ফেসবুক। বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তম সামাজিক মাধ্যমগুলির অন্যতম। ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাহিত্যিক, শৈল্পিক, বাণিজ্যিক—এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যা প্রতিনিয়ত এই প্ল্যাটফর্মটিতে চর্চিত নয়। প্রশ্ন হল, ফেসবুক কি নেহাতই নিরপেক্ষ একটি মাধ্যম? নাকি পর্দার আড়ালে চলে গভীর সামাজিক-রাজনৈতিক খেলা? এ নিয়েই একটি সাম্প্রতিক বই। পড়লেন সৌরভ চট্টোপাধ্যায় ... ...
দুই লেখক। দুটি সংকলন। একটি আখ্যান সিরিজ। একটি গল্পসমগ্র। উঠে আসে সমাজ ও সামাজিক ধ্বস্ততার ছবি। যাপনের অনুপুঙ্খতায় শহুরে, আধা-শহুরে মধ্যবিত্ত জীবন। পড়লেন সাত্যকি হালদার ... ...
মুখ থেকে খুলে ফেলল মুখোশ, এখানে বাতাস সুগন্ধিত, দুজন পরস্পরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দুজোড়া হাত উন্মুক্ত, কাছেই দরিয়া, জালিম রাত আকাশে চাঁদ পুরাতন, শরাবি জ্যোৎস্নার বিষাদে ভেসে যাচ্ছে নহবত ... ...
ও-জে-সিম্পসন নিজের স্ত্রীকে খুন করার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন, বহুদিন ধরে বহুল-চর্চিত ট্রায়াল হয় তার, সে ট্রায়ালের সম্প্রচার হয় সারা আমেরিকা জুড়ে টেলিভিশনে। এবং আশ্চর্যজনকভাবে, প্রথমবার ট্রায়ালে গুচ্ছ গুচ্ছ প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ছাড় পেয়ে যান ওজে। প্রসিকিউশন প্রমাণ এনে দেন ওজে নিজের স্ত্রীকে মারধোর করতেন, কিন্তু ডিফেন্স অ্যাটর্নি অ্যালান ডেরশোউইজ সওয়ালে বলেছিলেন, তাতে কী? প্রতি ২৫০০-এ নির্যাতনকারীর ১ জন খুন করেন শেষমেশ। জুরির লোকেরা একটু বেইজ থিয়োরেম জানলেই দেখতে পেতেন এই তথ্য বরং প্রমাণ করে যে ওজে সিম্পসনের দোষী হওয়ার সম্ভাবনা ৯০% এর উপরে! ... ...
যে জনসমাজের জন্য দুর্বার তা যাতে তাঁরাই দেখভাল করতে পারেন, অর্থাৎ জনগোষ্ঠীর দ্বারাই পরিচালিত হয় তাঁদের সংগঠন সে বিষয়ে প্রথম থেকেই ছিলেন তৎপর। এখন গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দ্বারা যৌনকর্মীরা তাঁদের মধ্য থেকে সচিব, সভাপতি ইত্যাদি নির্বাচিত করেন। ভোট হয় সেখানে, যৌনকর্মীদের নিজস্ব ভোট। পৃথিবীর ইতিহাসে যা যথেষ্ট ব্যতিক্রমি বলা যায়। যৌনকর্মীদের অর্জিত অর্থ যাতে সঞ্চিত থাকে, সুরক্ষিত থাকে তার জন্য সমবায় গড়ে তোলার প্রচেষ্টা আর এক ইতিহাস। চিকিৎসা বিজ্ঞানের স্নাতক এবং গণস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা মানুষ হয়েও ডাঃ জানা এবিষয়ে তৎপর হন। যৌনকর্মীদের সমবায় ব্যাঙ্ক আদৌ হওয়া উচিত কিনা তা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় তুমুল বিতর্ক হয়। শেষ পর্যন্ত ১৯৯০-এর মাঝামাঝি আইনের কিছু অংশের পরিবর্তন করতে হয়। দুর্বার অনুমতি পায়। ... ...
বাংলায় আদম পীরের প্রভাব সেই একাদশ শতকের পূর্ববর্তী সময়কালে থেকে আজও সমানভাবে বিদ্যমান। হিন্দু-মুসলমানের সমন্বয়ী সংস্কৃতির এক অসামান্য ভাবধারা নির্মাণের ক্ষেত্রে ভারতীয় উপমহাদেশে আদম পীর বিশেষ উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গিয়েছেন। আদম পীর সম্পর্কে খুব সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যথেষ্ট মুশকিলের ব্যাপার। আদম পীরকে অনেকেই হযরত পীর আদম বলে অভিহিত করে থাকেন। কেউ কেউ বলেন বাবা আদম শহীদ। কিন্তু তাঁর জন্ম কোথায় ,তাঁর তিরোধানই বা কোথায়, কিভাবে হয়, মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট তারিখ --এই সব কোনো কিছুই সঠিকভাবে জানতে পারা যায় না। তাঁর পারিবারিক পরিচয় ও কিন্তু খুব সঠিকভাবে পাওয়া যায় না। খানিকটা অনুমান এবং অনুরাগীদের রেখে যাওয়া পরম্পরাগত বিফরণ এবং তাঁদের মধ্যে প্রচলিত বিভিন্ন গল্পগাছা কে নির্ভর করেই আদম পীর সম্বন্ধে কিছু কিছু ধারনা আমাদের উঠে আসে। ... ...
এখানে ঈদ নিয়ে প্রতিবছরই একটা কনফিউশন থাকে। ঈদের জন্যে সরকারী ছুটি একদিন। দিন-তারিখ হিসেব করে ক্যালেন্ডারে তারিখটা লাল কালিতে লিখে দেওয়া হয়, ছুটির দিন হিসেবে। তবে ক্যালেন্ডারের ঐ লাল কালি দেওয়া তারিখটিতে ছুটি কমই পড়ে। তিরিশদিনের রোযার হিসেবে ছুটি নির্ধারিত হয় কিন্তু প্রায় প্রতিবছরই রোযা ২৯দিনে শেষ হয়। যেহেতু চাঁদের উপর নির্ভর করে তাই চাঁদ দেখার খবর পাওয়া মাত্রই পরদিনটি ছুটির দিন হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। কিছু কিছু অফিস তাও খোলা থাকে, অন্য ধর্মাবলম্বীরা এই অঘোষিত ছুটির দিনটিতে কাজ-কর্ম করেন, ক্যালেন্ডারের লাল দাগ অনুসারে তারা পরদিন ছুটি উপভোগ করেন। ... ...
গানটি নবনী ওরফে আয়েশা খুব ভাল গাইতো। আজ বারবার নবনী নামটি এসে টোকা দিচ্ছে হামিদুল সাহেবের মনে। সেই কবে থেকেই তো নামটিকে বনবাস দিয়েছে সে। প্রথম প্রথম 'আয়েশা' নামে অবাক হতো আয়েশা। বলতো, এই নামে কেন ডাকছো, কী হয়েছে তোমার? আর এর সাথেই অসন্তোষের ভাঁজগুলো মুখে ছড়িয়ে জানান দিতো, ভালবাসার সেই 'নবনী' নামটি ছাড়তে নারাজ সে। কিন্তু সে অসন্তোষ খুব বেশীদিন প্রতিরোধ করতে পারেনি। আয়েশা নামের প্রকৃত অর্থের কারিগরি হাজির করে হামিদুল সাহেব বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি এ নামটিকেই ভালবাসতে চান। আর 'নবনী' নামের সাথে সাথেই আয়েশার কাছ থেকে গানও বিদায় নিয়েছে। ... ...
তুমি উৎসব, তুমিই সেই চাঁদ দেখে ছুটি দিয়েছো কত চাঁদকে আঁকার ঘরে তোমাকে ঘিরে ছিল যারা সবাই এতক্ষণ ঘুমিয়ে গেছে ওদের চুলে হাত বুলিয়ে শুতে গেছে অন্য কেউ এঁকেছে চোখের পাতায় চুম্বন ... ...
গফুর চাচা বহুদিন হল জামা মসজিদের সিঁড়িতে বসে কাবাব বিক্রি করে। রমজান মাসে কাবাব একটু তরিবৎ করে বানায়। ইফতারের পরেই সে যোগাড় করতে বসে যায়। মাংস কুচি করে কিমা বানায়, পুদিনা কুচি গোলমরিচ বাটা জয়িত্রী জায়ফলের গুঁড়ো মাখিয়ে তাকে মিহিন করে পিষে মাটির হাঁড়িতে ঘি মাখিয়ে রেখে দেয়। দিন আনি দিন খাই মুটে মজুর , দোকানদার, পথ চলতি গেরস্ত এমনকি চাওরি বাজারের তবায়েফরা পর্যন্ত গফুরের কাবাবের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে। ... ...
জিন-শেরি-শ্যম্পেন-রাম-হুইস্কি-ভদকা— কে না জানে? কিন্তু দ্ব-চুনি, মুলি, চুজাংগি, মাতে, সিংগানি, পিস্কো…? অরণ্য-বৈচিত্র্য অন্তর্হিত হওয়ার সঙ্গে আদিবাসীদের সুপ্রাচীন পানীয় হারিয়ে যাওয়ার পরিতাপের কথা? কিংবা ঢাকা-কলকাতায় স্রেফ খাঁটি পরিশ্রুত জল সরবরাহের কিস্সা-কাহিনি? একটি আদ্যোপান্ত পানাসক্ত সংকলন। পাঠ করলেন রসনারসিক কলমচি দীপ্তেন। ... ...
উপন্যাসের ইতিহাস বা সাহিত্যের ইতিহাস মূলতঃ বাস্তব্তা অনুসন্ধানের ইতিহাস; যত সাহিত্য আন্দোলন বা লেখার রকমফের, রিয়ালিজম, ন্যাচারালিজম, সুররিয়ালিজম হয়ে ম্যাজিক রিয়ালিজম সবই শেষ পর্যন্ত যাপিত জীবন আর সমসাময়িকতাকে কীভাবে লেখার মাধ্যমে বইয়ের পাতায় বাস্তব করে তোলা যায় তার ইতিহাস। মনে করি দেবেশ রায়ের সব লেখাই বাস্তবতার ইতিবৃত্ত লেখার চেষ্টা, উপন্যাসের ফর্ম নিয়ে চিন্তাভাবনা সেই জায়গা থেকেই। ... ...
আমরা এই মেয়েদের ঘৃণা করি, সমাজের পাঁক বলে ভাবি। ডাক্তারবাবু আর তাঁর দুর্বার মহিলা সমণ্বয় কমিটি মাত্র ২৪ বছরের সময়সীমায় আমাদের এই নজর অনেক পাল্টেছিলেন। নারী, মা এবং মানুষ, যৌনকর্মী জীবনের এই তিন অধ্যায় নিয়ে গুরুতে এবং অন্য জায়গাতেও অনেক লিখেছি। ডাক্তারবাবুর সদিচ্ছায় ব্যক্তিগত ভাবে এই লড়াইকে খুব কাছ থেকে দেখতে পেরেছি। তাই আমি এই নারীদের অত্যন্ত সমীহ করি। আদ্যন্ত লড়াকু না হলে এইরকম একটি নিষ্ঠুরতম পেশায় টিঁকে থাকা অসম্ভব, আরো অসম্ভব সমমনাদের নিয়ে এইরকম একটি সংগঠনে সামিল হওয়া ও তাকে এইভাবে সফল করে তোলা। ... ...
৭ মার্চ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ হর্ষ বর্ধন ঘোষণা করছেন যে আমরা অতিমারির শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি; ৩০ মার্চ বলছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে; ২৭ এপ্রিল বলছেন সরকার মারির মোকাবিলায় শারীরিক ও মানসিক ভাবে অনেক বেশি প্রস্তুত, সারা দেশে যখন খোলা আকাশের নীচে লাইন দিয়ে চুল্লি জ্বলছে তখন নির্লজ্জ ভাবে মিথ্যা বলছেন যে বেড, অক্সিজেন, ওষুধের কোনও অভাব নেই; ২৯ এপ্রিল গর্ব করছেন মৃত্যুহার সারা বিশ্বে ভারতেই সবচেয়ে কম (১.১১%); পরের দিন আবার গর্ব করছেন যে ২.৬৯ লক্ষ মানুষ আরোগ্য লাভ করেছে, ২.২৮ কোটি মানুষ টীকাকরণের জন্য নাম লিখিয়েছে এবং আবারও নির্লজ্জ ভাবে এড়িয়ে যাচ্ছেন যে কোনও রাজ্য সরকারের কাছে টীকা মজুত নেই। এর সাথে আছে হিমালয়সম দম্ভ, স্বেচ্ছাচারিতা এবং হিরো সাজবার উদগ্র বাসনা। ২৮ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী সারা বিশ্বের কাছে ত্রাতা সাজলেন। নাটকীয় ভঙ্গিতে ঘোষণা করলেন যে, ভারত বহু দেশকে টীকা সরবরাহ করে পৃথিবীকে সর্বনাশের হাত থেকে রক্ষা করেছে। তিন মাসের মধ্যে দেখা গেলো টীকার অভাব এতোই প্রকট যে নিজের দেশের বরিষ্ঠ নাগরিকদেরই দু ডোজ দিতে পারা যাচ্ছে না। তিনি এতোই বেপরোয়া, বাংলার মসনদ দখলে এতোই মত্ত যে ১৭ এপ্রিল যখন কোভিড ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে তখনো নির্বাচনী সভায় সদম্ভে দাবি করলেন যে এতো মানুষ এর আগে কোনও সভায় তিনি দেখেননি। ... ...
থালা বাজাতে বাজাতে স্বাস্থ্যকর্মীদের বাড়িছাড়া করে দেওয়া, এই অদ্ভুত সময়ের আলো আঁধারীর আড়ালে স্বার্থ ও ঘৃণার এজেন্ডাগুলিতে শান দেওয়ার বিপ্রতীপে, মানুষ এখনো মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে, মানুষ হয়ে। কুনাট্য প্রতুল, কিন্তু মানুষ এখনো অনেকটা পথ হাঁটবে, এই আশা অলীক নয়। এই বিশ্বাস দৃঢ় হয় যখন আমরা এই সাম্প্রতিক লড়াইয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের ভূমিকা দেখি। অপরাজিতা স্বর্ণালী কলকাতা এসএসকেএম হাসপাতালের স্টাফ নার্স। তাঁর দু'সপ্তাহের দিনলিপি রইল আজকের বুলবুলভাজায়। এই লেখাটি তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত, ঈষৎ সম্পাদিত। আজকের বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রাসংগিকতা রক্ষার দায় গুরুতর বোধে আরো কিছুটা সম্পাদনার দাবী অগ্রাহ্য করেই প্রকাশিত হলো, অপরাজিতার দিনলিপি। ... ...
করোনা প্রতিরোধের নাম করে মুখ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর ত্রান তহবিলকে এড়িয়ে খোলা হয়েছিল " PM Care Fund"- যার পরিচালক মন্ডলী শাসকদলের কার্যকর্তায় ভর্তি। উঠেছে ৩৫ হাজার টাকা। ব্যবসায়ীরা কর ছাড়ের জন্য ঐ তহবিলে ঢেলে অনুদান দিয়েছেন। সে টাকা কোথায় গেল? ভারতের ১৩৮ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় ৪০% এর বয়স ১৮- এর নীচে। বাকি রইলো ৮৪ কোটি নাগরিক। ১৫০টাকা (বর্তমান বিক্রয়মূল্য?) করে ডোজ দিতে খরচ হয় ২৫,২০০ কোটি টাকা। এই টাকা কি ভারত সরকারের নেই! ২০২১ শে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বাজেটে মোট বরাদ্দ প্রায় ২.২০ লক্ষ কোটি টাকা। তার মধ্যে ৩৪ হাজার কোটি কোভিড টীকার জন্য। P. M. Care এ আরো ৩৫ হাজার কোটি। এই সত্তর হাজার কোটি টাকা থেকে ২৫ হাজার কোটি বার করা কি অসম্ভব? আরও আশ্চর্যের বিষয় নিধিরাম সর্দার রাজ্যগুলির দিকে দায়িত্ব পুরো ঠেলে দেওয়া হল, তাদের সরাসরি একটা বেসরকারি সংস্থার থেকে টীকা কিনে নিতে বলা হলো অগ্রিম অর্থ দিয়ে। অথচ টীকার সামগ্রিক উত্পাদন ও বন্টনে রাজ্যের কোনো হাত নেই। বর্তমানে যে হারে দুটি ভ্যাক্সিন উত্পাদন হচ্ছে, তাতে সবাইকে টীকা দিতে গেলে দেড় বছর সময় লেগে যাবে। তার মধ্যে তৃতীয়( বুস্টার) ডোজের দরকার হবে কিনা কে জানে ! প্রথমে কেন্দ্রীয় সরকার ৬০০ কোটি টাকা দিয়েছিলেন যা নাগরিকদের করের টাকা। যুক্তি ছিল জনস্বার্থ। এখন পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য আদার পুনাওয়ালা আবার সাহায্য চাইছেন। অথচ মানুষ টীকা কিনবে সাত থেকে দশগুণ দামে (যদি ক্ষমতায় কুলোয়)। এরা কি সাধারণ ভারতবাসীকে দিয়ে লাশবিপণি খুলে বসেছেন? ... ...
কবিতাপ্রয়াসী হিসেবেই শুধু নই, একজন পাঠক হিসেবে মনে হয়, কবিতা ও কবিতা সংক্রান্ত ভাবনাবিশ্বের যে যুগলবন্দি তিনি তৈরি করেছিলেন ধারাবাহিক ভাবেই, তা আমাদের খোলা হাওয়ার বাঁচতে শেখায়। কারণ একপ্রকার ভাবনাগত দৈন্যের মধ্যে আমরা পড়ে গেছি। এ সময় শঙ্খ ও অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের মতো কবিদ্বয় আমাদের জন্য যা রেখে গেছেন, তাই আমাদের আগামীদিনের সহায় হয়ে উঠতে পারে। দুজনকেই আমরা হারিয়েছি খুব অল্প ব্যবধানে। অথচ দুজনেই তাঁদের চলে যাওয়ার কয়েক মাস আগে পর্যন্ত তাঁদের সৃষ্টি ও ভাবনায় আমাদের সমৃদ্ধ করে গেছেন। ... ...
পলাশীর যুদ্ধের ঠিক আগে সিরাজ কাশিমবাজার কুঠি দখল করে সেখানকার সবাইকে গ্রেপ্তার করেন, সেই বন্দি বাহিনীর মধ্যে হেস্টিংসও ছিলেন। রেশমের ব্যাবসার কাজ দেখতে দেখতে এ দেশের অনেক কিছুই রপ্ত করে ফেললেন। গড়গড়িয়ে বাংলা আর উর্দু বলতে শিখলেন। ফারসিও। এদেশটাকে তিনি ভালোই বেসেছিলেন। স্বদেশের থেকে একটু বেশি, এমনটা নিজেই বলেছেন। ... ...
রোগীরা সবাই শেষে একটাই প্রশ্ন করেন, ‘ডাক্তারবাবু, ভয় নেই তো?’ উত্তর দিতে গিয়ে ইদানীং মেজাজ হারাচ্ছি। বলছি, ‘আমি জ্যোতিষী নই।’ এই প্রথম মাঝে মাঝে অন্যদের দেখে হিংসে হচ্ছে। মনে হচ্ছে আমি যদি ডাক্তার না হয়ে অন্য কিছু হতাম, বেশ হতো। বাড়িতেও সকলের মুখ ভার। রাতে ফিরে যেটুকু সময় বাড়িতে থাকছি সেটুকু সময়েও অজস্র ফোন। একটা ফোনে কথা বলতে বলতে তিনটে মিসকল হয়ে যাচ্ছে। অনেকেই হাসপাতালে বেডের জন্য, অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য, ভ্যাকসিনের জন্য ফোন করছেন। এসব ব্যাপারে আমার কিছু করার ক্ষমতা নেই বলতেও খারাপ লাগছে। আমি সারাদিন রোগী দেখে বাড়ি ফিরে স্নান করি। ফোনের ঠ্যালায় স্নান করতে করতে রাত বারোটা বাজছে। ... ...
একতলা থেকে দোতলা, দোতলা থেকে তিনতলা। হাঁফাতে লাগলাম। অন্যদেরও মনে হয় একই অবস্থা। সৌভাগ্যই বলতে হবে তিনতলায় উঠে বাঁদিকে মোড় নিয়ে প্রথম ঘরটিতেই আমরা ঢুকলাম। বিছানায় চাদরসহ নারীটিকে নামিয়ে দিতে দিতে খেয়াল হল আমার মুখে মাস্ক নেই। মাস্কটি থুতনির নীচে বা গলায়ও নেই। কেমন করে সেটি খুলে পড়ে গেল জানি না। নার্স সবাইকে ধন্যবাদ দিচ্ছিল। অন্য দু-জন রোগীকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। এক্সপোজড শব্দটি মাথায় এল। এক্সপোজডই বটে, কিন্তু যে নার্সটি আমাকে ডেকেছিল সে আমার দিকে দৃষ্টি না দিয়ে দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। আর দুজন ব্যস্ত হয়ে পড়ল রোগীকে নিয়ে। ওই ঘর থেকে বেরিয়ে এসে সিঁড়ি ধরে নীচে নামলাম আমি। ল্যান্ডিং। মাস্কটিকে কোথাও দেখলাম না। ল্যান্ডিং-এর ডানদিকের ঘরে মা বসে আছে। কিন্তু সেই ঘরে ঢুকে দেখলাম মা নেই। মা কোথায় গেল? আমি যে সাংঘাতিক আতঙ্কিত হয়েছিলাম তা নয়, কারণ মা-র জন্য এই শহর খুব পরিচিত আর এইসব হাসপাতালে মা এর আগে নিজের ব্যবস্থা নিজেই করেছেন। কিন্তু আমাকে ফেলে মা কোথায় যাবেন? হাসপাতালের ভেতরে যাবার কোনো সুবিধে নেই, সেখানে একজন গার্ড বসা, তাহলে কি বাইরে গেছেন? ... ...