পাগলি খোঁড়া ঝুমির বিটি বাতাসিয়া এবার জোয়ান মরদ কুলিদের সব টেক্কা দিয়ে মজুররত্ন হবে। এমন বিষয় মেনে নিতে পারেনি কেউ। একদিন সন্ধ্যার পর কাজ থেকে ফেরবার সময় একদল মুখে কাপড় বাঁধা পুরুষ ছিন্নভিন্ন করে দেয় বাতাসিয়াকে। খোঁড়া ঝুমির বাতাসিয়াকে মজুররত্ন বানানোর স্বপ্ন ফের চিরতরে ঘুচে যায়। বাতাসিয়া এখন খুদে খুদে চোখ জোড়ায় ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে। খাদানে এমন ঘটনা মাঝেসাঝে ঘটে। তাই হইচই একটু কমই হয়। তা ছাড়া বাতাসিয়া তো বোবা হয়ে গেছে। ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে আর নাল ঝরে, শুধু বসে বসে পাথর ভাঙে। বাতাসিয়া মা হতে চলেছে খবর পেয়ে ছুটে এসেছিল সুজাউদ্দিন। ঝুমিয়াকে রেগে গিয়ে বলেছিল – ওকে হাসপাতালে নিয়ে যা। যা খরচা লাগে আমি দেব। মাথা নেড়েছিল ঝুমিয়া – না মালিক। মারাংবুরু জীবন দেয়। নেয় না বটে। ... ...
এটাও বুঝতে হবে যে আমার ১৩৫ কোটির দেশ। প্রতিদিন তার প্রত্যেকটা মানুষকে যদি দিনের শেষে দু-বেলা খাওয়াতে হয় তাহলে আমাকে কোথাও না কোথাও একটা ব্যালেন্স করতে হবে। যদি আপনি বলেন যে ব্যালেন্সটা কী হওয়া উচিত অভিষেক, সত্যি আমার কাছে তার কোনো উত্তর নেই। হয়তো অর্গানিক ফার্মিং একটা বিকল্প কিন্তু শুধু এই অর্গানিক ফার্মিং দিয়ে আমি ১৩৫ কোটি মানুষের মুখে অন্ন কালকেই জোগাতে পারব কি না আমার কাছে উত্তর নেই। তাই অবশ্যই আমাদের বিজ্ঞানীদের আবিষ্কারের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে যারা হয়তো একটা ভালো ভবিষ্যৎ আমাদের উপহার দেবেন। ... ...
‘আমার সমসময়ই মনে হত, আমাদের তাৎক্ষণিক চাহিদায় বা নিতান্তই সঙ্গসুখলোভে আমরা ওঁর যে সময়টা গ্রাস করে নিই, সেই নষ্ট সময়েই তো তৈরি হতে পারত অনন্ত সম্পদ—কিছু লেখায় রূপ নিত, কিছু ওঁর অপারসক্রিয় ভাবনায় মথিত হত— যা থেকে যেত কত কালের আস্বাদনের জন্য। তাঁর বাড়ির সপ্তাহান্তিক বিখ্যাত আড্ডায় আমি কখনও যাইনি, ওই ভাবনা থেকেই।’ শরণাপন্ন হয়েছেন অবশ্য সুনির্দিষ্ট প্রয়োজনে। তেমনই দুই অভিজ্ঞতার কথা লিখলেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় ... ...
আরেকদল বলে চলেছে, সরকার কী করবে? মানুষগুলোই বদ। মানুষগুলোই কোনও কথা শোনে না। তাই তো বটে। রাজনৈতিক প্রচার থেকে কুম্ভমেলা, তাতে তো সরকারের কোনও দায় নেই। যাবতীয় সচেতনতার প্রচার যে জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মাসে শূন্যে পৌঁছে গিয়েছিল, তাতে সরকারের দায় নেই। দাবাই ভি আওর কড়াই ভি বলে চলা নেতা মাস্ক না পরে ব্রিগেডে সভা করছে, সরকারের কোনও দায় নেই। কোভিড টাস্কফোর্স যে গত দু-মাস কোনও মিটিং করে নি তাতেও সরকারের দায় নেই। মানুষ যে আজ লকডাউন শব্দটা শুনলে রেগে যাচ্ছে, তাতেও রাষ্ট্রের দায় নেই। অক্সিজেন বিদেশে এক্সপোর্ট হল, সরকারের কোনও দায় নেই। খাদ্য থেকে ওষুধ, কোনও কিছুতেই সুরক্ষা দেওয়ার কোনও দায় রাষ্ট্রের নেই। সব মানুষদের দোষ। এর বিপ্রতীপে দাঁড়িয়ে আছে আরেক যুযুধান পক্ষ। মাস্ক পরতে বললে তারা নিয়ে চলে আসছে গরীব মুটে-মজুরদের অসহায়তার কথা। তারা দুটো কথা ভুলে যাচ্ছে। এক, মহামারীতে সব থেকে বেশি কষ্ট সহ্য করবে ওই নীচেরতলার মানুষগুলোই। যে যত ওপরে, তার চিকিৎসা পাওয়ার সুরক্ষা তত বেশি। দুই, একথা অর্থনীতিতে প্রমাণিত সত্য যে গরীবদের চিকিৎসা ও তৎসংক্রাম্ত আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা কম। ... ...
বাঙালি এতকাল ভোটমগ্ন ছিল। ঘুম ভাঙছে এতদিনে! যখন বলা হচ্ছিল, মহারাষ্ট্র দিল্লি গুজরাট মধ্যপ্রদেশ থেকে আসা ট্রেনের যাত্রী দের সবাইকে অন্তত 'ৱ্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট' করে ট্রেনে ওঠানো হোক, সবাই ভোটধ্যানে ছিলেন। আগেরবারের অভিজ্ঞতা বলছে, একমাস আগে থেকে এবার অন্তত এয়ারপোর্টে টেস্ট করানো বাধ্যতামূলক হলে এত রোগ ছড়াতে পারত না বাঙলায়। এসব বলতে গিয়ে 'জিঙ্গল বেল আইটি সেল' এর খাতায় নাম তুললেন যারা, তাদের গাল দিন মনের সুখে। শুধু মাথায় রাখুন, পাপ বাপকেও ছাড়ে না। মাস্ক না - পরে, দূরত্ববিধি না মেনে যারা ঘুরে বেড়িয়েছি যত্রতত্র, দিল্লি বাঙলা ডেলি প্যাসেঞ্জারি করে গেলেন যারা, সঙ্গে আনা বহু স্ট্রেনের করোনা ভাইরাস তাদের অনেককেই রেয়াত করবে না। 'ভাইরাসের স্মৃতি নেই', বিলকুল ঠিক, তবে ভাইরাসটা কিন্ত মানুষ মারতে আসে নি, এসেছে নিজেদের বাঁচাতে। নিজে বাঁচতে মরণকামড় এবারও হয়তো দেবে না, এখনো পর্যন্ত সংক্রমিত মানুষের মৃত্যুহার কুড়ি সালের তুলনায় সামান্য বেশি, খুব বেশি নয়। তবে, এই ঢেউই শেষ নয়, লাইনে আছে আরও অনেক বাস্তুচ্যুত ভাইরাস, গোটা বিশ্ব জুড়ে তান্ডব চালাচ্ছে একের পর এক স্ট্রেন, কোনটা নবজাতক, কোনটা হাইব্রিড, বুঝে উঠতে হিমশিম খাচ্ছেন ভাইরাস নিয়ে কাজ করে চলা বিজ্ঞানীরা। ... ...
বয়স্ক একজন ভদ্রলোক। ভালোমতোই চিনি। মাঝে মাঝেই দেখাতে আসেন। তিনি বললেন, 'ডাক্তারবাবু, মা মাঝরাতে মারা গেছেন। আপনারই রোগী ছিলেন। রাতে আপনাকে আর বিরক্ত করিনি।' ... ...
১৯৯২ এ বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর তাঁর লেখা নিয়েছি। আর ২০০২ এ গুজরাট গণহত্যার সময় তিনি পথে নেমেছেন। অর্থ সংগ্রহ করেছেন। সাংবাদিক বিশ্বজিৎ রায় ওরফে মধুদা ও আমি স্যারের বাড়ি যাই। বাংলার বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে সভা করি তাঁর বাড়িতে দেবেশ রায়, সৌরীন ভট্টাচার্য, জ্যোতিপ্রকাশ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ ছিলেন। গড়ে ওঠে গুজরাট সংহতি সমিতি। অন্তত ৪০ বার আমরা পথে পথে ঘুরে অর্থ সংগ্রহ করেছি। এর মধ্যে ৩৩ টিতে স্যার সরাসরি উপস্থিত থেকেছেন। ধর্মতলা, রাজাবাজার, রিপন স্ট্রিট, কলেজ স্ট্রিট,শ্যামবাজার কোথায় নয়? ... ...
বাস্তবের অন্তরালবর্তী হাজার অনুভূতির আবিষ্কার-পুনরাবিষ্কার কিংবা পরীক্ষণ-পুনর্নিরীক্ষণই হয়তো শঙ্খ ঘোষের কবিতার সহজ সংজ্ঞা। তাঁর নীচু গলার প্রায় প্রতিটি উৎসারণে যেন ধ্বনিত হয়েছে পাস্কেল-কথিত সেই অন্তহীন মহাশূন্যের আবহমান নীরবতা। তাঁর কবিতাময় উচ্চমানের গাম্ভীর্য, সন্দেহ নেই: কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ক্রীড়া-র অনায়াস ও স্বচ্ছন্দ প্রয়োগের দৃষ্টান্তগুলি এইরকমের— অনুভূতির সঙ্গে অনুভূতির খেলা, শব্দের সঙ্গে শব্দের এবং অনুপ্রাস আর অন্ত্যমিলের নিরবচ্ছিন্ন অন্বেষণের অভেদ তুলে আনে এক অনন্য সৃষ্টিশীলতা ... ...
আমরা খুব কম শুনি। আমরা অনেক বেশি বলি। আমরা বলতে ভালোবাসি। আমরা বলতে চাই। বলাটা খুব জরুরি। কিন্তু একই সঙ্গে আমাদের শোনাটাও তো ভীষণ জরুরি। এবং আমরা বহুলাংশে শুধু আমাদের কথা শুনি। এমনকি, আমাদের যে সব রাজনৈতিক দল শ্রমজীবী মানুষের রাজনীতি করেন বলে মনে করেন, দাবি করেন— সে দাবি হয়তো অনেকাংশে সত্যিও বটে— তাঁরাও অধিকাংশ ক্ষেত্রে শ্রমজীবী মানুষকে তাঁদের কথা বলেন, শ্রমজীবী মানুষের কথা তাঁরা তুলনায় অনেক কম শোনেন। আমার মনে হয়, এই শোনার অভ্যাস এখন আমাদের অনেক বেশি তৈরি করতে হবে। যদি সেটা তৈরি করতে পারি, তা হলে দেখা যাবে, আমাদের রাজনৈতিক প্রচারের মধ্যে, আমাদের রাজনৈতিক কথোপকথনের মধ্যে প্রথমত আমরা কী নিয়ে কথা বলব এবং দ্বিতীয়ত, আমরা সেই কথাগুলো কীভাবে বলব, দুটোর ক্ষেত্রেই হয়তো আমরা আরও অনেক বেশি মানুষের কাছে অনেক বেশি করে পৌঁছতে পারব। ... ...
এই রাজ্যের অন্যতম প্রধান "নিরপেক্ষ" সংবাদ পত্রটি এ হেন সংবাদ পরিবেশনের আগে সলতে পাকিয়ে গিয়েছেন অনেক দিন আগে থেকেই। সাম্প্রদায়িক, চুড়ান্ত পুরুষতান্ত্রিক অসভ্য নেতা নেতৃবৃন্দের পুঙ্ক্ষানুপুঙখ দৈনিক কার্যকলাপ তারা সংবাদপত্র দ্বারা প্রচারিত করে গিয়েছেন। তা ছাড়াও যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়েছেন ঋণে জর্জরিত একঝাঁক সিরিয়াল ও সিনেমার মধ্যমানের তারকারা। যখনই তারা এই দুটি দলের ছাতার তলায় এসেছেন বা দল বদল করেছেন। তাদের পছন্দ অপছন্দ প্রেম বা প্রেমহীনতার সবটুকু গিলিয়ে খাইয়েছেন সংবাদপত্রে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে। এর চেয়ে জনকল্যানকারী অন্য কোনও পথ এরা পান নি - বলে বিশ্বাস হয় নি। ... ...
সব ভালো জিনিসই এক সময় শেষ হয়। ভোটদান শেষ হলো। আবারো নানাবিধ হিসাবনিকাশ ও কাগজপত্রের পর, এবার ফেরার পালা। সব পাখী ঘরে ফেরে, কবি এরকম অযৌক্তিক দাবি করে থাকলেও, সব ভোটকর্মী ঘরে ফিরবেন এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। ফেরার সময় হলে দেখা যায়, সোনার তরীর মত ট্রেকারের স্থান অকুলান। আসার সময় একটা ট্রিপে পাঁচজনকে নিয়ে এসেছে ট্রেকার, ফেরার সময় পাঁচজন এবং খেলার ফল সমেত ইভিএম ---সবার জায়গা নেই। ... ...
একটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদপত্রের রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৪ বছরের প্রতিবন্ধী কিশোর শ্রীমান মৃণাল হক বলেছে যে, স্থানীয় বাজারের মধ্যে তাকে টুঁটি চেপে ধরে সিআইএসএফ কর্মীরা লাঠি দিয়ে মারতে শুরু করে। মারের চোটে সে মাটিতে পড়ে গেলে কিছু গ্রামবাসী প্রতিবাদ করায় সে সিআইএসএফ কর্মীদের হাত থেকে ছাড়া পায়। আমাদের জেলা মানবাধিকার আধিকারিক নিহতদের পরিবারের সাথে কথা বলেছেন। জানা গেছে, শ্রী নূর ইসলাম তাঁর ৫ সদস্যের পরিবারের এমকমাত্র রোজগেরে সদস্য ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন প্রবাসী শ্রমিক। ৮ এপ্রিল ২০২১ তিনি দেশে ফেরেন ভোট দেওয়ার জন্য। বুকে গুলি লাগা অবস্থায় মাথাভাঙ্গা সাবডিভিশনাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর, তাঁকে মৃত বলে ঘোষনা করা হয়। শ্রী মণিরুল জামাল তাঁর ৭ সদস্যের পরিবারের মুখ্য রোজগেরে ছিলেন। তিনিও একজন প্রবাসী শ্রমিক ছিলেন। ৯ এপ্রিল ২০২১ গ্যাংটক থেকে নিজের গ্রামে ফেরেন ভোট দেবার জন্য। শ্রী চাইমূলও তাঁর ৫ সদস্যের পরিবারের প্রধান রোজগেরে ছিলেন। শ্রী হামিদুল মিয়াঁ তারঁ ৪ সদস্যের পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছিলেন। তাঁ স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। ... ...
সিএএ বা নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন হিন্দু-মুসলমান কাউকেই সুরক্ষা দেওয়ার আনা হয়নি। এই আইন বিজেপির জুমলাবাজী ছাড়া আর কিছুই নয়। আসামে বিজেপি অসমীয়াদের বলছে তাদের সুরক্ষা দেবে, আসাম চুক্তির ছয় নং ধারা বাস্তাবায়িত করবে এবং তা করছেও। ওদিকে বাঙালি হিন্দুদের বলছে মুসলমানদের দেশ থেকে তাড়ানো হবে, হিন্দুদের কোনো ভয় নেই সিএএ দিয়ে তোমাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে হিন্দু বাঙালির কপালে সেই বিদেশী নোটিশ, ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল এবং ডিটেনশন ক্যাম্প। এনআরসি আর ডি-ভোটারের কবলে পড়ে মুসলমানরা যত না ভুগছে তার থেকে তিনগুণ বেশি ভোগান্তি হচ্ছে হিন্দুদের। ... ...
১৯৭৬ সালের ২৬ নভেম্বর। বাঁকুড়ার ছোট্ট মফস্সল শহর বিষ্ণুপুর থেকে বিশ্বভ্রণে বেরিয়ে পড়লেন দুই তরুণ। আফ্রিকা। একজন হাল ছাড়েন কিছু পরেই। অন্যজন চলতে থাকেন—১৭ বছর। ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলোমিটার। ১৫৪ টি দেশ। আজও এ কীর্তিতে তিনি অদ্বিতীয়। এই প্রথম দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে সে পরমাশ্চর্য সফরের অনুপুঙ্খ কাহিনি শোনাচ্ছেন জয় মণ্ডল। আলাপে নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
গতকাল সারারাত আমি ঘুমোতে পারিনি। এক দুশ্চিন্তায়। শেষ মুহূর্তে এখানে চলে আসার দুর্ভাবনা আমাকে পেয়ে বসেছিল। কেন না আমরা মুসলমান। হিন্দু এলাকায় থাকব। নিরাপত্তাহীন এক ভয় আমাকে গ্রাস করেছিল। কেন না এখন গুজরাতে ভয়াবহ দাঙ্গা চলছে। বীভৎস সব খবর বেরোচ্ছে সংবাদপত্রে। আমার স্ত্রী নাসিমা খবরের কাগজ পড়ে না, তার এ নিয়ে কোনও দুশ্চিন্তা ছিল না। আমি একা একা নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করেছি, স্ত্রী পরিবারকে মহিষবাথানে যে নিয়ে যাচ্ছি, ঠিক করছি কি? এখানের পরিস্থিতি যে খারাপ হবে না, তার নিশ্চয়তা কি আছে। গ্রামে মুসলমান এলাকায় থাকি, খানিকটা মনে জোর পাই। মহিষবাথানে তো সবাই হিন্দু, আমরা একমাত্র মুসলমান। জায়গা কেনার সময় এ কথা মাথায় আসেনি। মানুষজন যেভাবে জায়গাজমি কেনে, বাড়ি ঘরদোর করার স্বপ্ন দেখে, আর পাঁচজনের সঙ্গে আমার কোনও তফাত ছিল না। বরং মনে হয়েছিল হিন্দু এলাকায় মুসলমানরাও থাকবে। সহাবস্থানের প্রেম খুঁজেছিলাম। আর সেই প্রেমকে শেষ পর্যন্ত লালন করতে পেরেছিলাম বলে গতরাত দুর্ভাবনায় কাটিয়েও আজ মহিষবাথানে চলে আসতে পেরেছি। গুরুচণ্ডা৯ প্রকাশিত "নির্বাচিত গল্পপাঠ' গ্রন্থ থেকে। ... ...
“জানি না”, অস্থির সীতাপ্রসাদ মাথার চুল খামচে ধরল। “কিন্তু গত বছরের সব কটা ঘটনা পর পর খেয়াল করে দেখো। মে মাসে প্রভুজির হুকুম আসল। আমরা ত্রিশূল নিয়ে গ্রাম ঘুরে ঘুরে কবরখানায় হামলা চালালাম। এখানে, ঠিক এই জায়গাতে,” সীতাপ্রসাদ এলোমেলো হাত চালাল চারপাশে, “এখানে আমাদের গোটা দল এসে কবরগুলো একটার পর একটা খুঁড়লাম। এমনকি পচে গলে যাওয়া বডিগুলোকেও ছাড়িনি । যেসব জেনানারা কংকাল হয়ে গিয়েছিল তাদের বাদ দিলাম শুধু। তারপর কাজ হয়ে গেলে লাশগুলো সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখলাম যাতে সকলে দেখতে পায়। পরদিন থেকে টেনশন শুরু হল। বলা হল ওরা অ্যাটাক করবে, তাই পার্টি অফিস থেকে রাত্রিবেলা তলোয়ার আর ত্রিশূল বিলি হল। আমরা হামলা চালালাম। খুনখামারি যা হবার তা তো হল, ওদের সবাই চলে গেল রিফিউজি ক্যাম্পে। সব কিছুই জুন মাসের মধ্যে মিটে গেছে। ভোটার লিস্ট চেক করে দেখো, যে কয়খানা ঘর এখনো টিকে আছে তাদের একটাতেও কোনো জোয়ান মদ্দ নেই। আগাছা সাফ করে দেবার মত উপড়ে ফেলেছি। তাহলে এতদিন বাদে এই মার্চ মাসে এমন কাজ করল কে? কে এমনভাবে খুন করল তিনজনকে? আশেপাশের গাঁও গুলোর কেউ নয় কারণ এই কাজ করবার জন্য গায়ের যা শক্তি লাগে তা ওই কয়েকঘর বুড়োহাবড়াদের মধ্যে নেই। আর এমনভাবে বডিগুলো সাজিয়ে রাখল ঠিক যেভাবে আমরা ঐ লাশগুলোকে সাজিয়ে রেখেছিলাম। ... ...
“দরকার হলে এক দেশ আবার পুনর্জন্ম নিতে পারে, কিন্তু দেশের সংস্কৃতি একবার ধ্বংস হয়ে গেলে তাকে পুনরায় উদ্ধার করা অসম্ভব”! তখনকার দিনের এক খুব প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ টি ভি সুং পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন এই কথা। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল যে ২০,০০০ ক্রেট (বড় বাক্স) ভরা দুষ্প্রাপ্য চীনের অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করা হবে প্যালেস মিউজিয়াম থেকে। সব কিছু প্যাকিং হয়ে যাবার পরে এবার অপেক্ষা – ঠিক কবে স্থানান্তর প্রক্রিয়া চালু করা হবে সেই নিয়ে নির্দেশ আসার জন্য মিউজিয়ামের স্টাফেরা অপেক্ষা করতে লাগলো। অবশেষে ৪ ফেব্রুয়ারী, ১৯৩৩ সালে নির্দেশ এল পরিবহন চালু করার। সকাল বেলা গোটা বারো চোদ্দ মোটর গাড়ী এবং ৩০০ মত রিক্স ঢুকলো ফরবিডেন সিটিতে। ব্যস্ততা শুরু হয়ে গেল চরম – সবাইকে ব্যাজ দেওয়া, গাড়িতে স্পেশাল নাম্বারিং করা – এই করতে করতে রাত হয়ে গেল। রাত আটটার সময় তিয়েনমেন স্কোয়ারের সামনের রাস্তা, যেটা সেখান থেকে জেনগ্যায়াংমেন ট্রেন স্টেশনের দিকে গেছে সেখানে কার্ফু-র মত জারি করে দেওয়া হল। একমাত্র পারমিশন নিয়ে এবং স্পেশাল ব্যাজের লোকেরাই এই এলাকায় ঢুকতে পারত সেই রাতের বেলা। রাত নটার সময় সারি দিয়ে গাড়ি গুলি প্যালেস মিউজিয়াম থেকে রওয়ানা দিল স্টেশনের উদ্দেশ্যে, সেই গাড়ির সাথে যোগ দিল আশে পাশের একজিবিশন হল থেকে বোঝাই গাড়িগুলিও। ট্রেন স্টেশনে গিয়ে সব কাঠের ক্রেট বোঝাই হল ২১টা ট্রেনের বগিতে। ... ...
তখন আমাদের ছোট শহর যেন নতুন সভ্যতার আলো দেখা আফ্রিকার কোনো গহীন জনপদ। পাহাড় থেকে নেমে আসা দাঁতাল হাতি শহরের রাস্তায় নেমে হুটোপাটি করে, নাম তার গনেশ। আদিবাসী দেবতার পূজার রাত্রে শহরের রাস্তায় কেউ বেরোলে প্রাণদন্ড হয়। রাজার রাজত্ব গেলেও তাঁকে সবাই মহারাজ বলে, তাঁর স্ত্রীকে মহারাণী। সে যাই হোক, আসল গল্পটা এটা নয়। এরও অনেকটা আগের ঘটনা। আমার বাবা তখন বালক। বাবার ছোটবেলা কেটেছে চা বাগান এলাকায়। দিনদুপুরে বাঘ বেরোয়। সপ্তাহে একবার স্থানীয় ডাক হরকরা ছাতুয়া বুড়ো আসে চিঠি নিয়ে। মোড়ের মাথায় তার তালপাতার তৈরি ছাতাখানা দেখতে পেলে 'চিঠি চিঠি' করে দৌড়ে যাওয়া তখন বাবাদের একমাত্র বিনোদন। সময়টা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশপাশ হবে। আমার ঠাকুর্দা কলকাতায় চাকরি করতে গেলেন। সঙ্গে নিলেন আমার বাবাকে। কলকাতায় পিতাপুত্রের সংসার কিছুটা দাঁড়িয়ে যাবার পর ঠিক করলেন ঠাকুমা আর কাকা পিসিদের নিয়ে যাবেন। ... ...
রমজান মাস পড়ল। সে সময় চলছে বাগদি পাড়ার পুন্যি পুকুরে জবকার্ড থেকে মাটি কাটার কাজ। বেলা বারোটা। সব পাড়া থেকেই দু-চারজন করে কাজে লেগেছে। যারা রোজা রেখেছে, খালি পেটে টলছে। তখন বাগদি পাড়ার কেউ একজন বলে উঠল, তুমরা যারা রোজা রেখেছ, ঘর যাবে তো চলে যাও। বাকি কাজ আমরাই করে দিব। এত রোদে খালি পেটে আর খাটতে হয় না। দুগি বাগদির মেয়েটার বিয়ে লেগেছে মাছডোবায়। জামাইকে দিতে হবে একখানা নতুন সাইকেল, হাত ঘড়ি, আর নগদ পনেরো হাজার টাকা। কোথায় পাবে দুগি! খালেবিলে, নদীতে, মুয়ানে মাছ ধরে সে। দুগি গেল মল্লিকপাড়ার ঝড়ো মল্লিকের কাছে। গিয়ে সব কথা বলে আবদার করে বসল, ও চাচা, দুগিটার বিয়ে লাগাইছি। তুমি কিছু দিবে নাই? ঝড়ো মল্লিক বলল, ও মা, এ তো খুশির খবর! মেয়ের বিয়ে দিচ্ছিস, কিছু দিতে হবে বইকি। তা কী দিলে খুশি হবি বলত? আবদুল চাচা তো সাইকেলটা দিচ্ছে, তুমি একখানা ভালো হাত ঘড়ি কিনে দিও তাইলে। ... ...