নারদ কহিলা মাগো ইদানিং দেখি। ঘরে ঘরে ক্যানসার স্ত্রী রোগ এসব কী! লক্ষ্মী কহেন এই কুস্বাস্থ্যের মূল। অসুস্থ অভ্যাস আর শিক্ষাগুলি ভুল।। আজ হইতে শুনে রাখো আমার আশয়। ঋতুকথা নহে আর লজ্জার বিষয়।। ঋতুকালে ‘বস্ত্রখণ্ড’ নাহি নিও কভু। তব সুস্থতা লাগি দিয়াছেন প্রভু।। ‘স্যানিটারি ন্যাপকিন’ মূল্য নহে বেশি। স্ত্রীরোগকে দূরে রাখে দৃঢ় থাকে পেশী।। পেশী দৃঢ় থাকে যদি জানো কি তখন। প্রতিরোধ করা যায় জরায়ু স্খলন।। অপরিচ্ছন্ন বস্ত্রখণ্ড রোগ আনে শত। শতরোগে জীর্ণ নারী কষ্ট পাবে কত।। আরো বলি শরীরের পরিণতি হলে। তবেই কন্যারে নিও বিবাহের স্থলে।। বিবাহ করিবে যবে হবে অষ্টাদশী। দু’বৎসর পতিসহ থাকো হাসিখুশি।। ... ...
কেন, দূরত্বের প্রশ্নে এতো বিস্ময় সৃষ্টি হলো কেন? মার্কনির পরীক্ষায় বিস্ময় উদ্রেক হওয়ার পিছনে নিহিত ছিল আর একটা কারণ। মার্কনির সমসময়ে আলোর সরলরৈখিক গতি, আলোর প্রতিফলন, আলোর প্রতিসরণ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল ছিলেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা জানতেন আলো হলো এক বিশেষ তরঙ্গদৈর্ঘ্য সম্পন্ন তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গ। তারা জানতেন সমস্ত তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গই আলোর মতো সরলরেখায় চলে। রেডিও ওয়েভ যেহেতু তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গ তাই সেই ওয়েভও সরলরেখায় চলে। কোনও প্রতিবন্ধকতা না থাকলে ৫-৬ কিমি দূরের কোনও আলো যেমন স্পষ্ট দেখা যায়, তেমনই ৫-৬ কিমি দূরে রেডিও ওয়েভ প্রেরণ করাটা কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। কিন্তু তাই বলে ইংলন্ডে আলো জ্বালালে কি তা কানাডা থেকে দেখা সম্ভব? ঠিক তেমনই ইংলন্ড থেকে রেডিও ওয়েভ প্রেরণ করলে তা কি কানাডায় পৌঁছন সম্ভব? তাছাড়া পৃথিবী পৃষ্ঠ হলো গোলকাকার। আর রেডিও ওয়েভ চলে সরলরেখায়। তাহলে বক্রপৃষ্ঠ বেয়ে সেই তরঙ্গ কি ভাবে পৌঁছল কানাডায়? স্থম্ভিত বিজ্ঞান মহল। ... ...
চলছে খিচুড়ি মহারহস্য অ্যাডভেঞ্চার। যে ‘বাজরাখিচড়ি’ ওরফে ‘লাদরা’-র এমন নাম রটাল ডাকসাইটে কেতাব জাহাঙ্গিরনামা, কী সেখানা? আদৌ যাবে কি জানা? এ প্রশ্ন ধাওয়া করেই আমরা ঢুকে পড়েছি মুঘল বাদশাদের মহাহেঁশেলে, যেখানে একবার ঢুকলে বার হওয়া কঠিন! আর সেখানেই আমরা দেখব, কীভাবে আগমার্কা ভারতীয় খিচড়িতে এসে মিশে গেল আফগান ধারা। নীলাঞ্জন হাজরা। ... ...
নাজমা বিকেল হলে দোতলার ছাতে আসবে। তারিক একথা জানে। তিতুও। এছাড়াও তারিক জানে, নাজমা স্কুলে কখন বেরুবে, আর, সেই সময়ে তার গায়ে থাকবে একটা অব্যর্থ লালচে টিউনিক। ওই সময়ে, নাজমা, তিতুকে সে বলেছে, একদম নীলমের মাফিক। নীলম, নীলম। চাংকি পান্ডের হিরোইন। সাদা জামা, সাদা প্যান্ট, সাদা জুতো পরিহিত হিলহিলে চাংকি। ওর সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে হাসতে হাসতে নাচে নীলম। উজ্জ্বল নীলম। লাল ফিতে চুলে বাঁধা থাকে তার। গায়ে লাল ফ্রক। পায়ে যেমন জুতো থাকে সেরকম জুতো সে যদিও নাজমার পায়ে দেখেনি। সত্য বোসের বেটি পরে অমন হিলতোলা জুতা, অমন ফ্রক। কিন্তু, দশটায় টিউনিক গায়ে যখন নাজমা বেরুবে, তখন সে আদতে নীলম। ওই সময় তার পথের একপাশে বসে থাকবেই তারিক, হয় হরলালের পুকুরের ধারে, নয় রাস্তাটা যেখানে বাঁক নেয়, সেই তুঁতগাছের নীচে, কোনোদিন তিতু সঙ্গে থাকবে, কোনোদিন সে একা, কিন্তু ওই সময়ে নাজমার হেঁটে যাওয়ার দৃশ্য দেখবেই তারিক। একই দৃশ্য, তবুও কেন যে নতুন মনে হয়! তার যাওয়ার পরে সঙ্গে তিতু থাকলে তারিক বলবেই, কেমন দেখলি, আজ? আর হয়ত এমনই চাপাগলায় কথাবার্তা হবে তার ও তিতুর: ... ...
ছিয়াত্তরজন ড্রাগ অ্যাডিক্ট নর্দমার কাঁথে মুখ রেখে ঈশ্বর খুঁজছে; ফরফর করে আরশোলা উড়ে ধাক্কা মারছে তাদের চোখেনাকে — পুড়ে রবারের মতো নরম আর থকথকে হয়ে যাচ্ছে শিশুদের হৃৎপিন্ড; সিরিয়ার ধ্বংসস্তূপে, কংক্রিটের হাড় বেরিয়ে-থাকা টাওয়ারে, পাখির বাসাতে বসে তিনজন স্নাইপার টার্গেট প্র্যাক্টিস করছে তাদের মেরুন খেলনাগুলির ওপর। হিরোশিমার হলদে পর্নোগ্রাফিক ফুটেজ থেকে গলে গড়িয়ে নামছে তেজস্ক্রিয় পাকস্থলী, দেখতে দেখতে ছিয়াত্তরজন কবি মাস্টারবেট করছে বিবর্ণ নীল বিন্দুটার গায়ে; আলের ধারে বসে জলের ওপর ঝুঁকে যে চাষী ফানুস দেখছে, আজ রাতে ফলিডল খাবে। ... ...
আমার মা আঁকতে পারেন, প্রতিমা গড়তে পারেন। মামাবাড়িতে প্রতিমা তৈরি হয়। মা, মাসি ,মামা সবাই হাত লাগাতেন শিল্পীর সঙ্গে। সে অভ্যাস মায়ের এখনও আছে। যদিও এখন কিছুই করা হয়ে ওঠে না। ইনটারনেট দেখে আঁকতে ভাল লাগে মায়ের। মাঝেমাঝে তাই আঁকেন। আর আমায় আঁকায় উৎসাহ দিয়ে যান খুব। ভালো লাগে না আমার, যখন মাকে আত্মীয়, পাড়া পড়শীরা বলে ‘অংশু মেয়ে হলে ভালোই হত।আসলে তোমার মতো তো ও অনেকটা’! মা উত্তর দেন না । মনে মনে হয়েতো কিছু উত্তর দেন। তবে আমায় বলেন, ‘আমার অংশু কিসে কম! ওর পড়তে ভালো লাগেনা, তো লাগে না।বাবু আমার পাশ তো করে যাচ্ছে’।আবার কখনও মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলেন, ‘আমার বাবুর মতো কেউ আলপনা দিতে পারে’? বাবাকেও নালিশের সুরে মনের কথা বললেন। বাবা তখনই বলে ওঠেন, ‘ছাড় ওসব কথা’। পুজোতে এবার মামাবাড়ি যাব ঠিক হয়েছে। সোনাদিদি আসছে বিদেশ থেকে। বড়োমাসিও আসতে পারে। সোনাদিদি বিদেশে গবেষণার জন্য গেছে। পুজোর পর আমাদের বাড়িতে থাকবে দু মাস, গবেষণার কাজের জন্য। আমার আঁকার অন্যতম ভক্ত সোনাদিদি। মহালয়ার পর পরই চলে এলাম দাদুর বাড়িতে। কী আনন্দ! দালানে বসে বসে ঠাকুরের সাজ পরালাম। সোনাদিদিও এলো হাত লাগাল। ঢাকের বাদ্যি বাজল। পাড়ার অনেকে এল। সোনাদিদির প্রশংসা করল। আমারও করল। তবে আমাকে, মাকে আবার শুনতে হল অংশু মেয়ে হলে কত ভালো হত। সোনাদিদি শুনছিল আর হাসছিল। ... ...
রাষ্ট্রসংঘের একাধিক মানবাধিকার ঘোষণায়, সনদে ‘জরুরি অবস্থায়’ রাষ্ট্রের হাতে (ইউ এন এর পরিভাষায় নেশন) কিছু বিশেষ ক্ষমতার ব্যবহার ও কিছু নাগরিক/মানবাধিকারের উপর নিয়ন্ত্রণের অনুমোদন দেওয়া আছে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতি সেই ধরনের বিপর্যয়ভুক্ত। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে এ কথাও বলা জরুরি যে, এই ‘বিশেষ ক্ষমতা’ মোটেই নিরঙ্কুশ নয়। ... ...
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সরকারি কর্মীর হাতে, পুলিশের হাতে, সেনাবাহিনীর হাতে, বিচারকদের হাতে, সাংবাদিকদের বা প্রচার মাধ্যমের হাতে, ব্যবসায়ীদের হাতে, এমনকি জঙ্গিদের হাতেও থাকে স্বেচ্ছাচারিতার অগাধ ক্ষমতার উপস্থিতি। তারাই ক্ষমতা বৃত্তের ভরকেন্দ্র। সাধারণ মানুষ এখানে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। ... ...
নীল কপোতাক্ষ। টলটলে। আলপাইন বন। সুইশ আল্পসের মাথায় বরফ জমে আছে। নির্ভেজাল সুন্দরী। সে সুন্দরী বসেছিল নন্দানো সোপ্রানোর জন্য। আমরা ব্যাগ মাটিতে ফেলে দৌড়ে তার কাছে চলে গেলাম। ছবিতে দুটো ব্যাগ দেখা যাচ্ছে। ধুমসোটা আমার, ওর মধ্যে ওই ঘ্যাঁট থুড়ি স্ম্যাশড ইত্যাদি আছে। আমরা চুপ করে বসে থাকলাম। ছোট্ট ছোট্ট ঢেউ উঠছে জলে। মৃদু বাতাসে তিরতির করে সেই জল কাঁপছে। স্বর্গের হাঁসেরা মা সরস্বতীর কাছ থেকে ছুটি নিয়ে দু-দণ্ড খেলে বেড়াচ্ছে। আমরা কথা ভুলে গেছি। ... ...
কয়েক বছর পরের পুজোয় সাইকেলে এক ভোরবেলাতেই বেরিয়ে গেছি। অর্ধচেনা আবাসন এক। সেখানকার ওই একটি মানুষ চিনি তখন। সে যদিও জানত না তা, সেই সুবাদে অর্ধচেনা। আবাসনের ছোট পুজো, ইতস্তত শূন্য চেয়ার চক্রাকারে শিশির মেখে আড্ডা মারে। এক কোণে এক টেবিল ফ্যানের সামনে রাখা ঢাকের পাশেই কাঁথায় মোড়া ঢাকি কাঁসি ঘুমিয়ে কাদা। আলো ফুটেছে, গান ছিল কি? হবে হয়ত। মূর্তি ছিল একচালাতেই। আশে পাশে কিছু জানলার একটা বোধ সেই মানুষের। কিছুক্ষণই অনন্তময় শিরশিরানি শরীর জুড়ে। কোনও একটা জানলা ধারে একমনে এক শিউলি গাছটি বিমুর্ত এক আলপনা দেয় ঘাসের ওপর। কেউ না যেন দেখে আমায়, যদি বা কেউ শুধোয় কিছু? গলা শুকনো, বলব না হয় তেষ্টা পেয়েছে। মিথ্যে হবে? শিরশিরানি। আরও কয়েক বছর পরে একটা ঘরে ডুমের আলো, হলদে আলো। সেই প্রথমই একলা শোনা গানের কথায় শিরশিরানি। গানের সুরে গায়কীর এক মায়ার টানে শিরশিরানি। কিছু পরে প্যান্ডেলে এক জনপ্রিয় হিন্দি গানের কথার সঙ্গে অনুরণণ - বেদম ঝটকা। সংজ্ঞা হারায় - শিরশিরানি। এই এখনও আবহাওয়া যেমন করে হালকা হ'ল হঠাৎ করে, ভোরের দিকে পাতলা গোছের চাদর লাগে। অনেক দূরের থেকে আসা ভেসে আসা গানের লাইন, ঢাকের শব্দ, ভিড়ের গন্ধ সেন্ট জিলিপি সঙ্গে মিশেল এগরোল চাউ শিরশিরানি নৌকা করে আসতে থাকে সুদূর থেকে। একে একে পা রাখছেন এক এক বয়স, এক এক মানুষ। কী আনন্দ। ... ...
শিল্পকলার অন্য ক্ষেত্রে, মানে ছবি আঁকা, মূর্তি গড়া বা চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে যদি কেউ এই ধরনের রেফারেন্স বা কোটেশন ব্যবহার করেন তাহলে কি সেটা অত্যন্ত গর্হিত কাজ বলে গন্য হবে ? আমার উত্তর হচ্ছে ‘না’। যদি কোন শিল্পী তাঁর পূর্বজ আরেকজন শিল্পীর কোন আইকনিক কাজকে অন্য ভাবে অন্য কনটেক্সটে বা অন্য মাধ্যমে ব্যবহার করে আলাদা কোন বার্তা দিতে চান, তাহলে সেটাও শিল্পের একটা ভ্যালিড পদ্ধতি বলেই ধরে নিতে হবে । এই পদ্ধতিতে সাধারণত শিল্পী তাঁর রেফারেন্স সোর্সকে গোপন রাখতে চান না বরং সেটাকেই তাঁর নিজস্ব সৃষ্টির একটা এন্ট্রি পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করবার চেষ্টা করেন । এ বিষয়ে সেরা উদাহরণ হচ্ছে পিকাসোর পঞ্চাশের দশকের বেশ কিছু ছবি, যেখানে তিনি ভেলাস্কেথ, গোইয়া, এদুয়ার মানে প্রমুখ শিল্পীর আঁকা কিছু বিখ্যাত মাস্টারপিস ছবির পুনর্নির্মাণ করেছিলেন । ... ...
আরও অনেক কিছুর সাথে দুর্গা পুজো মনে করিয়ে দেয় আমার রিসার্চ বিষয়ক প্রথম ব্যর্থতার কথা। বাড়িতে বাজি বানাতে গিয়ে—না, বাজি বানাতে ব্যর্থ হইনি, ব্যর্থ হয়েছিলাম হাতে বানানো রংমশাল আর তুবড়ির ধোঁয়া কমাতে। বানাতাম সেসব মাল জবরদস্ত, কিন্তু বড়ো বেশি ধোঁয়া হত। সে অনেক দিন আগেকার কথা। একসময় আমাদের দাদারা লায়েক বয়েসে পৌঁছে ঠিক করল বাড়িতেই বোম-বাজি ইত্যাদি বানাতে হবে। আমরা তখন খুবই ছোটো। কানেকশন এল নেপালদার বন্ধু অদয়দার চেনা সূত্র ধরে—সেই মাস্টার-এর সাথে। মাস্টার নাকি কংগ্রেস জামানায় পেটো বানাত দুরদার—সিপিএম আমলেও বানাত, তবে খুব খাতির থাকলে তবেই। আমাদের পুরানো বাড়ির ছাদেই সেই বোম-বাজি বানানোর শুরু। তুবড়ির খোল কেনা আসত কুমোর বাড়ির থেকে—বাকি বোম বানানোর মালমশলা মেমারি বাজারের এদিক ওদিক হতে। সোরা, গন্ধক, অ্যালুমিনিয়াম/লোহাচুর, স্পাইরো পাউডার ইত্যাদি। তখন অত রেগুলেশন ছিল না সোরা (পটাশিয়াম নাইট্রেট) বিক্রি নিয়ে। পরে খুব কড়াকড়ি শুরু হয়, লাইসেন্স ছাড়া বিক্রি করা যাবে না এবং বিক্রি করলেও কতটা পরিমাণে ইত্যাদি। তবে সত্যি কথা বলতে কী সবই চেনাশোনা সার্কেলের জন্য জিনিস মার্কেটে থাকলে এবং বেআইনি না হলে মালমশালা পেতে কোনোদিন আসুবিধা হয়নি। তবে জমাটি কেস ছিল কাঠকয়লার বেলায়। সঠিক কাঠকয়লা বাজি বানানোর ক্ষেত্রে খুবই জরুরি যাঁদের অভিজ্ঞতা আছে তাঁরা জানবেন। আর কোন্ পাগলা নাকি বলেছিল সবচেয়ে ভালো কাঠকয়লা হয় আকন্দ গাছের গুঁড়ি পুড়িয়ে! ... ...
সুবিদিত হলেও, সত্যজিতের পশ্চিমি ধ্রুপদী সঙ্গীতের দখলের কথা যত বলা হয় তত বলা হয়না ওনার হিন্দুস্তানী সঙ্গীতের দখল সম্বন্ধে। পশ্চিমি ধ্রুপদী সঙ্গীতে ওনার দখল ও উৎসাহ তখনকার গড়পড়তা সঙ্গীতবোদ্ধাদের তুলনায় অনেক বেশি ছিল সে কথা বহু-আলোচিত। আমি এমনও শুনেছি বন্ধুমহলে ওনাদের একটা খেলাই ছিল একটি কম্পোজিশনের পিস শুনে চিনতে হবে - কম্পোজার চেনা তো তুশ্চু - কন্ডাকটরকে! কিন্তু আমার ব্যক্তিগত ধারণা হিন্দুস্তানী সঙ্গীতে সত্যজিতের দখল ছিল পশ্চিমি সঙ্গীতের থেকে হয়ত বেশিই। গুগাবার গানের বাজির দৃশ্যটি তার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। ছবির দিক দিয়ে দেখতে গেলে গানের বাজির শুরুয়াৎ কিন্তু হাল্লার রাজসভারও আগে, যখন গুপি-বাঘা ভূতের দেওয়া খাবার খেয়ে হাত-মুখ ধুতে ধুতে ও সঙ্গে রাজকন্যার চিন্তা করার সময়ে দোলায় চড়ে টোড়ি গাইতে গাইতে যাওয়া ওস্তাদের সাক্ষাৎ পায়। সেই দৃশ্য শেষ হয় লয় বাড়িয়ে দ্রুতে খেয়াল গাইতে গাইতে যখন "বাপ রে বাপ, কী দাপট"-এর সঙ্গে ওস্তাদজী হাল্লার রাজসভার দিগন্তে মিলিয়ে যান। এও দেখার বিষয় যে গানের বাজিতে একটি কীর্তন আর একটি ঠুংরি ভিন্ন আর সবই যাকে বলে পাকা গানা। ধ্রুপদ ও খেয়াল। মানে পাকা আর আধা-ধ্রুপদীর বাইরে কোন গান নেই। নো লোকগান। নেই যন্ত্রসঙ্গীতও। এটাও স্রেফ একটা অবজার্ভেশান। কোন বিশেষ কারণ নির্দেশ করার চেষ্টা করছি না। ... ...
যতজন ভারতীয় বলিউডি ছবি দেখেন, ততজন নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতা শোনেন না। ফিল্মের মাধ্যমে কোন বার্তা দিলে সে বার্তা যে অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছায় এবং বার্তার জোর অনেক বেশি হয় সেকথা বামপন্থী, মধ্যপন্থী, দক্ষিণপন্থী --- সকলেই বোঝেন। উপরন্তু বলিউড ভারতের মানুষের কাছে পুরাণকথিত স্বর্গলোক, যেখানে দেবদেবীদের বসবাস। সুতরাং বলিউডি ছবির বার্তা বিরাট অংশের মানুষের কাছে বেদবাক্য --- কখনো সচেতনভাবে, কখনো অবচেতনে --- এ কথা বুঝতে আধুনিক চাণক্য হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ... ...
সকাল থেকে চেয়ারে বসে বসে কোমরটা ধরে গেছে, পেটটাও যেন কেমন মোচড় মারছে। ওই খান দুই শুকনো পেয়ারা ছাড়া আর কিছুই জোটেনি, পিকাবুলিটার দ্বারা যদি একটা কাজ ঠিকঠাক হয়! নিজে বেরিয়ে গিয়ে যে কিছু ভালোমন্দ ঢুঁড়ে আনবে তারও জো নেই। অফিস ছেড়ে তো আর এরকম কাজের সময় খাবার খুঁজতে যাওয়া যায় না। অবশ্য অফিস ফাঁকা রাখার দরকার নেই, পিকাবুলি আর টিনিয়া তো আছেই। তবে ওরা কাজের চেয়ে অকাজটাই বেশি করে কী না! ... ...
তিন নবীন কথাসাহিত্যিকের সম্প্রতি প্রকাশিত তিনটি বই। আঙ্গিক ও বিষয়ে বৈচিত্রময়। পড়লেন তৃষ্ণা বসাক। ... ...
আজ এক ভদ্রলোককে তিনজন যুবক পাজাকোলা করে আনল। সঙ্গে একজন সদ্য যুবতী। ভদ্রলোকের মেয়ে। সে শুধু বলছে, 'ডক্টর, আগে আমার বাবাকে দেখুন। খুব সিরিয়াস অবস্থা।' জিজ্ঞাসা করলাম, 'হয়েছেটা কি?' কিছুতেই বলতে চায়না। শুধু বলছে, 'জ্বর এসেছিলো। তারপর সিরিয়াস হয়ে গেছে।' অবশেষে কাগজপত্র ঘেঁটে বার করলাম তিনদিন আগের করোনার রিপোর্ট- পজিটিভ। বললাম, 'একি, একে এভাবে চেম্বারে নিয়ে এসেছেন কেন? আর আপনারা জড়াজড়ি করে যেভাবে আনলেন, তাতে তো আপনাদেরও করোনা হবে।' যুবক তিনজন হতবাক হয়ে আমার দিকে তাকাল। 'করোনা?? কিন্তু ওযে বলল..' বললাম, 'এনাকে বাঁচাতে হলে হাসপাতালে ভর্তি করতেই হবে। এই দেখুন অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৮২% এ নেমে গেছে। শিগগিরী একে এম্বুলেন্সে তুলুন।' কিন্তু এম্বুলেন্সে তোলার জন্য কেউই এগিয়ে এলো না। বস্তুত ওই তিন যুবককে আর খুঁজেই পাওয়া গেল না। ... ...