ট্রেনের কামরা তখনও অন্ধকার৷ দর দর করে ঘামছেন কয়েকশো মানুষ৷ কিন্তু পিন ড্রপ সায়লেন্স৷ খিস্তি-খেউড়, ঠেলাঠেলি সব থেমে গিয়েছে৷ কামরা ভর্তি জনতা মন দিয়ে রেডিও-র স্থানীয় সংবাদ শুনছেন৷ সংবাদ পাঠক এ বার খবর পড়া থামিয়ে বলছেন, ‘এই কমপার্টমেন্টে, আপনাদের মধ্যে সরকারি কর্মচারী ক’জন? বড়জোর পাঁচ-দশ জন৷ বাকিরা! বাকিদের কী হবে? তাদের কী দোষ? তারাও কি সব সত্ মায়ের সন্তান?’ আরও বললেন, ‘তবে খেয়াল রাখবেন, সরকারি কর্মচারীর মাইনে বাড়লে দু’পয়সা আপনার পকেটেও আসবে৷ ওরা কিনলে তবে তো আপনি বেচবেন? এখন তো এ-কূল ও-কূল দু’কূল যাওয়ার জোগাড়৷ উনি (জ্যোতি বসু) বলে দিয়েছেন, দিতে পারব না৷ কেন্দ্র না দিলে দিতে পারব না৷ ... ...
"ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ - ১৮৫৭-৫৯" - লেখক মার্ক্স ও এঙ্গেল্স। মার্ক্স বা এঙ্গেলস - কেউই কখনো সিপাহী বিদ্রোহকে ভারতের স্বাধীনতা সংগাম বলেন নি। ১৯৫৯ সালে সোভিয়েত রাশিয়ার ইনস্টিটুট ওব মার্ক্সিসজম লেনিনিজম, এই দুজনের ভারতবর্ষ সম্পর্কে সংবাদ প্রবন্ধের সংকলন ঐ শিরোনামায় বার করেন। ... ...
বেসরকারি হলে পরিষেবা ভালো হবে আর কর্পোরেটের স্ট্রেসগরিমা ইত্যাদি ভাষ্যের অন্তরালে প্রকৃত ভারতবর্ষের মানব সম্পদের পরিচর্যায় সরকারি ব্যবস্থার অবদানকে ভুলতে থাকার কারণ বিবিধ হতে পারে। সরকারের নিজের দায়িত্ব থেকে হাত ধুয়ে ফেলার ইচ্ছা, সর্বগ্রাসী মুনাফাপিপাসা, জনগণের সঙ্গত ক্ষোভ - এইসব অনেক কিছুই তার মধ্যে থাকা সম্ভব। তার পরেও, যেসব জায়গায় পৌঁছে যাওয়া পুঁজির কাছে লাভজনক নয়, সেসব জায়গায় পৌঁছনোর দায় রাষ্ট্রযন্ত্রের। সেই যন্ত্রকে সচল রাখার দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে প্রতিকূল পথে চলতে গেলে শুধু চাকরির দায়ের বাইরেও, মানুষের প্রতি পারস্পরিক মমতা এক আবশ্যিক উপাদান হয়ে দাঁড়ায়। সরকারি বা অলাভজনক সংস্থায় কাজের অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করে রাখা আমাদের অভিপ্রায়। আজকের পর্বে থাকছে সত্তরের দশকের ত্রিপুরায় সমাজ কল্যাণ দপ্তরের আধিকারিক জয়া বর্মনের অভিজ্ঞ্তা। আপনিও আপনার অভিজ্ঞ্তা নিয়ে লিখুন খেরোর খাতা অথবা হরিদাস পাল বিভাগে, কিংবা সম্পাদকীয় বিবেচনার জন্যে ইমেল করুন [email protected] ঠিকানায়। ... ...
খুবই আশ্চর্যের বিষয়, রাষ্ট্র কোনভাবেই পরিবেশ প্রতিবেশের আরো অবনতি হতে পারে এমন বিষয়কে ছাড়পত্র দেবে না, যদি না পক্ষে খুব শক্তিশালী যুক্তি থাকে, এটা এদেশের পরিবেশ আইনের একেবারে মূল কথা। কিন্তু গত জানুয়ারি মাসে সুপ্রিম কোর্ট সেন্টাল ভিস্তার ওপর যে রায় দিয়েছে তাতে এর কোনো ছাপ নেই। যদিও পিটিশনাররা সবিস্তারে জানিয়েছিলেন কিভাবে দিল্লি ডেভেলপমেন্ট এক্টকে কলা দেখিয়ে জমির ব্যবহারে দ্রুত পরিবর্তন করা হয়েছে, কিভাবে হেরিটেজ এবং আর্কিটেকচারাল বিবেচনাকে জলাঞ্জলি দেওয়া হয়েছে এবং পরিবেশের পক্ষে এই প্রজেক্ট কতখানি ক্ষতিকারক সে সম্বন্ধে কোনোরকম বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা না করেই এনভায়রনমেন্টাল ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হয়েছে,তবুও সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে কোনো পরিবর্তনে বাধ্য না করেই পুরো প্রজেক্টকে ছাড় দেয়। শেষ পয়েন্টটিতে তাদের মনে হয়েছে বৃক্ষ সংরক্ষণের সরকারি প্রতিশ্রুতিতেই কাজ হবে এবং পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে খানকতক স্মগ টাওয়ার বসালেই যথেষ্ট হবে। পরিবেশ ভাবনা এবং দূষণ কমানো যে এক ও অভিন্ন বিষয় নয়, সেটা বোঝার মানুষ ও প্রতিষ্ঠান আমাদের দেশে দেখা যাচ্ছে বিরল। ... ...
তবে সবার আগে উনুনে উঠলো জলভরা লোহার কড়াই। এতে বাঁধাকপি ভাপানো হবে। ঠাকুমা খুব ঝুরি করে বাঁধাকপি কাটছে, বাঁধাকপি যত ঝুরি করে কাটা হবে স্বাদ তত খেলবে এর। তবে আমার মনোযোগ বাঁধাকপিতে নেই। সব মনোযোগ ঠাকুমার হাতের শাঁখা-পলা এক অদ্ভুত ছন্দ তুলছে তাতে। ক্রমাগত সে ছন্দ আমার লোভ বাড়িয়ে দিচ্ছে, ও ঠাকুমা, এবার রথের মেলা থেকে আমাকে ঠিক এমন চুড়ি কিনে দিবা? ... ...
ইরফানুর রহমানের ‘‘ব্রেড অ্যান্ড রোজেস’’ সিরিজ থেকে অনুমতিক্রমে নেওয়া এক গুচ্ছ অনুবাদ কবিতা। ... ...
উৎপল জানতো পলিথিনের ব্যাগে লাউয়ের বীজ থেকে চারা তৈরি করতে হয়, নিজের হাতে আগে করেনি কখনো। গোয়াল থেকে পচা গোবর নিয়ে এলো শুকি, মাটি আর বালির সাথে সেটা মিশিয়ে তৈরি হলো জমি, বীজ বপন করা হলো তাতে। জলধর বললো ব্যাগের নীচে ফুটো করে দাও দু-তিনটে, ওখান থেকে জল ঝরে যাবে। বীজ থেকে চারা, তারপর সুস্থ সবল চারাগুলোকে মাটিতে পুঁতলো ওরা। পুকুর-পাড়ের মাটি তো শুকিয়েই গিয়েছিলো এতদিনে, সেই মাটিকে একটু ঝুরঝুরে করে নেওয়া হলো, দেখতে দেখতে চারাগুলো বেড়ে উঠলো বেশ খানিকটা। এবার শুকির কাজ, চারাগুলোর গায়ে গায়ে কঞ্চি বেঁধে দেওয়া। চারা আর একটু বড়ো হলে কঞ্চির ওপর মাচা, মাস দুয়েকের মধ্যেই ফল ! ... ...
পরিযায়ী শ্রমিক কথাটা তখন শুনিনি। কোনও খবর লিখিনি। শ্রমিক, শ্রমিক নেতা, শ্রমমন্ত্রী, কারও মুখে শুনিনি শব্দ দু’টি। খবরের কাগজ, টেলিভিশনের খবরে এ নিয়ে কোনও খবর, আলোচনা নজরে আসেনি। মইনুল, আমিনুল এবং ওদের আরও অনেকের সঙ্গে আমাদের তখন রোজকার আড্ডার সম্পর্ক। ওদের মুখেই জানতে পারি, মুর্শিদাবাদের গ্রামে জোয়ান ছেলেদের অনেকেই গ্রামছাড়া। কেউ কাজের সন্ধানে ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দিয়েছে। কেউ পুলিশের ভয়ে এলাকাছাড়া। সে জেলার খবর শিরোনামে আসে গঙ্গা-পদ্মা-জলঙ্গির ভাঙন আর সিপিএম-কংগ্রেস মারামারি-খুনখারাপির সুবাদে। ছাপা হয়, খোলা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে গরু পাচার, মানুষ পাচার, নানা সামগ্রী চোরাচালানের খবর। আর ছাপা হয় আইএসআই চর ধরার রোমহর্ষক কাহিনি। ... ...
সমস্যার বিপদসংকেত শোনা যাচ্ছে পাহাড়েও। পুরো হিমালয় অঞ্চল আজ বিপদের মুখে। ধ্বস, ভূমিকম্প হয়ে উঠেছে নিয়মিত ঘটনা। অথচ তার মধ্যেই গড়ে তোলা হচ্ছে আরো পর্যটনকেন্দ্র যার অর্থ আরো বিলাস ব্যসন আর দেদার ফুর্তির মোচ্ছব। সম্প্রতি উত্তরাখণ্ডের সাততালে এমনই এক পর্যটনকেন্দ্র তৈরি করার প্রকল্প ঘোষিত হয়েছে। সাততাল একটি অতি নিরিবিলি জায়গা, পক্ষীপ্রেমীদের স্বর্গ। প্রতিবাদ হচ্ছে, যদিও জানা নেই শেষ পর্যন্ত এই পাখিরালয়টিকে পর্যটকের ভিড় থেকে বাঁচানো যাবে কিনা। সম্প্রতি লাক্ষাদ্বীপে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রস্তাবটি অন্যান্য রাজনৈতিক কারণগুলির সংগে যুক্ত হয়ে একটা বৃহত্তর আন্দোলনের অংশ হয়ে উঠেছে। ... ...
সাহিত্যসৃষ্টি পঠিত হয় বারংবার। সময়ের ব্যবধানে। কখনো বা একই পাঠক তাঁর প্রিয় বইটিতে ফিরে ফিরে যান, জীবনের নানা মুহূর্তে। প্রায়শই একই লেখা পাঠ থেকে পাঠান্তরে আনে ভিন্ন অনুভব, ভিন্ন অর্থ। এ কথা মাথায় রেখেই নির্মিত হয়েছে এই বিশেষ সংখ্যা। শঙ্খ ঘোষের যে কোনও একটি বই ফিরে পড়ুন, লিখুন এ মুহূর্তের ভাবনা— এই ছিল এই সংখ্যার লেখকদের কাছে অনুরোধ। কোন বই নিয়ে কে লিখবেন, ছিল না তার কোনো নির্দেশ। ফলত, একই বইয়ের পৃথক পাঠপ্রতিক্রিয়া উঠে এসেছে একাধিক লেখকের কলমে, ঘটেছে এমনটাও। সংখ্যাটিকে তা আরও সমৃদ্ধ, কৌতূহলোদ্দীপক করেছে বলে আমাদের বিশ্বাস। ... ...
মাদের দেশে ‘দর্শন’ বলে আলাদা কোনো বিষয় কখনও ছিল কি? বেদে, উপনিষদে যা আছে বা মহর্ষি কপিল, কণাদ, জৈমিনি, ব্যাস, মধ্বাচার্য, রামানুজম, শঙ্করাচার্য ইত্যাদিরা যা বলে বা লিখে গিয়েছিলেন তৎকালে তা ‘দর্শন’ নামে বিবেচিত হতো কি? সম্ভবত না। প্রকৃতপক্ষে বৃহৎ ও অপার বৈচিত্র্যময় এই জগতের দিকে তাকিয়ে যুগপৎ বিস্মিত ও কৌতূহলী হয়েছিলেন অগাধসলিলা সরস্বতী নদীর তীরের আমাদের সুপ্রাচীন পূর্বপুরুষেরা। তারই ফল স্বরূপ যেগুলি বিবেচিত হয়েছে সাংখ্য, বৈশেষিক, পূর্বমীমাংসা, উত্তরমীমাংসা, দ্বৈতবাদ, অদ্বৈতবাদ, বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ ইত্যাদি হিসেবে, এগুলির ভিতর দিয়ে তাঁরা যা বলতে চেয়েছিলেন নিজেদের জীবন-চর্যায় তাই তাঁরা প্রতিভাত করে গিয়েছিলেন, যার অন্ত বোধিতে বা মুক্তিতে। এমনকি বস্তুবাদী চার্বাকেরাও চর্যায় ছিলেন বস্তুবাদী দর্শনানুগ। অর্থাৎ, আদিতে দর্শন আসলে জীবন-চর্যার নামান্তর ছিল ও পরিশেষে জীবনের অন্তিম লক্ষের সন্ধানী। এসব দূর অতীত বা সুপ্রাচীন কালের কথা। স্বতন্ত্র একটি বিষয় হিসেবে ‘দর্শন’-এর আত্মপ্রকাশ ঘটেছে বহু পরে মূলত পাশ্চাত্যের হাত ধরে। আমাদের নিকটবর্তী সময়ে বিংশ শতাব্দীর দর্শন বলে যা পরিচিত বলা বাহুল্য তা জোরালো ভাবে পাশ্চাত্যেরই অবদান। এর সূত্রপাত মোটামুটি ভাবে George Edward Moore-র আধুনিক বাস্তববাদের হাত ধরে, প্রসারিত হাল আমলের Slavoj Zizek পর্যন্ত। ... ...
রাস্তায় এক অদৃষ্টপুর্ব দৃশ্য দেখে সে বিস্ময়ে স্থাণু হয়ে গেল। “গ্রে এ এ এ ট পামেলা সারকাস,গ্রে এ এ এ ট পামেলা সারকাস-----” রিকশায় বসে মুখে মাইক ধরে খুব হাসি হাসি মুখে এইরকম বলতে বলতে সিড়িঙ্গে রোগা কিন্তু এই মোটা গোঁপওলা একটা কাকু যাচ্ছে। তার লাল নীল বেগুনী সবুজ হলুদ খয়েরী জামাটা দেখে কুমু মোহিত না হয়ে পারল না,হ্যাঁ ,জামা হবে এইরকম। তার বাবা কাকাদের সাদা নীল ছাই ইত্যাদি বিচ্ছিরি রঙের ওগুলো আবার জামা নাকি? কাকুর পাশে জায়গা থাকলেও দুটো প্যাংলা মত ছেলে রিকশার পেছনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চলেছে,কাকুর জামার ঘাড়ের কাছে একতাড়া পাতলা কাগজ গোঁজা,সেই কাগজ থেকে একটা দুটো টেনে টেনে নিচ্ছে আর রাস্তার লোকদের হাতে দিচ্ছে । ... ...
সুদীপ্তরা খুশিঝোরা থেকে ফিরে যাওয়ার মাসখানেক পর একটা পত্রিকা এসে পৌঁছোয় জয়ির কাছে, পোস্ট অফিস মারফত। শিল্প-সাহিত্য-সমাজ বিষয়ক লিট্ল্ ম্যাগাজিন ঝলক, জয়ি কখনো সখনো এক-আধ কপি দেখে থাকতেও পারে, মনে করতে পারে না। এই সংখ্যা সুদীপ্ত রায়ের একটা প্রবন্ধ গোছের লেখা প্রকাশ করেছে, নাম মানুষের বর্জ্য গাছেদের ভোজ্য। চিত্রশিল্পী জয়মালিকা সেন পুরুলিয়ার এক প্রান্তে আদিবাসীদের শিল্প-সংস্কৃতি প্রসারের যে বিপুল কাজ করছেন তাঁর খুশিঝোরা সমিতির মাধ্যমে, তা যে শুধুমাত্র একজন ব্যতিক্রমী সৃষ্টিশীল মানুষের পক্ষেই সম্ভব এ কথা দৃঢ়তার সাথে বলেছে সুদীপ্ত। ... ...
চাঁদপানা মেয়েটি আজ হাওয়াইয়ান ব্রিজ ও ল্যাভেন্ডারের মিশ্র সুবাস পরে এসেছে। এই সুবাস তৈরি হয়েছে বহুদূরের এক সমুদ্রশহরে ... ...
খালের প্রসঙ্গ ধরে কলকাতার ইতিহাসে প্রবেশ করার গুস্তাখি মাফ; আমি নিরুপায়। যা পড়েছি, তাই বলছি: সতেরো শতকের মাঝামাঝি সময়ে যখন মারাঠা বর্গিরা বারবার বাংলায় হানা দিচ্ছে, গঙ্গাপ্রান্তের এই শহরকে বাঁচানোর জন্য শহরের মাঝবরাবর একটা বিরাট খাল কাটা হয় (যাকে বুজিয়ে দিয়ে তৈরি হয়েছে আজকের সার্কুলার রোড)। বৃথাই খাল-কাটা! বর্গি এল না কলকাতা ঘুরতে, উল্টে সেই পরাক্রমশালী খাল ডিঙিয়ে সিরাজের সৈন্যদল হাহা করে এসে শহরের সবচেয়ে পুরোনো নাট্যশালা 'ওল্ড প্লে হাউজ' ভাঙচুর করে চলে গেল ১৭৫৬ নাগাদ। এতকিছুর পর বোধ হয় অনেকের মনে হয়েছিল, এতবড় একটা খাল কাটলাম, একেবারে কোনোই কাজে আসবে না? সে থেকেই অনুবর্তী নবজাগরণ -- 'খাল-কাটা' টু ‘ক্যালকাটা’। ... ...
আমি ওর প্রতি একটু বেশিই দুর্বল। আমার কাজ শুরুর সময় থেকে জানি। ১৯ বছরের মেয়ে। তিনটি বাচ্চা। বয়স তিন বছর, দু বছর, আট মাস। তৃতীয় বাচ্চা হবার আগের দিনও আমি ওকে রাস্তায় দেখেছি দুহাতে দু’ গ্যালন দুধের বোতল, সঙ্গে আরো কিছু বড় বড় ব্যাগ। এর মধ্যে ডিমের বাক্সও উঁকি দিচ্ছে। সঙ্গে দুই বাচ্চা। পেটে আরেকজন, যে আগামিকাল পৃথিবীর আলো দেখবে (পরে জেনেছি)। আমি ওকে দেখলাম ওর বাড়ি থেকে দেড় মাইল দূরে। ... ...
কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় আসার ফলে আদিবাসীদের সমস্যার কি কোনও সুরাহা হয়েছে? নতুন সরকার ২০১২ সালের একটি হত্যাকাণ্ডের রিপোর্ট প্রকাশ করে যেটি আগের বিব্জেপি চেপে রেখেছিল। ঐ বছর ২৮ জুন বিজাপুর জেলায় সারকেগুড়া নামে একটি জায়গায় বাহিনীর গুলিতে সতেরো জন মানুষের মৃত্যু হয়। বাহিনী তাঁদের বিজ্ঞপ্তিতে বলে যে মৃতেরা সবাই মাওবাদী ছিলেন। গ্রামবাসীরা এবং সুধা ভরদ্বাজের (যিনি নিজে ভীমা কোরেগাঁও মামলায় ভুয়ো অভিযোগে কারাবন্দি) নেতৃত্বে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র বিরোধিতা করেন এবং দাবি করেন যে মৃতরা কেউ মাওবাদী ছিলেন না। চাপে পড়ে সরকার অবসরপ্রাপ্ত বিচারক বিজয় কুমার আগরওয়ালের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে। প্রায় সাত বছর বাদে কমিশন তাঁরা রিপোর্ট পেশ করেন এবং প্রমাণিত হয় যে মৃতরা কেউ মাওবাদী ছিলেন না। কংগ্রেস সরকার যদিও এই রিপোর্ট সর্বসমক্ষে আনে কিন্তু যে সতেরো জন নিহত হন এবং দশ জন আহত হন তাঁদের কোনও ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করে। একই ভাবে যারা এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী ছিল তাদেরও হয়নি। ... ...
সাইকেল আর বই, এই তাঁর জগৎ। রাজাবাজারের বাড়িতে বইয়ের ভিড়ে বাকি সব কিছুই অদৃশ্য বলা চলে। সে বাড়িতে প্রথম যে দিন গেলাম, বিচিত্র অভিজ্ঞতা। রূপদার গলা শুনতে পাচ্ছি, মানুষটাকে দেখতে পাচ্ছি না। অনেক পরে নজর করি, দুটি বইয়ের তাকের ফাঁকে এক চিলতে জায়গায় গা এলিয়ে রূপদা। কথায় কথায় বললেন, দেশের বাড়ি থেকে সে দিনই সকালে ফিরেছেন। জানতাম, দেশের বাড়ি ভগবানপুর। অনুমান করতে পারছিলাম, রূপদা কীভাবে গিয়ে থাকতে পারেন। তবু, খানিক মজা করার জন্যই বললাম, এই গরমের মধ্যেও কি নন-এসি বাসে…। বাক্যটি শেষ করার ফুরসত পেলাম না। রূপদা যেন রীতিমতো অপমানিত বোধ করলেন। পাল্টা প্রশ্ন, ‘কেন, বাস কেন? সাইকেল থাকতে বাস কেন?’ মার্জনা চেয়ে বললাম, সব ঠিক আছে। কিন্তু বম্বে রোডে ঝড়ের গতিতে চলা গাড়ির মধ্যে সাইকেলে চলাফেরা ঝুঁকি হয়ে যাচ্ছে না! রূপদা কথাটা কানেই তুললেন না। ... ...
এনভিরনমেন্টাল রিফিউজি বা জলবায়ু শরণার্থী শব্দ দুটি আজকাল খুব চালু। পরিবেশের বিপন্নতার কারণে ঘর-বাড়ি, বসত এলাকা ছাড়তে হচ্ছে লাখ লাখ মানুষকে। সুন্দরবনের এমন কত মানুষ দেশের নানাপ্রান্তে জীবন-জীবিকার লড়াই চালাচ্ছেন কেউ খোঁজ রাখেন না। আবার পরিবেশ রক্ষার আয়োজনেও জীবন-জীবিকা বিপন্ন বহু মানুষের। দূষণ ছড়ায় বলেই কলকাতার পূর্বতম প্রান্তে গড়ে উঠেছিল ট্যানারি শিল্প। ক্রমে শহরটা পূর্ব দিকে বাড়ল। বর্ধিত শহরের মানচিত্রে ট্যানারি পড়ল শহরের প্রায় মাঝখানে। ফতোয়া জারি হল, দূর হটো। বানতলায় সরে গেল চামড়ার শতাব্দী প্রাচীন কারবার। নতুন জায়গায় কাজ জুটল না দুই-তৃতীয়াংশেরই। কর্মহীন এই শ্রমিকেরা কেন পরিবেশ-শরণার্থী বলে গন্য হবেন না? পরিবেশ রক্ষা ঘিরে উদীয়মান এই শ্রেণি সংঘাত নিয়ে আমরা কী ভাবছি? ... ...
এটা রিসোত্তোর রেসিপির বা ইতিহাস লেখার রচনা নয়, তাই সেই সব বিষয়ে ঢুকছি না। তবে যেটা বলার, রান্নার টেকনিক ছাড়াও আর যেটা প্রধান পার্থক্য করে দেয় রিসোত্তো কোয়ালিটির তা হল যে চাল ব্যবহার করা হয় তা। রিসোত্তোর ছবি দেখেই ‘আমাদের গোবিন্দভোগ চাল দিয়ে এই জিনিস আরো ভালো হত’ এমন হল্লা মাচাবেন না প্লিজ। সব জিনিসের একটা স্থান-কাল-পাত্র আছে! অবশ্য আপনি নিজের নিজের সিগনেচার ডিস “রিসোত্তো উইথ এ গোবিন্দভোগ টুইস্ট” বানাতে চাইলে কিছু বলার নেই! যদি পারফেকশন আনতে পারেন, কে জানে হয়ত পায়েস ছেড়ে গোবিন্দভোগ গ্লোবাল স্কেলে পৌঁছে যাবে পাতে পাতে! এখানে জাস্ট এটুকু বলে রাখি এই মুহূর্তে রিসোত্তো বানাবার সবচেয়ে জনপ্রিয় চালু চাল তিনটি – কারনারোলি, আরবোরিও এবং ভিয়ালোনে ন্যানো। আর একটা ছোট্ট টিপস -এই চাল দিয়ে রিসোত্তো রান্নার আগে প্লিজ চাল ধোবেন না বারে বারে! একবারে না ধুলেই ভালো হয়। ... ...