আমি একটু আহত মুখে আমার পড়ার টেবিল থেকে নীলচে কভারের ‘কালেক্টেড ফিকশনস’ বইটা এনে ওর সামনে ফেলতাম; সেটাই তখন আমার সংগ্রহের সবচেয়ে মূল্যবান রত্ন। আমি বোর্হেসের মতো লেখক হব, আমি ঘোষণা করতাম। — বোর্হেস কে? — সে অবাক হয়ে জানতে চাইত। বিশ শতকের দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠতম লেখক, আমি কায়দা করে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলতাম, প্রথমজন অবশ্যই ফ্রাঞ্জ কাফকা। বোর্হেস সম্পর্কে আমার মুগ্ধতা, বলা বাহুল্য, শুধু সাহিত্যগত কারণে ছিল না। বোর্হেস যে মায়ের পরিবারের রীতি অনুযায়ী সৈনিক হতে না চেয়ে বাবার বিশাল লাইব্রেরির ভেতর আশ্রয় খুঁজে নিয়েছিলেন, এইটা আমাকে দারুনভাবে টানত। তেহরানের দিনগুলোয় যেসব উদ্ভট নিষেধাজ্ঞা আমাদের সহ্য করতে হতো, ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন বাসিজের খপ্পরে পড়তে পড়তে কয়েকবার আমি ও আমার বন্ধুরা বেঁচে যাই, এসবকিছুর মধ্যে বোর্হেসের আয়না ও গোলকধাঁধার জগতে ঘুরে বেড়ানো ছিল আমার জন্যে সব থেকে আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা। ... ...
এর এক সপ্তাহ পরে ক-র বাড়ি গিয়েছিলাম। ওনার স্ত্রী, যিনি আমাকে নিকট আত্মীয় ও আপনজনের মতো দেখতেন, তাঁকে বললাম হোমিওপ্যাথির বাক্সদুটো দেখব। উনি বাক্স নিয়ে এলে পরে ডালা খুলে দেখলাম এখনো প্রতিটি বাক্সে দুটো করে চিরকুট রয়ে গেছে। চারটে চিরকুটেই লেখা ‘বিয়ে নয়’। ক-র দর্শন নিয়ে যে গবেষণা বন্ধ করেছি তা নিয়ে আর ক্ষোভ হল না, ভাবলাম ক আসলে ভাল দার্শনিক ছিলেনই না। উনি বলতেন স্বাধীন চিন্তা ও অদৃষ্টবাদ দুটিই বিভ্রম, কিন্তু সেটা যে বিভ্রম নয় তা প্রমাণ করতেই হয়তো আমি রেবাকে বিয়ে করেছিলাম। আমার স্বাধীন চিন্তাকে প্রতিষ্ঠা করতে যে আমি যে এটা করব সেটা ওনার বোঝা উচিত ছিল। ক নিজের দর্শনে বিশ্বাস না করে নিম্নমানের এক পদ্ধতিতে আমাকে প্রভাবিত করতে চেয়েছিলেন, যৌন-নিপীড়করা বোধহয় তাদের বৌদ্ধিক দর্শন জীবনে আরোপ করতে পারে না। ফিরে এসে রেবাকে কথাটা বলতে ও বলল, “তাহলে ক সবকটা চিরকুটে ‘বিয়ে’ লিখলে তুমি আমাকে বিয়ে করতে না – শুধুমাত্র তোমার স্বাধীন ইচ্ছার তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা করতে?” ... ...
যা হচ্ছে তা ভালোর জন্যই হচ্ছে কথাটা বিশ্বাস করব বলে আপাততঃ শরীর থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া মাথাটা এমনকি জোড়া লাগাবার চেষ্টাও করছি না বরং ব্যথা কমানোর ওষুধ নিয়ে অপেক্ষা করে আছি কতক্ষণে পুরোপুরি বিশ্বাস করে ফেলব যা হয়েছে তা ভালোই হয়েছে... ... ...
এই অ্যাপার্টমেন্টটায় এসেছে মাস গড়ায়নি। আটতলা বাড়ির পঞ্চম তলায় ওরা। পাশাপাশি এরকমই লম্বা ফ্ল্যাটের দুটো সারি, আটটা ব্লক মুখোমুখি। সেরকমই কোন পাশের বাড়ির দিকে তাকিয়ে দেখছে শৈলী। ছি:, শৈ কী করছো বলো তো? অন্যের বাড়িতে উঁকিঝুঁকি মারছ! বিরক্তির সঙ্গে সঙ্গে গলার স্বরটা উঁচুতে উঠছিল সুকোমলের। ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করতে বলল শৈলী। ডান হাত দিয়ে সুকোমলের কবজি ধরে টান দিল। কী ব্যাপার, চোর টোর নাকি? দেওয়াল বেয়ে উঠছে? সুকোমল এসে জানালার বাইরে চোখ রাখল। পাশের অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকটার জানালাটা একদম মুখোমুখি, মাঝখানে ফুট তিরিশেকের ব্যাবধান। সেই জানালার পর্দা পুরো সরানো। সেখানে চোখ পড়তেই চমকে উঠল সুকোমল। এ কী দেখছে? ... ...
রোটশিল্ড অফিসে বসে কাজ করছেন অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে। দরজায় কেউ একজন এসে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর দিকে না তাকিয়েই রোটশিল্ড বললেন “একটা চেয়ার টেনে বসুন”। তিনি বসলেন। রোটশিল্ড কাগজ থেকে কিছুতেই মাথা তুলছেন না। অভ্যাগত নিজেকে অপমানিত বোধ করে একটু গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন, “আমার নাম ব্যারন হারতসবেরগ- গোল্ডবেরগ”। রোটশিল্ড মাথা না তুলেই বললেন, “তাহলে দুটো চেয়ার নিয়ে বসুন”। ... ...
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক টাকা বেতনের মুম্বই চলচ্চিত্র জগতের ডাক ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, তা শুনেছিলাম অগ্রজদের মুখে। ‘আমার সাহিত্যজীবন’ বইটি সংগ্রহ করে তখন পড়ি। কী অসামান্য ছিল তাঁর সংগ্রাম। একাগ্রতা। জীবনে ছাড়তে হয় লোভ। সাহিত্য সাধনার জায়গা। দশ রকমে মাথা দিলে সাহিত্য সরস্বতী লেখককে ত্যাগ করে চলে যাবেন। বরং আমিই ত্যাগ করি অবাঞ্ছিত কাজ। সেই যে ত্যাগ করলাম টেলিভিশনের ডাক, আর ওপথে যাইনি। হ্যাঁ, নিজের গল্পের রেডিও নাটক লিখেছি। নিজের উপন্যাসের চিত্রনাট্য লিখে দিয়েছিলাম পরিচালক রাজা সেনকে। সে ছবি এখনো হয়নি। ... ...
ফারচা, আকুরি, সাল্লি, পপেতা পর ইডু, লগান্যু কাস্টার্ড… শুধু ধানশাক নামটা মাথায় নিয়ে এখানে হাজির হলে আর সব খানার আগে মোক্ষম ভ্যাবাচাকা খেতে হবে। কারণ কলকাতায় পারসি খানার এক বিরল ঠিকানা কিড স্ট্রিটে এমএলএ হস্টেলের ঠিক উলটোদিকে ২০ ফুট বাই ১০ ফুট! নাম তার ‘মনচারজি’জ’। দীপঙ্কর দাশগুপ্ত ... ...
আর সেসব কী দণ্ড রে মশায়, পড়লে আপনার দাঁতকপাটি লেগে যাবে। পাপ করে ভেবেছেন মনুর পৃথিবীতে রেহাই পাবেন, সেটি হবার নয়। তা রাজাই দণ্ড দিন বা নিজে নিজেই প্রায়শ্চিত্ত করুন। একটা শুনুন। গুরুপত্নীর সঙ্গে ইয়ার্কি দিয়েছেন, এখন লোহার তৈরী জ্বলন্ত এক নারীমূর্তি আলিঙ্গন করে আগুন গরম লোহার খাটে শুয়ে থাকুন, যতক্ষণ না প্রাণবিয়োগ হচ্ছে। আগুনে এলার্জি আছে বলছেন। তাহলে জাপানী স্টাইলে হারাকিরি (ওই তার কাছাকাছি আর কি) করতে পারেন, হাঁটতে হবে কিন্তু নৈঋতদিকে (ন য়ে ঐ, ঋ তে রেফ, ত)দিকে। অবশ্য আপনি যদি কোমলমতি হন, এইসব কাটাকুটি পছন্দ না করেন তাহলে তিনমাস যাউ (রেসিপি নেই) খেয়ে চান্দ্রায়ণ ব্রতও করতে পারেন। ... ...
আমি ঘুরে তাকালাম। টিল্ডা সিগারেট ফুঁকছে। তার গায়ে কোন কাপড় নেই। বিছানার চাদর মেঝেতে গড়াগড়ি খায়। ধোঁয়া তার মুখ ঢেকে দিচ্ছে। আমি কাঁপা কণ্ঠে বললাম, কিন্তু আমি যে স্পষ্ট দেখলাম? টিল্ডা বলল, সে আসে। কারণ এইরকম কিছু তার মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত ছিল। যখন ওইদিনের মত পরিস্থিতি তৈরি হয় এখানে, যেন সময়ের পুনরাবৃত্তি হয়, তখন সে আসে, আবার চলে যায়। আমি দেখতে পাই না। কিন্তু আমার ভাবতে ভাল লাগে যে সে আমার কাছাকাছি আছে। অন্তত এইভাবে হলেও। ... ...
এবার বাহাত্তর দেখল দিঘির মাঝখানে জল সামান্য পাক খাচ্ছে। ফাল্গুন চৈত্রে ফাঁকা মাঠে যেমন শুকনো বাতাসের ঘুর্ণি ওঠে, ধুলোবালি, শুকনো পাতা, ছেঁড়া কাগজ – সব শূন্যে তুলে নেয় সেই বাতাস, পুকুরের মাঝখানে ঠিক তেমন একটা জলের ঘুর্ণি আস্তে আস্তে নীচের দিকে টান দিতে শুরু করেছে। বাহাত্তরের কত বার ইচ্ছে হয়েছে গরম বাতাসের সেই ঘুর্ণির ‘চোখ’-এ ঢুকে পড়তে। দেখি না, কী হয়। যদি বাতাস তাকে শূন্যে উড়িয়ে নিয়ে যায়, যদি অনেক দূরের এক অচেনা দেশে নিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়, যেখানে কেউ তাকে হারামজাদা বলবে না, বাপঠাকুরদার নাম জানতে চাইবে না। ... ...
১৯৫০-৭০-র দশক জুড়ে বিশ্বরাজনীতিতে দ্বিমেরু বিশ্বের জীবন্ত উপস্থিতি ছিল। প্রবল পরাক্রান্ত, আগ্রাসী ও মুক্ত পুঁজি এবং সাম্রাজ্যবাদের মুখোমুখি দাঁড়ানোর মতো ভিন্ন একটি আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার অস্তিত্ব – সমাজতান্ত্রিক বলে যার উপস্থিতি ছিল জনমানসে। দ্বিমেরু বিশ্বের উপস্থিতির জন্য রাজনৈতিক এবং সামাজিক একটি পরিসর তৈরি হয়েছিল যাকে বলতে পারি “তৃতীয় পরিসর”। বিশ্বের মানুষের স্বাভাবিক আশা-আকাঞ্খা এবং দাবী নিয়ে দর কষাকষির ক্ষমতা বেশি ছিল। পরবর্তীতে একমেরু বিশ্বের উদ্ভব এসবকিছুকে পরিপূর্ণভাবে বিনষ্ট করে দেয় – আজকের ভারত এর একটি প্রোজ্জ্বলন্ত উদাহরণ। এ সময়েই পৃথিবী জুড়ে শ্লোগান উঠেছিল – স্বাস্থ্য আমার অধিকার। আবার অন্যদিকে তাকালে প্রান্তিক অশিক্ষিত বুভুক্ষু মানুষের কাছে শিক্ষা এবং বই পৌঁছে দেবার আন্দোলন, শিক্ষার অধিকারের আন্দোলন জনচেতনায় চেহারা নিচ্ছিল। এর উদাহরণ লাতিন আমেরিকায় পাউলো ফ্রেইরে-র আন্দোলন। ব্রেখটের সেই বিখ্যাত ুক্তি যেন নতুনভাবে জন্ম নিল – “ভুখা মানুষ বই ধরো, ওটা তোমার হাতিয়ার”। ... ...
গতবারে করোনার কারণে গাজন হয় নি, সব লকডাউন ছিল। কেবল মাত্র টিম টিম করে দুজন সন্ন্যাসী হতে হয় বলে হয়েছিল – এটা নাকি নিয়ম, যাদের বলা হল নীলে আর মূলে। তো গতবার গাজনের চারদিনের দুদিন রাতে বিশাল ঝড়ে কারেন্ট ইত্যাদি ছিল না, আর এদিকে জমকালো উৎসব হচ্ছে না বলে জেনারেটর ভাড়া করা হয় নি। ফলে ওই দুই সন্ন্যাসী, বিটু আর উদয় ঘুটঘুটি অন্ধকারে শিবতলায় শুয়ে ছিল প্রবল গরমে আর বিশাল মশার কামড় খেয়ে। মশার কামড় খেয়ে এত খিস্তি দিচ্ছিল দুজনে শিবদুয়ারে যে সেই খিস্তি রাতের বেলায় নিঃস্তব্ধতার জন্য বহুদূর শোনা যাচ্ছিল। কোন এক গুরুজন থাকতে না পেরে নাকি বলতে এসেছিল, “এই তোরা সন্ন্যাসী হয়ে ঠাকুর দুয়ারে বসে এত মুখ খারাপ করছিস, এই চারটে দিন মুখ খারাপ না করলেই কি নয়! ... ...
ভারতবাসীর মনে হিমালয় পর্বতমালা এক রোমান্টিক ধারণায় অবস্থিত। আমরা ছোটবেলা থেকেই উত্তরে গিরিরাজ হিমালয় এবং তার ভাবগম্ভীর একটি মূর্তিকে কল্পনা করি ধর্মীয় অনুষঙ্গে। সেখানে দেবতাদের বাস, হিন্দু দর্শনের বহু তীর্থ এই হিমালয়ে অবস্থিত। হিমালয়- যা দুর্গম, যা উচ্চ, যা ভয়ংকর সুন্দর। কিন্তু কয়েক দশক ধরে যেভাবে উন্নয়নের নামে এখানে গাছ কাটা হয়েছে এবং ভয়ঙ্কর সব বাঁধ তৈরি করা হয়েছে তা নিয়ে সমতলের তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই। সময়ের সাথে সাথে স্থানীয়দেরও অনেকেই উন্নয়ন মানে চাকরি এই আপ্তবাক্য মেনে নিয়েছেন। কিন্তু সুন্দরলাল বহুগুণার মত মানুষ বরাবর আন্দোলন করেছেন। সুন্দরলাল গোটা বিশ্বের কাছে চিপকো আন্দোলনের মাধ্যমে হিমালয়ের ভয়াবহ পরিবেশ ধ্বংসকে তুলে ধরেছিলেন। তিনি দেখিয়েছিলেন কীভাবে অরণ্য ধ্বংসের ফলে জমির উর্বরতা নষ্ট হওয়ায় কাজের সন্ধানে পুরুষদের দূরদূরান্তে যেতে হয়। থেকে যান মেয়েরা, যাদের উপর থাকে সমস্ত দায়িত্ব। ... ...
প্রৌঢ় বয়স পর্যন্ত ইচ্ছার বিরুদ্ধে সুলেখাকে মেনে নিতে হতো তন্ময়ের অন্যায় আবদার। হ্যাঁ প্রায় চল্লিশ বছর বয়সে তৃতীয়বার সন্তানসম্ভবা হয়েছিলেন সুলেখা। লজ্জায় তিনি কলেজে যেতে পারতেন না, তার মেয়েরা তখন কত বড়, শুধু তাই নয় শরীরও যেন নিতে চাইত না সন্তান বহন করবার ধকল। তবু তিনি সবটুকুই মেনে নিয়েছিলেন মুখ বুঁজে। কখনো তিনি গুনগুন করে গান গাইলে যখন তন্ময় ধমকে উঠতেন, আহ! বন্ধ করো তো নাকি কান্না। ... ...
সামাজিক প্রকল্পগুলির জোরেই নিজস্ব ভোট ধরে রেখেছে তৃণমূল। অতিরিক্ত ভোট মিলেছে সুস্পষ্ট বিজেপি-বিরোধী অবস্থানে। সুচিন্তিত ভাবে মহিলা ও সংখ্যালঘুদের বড়ো অংশ বেছে নিয়েছেন এই দলকেই। বিজেপি-র সর্বভারতীয় বিপদ সম্যক ভাবে বুঝতেই পারছেন না মূলধারার বাম নেতৃত্ব। বিরোধী ভূমিকাপালনের বদলে নিজেদের ভেবেছেন ‘গভর্নমেন্ট ইন ওয়েটিং’। জনবিচ্ছিন্নতা চরমে। বামশূন্য বিধানসভায় বিজেপি-র উত্থান দুশ্চিন্তার। জানালেন দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। আলাপে নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
দুর্বারের এ. জি. এম বা রিট্রিট যখন হতো লাঞ্চ ব্রেক - এ আমরা থালা হাতে খাবার লাইনে দাঁড়াতাম। উনিও তাই করতেন। সারাদিন যখন আলোচনা হচ্ছে, প্রেজেন্টেশন হচ্ছে তখন উনি এক রকম, আবার সেই মানুষটাই মিটিং এর বাইরে যখন দেশ-বিদেশের কথা বলতেন তখন একেবারে খুব কাছের বন্ধুর মতো কথা বলতেন। একটা জিনিস খুব অবাক করতো আমাদের। সমস্ত বিষয়ে ওনার অবাধ বিচরণ অর্থাৎ বিজ্ঞানে যতটা দক্ষ ততোটাই ইতিহাস-ভূগোল সমাজতত্ত্ব সব বিষয়ে। যৌনকর্মী দিদিদের প্রতি যে মমত্ব ওনার দেখেছি তা ভোলবার নয়। একজন নেত্রীর অপারেশনের সময় সস্ত্রীক সারাদিন হাসপাতালে থেকেছেন। আবার কোন নেত্রী অসুস্থ হলে কিভাবে কোনো ভালো জায়গা থেকে তাকে সুস্থ করা যাবে তার চেষ্টা করেছেন সব সময়। ... ...
গঙ্গাধর গ্যাডগিল মরাঠী সাহিত্যে ছোট গল্পের জন্য খ্যাতনামা। সেদিন তাঁর সঙ্গে আলাপের পর বেরিয়ে এসে বন্ধুদের অভিজ্ঞতার কথা বলতে, তুষার বলল, কেঁচিয়ে দিয়েছিস, এখান থেকে আমেরিকায় যাওয়ার সাহিত্য প্রতিনিধি নির্বাচন করবে, তোর হলো না। হাসাহাসি হলো। সেদিন ছিল শেষ দিন। ইউথ হোস্টেলে ফেরার বাসে সঙ্গে ছিলেন তামিল ভাষার প্রবীণ লেখক অশোক মিত্রণ। এটি তাঁর লেখার নাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, গ্যাডগিলের সঙ্গে কী কথা হলো ? আমি বলতে, তিনি পরামর্শ দিলেন, “তোমার লেখার পদ্ধতি তোমার, তা নিশ্চয় মিঃ গ্যাডগিল দেখতে যাবেন না, কিন্তু এই সমস্ত মানুষের কথাকে সাময়িক সমর্থন করতে হয়, উনি তো তোমাকে নিয়ে বিরক্ত হয়ে থাকলেন।” ... ...
এই বিশেষ ধরণের অস্তিত্বকে আমরা বলতে পারি রিকার্সিভ অস্তিত্ব। রিকার্শন একটি বিশুদ্ধ কম্পিউটার ল্যাঙ্গুয়েজ নির্মান, যা একটি বিশেষ প্রকারের ডেফিনিশনকে সূচিত করে। এ এমন এক ধরণের সংজ্ঞা,যা নিজেই নিজেকে ইনক্লুড করে। অর্থাৎ জীবনের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে আপনি যদি বলেন, জীবন্ত বস্তুর ধর্মই হল জীবন,তাহলে সেটি একটি রিকার্সিভ ডেফিনিশন,কারণ এখানে ধরে নেওয়া হচ্ছে, যে জীবন্ত বস্তুর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে আপনি বলবেন, যার জীবন আছে সেই জীবন্ত। অর্থাৎ জীবনের এই সংজ্ঞায় আপনি জীবনের সংজ্ঞাকেই ইনক্লুড করেছেন, এবং এটি একটি রিকার্সিভ সংজ্ঞা। ... ...
কিসের বই তা জানে না মানোয়ারা, শুধু তার প্রথম পাতায় লেখা ‘আশিস চৌধরি’। এই নামটা আম্মি বারে বারে লেখাত। নামটা যে আব্বুর, সেটা মানোয়ারা জেনে ফেলেছিল। আম্মিকে আর জিজ্ঞেস করার দরকার পড়ে নি। আম্মির কথায় ও শুধু বড় বড় অপটু হরফে লিখত, আশিস চৌধরি। একটা কুড়িয়ে আনা পেন্সিল আঁকড়ে। হলদেটে কাগজের উপর আবছা লেখা। আম্মি মারা যাওয়ার পর আবার একদিন কাগজের তাড়াটা নিয়ে বসেছিল মানোয়ারা। আগের লেখাগুলো আর পড়াই যায় না, এতই আবছা। আম্মি মারা যাওয়ার পর এই ঘরটার অলিখিত মালিক হয়ে গেছে মানোয়ারা। কে যেন একবার বলেছিল, বাচ্চা মেয়ে, একা থাকলে জিন-পরিতেও ধরতে পারে, নাজনিনের ঘরের মেঝেতে শুক বরং ও। তাতে খালা ভাগ্যিস রাজি হয় নি। খুব কেঁদে কেঁদে বলছিল, “কী দোষ করেছি আমি যে আমার ঘরে ওই বেজন্মা বাচ্চাটাকে ঢোকাতে বলছ?” ... ...