কোভিড-১৯ পরবর্তী পরিস্থিতিতে বিশেষত কম টেস্টিং এবং আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা গোপন করার মত বেশ কিছু সিরিয়াস অভিযোগ উঠেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতি। এই প্রসঙ্গে 'জনস্বাস্থ্য অভিযান' এর একটি রিপোর্ট আমাদের হাতে আসে। যদিও এই রিপোর্টটি ১৯শে এপ্রিল অব্দি প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বানানো, এবং এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে হয়ত রিপোর্টের কিছু অংশ আর প্রাসঙ্গিক নয়, তবু বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে রিপোর্টটির অনুবাদ প্রকাশ করা হল। ... ...
লক ডাউন কাটানোর কোন "খুড়োর কল"নেই। চলেই যাচ্ছে,চলেই যাচ্ছে,চলেই যাচ্ছে। কাগজ কুঁচি, বালিশের তুলো, রাগ শহীদ মিনার। ... ...
আমি মনে মনে ভাবি কি লিখবো? সবজী ওয়ালার ধর্ম দেখে সবজী কেনার ঘটনা? কী লিখবো? এক ডাক্তার তার প্রিয় বন্ধুর শেষ কৃত্য করতে গিয়ে মার খাচ্ছেন? কী লিখবো? স্বাস্থ্য কর্মীদের বলা হচ্ছে বাড়ি ছেড়ে দিতে। কী লিখবো? ধর্ম দেখে রোগ ভাগ করা হচ্ছে? কী লিখবো? কাতারে কাতারে শ্রমিক চলেছেন বারোশো চোদ্দোশো মাইল হেঁটে। এক মা তার সন্তানের মৃতদেহ নিয়ে ছুটছেন। গ্রামের কাছে এসে মারা যাচ্ছে আর হাঁটতে না মারা ছোট্ট মেয়েটি। ডাক্তার সাজিয়া বাংলাদেশ থেকে জানাচ্ছেন “আমি জানি না আমার আড়াই বছরের সন্তানকে দেখতে পাবো কিনা ভাইয়া। ওরা বলছে শেষ পর্যায় না আসলে প্রটেকশান কিট দেবে না”। রবীশ কুমার প্রত্যেকদিন প্রাইম টাইমে আসছেন। আমার ভারতবর্ষের যে ছবি তুলে ধরছেন সোশ্যাল ডিসটেন্সের নামে, যে অসভ্যতা হচ্ছে, এই ভারত আমি আগে দেখিনি। আমার চারপাশের লোকজন অচেনা হয়ে যাচ্ছে। আমি নিজেও কি? ... ...
মহামারীকে ঠেকানোর জন্য আমরা লক ডাউনকে অস্ত্র করেছি। কিন্তু সেই অস্ত্রের সত্যিকারের ব্যবহার আমরা আদৌ জানি তো? বহু গরীব মানুষের চোখের জলে ভেজা এই লকডাউন আমরা আদৌ কাজে লাগাচ্ছি কি? এসময়ে দরকার ছিল সন্দেহজনক রোগীদের প্রচুর টেস্ট করা এবং পজিটিভ রোগীদের আইসোলেটেড করা। টেস্টের সংখ্যা সমস্ত ভারতবর্ষে হতাশাজনক ভাবে কম। আর সবচেয়ে কম আমাদের পশ্চিমবঙ্গেই। এমন ভাবে চললে দ্বিতীয় দফা লকডাউনের শেষে ৩ই মে তারিখে আমরা একই অবস্থায় বা আরও খারাপ অবস্থায় থাকবো। তখন কি হবে? আরও কুড়ি দিন লক ডাউন বাড়বে? সেই কুড়ি দিন পরে কি হবে? একটা মহামারীর হাত থেকে বাঁচতে আমরা একটা মন্বন্তর সৃষ্টি করছি নাতো? ... ...
‘স্বর্গ চেনো না, মিয়ারা, বেহেশত চেনো না, জান্নাতের কথা শুনো নাই কোনদিন?’ ‘শুনছি, শুনছি।’ লোকেরা বলাবলি করে, ‘স্বর্গের আছে মণিমুক্তাখচিত সোনার তৈরি দরজা, সেইখানে সকল দালানের ইট সোনা রূপায় তৈরি, মাটি খাঁটি জাফরানের, কাঁকর হইল মণিমুক্তা আর ইয়াকুত পাথর, আবে রহমতের নদী সুরম্য স্পন্দনে সারক্ষণ বয়ে চলে সেখানে, যার পানি দুধের চেয়ে সাদা, বরফের চেয়ে ঠাণ্ডা, মধুর চেয়ে মিষ্টি, স্বর্গের গাছগুলো সোনা ও রূপার, ফলগুলি নিকটবর্তী, বাতাস মোলায়েম, জান্নাতে ইচ্ছাপ্রকাশ করলেই সোনা রূপার পাত্রে তোমার সামনে চলে আসে সুস্বাদু বেহেশতি খানা, আসে মাছের কলিজার কাবাব, আসে সুমিষ্ট ফলফলাদি, আসে শীতল পানীয় ভর্তি পানপাত্র। আরো নাকি সেইখানে আছে নূর দিয়া তৈরি অলৌকিক হুর। তারা নব্যকুমারী, অতিশয় সুন্দরী, নম্র ও নরম। তারা পরিচ্ছন্ন, স্বপ্নমানসী। হুর বালিকার মৃদু হাসিতে চারদিক আলোকিত হয়, একবিন্দু থুতুতে মিঠা হয়ে যায় দরিয়ার সমস্ত পানি...’ ... ...
আছড়ে পড়ার শব্দে মুখ তুলে তাকায় মনীষা। চিলের ছানা মনে হলো । নাকি পায়রা। রেস্টোরান্টের পুরু কাঁচের ওপাশে উড়ে এসে ধাক্কা দিয়ে, সড়সড় নেবে গ্যালো। মনীষা কফিতে মন দেয়। কমলেশের দিকে চিনির প্যাকেট এগিয়ে, কফিতে এক চুমুক দিয়ে, শূন্য কাঁচের দিকে তাকায় আরেকবার। কোনো আঁচড়ের দাগ নেই। কফিকাপ নাবিয়ে রেখে স্পষ্ট তাকিয়ে বলে - না , কাকু । এই অনুরোধটা করবেন না । আমি যা সত্যি বলে জানি , তার বাইরে গিয়ে গল্প সাজানো সম্ভব নয় ... ...
বড় লম্বা উঁচু পাঁচিলটাকে দেখলে মনে হয় প্রেসিডেন্সি জেল। টুকনু প্রেসিডেন্সি জেলের কথা কী করে জেনেছে সেটা তাকেই জিজ্ঞেস করো বরং। সেই পাঁচিলের গা বেয়ে যেটুকু রোদ এসে পড়েছে সেই রোদে একটু একটু করে বসার জায়গা করে নেবে ওপার থেকে আসা মানুষ গুলো।দিদা নেই কাজেই বড়দিনটা এই বালির বাড়িতেই কাটাতে হয়।টুকনুর এখন ক্লাস এইট। পাড়ার ছেলেদের সাথে ফিস্ট করতে যাওয়ার পারমিশান পাওয়া যায়নি বাড়ি থেকে।পাটিসাপটা নেই।একমাত্র ডাক্তার কাকিমা কিস্কু পাঠিয়েছেন বাড়িতে বানানো কেক।কয়েকটা চকলেট।সেই দিয়ে কিছুতেই মন ভরছে না।গোরা কাকুর চিলেকোঠায় গিয়ে বিস্তর নালিশ জানিয়েছে সে।এই নাকি তোমাদের সাম্যবাদী সমাজ? প্রত্যেকের সমান অধিকার?বাড়িতে আসলে টুকনুর কোন ভয়েজ নেই। কেউ শোনেনা তার কথা। “ওরা আমাদের গান গাইতে দেয় না...ভিয়েতসংগ্রামী পল রবসন...”।গোরাকাকু কিছু বলে না। ... ...
ভাইরাসকে নিয়ে সহবাস করা মানবজাতিকে শিখে নিতে হবে। কোথাও herd immunity তথা গোষ্ঠী ইমিউনিটি তৈরি হবে, কোথাও হবেনা। এমনটাই স্বাভাবিক। হাতে গোণা কয়েকজন কর্পোরেটের এবং কয়েকটি দেশের লাভের, লোভের খিদে মেটাতে গিয়ে শিকার হচ্ছে সমগ্র মানবজাতি। ... ...
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকাল রিসার্চ (ICMR) এর স্বীকৃতি পেলে বাজারে আসতে চলেছে COVID 19 সনাক্তকরণ আর এক সহজ ও দ্রুত উপায়, Chitra GENELAMP-N. তিরুবনন্তপুরমের শ্রী চিত্রা ইনস্টিটিউট ফর মেডিকেল সায়েন্সেস অ্যান্ড টেকনোলজির একটি দল ডঃ অনুপ ঠেক্কুভীত্তিল এর নেতৃত্বে RT-LAMP (Reverse Transcription Loop Mediated Isothermal Amplification) রাসায়নিক বিক্রিয়া কে কাজে লাগিয়ে এই দ্রুত সনাক্তিকরণ কিটটি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে, যা সর্বাধিক ২ ঘণ্টা র মধ্যে এর মধ্যে SARS Cov2 ভাইরাস এর N-জিন টির উপস্থিতি রোগী র অনুনাসিক বা লালারস থেকে সনাক্ত করতে সক্ষম হবে। এই সনাক্তিকরণ প্রক্রিয়া র জন্যে যে যন্ত্রাদি দরকার তার মুল্য হবে আয়াত্বের মধ্যে, সাথে সাথে এই পরীক্ষার উপাদান গুলি ও খুব খরচ সাপেক্ষ নয়। ডিপার্টমেন্ট অফ সাইন্স এন্ড টেকনোলজি র অধীনের এই প্রতিষ্ঠানের গবেষক ডঃ অনুপ আশাবাদী যে রোগী পিছু মাত্র ১০০০ টাকায় এই পরীক্ষা করা সম্ভব হবে। যা এখন বাজার চলতি পরীক্ষার তুলনায় বেশ সস্তা এবং দ্রুত। ... ...
কোভিড-১৯ অতিমারী আমাদের সমাজের বহু বিভাজনকে আরও বেশি প্রকট করে দিয়েছে। অতিমারী একদিন বিদায় নিলেও তার ক্ষতচিহ্ন কিন্তু অত সহজে বিদায় নেবেনা। অনলাইন শিক্ষার সোনার পাথরবাটির সন্ধান ভারতবর্ষের ডিজিটাল ডিভাইডকেও একই ভাবে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। ... ...
বালুরঘাট ব্লকের কাশমুলাই গ্রামে মানুষ গাছের কচি পাতার দিকে তাকিয়ে আছে। কখন পাতা শুকিয়ে ঝরে পড়বে, তবে তাই দিয়ে রান্না হবে। রান্না কী হচ্ছে? ত্রাণ দিতে গিয়ে আমার বন্ধুরা দেখে এসেছে, গরু যে ঘাসপাতা চিবিয়ে খাচ্ছে, তাই সিদ্ধ করে গ্রামের মানুষ খাচ্ছে। মানুষ আর পশুর খাবার এক হয়ে গিয়েছে। ... ...
পৃথিবীটা কখন বদলাল ভাবি। সেটা কি যেই মুহূর্তে নিস্তার ভাইয়ের বোন নুসরা বেগমের পদক্ষেপ পড়েছিল কেশব ব্যানার্জির বাড়িতে তখন থেকে? মনে পড়ল নিস্তার ভাই সেদিন খুব উত্তেজনা নিয়ে দরজা খুলে দিয়েছিলেন, কিছু একটা বলতে চেয়েছিলেন, হয়তো তিনি ভবিষ্যৎ দেখেছেন সেটাই বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মহাবিশ্বের কার্য ও ফলাফলের মধ্যে একটা সমীকরণ রয়েছে, সেইজন্য আলোর গতির বেশি গতিবেগে আমরা সংকেত আদানপ্রদান করতে পারি না, তাই মহাবিশ্ব নুসরা বেগম হয়ে নিস্তার ভাইয়ের কথায় বাদ সেধেছিলেন, আমার পুরনো পৃথিবীর সমাপ্তি সেখানেই হয়েছে। মহাবিশ্ব ভবিষ্যতে কী হবে সেটা আমাকে জানতে দিতে চায়নি। তাই নুসরা বেগমকে ময়মনসিংহ থেকে নিয়ে আসতে হয়েছিল। দিনটা কী ছিল মনে করার চেষ্টা করি, ১৯৭৫য়ের ৮ই অগাস্ট। হয়তো নিস্তার ভাই আমাকে শেখ মুজিবের আসন্ন মৃত্যু সম্পর্কে বলতে চেয়েছিলেন। ... ...
যারা তিনশো পঁয়শট্টি দিনের তিনশো ষাটদিনেই হোম কোরান্টিনে থাকেন। মুসলমান পরিবারের মেয়ে হিসেবে তাই মুসলমান সমাজকে রোজ অনেক কাছ থেকে দেখি। এখান থেকে কয়েকটা চিত্র তুলে ধরছি,এই চিত্রগুলো অন্য সমাজ ও পরিবারেও যে পাওয়া যাবে না তা নয়,হয়ত অল্পকিছু হেরফের হবে।ধরুন, একটা পরিবারে একটা তেরো বছরের ছেলে ও একটা বারো বছরের মেয়ে আছে,ছেলেটি প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে খেলার মাঠে যায় ব্যাট হাতে নিয়ে কিন্তু মেয়েটিকে বাড়িতে বসে থাকতে হয়, সে মেয়ে বলে বাড়ির বড়রা তাকে ন'বছর বয়স থেকেই বাড়ির বাইরে,মাঠে খেলতে মানা করেছে,অসহ্য গরমেও চূড়িদার আর মাথায় ওড়না চাপা দিয়ে থাকতে হবে তাকে সবসময়, অথচ ছেলেটি দিব্যি হাফ-প্যান্ট পরে,হাফ-হাতা টিশার্ট পরে তারই বয়সী বোন বা দিদিকে হুকুম করবে জল দিতে,খাবার দিতে,তার জামাকাপড়গুলো কেচে দিতে। ... ...
আরে, বলতে চাইছেন কী এক্স্যাক্টলি? লকডাউনটা ভুল - এই তো?? এককথায় ঠিক নাকি ভুল - বলা মুশকিল। কিন্তু, তার চেয়েও বড় কথা - বলে আর লাভ নেই। আমরা তো লকডাউনের চতুর্থ সপ্তাহে আছি। লকডাউনই বলুন বা সোশ্যাল ডিস্টান্সিং - তার আর্থিক প্রভাব গভীর। শুধু গরীব লোকই না - আঁচ পড়বে আমার বা আপনার উপরেও - কিন্তু, অসংগঠিত ক্ষেত্রের মানুষেরা যেমন ঘোর বিপদে, নিশ্চিহ্ন হওয়ার মুখে, আপনি বা আমি ততোখানি নই। লকডাউন ঠিক হয়েছিল, নাকি ভুল - এ নিয়ে আলোচনা করার সময় অনেক পাওয়া যাবে - স্রেফ লকডাউন করে করোনার থাবা থেকে কত লক্ষ বা কত কোটি মানুষকে বাঁচিয়ে দেওয়া গেল, সে নিয়েও হাওয়া গরম করার সময় পরে মিলবে - আপাতত এটুকু নিশ্চিত করা যাক, যাতে লকডাউনের কারণে অনাহারে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘায়িত না হতে পারে। ... ...
করোনায় ভারতবর্ষে প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মৃতের নাম ন্যূনতম মনুষ্যত্ব, মানবিক বোধ। তার হয়তো মৃত্যু বরাদ্দই ছিল, কারণ সে বহু আগে থেকেই ধুঁকছিল, আর এরকম শিকার তো করোনা ছাড়ে না বলেই জানা গেছে। এক্ষেত্রেও তার ব্যত্যয় হয় নি। সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং হয়েছে, ওদিকে হাজারে হাজারে মানুষ পথে হাঁটছে, হাঁটতে হাঁটতে মরে পড়ে যাচ্ছে, আমরা নির্বিকার। মানুষকে কীটনাশক দিয়ে ধুইয়ে দিচ্ছেন আধিকারিক – আমরা নির্বিকল্প। আধিকারিক ভুল স্বীকার করছেন – আমরা খুশী। আমরা প্রশ্ন করতে ভুলে গেছি যে ভুল যে স্বীকার করলেন – কিসের ভিত্তিতে? ঠিকটা কী? আদৌ আপনি জানেন যা করেছেন তা ঠিক না ভুল? কেউ জানে? ... ...
এখনো অবধি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কোন ধাপেই কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি। অতি মারাত্মক ক্ষেত্রে কিছু ক্ষেত্রে শোনা যাচ্ছে সার্স, এইচআইভি-তে ব্যবহৃত অ্যান্টি-ভাইরাল ড্রাগ এবং ক্লোরোকুইন বা ক্লোরামফেনিকলের মতো অ্যান্টিবায়োটিকের সম্মিলিত প্রয়োগ ফল দিচ্ছে। কিন্তু ১৮ মার্চ, ২০২০-তে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন-এ প্রকাশিত ট্রায়াল রিপোর্ট (র্যান্ডমাইজড, কন্ট্রোলড, ওপেন লেবেল ট্রায়াল) “A Trial of Lopinavir-Ritonavir in Adults Hospitalized with Severe Covid-19” জানাচ্ছে - In hospitalized adult patients with severe Covid-19, no benefit was observed with lopinavir–ritonavir treatment beyond standard care. ... কিন্তু যতক্ষণ না একটি ওষুধ র্যান্ডমাইজড, কন্ট্রোলড, ওপেন লেবেল ট্রায়ালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাকে মান্যতা দেওয়া মুশকিল। যদিও চরম আতঙ্কের সময়, পরম আর্ততার মুহূর্তে মানুষ যেকোন অবলম্বনকে আঁকড়ে ধরে – এমনকি গোমূত্রও! ... ...
রাগের মুহূর্তে জামাল সাহেবের কথা বলার সুরটি অবিকল সেই খরিস সাপের মতো, আর তার মুখের সামনে দাড়িয়ে শাহিদা তখন সত্যিকার অর্থেই কাঁপতে থাকে, নারকেলের লম্বা পাতায় শয়তান ভর করলে যেমন অনবরত কাঁপতে থাকে, ঠিক তেমনই। শাহিদাদের নারকেল গাছের আর সব পাতাগুলো যখন নিথর থাকে, শুধু একটি মাত্র পাতা যখন অনবরত কাঁপতে থাকে তখন ওর দাদি বলেন, “শয়তানের ভর হইছে, একখান কাচি পোড়া দিয়া থো”– শাহিদা তখন একটা কাচি চুলোর ভেতর গুজে দিত। সেসব দিন শাহিদা আখতার ভুলে যাচ্ছে আস্তে আস্তে, আজকাল তো সে আর শুধু শাহিদা নয়, শাহিদা আখতার। জামাল সাহেব কখনওই তাকে শুধু শাহিদা ডাকেন না, ডাকেন শাহিদা আখতার বলে। ... ...
বিভিন্ন বিমানবন্দর এবং দপ্তর এ যে তাপীয় স্ক্যানারগুলি লাগান হয়েছে তা দিয়ে শুধুমাত্র জ্বর হয়েছে কিনা তা সনাক্ত করা যায় তবে কারো করোন ভাইরাস আছে কিনা তা সনাক্তকরণের একমাত্র স্বীকৃত পদ্ধতি হল RTPCR। আর সমস্ত ভাইরাল সংক্রমিত অসুখের যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা এ, ইনফ্লুয়েঞ্জা বি, সার্স (SARS) এবং এইচ১এন১ (H1N1) মতনই COVID19 নিশ্চিত করতে সুচারু ভাবে সুনির্দিষ্ট ল্যাবরেটরি তেই রুগীর গলার পেছন থেকে সোয়াব, বা লালা নমুনা, এবং নিম্ন-শ্বাসনালী এর তরল নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়। ... ...
ওই অতিকায় লম্পটটা একদিন নদীর মাছের দিকে নজর দেয়। আর একটা মাসের মধ্যে নদীর মাছগুলো পানির ওপরে ভেসে ভেসে ওঠে। প্রথমে তাদের লেজের দিকে পচন ধরে। তারপর সারা শরীর পচে যেতে থাকে। নদী হয়ে ওঠে পচা মাছের ভাগাড়। রাজ্যের সবাই তখন হায় হায় করে ওঠে। নদীর তাবৎ মাছ মরে যায় দেখে রাজ্য জুড়ে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। আর তখন ওই অতিকায় লম্পট নজর দেয় গাভীর ওলানের দিকে। আর মাসখানেকও সময় যায় না গাভীর ওলান থেকে দুধের বদলে পচাবাসি গন্ধ আসতে থাকে। আর কিছুদিনের মধ্যেই ওলানগুলো ফেটে যেতে থাকে। ফেটে ফেটে ওলানের ভেতর থেকে পচা মাংস বেরিয়ে আসতে থাকে। আর তখন গাভীগুলো চিৎকার করতে থাকে। হাম্বাহাম্বা করে বলতে থাকে ওলান ফেটে গেলে গাভীদের আর কী থাকে! আর চিৎকার করতে করতে গাভীগুলোও গন্ধভরা লাশ হয়ে যায়। ... ...
তার চেনা এক রেকর্ড কালেক্টর আছে মতিন মিঞা। তার বাড়ি বারাসতে। সে কলকাতা কেন জেলায় জেলায় ঘুরে নানা গান জোগাড় করে আনে। সিডি, টেপ। তারপর শুভমকে ফোন করে, স্যার লাগবে, প্রাণবন্ধু ঘোষাল, সেভেন্টি এইট, সাতষট্টি সালের রেকর্ড, নিজের কথা নিজের সুর, বর্ষার গান, খুব ভালো, শুনে দেখুন, মনে হবে...। কী মনে হবে মতিনভাই ? স্যার কাল রাতে আমার গ্রামোফোনে চালিয়ে ছিলাম, মেঘ করেছে ঘন করে, ঠান্ডা বাতাস বইছে, তখন বেলা পড়ে যায় যায়, ষোল সতের তারা, রঙিন শাড়ি, মাথায় লাল ফিতে, হাত ধরে নাচছে আর গাইছে। তারপর ? সব যেন এক পেখম তোলা ময়ুরকে ঘিরে গাইছে গো। তারপর। কখনো মনে হতে লাগল কৃষ্ণকে ঘিরেছে গোপিনীরা, গোবর্ধন গিরির মাথায় মেঘ জমেছে , মেঘের ছায়া নেমেছে ধরাতলে। ... ...