শহরে আমাদের দু’কামরার বাড়িটাকে মা-বাবা বাসা বলে। হ্যাঁ তাই তো, চিলতে উঠোনের নিরিবিলি ছোট্ট এই বাড়িটা কীভাবে আমাদের বাড়ি হবে? বাইরবাড়ি নেই, দুপুরের ভাতঘুম ফাঁকি দিয়ে জেঠি ঠাকুমাদের আড্ডা নেই, আমার খেলার কোনো সঙ্গী নেই আর নেই কোনো হৈ-হুল্লোড়। তাঁতঘর থেকে তাঁতিদের গানের মত ভেসে আসা সুর দূরে থাক, এ বাড়ি ও বাড়ি থেকে একটু আধটু কারো কথার আওয়াজও পাওয়া যায় না। আর তা যাবেই বা কী করে? এখানে সব বাড়িই প্রাচীর ঘেরা যে। ... ...
- যাই বল জেঠিমা, মেয়ের বিয়েতে নিরামিষ হওয়াটা কিন্তু মেনে নেওয়া যায় না। মেয়েদের কী দোষ? - দোষ গুণের কথা নয়, এ হল এক একটা পরিবারের রীতি। - তাই বলে, মেয়ের বিয়েতে কোফতা কাটলেট, ফ্রাই, কালিয়া, পাতুরি কিচ্ছু হবে না? সব ছেলেদের হবে? - কেন হবে না? সব হবে। - কী করে হবে? বলছ তো নিরামিষ। - নিরামিষে তুই যা যা বললি – সব হয়। - অসম্ভব। - হয় রে হয়। এঁচোড়ের, মানে গাছ পাঁঠার কালিয়া হয়, ছানার পাতুরি হয়, লাউ পাতায় মশলা পোরা পাতুরি হয়, মুড়িঘণ্টের বদলে মোচার চণকান্ন, চালপটল হয়, কাঁচকলার কোফতা, থোড়ের কোফতা হয়, আর কাটলেট কত নিবি? বিটের কাটলেট, সয়াবিনের কাটলেট, পনির কাটলেট, বাঁধাকপির কাটলেট – সব হয়। মাশরুমের ফ্রাই দারুণ খেতে হয়। তাছাড়া পটলের দোরমা, ওলের ভর্তা – এসবও হয়। আমাদের দেশে নিরামিষ রেসিপি আমিষের থেকে কম কিছু নেই। ... ...
মেয়েমদ্দ বাচ্চারা পালাতে চাইছিল। ওরা মেয়েদের টেনে নিয়ে যাচ্ছিল, বাচ্চাদের আগুনে ছুঁড়ে দিচ্ছিল আর মরদদের মাথায় বাড়ি। বলতে বলতে সুরজ কাঁপছিল, গোঙাচ্ছিল। ইসমাইল ওকে জল খাওয়ায়, জিগ্যেস করে লুটেরারা কোন ধ্বনি দেয় নি? সুরজ কেমন চুপ হয়ে যায়, খুব আস্তে বলে ‘আল্লা হু আকবর’ তারপর বাতাসের স্বরে ফিসফিস করে বলে ‘আমি দেখেছি ওদের অনেকের কপালে কমলা টিকা ছিল, লিডারের হাতে প্রধান নৌকরজির ফোটু ছিল’। ইসমাইল ঝাঁকি দিয়ে সোজা হয়ে বসে সুরজের মুখ চেপে ধরে ‘চুপ চুপ। খবরদার এইসব এখানে আর কাউকে বলবি না, আমার জানও চলে যাবে। ... ...
“সেইটা বলা খুব মুশকিল, বুঝলি। এটাই হল এই বিষটার মজা। সাঙ্ঘাতিক টক্সিক এই বিষটা কোনও পরীক্ষায় চট করে ধরা পড়ে না। আর কতক্ষণে কাজ করবে সেটা নির্ভর করে কীভাবে আর কতটা প্রয়োগ করা হয়েছে তার ওপর। তবে যেহেতু কয়েক ঘণ্টা আগেও পার্টিতে ও একেবারে স্বাভাবিক ছিল, তাই অনুমান করা যেতে পারে বেশ খানিকটাই শরীরে ঢুকেছে। তবে বেশ খানিকটা মানে আবার কয়েক গ্রাম ভাবিস না যেন। একটা আলপিনের মাথায় যতটুকু ধরে ততটা রাইসিনই একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষকে মেরে ফেলতে যথেষ্ট। ওই পরিমাণ বিষ যদি ইনজেক্ট করা হয়, তবে তিন থেকে ছ’ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু হতে পারে।” ... ...
সেই কুকিং ইভেন্টের আয়োজন হয়েছিল আমস্টারডাম শহরের একপ্রান্তে, মানে মূল শহর কেন্দ্র থেকে কিছু দূরে ‘দি কুকফ্যাব্রিক’ (বাই ফার্ম কিচেন) নামে সেই কুকিং ওয়ার্কশপ। আইডিয়া বেশ সিম্পল – সব অংশগ্রহণকারী একসাথে রান্নাবান্না করবে। নিজেদের মধ্যে টিম বানিয়ে কম্পিটিশন করবে, পুরো কোর্স মিল বানিয়ে বা বেশি সময় হাতে না থাকলে এক একটা টিম ডিনার/লাঞ্চ-এর এক একটা পদ বানিয়ে। আমার যেখানে গিয়েছিলাম, কুকফ্যাব্রিক-এর সেই ওয়ার্কশপটা বেশ বড়সড় জায়গা জুড়ে আছে – প্রায় ১২০০ বর্গমিটার। বিখ্যাত ডাচ টিভি শেফ জুলিয়াস জেসপার এই মুহুর্তে জড়িয়ে আছেন এই সংস্থার সঙ্গে। তাঁর তৈরি মেনুই এখানে রান্না করা হয়। মোটমাট ১৮টি কুকিং স্টেশন আছে, আর আছে ৩টি ডেমোনস্ট্রেশন কিচেন। সব মিলিয়ে ২৭০ জন মত পাবলিক এখানে বসে খেতে পারে। আর মর্ডান কিচেনে যা যা থাকে, সবই পর্যাপ্ত সাপ্লাই দেওয়া হয় – তাই ছানা কেটে গেলে বলতে পারবেন না, যে হাতের কাছে নাড়ার কিছু ছিল না বলে এমন হল! ... ...
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমি দেখেছি। আমি নিজেই বিস্মিত হই, আমাদের গদ্য সাহিত্যের তিন স্তম্ভ, তিন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্য দু'জনকে আমি দেখিনি, তারাশঙ্করকে আমি দেখেছি। দেখাটা আশ্চর্য ব্যাপার মনে হয়। ঈশ্বরকে দেখা যায়, সৃষ্টিকর্তাকে? বড় লেখক তাে সৃষ্টিকর্তা। তিনি চারপাশের বাস্তবতা থেকে নানা উপাদান সংগ্রহ করে নিজের মতাে করে একটি জগৎ নির্মাণ করেন। যা দেখেছেন লেখক তা দিয়ে তাঁর পৃথিবী নির্মাণ করেন, তার ভিতরে আমাদের না দেখা এক পৃথিবী গড়ে ওঠে। বড় লেখক, বড় শিল্পী তা করেন। বাস্তবতা আর কল্পনা মিলে মিশে যায় সেখানে। সীমাহীন কল্পনাই তাে এই ব্রহ্মান্ডের সৃষ্টিসূত্রে নিয়ে গেছে। ... ...
২২ জুন, দ্রৌপদী মুর্মুর এনডিএ-র রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হওয়ার খবর আসে। তার ঠিক ১০ দিন পরে, মধ্যপ্রদেশের গুনা জেলা থেকে খবর এলো যে সাহারিয়া উপজাতি সম্প্রদায়ের ৩৮ বছর বয়সি এক মহিলা, রামপ্যারিকে, জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। তাঁর পরিবারকে মধ্যপ্রদেশ সরকারের তরফ থেকে ৬ বিঘা জমি দেয়া হয়েছিল। ওঁর সঙ্গে কাগজপত্রও ছিল। কিন্তু জমি দখল করে বসেছিল আদিবাসী নন এমন সমাজের মানুষেরা। জবরদখল করার পরে তারা আবার সেখানে কৃষিকাজও করছিল। উপরন্তু, রামপ্যারির পরিবারকে হুমকিও দিচ্ছিল ওরা। এই ঘটনার ঠিক এক সপ্তা আগে, রামপ্যারি ও তাঁর স্বামী অর্জুন, পুলিশকে এই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জানায় এবং তাঁদের কাছে সুরক্ষাও চায়। কিন্তু, কিছুই করা হয়নি। রামপ্যারি যখন মাঠে গিয়ে আপত্তি জানান, তখন তারা সেখানেই ওঁর গায়ে ডিজেল ছিটিয়ে ওঁকে জ্যান্ত জ্বালিয়ে দেয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘটনার ভিডিও-ও পাওয়া যায়। এইবারে আমি ভাবতে বসলাম, যদি দ্রৌপদী মুর্মু রাষ্ট্রপতি হন তাহলে কি রামপ্যারি ও তাঁর পরিবার ন্যায় বিচার পাবেন? ... ...
ধরা যাক সময়টা একশ বছর আগের। তার চেয়ে বিশ কি ত্রিশ বছর কমিয়েও দেওয়া যেতে পারে। সেই সময় রাঢ় বাংলার প্রান্তিক গ্রাম লাভপুর আকার আয়তনে ছোট হলেও বৈচিত্র্যে ভরপুর ছিল। গ্রামের সীমানা বেয়ে চলে গিয়েছে রেললাইন। কাছাকাছি জংশন স্টেশন আমোদপুরের সঙ্গে লাভপুরের যোগাযোগ ছোট লাইনের মাধ্যমে। জংশন থেকে বড় লাইন জুড়েছে বৃহত্তর দুনিয়ায়। ছোট লালরঙের আপিস ঘর শোভিত স্টেশনটাই যেন বহির্বিশ্বের সঙ্গে লাভপুরের যোগাযোগের সিংহদুয়ার। তারই মাধ্যমে বাইরের আলো-বাতাস অথবা নিত্যনতুন খবরের ঢেউ এসে পৌঁছয় এই পল্লী অঞ্চলে। স্টেশনকে কেন্দ্রে রেখে একদল মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে। ... ...
বেসরকারি স্কুলের সঙ্গে সরকারি স্কুলের তুলনামূলক আলোচনা না করে আপাতত পশ্চিমবঙ্গের সরকারি স্কুলের বিভিন্ন স্তরের সমস্যা, তার অন্ধকার ও আলোকিত দিকগুলি নিয়ে আলোচনা করলেই বোঝা যাবে এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থার চিত্রটা কেমন। ... ...
অন্য সবাই বসার ঘরে গল্পে ব্যস্ত, তিনি এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে খিড়কির দরজার দিকে গিয়ে দেখেন বেশ কজন অঙ্গনওয়াড়ি মহিলাকর্মী বসে হাপুস নয়নে কাঁদছেন। জানা গেল দুইমাস ভাতা পান নি, উপরন্তু আজকের খাওয়া দাওয়া হয়েছে তাঁদেরই থেকে সংগ্রহ করা চাঁদার টাকায়। লজ্জায় দুঃখে কোনমতে নিজের ব্যাগে যেটুকু যা টাকা ছিল বের করে ভাগ করে দেন ওঁদের মধ্যে। পরবর্তীতে অবসর নেওয়া পর্যন্ত আতিথেয়তার ভার নিজেই বহন করেছেন, আর কখনো চাঁদা সংগ্রহ করতে দেন নি মিটিঙের নামে। সেই আই এ এস অফিসার, প্রখ্যাত লেখক ও দক্ষ প্রশাসক অনিতা অগ্নিহোত্রী, পড়ছিলাম তাঁর কর্মজীবনের স্মৃতিকথা ‘রোদ বাতাসের পথ’। ... ...
২২ জুলাই কলকাতা প্রেস ক্লাবের ইতিহাসে এক কলঙ্কের দিন। কলকাতার সাংবাদিকদের এক লজ্জার দিন। যাঁদের তোলা ছবি এক একটি ছবি সহস্র বাক্যের সমান, তাঁরা নাকি ‘সাংবাদিক’ নন। হয়তো আরও কিছু সদস্য বৃষ্টি, ব্যস্ততা ঠেলে ভোট দিতে এলে অন্য রকম হত ফলটা। সে আক্ষেপ বারবার ঠেলা দিচ্ছে চিন্তাকে। কিন্তু কলকাতার শতাধিক সাংবাদিক যে মনে করেন, চিত্রসাংবাদিকরা সাংবাদিক নন, সে কথাটা ছুরির মত বিঁধছে। তবে কি ছোঁয়ান্যাপার ভয়ের মত, ক্রমাগত আমরা অন্যকে ছোট করে নিজেকে শুদ্ধ, ভদ্র, সম্মানযোগ্য রাখার চেষ্টা করতে করতে কাণ্ডজ্ঞানকেও ফিনাইল-জলে ধুয়ে ঝেঁটিয়ে বের করে দিয়েছি? ভুলে যাচ্ছি, যোগ্যকে মর্যাদা দিতে না জানার মত অযোগ্যতা আর কিছুতে নেই? ... ...
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মুরমানসকের ভূমিকা বিশাল। জার্মানদের রাশিয়া আক্রমণের পর এই বন্দর দিয়েই মিত্র শক্তি সাহায্য পাঠাতে থাকেন। লেনিনগ্রাদ ও স্টালিনগ্রাদের মত মুরমানসক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য একটি হিরো সিটি বা বীর শহর নামে পরিচিত। শহরের প্রায় চুড়োয় একটি বিশাল মূর্তি আছে, তার নাম আলইশা। সেটি সেই সংগ্রামের স্মারক। নিচের কোলা উপসাগরে বরফ ভেঙে সমুদ্রপথ পরিষ্কার করার প্রথম আণবিক শক্তি চালিত জাহাজ “লেনিন” বন্দরে নোঙর করা আছে। প্রায় চল্লিশ বছর ধরে অনেক বরফের দেয়াল খনন করে ১৯৮৯ সালে লেনিন এখানে বিশ্রান্তি গ্রহণ করেছে। এতটা উত্তরে এলে সারা দুনিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন মনে হয়! সেটি হয়তো সঠিক নয়। আলইশা স্ট্যাচুর পদতলে দাঁড়িয়ে কল্পনাকে হাওয়ায় উড়িয়ে দিলে মনে মনে হয়তো অনেক দূরে চলে যাওয়া যায় – এই তো সামনে কোলা উপসাগর, সেটি গিয়ে মিশেছে বারেনট সাগরে। সেখান থেকে একটু বাঁয়ে ঘুরলেই কানাডার সমুদ্রপথ। বছরে অন্তত পাঁচ মাস খোলা থাকে। এর নাম সুমেরু সেতু। মালবাহী জাহাজ যেতে পারে চার হাজার কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত ম্যানিটোবার চার্চিল বন্দরে। আর খাড়া উত্তরে গেলে মাত্র দেড় হাজার কিলোমিটার দূরত্বে উত্তর মেরু। পা আরেকটু বাড়ালেই তো খাঁটি উত্তর বা ট্রু নর্থ! ... ...
চটের সিনেমা হলে রিল ঘোরার একটা আওয়াজ হতো। মাঝে মাঝে কেটে যেত। সামনে দিয়ে কেউ হেঁটে গেলে পর্দায় তার ছবি দেখা যেত। লোকে হাঁই হাঁই করে উঠতো। ছেলেমেয়েদের বসার জায়গা ছিল আলাদা। একসঙ্গে বসতে দিত না। লোকে চোঙা ফুঁকতে আসতো, মহিলাদের বসিবার ও সাইকেল রাখিবার সুবন্দোবস্ত আছে। আপনারা সবাই যাবে। যাবে। যাবেন নয়। টেনে টেনে সুর করে বলতো। আর রঙিন কাগজের লিফলেট ছড়াতো। আমরা বাচ্চারা সেই সাইকেলের পিছন পিছন ছুটতাম। আর পরে নকল করে বলতাম, আপনারা স বা ই যা বে এ এ এ। বাড়ি বাড়ি এসে সিজন টিকিট বেচে যেতেন চেনা উদ্যোক্তারা। গোলাপি ও সাদা রঙের কার্ড হতো। তলায় দিনের খোপকাটা থাকত। গেটে কেটে নিয়ে ঢুকতে দিত। বিদ্যুৎ নয় ডায়নামো বা জেনারেটরের সাহায্যে সিনেমা চলত। একদিকে সিনেমার রিল চলার আওয়াজ অন্যদিকে জেনারেটরের আওয়াজ। ঘ্যারঘ্যার। তাতে কী, কেঁদে ভাসিয়ে দিতাম নায়ক নায়িকার দুঃখে। ... ...
কুঁদলি/কুঁদরি/তলি, নোনা এইসব ছিল প্রান্তিক মানুষ, কুড়ানিদের খাবার। এখানে ওখানে যারা অস্থায়ী সংসার পেতে থাকত। কয়েকজন বা একা। চট বা মাদুরে জড়ান সংসার পাতত, মাটির ছোট উনুন তুলে কদিন রেঁধে বেড়ে খেত, আবার চলে যেত। হাট থেকে কুড়ানো সবজি ফল, ছাঁট। এখান ওখান থেকে সংগ্রহ করা মেটে আলু, ডুমুর, ওল, নোনা, কচু, হরেক রকম শাক, গুগলি, কাঁকড়া এসব দিয়ে তাদের খাবার তৈরি হতো। ভাতে ভাত সেদ্ধ অথবা সব মিলিয়ে একটা ঝোল। ... ...
যন্ত্রের দরকার কীসের? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার উপলক্ষ্য করেই গৌতমবাবুর বই শুরু হয়েছে। দরকারটা হল মাপজোখের। যা ছাড়া আধুনিক বিজ্ঞান এক পা-ও এগোতে পারে না। প্রাচীনকালে যুক্তি দিয়েই প্রমাণ করার চেষ্টা হত। যার যুক্তি অকাট্য মনে হত তার চিন্তাকেই মেনে নেওয়া হত সত্য বলে। আধুনিক বিজ্ঞান এসে এই ‘মনে হত’-র ব্যাপারটা সরিয়ে হাতেনাতে প্রমাণের ভূমিকা বড় করে তুলে ধরল। কিন্তু তার জন্য চাই সূক্ষ্ম মাপজোখ করার ক্ষমতা। যত গভীর, যত কঠিন প্রশ্ন, তত সূক্ষ্ম সেই প্রশ্নের পরীক্ষার মাপজোখ। তাই দূরবীন এসে যখন আকাশের মাপজোখ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়েছিল, তখনই আধুনিক বিজ্ঞান তরতর করে এগিয়ে যেতে শুরু করেছিল। ... ...
প্রতিভা কুড়ুলকে কুড়ুল বলেন। সরকার ও কর্পোরেটের মিলিজুলি আঁতাত খুলে দিতে তাঁর দ্বিধা নেই। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে উন্নয়নের নামে যে অরণ্য ধ্বংস, বন্য প্রাণ হত্যা চলছে, নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে প্রকৃতির স্বাভাবিকত্ব,তার বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন তিনি। প্রতিবছর উৎসবের সময় ভাবি, এত অতিরিক্ত আলো কেন, এত শব্দ কেন। নেহাতই কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হবে এই আতিশয্যের ফলে, সে বড় ছেলেভুলানো কথা। ... ...
জামাইসুলভ তমুকবাবু পরপর এত পোলাও কালিয়া খেয়ে একেবারে গলদঘর্ম হয়ে গেছিলেন। তিনি সকাল থেকেই মুখিয়ে আছেন নতুন কিছু খাবেন। বিলেতে থেকে স্যুপ আর সেদ্ধ মাংস, স্যালাড খেয়ে অভ্যেস হয়েছে তাঁর। এইবার রাত্রিবেলা আসনপিঁড়ি করে তাঁকে খেতে বসানো হয়েছে। বাঙালি মাত্রেই জানেন যে পান্তা কখনো ডাইনিং টেবলে বসে খাওয়া যায়না। রাজস্থানের গাঁয়েঘরে একটা রীতি আছে। ঘোর গরমের দুপুরে শুধু কাঁচা পেঁয়াজ খেতে হয়। কিন্ত সেটা খেতে হবে ক্ষেতের পাশে বসে। দুইহাতের মধ্যে পেঁয়াজ নিয়ে এমনভাবে তাকে থ্যাঁৎলাতে হবে যে শুধু পেঁয়াজ আর রুটি মনে হবে অমৃত। কিন্ত ঐ পেঁয়াজ ঘরে বসে খেলে স্বাদ নেই। অবশ্যই থ্যাঁৎলানোর মারপ্যাঁচ আছে। ওমনি পান্তা রাখার ও মাখার জন্য হাত ও মারপ্যাঁচ জানা চাই। আর ফটফটে পরিষ্কার মেঝে চাই। ... ...
কিছু অনুগামী জুটলো। দেওয়াল পত্রিকা করলাম সবাই মিলে। শহরে 'কিশোর জগৎ' পত্রিকায় লিখছি। সাহিত্য সভায় যাচ্ছি। বিশ্বনাথবাবু কবিতা পড়ে খুব উৎসাহ দেন। কবি হতে খুব ইচ্ছে। বাড়ি ফিরি সাড়ে ছয় কিলোমিটার হেঁটে দামোদর উপত্যকা নিগমের ক্যানেল বা খালের বাঁধ ধরে। সাপের ভয় আছে, এবড়োখোবড়ো রাস্তা। ভাদ্র আশ্বিন কার্তিক মাসে আকাশ রাঙিয়ে দিতো, সূর্য ডোবার আগে। আকাশ দেখা নেশা হয়ে গেল। আকাশ দেখার লোভেই সন্ধ্যায় সাপের ভয় উপেক্ষা করে ক্যানেলের বাঁধ দিয়ে একা একা ফিরতাম। দলে মিশলে মেঘ কথা বলে না। ... ...
এখন এই মাৎস্যায়নের হাত থেকে দেশকে বাঁচানোর একটাই আশা। দেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা বজায় রাখতে হলে সুপ্রীম কোর্টকে অবিলম্বে ও স্বতঃপ্রণোদিত বিচারের মাধ্যমে বুলডোজারের যথেচ্ছাচার বন্ধ করতে হবে। আদালতের অনুমতি ছাড়া কোনো ধ্বংসযজ্ঞ ঘটবে না, এমন নিয়ম করতে হবে। বিধি-বিধানকে একপাশে রেখে বাসস্থান ভাঙা কর্মকর্তা এবং নির্দেশ দেওয়া নেতাদের ব্যক্তিগতভাবে দায়ি করে শাস্তি দিতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট চাইলে জাভেদ মোহাম্মদের এই মামলাকে উদাহরণ হিসেবে গ্রহণ করাতে পারে। ... ...
আলি আকবর বলল, আমি তো কবে থেকেই বলছি খবরের কাগজে চাকরি করে আপনি আপনার প্রতিভার অপচয় করছেন। ছেড়ে দিন ওসব চাকরি, আপনার উচিত সর্বক্ষণের সাহিত্যসেবী হওয়া। নজরুল পেট চাপড়িয়ে বলল, কিন্তু মধ্যপ্রদেশ কি রাজি হবে? আফজালুল বলল, ঠিক আছে, আমি আপনাকে একটা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। আপনি যদি সাহিত্যের হোলটাইমার হন, আর আপনার যাবতীয় রচনা আমাকে দেন মোসলেম ভারত-এর জন্যে, আমি তাহলে আপনাকে প্রতি মাসে একশো টাকা দেবার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। প্রমিস! আপনার প্রতিভার তুলনায় এ-টাকাটা কিছুই নয় আমি জানি, কিন্তু আপনার মধ্যপ্রদেশ মনে হয় শান্ত থাকবে এতে। ... ...