এটাই নাকি চিত্রকর গ্রাম। ভরতপুর। মোটে পনেরো ঘর চিত্রকর। হুড়মুড় করে ঢুকে পড়তে গেলাম প্রথম বাড়িতেই। সঙ্গে দেবাশীষ মুখার্জি ভাই--- আগে এসেছে কিনা। বলল--দাঁড়ান ওই খানটায় , অনিলকে ফোন লাগাই। একটা পুরোনো গরীব কুয়ো --ডুমুর অশথ গাছের শেকড় জল ছোঁয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করছে। ঝুঁকে দেখতে দেখতেই ডাক এল। গাঁয়ের একটি সিমেন্ট বাঁধানো দাওয়ায় ওরা ছবি বিছিয়ে দিচ্ছে। এটাই নিয়ম। বাইরের কেউ এলে পনেরো ঘরে কানাকানি করেই খবর পৌঁছে যায়--যার যেটুকু পুঁজি এনে সাজায় সেই দাওয়ায়। ... ...
শ্রীধর তো মানুষই না। সে তো তার থেকে হায়ারার্কিতে অনেক অনেক নীচে। মধ্যিখানে আছে নাজির টাকলুবাবু, মানে শ্রী নিশিকান্ত পরিজা, যিনি রঙিন পর্দা থেকে রেফ্রিজারেটর নাজিরিপনা করে ম্যাডামের সামনে দাখিল করবেন। বিশাল চুনকাম করা বাংলোর প্রতি ঘরে তীব্র চুনকামের গন্ধে মাথা ধরে যায়। তিনটে বাথরুম-পায়খানার একটা পায়খানায় এক-একদিন হেগে দেখা যায় তিনটের মধ্যে দুটোরই নিকাশি নালা বন্ধ হয়ে আছে। ফ্লাশ করলে মল যাচ্ছে না। সে কী ট্রমা, আবার ফোন করে পারিজাকে ঝাড়ে সু। প্লাম্বার ডাকে পারিজাবাবু। ওভারহেড ট্যাংকি থেকে জল ঝরছে তো ঝরছেই। বেওয়ারিশ কুকুরে বেড়ালে বাড়িতে এসে যেখানে সেখানে বসে থাকছে। ইঁদুরেরা সোফার ভেতরে বাসা করে সমস্ত স্পঞ্জ গদি কুটিকুটি করে ফেলছে। ... ...
সব চরিত্র কাল্পনিক দেখে এক সময় আমায় বোঙায় ধরেছিল। সে কথা এই মায়াপাতার লোকজন কিছু কিছু জানেন। তারও আগে রেইনকোটের ভেজা বিষাদ। কিম্বা দোসর-এর সেই সাদা -কালোর নিষ্ঠুর মায়া। মৃত্যু-অপ্রেম আর ভালোবাসার বেঁচে থাকার গিঁট-পড়া কাটাকুটির মধ্যে বিষাদ তার থাবা নামাচ্ছে। বিষাদ, স্নেহময় , তার নখ বসাচ্ছে।কর্তব্য,পূর্বনির্ধারিত। পৃথিবীর কোনো গানের সুর-কোনো জলের স্বাদ,পাতালের কোনো ভোগবতীর ধারা, ফলের রসালতা, পৃথিবীর কোনো ওষুধ, কোনো অ্যালপ্রাজোলাম-ফ্লুওক্সেটিন-সিটালোপ্রাম এই মহৎ বিষণ্ণতার শালপ্রাংশুমহাভুজ শরীরে একটি আঁচড়ও কাটতে পারে না। এই বিষণ্ণতার রাস্তা ধরে ঐ তৃতীয় মানুষটি হেঁটে হেঁটে চলে যাচ্ছেন। পাহাড়ী রাস্তার মেঘ-কুয়াশা-তিস্তাজলের মধ্য দিয়ে। সখী হাম মোহন অভিসারে যাঁউ... ... ...
সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটকের উত্তরসূরী হিসেবে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, গৌতম ঘোষ, উৎপলেন্দু চক্রবর্তী, অপর্ণা সেন বা আরও পরে ঋতুপর্ণরা যখন আলোচনায় চলে আসেন, তখনও কিন্তু কিছুটা ব্রাত্যই রয়ে যান তপন সিংহের মতো কিছু পরিচালক! হ্যাঁ, তপন সিংহ হচ্ছেন সেই পরিচালক যিনি এপার আর ওপারের মাঝের সেই সবুজ, স্নিগ্ধ এক ভূখন্ড যেখানে রয়ে যায় অদ্ভুত এক ভালোলাগা এবং সে ভালো লাগা কেবলই এন্টারটেনমেন্টজনিত ভালো লাগা নয়, সে ভালো লাগায় রয়ে যায় চিন্তার কিছু স্পেস, শিল্পের কিছু অনিবার্য শর্তপূরণ! সম্ভবত 'দ্য হিন্দু' পত্রিকা তাঁর 'দাদাসাহেব ফালকে' পাবার পর তপন সিংহের সিনেমা নিয়ে লিখেছিল – 'Complex ideas through a simple narrative.....!' হ্যাঁ, সত্যি তিনি পারতেন। তাঁর ছবির সুদীর্ঘ তালিকা থেকে মাত্র একটি ছবিকে আলোচনায় আনতে চাই, উদাহরণ হিসেবেই, 'গল্প হলেও সত্যি'! কোনো এক আলাপচারিতায় তপন সিংহ একবার বলেছিলেন – 'আমার হতাশ লাগে এই ভেবে যে দর্শক ছবিটাকে শুধুই হাসির ছবি হিসেবে নিল'! একজন পরিচালক হিসেবে তো হতাশ হবারই কথা এবং ন্যায্য কারণেই। যারা সিনেমাটি দেখেছেন, আরেকবার ভাবুন তো, 'গল্প হলেও সত্যি' কি নেহাতই হাসির ছবি? নির্ভেজাল হাসি আর এন্টারটেইনমেন্ট? রবি ঘোষের অসামান্য অভিনয়ে বুঁদ হয়ে থাকতে থাকতে বাঙালি দর্শকের কি একবারও মনে হয়নি, আপাত হাসির আড়ালে সিনেমাটির এক অন্তহীন স্পেস তৈরির কথা? প্রথম যখন 'গল্প হলেও সত্যি' দেখি, বয়েস নেহাতই কম। সেসময় নির্ভেজাল হাসি নিয়েই মুগ্ধ হয়েছিলাম কিন্তু পরবর্তী সময়ে যখন সিনেমাটা বেশ কয়েকবার দেখি, অনুভব করেছি একজন কুশলী পরিচালক কীভাবে তৈরি করেন ভাবনার স্পেস!ইংল্যান্ডের পাইনউড স্টুডিও থেকে সরাসরি কলকাতা, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার থেকে পরিচালনায়, বাংলা সিনেমার দর্শক পেল এক পরিচালককে যিনি হেঁটে গেলেন মাঝের এক পথ বেয়ে। পাশাপাশি দু'টো পথেরই হাতছানি ছিল। বিস্তর আন্তর্জাতিক ছবি দেখার সুবাদে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন ঘরানাগুলোর সঙ্গে ছিল তাঁর নিবিড় পরিচয়, অন্যদিকে তথাকথিত আপাত জনপ্রিয়তার হাতছানিও ছিল। দুটো রাস্তাকেই সহজে এড়িয়ে মাঝামাঝির যে পথ তিনি বেছে নিলেন তাতে ঝুঁকি নেহাতই কিছু কম ছিলনা। 'গল্প হলেও সত্যি' দেখতে দেখতে তপন সিংহ সম্পর্কে সেই মন্তব্য বোধহয় ভীষণভাবে অনুভব করি – " A magical union of liberate art and critical populism made Tapan Sinha middle-of-the road – Bengali Cinema. যাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে স্টোরিলাইন সেই ধনঞ্জয়ের আবির্ভাব থেকে সিনেমার শেষদৃশ্যে অদ্ভুত এক ধোঁয়াশার মধ্যে তার মিলিয়ে যাওয়া, পুরোটাই এক রহস্যময়তায় ঘেরা! কোথা থেকে এল ধনঞ্জয়, নানান প্রশ্নে তার হেঁয়ালি মাখানো উত্তর, একসময় চলেই বা গেল কোথায়, কোনো উত্তরই যনো প্রাত্যহিক বাস্তবতার সঙ্গে মেলেনা, কিন্তু ভীষণভাবেই প্রাত্যহিকতায় গড়ে ওঠে এ কাহিনীর নির্মাণ, চরিত্র, আঙ্গিক! ... ...
ভারভারা রাও। তেলুগু ভাষার বিশিষ্ট কবি। জনমনে পরিচিত ‘বিদ্রোহের ভাষ্যকার’ হিসেবে। ভীমা কোরেগাঁও ও প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার ষড়যন্ত্র মামলায় পুলিশ ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বিভাগ অভিযুক্ত করেছে তাঁকে। কারারুদ্ধ কবি ভীষণ অসুস্থ। আদালতের রায় প্রকাশিত হওয়ার আগেই কী জেলবন্দি অবস্থাতেই তাঁর মৃত্যু হবে? এ প্রশ্ন তাড়া করছে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সকলের বিবেক। এতাবৎ প্রশাসন নির্বিকার। এই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি প্রকাশিত হল তাঁর কবিতার বাংলা তরজমার একটি সংকলন। পড়লেন তৃষ্ণা বসাক। ... ...
দেশের বাজেটের মত পারিবারিক বা ব্যক্তিগত বাজেটেও একটা হিসাব থাকে কোন খাতে কত টাকা বরাদ্দ । আগে মাসকাবারির থলেতে থাকত বড়জোর একটা বোরোলীন বা একটা হিমানী স্নো , কিউটিকুরা পাউডার , সঙ্গে কিছু নিখরচার ঘরোয়া প্রসাধনীতেই কাজ চলে যেত । আজকাল সব মিডিয়া জুড়ে অবিরত পুঁজিবাদী কর্পোরেট দুনিয়ার ইস্কুল চলে । রোগা ভোগা গ্রামীণ গৃহবধূ ও অভাবী সাফাইকর্মী সবাই সেই ইস্কুলের ছাত্রী--এরকম সব রোগীরা দেখাতে এসে ঝোলা থেকে উপুড় করে নামিয়ে দেখায় -- নামী ব্রান্ডের হাজার হাজার টাকার অপ্রয়োজনীয় বিউটি প্রডাক্ট --"এইসব মাখি ,তবু গ্লো আসছে না "। যদি প্রশ্ন করি -"সকালে কি খাও মা? দুপুরে? রাতে?" তাদের বিরক্ত চোখমুখ বলে সুষম খাদ্যের কোনো বালাই নেই । যদি বা এতবছর ধরে এত লড়াই করে মেয়েদের হাতে সামান্য ক্রয়ক্ষমতা এল --সেই অর্থ এমন বিপথে ডাকাতি হয়ে যায় ! 2020 সালেও দেখি--বহু কষ্টে পড়াশোনা করে পাওয়া চাকরি , বরের আবদারে ছেড়ে দেয় মেয়ে আর বিবাহবার্ষিকীর উপহার, মিনে করা সোনার লকেট তুলে গদগদ ভাবে সবাইকে দেখায় । ... ...
পাড়ার দাদারা বলে চিনা শালারাই নাকি এ অসুখের ভাইরাস ছেড়েছে। নাক ফেটা হারামজাদা জাত। ভারতমাতার চরম শত্রু। টিভিতে চিনা মানুষদের ছবি দেখেছে হারু। ষ্টীলের থালার মত গোল চকচকে চেহারা। বাচ্চাকাচ্চা বুড়ো একরকমের দেখতে। বনগাঁর আকবর আলিদাদার দোকানে সাজানো থালার মত। কে জানে বাবা, মানুষ মেরে এদের কি সুখ ! আজকাল বাইরে কোথাও যাওয়া হয় না হারুর। গোহালেই থাকে। যত্ন নেয় গরুগুলোর । প্রত্যেক মাসের প্রথম রবিবার তিরিশটা গরু আর ওদের খাবার দিয়ে যায় চন্দনবাবু । তখন গরুগুলোকে খুব ভালো ভাবে লক্ষ্য করে। গাল দেখে , দাঁত দেখে , পেটে হাত বুলোও, গাভিদের ওলান ধরে পরীক্ষা করে। কোন গরুকে রোগা লাগলে জানতে চায়, কি রে হারু। খাবার দিসনি নাকি ? ... ...
আমরা যে যার কাজে ব্যস্ত, উল্লাস উল্লাসের। বড়ভাই কাস্টমসে চাকুরি করেন, দু হাতে আয় তার। তাই ওর ভবিষ্যত নিয়ে আমরা কেউ ভাবি না। মাঝেমধ্যে অবসর পেলে আমি ওর রুমে ঢু মেরে আসি। কখনও কখনও বলে- কাকু আসো, তোমাকে একটা নতুন আবিষ্কারের কথা বলি। বেশিরভাগ সময় বলত, কাকু, এখন বিরক্ত করো না-তো। অন্যসময় এসো। একমাস পর সে বিড়ালটি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করল। বেঁচে আছে দেখেই বড় ভাবীর আনন্দ যেন আঁটছে না। কিন্তু এ কেমন বেঁচে থাকা? বিড়ালটির শরীর শুকিয়ে একেবারে কাঠের জো অবস্থা। ... ...
ছাদের এককোণে দাঁড়িয়ে ছিল সে। চোখের সামনে আকাশ ধীরে ধীরে বেগুনি হয়ে ওঠে। আলতা রঙের পোঁচ পড়ে তার উপর। শুধু জনারণ্যে কিছু ঘুড়ি, পাখিদের প্রতিনিধি। গঠন নয়, ঘুড়ি চেনা যায় তার উড্ডয়ন-কৌশলে। উদ্বাস্তু কলোনি থেকে চাক চাক ধোঁয়া, যেন নোয়াঠাকুমার আর্তি, খুঁজে নেয় আলপথ—ফরিদপুর। তাদের গতিপথ বিভ্রান্ত সরল, অর্থাৎ বক্র। গুলের আঁচ ওঠা উনুন—খানিক উপরে বুড়ির দু'টো চোখ আর ফুলে ওঠা টিকোলো নাক এক প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করে, যা আকারে ক্রমশ বড় হতে থাকে। মাথার ভিতর শৃঙ্খলিত ধ্বনি, রঙ আর হঠাতই কালো হয়ে ওঠে আকাশ। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য যা কিছু, সব সত্যি। সবচেয়ে বড় সত্য এই রাত, তার বেদনা, যা কেবল অনুবাদে সাবলীল... কুকুরেরা জেনে গেছে সব। সন্ধ্যার আজান আর মিলিটারি রুট মার্চ পরপর শুনে নমনীয় করে তোলে নিজেদের। স্থির হয়। সঙ্গম স্থগিত রাখে আজ। ... ...
মৃত্যুদণ্ড বা ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড, এসব অপরাধ কমাতে কতটা কার্যকর, সে পৃথক তর্কে না গিয়েও এই যে তাৎক্ষণিক ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষা, তা কোনও আইন বা সংহিতা (কোড)গ্রাহ্য হতে পারে না। আইনের রাস্তায় কোনও অপরাধ প্রমাণে সময় লাগে, তা সে যত ন্যূনতমই হোক না কেন। এখন একটা সওয়াল প্রায়শই ওঠে, যে এই তাৎক্ষণিক শাস্তিদানের আকাঙ্ক্ষা আসলে বিলম্বিত বিচারের অতিপ্রতিক্রিয়া। ... ...
ফুচকার জন্মরহস্য কেউ জানে না। এমনকি তা জানতে কারুর সেরকম আগ্রহও দেখিনা। সাবেকি ফুচকার তিনটি বাসস্থান। বম্বে, থুড়ি মুম্বাইতে তার নাম পানিপুরি, দিল্লিতে গোলগাপ্পা আর কলকাতায় ফুচকা। পানিপুরি নামটি সমগ্রতই ব্যাকরণসম্মত। যে পুরির ভেতর পানি থাকে - এরকম ব্যাসবাক্য করলে স্বয়ং পাণিনিও বোধহয় রুষ্ট হতেন না। গোলগাপ্পা অন্ততঃ আধা ব্যাকরণসম্মত। আকারে এটি গোলই বটে। গাপ্পার ব্যাকরণগত ব্যুৎপত্তির হদিশ আমার কাছে নেই। কিন্তু ফুচকা? কোন মানেই হয়না। ব্যাকরণপরীক্ষায় ফুচকা ডাহা ফেল। এমনকি মার্কেটিঙেও। গুগুল বাজার গরম করার আগে জ্ঞানসমুদ্রে যার কদর ছিল রাশভারী জ্যাঠামশাইয়ে, সেই এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার অনলাইনে চাটের এন্ট্রিতে গোলগাপ্পা ও পানিপুরির উল্লখ থাকলেও ফুচকার নেই। এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে মমতা ব্যানার্জি থেকে আমরা বাঙালি - সবাইকার যে গর্জে ওঠা উচিত, সে ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করি। ... ...
না এত সব করেও কিছু ত্রুটি বেরল না বিদিশার। কিন্তু তার থেকে কি ডাক্তাররা এই সিদ্ধান্তে এলেন যে বিদিশা সুস্থ্? না, তা না এসে তারা উল্টে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন যে ওর অসুখটা আসলে মানসিক অসুখ। এবং রেফার করে দিলেন মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগে। সেখানে গিয়ে কী বলবে বিদিশা? বুকের মধ্যে দিব দিব করছে অতনুর। কী এমন করেছে অতনু? একটা কাজ কি ঠিক ভাবে করতে পারত বিদিশা! নিজের ব্যাঙ্কের আকাউন্ট নাম্বারটা পর্যন্ত ঠিক করে জানেনা সে, তাকে কোন কাজ ছেড়ে দেওয়া যায়? তুমি পারবে না বলে সব কাজ হাত থেকে টেনে নিয়ে করে দিয়েছে অতনু, সেটাই তার দোষ হয়ে গেল! ছেলেকে পড়ানো থেকে রান্নাবান্না সব কাজে সে উদাস, ছন্নছাড়া। তাই হয়ত অতনু তুমি পারবে না বলে একটু ধমকে উঠেছে, হয়ত একটু বেশিই ধমকেছে তাই বলে এমন প্রতিশোধ নেবে বিদিশা! ... ...
নারদ কহিলা মাগো ইদানিং দেখি। ঘরে ঘরে ক্যানসার স্ত্রী রোগ এসব কী! লক্ষ্মী কহেন এই কুস্বাস্থ্যের মূল। অসুস্থ অভ্যাস আর শিক্ষাগুলি ভুল।। আজ হইতে শুনে রাখো আমার আশয়। ঋতুকথা নহে আর লজ্জার বিষয়।। ঋতুকালে ‘বস্ত্রখণ্ড’ নাহি নিও কভু। তব সুস্থতা লাগি দিয়াছেন প্রভু।। ‘স্যানিটারি ন্যাপকিন’ মূল্য নহে বেশি। স্ত্রীরোগকে দূরে রাখে দৃঢ় থাকে পেশী।। পেশী দৃঢ় থাকে যদি জানো কি তখন। প্রতিরোধ করা যায় জরায়ু স্খলন।। অপরিচ্ছন্ন বস্ত্রখণ্ড রোগ আনে শত। শতরোগে জীর্ণ নারী কষ্ট পাবে কত।। আরো বলি শরীরের পরিণতি হলে। তবেই কন্যারে নিও বিবাহের স্থলে।। বিবাহ করিবে যবে হবে অষ্টাদশী। দু’বৎসর পতিসহ থাকো হাসিখুশি।। ... ...
কেন, দূরত্বের প্রশ্নে এতো বিস্ময় সৃষ্টি হলো কেন? মার্কনির পরীক্ষায় বিস্ময় উদ্রেক হওয়ার পিছনে নিহিত ছিল আর একটা কারণ। মার্কনির সমসময়ে আলোর সরলরৈখিক গতি, আলোর প্রতিফলন, আলোর প্রতিসরণ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল ছিলেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা জানতেন আলো হলো এক বিশেষ তরঙ্গদৈর্ঘ্য সম্পন্ন তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গ। তারা জানতেন সমস্ত তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গই আলোর মতো সরলরেখায় চলে। রেডিও ওয়েভ যেহেতু তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গ তাই সেই ওয়েভও সরলরেখায় চলে। কোনও প্রতিবন্ধকতা না থাকলে ৫-৬ কিমি দূরের কোনও আলো যেমন স্পষ্ট দেখা যায়, তেমনই ৫-৬ কিমি দূরে রেডিও ওয়েভ প্রেরণ করাটা কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। কিন্তু তাই বলে ইংলন্ডে আলো জ্বালালে কি তা কানাডা থেকে দেখা সম্ভব? ঠিক তেমনই ইংলন্ড থেকে রেডিও ওয়েভ প্রেরণ করলে তা কি কানাডায় পৌঁছন সম্ভব? তাছাড়া পৃথিবী পৃষ্ঠ হলো গোলকাকার। আর রেডিও ওয়েভ চলে সরলরেখায়। তাহলে বক্রপৃষ্ঠ বেয়ে সেই তরঙ্গ কি ভাবে পৌঁছল কানাডায়? স্থম্ভিত বিজ্ঞান মহল। ... ...
চলছে খিচুড়ি মহারহস্য অ্যাডভেঞ্চার। যে ‘বাজরাখিচড়ি’ ওরফে ‘লাদরা’-র এমন নাম রটাল ডাকসাইটে কেতাব জাহাঙ্গিরনামা, কী সেখানা? আদৌ যাবে কি জানা? এ প্রশ্ন ধাওয়া করেই আমরা ঢুকে পড়েছি মুঘল বাদশাদের মহাহেঁশেলে, যেখানে একবার ঢুকলে বার হওয়া কঠিন! আর সেখানেই আমরা দেখব, কীভাবে আগমার্কা ভারতীয় খিচড়িতে এসে মিশে গেল আফগান ধারা। নীলাঞ্জন হাজরা। ... ...
নাজমা বিকেল হলে দোতলার ছাতে আসবে। তারিক একথা জানে। তিতুও। এছাড়াও তারিক জানে, নাজমা স্কুলে কখন বেরুবে, আর, সেই সময়ে তার গায়ে থাকবে একটা অব্যর্থ লালচে টিউনিক। ওই সময়ে, নাজমা, তিতুকে সে বলেছে, একদম নীলমের মাফিক। নীলম, নীলম। চাংকি পান্ডের হিরোইন। সাদা জামা, সাদা প্যান্ট, সাদা জুতো পরিহিত হিলহিলে চাংকি। ওর সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে হাসতে হাসতে নাচে নীলম। উজ্জ্বল নীলম। লাল ফিতে চুলে বাঁধা থাকে তার। গায়ে লাল ফ্রক। পায়ে যেমন জুতো থাকে সেরকম জুতো সে যদিও নাজমার পায়ে দেখেনি। সত্য বোসের বেটি পরে অমন হিলতোলা জুতা, অমন ফ্রক। কিন্তু, দশটায় টিউনিক গায়ে যখন নাজমা বেরুবে, তখন সে আদতে নীলম। ওই সময় তার পথের একপাশে বসে থাকবেই তারিক, হয় হরলালের পুকুরের ধারে, নয় রাস্তাটা যেখানে বাঁক নেয়, সেই তুঁতগাছের নীচে, কোনোদিন তিতু সঙ্গে থাকবে, কোনোদিন সে একা, কিন্তু ওই সময়ে নাজমার হেঁটে যাওয়ার দৃশ্য দেখবেই তারিক। একই দৃশ্য, তবুও কেন যে নতুন মনে হয়! তার যাওয়ার পরে সঙ্গে তিতু থাকলে তারিক বলবেই, কেমন দেখলি, আজ? আর হয়ত এমনই চাপাগলায় কথাবার্তা হবে তার ও তিতুর: ... ...
ছিয়াত্তরজন ড্রাগ অ্যাডিক্ট নর্দমার কাঁথে মুখ রেখে ঈশ্বর খুঁজছে; ফরফর করে আরশোলা উড়ে ধাক্কা মারছে তাদের চোখেনাকে — পুড়ে রবারের মতো নরম আর থকথকে হয়ে যাচ্ছে শিশুদের হৃৎপিন্ড; সিরিয়ার ধ্বংসস্তূপে, কংক্রিটের হাড় বেরিয়ে-থাকা টাওয়ারে, পাখির বাসাতে বসে তিনজন স্নাইপার টার্গেট প্র্যাক্টিস করছে তাদের মেরুন খেলনাগুলির ওপর। হিরোশিমার হলদে পর্নোগ্রাফিক ফুটেজ থেকে গলে গড়িয়ে নামছে তেজস্ক্রিয় পাকস্থলী, দেখতে দেখতে ছিয়াত্তরজন কবি মাস্টারবেট করছে বিবর্ণ নীল বিন্দুটার গায়ে; আলের ধারে বসে জলের ওপর ঝুঁকে যে চাষী ফানুস দেখছে, আজ রাতে ফলিডল খাবে। ... ...
আমার মা আঁকতে পারেন, প্রতিমা গড়তে পারেন। মামাবাড়িতে প্রতিমা তৈরি হয়। মা, মাসি ,মামা সবাই হাত লাগাতেন শিল্পীর সঙ্গে। সে অভ্যাস মায়ের এখনও আছে। যদিও এখন কিছুই করা হয়ে ওঠে না। ইনটারনেট দেখে আঁকতে ভাল লাগে মায়ের। মাঝেমাঝে তাই আঁকেন। আর আমায় আঁকায় উৎসাহ দিয়ে যান খুব। ভালো লাগে না আমার, যখন মাকে আত্মীয়, পাড়া পড়শীরা বলে ‘অংশু মেয়ে হলে ভালোই হত।আসলে তোমার মতো তো ও অনেকটা’! মা উত্তর দেন না । মনে মনে হয়েতো কিছু উত্তর দেন। তবে আমায় বলেন, ‘আমার অংশু কিসে কম! ওর পড়তে ভালো লাগেনা, তো লাগে না।বাবু আমার পাশ তো করে যাচ্ছে’।আবার কখনও মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলেন, ‘আমার বাবুর মতো কেউ আলপনা দিতে পারে’? বাবাকেও নালিশের সুরে মনের কথা বললেন। বাবা তখনই বলে ওঠেন, ‘ছাড় ওসব কথা’। পুজোতে এবার মামাবাড়ি যাব ঠিক হয়েছে। সোনাদিদি আসছে বিদেশ থেকে। বড়োমাসিও আসতে পারে। সোনাদিদি বিদেশে গবেষণার জন্য গেছে। পুজোর পর আমাদের বাড়িতে থাকবে দু মাস, গবেষণার কাজের জন্য। আমার আঁকার অন্যতম ভক্ত সোনাদিদি। মহালয়ার পর পরই চলে এলাম দাদুর বাড়িতে। কী আনন্দ! দালানে বসে বসে ঠাকুরের সাজ পরালাম। সোনাদিদিও এলো হাত লাগাল। ঢাকের বাদ্যি বাজল। পাড়ার অনেকে এল। সোনাদিদির প্রশংসা করল। আমারও করল। তবে আমাকে, মাকে আবার শুনতে হল অংশু মেয়ে হলে কত ভালো হত। সোনাদিদি শুনছিল আর হাসছিল। ... ...
রাষ্ট্রসংঘের একাধিক মানবাধিকার ঘোষণায়, সনদে ‘জরুরি অবস্থায়’ রাষ্ট্রের হাতে (ইউ এন এর পরিভাষায় নেশন) কিছু বিশেষ ক্ষমতার ব্যবহার ও কিছু নাগরিক/মানবাধিকারের উপর নিয়ন্ত্রণের অনুমোদন দেওয়া আছে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতি সেই ধরনের বিপর্যয়ভুক্ত। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে এ কথাও বলা জরুরি যে, এই ‘বিশেষ ক্ষমতা’ মোটেই নিরঙ্কুশ নয়। ... ...