড়কি। দাদুর জন্য মায়ের হাতে। আর প্রায় তার সাথে সাথেই ঠাকুমার হাতে গুড়ের চা। শীতল পাটিতে আমার পাশেই জমে ওঠে সবার চা খাওয়া। ... ...
ব্যাঙ্কসি কে, বা তাঁকে কেমন দেখতে, তিনি শ্বেতাঙ্গ নাকি তাঁর গাত্রবর্ণ গাঢ় - সেকথা কেউ জানেন না। অথচ, তিনি ভুবনবিখ্যাত। ক্যামেরার সামনে নিজের মুখটিকে অষ্টপ্রহর ভাসিয়ে রাখার এই ঐকান্তিক প্রচেষ্টার যুগে, তিনি নিজেকে আড়ালে রাখেন - এবং, অনেকে বলেন, এই আড়ালে রাখার সচেতন প্রয়াসই, সম্ভবত, তাঁর বিপণন-কৌশল - আর, সেটাকে যদি কৌশল বলে মেনেই নেন, মেনে নিতেই হয়, সে কৌশল অসম্ভব কার্যকরীও বটে। তিনি পথশিল্পী - রাস্তার ধারের দেওয়ালে তিনি ফুটিয়ে তোলেন নিজের শিল্প - তিনি গ্রাফিত্তি-শিল্পী - এক নিজস্ব ধাঁচের স্টেনসিলে দেওয়ালে আঁকেন সময়ের ধারাভাষ্য। গ্যালারিতে নিয়মিত শো না করেও তিনি বিশ্ববিখ্যাত। ... ...
কুমুদি রইলেন তাঁর গ্রন্থিত-অগ্রন্থিত গল্পে, প্রবন্ধে, কবিতায়, স্মৃতিতে। স্মৃতিস্তম্ভের স্থবিরতাকে ভালবাসিনি আমরা, চাইছি স্মৃতির চলমানতা। অক্ষর বেয়ে বেয়ে পরের প্রজন্মে পৌঁছে যাক কুমুদি- তারা চিনুক আমাদের কুমুদিকে, ভালবাসুক, লেখা পড়ুক, পড়াক বন্ধুদের। কুমুদিও তাদের চিনতে চাইবেন- বলাই বাহুল্য। স্মিত সহাস্য মুখে জিগ্যেস করবেন- কই , কী লিখচ , শোনাও দেখি। এই সব অলীক চেনাজানাকে বাস্তব করতে গুরুচণ্ডা৯ শুরু করছে বার্ষিক 'কুমুদি পুরস্কার' - কিশোর কিশোরীদের গল্প লেখার প্রতিযোগিতায়। ... ...