ভাল ক্যামেরা হাতে নিয়ে “গ্রাম দেখাব” বলে শুট করতে গ্রামে চলে গেলে গ্রাম হয়তো ভালই দেখা যায়, কিন্তু সিনেমা তো ঠিক ফোটোগ্রাফির প্রদর্শনী নয়। নায়ককে "যাও বাবা, চোঙা ফুঁকে পাড়ার লোককে চাট্টি ভালোভালো কথা শুনিয়ে এস" বলে উপন্যাসের মাঠে খেলতে নামিয়ে দিলে যেমন ভালো সাহিত্য হয়না, তেমনই সিনেমা বা সিরিজ ভাল হতে গেলে ড্রোনে চড়ে ফোটোগ্রাফিক গ্রামদর্শনের চেয়ে অধিক কিছু প্রয়োজন। বস্তুত এ সিরিজে ড্রোনের ব্যবহার এত বেশি, যে, পরিচালককে নির্দ্বিধায় ড্রোনাচার্য আখ্যা দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু দৃশ্যশ্রাব্যের কুরুক্ষেত্রে, এমনকি "ভালো খেলিয়াও পরাস্ত" হতে গেলেও সঙ্গে কিছু কুশলী অস্ত্রচালনাও প্রয়োজন। ন্যূনতম যেটুকু দরকার, তা হল টান-টান, নির্মেদ চিত্রনাট্য। পরিচালনা এবং সম্পাদনার ক্ষেত্রে একাধারে দরকার মমত্ব এবং কঠোর ও নির্মম কুশলতা। ... ...
কখনও ভেবেছেন কি সিংহ এদেশে গুজরাত ছাড়া কোথাও পাওয়া যায় না, আর বাঘ প্রায় সব রাজ্যে! অথচ প্রাচীন হিন্দু বা বৌদ্ধ ভাস্কর্যশিল্পে সিংহ সর্বব্যাপী আর বাঘ প্রায় অনুপস্থিত। ভারতের জাতীয় প্রতীক অশোকস্তম্ভের শীর্ষভাগ- সেখানেও সিংহ। রাজারা বসতেন সিংহাসনে। বুদ্ধও শাক্যসিংহ। সিংহ থেকে সিংহল, সিংহ থেকে সিঙ্গাপুর। ... ...
দেড়শো বছরের পুরোনো অশথ তলা এসে গেল। পুরোহিত মশাই-- সইত্য পুরোইত -- এসে গুছিয়ে নিয়েছেন। এবার পূজো শুরু। বেশ ঘটাপটা করে মন্ত্র ফলমূলের নৈবিদ্য দিয়ে সময়সাপেক্ষ পূজো। প্রতিবারই কেউ না কেউ সংক্ষেপ করার আবেদন জানায় এবং " সইত্য ঠাকুর " সেটি মঞ্জুরও করেন। ছেলেদের কপালে হলুদ ছুঁইয়ে, হলুদ রঙের ষাট সুতো তাদের হাতে বেঁধে দেন। মেয়েদের বাঁহাতে তাগা বাঁধা হয়। উলু আর শাঁখ ঘনঘন বেজে ওঠে। এবার শুরু হবে ব্রতকথা। ... ...
লেখক সোভি সামুর লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল স্টাডিজে অর্থনীতি বিষয়ে পিএইচডি ছাত্র। তাঁর গবেষণার মূল বিষয় ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তির পরবর্তী সময়ে পালেস্তিন অঞ্চলের রাজনৈতিক অর্থনীতি ও "অর্থনৈতিক উন্নয়ন"। স্নাতক স্তরে সোভি জার্মানির এর্লাংগেন- ন্যুরেমবর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনো করেন। ২০০০-২০০১ সালে পালেস্তিনে বিরজিট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বছরের জন্য পড়তে আসেন (সাধারণত এই ব্যবস্থা কে অ্যাব্রড স্টাডিজ ইয়ার হিসেবে পরিগনিত করা হয়)। ... ...
এরপরে কৃষ্ণ যখন তার বন্ধুদের সাথে চায়ের দোকানে বা এমনি কথা বলছে, সেই ভাষ্যও খুব কনভিন্সিং – কেমন অবলীলায় তথাকথিত বাংলা স্ল্যাঙ ব্যবহার হচ্ছে, ঠিক এমনটা করেই তো আমরাও কথা বলেছি বা বলি! এতো আমাদের নিজেদেরই গল্প - নড়েচড়ে বসি! তারপর চাকুরীর ট্রান্সফার নিয়ে টাকা-পয়সা খাবার ব্যাপারটা গল্পে দেখা দিয়ে যায় – ওদিকে দেখি প্রাইভেট মাষ্টার-দের সাথে কেমন ব্যবহার করা হয়। এ সবই জীবনের বড় কাছাকাছি, বাস্তবেরও – ব্যাকগ্রাউন্ডে প্যানপ্যানে চেনা মেলোড্রামাটিক মিউজিক বা হিন্দী গান বাজে না। বরং শুরু হয় কীর্তন – সাত্যকির গলায়। এ জিনিস আগে দেখি নি, শুনি নি বাংলা সিরিজ বা সিরিয়ালে গানের এমন প্রয়োগও - প্রত্যাশা বাড়তে থাকে। ... ...
রাশিয়াতে তখন বাস করেন ছ লক্ষের বেশি ইহুদি। ইজরায়েল চাইল তাঁদেরও আপন দেশে ফেরাতে। রাশিয়ান সরকার জানালেন কোন ইহুদি যদি স্বেচ্ছায় এই সাম্যবাদী সমাজ ত্যাগ করে ইজরায়েলে যেতে চান, সোভিয়েত ইউনিয়ন সে আবেদন অবশ্যই সযত্নে বিবেচনা করবে। তবে তাদের ভরন পোষণ বাবদ যে ব্যয় সোভিয়েত ইউনিয়ন এযাবৎ বহন করেছে তার একটা অংশ বিদেশি মুদ্রায় দিলে এই নির্গমনের অনুমতি সহজলভ্য হতে পারে। কৃষক শ্রমিকের স্বর্গরাজ্য থেকে বিদায় নেওয়ার মাথা পিছু দক্ষিণা কি ভাবে নির্ণীত হত তা জানা শক্ত। ... ...
এমিল সিওরান আয়রন গার্ডকে সমর্থন করেছিলেন বলে তোমার পলিটিক্যালি কারেক্ট পাছা ফেটে যাচ্ছে? ব্লাডি ইউনিভার্সিটি কালচার! এরপরে ঘূর্ণির মতো একটা প্রবল বিতর্ক শুরু হয়ে যায়; উগো টোনিকে ফ্যাসিস্ট শুয়োর বলে। উত্তরে টোনি উগোকে একটা ধাক্কা দিয়ে বলে লিবারাল পুসি এবং উগোর যৌনাঙ্গ সম্পর্কে সন্দেহপ্রকাশ করে। উগো টোনির চোয়ালে একটা ঘুষি বসিয়ে দেয় এবং ওদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। বাকিসকলে ওদের থামানোর জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অনেকেই বিরক্ত হয়ে বিদায় নেয়; এরপরে পার্টি ভেঙে যায়। সেইরাতে মনজা থেকে মিলানে ফেরার সময় শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখ টোনিকে লক্ষ্য করছিলেন। গাড়ির ব্যাকসীটে জানলার ধারে চুপচাপ বসেছিল সে। মিলানে ঢোকার কিছুটা আগে হাইওয়ের ধারে গাড়িটা পেট্রোল পাম্পে দাঁড়িয়েছিল এবং সবাই গাড়ি থেকে নেমে এদিকওদিক ঘোরাফেরা করছিল। দূরে অন্ধকার রাতের প্রেক্ষাপটে মিলান শহরের আলোকোজ্জ্বল সিটিস্কেপ। টোনি সান্তোরো সেদিকে তাকিয়ে দ্রুত একটা সিগারেট টানছিল। হঠাৎ সে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখের দিকে ফিরে বলল, ওরা আমাকে ইউরোসেন্ট্রিক বলে। ... ...
এখন ঋত্বিককে সমকাল আপন করে নেয়নি, সে নেয়নি যেমন ভ্যান গঘকে নেয়নি, কাফকাকে নেয়নি, নেয়নি রবীন্দ্রকুমার দাশগুপ্তকে। তবে ঋত্বিকের ক্ষেত্রে এই প্রত্যাখ্যান যতটা না মানুষের তার চেয়ে বেশি সিস্টেমের, সমান্তরাল ছবি কিংবা বাম রাজনীতি শুধু নয়, অতিবাম কিংবা নিতান্ত সাধারণ গণসংগঠন কেউই তাঁকে বুঝে উঠতে পারল না। তবে যে বাম রাজনীতি ৫০ এর দশকের উদ্বাস্তু আন্দোলনের আয়নায় নিজেদের সাংগঠনিক ভিত্তিকে নতুনভাবে আবিষ্কার করল, তারা ঋত্বিক নামক এই ধারালো ছুরিটিকে কেন যে হাতে তুলে নিল না তা ভেবে আমার ধন্দ লাগে বৈকি। যদিও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বা সাদান হোসেন মানটোর মতন ঋত্বিকও কোন প্রতিষ্ঠানের বক্ষলগ্ন হতে পারেন না, কারণ ইতিহাসের কাছে তাঁদের পরিচিতি তাঁরা গণশিল্পী, মানুষের শিল্পী, সত্যের ও সময়ের রূপকার। সেই কারণেই কোমল গান্ধার চলচ্চিত্র না হয়ে হয়ে ওঠে কালের এক প্রবন্ধ। কুমারসম্ভবের অনুষঙ্গে ঋত্বিক যেন লিখতে বসেছিলেন তাঁর সমকাল, গণনাট্যের বিরোধ, দুই বাংলার বিরহ আর আমাদের শকুন্তলার আর্ত চোখে আনতে চেয়েছিলেন বন্ধনমুক্তির আকুল আবেদন। সুবর্ণরেখার অন্তিম হৃদস্পন্দন যেমন আমাদের লজ্জায় অবনত করে রাখে, আমাদের প্রজন্মকে উপহাস করে এই বলে যে দেশভাগ দ্যাখে নাই, দাঙ্গা দেখে নাই, মন্বন্তর দেখে নাই! ছুঁড়ে ফেলে দেয় ইউরি গ্যাগারিনের মহাকাশ যাত্রাকে আগুনের কোলে, উত্তর আধুনিকদের সাথে কোন রকম বাদানুবাদে টেবিল গরম না করেই। যেমন নিম্নবর্গীয় ইতিহাস চর্চার সুযোগ না পেয়েই তিনি লিখে ফেলেন দলিতের ভাষ্য যেখানে রাম জননী কৌশল্যা হয়ে ওঠেন এদেশের অন্ত্যজ জাতের এক রাণী, শ্রী রাম হয়ে ওঠেন বাগদি সন্তান তেমনি আবার কোমল গান্ধার তুলনামূলক নিকট কালের এক পর্যায় থেকে কিছু টুকরো শট সোজাসুজি আমাদের দিকে ছুঁড়ে মারে। ... ...
বার্নিয়ের খুব স্পষ্ট করে লিখেছেন, যে সতীদাহের সংখ্যা মুঘল রাজত্বে কমে এলেও, 'রাজা'-শাসিত এলাকাগুলিতে এর সংখ্যা ছিল উল্লেখযোগ্যরকম বেশি (the number of self-immolations is still very considerable, particularly in the territories of the Rajas, where no Mahometan governors are appointed)। বাংলা ছিল মুঘল সুবার অংশ। ফলে বাংলায় যৌক্তিকভাবে সতীদাহের সংখ্যা কম হওয়াই স্বাভাবিক। অবশ্য এই কম-বেশির কোনো আঞ্চলিক চরিত্রও থাকতে পারে। এই দুই ইউরোপিয়ানের বর্ণনায় অবশ্য সেরকম কিছু ইঙ্গিত না পাওয়া গেলেও মুঘল-শাসিত এলাকায় সতীদাহের সংখ্যা কম ছিল কেন, এ বিষয়ে তাঁরা একবাক্যে একটি কারণ লিখেছেন। মুঘল এবং মুসলমান রাজত্বে রাজ্যশাসক (সম্ভবত সুবাদার বা ফৌজদার)এর অনুমতি ব্যতিরেকে কোনো সতীদাহ হতনা। তাঁরা প্রথমে যাচাই করতেন, মেয়েটি সম্পূর্ণ স্ব-ইচ্ছায় মরতে চায় কিনা। তাকে সুবেদারের কাছে সশরীরে অনুমতি চাইতে আসতে হত। তারপরেও তাকে বিরত করার চেষ্টা হত নানা উপায়ে (বুঝিয়ে, ভয় দেখিয়ে)। তারপরও কাজ না হলে তবেই অনুমতির প্রশ্ন। তাতেও, মেয়েটি নিজে নাবালিকা হলে, বা তার নাবালক সন্তান থাকলে অনুমতি দেবার চল ছিলনা। ফলে জোর করে ধরে জ্বালিয়ে দেবার প্রশ্ন মুঘল রাজত্বে একেবারে ছিলনা বললেই চলে। যেটুকু হত, তা অত্যন্ত সুদৃঢ় স্ব-ইচ্ছা ছাড়া সম্ভব ছিলনা। কয়েকটি ক্ষেত্রে, বার্নিয়েরের বর্ণনায় পাওয়া যায়, উত্তর এবং পশ্চিম ভারতে, আগুন জ্বলে যাবার পর মনের জোর হারিয়ে বা যন্ত্রণায় কোনো মহিলা চিতা থেকে নেমে পড়তে চেয়েছেন, সেক্ষেত্রে বাঁশে করে তাঁকে চেপে রাখা হয়েছে। অন্য কয়েকটি বর্ণনায় মহিলারা নিজের হাতে অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আগুন জ্বালাচ্ছেন। যেটাই হোক, সজ্ঞান সম্মতি ছাড়া কোনো নারীর জ্যান্ত অবস্থায় চিতায় ওঠা মুঘল শাসনে কার্যত অসম্ভব ছিল। ... ...
এক যে ছিলো মফঃস্বল। নাম তার ফুলকুমারী। এক ছোট্টো নদীর ধারে। চায়ের দোকান, বেকার ছেলে পুলে আর তাদের খিস্তিখামারীর খুনসুটি। যেমনটা হয় আর কি। বিরহী-ও একটা গ্রামের নাম। বাংলার গ্রাম। অনেক পথ পেরিয়ে, ধূ ধূ রাস্তা এসে শেষ হয় এক নদীতে। সে নদী পেরিয়ে আবারও তেপান্তর পার করে তবে গ্রাম বিরহী। আর তার টাঁড় জমির মাঝে এত্তোটুকুন বিরহী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই অবধি পড়ে একটা ছবি ভাবুন। দেখবেন নদীর ধারে গাছ গাছালিতে ভরা সবুজ ক্ষেতের মাঝে ভেসে থাকা মাটির ঘর জেগে উঠবে চেতনে আর সোঁদা মাটির গন্ধ পেতে থাকবেন। ... ...
গামছা-সুকানকে চিনতে হলে আপনি হাওড়া থেকে বর্ধমানের মেন লাইনের লোকালে চেপে বসুন। মেমারির গায়ে গায়ে একটি ছোট স্টেশন নিমো। আগে ছিল দুটো লাইন – আপ-ডাউন প্ল্যাটফর্ম, ইদানীং মাঝে একটা তিন নম্বর শুরু হয়ে লোকের ভোগান্তি বেড়েছে। কারণ, পুরুষানুক্রমে যে স্টেশন মাস্টারের দায়িত্ব সামলায়, সে হরদম অন্যমনস্ক হয়ে ভুল প্ল্যাটফর্মের ঘোষণা করে। আর শেষ মুহুর্তে তার কোর্স-কারেকশনের পাল্লায় পড়ে বুড়োবুড়ি-মেয়েমদ্দ সবার হেনস্থা, দৌড়োদৌড়ি। তাই দৌড়তে দৌড়তে বাউরি বউ চেঁচিয়ে ঘোষণা করে – এবার গোপালকে ক্যাল দিতে হবে। নিমো গ্রামের গল্প - পড়লেন রঞ্জন রায়। ... ...
জাঞ্জিবার এমন একটা জায়গা যেখানে যারা দাস ছিল তারা নিজেরাই দাসব্যবস্থাকে সমর্থন করত, ‘প্যারাডাইস’ উপন্যাসের এক চরিত্র এরকমটাই বলছে। এই দ্বীপপুঞ্জে ভারত মহাসাগরের নীল নোনা জল খেলা করে যার মধ্যে অবস্থিত প্রাচীন, ভগ্নপ্রায় বহু বন্দর যেখানকার নোঙর করা ভাসমান যানগুলি থেকে এখনো শোনা যায় শৃঙ্খলিত দাসদের মর্মান্তিক আর্তনাদ, হাহাকার। এটি তানজানিয়ার অধীনে একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল যা ২০২১ সালে সাহিত্যে নোবেল প্রাপ্ত আব্দুলরাজাক গুর্নাহর কল্পনার আঁতুড়ঘর। ... ...
রোহার অফিস ঘরের অর্ধেকটা জুড়েই ট্রোফি ক্যাবিনেট। বছর ষাটের ভদ্রমহিলা। গোলগাল, সাদা ফুরফুরে চুল। দেখে মনে হয় মিষ্টি দিদিমাটি। কিন্তু বাপ রে কী মেজাজ তাঁর! আর কথার ধার! কিন্তু ওঁর কাছেই আমাদের মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হবে। উনি আমাদের শপ-লিফটিং এর ঘাঁতঘোঁত শেখাবেন। ... ...
বাস্তবে, হিন্দু ধর্মের মন্দির, পূজামণ্ডপ, বাসাবাড়ি, দোকানপাট ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে হামলার জন্য জুমার নামাজের যে মিছিলগুলো বের হয়েছিল, মসজিদে-মাদ্রাসায় মাইকিং করে ধর্মানুভূতিতে আঘাতপ্রাপ্ত, জেহাদি জোশে যারা ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর!’ ধ্বনিতে বিধর্মী-কাফেরদের ওপর হামলা করেছিলেন, ভাঙচুর, লুঠপাঠ ও অগ্নিসংযোগ করে বদলা নিতে মরিয়া ছিলেন, তাদের কোনো দল ছিল না, ওই জেহাদি মিছিলে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামাত, কমিউনিস্ট পার্টি – সব মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল, মিছিলকারীদের একটিই পরিচয় তখন যেন প্রধান, ‘আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান!’ ... ...
বেগুন ভাজার গন্ধে ঘরের পরিবেশ সহজ হয়ে আসছিল। টিউব লাইটের আলো ঘরময়, বারান্দার আলোর নিচে টবের ক্যাকটাস; কুন্তী, গুলগুলে সোফায় গোল্লা পাকিয়ে ঘুমোচ্ছিল, পুরোনো সব ছবির আড়াল থেকে মুখ বের করছিল গায়ে ছিট ছিট টিকটিকি- এই সব মুহূর্তগুলো অদ্ভূত- মিঠুর খিদে পাচ্ছিল আবার; মনে হচ্ছিল, যেন কিছুই ঘটে নি, যেন এ যাবৎ মৃত লোকজন বেঁচে বর্তে আছে- যেন অফিসফেরতা ট্রেন থেকে নেমে কমলালেবু, সন্দেশ কিনছে স্টেশনের কাছে, একটু পরেই বাড়ি ঢুকবে কড়া নেড়ে। বারান্দা থেকে মুখ বাড়ালেই যেন দেখা যাবে, মাণিক বেগুন বিক্রি করছে কুপি জ্বেলে। মুড়ি খাচ্ছে। মায়া জমছিল মিঠুর গলায়। ... ...
কয়েকশ বছর সুখে কাটল, তৈরি হল সলমনের মন্দির। কপালে শান্তি নেই, মন্দির ভাঙলেন নতুন রাজা, ইহুদিরা নির্বাসিত হলেন ব্যাবিলনে (আজকের ইরাক)। ঘরে ফেরার অনুমতি পেলেন আরেক সহৃদয় পারসিক রাজার কাছ থেকে। আবার গড়লেন দ্বিতীয় মন্দির। তারপরে জুডিয়াতে রোমান রাজত্ব, বিদ্রোহ। পুনর্বার বিধ্বস্ত হল মন্দির যার পশ্চিম দেয়ালটুকু এখনো দাঁড়িয়ে আছে, যার নাম ক্রন্দনের প্রাচীর (ওয়েলিং ওয়াল / ক্লাগে মাউয়ার)। জেরুসালেমে ইহুদির প্রবেশ নিষিদ্ধ। অতএব আবার পোঁটলা বাঁধো। পথে এবার নামো সাথী। ... ...
ডঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল প্রায়ই একটা কথা বলেন। তিনি বলেন, একটা দেশ কেমন তা জানতে হলে, সেই দেশের সংখ্যালঘুরা কেমন আছে তা জানতে হবে। আমাদের দেশের সংখ্যালঘুরা কেমন আছে? এখানেই লজ্জায় মুখ লুকাতে হয় সংখ্যাগুরুর। আমারা ভাল রাখতে পারিনি আমার প্রতিবেশীকে। নানা প্রতিবেদন, গবেষণা প্রমাণ করছে যে আমরা কত যত্ন করে দেশের বিশাল একটা অংশের মানুষকে স্রেফ দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছি। গবেষণা বলছে, প্রায় একটা দেশের মত জমি আমরা দখল করেছি শুধু মাত্র দেশছাড়া করেই! কত চমৎকার না ব্যাপারটা? এই যে পরিস্থিতি – তা হুট করেই তৈরি হয়েছে? আকাশ থেকে নাজিল হয়েছে গজব? সংখ্যাগুরুর পায়ের পাতা থেকে মাথার চুল পর্যন্ত নানা অনুভূতি। পোশাকে অনুভূতি, জুতাতে অনুভূতি, চোখের দৃষ্টিতে অনুভূতি। পান থেকে চুন খসলে এই সব অনুভূতি আঘাত প্রাপ্ত হয়। অন্যদিকে সংখ্যালঘুর কোন অনুভূতি নাই। পেটে নাই, রক্তে নাই, ঘরবাড়ি কোথাও কোন অনুভূতি নাই। ... ...
বিনায়ক রুকুর ছবি ও কবিতায় দীপাবলী। ... ...
ইসকান্দর কাবাব-এর নামকরণ হয় – এটা যিনি আবিষ্কার করেন, সেই শেফ ইসকান্দর এফেন্দি এর নামে – যিনি উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে অটোমান সাম্রাজ্যের বুরশা বলে একটি জায়গায় বসবাস করতেন। এই ডিশটি বানানো হয় ডোনার কাবাপ এবং গ্রিলড ল্যাম্বের টুকরো দিয়ে, যা বেছানো থাকবে গরম ট্যামেটো সসের মধ্যে, সাথে পিটা ব্রেড – এবং এই সবের উপর ছড়ানো থাকবে দই এবং কোনো কোনো সময় ভেড়ার দুধের থেকে বানানো বাটার। ... ...