অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহরে সাম্প্রতিক কালে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এমনই এক আয়োজন, 'মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়া সিজ়ন ১৩'। আমাদের ভারতবর্ষের মতোই এখানেও অনুষ্ঠানটির মোটামুটি ভাবে একই ফরম্যাট - শেফের ডিগ্রী বা 'স্কিল সেট' না থাকা সাধারণ ঘরোয়া রাঁধুনেরা তাঁদের রন্ধন প্রতিভা দেখাতেই মূলতঃ উপস্থিত হন এখানে। প্রায় ছয়মাস ধরে চলা এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিশ্ববরেণ্য শেফেদের কাছ থেকে এরপর নানা কসরত শিখে এবং তাঁদের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে নিজেদের প্রতিভায় শান দিতে দিতে একসময় এঁদের মধ্যে কেবলমাত্র একজন বিচারকদের বিচারে শ্রেষ্ঠ হয়ে 'মাস্টারশেফ' শিরোপা ও দু লাখ পঞ্চাশ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার নিয়ে বাড়ি ফেরেন। ... ...
রাত সাড়ে এগারোটা। প্রচণ্ড জোর আওয়াজ আসছে নিচ থেকে। বিল্ডিং-এর একেবারে নিচে লোহার মেইন গেট। ওই গেটে প্রচণ্ড ধাক্কা মারছে কারা যেন! ঝন ঝন - খট খট - ধড়াম ধড়াম। নানারকমের আওয়াজ হয়ে চলেছে গেটে। সঙ্গে চিৎকার। শোনা যাচ্ছে না ভালো মত। কী যেন বলে চলেছে উগ্র চিৎকারে। হলঘরের ভেতর আর কোনও কথার শব্দ নেই। যা শব্দ, এখন কেবল বিল্ডিং-এর নিচ থেকে। মেইন দরজার বাইরে কি কথাবার্তা চলছে - কান পেতে শুনছে ওরা। কথাগুলো ফার্সিতে। হুমকি দিয়ে চলেছে। বোঝা যাচ্ছে, ওরা সেই কোম্পানির মালিকপক্ষের লোক। ওদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। ওদের সেই ফার্সি কথাগুলো বাংলা করলে হয়, সব কটাকে মেরে ফেলব। পুঁতে দেব এখানেই। কেউ ফিরতে পারবে না দেশে। দরজা খোল…। কথাগুলো হয়ে চলেছে অনেকগুলো কন্ঠস্বরে। এবার সঙ্গে অন্য একটা আওয়াজ। বুকের ভেতরগুলো কেঁপে উঠলো। ফাঁকা ফায়ারিং হচ্ছে নীচে। কেউ নামছে না ওরা নিচে। গেট ভেতর থেকে লক করা। ওরা বুঝতে পারছে লক একবার খুলে দিলে আর উপায় নেই। আজ রাতেই মরতে হবে সবার। কেউ খোলেনি লক। কিন্তু ওই লোহার গেট কতক্ষণই বা বন্ধ করে রাখা যাবে? ভেঙে ফেলার চান্স আছে। বেরোতে তো হবেই কখনও না কখনও। বেরোলে যে কী হবে সেটা আর ভাবতে পারছে না ওরা। বাইরে চলল চিৎকার। ... ...
আমাদের আরো একটি প্রোগ্রাম হল “কম্যুনিটি হেল্থ প্রমোটার”। রেফিউজি হতে হবে। সিটিজেন হলেও রেফিউজি হিসেবে এ দেশে এসেছে এমন মহিলা ইংরেজী পড়তে লিখতে আর বলতে পারলে এই প্রোগ্রামে ঢোকা যায়। ১৮ বছর হতে হবে। ওদেরকে বেসিক ট্রেনিং দেওয়া হয় আর অনেক সাপোর্টিভ কাগজপত্র। মূল উদ্দেশ্য হল কম্যুনিটিকে স্বাস্থ্য সচেতনতার উপকারিতা নিয়ে বলা আর পরামর্শ দেওয়া। এই প্রোগ্রাম আমার হাত দিয়েই শুরু। কঠিন কাজ - কারণ, প্রথমত: ট্রেনিং এর জন্য উপযুক্ত স্পিকার খুঁজে বার করা, ওদের রেজ্যুমে জমা দিয়ে আ্যাপ্রুভ করা, এবং স্পিকাররা কোন সান্মানিক পাবে না। পুরোটাই স্বেচ্ছায় নিজের মূল্যবান সময় কম্যুনিটিকে উৎসর্গ করা। দ্বিতীয়ত: কারা কারা এই প্রোগ্রামের জন্য এলিজেবল। তৃতীয়ত: প্রত্যেক ভাষার একজনকে খুঁজে বের করে রাজী করানো- অনেক কাজ। যথারীতি কোন রোহিঙ্গা মহিলা পেলাম না। ... ...
ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখলাম ধবধবে সাদা পোশাক ও টুপি পরা অল্পবয়সী এক ছেলে। বাক্স ধরতে এসেছে। আমি আর কথা বললাম না। এই ডিস্ট্রিবিউশন আমার জন্য, আমার গাড়ির জন্য খুব পরিশ্রমের। কয়েকটা স্টক পয়েন্ট ঠিক করা হয়। এরপর ক্লায়েন্টদের ঐ ঠিকানা শেয়ার করা হয় যাতে নিজেরা তুলে নেয়। আমার বাকি সহকর্মীদের ক্লায়েন্টরা অডি, বিএমডাব্লু, মার্সেডিজ চড়ে যায় ডোনেশন নিতে (ঐ আরেক মজার গল্প, পরে বলব)। আর আমার সদ্য এদেশে আসা অভাগা ক্লায়েন্টদের প্রায় কারো গাড়ি নেই। যাদের আছে, খুব মেজাজও আছে সঙ্গে। যাদের গাড়ি নেই, তাদের অনেক অনুনয় বিনয় করতে হয় গাড়ির সার্ভিস পেতে হলে। ... ...
"পশ্চিমবাংলার বর্ধমান জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের এক মুসলিম পরিবারের দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতার মধ্যে লেখক সুকৌশলে বুনে দিয়েছেন – সাতচল্লিশের আগের অখণ্ড ভারতের উত্থান-পতন, তদানীন্তন রাজনীতি, বিশ্বযুদ্ধের অস্থিরতা, দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গা, দেশভাগ, দেশগঠন ও সামাজিক অবক্ষয়ের আখ্যান। এ কাহিনীর নায়ক সময়। সমাজ, ইতিহাস ও রাজনীতি মিলেমিশে গেছে এ উপন্যাসে। একটি পরিবারের নানা ওঠাপড়ার ছবি আঁকতে আঁকতে গোটা একটি সমাজের উত্থান-পতনের চিত্র এঁকে দিয়েছেন কাহিনীকার। বইটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সুঠাম গদ্য পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করে। লেখক আগাগোড়া উপন্যাসটিতে রাঢ়বঙ্গের আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করেছেন।" হাসান আজিজুল হকের ‘আগুনপাখি’ নিয়ে লিখলেন রঞ্জিতা চট্টোপাধ্যায়। ... ...
আমাদের শুরুতেই দেখতে হবে, মেডেলের আশা আমাদের ঠিক কোন কোন খেলাগুলিতে ছিল। আসলে অলিম্পিক স্পোর্টসগুলি সম্পর্কে আমাদের ধারণা এতটাই কম থাকে, যে চার বছর ধরে খবরের কাগজের পাতায় তাদের দূরবীন দিয়ে খুঁজতে হয়, উন্মাদনার কথা ছেড়েই দিলাম। অধিকাংশ ক্রীড়ামোদীই জানেন না – কোন খেলায় কে অলিম্পিকের যোগ্যতা মান পেরোচ্ছেন এবং কারা কারা অংশ নিচ্ছেন। এটা তো আর শুধুমাত্র ক্রিকেটকে আর মিডিয়াকে দোষারোপ করে কাটিয়ে দিলে চলে না। পাবলিক যা খায় মিডিয়া তাই-ই খাওয়ায়। আমরা এই পর্বে দেখে নেব, কারা কারা পদক পাবার সম্ভাবনা নিয়ে টোকিও গিয়েছিলেন। এবং তারপর একে একে ভিন্ন ভিন্ন খেলায় আমাদের পারফরম্যান্সের বিচার করার চেষ্টা করব, প্রস্তুতি সহ। ... ...
মুশকিল হলো যে মানুষটা সারাজীবন ব্রিটিশ পুলিশের নেক নজরে থাকলেন, যাঁর নামে ঢাউস ফাইল তৈরি হলো আইবি দপ্তরে, তাকে ইংরেজের পোষ্য বললে ঠিক হয় কি? তবু শুনি তিনি নাকি বেঙ্গল কেমিক্যালসে প্রথম মহাযুদ্ধের সময় নাইট্রিক এসিডের উৎপাদন অব্যাহত রেখে ইংরেজ সরকারকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন। তা খালি ইংরেজ সরকার বলা হচ্ছে কেন, ভাই? মিত্রশক্তি বলে একটা কিছু ছিলো না তখন? নাইট্রিক এসিডের আকালে ভারত থেকে, এই কলকাতা থেকে নাইট্রিক এসিড যোগানো হয়েছে, তা ইস্তেমাল করে মিত্রশক্তি জিতেছে। ভালো হয়েছে। আপনার আমার গ্রেটার, লেসার ইভিল বেছে নেবার স্বাধীনতা আছে, আচার্যের নেই? তিনি কাইজারের তুলনায় ইংরেজকে লেসার ইভিল ভেবেছেন, সেই অনুযায়ী কাজ করেছেন। এতে এতো আপত্তির কী আছে? নাকি ক্রিটিকালি দেখতে হবে বলেই যা খুশি তাই বলে দেওয়া যায়! ... ...
ছেলেটা অর্ডার নিতে এলে – পিৎজা এদের স্পেশালিটি কিনা জিজ্ঞেস করলে, হ্যাঁ বলল। আমার কি মনে হল - এও না সেই অন্য রেষ্টুরান্টের মত পিৎজার ইতিহাস ব্যাখ্যা করা শুরু করে! তাই সে-ই কিছু বলার আগেই আমি বললাম – আমি জানি পিৎজা বলে আধুনিক কালে আমরা যে জিনিসটিকে চিনি তার জন্ম হয় ১৮৮৯ সালে ইতালির নেপলস্-এ। একসময়ে নেপলস্-এর বাজারে যা পরিচিত ছিল ‘পিৎজা আলা মোজারেল্লা’ নামে, সেই পিৎজা খেয়েই রাণী মার্গারিটা কুপোকাত – বিশাল ভালোবেসে ফেলে ডিক্লেয়ার করে দিলেন, যে এটাই তাঁর সবথেকে প্রিয় পিৎজা। ব্যাস, সেই থেকে এই পিৎজার নাম হয়ে গেল ‘পিৎজা মার্গারিটা’ সেই ওয়েটার দেখি আমার কান্ড দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে – ... ...
কংগ্রেস নেতৃত্ব থেকে বিচ্ছিন্ন, ব্যথিত বৃদ্ধ ঠিক করেন নোয়াখালির গ্রামে গ্রামে, বিহার-কলকাতা-দিল্লি-পাঞ্জাবের দাঙ্গা-বিদ্ধস্ত বস্তিতে তিনি শেষ চেষ্টা করে দেখবেন। তাঁর সারাজীবনের আদর্শ - অহিংসা দিয়ে হিংসাকে জয় করবেন। সঙ্গী তাঁর অক্ষয় সাহস আর হাতে-গোনা কয়েকজন অনুগামী। বিহারে হিন্দুরা তাঁদের আচরণ পরিবর্তন না করলে তিনি আমরণ অনশনের হুমকি দেন '৪৬-এর নভেম্বর মাসে। আর '৪৭ এর জানুয়ারি মাসে তিনি শুরু করেন তাঁর নোয়াখালি ভ্রমণ। দাঙ্গার শিকার নোয়াখালির সংখ্যালঘু হিন্দুদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের মনোবল জোগানো আর সংখ্যাগুরু মুসলমানদের মন পরিবর্তনের জন্য এই তাঁর যাত্রা-সাত সপ্তাহের এই যাত্রায় ১১৬ মাইল তিনি পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়ান। জল-কাদার মধ্য দিয়ে, ভাঙা বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে, বিরুদ্ধ-ক্রুদ্ধ মানুষের ঘৃণা পেরিয়ে, সংশয়-অবিশ্বাস পেরিয়ে, মৃত্যুভয় পেরিয়ে খালিপায়ে তাঁর এই হাঁটা - এ হাঁটার তুলনীয় নজির পৃথিবীর মানুষ খুব বেশি একটা দেখে নি। তাঁর পথে ক্রুদ্ধ মুসলমানদের ছড়ানো ময়লা তিনি একবার নিজের হাতে পরিষ্কার করেছিলেন। প্রতিদিন সকালে তাঁর যাত্রা শুরু হত রবীন্দ্রনাথের 'যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে' গান দিয়ে। সুমিত চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন - 'সেটি হয়ে উঠেছিল তাঁর প্রিয় স্তোত্র।' শুরুতে কিছু প্রতিরোধ ছিল - সাংবাদিক শৈলেন চ্যাটার্জি লিখেছেন - মুসলমানরা তাঁকে বিশ্বাস করত না; পরে তারা বুঝতে শুরু করল - এই মানুষটি সাধারণ একজন মুসলিমবিদ্বেষী হিন্দু নয়, এ অন্য কিছু। লাইন দিয়ে মানুষ তাঁকে দেখতে আসত, তাঁর চলার পথে ভিড় করে জোড়হাতে দাঁড়িয়ে থাকত তারা - তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে পীড়িত মানুষজনকে সান্তনা দিতেন, প্রার্থনা করতেন, সম্প্রীতির কথা বলতেন। ... ...
সারা দেশ যখন জনগণমনঅধিনায়ক সুরে মাতোয়ারা, সারে জাঁহা সে আচ্ছা গাইছে দৃপ্ত উচ্চারণে আর তেরঙ্গা ঝান্ডা দুলিয়ে গাল ফুলিয়ে নারা তুলেছে বন্দে-মাতরম, তখন বাংলা অসম আর পাঞ্জাবের বুক চিরে উঠে আসছে অক্ষম ক্রোধের দীর্ঘশ্বাস, বিশ্বাসহীনতার কাছে পরিচয়ের হারানো অপমানিতের চিখ চিৎকার - "আমগো দ্যাশ ভাগ হৈয়া গেল / মোর দেখ ভাগ হৈ গ'ল / সাড্ডা দেস ভডিয়া গৈ" আজ সেই বিশ্বাসঘাতকাতার, সেই পিঠ পিছে ছুরি মারার, সেই চুর চুর হয়ে ভেঙ্গে পড়া স্বপ্নযাপনের পঁচাত্তর বছর। কি বীভৎস মজা ! এমন দিনে চেতনে বার বার আছড়ে পড়ে গান তার সুর আর বাণী নিয়ে, যে শোনায় তার কন্ঠ, যে শোনে তার অন্তর গেয়ে ওঠে – "যে তোমায় ছাড়ে ছাড়ুক / আমি তোমায় ছাড়বোনা মা" ... ...
কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর এমনই এক অনুশীলক বলেই তাঁর হাতে জন্ম নেয় “উজানতলির উপকথা”-র মতো আদি-অন্তের সীমানা ছাড়ানো এক আশ্চর্য সৃষ্টি। দুই খণ্ডের এই উপন্যাসের প্রধান বিশেষত্ব হল এর বহুস্তরীয় প্রেক্ষাপট। দেশভাগের পরিণতিতে বাংলার দ্বিখণ্ডীকরণ যেমন এর এক প্রেক্ষাপট, তেমনি আবার অবিভক্ত বাংলায় – এবং ভাঙ্গা বাংলায়ও বটে – বাঙালি জনসম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত বৈষম্য এর অন্য এক প্রেক্ষাপট, আবার জাতি ও ধর্মীয় বিভাজনের সঙ্গে আর্থিক শ্রেণিবিভাজনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া এ কাহিনির তৃতীয়, এবং জটিলতর পৃষ্ঠভূমি। প্রেক্ষাপটের বিভিন্নতার বিপরীতে আছে সেই বিভিন্নতাগুলো নিয়ে নির্মিত ও এগিয়ে চলা এক বৃহত্তর মানব সংহতির উপাখ্যান। আলোচনা করলেন কুমার রাণা। ... ...
এই অগাস্টের পনেরো তারিখ আরো একটা দেশে একটা বিশেষ দিন। সে হলো চীন। এদিন ওখানে মস্ত উৎসব হবে। চাঁদের উৎসব। চাঁদের উদ্দেশ্যে নাচগান হবে। নানা রকম ভালো খাবার সাজিয়ে দেওয়া হবে। তার মধ্যে সবচেয়ে স্পেশ্যাল হলো 'মুনকেক'। এই উৎসবকে ওঁরা বলেন ‘মাঝ-শরতের চাঁদনী পরব’। ঠিক যে অগাস্ট মাসের পনেরো তারিখেই তা নয়। তবে আট নম্বর মাসের মাঝের দিনে ঠিকই। চীনের চাঁদ-সুর্য্যের ক্যালেন্ডার মেনে ঐ সময়ে যে পূর্ণিমা পড়ে সেইদিনেই চাঁদের পরব হবে। সেটা সেপ্টেম্বর মাসেও পড়তে পারে, কিম্বা অক্টোবরেও। কিন্তু এসব তারিখের কচকচানি নিয়ে কী হবে? আসল হলো এই উৎসবের পেছনে যে গল্পটা আছে সেটা । চীনে মাইথোলজির গল্প। বলছি। ... ...
বড় অদ্ভুত এই সময়। একদিকে দ্রুত শিল্পের বিকাশ ঘটছে, দেশ বিদেশ থেকে মানুষ এসে জড়ো হচ্ছে আমেরিকায়। আবার পাশাপাশি কালোদের উপর নিপীড়ন বাড়ছে, এশিয়া থেকে আসা অভিবাসীদের জন্য কঠিন হয়ে উঠছে সব নিয়মকানুন। বাবনানের চিকনদার আলেফ আলি আর পাঁচকড়ি মণ্ডল, সিলেটের গোবিন্দ সারেং কি আক্রাম, বেদান্ত সোসাইটি গড়ে তুলতে আসা অভেদানন্দ - এমনি আরও অনেকের জীবন জড়িয়ে যাবে অনেক রঙের মানুষের দেশ আমেরিকার এক উথালপাথাল সময়ে, বুনবে নানা রঙের নকশিকাঁথা। ... ...
"আমাদের দেশভাগ এক জটিল, বহুস্তরীয় ইতিহাস। বিভিন্ন ছোটগল্প, উপন্যাস, স্মৃতিকথায় তার বিভিন্ন দিক উন্মোচিত হয়েছে। কোনও একটি লেখা তো তার সব কোণ ধরতে পারে না। তার উপর উদ্বাস্তু শব্দটা তো আর কোন সমসত্ত্ব গোষ্ঠীকে বোঝায় না। বিভিন্ন জাত-ধর্ম-লিঙ্গ-দেশ-কালের স্থিতির ভিত্তিতে একেক জনের দেশভাগের স্মৃতি একেক রকমের। প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন লেখা জুড়ে জুড়ে তৈরি হয় এক রক্তমাখা ইতিহাস। সেখানে হতাশা, দুঃখ, যন্ত্রণার সঙ্গে জড়িয়ে আছে সংগ্রাম, সাফল্য আর ব্যর্থতার কাহিনি। যে দেশভাগ মধ্যবিত্ত উচ্চবর্ণ বাঙালি পুরুষের কাছে ধন-মান-প্রাণ নিয়ে পলায়ন, এবং পরবর্তীকালে এক ধরণের স্মৃতিমেদুরতার জন্মদাতা, সেই একই দেশভাগ অন্য অনেক মেয়েদের ব্যক্তিগত যাতনার উৎসমুখ।" জ্যোতির্ময়ী দেবীর "এপার গঙ্গা, ওপার গঙ্গা" আর গোপালচন্দ্র মৌলিকের "দেশভাগ ও ননীপিসিমার কথা" - পড়লেন স্বাতী রায়। ... ...
এতদিনে পান্তাভাত কি ও কয় প্রকার, কতখানি স্বাস্থ্যকর, কতটা জিভে জল আনা, কোথায় কোথায় কি কি নামে ডাকা হয় কি কি দিয়ে খাওয়া হয় - সব আপনি মোটামুটি জেনে গেছেন। ভেবে কি একটু অবাক লাগছে, যে এতই পুষ্টিকর ও উপাদেয় আদ্যন্ত দেশী খাদ্যটিকে চিনে-জেনে নিতে অস্ট্রেলিয়ার মাস্টারি দরকার হল কেন? প্রশ্নটা সহজ, কিন্তু উত্তরটা কিঞ্চিৎ জটিল, ধাপে ধাপে পৌঁছতে হবে। ... ...
ইউটিউবের বদান্যতায় যে বাঙালির এখন ঘরে ঘরে শেফ, বিভুঁইয়ের মাস্টারশেফের ঝাঁকে ঝাঁকে প্রতিযোগীদের ড্রিবলিং করে টিকে থাকা শীর্ষ তিনের একমাত্র মহিলাটির জটিল-কুটিল খাবারের বদলে এই 'সাধারণ' রান্নাটি ফাইনাল ডিশ হিসেবে পরিবেশনায় তাঁরা কিঞ্চিৎ পাজল্ড। এমনিতেই ক্লান্তিকর মানিমেকিং সর্বস্ব মধ্যবিত্ত মিডিওকার বাঙালি, আঁতেল প্রমাণান্তে, এট্টু গাঁয়ের ছোঁয়া পেলেই আহা উহু করতে করতে গায়ের ক্যামাফ্লোজখানা নালেঝোলে ভিজিয়ে ফেলেন; তাঁরা গালভরা নাম দেন 'ফোক', তাপ্পর ফোকি (রি নয়, সেটার সহমর্মী কোনভাবেই নন বলেই বাহুল্য) সেজে নববর্ষে পান্তা ইলিশ খান, মাঝেমাঝে মাটির দেওয়ালে সাজা রেঁস্তোরায় কচুভর্তা খেয়ে ভাবসমাধি যান। অতএব, এই পান্তাকে অ্যান্টিক্লাস স্ট্রাগলের মর্যাদা না বাঙালির নেকু স্মৃতিরোমন্থনের সোৎসাহ পৌষপার্বণ বলা হবে সে সিদ্ধান্তে আসতে তাঁরা গলদঘর্ম হচ্ছেন, বৈকি। ... ...
জয়দেব মাঝি আমাকে কোলে নিয়ে নৌকায় বসিয়ে দেয়। দাদু পাশে বসতেই আমি ফিসফিস করে বলি, আমি সবসময় তোমার হাত ধরে থাকবো মাদলা গ্রামে গিয়েও, দেখো তুমি। পৌষের মরা করতোয়া তখন ঢেউ হারিয়ে নিশ্চুপ। নির্বিকার সে নদীর বুকে বৈঠা আছড়ে পড়লে যেটুকু আলোড়ন উঠছে, তা নিমেষেই কেমন ঝিমিয়ে পড়ছে। ওপার এখন খুব কাছে চলে এসেছে। অল্পসময় পড়েই ঘাটে লাগে নৌকা। আমি পাড়ে আইনুল চাচা কে দেখে চেঁচিয়ে উঠি, আইনুল চাচা। ঘাটের পাড় ঘেঁষা জমিতে এখন সবুজ সর্ষে গাছ। গায়ে গা লাগানো গাছগুলো সবুজ চাদরের মতো পড়ে রয়েছে জমির বুকে। ও দাদু, এটা আমাদের জমি? এটা কাদের জমি? কীভাবে বুঝতে পারছো এটা আমাদের জমি না? আমাদের জমি চিনতে পারবে তো? ... ...
আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলন চর্চায় আমরা বারবারই এই প্রশ্ন তুলি, যে দেশভাগ কি এড়ানো যেত না ? তা কি অবশ্যম্ভাবী ছিল ? কীভাবে এড়ানো যেতে পারত দেশভাগ তার উত্তর দিতে গিয়ে নানাজনে নানা কথা বলেন। সম্প্রীতি উদ্যোগকে আন্তরিকভাবে দৃঢ় করার চেষ্টা থেকে ফেডারেল কাঠামোর কথা ভাবা – নানা প্রসঙ্গই সেখানে আসে। দেশভাগ যে দাঙ্গা, ভিটে ছেড়ে যন্ত্রণাযাত্রা আর উদ্বাস্তু জীবনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সঙ্গে জড়িত – তা আমাদের সাহিত্য, সঙ্গীত, চিত্রকলা, সিনেমা সহ নানা সাংস্কৃতিক পরিসরে উঠে এসেছে। আমরা এখন পড়তে চাইছি এরকম কিছু বইয়ের পাঠ, যা দেশভাগকে নানা দিক থেকে দেখেছে। ... ...
ডেভিড লিভিংস্টোন। আফ্রিকায় বেপাত্তা। কিংবদন্তি মানুষটির খোঁজে আফ্রিকা পৌঁছেছেন মার্কিন সাংবাদিক হেনরি মর্টন স্ট্যানলে। জাঞ্জিবার থেকে শুরু হল আফ্রিকার গভীরে অভিযান। প্রথম লক্ষ্য বাগামোয়ো শহরে পৌঁছে পাক্কা দেড় মাস আটকে সেখান থেকে একে একে রওনা হয়েছে অভিযানের মোট পাঁচটি কাফেলা। চলছে অভিযানের মূল কাহিনি। স্ট্যানলের সেই বিখ্যাত সফরনামা ‘হাও আই ফাউন্ড লিভিংস্টোন’।এই প্রথম বাংলায়। এ অধ্যায়ে উন্যাময়েজি অঞ্চল, যেখানে বর্তমান টাবোরা শহর, সেখানে শিবির ফেলার কাহিনি। তরজমা স্বাতী রায় ... ...
মাইকে ঘোষণা হয়, অবরোধ উঠে গিয়েছে৷ পরবর্তী ডাউন ট্রেন ইছাপুর স্টেশন ছাড়ছে৷ ওই পথটুকু ঘড়ি ধরে আসলে, সোদপুরে সেই ট্রেনের পৌঁছতে আরও মিনিট কুড়ি৷ সময় যত গড়ায়, চোখের সামনে ভাসতে থাকে ট্রেনের চেনা ছবিটা — মালপত্রে উপচে পড়া ট্রাক, লরির মত - ট্রেনের ইঞ্জিন, ড্রাইভার-গার্ডের কামরার বাইরে, দরজার পাদানিতে, ভিড়ের গায়ে ভিড় লেপ্টে৷ মাঝে মধ্যে কানে আসে, সেই ট্রেন থেকেই আগে কোথাও রেলের পোস্টে ধাক্কা লেগে পড়ে গিয়েছেন কোনও যাত্রী৷ ট্রেনের ছাদও বাদ যায় না। সেখান থেকে মাঝেমধ্যেই ওভারহেড তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে টপাটপ মানুষ মরে। এই আছি, এই নেই - কী বিচিত্র জীবন। ... ...