- সাতরকম ভাজা কী কী? - যেদিন যেমন বাজারে ওঠে—চাকা চাকা গোল আলু ভাজা, লম্বা লম্বা পটল ভাজা, পাতলা করে কাটা কুমড়ো ভাজা, বোঁটা সমেত বেগুন ভাজা, চাকা করে কাঁচকলা ভাজা—এগুলো রোজই হবে, যতদিন পুজো চলবে। তার সঙ্গে ধর ডুমো করে ঢ্যাঁড়শ ভাজা বা ফুলকপি ভাজা হল – সব মিলে সাতরকম। অষ্টমীর দিন আর একটা বাড়বে—ধর কলমি শাক ভাজা হল, নবমীর দিন ধর এগুলোর সঙ্গে নারকেল ভাজা হল—এইরকম। সবসময়ে যে এই যা বললাম, সেগুলোই হবে, তা নাও হতে পারে। উচ্ছে ভাজা, গাজর, শিম বা কুঁদরি ভাজা—কতরকম হতে পারে। ভাজার কি আর শেষ আছে? বাড়িতে এতগুলো কলা গাছ, থোড় ভাজা হতেও বাধা নেই। ... ...
জাহেরা কসাই বাড়ির মেয়ে। তাঁর হাঁকডাক কম নয়, দরকারে ছুরি-চাপাতিও চালাতে পারেন। চাইলে তিনি প্রবল প্রতিরোধ করতে পারতেন, হৈচৈ করতে পারতেন, কিন্তু তিনি সেসবের কিছুই করলেন না। তাঁর সকল প্রতিরোধের শক্তি গত কয়েক মাসে একটু একটু করে নিঃশেষ হয়ে গেছে। যেদেশে নারীর পরিধেয় ব্লাউজ, পেটিকোট বা শেমিজ বিহীন শাড়ি আর পুরুষের পরিধেয় ধুতি বা লুঙ্গি—সেদেশে তাদের যৌনকর্মে লিপ্ত হতে বেশি আয়াসের দরকার হয় না, সম্পূর্ণ বিবস্ত্রও হতে হয় না। নাজির খাঁ’র ভারি দেহের নিচে নিষ্পেষিত হতে হতে জাহেরা ভাবলেন, উদয়াস্ত পরিশ্রম করলে তাঁদের তিন জনের দু’বেলার খাবার হয়তো জোটানো যাবে, কিন্তু সবার নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বাড়তি কিছু মূল্য দিতে হবে। বাইরের দুনিয়ায় শেয়াল শকুনের খাবার হবার চেয়ে এটা হয়তো মন্দের ভালো হল। ... ...
আলী যখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে তখন সে প্রথম বারের মতো কলকাতা যায়। সেবার হুগলী নদীর উপর বিশাল লোহার ব্রীজ হয়েছে। আজব সে ব্রীজ! তার তলায় থাম নেই, উপর দিয়ে বাস-ট্রাম-ট্যাক্সি চলে, লোকে পায়ে হেঁটে যায়, আর নিচ দিয়ে লঞ্চ-স্টীমার যায়। আলীদের বাড়ির সবাই গোটা ব্রীজ হেঁটে হেঁটে পার হয়। ওপাড়ে গিয়ে আরও হেঁটে ময়দান, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, হাইকোর্ট সব ঘুরে দেখেছিলো। নিউ এম্পায়ার থিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে দেয়ালের ছবি দেখেছিলো। মামীদের খুব ইচ্ছে ছিল থিয়েটার দেখার, কিন্তু এতগুলো মানুষের টিকিট কেনা সম্ভব ছিলো না। এই দিন আলী জীবনে প্রথম বারের মতো দোকানে বসে কাবাব-রুটি আর কুলফি খেয়েছিলো। অমন খুশবুদার আর মাখনের মতো মোলায়েম কুলফি আলী আর কোনদিন খায়নি। দোকানে আরেকটা খাবার দেখেছিল, তার নাম ‘ফালুদা’। নানা রকমের ফল, বাদাম, সিরাপ, ক্ষীর, বরফ দিয়ে বানানো। কি লোভনীয় দেখতে, আর কি তার খুশবাই! ... ...
কাগজখানা হাতে নিয়েই কাজি বলে, এ কী! প্রথমেই তো বানান ভুল। কেন, কোন্ বানানটা? এই যে, কাঠবেড়ালী। ঠিকই তো আছে; ক-য় আ-কারে কা আর ঠ কাঠ, ব-য় এ-কারে বে র-য় আ-কারে রা আর ল-য় দীর্ঘ ঈ, লী। কাঠবেরালী। আরে, এ তো বাঙালদের বানান হল, ভুল। তুমি কি তাহলে ইংরাজি বানান চাও? ইংরাজি নয়, ইংরিজি। কিন্তু সেটাই বা চাইব কেন? বিশুদ্ধ বাংলা বানান, কাঠবেড়ালী। ব-য়ে শূন্য র নয়, ড-য়ে শূন্য ড়-য়ে আ-কার, ড়া। বেড়ালী, কাঠবেড়ালী। ... ...
চিররহস্যের আড়াল থেকে মনকে অনাবৃত করার প্রচেষ্টা দার্শনিকেরা করেই চলেছেন। গত পঞ্চাশ বছরে কম্পিউটার ও স্নায়ু বিজ্ঞানের অগ্রগতি মনোদর্শনের চর্চাকে যে ভাবে উজ্জীবিত করেছে, তার অভিঘাত বাংলা প্রকাশনার জগতে সে ভাবে পড়েনি বললেই চলে। বহু বিচিত্রপথে বিশ্বের জ্ঞানচর্চার জগতে প্রায় সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া আলাপ-আলোচনার সঙ্গে বাংলাভাষার আগ্রহী পাঠকদের পরিচয় হবে এই গ্রন্থটির মাধ্যমে। অমিতাদেবী ভূমিকাতেই রবীন্দ্রনাথ থেকে ডেনেটের উক্তি তুলে ধরে দেখিয়েছেন, তাঁর উদ্দেশ্য মনোদর্শনের সরটুকু কল্পগল্পে ফুটিয়ে তোলা। প্রশ্ন ওঠে, গল্পের আগে কল্প কেন? এখানেও লেখক রবীন্দ্রনাথের শরণ নেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘গল্পমাত্রেই কি কল্পলোকের অধিবাসী নয়? ক্বচিৎ কখনও গল্প যদি সত্য হওয়ার দাবি রাখে, তবে অধিকাংশ গল্পই কেবল সত্য নয়, ‘আরও-সত্যি’।’’ ... ...
প্রাথমিক ভাবে বিভিন্ন বোর্ডের বাংলা সিলেবাসের নির্মিতি অংশ নিয়েই আমার মনে এমন প্রশ্ন জাগে। ধরা যাক, সমার্থক শব্দ পড়াতে গিয়ে জলের প্রতিশব্দ শিখিয়েছি- অপ, সলিল,অম্বু, উদক, তোয়, পয়ঃ, নীর, পানি, ইলা ইত্যাদি। বা কন্যা শব্দের প্রতিশব্দ শেখাতে হয়েছে তনয়া, দুহিতা, আত্মজা, নন্দিনী, মেয়ে, দারিকা, ইত্যাদি। বা পৃথিবীর প্রতিশব্দ শেখাতে গিয়ে শিখিয়েছি- ধরা, ধরণী, বসুধা, ভূ, ধরিত্রী, মেদিনী, ক্ষিতি, জগত ইত্যাদি। এত সমার্থক শব্দ মুখস্থ করিয়ে পড়ুয়াদের লাভ কী! কিন্তু আমরা যারা পড়াই তাদের শেখাতেই হবে। অন্ধের মতো মুখস্থ করা ছাড়া ছোটোদের কাছেও কোন উপায় থাকে না! ... ...
কোনো এক সুপ্রভাতে হয়তো মন ভালো ছিল, তাই প্রকৃতি কাজাখকে দিলেন ইউরেনিয়াম, তামা, শিসে, ক্রোমিয়াম, দস্তা, লোহা, হীরে এবং অগাধ খনিজ তেলের ভাঁড়ার। কিন্তু এই আশ্চর্য ধন সম্পদ খুঁজে দেখেননি, তার পরোয়া করেননি যাযাবর জনতা। সে অমৃত পড়ে রইল আসা যাওয়ার পথের ধারে। এ দেশের মানুষ স্থায়ী ভাবে বাস করতেন না কোথাও। মোঙ্গল রক্ত শরীরে আর মন উড়ু উড়ু। যাযাবরের মত আসা যাওয়া—আজ এখানে, কাল ওখানে। দেশটা এত বড়ো, যে, চরৈবেতি বলে চরে খাওয়ার কোনো অসুবিধে ছিল না। দীর্ঘ জনযাত্রায় তাঁদের চোখে পড়েছে দেশের বিস্তৃত প্রান্তরে একটি ক্ষিপ্র গতির প্রাণী এখানে ওখানে দৌড়ে বেড়ায়। হেঁটে ক্লান্ত যাযাবরেরা হঠাৎ কোনো এক সময়ে তার ওপর চড়ে বসলেন। সে প্রাণী খুব একটা প্রতিবাদ হয়তো করেনি, করলেও তার কথা লিখে রাখবার মতন ট্রাভেল রাইটার জোটেনি। ... ...
পালো একটা কন্দ জাতীয় ছোট গাছ, হলুদ গাছের মত দেখতে, পাতাটা হলুদের থেকে সামান্য মোটা। তার থেকে লম্বাটে গোল একধরণের কন্দ বেরোয়। ঐ কন্দ তুলে কুচি কুচি করে কেটে জলে চটকে তার ক্বাথটা বের করে নেওয়া হয়। অনেকটা নারকেল থেকে দুধ বার করার মতন। তারপর ঐ জলটা রেখে দেওয়া হয়। ধীরে ধীরে সাদা একধরণের পদার্থ মানে পালোর শ্বেতসারটা নিচে থিতিয়ে পড়ে। তারপর রোদে শুকিয়ে নেওয়া হয়। মাটি ফুটিফাটা হলে যেমন দেখতে লাগে, সেই আকারে ঐ সাদা অধঃক্ষেপটা অসমঞ্জস টুকরোতে ভেঙ্গে যায়। কেউ আবার ঐজলে একটু এলাচ বা অন্য কোন মশলা মিশিয়ে দেয়। তাতে একটা সুন্দর ফ্লেভার চলে আসে। এবারে ঐ টুকরোগুলো বয়ামে ভরে রাখা হয়। জলে মিশিয়ে এর শরবত আমার ভীষণ প্রিয়। আর পৈটিক গোলমালে একেবারে ঘরোয়া অব্যর্থ টোটকা। পুজোয় অবশ্য এটা সুজির মত রান্না করা হয়, কাচের অস্বচ্ছ ক্রিস্টালের মত দেখতে লাগে। ... ...
মস্ত একটা ঠান্ডা সোনার থালার মতো কোজাগরী পূর্ণিমার চাঁদ উঠল। তার আলো এসে পড়ল আমাদের পুব দুয়ারী ঘরের নিকোনো দাওয়ায়। গা শিরশিরে ঠান্ডা ভাব বাতাসে। দূর থেকে ঢাকের আওয়াজ ভেসে আসছে। মা জ্যেঠিমা পুজোর জোগাড় করে বামুন ঠাকুরের অপেক্ষায়। ঢাকি একবার বাজিয়ে দিয়েই চলে যাবে। পুরুত এসে দু-চারটে মন্ত্র বলে একটু ঘণ্টা নেড়েই পুজো শেষ করবেন। আজ বেশি সময় দেবার মতো সময় নেই। সবার বাড়িতেই পুজো। ঠাকুরকে চিঁড়ে নারকেল মন্ডা ইত্যাদি নিবেদন করে গেলেই আমরা প্রসাদ পাব। ... ...
বাংলা ১৩৪৬ সনে ভারত যখন মহাযুদ্ধে জড়াল, তখন থেকে একটু একটু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আক্রা হতে শুরু করল। ‘জাপানিরা বর্ম্মাতে এসে গেছে, দু’দিন পরে কলকাতায় চলে আসবে’। ‘জাপানি বিমান দুমদাম বোমা ফেলে সব শেষ করে দিচ্ছে’। এমনসব কথা যত বাড়তে থাকল, বাজার থেকে চাল-ডাল ততই উধাও হতে থাকল। বর্ম্মা থেকে আসা গরিবের খাবার ‘পেগু চাল’ একেবারেই মিলল না। মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘায়ের মত ১৩৪৯ সনের আশ্বিন মাসের ঘূর্ণিঝড়ে বাংলার দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো তছনছ হয়ে গেল। ঘুর্ণিঝড়ের পরে ধানের রোগবালাই আর পোকার আক্রমণ বেড়ে আমন ধান মার খেয়ে গেল। সে আমলে বোরো নয়, আমনই মূল ফসল ছিল। ফৌজি লোকজন বড় বড় নৌকা পুড়িয়ে দিতে আর গরুর গাড়ি ভেঙে দিতে থাকলে গাঁ থেকে ধানের চালান আর শহরে বা অন্যত্র যেতে পারল না। ১৩৪৮ সনের শীতকালে মোটা চালের দাম ছিল সাড়ে পাঁচ টাকা ছ’টাকা মণ, সেই চালের দাম এক বছরের মাথায় ১৩৪৯ সনের চৈত্র মাসে গিয়ে দাঁড়ায় ১৫ টাকা মণ দরে। ... ...
মিষ্টিমহলের আনাচাকানাচে ঘোরাঘুরিতে একটা জিনিস মনে হয়েছে। প্রাচীন বাংলায় মিষ্টি বা মিষ্টান্নের প্রধান উপকরণ ছিল তিনটি। গুড়, দুধ আর ধান। গুড়ের সঙ্গেই ছিল শর্করা। মানে চিনি। এই চিনি কিন্তু এখনকার চিনির মতো নয়। তৈরি করাও বেশ শ্রমসাধ্য ছিল। দানা যুক্ত সার গুড় পাত্রে রেখে তার উপরে পাটা শ্যাওলা চাপা দেওয়া হত। সাত-আট দিনের মধ্যে চাপা দেওয়া গুড়ের উপরিভাগের কিছুটা অংশ চিনি হত। সেই চিনি তুলে নিয়ে বাকি গুড় আবার শ্যাওলা চাপা দিয়ে রাখতে হত। কয়েকদিন পরে বাকিটাও চিনি হত। এই চিনি শুধু খাওয়া হত। সেটাই ছিল মিষ্টি। নয়তো অন্য উপকরণ যোগে মিষ্টান্ন তৈরি হত। ... ...
কোনো কথা বলার সময় / পকেটের মাপে, বেছে বেছে / আর কথা বাড়িয়ে কী লাভ... / ছোট ছোট রিচার্জ এসেছে ... ...
বীরচন্দ্রের মৃত্যুর পরে ১৮৯৬ সালের শেষে মহারাজা রাধাকিশোর সিংহাসনে বসেন চল্লিশ বছর বয়সে। তিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথেরই সমবয়সী। দুজনের মধ্যে গড়ে ওঠে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব। রাধাকিশোরের রাজত্বের ছমাস কাটতে না কাটতেই ১৮৯৭ সালের প্রবল ভূমিকম্পে ত্রিপুরা সহ গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ফলে করুণ আর্থিক অবস্থার মুখোমুখি হয় রাজ্য এবং তার মধ্যেই রাজপারিষদদের স্বার্থপর আচরণে দেখা দেয় চরম বিশৃঙ্খলা। রাধাকিশোরের একান্ত অনুরোধে তাঁকে সমস্যা থেকে উদ্ধার করতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ভেবে অবাক হতে হয়, সাহিত্যের নান্দনিক বৃত্তের বাইরে বেরিয়ে এসে বিরাট ধৈর্যের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ বন্ধুকে রাষ্ট্রশাসনের কূটিল বিষয়ে মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, নিজে ত্রিপুরায় হাজির হয়ে শাসন ব্যবস্থার নানা ত্রুটি বিচ্যুতি লক্ষ্য করে উপযুক্ত বিশ্লেষণ সহ একটি গোপন নোট পাঠান রাজার কাছে। তাতে রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্পর্কে কবির বিচক্ষণতার পরিচয় মেলে... ... ...
শিবিরা এত গরীব, ওদের কীকরে সংসার চলে সেটা একটা ভাবার বিষয়। কেউ জিগ্যেস করলে শিবি তার কাজের ফিরিস্তি দেয়, “বাড়ির মেয়েদের কাচ থে কিচু না কিচু কাজ জুটেই যায়। কেউ বলে, শিবি চাল পাছড়ে দে – শিবি চাল বেছে দে – শিবি উঠোন ঝাঁট দিয়ে দে – গোয়াল পরিষ্কার করে দে, ধান ভেনে দে, চাল কুটে দে—কত কত ফাই ফরমাশ! মিলনীও কাজ করে সমান তালে। তবে ছেলেদের সমান মজুরি ও পায় নে কুনোদিনই। অবশ্য আমিও পাই না।তবু বোনের থে কিচু বেশি মজুরি পাই মেয়েদের মদ্যি বেশি চৌকোস বলে”। অথচ সে পরিশ্রমে, দক্ষতায় পুরুষদের সঙ্গে সমানে তাল মেলাতে পারে। কিন্তু সেকথা মানছেটা কে? ... ...
পবিত্র বোধ হয় আবার কিছু বলবার চেষ্টা করছিল, কিন্তু সুভাষ নজরুলের দিকে তাকিয়ে বলল, নজরুল সাহেব, আজ সকালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে আপনি যখন কনফার্ম করলেন আপনিই নজরুল ইসলাম, আমি তখনই আপনাকে একটা প্রস্তাব দেব ভাবছিলাম। সেই জন্যেই আমি আপনার নবযুগের কথাটা তুলছিলাম। আপনারা তো এতক্ষণে শুনেইছেন, কয়েকমাস আগে স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেবার বাসনায় আমি চিত্তরঞ্জন দাশ মশায়ের সঙ্গে দেখা করি। তিনি অতি স্নেহে আমাকে তাঁর সঙ্গী করতে রাজি হলেন। আমাকে তিনি প্রথম দিনেই দুটো কাজের দায়িত্ব দিয়েছিলেন; এক, গৌড়ীয় বিদ্যায়তনের অধ্যক্ষতা, এবং দুই, বাংলায় কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রচারের দায়িত্ব। ওই যে স্টেট্স্ম্যানের মন্তব্যের যে-কথা পবিত্রবাবু বলছিলেন সেটা ওই প্রচারেরই একটা অংশবিশেষ। কিন্তু আমার বাসনা আছে, বাংলার কংগ্রেসের পক্ষ থেকে একটা বাংলা দৈনিকপত্র বের করার। আমি ভাবছিলাম, এ ব্যাপারে যদি আপনার সক্রিয় সাহায্য পাওয়া যায়। ... ...
মেয়েদের নাম রাশিয়ান ও তুর্কিক, দুই ধরনের। কিন্তু পদবীটি হবে রাশিয়ান স্টাইলে স্বামী বা পিতার নাম অনুযায়ী ওভা অথবা এভা। যেমন গুলনারার পুরো নাম গুলনারা গালিমোভা। আর এক মন্ত্রী নাতালিয়া করজোভা! প্রায় তিরিশ বছর যিনি রাষ্ট্রপতির আসন অলঙ্কৃত করেছিলেন তাঁর নাম নুর সুলতান নজরবায়েভ। তাঁর এক মেয়ের নাম দিনারা নুরসুলতানোভনা নজরবায়েভা – তিনি বিলিওনেয়ার। নতুন রাজধানীর নাম নুর সুলতান। যেমনটি সচরাচর হয়ে থাকে! ... ...
গাঁওবুড়ো এক যাত্রাপথের গল্প। বলে যেতে পারে হাঁটার গল্প। হাঁটতে হাঁটতে সুখ অনুসন্ধানের গল্প। সুখ এখানে বিভ্রম। কিন্তু সন্ধানটা জরুরি। যে সন্ধান, আত্মজিজ্ঞাসা, অনুসন্ধান মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। সুখের স্বপ্ন দেখায়। মানুষ তো সুখের সন্ধানে বাঁচে। সমস্ত প্রাপ্তির মধ্যেও আরেকটু সুখ বা সমস্ত অপ্রাপ্তির মধ্যেও সামান্য সুখের সন্ধান করে। ‘গাঁওবুড়ো’ তেমনই এক গল্প যেখানে বিভ্রমকে সামনে রেখে বিভ্রমের বাস্তবতাকে আবিষ্কার করে জনপদ জীবনের চরম অর্থনৈতিক অস্বচ্ছন্দতার নিত্য নৈমিত্তিক দিনলিপি। রাঙা পথের জীর্ণ চিত্রে জার্নির ক্লান্তিতে মেঠো সুরে ব্যক্তি ও সমষ্টির ব্যথিত কোলাহল সহ রূপহীন-রংহীন মানুষের সমস্ত না পাওয়া ও পথের দিকে চেয়ে থাকার উদাসীন সোপান। যে ভূগোলে কিছুই নেই, যেখানে বাঁচার তীব্র আকুতি নিয়ে মানুষ বাঁচে-স্বপ্ন দেখে, সেখানে কেউ কেউ অলীক জাল রচনা করে আরও দুই মুহূর্তের স্বপ্নের হাতছানি দিয়ে যায়, ‘গাঁওবুড়ো’ সেই স্বপ্ন হাতছানির গল্প। ... ...
ভয়াবহ বন্যার সম্ভাবনার কথা ভেবে তর-তম করেন ভূবিজ্ঞানীরা, হাণ্ড্রেড ইয়ার ফ্লাড, ফাইভ-হান্ড্রেড ইয়ার ফ্লাড, থাউজ্যান্ড … ইত্যাদি। কিন্তু, এই হাণ্ড্রেড-ইয়ারস ফ্লাডের মতো এমন ঘটনা যা হয়তো কোথায় একবার-ও হয়নি আগে, বা হলেও হয়তো সেই কোন মান্ধাতার আমলে, সেই বিরল থেকে বিরলতম দুর্ঘটনার মোকাবিলা করার পরিকল্পনা করবেন কেমনে? একটা নির্দিষ্ট প্রশ্ন ভাবলে সুবিধে হয়, ধরুন আপনি সেই ছোটোবেলার হান্স ব্রিঙ্কারের গল্পের মত এক ডাচ গ্রামের লোক, বন্যার জল আটকাতে চারদিকে এমন বাঁধ দিতে চান, যাতে আগামী একশো, কি হাজার বছরের বন্যার জল-ও কক্ষণো সেই বাঁধ টপকাতে না পারে, এইবার ভাবুন কত উঁচু বাঁধ বানাবেন হান্স? উচ্চতা মাপবেন কী করে সেই অনাগত বিপুল তরঙ্গের? আধুনিক বিজ্ঞানের বহু বহু প্রশ্নের উত্তর যে রাশিবিজ্ঞান দিয়েছে সে তো বলাই বাহুল্য। সেসব প্রশ্নের উত্তর যোগানোর জন্য তথ্য (ডেটা)-ও তো আছে প্রচুর পরিমাণে, বরং দরকারের চেয়ে কিছু হয়তো বেশিই। কিন্তু এই ধরণের এক্সট্রিম ইভেন্টের (চূড়ান্ত?) সম্ভাবনা মাপার সূত্রটি ধরতে গেলে সেইসব অঙ্কের ভাঁড়ারেও কিছু কমতি পড়ে যায়। দরকার পড়ে অন্য একরকমে প্রোবাবিলিটি থিয়োরি – থিয়োরি অফ এক্সট্রিমস। ... ...
প্রতিদিন খুব ভোরে কাঁখে কলসি নিয়ে গাঁয়ের অন্য বউদের মতোই নদীতে জল আনতে যায় কিশোরী পদ্মাবতী। তবে বাকিদের মতো তড়িঘড়ি সে ফিরে তো আসেইনা, বরং তাঁর ফেরার সময় রোজ সূর্যদেব উঠে পড়েন মাঝ আকাশে। রোজকার দেরি দেখে শাশুড়িমা নিশ্চিত হন, ছেলের বউটি নিশ্চই অন্য কারো সাথে জড়িয়েছে সম্পর্কে, তাই তাঁর মন বুঝি নেই ঘরে ফেরায়। এছাড়াও এই বউয়ের অজস্র দোষ। সেই কবে থেকেই গুছিয়ে রান্নাবান্না- সংসার করা, খেয়ে না খেয়ে শশুড়বাড়ির সবার সেবা করা, স্বামীর প্রতি স্ত্রীধর্ম পালন করা তো দূর, সন্তানধারণ করতেও নারাজ সে, এমনকি বিয়ের পর রীতি অনুযায়ী পদ্মাবতী নামেও তাঁর অনীহা। কেউ জানতে চাইলে নিজের পরিচয় দেয় বিবাহপূর্ব লাল্লেশ্বরী বা লাল্লা নামে। এই আজব সব ধৃষ্টতার ওপর রোজকার তাঁর এই দীর্ঘ অনুপস্থিতি যেন আগুনে ঘি ঢালে। পদ্মাবতীর স্বামীকে উস্কে দেন শাশুড়ি, ঘরের অবাধ্য অলক্ষ্মী বউটিকে উচিত শাস্তি দেওয়ার জন্য... ... ...