উনিশশ’ পাঁচে বঙ্গ-ভঙ্গ হয়েছিল। মামনুর রশিদের লেখা নাটক ‘ভঙ্গ বঙ্গ’। কাস্টমস আর ইমিগ্রেশনের সময়। বেনাপুল, হরিদাসপুরের কথা। স্মাগলার রাজা আর যৌনকর্মী মালিনীর কাহিনী। দেশভাগের সঙ্গেই এসেছে কাঁটাতার। বর্ডার। স্মাগলিং। মেয়েরা দেহব্যবসাতে নেমেছে। এই কাঁটাতারের বেড়া ভেঙে, ঘুরে বেড়াতে চায় এক আশ্চর্য মানুষ। যদি নদীকে, বাতাসকে দু’ভাগ করা না যায়, যদি পাখি সব আকাশে ঘুরে বেড়াতে পারে, তবে মানুষ কেন পারে না? কেউ আটকাতে পারে না তাকে। সে চলে যায় সীমানা পার হয়ে। ইমিগ্রেশন আউট অব কন্ট্রোল। এইখানে যুক্ত হয় রক্তকরবীর রাজা, রঞ্জন, নন্দিনী। সেই আশ্চর্য মানুষ, নিয়মভাঙা মানুষ রক্তকরবী খুঁজছে। ... ...
গোলেনূর দাদির বড়ঘরের বারান্দায় পাটি পড়েছে দুপুরের খানার। হাঁড়ি ভরা ভাত, বাটিতে বাগারের রসুন ভাসা মসুর ডাল আর শাকের ডগা ভাজি। অন্য একটা বাটিতে কাঁচামরিচ আর পেঁয়াজ। কৈ মৌরি দেখে গোলেনূর দাদির চাপা দীর্ঘশ্বাস, কোহিনূরের আব্বা খুব ভালো খায় কৈ মৌরি। উটকো বাতাসের হিসহিস শব্দ। সাথে একটু একটু মেঘের ডাক। আমরা দাঁড়াই না।কৈ মৌরির থালটা গোলেনূর দাদির হাতে দিয়েই বাড়ির পথ ধরি। পা চালিয়ে ভেতর বাড়িতে চলে আসতেই দাদুর ডাক, গিন্নি তোমার জন্য ওল সেদ্ধ ভাত মাখিয়ে বসে আছি তো। কাঁচামরিচ ভাতে মাখিয়ে নেবার আগে ওল মাখানো অল্প ভাত দাদু আমার পাতে তুলে দেয়। আমি কাঠের পিঁড়িতে বসে তা মুখে তুলতেই ঝমঝম করে নেমে আসে বৃষ্টি। উঠোনের বুকে জমে থাকা কালো মেঘের ছায়া বৃষ্টি জলে একটু একটু করে মুছে যেতে থাকে। তাঁতঘরে বাঁশির সুর, ... ...
বইটি পড়তে পড়তে আচ্ছন্ন লাগে, প্রচণ্ডভাবে আক্রান্ত হই। একেবারে তরতরে সাহিত্যিক বাচনে গল্পচ্ছলে যেন লেখা হয়েছে বিবরণগুলি। ফলত ইতিহাস হয়ে উঠেছে জীবন্ত, সজীব, নড়ে চড়ে বেড়ানো। আমাদের পড়া যাবতীয় পুরনো সাহিত্যকর্ম, নানা গল্প উপন্যাসে যে বিন্দু বিন্দু পার্টিশন-যাপন, তার যাবতীয় ফাঁক-ফোকর পূর্ণ করার দায় নিয়ে এসেছে এই বই। এই বই আসলে চেয়েছে নিজের শর্তে কথা বলতে, নিজের মত করে চলতে চেয়েছে গদ্যের ভেতর দিয়ে। কোন নস্টালজিয়াকে প্রশ্রয় দেয়নি, একপেশে গল্পও বলতে চায়নি - যেখানে কোনও একটি ধর্মের মানুষই উৎপীড়িত...। এখানে হিন্দু, মুসলিম ও শিখ এই তিন গোষ্ঠীর মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখের গল্প থেকে যায়। এই গল্পগুলো জুড়ে জুড়ে একটা ছিন্নভিন্ন সময় ও ছিন্ন জনজাতির কথা চলে আসে। একরকম শারীরিক বেদনাবোধ জাগে, ভেতরে ভেতরে ক্ষত বিক্ষত লাগে - কেননা আমার পরিবারও পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ উচ্ছিন্ন পরিবার। ... ...
সভ্যতার বহু অর্জনই দারিদ্রের দান। পরিমিত সম্বলকে বাঁচিয়ে গুছিয়ে কালকের দিনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মানুষ কালাতিপাত করেছে এযাবৎ ইতিহাস জুড়ে। আর তার মধ্যে দিয়েই বিকশিত হয়েছে তার সংস্কৃতির বিভিন্ন ধারা। মানুষের ইতিহাসের সেরকমই এক উপাদান পান্তাভাত। উপনিষদের ঋষি ব্রহ্মের অন্নরূপে আরাধনার মন্ত্র দর্শন করেছিলেন, সূর্যের আহ্নিক গতির পর্যায় অতিক্রম করে ব্রহ্মের সেই তেজ বিচ্ছুরিত হয়েছে হাঁড়িতে তুলে রাখা পান্তায়, তার আমানি জলে। আধুনিক বিশ্বের দরবারে পান্তাকে পেশ করে সেই ইতিহাসের এক ঝাঁকি দর্শন করিয়েছেন মাস্টার শেফ কিশোয়ার চৌধুরী। এই পর্বে খানিক অবগাহন করা গেল পান্তার পাতিলে। ... ...
বাংলার মঙ্গলকাব্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন যুগের সাহিত্য, লোকাচার, প্রবাদ-প্রবচনে নানা ভাবে আমরা পান্তাভাতের উল্লেখ পাই। সাহিত্য ছাড়াও সপ্তদশ শতকের নথিপত্রেও এর হদিস রয়েছে। আর তা থেকে সমসাময়িক আর্থ-সামাজিক চিত্রটি আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ প্রচলিত প্রবাদে আমরা এটাকে গরিবের খাবার বলেই জানি। কিন্তু পান্তাভাত যে কেবল সর্বহারা শ্রেণীর বেঁচে থাকার রসদ তা নয়। মুঘল আমলে সম্রাটের প্রাসাদের মুক্তাঙ্গনে যে গান বাজনার আসর বসত, তাতে হাজির থাকতেন অভিজাত শ্রেণীর নাগরিকেরা। তাঁদের আপ্যায়নের জন্যে ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে বিশেষ করে থাকত পান্তাভাত। ... ...
বাস্তবিক, কুড়ি বছর আগে, ২০০১ সালে আমেরিকা ও যৌথবাহিনী যখন তালিবান ও আল-কায়দাকে ধ্বংস করতে আফগানিস্তান অভিযান চালিয়েছিল, তারা এমন একটি ভাব করেছিল যেন শুধুমাত্র তালিবানদের উৎখাত করাই নয়, ‘রক্ষণশীল’ আফগান সমাজের আধুনিকীকরণ এবং সেখানকার নারীদের রাতারাতি পশ্চিমী নারীতে পরিণত করাই তাদের অগ্রাধিকার। সেই সঙ্গে একটি মধ্যযুগীয় শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তে একটি পশ্চিমী ধাঁচের উদার গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে শান্তি ও প্রগতির পতাকা তুলে ধরাও ছিল তাদের প্রতিশ্রুতির তালিকায়। কিন্তু গত দুই দশকে যে-সব ছবি উঠে এসেছে, তাতে এ-কথা আজ স্পষ্ট যে, শান্তি, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বা উন্নয়ন কোনটাই তাদের লক্ষ্য ছিল না। ঠাণ্ডা লড়াইয়ের পরে পরিবর্তিত বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন করে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে, রাশিয়া, চীন ও ইরান— মার্কিন সাম্রাজ্যের প্রতিস্পর্ধী এই দেশগুলির চারপাশে একটি শক্তিশালী সামরিক ঘাঁটি তৈরি করাই ছিল আফগানিস্তান দখলের প্রধান উদ্দেশ্য। ... ...
ডেভিড লিভিংস্টোন। আফ্রিকায় বেপাত্তা। কিংবদন্তি মানুষটির খোঁজে আফ্রিকা পৌঁছেছেন মার্কিন সাংবাদিক হেনরি মর্টন স্ট্যানলে। জাঞ্জিবার থেকে শুরু হল আফ্রিকার গভীরে অভিযান। প্রথম লক্ষ্য বাগামোয়ো শহরে পৌঁছে পাক্কা দেড় মাস আটকে সেখান থেকে একে একে রওনা হয়েছে অভিযানের মোট পাঁচটি কাফেলা। চলছে অভিযানের মূল কাহিনি। স্ট্যানলের সেই বিখ্যাত সফরনামা ‘হাও আই ফাউন্ড লিভিংস্টোন’। এই প্রথম বাংলায়। এ কিস্তিতে কিসেমো নামের একটি গ্রামের অভিমুখে যাত্রার কথা। তরজমায় স্বাতী রায় ... ...
মনে হয়, আন্তরিকতা একটা চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য। এ ঠিক অভ্যাসসাধ্য নয়, বরং জন্মসূত্রে অর্জিত। সেই আন্তরিকতার সোনার কাঠির যাদু-স্পর্শ যেখানে যেখানে ছোঁয়, তারা সব জ্যান্ত হয়ে ওঠে। ভালো লেখা থেকে মহৎ সাহিত্যে উত্তরণের হয়ত একটা ধাপ এটা। আন্তরিকতাটুকু তার কমণ্ডলু থেকে মন্ত্রপূত জল ঢেলে দিল তার লেখার খসড়া খাতায় – আর তাতেই সে লেখার ভিতরের স্কুল ঘরের ভিত খোঁড়া হ’ল, গাঁথনি হ’ল সিমেন্টের, ছাত ঢালাই, দেওয়ালের ইট, প্লাস্টার, দরজা-জানলা স্থাপন, চুনকাম, জানলার বাইরের মাঠ, তাতে মাঝখানের নিমগাছ – স-ও-ব। অন্য দিকে, সেই স্কুলে পড়া সব ক্লাসের সব সব ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, স্কুলের অন্যান্য কর্মচারী, মায় হজমি-ওয়ালা। স্কুলে পৌঁছনোর রাস্তা, স্কুল যাওয়ার বাস, বাসের ড্রাইভার, কন্ডাক্টর – সব সব কিছু জ্যান্ত হওয়ার পর, তবে সেই স্কুলের অনুষ্ঠানে একটি রিহার্সালের দিন আসবে। আমরা গোগ্রাসে পড়তে পড়তে যাতে হারিয়ে যেতে পারি, এত স্পষ্ট যে ছুঁয়ে দেখতে পারি সেই স্কুলের দেওয়াল। আর সেই একটা ঘর থেকে ভেসে আসা আলাদা আলাদা অনুষ্ঠানের রিহার্সালের শব্দ। আর এমনই এক রিহার্সালে হঠাৎ চলে আসেন ভুলো-দিদিমণি চিত্রলেখাদি - আমরা প্রতিটি পাঠক নিজ নিজ ভাবে অনায়াসে প্রবেশ করি “একটি ত্রেতাযুগের ইশকুলের গল্প” তে। অবাধ। অনায়াস। ... ...
এরকম আকস্মিক চলে যাওয়ার ঘটনা আমি কানে বহুবার শুনে থাকলেও কখনও চোখে দেখিনি।। এমন একজন মানুষ যিনি আগের মুহূর্তে ছিলেন প্রাণমন দিয়ে জিজ্ঞাসু, ছিলেন হাসিখুশি, প্রাণচঞ্চল, একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি বলে বেরিয়ে গেলেন হলের বাইরে, তারপর প্রায় হাঁটতে হাঁটতে পাড়ি দিলেন কোন নক্ষত্রলোকের উদ্দেশে সেই প্রশ্নের উত্তর আমি আজও খুঁজছি। নিশ্চয়ই আরও অনেকেই খুঁজছেন। ... ...
বিদেশে এসে যুদ্ধ করে টিকে গেলে NRI - আর যে অতি কষ্ট করছে টিকে যাওয়ার জন্য - তার দিকে নাক সিঁটকে সমালোচনা- বিদেশে থাকার এত লোভ!” - নিজে সহজে রাস্তা করতে পেরেছে বলে অন্যদের সংগ্রাম/ ইচ্ছে / স্বপ্ন ছোট করার অধিকার অর্জন করে নেয়। স্টিমুলাস চেক - কী সব কথা! বাড়ি বসে বসে গরিব লোককে খোলামকুচির মত টাকা দিয়ে ওদের কাজ করার মানসিকতা সরকার নষ্ট করে দিয়েছে! আমার চেনা বেশ কিছু অতি স্বচ্ছল পরিবার সেই নিয়মের ফাঁকে দিয়ে স্টিমুলাস চেকগুলো পেল! এক গুজরাটি পরিবার যার বেশ কিছু বাড়ি আর ব্যবসা - দশ হাজারের ডলারের বেশি স্টিমুলাস চেক পেয়ে নানা জায়গা ঘুরে এল। আর আমার সাথে কথা হলেই শুধু বলবে যে কাজ করার জন্য লোক পাওয়া যাচ্ছে না। সরকার আনএম্প্লয়মেন্ট বেনিফিট আর স্টিমুলাস দিয়ে শ্রমিকদের অলস বানিয়ে দিয়েছে। অনেক বাঙালি তো লজ্জায় বলতেও পারে না যে স্টিমুলাস পেয়েছে। যে মুখে সমাজ সংস্কার আর দাতব্যের এত গল্প - সোসাইটিতে নাক উঁচু স্টেটাস - ওদের কথাবার্তা শুনে মনে হয় দয়ার দান যারা নেয় তারা খুবই নিম্নমানের মানুষ। কিন্তু নিজের ভাগ কেউ ছাড়েনা। হ্যাঁ - নিজের ভাগ ছাড়ার তো কথা ও না। কিন্তু অন্য কেউ ভাগ নিচ্ছে সেটা যদি হজম না হয় - তবে তো সমস্যা। ... ...
ইউনাইটেড নেশনসের উদ্যোগে ২০ জুন পালিত হয় বিশ্ব শরণার্থী দিবস হিসেবে। বাঙালী হিসেবে শরণার্থী, উদ্বাস্তু, রিফিজি - এই কথা গুলি আমাদের অতি পরিচিত। যদিও জাতি হিসেবে, পরিচিত হলেও, যথেষ্ট সমানুভূতি ও সহমর্মিতা আছে কিনা তা বলা কঠিন। সুকন্যা কর ভৌমিকের অভিজ্ঞতা, বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ছিন্নমূল হয়ে আসা মানুষদের আনন্দ বেদনায় তাঁর অংশভাগ নিয়ে। ... ...
এ নয়, কুমুদি, অর্থাৎ জয়ন্তী অধিকারি, কেবল কেবলির কথাই লিখেছেন। আসলে তো তিনি কেমিস্ট্রির পন্ডিত। ডাকসাইটে বিজ্ঞানী। রীতিমতো গম্ভীর প্রবন্ধও লিখেছেন বিস্তর। গুরুতেই লিখেছেন উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারি, কাদম্বিনী গাঙ্গুলিকে নিয়ে। কিন্তু তিনি এমনই কেবলিময়, যে, চোখে দেখার আগে, এসব বিশ্বাস করা ছিল কঠিন। যেমন কঠিন ছিল বিশ্বাস করা, যে, কুমুদি আর নেই। জলজ্যান্ত জয়ন্তী অধিকারি হঠাৎই একদিন দিল্লি শহরে নেই হয়ে গেলেন। দিল্লি শহর দাঁড়িয়ে রইল শুধু খটখটে কুতুবমিনারকে নিয়ে। যিনি গেলেন, তিনি অবশ্য ডঃ জয়ন্তী অধিকারি। ডাকসাইটে বিজ্ঞানী। কেবলি তো অজর অমর অক্ষয়। তার মৃত্যু নেই। নামে কেবলি হলেও আসলে যে স্মার্ট, স্কলারশিপ পেয়ে রিসার্চ করে। কটকট করে কথার উত্তরও দেয়। সত্তরের দশকের সবুজ শাড়ি পরা সেই মেয়েটি কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসের পাশ দিয়ে এখনও তো হেঁটেই যাচ্ছে, সবুজ শাড়ি পরেই। অবিকল একই রকম ভঙ্গীতে। ... ...
কুমুদি চলে গেলেন, ছয় মাস হল। কুমুদি রয়ে গেলেন। তাঁর গ্রন্থিত , অগ্রন্থিত গল্পে, প্রবন্ধে, কবিতায়। কুমুদি রয়ে গেলেন স্মৃতিতে। আজ গুরুচণ্ডা৯ র 'মনে রবে' তে কুমুদি, এবং শুধুই কুমুদি। ... ...
ব্রিটিশাধীন ভারত প্রথমবারের জন্য অংশ নেয় অলিম্পিক কুস্তিতে ১৯২০ সালে। সেবারই প্রথম ভারতীয়রা ভারতের হয়ে অংশ নেন। কুমার নাভালে এবং রণধীর সিন্দেস কুস্তিতে অংশ নেন, কিন্তু মেডেল জেতার জায়গায় পৌঁছতে পারেননি। এর ১৬ বছর পর বার্লিনে ৩জন অংশ নেন এবং ২৮ বছর পর আবার দুই বাঙালি সহ ছ’জনের দল পাঠানো হয় কুস্তিতে। সেবারই প্রথম হকির সোনা আসে আর অনন্ত ভার্গব ও কে ডি যাদব নিজ নিজ ওজন বিভাগে তৃতীয় রাউন্ডে পরাস্ত হন। কেডি যাদব অবশ্য ব্যান্টমওয়েট বিভাগে পরের বারের হেলসিঙ্কি অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ জেতেন। প্রথম ভারতীয় হিসাবে প্রথম ব্যক্তিগত মেডেল। ... ...
পা রসবোধ তো টইটম্বুর হয়ে চলকে চলকে পড়ছে। যাকে এতদিন সাহিত্যের মনযোগী ছাত্রী জানতাম সে তো একেবারে সরস গল্পের পাত্রী। রম্যরচনার মূল কথা হল, উইট বা হিউমার কখনওই টস্কাবে না যেন বলশয় ব্যালে। তেড়ে বুড়ো আঙুলের উপর দাঁড়িয়ে তিন চার পাক খাবেন কিন্তু তাতেও আপনার পায়ে ব্যথা হবে না, কপালে সামান্যতম্য ভাঁজ দেখা যাবে না। লেখিকার নিবেদন থেকে উল্লেখ করার লোভ সামলাতে পারছি না। “ ‘তবুও শান্তি, তবু আনন্দ তবু অনন্ত জাগে, তবু প্রাণ নিত্যধারা…’ বারে বারে আর আসা হবে না, এমন মানব জনম আর পাবে না। মাত্র একবার পাওয়া এই মরজীবনের সময়সীমাও বড়ো কম। ভালোবেসে তৃষ্ণা মেটে না, বিরহদহনে পূর্ণতা আসে না, দুঃ দিয়ে বা পেয়ে তৃষ্ণা যায় না…” এতোগুলো নঞর্থক বাক্যবন্ধনী দিয়ে আসলে জীবনকেই প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস। “তবু ক্লান্ত পথিক ক্ষণকালের জন্য আনন্দ পাক, কয়েকটি মুহূর্ত ভরে উঠুক স্মিতহাসির প্রসন্নতায়- বহু পথ পার হয়ে এসে এখন এইটুকু সাধন নিয়েছি।“ বইটা কেমন সেটা নিয়ে আলাদা করে আর বলে দিতে হবে না, তবে রসবোধ যখন জীবনবোধের হাত ধরে চলে তখন ক্ষণিক সরে সেলাম করে যেতেই হয়। ... ...
বুদ্ধিদীপ্ত বেজায় মজাদার একটি বই যেখানে কল্পনা, বাস্তব, রহস্য আর খ্যাপামি দিব্যি মাখামাখি হয়ে বসে আছে! পড়তে পড়তে মনে পড়ে যাচ্ছিল লীলা মজুমদার, নবনীতা দেব সেন, শিবরাম, জেমস থারবারকে... কিন্তু ওইটুকুই, বাস্তবে স্টাইলটা লেখিকার একান্তই নিজস্ব। আমি বলি কি, ভূমিকা পড়ে সময় নষ্ট করবেন না; ঝাঁপিয়ে পড়ুন মূল বইয়ের পাতায়। একটা সতর্কবার্তা – সিরিয়াস রামগরুড়ের ছানাদের জন্য এই বই নয়।' ... ...
এক যে ছিল ভীষণ কেবলী মেয়ে, টিঙটিঙে রোগা, থাকার মধ্যে মাথায় ঘন চুল, মুখচোরা আর প্র্যাকটিকালে ভয়। কেমিস্ট্রী ছাড়া সবকিছু পড়তে ভালবাসে, পাকপাড়া থেকে বেলগাছিয়া এসে ট্রামে করে কলেজ যায়। আর ছিল এক ডাক্তারীর ছাত্র, বেজায় গম্ভীর, নেহাত দরকার না পড়লে কথাটথা কয় না, সবসময় রামগরুড় মুখ করে ঘোরে কিন্তু পেটে শয়তানি বুদ্ধি গিসগিস করে। সেদিন ডিসেম্বর মাস, অসময়ে প্রবল বৃষ্টি। হাঁচতে হাঁচতে কেবলী কলেজে চলেচে, বগলে তিনটে প্র্যাকটিকাল খাতা, এক হাতে তোয়ালেরুমাল, অন্য হাতে বাসের রড, কাঁধে ঝোলা ব্যাগ। ... ...
আমার পাশে যে বসে ছিল তাকে বললাম, “এ তো গামা গাছের ডগাগুলো কেটে দিয়ে গেছে মনে হচ্ছে! সাদা প্লেটে চিজ ছড়িয়ে দিলেই কি গরুর খাবার মানুষের হয়ে যায় নাকি!” পাশের জন বলল “হোয়াট ইজ গামা?” তাকে অনেক কষ্টে আমার বিখ্যাত ইংরাজিতে বোঝালাম, যে এর সাথে ভাস্কো-দা-গামা-র কোন সম্পর্ক নেই। বাড়ির গরুতে খাওয়ার জন্য আমরা জমিতে গামা (বাংলায় অনেক জায়গায় একে গমা বা গ্যামা বলা হয়) চাষ করতাম। এমনি সবুজ লকলকে ডাঁটির মত গাছ জমি থেকে কেটে এনে বাড়িতে খড় কাটার বঁটিতে ঘ্যাঁচ ঘ্যাঁচ করে কুচাও। আমাকে বলা হল এগুলোকে নাকি ‘অ্যাসপারাগস’ বলে! গামা গাছের ডাঁটির বিজ্ঞান সম্মত নাম যে অ্যাসপারাগস, সেটা কে আর জানত! ... ...
হাতের বাতি দোলাতে দোলাতে পুব-মাথা থেকে শুরু করে বিল্ডিঙের পশ্চিম-মুখো চলেছিল বিল। বারোটার ঘণ্টা শুরু হতে হতেই ও সেই আওয়াজের সঙ্গে সঙ্গে হপস্কচ খেলার ভঙ্গিতে প্রতিটা ঢং শব্দের সঙ্গে কল্পিত ছক লাফাতে লাফাতে পার করল। কেউ দেখলে ভাবত এই মোটা মুচওয়ালা মুশকো জোয়ানটা করছে কী? আর ওর আট বছরের মিয়নো বউ সিমোন দেখলে কী বলত? কে কী বলল বা ভাবল তাতে বিলের ঠ্যাঙা। রাতের অন্ধকার যেমন কিছু ভয় জুটিয়ে আনে, তেমনি অনেক ভান-ভণিতাও ছেড়ে চলে যায়। এই যেমন, রাত একটার ঘণ্টা বাজার সময়, সে যদি পুব দিকে থাকে তাহলে ক্যাপ্টেন বার্কের গ্রে হাউন্ড জ্যাকের মত গলা উপরে তুলে একটা গম্ভীর ডাক ছাড়ে। দিনে দিনে গলাটা জ্যাকের মত সুরে খেলছে। ভাবলেই গর্বে বিলের বুক ভুঁড়ি ছাড়িয়ে সামনে এগিয়ে যায়। এমনি-ধারা নানান খেলা দিয়ে নিজেকে জাগিয়ে রাখে বিল গেন্স। ... ...
ছোটবেলা থেকেই আস্থা রেখেছিলাম বিজ্ঞানে, সত্যে, যুক্তিতে। ঠিক সেই কারণেই আজ যাদের বিরুদ্ধে কলম ধরতে বাধ্য হলাম, তাঁদের একএকটা রেফারেন্স পয়েন্ট হিসেবেই ধরতাম। তাঁরা যখন কিছু লিখতেন, বলতেন, যাচাই না করেই সেই ফ্যাক্টগুলো মেনে নিতাম, অনেক সময় দ্বিমত হতাম তথ্যের ব্যাখ্যায়, কিন্তু তথ্যে বা basic framework এ নয়। একটা আস্থা ছিলো, বিশ্বাস ছিলো, শ্রদ্ধা ছিলো - তাঁদের সততায়, জ্ঞানে, বুদ্ধিবৃত্তিতে। কিন্তু এখন যখন দেখি এঁদের অনেকেই পূর্বনির্ধারিত বিশ্বাস আঁকড়ে ধরে বাস্তবকে অস্বীকার করে অন্ধ বিশ্বাসের প্রচার করেন তখন মানতেই হলো, কোভিড১৯ অনেক কিছুই কেড়ে নিয়ে গেল তার মধ্যে নিয়ে গেলো এই আস্থাটাও, এতেও কম রিক্ত হলাম না – অন্তত ব্যক্তিগত ভাবে । এই বয়সে আস্থার জায়গা খুব কম, সেখানেও যখন টান পড়ে, হতাশ লাগাটা বোধহয় অস্বাভাবিক নয়। ... ...