আমরা দুজনে ভাগ হয়ে যাই, একজন গাইড সহ দলটিকে নানাবিধ প্রশ্ন করতে থাকে। বিশেষত তারা যখন হেডগেওয়ারের কলকাতা পর্বের ছবিগুলির সামনে। অন্যজন আরএসএস হেডকোয়ার্টারের ‘আইন’ অমান্য করে ছবি তোলে, এবং সঙ্গে সঙ্গে তা হোয়াটসঅ্যাপে আমরা গ্রুপে শেয়ার করে দেয়। বলাবাহুল্য মোবাইল কেড়ে নেওয়ার বা জোর করে ছবিগুলি ডিলিট করার সম্ভাবনা ছিলই। এই ঘৃণ্য ঘটনার ছবি তোলা যাতে আরএসএস-এর প্রতিষ্ঠাতার নিরীহ মুসলমানদের রক্তপাত করে ‘শৌর্য’ প্রকাশ করা যায়, তা আমাদের মানবিক কর্তব্য বলেই আমরা মনে করেছি। ... ...
জানা জরুরি হিন্দুত্বের তত্ত্ব ও তা রূপায়ণের হালহকিকত, যার মধ্যে হিন্দুত্ব সন্ত্রাসের পরিকল্পনা ও প্রকল্প গ্রথিত আছে। পশ্চিমবঙ্গের ঝাড়খণ্ড সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামগুলিতে আরএসএস নতুন নতুন শিবিরের উদ্বোধন করে চলেছে। বিভিন্ন লোকসংস্কৃতি সংগঠনের মাধ্যমে লোকসংস্কৃতিতে ভক্তি ও সহজিয়ার চিরায়ত পথে হিন্দুত্বের মিশেল ঘটাতে সচেষ্ট থাকছে। ‘আমরা, এক সচেতন প্রয়াস’ এই সব কিছু জানতে এবং রাজনৈতিক ধর্মের স্বরূপ উন্মোচনে প্রায় দশক-অধিক কাল তথ্যানুসন্ধান চালাচ্ছে। আরএসএস সদর দপ্তরে যাওয়া সেই ধারাবাহিকতার এক অংশ মাত্র। ... ...
ইজ্জতের দোহাইতে মুড়ে এ কালে বানান হয়েছে লাভ জিহাদ, যদিও এদেশে কোথাও হিন্দুত্ববাদীদের বানানো অর্থে লাভ জিহাদ হয়েছে এমন প্রমাণ নেই। অর্থাৎ প্রেমের ভান করে সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় লাভ তুলতে চাইছে কোন সংখ্যালঘু যুবক, এরকম প্রমাণ আজও নেই। প্রমাণ নেই যে এই কাজের দ্বারা সে হিন্দুধর্মের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছে। ... ...
কৃষি-বিলের ফলে কৃষকের অবস্থা এক থাকলেও শস্য ব্যবসার উদ্বৃত্ত যদি স্থানীয় ব্যবসায়ীর পরিবর্তে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পুঁজির পকেটে ঢোকে তাতে আর্থিক অসাম্য আরো বাড়বে যেটা মোটেই কাম্য নয়। দ্বিতীয়ত সমস্যাটি দেশের রাজনৈতিক ভারসাম্য সংক্রান্ত। স্থানীয় পুঁজির বদলে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পুঁজির হাতে টাকা গেলে দেশের রাজনৈতিক ভারসাম্য বদলে যাবে। স্থানীয় পুঁজি আঞ্চলিক দলের অর্থের জোগানদার, যেখানে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পুঁজি অর্থ যোগায় জাতীয় দলগুলিকে। কৃষিতে স্থানীয় পুঁজির আধিপত্য শেষ হলে লাভ বিজেপির মত জাতীয় দলের, ক্ষতি আঞ্চলিক দলগুলির। এতে অনেক ক্ষেত্রেই স্থানীয় স্বার্থ বিঘ্নিত হতে পারে। ... ...
আমরা কারিগর ব্যবস্থার মানুষেরা, বড় কৃষক বা কুলাক আর কর্পোরেট কৃষকের মধ্যে মৌলিক ভেদ করি। কুলাকেরা গ্রামের মাটিতে থাকে। সে বৃহত্তর গ্রাম সমাজের অংশ, গ্রামের ওঠাপড়া, অন্যান্য সমাজের ভাল থাকা মন্দ থাকায় তার যায় আসে, গ্রামের কারিগরদের, তার কৃষির কাজের অঙ্গাঙ্গী হাতিয়ার। সে সাধারণত একফসলি চাষ করে না – তাই সামগ্রিকভাবে যান্ত্রিক পুঁজিনির্ভর কৃষি তার পথ নয়। তার উৎপন্ন ফসলের বাজার গ্রামে বা তার আশে পাশে। তার মূল লক্ষ্য বিদেশের বাজার নয়, স্থানীয় বাজার, উদ্বৃত্ত সে বিদেশে পাঠায়। কিন্তু কর্পোরেট কৃষকেরা দেশিয় চাষের জোর, তার মৌলিকতা, ফসল বৈচিত্র বিষয়ে চরম উদাসীন। ... ...
সরকার যে শুধুমাত্র চাষির স্বার্থ ভেবে নতুন ব্যবস্থা আনছেন না তা শুধু এই উদ্যোগেই বোঝা যায় যে, এই বিল প্রস্তাব করার ক্ষেত্রে প্রাথমিক ভাবে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের জায়গাটি রাখা হয় নি এবং চাষির আইনি পরিসর বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। প্রান্তিক চাষির সুবিধা যদি প্রাথমিক লক্ষ্য হয়, তবে প্রাথমিক শর্তও হবে তার আইনি ও অর্থনৈতিক সুরক্ষার দিকটি মজবুত করা। স্বাভাবিকভাবে একজন প্রান্তিক চাষি শিক্ষা, প্রযুক্তির ব্যবহার ও আইনি সুবিধায় অনেকটা পিছিয়ে। বড় কর্পোরেটের সাহেবদের সঙ্গে এঁটে ওঠা তার পক্ষে কঠিন। ... ...