নারীর বিদ্বান (বিদুষী) হয়ে ওঠার পথটি কখনোই সহজ ছিলনা, আজও নেই। অদূর ভবিষ্যতেও যে অবস্থার খুব পরিবর্তন হবে এমন আশা এখনও করা যাচ্ছে না। কারণ মানবসমাজে নারী-পুরুষের বৈষম্যের মূল অতি গভীর। অন্য অনেক প্রাণীই যূথবদ্ধ হয়ে থাকলেও মানবসমাজ প্রথম থেকেই স্বতন্ত্র - নারী-পুরুষের ভূমিকার দিক থেকে। এর কারণ নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে। সকলে যে একমত এমনও নয়। কিন্তু এটা অনস্বীকার্য যে মানুষের শারীরবৃত্তীয় বৈশিষ্ট্যই এর প্রাথমিক কারণ। মানুষ এক নখ-দন্ত-লোম-পালক-বিহীন প্রাণী। প্রাকৃতিক শীতাতপ, ঝড়-ঝঞ্ঝা বা শ্বাপদের আক্রমণ - কোনকিছু থেকেই নিজেকে রক্ষা করতে সমর্থ নয় তার শরীর। ... ...
বিজ্ঞান মানে তো শুধু যুগান্তকারী আবিস্কার নয়, রোজ একটু একটু করে প্রদীপের সলতে পাকানোটাও বিজ্ঞান, যাতে পরের আবিষ্কারের কাজটা সহজতর হয়। তবে আমাদের সাধারণ হিরো-নাহলেই-জিরো ভাবার মানসিকতার প্রেক্ষিতে এই সলতে পাকানোর কাজটাও যে গুরুত্বপুর্ণ, এ না হলে বিজ্ঞানের এগোন বন্ধ হয়ে যাবে এই বোধ তৈরি করা খুব দরকার। এই বইটা খুঁজে খুঁজে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন শাখার বিজ্ঞানীদের নীরব কাজ তুলে এনে কিছুটা সেই ধারণাও তৈরি করতে পেরেছে। আর বহুদূর দেশের বিদেশিনী না বা ইতিহাস খুঁড়ে বার করে আনা আগের যুগের বিজ্ঞানী না, আমারই সময়ে আমারই দেশে এই বিজ্ঞানীরা এত কিছু কাজ করছেন, এটা পড়ে বুড়োরাও এক্সট্রা উজ্জীবিত বোধ করছেন, বাচ্চারা এ লেখা পড়ে মোটিভেটেড হবে বলেই মনে হয়। কোন কোন বাচ্চা হয়তো এই বইএর চরিত্রদের মধ্যে থেকে রোল মডেল খুঁজে নেবে। ... ...
আমার লেখার উপজীব্য যদি হয়, বিজ্ঞাপনের জগতে মেয়েরা,বেদম ধন্দে পড়ে যাই আমি!কোন জগত? কোন মেয়েরা? যেসব বিজ্ঞাপন সংস্থায় রাত নামে না কখনও, যেখানে হাততালি দিতে দিতে সমানে ছুটে যাচ্ছে মেয়েরা, তাদের কথা? যাদের থাকে শুধু অন্ধকারসম্বল প্লাস্টিক আলো আর মুখোমুখি বসিবার ক্রেতা ও ক্লায়েন্ট! অ্যাড এজেন্সিতে চাকরি নেয়ার মুখে পাড়া প্রতিবেশী গুছিয়ে আমার বাড়ির মানুষদের খবর দিয়ে গেছিল,এসব জায়গা ভদ্রঘরের মেয়েদের জন্য নয়। শুয়েবসে কাজ করতে হয়। বিজ্ঞাপন সংস্থার রন্ধনশালাটিতে মেধায় আগুন দিয়ে সুস্বাদু বিজ্ঞাপন বানানোর আগেই,লক্ষ করুন,একটি মেয়ে বিজ্ঞাপিত হয়ে যাচ্ছে লালসামাখা পণ্যরূপে।হ্যাঁ। কোনও বিজ্ঞাপন যাঁরা বিজ্ঞাপনটি দিচ্ছেন তাঁরা পছন্দ করবেন কি না তার ওপর অনেকক্ষেত্রেই নির্ভর করে সংস্থাটির উজ্জ্বল অথবা মলিন ভবিষ্যৎ। তাই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে ক্লায়েন্ট মিটিঙে সঙ্গে খুশবু-ছড়ানো অ্যাকাউন্ট এক্সিকিউটিভ কিংবা ক্রিয়েটিভ হেড নারী থাকাটা অনেককিছুই সংযোজন করে। এ-ও বিজ্ঞাপন।লিঙ্গনির্ভর।সবযুগে।সবসময়। পাথরকুচির মতো অপমান ছড়ানো পথে চলতে চলতে নারী বিজ্ঞাপিত হয়। ... ...
এর পরের অংশগুলো স্মৃতিকোষ থেকে মুছে গ্যাছে। এদিকে সম্পাদিকা বললেন দোলের কবিতা দিতে, হাতে সময় পনেরো মিনিট। আর সেই কলেজবেলার সারল্য নিজের মনে গুনগুন করা ভালো, ইন্টারনেটে ছেপে ফেললে খোরাক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সুতরাং দশ বছর ধরে বহন করে যাওয়া শব্দ, কবিতা কবিতা চাপগুলো আর টুকরো টুকরো মনে পড়া ছবি দিয়ে পড়তে ভালো লাগে এমন একটা টেক্সট নামিয়ে ফেলা। যা হলো, তা প্রকৃতপ্রস্তাবে পাপবিদ্ধ-ই ... ...
সভ্যতা এভাবেই ভাবে- ক্রিয়া করে, অর্থের শাস্ত্রই ধর্ম তার। বিনিময়ের অতীত যা যা, তাকে অতীত করে দিয়ে নিয়ে আসে শিল্পবিপ্লব, কলোনি-বানানোর লড়াই, ইনকুইজিশনের নেড়াপোড়া। তবু সেই যজ্ঞের কালি আবির হয়ে গুঁড়োগুঁড়ো মিশে যায় সব চেয়েছির রাজত্বে। বেদবিরোধী শূন্য উপাসক বৌদ্ধ নাগার্জুনের মায়ায় ধর্মসংস্থাপক শঙ্কর ধর্মকেই মায়া ভেবে বসেন। স্তূপের আদল রেখে শিবলিঙ্গ পুঁতে যান মানুষের বাড়িতে বাড়িতে, অবধারিত করে যান খাদ্যে আত্মনিয়ন্ত্রণ, ব্রতয় ব্রহ্মচর্য, কর্মে আত্মনির্যাতন । নেড়া বৌদ্ধের মতই শিখা কেটে ফেলেন ব্রাহ্মণ বিশ্বম্ভর মিশ্র। উপবীত ছিঁড়ে ফেলে ভূলুণ্ঠিত হন মোক্ষের উপাস্যে। ভারতের প্রান্তে প্রান্তরে ছড়িয়ে পড়ে বেদ-বিমুখ জাতবিহীনদের হোলিখেলা। সম্বলে বাঁদরের রঙ, ভাঙের সিদ্ধিদ্রব্য। ক্রমশ: মন্দির বহির্ভূত:, যজ্ঞরহিত উচ্ছ্বাসের সামাজিক সংশ্লেষ তৈরি হতে থাকে আশূদ্র ভারতসমাজে। হোলিকা নিধনের ফাগোৎসবের দিন ইতিহাস মুখ ঘুরিয়ে দেয় লালন সাঁইজির সাধুসঙ্গের উৎসবে, একব্রহ্মের উপাসক রবিঠাকুরের বসন্ত উৎসবে। শূদ্রভারত তো এভাবেই ব্রাহ্মণ্য উৎপাদনতন্ত্রের অত্যাচারের সমস্ত দাগ গায়ে রেখেও, কান্না-অবিচারের ঊর্ধ্বে উঠে যেতে শেখে আনন্দের উপাসনায়। ... ...
আমি রুকু বিনায়ক। সবাই বলে আমি বুদ্ধু। ভোঁদাই। মা আমাকে গাধা বলে না মুনা বলে। পাপা বলে পুচাই। আমার দুটো হাত,দশটা হাতের আঙ্গুল,দুটো চোখ আছে,যা দিয়ে আমি ছবি আঁকা। পাপা মা বলে আমার অটিজম আছে। অটিজম কী আমি জানিনা। তবে আমি একটু কেমন যেন। আমার গাড়ীর চাকা,টেবিল ফ্যান,ছোট ছোট রবারের পুতুল ,রং,তুলি পেন্সিল ভালো লাগে। আমি লাফাতে ভালোবাসি। এ দেয়াল থেকে ও দেয়াল। সব দেয়ালে হাতের চাপ,সব দেয়ালে সর্দি,নাকের পোঁটা লাগে। মা বলে যাতা। আর মোছে। এই শিশুদিবসে বিনায়করুকু গুরুচণ্ডা৯কে ছাপতে দিয়েছে তার ডায়েরির কিছু পাতা, বেড়ানোর গল্প, আর ছবি। বিনায়করুকুর সঙ্গে একটু বেড়িয়ে আসি এদিক ওদিক। ... ...
পুলিশকে কিছু কথা বলতে যাচ্ছেন কেউ। তর্কাতর্কি হচ্ছে। পুলিশের দিক থেকে যেহেতু বলার কিছু নেই, তাই তাঁরা কিছুক্ষণ বাদেই তেড়ে এসে তুমুল মারধোর করছেন দু-চারজনকে, এবং টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে ঘোষণা করছেন, গ্রেপ্তার করা হল। আমার দিকেও তেড়ে এসে ঘুষি চালিয়ে দেন এক পুলিশ মহাবীর। যদিও, আমি শান্ত করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছু করিনি। স্লোগান-টোগান তো দূরস্থান। হিন্দুত্ববাদী কোনো হামলাকারীর গায়ে বলাবাহুল্য একটুও আঁচড় পড়েনি। পুলিশের তর্জন-্গর্জন, মার-্ধোর শুধু একপক্ষের উপরেই বর্ষিত। এবং পুরোটাই পরিচালিত হয় নীল কোট পরিহিত একজন পুরুষ ও সাদা পোশাকের একজন মহিলা অফিসারের নেতৃত্বে। তাঁরা বস্তুত জনতাকে প্ররোচিত করছিলেন। যে ভঙ্গীতে কান্ডটা করছিলেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই, যে, পুরোটাই ইচ্ছাকৃত। হয় তাঁরা মব কন্ট্রোলের কিছুই জানেন না, কিংবা জানেন, কিন্তু তাঁদের গেরুয়াকরণ সুসম্পন্ন হয়েছে। ... ...
ফিরোজ - দেখ, তোমায় তো বললাম জামিয়া আর 'জেএনইউ' এর ছাত্রছাত্রীরা শুরু করেছিল অবরোধের তা ক্রমে মানুষের প্রতিরোধে পৌঁছেছে। এর বেশিরভাগটাই সামলাচ্ছেন মহিলারা। আট থেকে আশি, এমনকি অন্তসত্ত্বা মহিলারাও রয়েছেন এই দলে। পালা করে তারা আসছেন। বাড়ির কাজ সামলে। পুরুষেরাও আছেন, তবে তাদের ভিড় বেশি সন্ধ্যার পর। আর এই জমায়েতে যে শুধু মুসলমানরাই রয়েছেন তা কিন্তু নয়। এতে অনেক হিন্দু শিখ এরাও রয়েছেন একসঙ্গে জোট বেঁধে। ... ...
প্রায় উনিশ বছর আগে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে দূরভাষে জয় গোস্বামীর এই সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন চিরন্তন কুন্ডু । জয় তখন ছিলেন আইওয়া-তে একটি রাইটার্স ওয়ার্কশপে। চিরন্তন এবং জয়-এর অনুমতিক্রমে সাক্ষাৎকারটি এখানে প্রকাশ করা হল। ... ...
ঠিক তখনই মেঘ ফেটে যায় দুভাগে। ঝলমলিয়ে চাঁদ ওঠে আর দৃশ্যমান হয় সারা জগত, কাঁসাইয়ের ধারের প্রাচীন মন্দির, সাদা ফেনার হুল্লোড়, ধানের ক্ষেত আর বাতাসে মাথা নাড়ানো গাছের দল। কালো পর্দা সরিয়ে হঠাতই আবির্ভূত হয় এইসব আর রহস্যময় শতাব্দী প্রাচীন রূপের মায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে চরাচর। কানু বৌকে ডাকতে ভুলে যায়, হয়তো ভুলেই থাকতো যদি না তার চোখে পড়তো নদীর মাঝখানে সাদা চরের কালো পলিথিন কুঁড়ের সামনে কার যেন আবছা ছায়া। প্রথমেই সে ভাবলো মাছচোর। বাবা ভৈঁরোনাথের দিব্বি, আজ ওকে ধরবই, এ কথা ভাবতেই লাঠিটা ঘরে রেখে এসেছে বলে দারুণ দুঃখ হলো কানুর। তবু হেই হেই থাম থাম চিৎকারে সাজোয়ান পা-জোড়া ছুটে চললো এক পাথর থেকে আর এক পাথরে, পড়তে গিয়ে টাল সামলে নিলো কতোবার। ... ...
আপ-এর জয় বর্তমান ভারতের শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় খানিকটা রিলিফ। বিভিন্ন স্তরের সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়ায় সেটা বোঝা যাচ্ছে। মানুষের মাঝে এক তিরতিরে ভরসার স্রোত বইছে। আমি ভীতু, ভয়ার্ত, সন্দেহবাতিকগ্রস্ত মানুষ। ... ...
কিংবদন্তীর ভেতরে একরকম আখ্যানমালা আড়মোড়া ভাঙে। পাশ ফেরে, শিথান বদল করে। বালি খাতের নিচে অন্তঃসলিলা হয়ে বইতে থাকে নদী। খাতের ওপরে কান পাতলে হয়তো অস্পষ্ট শব্দ শোনা যায়। জাদুসঙ্গীতের মত একপ্রকার লোকায়ত গান ও বাজনা বয়ে যায় গোপনে। শব্দ বাজে গানের মত। ... ...
এরই মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির বিপর্যয় অব্যাহত। শিলিগুড়িতে বিজেপির মিছিলে একটি ষাঁড় ঢুকে পড়ে লন্ডভন্ড করে দিতে চলেছিল। কার্বাইনধারী কেন্দ্রীয় নিরাপত্তারক্ষীরা থাকায় নেতারা কোনোক্রমে রক্ষা পান। অনেকেই ঠাট্টা করে বলছেন, একটা ষাঁড়েই এই অবস্থা, এন-আর-সি বিরোধী জনগণ ঝাঁপিয়ে পড়লে কী যে হাল হবে বোঝা মুশকিল। এইসব ঠাট্টাতামাশার মধ্যেই থাবা বসাচ্ছে এন-আর-সি আতঙ্ক। কারণ বিষয়টা এতটুকুও ইয়ার্কির নয়। সংবাদপত্র সূত্র অনুযায়ী আতঙ্কে আরও এক মৃত্যু হয়েছে বাংলায়। মারা গেছেন লিয়াকত কারিগর। আপাতদৃষ্টিতে মৃত্যুর কারণ হৃদ্যন্ত্রের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া হলেও, পরিবারের লোক্জন জানিয়েছেন, মূল কারণ আতঙ্কই। ... ...
“Repeat a lie often enough and it becomes the truth” - নাৎসি জার্মানির যোসেফ গোয়েবেলস এর এই নীতিকে ভিত্তি করেই আজকের ভারতে যে ছায়াচ্ছন্ন সত্যের ব্যাবসা চলছে, তা আরেকবার বোঝা গেলো গত ৮ই ফেব্রুয়ারি কোলকাতা বইমেলার ঘটনায়। ধর্মকে কেন্দ্র করে রাজনীতির যে পরিবেশ তাকে বারংবার উত্তপ্ত করতে এই মিথ্যেগুলোকে বারে বারে প্রচার করা হয়। ধীরে ধীরে এরই কিছু ঘটনা সত্যি বলে মেনে নেয় কিছু মানুষ। ... ...
গত ১১ই ফেব্রুয়ারি রাতের বেলা আজিজুর রহমানকে তার কাকার মাধ্যমে খবর পাঠানো হয়, কোনো এক পরিচিত তাকে ডাকছে বলে। ঘরের বাইরে বের হতেই তাকে তুলে নিয়ে নর্থ বিধাননগর থানায় আটক করে পুলিশ। রাত বারোটার পরে খবর জোগাড় করে কোলকাতা শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বেশ কিছু মানুষ চলে যায় আজিজুরের খোঁজ নিতে। কোনোরকম অনৈতিক কাজের সাথে যুক্ত না থাকা আজিজুরের থানায় বন্দি হওয়ার কারণ খুঁজতে থানার ভেতরেই ঢোকে তার বন্ধুস্থানীয় চার-পাঁচজন। পুলিশ যথারীতি কোনো উত্তর দিতে অস্বীকার করে। ... ...
পুলাওয়ামা ঘটনার পর দেশপ্রেম আচমকা বেড়ে গেল সবার। তারিখটা আবার প্রেমের দিবসেরও। যাতে এইবার কেন জানি না ভগৎ সিং এর ফাঁসি ঠিক হয়ে ওঠেনি। তা, এই ঘটনার পর দেশের প্রধাণমন্ত্রী তো ভাষণে ফাটিয়ে দিতে থাকলেন। এক সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পর বাইরে থেকে আওয়াজ পেয়ে বারান্দায় এসে দেখি মিছিল চলছে জনা পঞ্চাশ লোক, মোমবাতির বদলে হাতে মোবাইলের ফ্লাশলাইট। স্লোগান শুনলাম একবার ভারতমাতা কি জ্যায় পিছু পাঁচবার করে পাকিস্তান মুর্দাবাদ। বলা বাহুল্য পড়শী দেশের উল্লেখের সময়ে তাদের জোশ যেন ফেটে ফেটে বেরোচ্ছিল। পরে শুনি এই মিছিল ছোট ছোট করে সারা দেশে বেরিয়েছে, কলকাতাতেও। যেন রাস্তার ধারে পাকিস্তান বসে বিড়ি বাঁধছে বলে খবর, এরা খুঁজে বেড়াচ্ছে। ... ...
যতবার,যতজন, শান্তভাবে কথা বলতে গেছেন, প্রতিবারই পুলিশ প্রায় বিনা প্ররোচনায় একই ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং একের পর একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ যে আচরণ করে, যে ভাষায় কথা বলে, এবং যে পরিমান মারধোর করে, বইমেলার সুদীর্ঘ সাংস্কৃতিক ইতিহাসে তা অভূতপূর্ব। প্রায় অর্ধশতকের বইমেলার ইতিহাসে কলঙ্কলেপনের জন্য পুলিশকে ধন্যবাদ। ... ...
রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন যে এনআরসি, সিএএ, এনপিআর বিরোধী কোনও আন্দোলনে পুলিশি নির্যাতন হবে না। আজকের ঘটনা ঠিক তার উল্টো প্রমাণ রেখে গেলো। সর্বোপরি; বিজেপির স্টল থেকে বেরিয়ে এসে হামলা করা কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। যতো গ্রেপ্তারি হয়েছে আমাদের দিকে। যারা এনআরসি, সিএএ, এনপিআর বিরোধী জনমত তৈরি করতে প্রাণপণ চেষ্টা করছে; তাদের ওপর এহেন পুলিশি অত্যাচার নামিযে এনে আপনার কোন লাভ হলো মাননীয়া? ... ...
যে দেশে এক্কেবারে চলতি ভাষাতেই টুরিস্টকে বলা হয় ‘মুসাফির’ তার রোদ্দুর তো আলাদা হবেই। অন্ধকার আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে সবার আগে সেই কথাটাই মনে হল। আমার ভাঙাচোরা ফারসিই আমাকে বুঝতে দিয়েছে, সৈয়দ তার স্ত্রী তহমিনেহকে মোবাইলে জানাচ্ছে, ‘হিন্দ-এর মুসাফির এসে গিয়েছে। আমরা শিগগির বাড়ি পৌছাচ্ছি’। ‘মুসাফির!’ সে কি সহজ কথা! চকিতে মাথায় খেলে যায়– দিল-এ-ম্যান, মুসাফির-এ-ম্যান! ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ-এর ফারসি শিরোনামের সেই কবিতার গোড়ার পঙক্তিগুলি—‘প্রাণ আমার, মুসাফির আমার/হয়েছে যে আদেশ আবার/দেশ ছাড়ি, তুমি-আমি, আরও একবার।... ইরান শেষে আমাকে মুসাফির করলে! ... ...
ছুটতে ছুটতেই দারিয়ানাসু লুকোনো দরজার দূরত্ব মনে মনে মেপে নেয়, মনে মনেই একবার হাসে। নিশ্চিন্ত হবার হাসি, পেছনে ছোটা ঘোড়সওয়ারদের বোকা বানানোর হাসি। আরও পিছনে হৈ-হৈ করতে থাকা লোকগুলোকে এখন দেখা যাচ্ছে না, টিলার আড়ালে হারিয়ে গেছে। ঘোড়সওয়ারদেরও দারিয়ানাসু আগেই বোকা বানিয়ে দিতে পারত, হরিণের মতো ছুটতে পারে সে, কিন্তু পিঠের দামি বোঝাটা ফেলে দিতে চায়নি। অবশ্য তাতে কিছু ক্ষতি হয় নি তার, আর বিশবার শ্বাস নিতে-না-নিতেই সে পৌঁছে যাবে লুকোনো গোল দরজার পাশে। ব্যাস, তারপর একটা ছোট্ট লাফ, তারপর দু’পলকে দরজার ফাঁকটুকু বুজে যাবে। হাঃ হাঃ হাঃ, ঘোড়সওয়ারগুলো বুঝতেই পারবে না কোথায় ভ্যানিস হল তাদের শিকার। ছাউনিতে গিয়ে আষাঢ়ে গল্প ফাঁদবে অন্যদের কাছে, বলবে ভুতুড়ে মানুষের কথা, যাদের দেখা যায় কিন্তু ধরা যায় না। ... ...