ডেভিড লিভিংস্টোন। আফ্রিকায় বেপাত্তা। কিংবদন্তি মানুষটির খোঁজে আফ্রিকা পৌঁছেছেন মার্কিন সাংবাদিক হেনরি মর্টন স্ট্যানলে। জাঞ্জিবার থেকে শুরু হল আফ্রিকার গভীরে অভিযান। প্রথম লক্ষ্য বাগামোয়ো শহরে পৌঁছে পাক্কা দেড় মাস আটকে সেখান থেকে একে একে রওনা হয়েছে অভিযানের মোট পাঁচটি কাফেলা। চলছে অভিযানের মূল কাহিনি। স্ট্যানলের সেই বিখ্যাত সফরনামা ‘হাও আই ফাউন্ড লিভিংস্টোন’। এই প্রথম বাংলায়। এ কিস্তিতে উঙ্গেরেঙ্গেরি নদী পার হয়ে মিকেসেহে নামের একটি গ্রামের অভিমুখে যাত্রার কথা। তরজমায় স্বাতী রায় ... ...
এপিএমসি ব্যবস্থায় মধ্যস্বত্বভোগীদের ভূমিকার কথা প্রায়ই উল্লেখ করা হয়। বলা হয় এদের ক্ষমতা অতিরিক্ত বেশি, এরাই মূল সুবিধাভোগী। মজাটা হল, এখন পশ্চিম উত্তর প্রদেশে তৈরি হতে শুরু করেছে এফ পি ও (ফারমার প্রডিউসার অরগানাইজেশন), এগুলি কোম্পানি হিসেবে তৈরি করা হচ্ছে, যাদের নতুন করে ক্ষমতায়িত করা হয়েছে। যারা নাকি উৎপাদক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কোম্পানি হবে এবং কৃষিজাত পণ্য ক্রয়ের কাজ করবে। বিহারেও ২০০৬ থেকেই এটা চলছে। কিছুই না, নতুন মধ্যস্বত্বভোগী তৈরি করা হচ্ছে মাত্র। ... ...
অত্যাচার দমন পীড়ন, সবই চলছে চলবে, তার মধ্যেই দাঁড়িয়ে থাকবেন এই মানুষগুলো, অকুতোভয়, উন্নতশির। ভারতীয় সাংবাদিকতার ওপর যতটা কালি অর্ণব গোস্বামী অ্যান্ড কোং দরাজ হাতে ঢেলেছে, তার থেকেও বেশি কলঙ্ককে ধুয়ে সাফ করতে পারেন কাঙাল হরিনাথের এই সন্তানসন্ততিরা। ... ...
পার্ক সার্কাসে গিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়ালেই আমার মনে পড়ে রক্তবীজের কাহিনী। আকাশ-চাটা আগুন-চিতায় সহমরণে মরতে যাওয়া মায়ের অসহ্য যন্ত্রণার চিৎকারের সঙ্গে সঙ্গে জরায়ু উন্মোচনে তার জন্ম। একফোঁটা রক্ত যেখানে পড়ে সেখানেই জন্ম হয় রক্তবীজের। এক থেকে একশ, হাজার, লক্ষ -- লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে তরুণাসুর রক্তবীজের সংখ্যা। ... ...
বোড়ো সাহিত্যে আর সব ভারতীয় ভাষার সাহিত্যের মতোই সৃজনেরই সুবাস। কিন্তু এতদিন বাঙালি পাঠকের কাছে সে সৌরভ এসে পৌঁছোয়নি। সেই অভাব কিছুটা দূর করল বাংলা তরজমায় বোড়ো গল্পের একটি সংকলন। পড়লেন সাহিত্যিক ও তরজমাকার তৃষ্ণা বসাক ... ...
শুভেন্দুর মূল তাস, যা বোঝা গেল দুইটি। এক, নন্দীগ্রামে মমতা বহিরাগত। দুই, সাম্প্রদায়িক বিভাজন। এই এলাকায় গত বছর দশেক ধরে আরএসএস-এর নানা সংগঠন তাদের প্রভাব বিস্তার করেছে। ফলে একটা 'মুসলিম আগ্রাসন' সংক্রান্ত টেনশন এমনিতেই আছে। শুভেন্দু অধিকারীর সাম্প্রতিক সব সাম্প্রদায়িক বিভাজনের বক্তৃতা সেই আগুনকে আরও উস্কে দিয়েছে। নন্দীগ্রামের জনবিন্যাসের অঙ্কে চোখ বোলালে দেখা যাচ্ছে ওখানে ৩০/৩৪ শতাংশ মুসলিম ভোট আছে বলে যে আলোচনা চলছে তা একটু বাড়াবাড়ি। নন্দীগ্রাম বিধানসভা গঠিত নন্দীগ্রাম ১ ও ২ ব্লক মিলিয়ে। ২০১১-র জনগণনা অনুযায়ী এই দুই ব্লক মিলিয়ে মোট ৩৩১,০৫৪ জনসংখ্যার ২৪৪,৬৬৭ জন, অর্থাৎ ৭৩.৯৬% হিন্দু, এর মধ্যে ৫৪,৫০৩ (১৬.৪৬%) জন তপসিলি জাতি ভুক্ত। আর মুসলিম জনসংখ্যা ৮৫,৬৯৬, বা ২৫.৮৮%। ... ...
সংস্কৃত ‘পর্ণ’ শব্দটি থেকে এসছে পান। এই পান মঙ্গলকারী ও সৌভাগ্যের প্রতীক। একবার নাকি অশ্বমেধ যজ্ঞের সময় পানের জন্য দুনিয়া তোলপাড় করেন পঞ্চপাণ্ডব। হস্তীনাপুর ছাড়িয়ে নানাদিকে খোঁজ পড়ে যায়। কিন্তু কোথাও পান নেই! খুঁজতে খুঁজতে সন্ধানীরা পৌঁছান পাতালপুরীতে। সাপের রানির ঘরে। তখন বাসুকী তাঁদের উপহার দেন হাতের কনিষ্ঠ আঙুল। সেই আঙুল মাটিতে পুঁতলে জন্মায় পানের বল্লরী। সেগাছের ফুল নেই, ফল নেই। কেবল কচি সবুজ পাতা। সংস্কৃতে তাই পানের আর-এক নাম ‘নাগ বল্লরী’। ... ...
কাপুরুষের অমিতাভ রায় নষ্ট করেছিল করুণা গুপ্তর জীবন। করুণা অবশ্য অমিতাভর মত কাপুরুষ ছিলেন না। তাই অমিতাভর কাপুরুষতা করুণার জীবন সম্পূর্ণ নষ্ট করতে পারেনি, শুধু ঘুমটা নষ্ট করেছিল । হ্যারির কাপুরুষতার বলি মেগান হতে পারত। কিন্তু হয় নি। দুজনেই পেরেছিলেন দেশ পরিবার ছেড়ে রাজপ্রাসাদের মরচেধরা লৌহ কপাট ভেঙে বেরিয়ে পড়তে। ... ...
মোদ্দা কথাটা হল, উদ্দেশ্যসিদ্ধির স্বার্থে তথ্যবিকৃতি বা অতিকথন - কিম্বা প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানের নামে স্পষ্টতই গুজব ছড়ানো - কতখানি নৈতিক? আর শুধুই লক্ষ্য দিয়ে অভীষ্ট অর্জনের পথটিকে জাস্টিফাই করা হলে, বিপরীত মতাবলম্বীরা যখন সেই একই রাস্তা ধরতে যান - তাঁদের সমালোচনা করার ন্যূনতম নৈতিক অধিকার থাকে কি? ... ...
নিলীন অকপটেই স্বীকার করে ছবির এগজিবিশন অর্গানাইজ করার ব্যাপারে কোনই ধারণা নেই ওর, কিন্তু সবাই মিলে চেষ্টা করলে হবে না কেন? বান্দোয়ানে ওর বন্ধু আছে জলধর, সাঁওতাল সমাজে তার খুব প্রতিষ্ঠা, তার সাহায্য নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। তা ছাড়া সুদেশ আর জয়ি মিলে কলকাতায় একটা এগজিবিশন তো করেছিলো আগেই। আর বোম্বেতে মহেশের সাথেও ছিলো, সেগুলোর থেকেও তো নিশ্চয়ই খানিকটা শিখেছে ওরা। খুশিঝোরাতে এগজিবিশন করার কথা জয়ির মাথায় আসেনি আগে, কিন্তু এখন সে রীতিমতো উত্তেজিত। শুভেন্দুদাকে জিজ্ঞেস করে, খুশিঝোরাতে যদি করি এগজিবিশন, যাবেন আপনি? ... ...
হঠাৎ করেই একটা চিন্তা তার ভাল লাগাটাকে ঢেকে দিল৷ অর্ডারের চায়ের দামের ব্যাপারে এতক্ষণ খেয়ালই ছিল না তার৷ প্রয়োজনই মনে করেনি৷ সাধারণ চায়ের দাম বেশি না। তবে এমন চায়ের দাম নিশ্চয়ই বেশি হবে৷ সে ভাবল, ওয়েটারের গল্প ফ্রি, তবে অভিনেতাদেরকে অবশ্যই কিছু দেওয়ার কথা৷ কে আর বিনা পারিশ্রমিকে এখানে সময় নষ্ট করে বসে থাকবে! ... ...
প্রফেসরের ধারণা এর নিচে লুকানো আছে আরো নানা রহস্যময় ও অজানা জিনিস। তাঁর অনুমান সঠিক বলেই প্রাথমিকভাবে দেখা গেল। সেই মন্দিরের নিচে সন্ধান পাওয়া গেল অমূল্য সম্পদের এক গলির৷ সেই দেওয়াল জুড়ে অজানা হায়রোগ্লিফিকস্৷ ... ...
এলারামের ঘড়িকে রবীন্দ্রনাথ অমর করে রেখে গেছেন। ঘড়িটি না বাজা পর্যন্ত সুখশয্যা ত্যাগ করতে কর্তাবাবুর ঘোরতর আপত্তি ছিল, এমনকি ঘরে আগুন লাগলেও না! কিন্তু আমাদের মহারানীমাতার আপাতত সমস্যা হল, ঘড়ি বেজে, বেজে, বেজে কেলান্ত হয়ে থেমে গেলেও গোবুরাজা, বড়কুমার বা ছোটকুমার কেউই নয়নপদ্ম উন্মীলন করার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেন না, এমনকি গোবুরাজার নাক যেমন ইমন রাগ ও কাহারবা তালে খরবায়ু বয় বেগের সুরে ডাকছিল, তেমনই ডাকে, ডেকেই যায়, সেই অসাধারণ গীত যে সারাদিনে থামবে তার কোন লক্ষণ দেখা যায় না। গোবুমহারাজ ও কেবলীরানীর সঙ্গে গুরুর অনেক পাঠিকা ও পাঠকরা পূর্ব পরিচিত। তাঁদের অবগতির জন্য বলি, এনারা আর সেই সংসার অনভিজ্ঞ যুবক যুবতী নেই। দিল্লিতে এঁরা মোটামুটি একটি সংসার পেতে বসেছেন। বন্ধুবান্ধবরা অবশ্য সর্বদাই এই সাধের ফেলাটটিকে রেলওয়ে প্লাটফর্মের সঙ্গে তুলনা করে থাকেন, তাতে মহারাজ বা রানীমা কারো কিছুই এসে যায় না।চতুর্দিকে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত বই, বই এবং আরো বই, দুটি নয়নতারা, একটি কাঁঠালিচাঁপা ও সাতটি নাম না জানা গাছ, বড়কুমার ও ছোটকুমারের অজস্র ভাঙা খেলনা, একটি ছোট খাওয়ার টেবিল,বেতের সোফা ইত্যাদি নিয়ে তাঁরা দিব্যি আছেন। ... ...
জাহাঙ্গির বাদশা স্বয়ং লিখে গেছেন বটে বাজরা খিচড়িকে তাঁর দস্তরখওয়ানে বা-ইজ্জত ইস্তেমাল করার কিস্সা-কারণ, কিন্তু মুঘল শাহি পাকোয়ানে খিচুড়ির দাপুটে উপস্থিতি মহামতি আকবরের জমানা থেকেই। কেমন ছিল সেই আকবরি খিচড়ির স্বাদ? খিচুড়ি মহারহস্য সিরিজের এ কিস্তিটি তাই নিয়েই চর্চা, যার কেন্দ্রে আছে মুঘলাই জমানার চালের হালচাল। নীলাঞ্জন হাজরা। ... ...
পঞ্চদশ ষোড়শ শতকের এক আশ্চর্য কুকবুক সুপশাস্ত্র। খিচুড়ির খোঁজে সেখানে আমাদের প্রবেশ করতেই হবে। কিন্তু তার আগে একটু সাঁতার ঘোর রহস্যময় সংস্কৃত শব্দ ‘সুপ’-এর সরোবরে। সত্যে ডুব দিয়ে কিছু মিথ ভাঙা দরকার। আর সেই সন্তরণেই আমরা পেয়ে যাই ভোজ কী হওয়া উচিত বাল্মীকি রামায়ণে তার আশ্চর্য সংজ্ঞা। নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
কমিউনিস্ট বলতে জনমানসে এক বিচিত্র স্টিরিওটাইপ রয়েছে। তারা দুর্নীতিমুক্ত সৎ হবে, তারা বহুজনহিতায় জীবন উৎসর্গ করবে, তারা সর্ববিষয়ে আদর্শ হবে, তারা প্রতিস্রোত হবে, নীরব সেবাব্রতী হবে ইত্যাদি প্রভৃতি। সমস্যা হল সর্বগুণে গুণান্বিত সিপিএমের এই নব্যপ্রজন্ম আন্দোলনের মধ্য দিয়ে উঠে আসে নি। ফলে এই বিচিত্র স্টিরিওটাইপ তাদের অধিগতও নয়, আকাঙ্ক্ষিতও নয়। তারা অনেক বেশি বাস্তববাদী। ... ...
আসিয়া জাবার। বিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের ফরাসি সাহিত্যের অন্যতম স্বর। তবে ফ্রান্সের মানুষ নন তিনি, আলজেরিয়ার। তাঁর শানিত লেখনী যতটা ফরাসি ঔপনিবেশিকতা বিরোধী, ততটাই নারী স্বাধীনতার পক্ষে। এবং তাঁর লেখালেখির প্রধান দ্বন্দ্ব নিহিত স্বাধীনতা-উত্তরকালে নিজস্ব পরম্পরার অন্বেষণে—ফরাসি, না আরবি না বারবের? তাঁর বিশ্ববিখ্যাত উপন্যাস ‘Vaste est la prison’ (‘বিস্তীর্ণ এই কারাগার’)। পড়লেন ফরাসি ভাষার শিক্ষক ও তরজমাকার পার্থপ্রতিম মণ্ডল ... ...
ইমতিয়ার শামীম। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম স্বর। সম্প্রতি সম্মানিত হলেন বাংলাদেশের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে। তাঁর কলমে ঘুরে ফিরে বারবার উঠে আসে শেখ মুজিবুর রহমান-হত্যার পরবর্তী বাংলাদেশের সমষ্টিগত আঘাত। সে ক্ষত বিশেষ ভাবে প্রতিভাত হয় ‘আমরা হেঁটেছি যারা’ উপন্যাসে। লিখছেন স্বাতী মৈত্র ... ...
তার গ্রাম মৌচুরিয়ার সেই বন্ধুর নাম বুধন টুডু। বুধন নকশাল ছিল। কলকাতার বাবুদের সঙ্গে বেলপাহাড়ির দিকে বিপ্লব করতে গিয়েছিল। বাবুরা কেউ ধরা পড়েছে, কেউ ফিরে গেছে বাড়ি। বুধনকে পুলিস খুঁজছিল অনেকদিন। কিন্তু পাত্তা করতে পারছিল না। সে খুব বুদ্ধিমান। বার বার পুলিশকে ধোঁকা দিয়েছে। ধরতে পারলে জেলে ঢুকিয়ে দেবে। মেরেও ফেলতে পারে। সে কোথায় থাকে, কোথা থেকে গ্রামে ফেরে, তা পুলিশের খোঁচড় বুঝে উঠতেই পারে না। তার দেড় বিঘে জমিন আছে চাষের। সেই জমিই তাকে টেনে এনেছিল গ্রামে। ধান কাটার সময় গত অঘ্রানে এসেছিল। তখন পুলিস টের পায়নি। যখন খবর গিয়েছিল, সে কাজ সেরে পালিয়েছিল। এই বর্ষার দিনে চাষের টানে আবার ফিরে এসেছিল। গ্রামের চাষিবাড়ির ছেলে, প্রায় ভূমিহীন বুধন। জমি পাবে ভাত পাবে, তাই শহরের বাবুবাড়ির ছেলেদের কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাড়ি ছেড়েছিল। বিপ্লবের স্বপ্ন ভেঙে গেছে। বাবুবাড়ির ছেলেরা ফিরে গেছে শহরে। ... ...
৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবসে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নারীরা বলবেন। আন্তর্জাতিক। প্রাদেশিক। নাগরিক। আঞ্চলিক। গ্রামীণ। নিম্নবর্গ। কতটা কণ্ঠ ছাড়ে। কতটা আটকাট। উক্ষীবীক্ষি। আটকাট কথাগুলো বলার জন্য। রাগ। দুঃখ। হতাশা। অভাব-টভাব। কেন্দ্রের। রাজ্যের। সংসারের। প্রভুর। মালিকের। ভাতারের। সব ঠিকঠাক বলতে পারবে কি? ভাষা-টাষা ঠিক থাকবে তো? ... ...