স্থানীয় শপিং মলের সামনে ফুচকা বিক্রি করে এক যুবক। তিনি বলছিলেন, 'ডাক্তার বাবু, মল বন্ধ থাকায় গত সাতদিন বেচা- কেনা একদম তলানিতে। শেষ তিনদিন ধরে বিচ্ছিরি কাশি হওয়ার পর দোকানও খুলতে পারছি না। মা আর বোনকে নিয়ে কি করে সংসার চালাবো জানিনা'। আরেকজন বললেন, 'ডাক্তার বাবু, টোটো চালাই। দিন আনি দিন খাই। প্যাসেঞ্জার প্রায় নেই। এদিকে লোকজন চাল-ডাল কিনে বাড়িতে মজুত করতে শুরু করেছে। আজ চালের দাম দু টাকা বেড়ে গেছে। একবেলা ভাত খাচ্ছি। জানি না কতদিন খেতে পারব'। কথায় আছে 'আপনি বাঁচলে বাপের নাম'। অনেকেই লক ডাউনের ভয়ে খাদ্য দ্রব্য বাড়িতে মজুত করতে শুরু করেছেন। ফেসবুকেও দেখলাম অনেকেই পোস্ট করেছেন বেশি পরিমাণে জিনিসপত্র মজুত করে রাখার জন্য। কিন্তু তাই করতে গিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম এক শ্রেণীর মানুষের নাগালের বাইরে না চলে যায়। ... ...
মেয়েদের সবার নাম হয় গুলরুখ , গুলচেহরা বা গুলবদন । আরেক গুলরুখের আনাগোনাও শুনতে পেয়েছিলাম আরও বেশ কিছু পরে । ইতিহাসে এইসব গুলরুখদের নাম লেখা থাকে না । সেই গুলরুখের ভালোবাসার সখী ছিল জাহান আরা । গুলরুখ, জাহান আরার জন্য কত নতুন গান বাঁধত । কত নাচের মুদ্রা শিখত শুধুমাত্র শাহজাদির মন মাতানোর জন্য । এরকমই একটা সন্ধে নিয়ে এসেছিল গুলরুখের যত্নে শেখা নাচ , জাহান আরার সামনে । সবে সন্ধে নেমেছে । একটা একটা করে বাতিদানে বাতি জ্বালিয়ে দিচ্ছে মহলের মেয়েরা । টানা বারান্দায় সারি দিয়ে প্রদীপ । সে যে কী অপূর্ব দৃশ্য ! ... ...
তিন নবীন কবির তিনটি বই। ‘এই প্রজন্মের নারীকবিদের কালো কবিতা এসব। মুখ গুঁজে বসে থাকতে হয় মেয়েদের এই যাপনের মধ্যে।’ পাঠ করে লিখছেন কবি চৈতালী চট্টোপাধ্যায়। ... ...
টার্কি দেশ হিসেবে প্রথম ২০১১-এ কাউন্সিল অফ ইউরোপে ভিক্টিম প্রোটেকশন এবং গার্হস্থ্য হিংসা কমানোর জন্য অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ একটি লিগাল ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করে যা, ইস্তানবুল কনভেনশন নামে পরিচিত। ২০১২ সালে তা র্যাটিফাইও করা হয়। তারপর থেকেই এই এরদোগান সরকার এই কনভেনশনের পেছনে হাত ধুয়ে পড়ে আছে, যাতে তা কার্যকরী না হয়। সরকারের মতে এই আইন পারিবারিক মূল্যবোধের সম্পূর্ণ বিপরীতে দাঁড়িয়ে, যা চালু হলে সামাজিক মূল্যবোধও নষ্ট হবে। ... ...
এই ধরণের বিভেদকামী চরিত্রের পবিত্র গ্যল ভূমিতে, মহান গ্যল ঐতিহ্যের সাথে কোন সংস্রব থাকতে পারেনা। সর্বোপরি টিনটিন বেলজিয়ান এবং বিদেশী। এই দাবীর চরম পরিণতি হিসেবে, তাঁরা ‘আরেকবার ধাক্কা দাও, মার্লিনস্পাইক গুঁড়িয়ে দাও’ হুঙ্কারে সেই প্রাচীন প্রাসাদটি ধূলিসাৎ করেন। সারা ফ্রান্সে অ্যাস্টেরিক্সের মন্দির-সৌধ-সংগ্রহশালা তৈরীর জন্য দাবী ওঠে। টিনটিন অনুরাগীদের প্রতি বিদ্বেষ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। প্রচুর ভাংচুর-দাঙ্গা হাঙ্গামা হয়। টিনটিন অনুরাগীদের বেলজিয়াম চলে যেতে বলা হয়। দেশের বিভিন্ন জায়গায় টিনিটিনের কুকুর কুট্টুসের মূর্তির নীচে ‘ডগমাটিক্স’ (ওবেলিক্সের কুকুরের নাম) লিখে দেওয়া হয়। ... ...
সেদিন বাজারের কাছে অনিলদার সংগে দেখা। দেখলাম আরো রোগা হয়ে গেছেন। হাতে একটা লাঠি। আমায় দেখতে পান নি।আমিই এগিয়ে গিয়ে কথা বললাম। খুব খুশি আমায় দেখে। বললেন - তোমার বৌদি চলে গেছে জানো। হঠাৎ তিন দিনের জ্বরে চলে গেল। একা হয়ে পড়েছি বড্ড, বুঝলে। চোখেও কম দেখি আজকাল। তাই বই পড়াও বন্ধ। তারপর একটু চুপ করে রইলেন, তারপর বললেন - আমি এখন এক বৃদ্ধাশ্রমে থাকি বাসু। না, স্ব-ইচ্ছায়। ছেলেটা নিজে দেখেই বিয়ে করলো এক সময়। আমায় বলতে পারছিল না। ওর মাকে বলে যে আমার শ্বেতী থাকাটা ওর হবু বৌএর পছন্দ নয়। আমরা সংগে না থাকলে সে বিয়ে করতে পারে। আমি বলি - বিয়ে করুক ও। কলকাতার দিকে ফ্লাট কিনুক। আমি কিছু টাকা দিচ্ছি। ... ...
অতিমারি এবং লক ডাউনের আড়ালে, পার্লামেন্টকে এড়িয়ে এই নতুন শিক্ষানীতি পাস করিয়ে নেওয়া হল। আয়তনে বিশাল, বাইরেটা কথার ফুলঝুরিতে উজ্জ্বল এই নীতিকে টুকরো টুকরো করে বোঝার চেষ্টা হয়েছে। দেখা হয়েছে কী ভাবে স্কুল লেভেল থেকেই শিক্ষা ব্যবস্থাকে দাস বানাবার যন্ত্রে পরিণত করা হয়েছে। এই নীতির শুরুতেই বলা হয়েছে অতি উচ্চ গুণমানসম্পন্ন শিক্ষা দেওয়া হবে নার্সারি থেকে ১২ ক্লাস অব্দি ভারতীয় শিশু, কিশোর-কিশোরীকে। বিশ্বব্যাংক ঋণ দেবে, ফলে তার মনমতো করেই তৈরি হল এই পলিসির আগাপাশতলা। তবে টাকা দেওয়া হবে কিন্তু কেবলমাত্র বিশেষ বিশেষ প্রোগ্রামে। তেমনি একটি প্রিয় প্রোগ্রাম STARS যা আগেই চালু করে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের মস্তিষ্কপ্রসূত এই ব্যাপারটি কী সেটা অনেকেই জানেন। ... ...
ভদ্রমহিলা উঠে দাঁড়ালেন। বললেন, 'যদি রিপোর্ট পজিটিভ আসে তখন কি করব? বাড়ির বাইরে তো বেরোতে পারবো না? না না..... এখন টেস্ট করা যাবে না। এমনিতেই কোথা থেকে টাকা জোগাড় করবো সেই চিন্তায় ঘুম নেই।' ... ...
গুজরাল এবং জাফরি কমিটি এ ব্যাপারে যা সূত্র দিয়েছিল, তা হল এইঃ হিন্দিভাষী রাজ্যে শিখতে হবে তিনটি ভাষাঃ ১। হিন্দি (সংস্কৃত সমেত), ২। উর্দু বা অন্য কোনো আঞ্চলিক ভাষা, ৩। ইংরিজি বা অন্য কোনো ইউরোপীয় ভাষা। অ-হিন্দিভাষী রাজ্যে যে ভাষাগুলি শিখতে হবেঃ ১। আঞ্চলিক বা স্থানীয় ভাষা। ২। হিন্দি। ৩। উর্দু বা অন্য কোনো আঞ্চলিক ভাষা। ৪। ইংরিজি বা অন্য কোনো ইউরোপীয় ভাষা। অর্থাৎ, কার্যত, হিন্দি এবং ইংরিজি শেখাটা প্রতিটি ভারতীয় শিক্ষার্থীর জন্য বাধ্যতামূলক। ... ...
কবে থেকে মামা ফকিরের এই কেরামতি , গ্রামের সবচেয়ে বয়স্ক বৃদ্ধ মানুষটি জানান, যেদিন নোয়াখালিতে বাবুজি মহাত্মা গান্ধী আসেন আর মালগাড়ী কামরাভর্তি করে মরা মানুষ এনে ভৈরবের মেঘনা নদীতে ফেলে দেওয়ার খবর বাতাসে উড়তে উড়তে এই গ্রাম পর্যন্ত এসে পোঁছেছিল সেদিন কাকডাকা ভোরে মামা ফকির প্রথম আগুন আগুন! বলে চিৎকার করে। তার দৃষ্টি ছিল রায়বাড়ি বরাবর। গ্রামবাসী পরদিন ভোরে অবাক বিস্ময়ে দেখে রায়বাড়ির উত্তরাধিকার বাবু মহেন্দ্র নারায়ণ রায়, (এমএ ডিস্টিংশন, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়)-এর রক্তাক্ত দেহ তুলসিতলায় পড়ে আছে আর নাটমণ্ডপ সিন্দুক ভর্তি কাঁসার বাসন-কোসন, লক্ষনৌ থেকে আনা সেতার সব সুসজ্জিত রেখে তার পরিবারটি রাতের অন্ধকারে ভারত পালিয়েছে। ... ...
এ রাজ্যের প্রায় সাড়ে ছ’হাজার উচ্চ-মাধ্যমিক অনুমোদনপ্রাপ্ত স্কুলের মধ্যে বৃত্তিমূলক ও কারিগরি বিভাগে পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে মাত্র তেরশো স্কুলে। অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণদের জন্য ‘ভকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার’ তৈরি হয়েছিল যে সব স্কুলে, পর্যাপ্ত পরিকাঠামো এবং প্রশিক্ষকের অভাবে সেগুলোর অধিকাংশই আজ ধুঁকছে। অনেকগুলো ইতিমধ্যে বন্ধও হয়ে গেছে। এবং এই প্রসঙ্গে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর তথ্যটি হল, এ রাজ্যের কোনও স্কুলের ভকেশনাল ট্রেনিং সেন্টারেই কোনও স্থায়ী শিক্ষকপদ নেই। পুরো ব্যবস্থাটাই চলছে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দিয়ে। এই একটা তথ্যই বোধহয় এই বৃত্তিমূলক শিক্ষয়ার প্রতি সরকারের চরম উদাসীনতার বা বিমাতৃসুলভ মনোভাবের যথেষ্ট প্রমাণ হিসেবে গণ্য হতে পারে। ... ...
আমার কিছু অসুস্থতা আছে, গোছানো / ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রোদ এভাবে যখন ঐ উঠোনে / প্রতিদিন সকালে ভাবি / এখানের সব অস্তিত্ব গভীর মৃত্যুচিন্তায় ডোবানো ... ...
কাদম্বিনীকে কোন ছাঁচেই ঠিকঠাক ফেলা যায় না, তিনি স্নেহময়ী মাতৃমূর্তি নন, বিদ্রোহিনী নন, সন্ন্যাসিনীও নন - আবার এই সবই। তাঁর ছবিটা এই রকম - ফিটন চেপে এক মহিলা যাচ্ছেন শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে, রোগী দেখতে। হাতে কুরুশ-কাঠি, অপূর্ব সূক্ষ্ম কাজের লেস বুনছেন যাতায়াতের সময়টুকুতে, বিধবা বড় ননদের জন্য হিন্দু মতে রান্না করছেন, পূত্রবধূকে লিখছেন, ‘কাল বিকালেও রাঁধুনি আইসে নাই। আজও ক্যাঁও ক্যাঁও করিয়াছে শরীর ভাল না। কাল আসিবে কি না জানি না।’ আবার বিহার, ওড়িশায় খনিমজুর মেয়েরা কেমন আছেন, তা সরেজমিনে দেখে রিপোর্ট দিচ্ছেন সরকারকে। ... ...
সাধারণত রোগ সেরে গেলে কেউ ডাক্তারের কাছে ফেরত আসেন না। যারা আসেন, হয় তাদের জ্বর কমেনি অথবা পেটে ব্যথা আরও বেড়েছে। প্রথম দিকে হতাশ হয়ে পড়তাম। ভাবতাম, কারোরই তো অসুখ কমাতে পারছি না। আস্তে আস্তে বুঝলাম, দশ জনের মধ্যে দু- তিনজন ফেরত আসছেন। বাকিরা সুস্থ আছেন বলেই আসছেন না। দিনকে দিন অভিজ্ঞতা বাড়ছে। এখন আর সহজে আনন্দ, মন খারাপ, হতাশা এইসব হয় না। কতো রকমের মানুষ যে হয়! সাধারণ মানুষ, ‘ডাক্তার বাবু, আমি ঠিক হয়ে যাবো তো?’ ... ...
শেষ হতে চলেছে ২০০৭, এক রক্তাক্ত বছর। সাদ্দামের ফাঁসির ভিডিও আর নিঠারীর নালা থেকে পাওয়া শিশুদের হাড়গোড় দিয়ে শুরু হয়েহিল এই বছরটি। জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা তাপসী মালিকের আংরা হয়ে যাওয়া ছবিটাও তখনও বেশ টাটকা। তারপর শুধুই রক্ত আর লাশের মিছিল, ভালবেসে বিয়ে করে লাশ হয়ে যাওয়া, বিস্ফোরণে ছিন্নবিচ্ছিন্ন, মানবদেহের টুকরো; মক্কা মসজিদ থেকে সমঝোতা এক্সপ্রেস, মইনুদ্দিন চিস্তির দরগা থেকে চাট সেন্টার ---- এবং নন্দীগ্রাম, এবং নন্দীগ্রাম, এবং নন্দীগ্রাম। ... ...
ইংরেজিতে একটা কথা আছে, “যা আমাদের শেষ করে দেয় না, তা আমদের শক্তিশালী করে”। সেইরকম ভাবেই, প্রতিটি নতুন চোরের সাথে মোকাবিলার পর শরীরের সিকিউরিটি গার্ড সেইসব নতুন চোরদের ছবি তুলে রাখে। মনে করে রাখে পরিচয়জ্ঞাপক কিছু বিশেষ চিহ্ন যা দিয়ে সেই চোরকে শনাক্ত করা যায়। পরের বার আবার শরীরে ঢোকার চেষ্টা করলেই পাকড়াও হয়ে যায় সেই চোর, বেঁচে যায় আমাদের শরীর। তাই একবার পক্স হয়ে গেলে সাধারনতঃ আর দ্বিতীয়বার পক্স হয় না। তবে এর ব্যতিক্রম আছে। কিছু চোর খুব চালাক হয়। তারা প্রতিবার নতুন নতুন ছদ্মবেশে আসে আর আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেমকে বোকা বানিয়ে দেয়। তাই আমাদের বছর বছর ইনফ্লুয়েঞ্জা বা পেট খারাপ হয়। কোভিডের ক্ষেত্রে সমস্যা হল, মানবজাতির জন্য এ এক নতুন চোর। তাই এর নাম নভেল। শরীর একে চেনে না। তাই সব সময় শরীরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে একে আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেম আটকাতে পারে না। ... ...
সম্প্রতি প্রয়াত হলেন বিজয়া মুখোপাধ্যায়, কবি, গদ্যকার, সংস্কৃতজ্ঞ। ‘নারীবাদী’ তকমার পাঁচিলে না ঘিরেও বলা যায় তাঁর লেখালেখি নারীবিশ্বের উঠোনে দাঁড়িয়েই। লিখছেন কবি চৈতালী চট্টোপাধ্যায় ... ...
উপরের স্তরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা অনেকেই আবার এইসব দুষ্টচক্রের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, একথা বললে বোধহয় ভুল হবে না। এদের অনেকেই রোগী দেখার ন্যায্য প্রাপ্য অর্থের ওপর মোটা লভ্যাংশ বা কমিশন পেয়ে থাকেন রোগীকে ভর্তি করা, (এড়ানো সম্ভব এরকম) অস্ত্রোপচার, এবং কতদিন রোগী ভর্তি রইলেন, তার ওপর। হাসপাতালের স্বার্থ এবং বরিষ্ঠ চিকিৎসকদের স্বার্থ এক্ষেত্রে এক হয়ে যায়। বৈদ্যুতিন চ্যানেলে ঘনঘন মুখ দেখানো বেশ কিছু চিকিৎসক হাসপাতালগুলির আংশিক মালিকানা ভোগ করে থাকেন মেডিকেল ডিরেক্টর হিসেবে। কিছুদিন আগে ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ৯১ জন রোগী এবং ২ জন সেবিকার মৃত্যু ঘটেছিল। সে স্মৃতি আজও মলিন হয়ে যায়নি। প্রাথমিক গ্রেপ্তারি এবং মামলা-মোকদ্দমার পর হাসপাতালটির মালিকানার হস্তান্তর ঘটেছে, কিন্তু আজ পর্যন্ত কারও শাস্তি হয়নি। ঐ সময় জানা গিয়েছিল, অতি-প্রবীণ ও শ্রদ্ধেয় চিকিৎসক ডা. মণি ছেত্রীর নামেই ঐ হাসপাতালের লাইসেন্স, এবং তিনি ঐ হাসপাতালের একজন অংশীদার। ফলে তাঁকে কিছু দিনের জন্য কারাবরণ করতে হয়। এইরকম বহু মেগা-বিশেষজ্ঞ কার্যত কর্পোরেট হাসপাতালগুলির আংশিক মালিকানা ভোগ করেন, যদিও বিষয়টি প্রায়শ গোপনে থাকে। ফলে হাসপাতালের লভ্যাংশ নেব অথচ দুর্নীতির দায়ভাগ নেব না— এ প্রায় দস্যু রত্নাকরের পরিবারের বক্তব্যের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। ... ...
স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাড় পাঁজরা বেড়িয়ে গেছে। কোভিড রোগীদের তো বটেই, অন্যান্য রোগেও চিকিৎসা পেতেও জনসাধারণের নাভিশ্বাস উঠেছে।এটা হওয়ারই ছিল। মিডিয়া ও সরকারের পক্ষ থেকে যথারীতি ভঙ্গুর পরিকাঠামোকে চাপা দেওয়ার জন্য চিকিৎসকদের কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে। মানুষেরা আমাদের গালি দিয়ে মনের ঝাল মেটাচ্ছে। কর্পোরেট হাসপাতালগুলি জনস্বাস্থ্যের এই দুর্যোগের সময়েও ব্যবসায়িক মনোভাব থেকে বেরোতে পারেনি। তারা নানা রকম করোনা প্যাকেজ চালু করেছে। তা সাধারন মানুষ তো বটেই, আমার মতো মধ্যবিত্ত চিকিৎসকেরও সামর্থ্যের বাইরে। সরকার সে সব দেখে শুনেও চুপচাপ। ... ...
যৌবন গিয়ে প্রৌঢ়ত্ব ছুঁই ছুঁই, এমন সময় ছোটদাদু চাকরি থেকে বরখাস্ত হলেন। তখন চাকরি চলে যাওয়া তেমন কোন বড়ো ব্যাপার ছিলোনা, লোকের হামেশাই চাকরি যেত। পরিবারও খুবই সচ্ছ্বল ছিলো -- চারটি কন্যাসন্তানের পিতা ছোট্দাদু বাড়ি এসে "কোনো ভদ্রলোকের বাচ্চা চাকরি করেনা" ঘোষণা করে তাস পিটতে বসে গেলেন। যৌথ পরিবারের কর্তা, বড়োদাদু মার্চেন্ট আপিসের বড়োবাবু। তিনি নার্ভাস হয়ে পরের মাসেই একটা পাকা চাকরির বন্দোবস্ত করে বাড়িতে এসে ছোটভাইকে বলার পর ছোটদাদু নাকি অট্টহাস্য করে বলেছিলেন, "তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে বড়দা? সত্তর টাকার মাইনে পেয়ে এসে আমি এখন পঞ্চাশ টাকায় ঢুকবো?"! বলা বাহুল্য ছোটদাদুকে আর কোনদিন উপার্জন করতে দেখা যায়নি, এবং যৌথ পরিবারটি অনতিবিলম্বে স্বখাতসলিলে ধরাশায়ী হয়। তারপরের দুই প্রজন্ম মুখে রক্ত তুলে খেটেও সেই বিলাসিতার ঋণ চোকাতে পারেনি। যে দারিদ্র পাকিয়ে ধোঁয়া টানে কবি, যে দারিদ্রে জলের ছিটে দিয়ে উজ্জ্বল করে তোলে আঁকিয়ে - সেই রাজকীয় শিল্পমন্ডিত দারিদ্র নয়। শস্তা অগৌরবের দারিদ্র। ... ...