কত রকমের যে ঝাউ আর বাবলা পাওয়া যায় সে একেবারে দেখার মত, একটু খানি জায়গা পেলেই হল। বাবলা গাছ তো সর্বত্র আর এমন ভাবে তারা ডালপালা ছড়ায় যে কাফেলাগুলোর জন্য তারা ভারি যন্ত্রণার! কাঁটাগাছ ও গঁদের গাছগুলো অভিযাত্রীদের জন্য সবচেয়ে ঝামেলার। কাঁটাগাছের প্রজাতিগুলো সমস্ত রকমের মারাত্মক কাঁটায় ভরা! আমার দোভাষী সেলিম একদিন আমাশায় কাতর হয়ে ঘোড়ায় চড়ে যাচ্ছিল, তার ঘাড়ের একেবারে শিরার খুব কাছে বাবলার কাঁটায় এমন বিচ্ছিরি ভাবে কেটে যায় যে সেই দাগ তার মৃত্যুদিন অবধি রয়ে যাবে। ... ...
আমার কর্তা এমন ব্যবস্থা করেছিলেন যে, যতদিন আমরা আড়বালিয়ায় থাকব, বড়জেঠু, মেজজেঠু, সেজজেঠু কারোর পরিবারে আলাদা হাঁড়ি চড়বেনা, একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া হবে। সে বড়ঘরের ছেলে, বাড়িতে অনেক লোকজনের থাকা খাওয়ার আয়োজনের জন্য কীভাবে সুচারু বন্দোবস্ত করতে হয় - এসব বিষয়ে অল্প বয়স থেকেই বেশ পাকাপোক্ত। তাই আমাকে কিছুই মাথা ঘামাতে হয়নি। ওর এই ব্যবস্থায় আমি খুবই খুশি হয়েছিলাম, কারণ কয়েকদিনের জন্য হলেও আমার ছোটবেলা যেন ফিরে এসেছিল। ... ...
একই জিরা,ধনে,লংকা,হলুদ (একটু গ্যাপ দিয়ে পড়বেন প্লীজ) ঐ সব দিয়ে একই ঘ্যাঁট রেঁধেছি আর খেয়েছি- দিনের পর দিন। তা ও ভালো ইউ টিউব আসায় গুল তাপ্পি মারা সহজ হয়েছে। কিন্তু মাসের পর মাস - কতোই বা লিখবো? সুবিধের মধ্যে এই, যে আপনেরাও বিশেষ পড়েন টড়েন না। তা ও, কথা যখন দিইছি, তখন লিখবোই। এইবারের থিম হচ্ছে "হারিয়ে যাওয়া খাবার"। জানেননি তো, যাদের আর কিছু নেই, তাদের নস্টালজিয়াই সম্বল। ... ...
উন্যামওয়েজিতে মাত্র দুটি জলধারাই নদী নামের যোগ্য। সেগুলো হল উত্তর ও দক্ষিণ গোম্বে। উত্তরের নদীটা কোয়ালা নামে পরিচিত। কখনও কখনও একে ওয়াল্লাও বলা হয়। কুবুগার দক্ষিণে এর উৎসমুখ। উত্তর-পশ্চিম দিকে একটি বাঁক ঘুরে তাবোরার উত্তরে গোম্বেতে গিয়ে ঢোকে। এখানেও এটা বেশ বড় মাপের, গুরুত্বপূর্ণ একটা নদী। বর্ষার শেষদিকে ভালো হালকা নৌবহর নিয়ে, একজন খুব সহজেই - তাবোরা থেকে আট মাইল বা তারও বেশি দূরের থেকে দলবল নিয়ে নৌকা চেপে সানন্দে টাঙ্গানিকা হ্রদ অবধি ভেসে যেতে পারে; অবশ্যই, যদি সমস্ত উপজাতির লোকেরা ইচ্ছুক হয়। একটা সঠিকভাবে প্রস্তুত অভিযান এইরকমভাবে বিস্ময়কর কাজ করতে পারে। ... ...
এসে গেল শীতকালের দিন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ভ্যাকসিন মানুষের হাতের মুঠোয় আসতে চলেছে শিগগির। আনলক চতুর্থ পর্ব চলছে। যেহেতু কলেজ এখনও খোলেনি, তাই আমার লকডাউন বহমান, থামার জো টি নেই। লকডাউনের অবসরে কর্তামশাই আমার এই একচিলতে বাসার জানলাগুলো বাগান করে ভরিয়ে দিয়েছেন। জানলা থেকে পুঁইশাক কেটে খাওয়া চলল নানারকম, কখনো শাক, কখনও শুধু ডাঁটা অথবা পুঁইমিটুলির চচ্চড়ি। বিলোনোও হল কিছু নিকট আত্মীয় আর প্রতিবেশীকে। এখন ঐ জানালার একফালি রোদে তার বীজ শুকনো হচ্ছে আবার নতুন করে বোনার জন্য। বারান্দাকে তো একটু বড়সড় জানলা হিসেবে ভাবাই যায়, সেখানে তিনি ফলিয়েছেন ছোটো ছোটো বেগুন, দুরকম - সাদা আর বেগুনি। এখন শীতকালে দক্ষিণের জানলায় রোদ আসে বেশ। ছোটোবেলার স্মৃতি আর ইউ টিউবের পড়া মিশিয়ে, রান্নার মেয়েটির সঙ্গে যুক্তি করে থালায় থালায় দিলাম বড়ি। শুকোতে দিলাম সেই জানলায়। ... ...
ক্যাপ্টেন বার্টন বলেছেন যে মিঃ ডেসবোরো কুলি মনে করতেন উন্যামওয়েজি শব্দের অর্থ হিসেবে 'বিশ্বের প্রভু' শব্দটাই বেশি যোগ্য। তাঁর মতে, এর বানান অবশ্য 'মোনোমোইজি'। ক্যাপ্টেন বার্টনের কথার চেয়ে আমার নিজের মিঃ কুলির ব্যাখ্যা বেশি পছন্দ, তবুও আমার ধারণা মিঃ কুলির বক্তব্যের থেকেও আলাদা। ন্যামওয়েজিদের থেকে যতদূর যা জানতে পেরেছি, সেই সঙ্গে এদেশের লোকগাথার থেকে আরবরাও যা শিখেছে, সেটা এইরকম। ... ...
এ প্রসঙ্গে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার শেষ নবাব নবাব নাজিম মনসুর আলি খান ফেরাদুন জার বংশধর নাফিসুন নিসা নাসির (নাফিসা) এর বিয়ের খাওয়া দাওয়ার কথা আজও ভুলতে পারিনি। আগেই বলেছি এক সময় নিজামত পরিবারে বিরিয়ানির কোনো অস্তিত্ব ছিলনা তবে আজকাল নিজামত পরিবারে বিরিয়ানির খুব রমরমা শুরু হয়েছে। নাফিসার বিয়েতেও মূল খাবার হিসেবে বিরিয়ানি খাওয়ানো হয়েছিল, সেই বিরিয়ানির স্বাদ আজও মুখে লেগে আছে। সেবার খেতে বসে প্রথমেই দেওয়া হয়েছিল ঘিয়ে ভাজা পরোটা ও চিকেন রেজালা, ওহ সে কি অপূর্ব স্বাদ। ... ...
বিপদ নয় তো আমার ভয় ফুরিয়ে আসা দিনে, তরতর করে এগিয়ে আসা ফিরে যাবার দিনে। তাই নবমী ফুরিয়ে দশমীর সকাল আসতেই আমার চোখে কষ্ট জমে জল হয় বারবার। আর আমার সে কষ্টকে বুঝেই ঢাকেও সুর ওঠে, ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ, ঠাকুর যাবে বিসর্জন… ... ...
আমাদের কর্তা গিন্নি দু'জনের জীবনেই ঝুলন পূর্ণিমার স্মৃতি মনের ঝিলের গভীর স্তরে সাজানো আছে। আমার স্মৃতিতে ভরে আছে - কাঠকলে গিয়ে বস্তা করে কাঠের গুঁড়ো আনা, সেগুলো নানারকম রঙ করা, গ্রাম, শহর, জঙ্গল সব পাশাপাশি, একধারে পাহাড়, নদী, ঝরনা - সেই পাহাড়ের মাথায় শিব ঠাকুর। প্যাকিং বাক্স ওপরে ওপরে রেখে, কাদা জলে ছোপানো কাপড় দিয়ে ঢেকে সেই পাহাড়, কায়দা করে শিব ঠাকুর বসানো। নিচে বড় মোটর সাইকেলের পাশেই ছোট ছোট হাতির সারি। স্বচ্ছ প্লাস্টিক দিয়ে করা একরত্তি পুকুরে উত্তরাধিকারে পাওয়া এক মস্ত পোর্সেলিনের হাঁস। আর ঝুলন যেদিন শেষ হয়, সেদিন হল রাখী। ... ...
— ঠাকুমা বলেছিলেন যে, প্রতি সন্ধেবেলাতেই বাড়ির দুর্গামন্ডপে বয়স্ক জ্ঞানীগুণী লোকেরা আসতেন। চা, তামাক, জলখাবার চলত। তারিণী বসে গড়গড়া টানতেন। আর সকলে মিলে নানা বিষয় আলোচনা হত। একদিন সেই সভায় তারিণী বৌমাকে রান্নাঘর থেকে ডেকে পাঠালেন, সবার সঙ্গে বসতে বললেন। বৌমা এত গুরুজনদের সঙ্গে বসবে কী, লজ্জায় ঘোমটা টেনে দাঁড়িয়ে রইল। তারিণী বললেন, 'এই লজ্জা সংকোচ ভাঙতে হবে বৌমা, তোমাকে মেয়েদের ইস্কুলের ভার নিতে হবে। নতুন ইস্কুলের দরখাস্ত করা হচ্ছে।' — তখন ঠাকুমা কী করল? — ওরে ঠাকুমা পণ্ডিত বাড়ির মেয়ে, বাড়িতে টোল, চতুষ্পাঠী - এসব জন্ম থেকে দেখে অভ্যস্ত। কিন্তু নিজে কীকরে করবে, এই ভেবে পা কাঁপছিল, বুকের ভেতর ভয় করছিল। — তারপর? ... ...
সবচেয়ে বড় দ্বীপের মাথাটা মাপ নেওয়ার জন্য সুপ্রশস্ত। আমরাও সুযোগের সদব্যবহার করলাম - এখান থেকে লম্বা-চওড়া হ্রদ ও তাকে ঘিরে থাকা সুউচ্চ পর্বতমালাটি ভালভাবে দেখা যাচ্ছিল। এখান থেকে উত্তর-ঈশান কোণে রামাতা পাহাড় - সেটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। অগ্নি কোণ আর দক্ষিণ অগ্নিকোণের মাঝবরাবর কাতাঙ্গা কেপ, সেন্টাকেয়ী পূর্ব-অগ্নি কোণে; পূর্ব আর পূর্ব-ঈশান কোণের মাঝখানে মাগালা; মুজিমুর দক্ষিণ-পশ্চিম বিন্দুটি দক্ষিণ দিক বরাবর, মুজিমু দ্বীপের উত্তর বিন্দুটি দক্ষিণ-অগ্নি দিকে। ... ...
মংলুমামা ছিলেন পেটুক মানুষ। কতক্ষণে খাবার সময় হবে তার আর সবুর সইছে না। একটু নিরিবিলি হতেই তাড়াতাড়ি একটা টুলে চড়ে শিকলি খুলে, চুপিচুপি খাটের তলা থেকে হাঁড়িটা টেনে নিয়ে মস্ত এক খাবলা দই মুখে পুরেই পরিত্রাহি চিৎকার! আসলে সেটা তো দই-ই ছিল না, ছিল পানে খাবার চুন। আবার নতুন চুনের ঝাঁঝ খুব বেশি হয়। কাজেই মংলুমামার যে কী দশা হল তা তো বুঝতেই পারা যাচ্ছে। দই খাওয়াও হল না, তার ওপর চুরি করে খেতে গিয়ে ধরা পড়ার লজ্জা! রায় পরিবারে সুখাদ্যের প্রতি আকর্ষণের শুরুটা হত একেবারে জন্মাবার পর থেকে। সুকুমারের ছোট ভাই নানকু অর্থাৎ সুবিমল সবে জন্মেছে। সে যখন মাত্র কয়েকদিনের, দুপুরে মা তাকে পাশে নিয়ে একটু ঘুমিয়েছেন। হঠাৎ চকাৎ চকাৎ শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখেন, পাঁচ বছরের কন্যা টুনি পান্তুয়া খেতে খেতে ফোঁটা ফোঁটা রস টিপে টিপে ভাইয়ের মুখে দিচ্ছে আর ভাই দিব্যি চকচক করে খাচ্ছে। ... ...
সারাদিনে এই একটা সময় যখন ঠাকুমার ডাকে আমার সারা দিতে ইচ্ছা হয় না। এই সময়ে ঠাকুমাও খুব কঠোর। আমার সকল অনিচ্ছাকে অবহেলা করে নির্দ্বিধায় আমার হাতে ধরিয়ে দেয় পেতলের ছোট গ্লাসে শেফালি পাতার রস আর চিরতার রস। চোখ ভরা অভিমান আর নি:শ্বাস আটকে আমি শেষ করি সেই তিতকুটে রস। ফাঁকা গ্লাস ঠাকুমার হাতে পৌঁছে যেতেই আমি আবার ফিরে পাই আমার সেই ঠাকুমাকে, যে ঠাকুমা কারণে অকারণে আমার হাত ভরে দেয় আনন্দ আর আস্বাদে, - ও ঠাকুমা, কোথায় পেলে রাঘবসই? দাদু এনেছে? ... ...
— চট্টগ্রামের জালালাবাদের যুদ্ধে তিনি মাস্টারদার সঙ্গে লড়াই করেছিলেন। ওঁর ভাই টেগরা সেই যুদ্ধেই মারা যায়। আমরা ওঁর বাড়িতে প্রায়ই যেতাম। শিখাদির মা তখন বেঁচে ছিলেন, ভীষণ আমুদে একজন দিদা। ঐ বাড়িতে লোকনাথ বলের একটা বড় অয়েল পেন্টিং ছিল। ছোটবেলায় দেখলে গায়ে কাঁটা দিত আমার। — ওঃ আর কাউকে জানো? — পারিবারিক সূত্রে লেডি অবলা বসুর গল্প জানেন, এমন মানুষের সান্নিধ্যে এসেছি। — কী বলছ মা? বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্রের স্ত্রী? — বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্রের স্ত্রী বটে, তবে সেটাই তাঁর একমাত্র পরিচয় নয়। — তাহলে? ... ...
একটা ব্যাপার আমার কাছে স্পষ্ট। আর আমার ধারণা ডাক্তারও তাই মনে করেন। স্যার স্যামুয়েল বেকারকে আলবার্ট এন'ইয়ানজার দৈর্ঘ্য অক্ষাংশ বরাবর ২° যদি বা নাও হয়, ১° কমাতেই হবে। এই বহু পরিচিত অভিযাত্রীটি হ্রদটিকে রুয়ান্ডাদের এলাকার অনেকটা বেশি ভিতরদিকে করে দেখিয়েছেন। আর রুয়ান্ডাকে দেখিয়েছেন তার পূর্ব দিকে। আসলে কিন্তু রুয়ান্ডার পুরোটা না হলেও একটা বড় অংশই হ্রদের উত্তরাংশ জুড়ে, তাঁর মানচিত্রে তিনি সেই জায়গাটাকে উসিগে বলে বর্ণনা করেছেন। ... ...
কোন সবজেক্টে ব্যাবাক মানুষে, মানে ভারত তথা বাংলা তথা গুরুচন্ডালীর সব্বাই, যাকে বলে একেবারে হুলিয়ে পন্ডিত? মানে যাকে বলে প্রাজ্ঞ? না, না, ফুটবল নয়, পোলিটিক্স নয়, সাহিত্য বা ক্যালকুলাসও নয়। আসলে সবাই যে ব্যাপারে মতামতে ভর্পুর এবং অভিজ্ঞতায় উপছে পড়েন সেটা হচ্ছে বিরিয়ানি। একবার হাটে হাঁড়ি ভেঙেই দেখুন না, ঘটি বাঙাল, বাসী, প্রবাসী বা অ্যান্টিবাসী, তরুন বা বুড়োটে, সব সব রকমের জেন্ডার - মানে সকলেই তাদের অফুরন্ত অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান ভান্ডার নিয়ে হাজির হবেন। তক্কো জুরে দিবেন, কোনটি খাঁটি আর কোনটি বর্ণ সংকর দুষ্ট, কে অথেন্টিক, কে নকল নবীস। শেষ কথা কে কবে? ... ...
— চল্লিশ পঞ্চাশ বছর আগে শহুরে সংস্কৃতি গ্রামে খুব একটা ঢোকেনি। টিভিও খুব কম ঘরে ছিল। তাই ব্যাপারটা লেখাপড়ার জন্য নয়। লেখাপড়ার চর্চা ওসব জায়গায় খুব ভালো ভাবেই ছিল। তারিণীপ্রসাদ আর তাঁর বয়স্যরা মিলে স্বাধীনতার পরে তৈরি করেছিলেন ঐ এলাকার ছেলেদের জন্য প্রথম হাইস্কুল। আর মেয়েদের ইস্কুল শুরু হয়েছিল তোর ঠাকুমা বেলারানীর তত্ত্বাবধানে, তোদেরই বাড়ির দাওয়াতে। — এই তো, এবার ইস্কুলের গল্প চলে এসেছে। বল, বল পুরোটা। কিন্তু আমি তো জানতাম ইস্কুল, হাসপাতাল সব কিছু বুড়ো ঠাকুরদা তারিণী করেছেন। এর মধ্যে ঠাকুমাও ছিল! ঠাকুমা লেখাপড়া জানতো? একটু খুলে বল দেখি। ... ...
বিয়ের পরে নতুন বউ, শ্বশুর বাড়িতে দুর্গাপুজো, শাশুড়ি বরণ শেখাচ্ছেন, সিঁদুর খেলা, বরের ক্যামেরায় সিঁদুর মাখা মুখের ছবি, মত্ত হয়ে ছিলাম। বাড়িসুদ্ধ সবাই মাতোয়ারা। হঠাৎ চোখে পড়লো, সবার প্রিয় বড়দি, আমার বড় ননদ ঘরে মুখ চেপে ডুকরে কাঁদছে। বিধবা বলে এই আনন্দে তার অধিকার নেই, নিজের বাড়িতেও। সেদিন বিজয়ার আর একটা নির্মম মানে বুঝলাম - সধবার স্বীকৃতি আর আনন্দের তলায় বিধবার দুঃখ। সধবার অধিকারের উলটো দিকে রয়েছে বিধবার নিঃসঙ্গতা - একরকম সামাজিক বহিষ্কার। এ চাবুক চোখে দেখা যায়না, তাই আসল চাবুকের চেয়ে অনেক কঠিন আর ধারালো, চামড়া কেটে গভীরে বসে যায়। ঐ দৃশ্য দেখার আগে বিজয়া দশমী যে কিছু মেয়ের জন্য এতটা অপমানের তা বুঝতে পারিনি। এখন দশমীর বরণে পারুল কে ডাকি। অল্প বয়সে পারুলের বর সুরাটে কাজ করতে গিয়ে এইডসে মারা যায়। তিনটি শিশু সন্তানসহ একঘরে পারুলকে শাশুড়ি আশ্রয় দেন। পারুল বলে, "হ গো বৌদি, মো কি ঘরো পূজা করিনা? শুধু সিন্দুর দিবানি, প্রদীপ, ধূ্প, মিষ্টি, জড়ো, পানো সবু দিবা"। প্রথাগত শিক্ষার নাগালের বাইরে থাকা আত্মবিশ্বাসী নারীকে বড় ভালো লাগে। ... ...
তার গ্রামে আস্তানা গাড়ার পরেই আমাদের সঙ্গে দেখা করতে রুহিঙ্গা এসেছিল। অতিশয় সহৃদয় লোক, সবসময়ই হেসে ওঠার কারণ খুঁজছে; সম্ভবত মুকাম্বার চেয়ে পাঁচ - ছ বছরের বড় - যদিও তার নিজের মতে তার একশ বছর বয়স - তবে সে তার ছোট ভাইয়ের মত অত সম্মানিত নয়, আর ভাইটিকে তার নিজের লোকেরা যেমন শ্রদ্ধা-ভক্তি করে, একে তত কিছু করে না। রুহিঙ্গা অবশ্য মুকাম্বার চেয়ে দেশের সম্পর্কে বেশি জানে। আর তুখোড় স্মৃতি শক্তি! খুব বুদ্ধিদীপ্ত ভাবে তার দেশ সম্পর্কে জ্ঞান আমাদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিল। সর্দার হিসাবে আমাদের যথাযথ সম্মানও দেখিয়েছিল - একটা ষাঁড়, একটা ভেড়া, দুধ আর মধু উপহার দিয়েছিল - আমরাও তার থেকে যতটা সম্ভব তথ্য বের করার চেষ্টা করতে পিছপা হইনি। রুহিঙ্গার থেকে যা জেনেছিলাম তার সংক্ষিপ্তসার অনেকটা এইরকম। ... ...
সারাদিনের মধ্যে এই ফুলতোলার সময়টুকুতেই তো ঠাকুমাকে আমি আমার মতো করে পাই। এ-কথা ও-কথায় আমরা দু-জনকে বারবার জানাই—আর কেউ না, তুমিই আমার সব আবদারের জায়গা। তবে শহরে যাবার পর অবশ্য ঠাকুমার আবদার আমার থেকেও বেড়ে গেছে। ফুলের সাজি হাতে বাইরবাড়িতে যেতে যেতেই ঠাকুমার আবদার, ও দিদি, এবার বার্ষিক পরীক্ষায় খুব ভালো করতে হবে কিন্তু তোমার। শহরে বাবা নিয়ে গেছে তো ভালো করে পড়াতে। বাবার কথা মানতে হবে দিদি। ... ...