জীবনে কষ্ট তো কম করেনি সম্ভৃতা। সেই অতটুকু বয়েসে যখন সোমেশ্বরের সাথে সংসার শুরু করেছিলো নন্দী স্ট্রীটের এক কামরার ফ্ল্যাটে, কীই বা জানতো সংসারের ! তারপর এ শহর ও শহর ছোটবড়ো নানান রকমের আস্তানা আর বিচিত্র অভিজ্ঞতা পেরিয়ে, অভিজাত কর্পোরেট আবাসন এয়ারকণ্ডিশন্ড্ গাড়ি আর আনুসঙ্গিক জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে আসা জীবন ছেড়ে, এক কথায় আবার কলকাতায় ফিরে প্রায় শূন্য থেকে শুরু ! চাকরি করবে না আর সোমেশ্বর ! পলায়নরত মূলধনের ক্ষয়িষ্ণু কলকাতা শহরেই সে পেশার শেষ পনের-ষোল বছর বিপণন পরামর্শদাতার কাজ করলো ! ... ...
ইন্দ্রনীলের স্কুলের বন্ধু গাই বিরনবাউম থাকতো ওয়েস্ট হ্যাম্পষ্টেডে। তাদের পরিবারের সঙ্গে আমাদের অসম্ভব নৈকট্য গড়ে ওঠে। অনেক সাবাথের সন্ধ্যা কাটিয়েছি তাদের সঙ্গে। বাংলায় আমরা যাকে ভুরি ভোজ বলি সেটা শুক্রবার ইহুদি সাবাথের সান্ধ্য ভোজনের তুলনায় জলখাবার মাত্তর! গাইয়ের মা বিরশেবাকে বলতাম শনিবারের দিনটায় কাজ কর্ম কেন যে মোজেস বারণ করে গেছেন এবারে বুঝলাম। আগের দিনের সেই বৃহৎ ভোজন উৎসবের পরে শনিবার শরীরকে ব্যস্ত না করাই ভালো! ... ...
মাইকে ঘোষণা হয়, অবরোধ উঠে গিয়েছে৷ পরবর্তী ডাউন ট্রেন ইছাপুর স্টেশন ছাড়ছে৷ ওই পথটুকু ঘড়ি ধরে আসলে, সোদপুরে সেই ট্রেনের পৌঁছতে আরও মিনিট কুড়ি৷ সময় যত গড়ায়, চোখের সামনে ভাসতে থাকে ট্রেনের চেনা ছবিটা — মালপত্রে উপচে পড়া ট্রাক, লরির মত - ট্রেনের ইঞ্জিন, ড্রাইভার-গার্ডের কামরার বাইরে, দরজার পাদানিতে, ভিড়ের গায়ে ভিড় লেপ্টে৷ মাঝে মধ্যে কানে আসে, সেই ট্রেন থেকেই আগে কোথাও রেলের পোস্টে ধাক্কা লেগে পড়ে গিয়েছেন কোনও যাত্রী৷ ট্রেনের ছাদও বাদ যায় না। সেখান থেকে মাঝেমধ্যেই ওভারহেড তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে টপাটপ মানুষ মরে। এই আছি, এই নেই - কী বিচিত্র জীবন। ... ...
ঋষভ গাড়ি চালাতে চালাতে সারথিকে দেখছিল। আবার ঐ এক কথা ঋষভের মাথায় খেলল- টাকা পকেটে থাকলেই সব পাওয়া যায় না। হঠাৎ তার মনে হল- অর্থের বিনিময়ে অনেক কিছু পাওয়া যায়, অনেক কিছু যায় না। আর যেগুলো পাওয়া যায়না সেগুলো পাবার জন্যই মানুষ আরও দিশাহারা বোধ করে। হঠাৎ করে মনে হয় অর্থের ক্রয়ক্ষমতা সীমিত। নিজের সামাজিক অবস্থানটাকে কাজে লাগিয়ে অনেক কিছু পাওয়া যায়, অনেক কিছু যায় না। হঠাৎ করে মনে হয় নিজের সামাজিক অবস্থানটাও গুরুত্বহীন। অর্থগুলো মূল্যহীন মনে হয়, আর পৃথিবীটা অর্থহীন মনে হয়। ... ...
ছেলেগুলো আসলে গণ্ডগোল করার মতলবেই এসেছিলো। বললো, চব্বিশ ঘন্টা সময় দিচ্ছি, তার মধ্যে না হলে আগুন জ্বালিয়ে দেবো। এখানকার এস-ডি-পি-ও কে চিনতাম আমি, ডি-এস-পি কেও চিনি, খবর দিলে হয়তো সাহায্য পেতাম, কিন্তু সে রাস্তায় যাইনি। সেদিন গেলাম না কলকাতায়। একজন মিস্ত্রীকে চিনতাম, যে আমাদের টয়লেট অনেকগুলো তৈরি করেছে। খোঁজ করে করে তাকে ধরলাম, সেপটিক চেম্বার সারাবার ব্যবস্থাটা হলো। বান্দোয়ানের হাসপাতালে গেলাম, কোনই ব্যবস্থা করা গেলো না। মিস্ত্রী বললো, কাউকে দিয়ে ময়লা পরিষ্কার করিয়ে যদি ঢাকাঢুকি দিয়ে কোথাও রেখে দিতে পারি, ও পরের দিন সেগুলো সরিয়ে দেবার ব্যবস্থা করে দেবে। তারপর কী করলাম জানেন? গোটা কয়েক ড্রাম কিনে বান্দোয়ান থেকে ফিরলাম। ... ...
রাত সাড়ে এগারোটা। প্রচণ্ড জোর আওয়াজ আসছে নিচ থেকে। বিল্ডিং-এর একেবারে নিচে লোহার মেইন গেট। ওই গেটে প্রচণ্ড ধাক্কা মারছে কারা যেন! ঝন ঝন - খট খট - ধড়াম ধড়াম। নানারকমের আওয়াজ হয়ে চলেছে গেটে। সঙ্গে চিৎকার। শোনা যাচ্ছে না ভালো মত। কী যেন বলে চলেছে উগ্র চিৎকারে। হলঘরের ভেতর আর কোনও কথার শব্দ নেই। যা শব্দ, এখন কেবল বিল্ডিং-এর নিচ থেকে। মেইন দরজার বাইরে কি কথাবার্তা চলছে - কান পেতে শুনছে ওরা। কথাগুলো ফার্সিতে। হুমকি দিয়ে চলেছে। বোঝা যাচ্ছে, ওরা সেই কোম্পানির মালিকপক্ষের লোক। ওদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। ওদের সেই ফার্সি কথাগুলো বাংলা করলে হয়, সব কটাকে মেরে ফেলব। পুঁতে দেব এখানেই। কেউ ফিরতে পারবে না দেশে। দরজা খোল…। কথাগুলো হয়ে চলেছে অনেকগুলো কন্ঠস্বরে। এবার সঙ্গে অন্য একটা আওয়াজ। বুকের ভেতরগুলো কেঁপে উঠলো। ফাঁকা ফায়ারিং হচ্ছে নীচে। কেউ নামছে না ওরা নিচে। গেট ভেতর থেকে লক করা। ওরা বুঝতে পারছে লক একবার খুলে দিলে আর উপায় নেই। আজ রাতেই মরতে হবে সবার। কেউ খোলেনি লক। কিন্তু ওই লোহার গেট কতক্ষণই বা বন্ধ করে রাখা যাবে? ভেঙে ফেলার চান্স আছে। বেরোতে তো হবেই কখনও না কখনও। বেরোলে যে কী হবে সেটা আর ভাবতে পারছে না ওরা। বাইরে চলল চিৎকার। ... ...
বড় অদ্ভুত এই সময়। একদিকে দ্রুত শিল্পের বিকাশ ঘটছে, দেশ বিদেশ থেকে মানুষ এসে জড়ো হচ্ছে আমেরিকায়। আবার পাশাপাশি কালোদের উপর নিপীড়ন বাড়ছে, এশিয়া থেকে আসা অভিবাসীদের জন্য কঠিন হয়ে উঠছে সব নিয়মকানুন। বাবনানের চিকনদার আলেফ আলি আর পাঁচকড়ি মণ্ডল, সিলেটের গোবিন্দ সারেং কি আক্রাম, বেদান্ত সোসাইটি গড়ে তুলতে আসা অভেদানন্দ - এমনি আরও অনেকের জীবন জড়িয়ে যাবে অনেক রঙের মানুষের দেশ আমেরিকার এক উথালপাথাল সময়ে, বুনবে নানা রঙের নকশিকাঁথা। ... ...
এই অগাস্টের পনেরো তারিখ আরো একটা দেশে একটা বিশেষ দিন। সে হলো চীন। এদিন ওখানে মস্ত উৎসব হবে। চাঁদের উৎসব। চাঁদের উদ্দেশ্যে নাচগান হবে। নানা রকম ভালো খাবার সাজিয়ে দেওয়া হবে। তার মধ্যে সবচেয়ে স্পেশ্যাল হলো 'মুনকেক'। এই উৎসবকে ওঁরা বলেন ‘মাঝ-শরতের চাঁদনী পরব’। ঠিক যে অগাস্ট মাসের পনেরো তারিখেই তা নয়। তবে আট নম্বর মাসের মাঝের দিনে ঠিকই। চীনের চাঁদ-সুর্য্যের ক্যালেন্ডার মেনে ঐ সময়ে যে পূর্ণিমা পড়ে সেইদিনেই চাঁদের পরব হবে। সেটা সেপ্টেম্বর মাসেও পড়তে পারে, কিম্বা অক্টোবরেও। কিন্তু এসব তারিখের কচকচানি নিয়ে কী হবে? আসল হলো এই উৎসবের পেছনে যে গল্পটা আছে সেটা । চীনে মাইথোলজির গল্প। বলছি। ... ...
"যে অংশটুকু বাকি ছিল এই কাহিনির, লিখে গেলাম। এই কাহিনিকে মরে যেতে দিও না। আলো হাতে, প্রেম বুকে নিয়ে, চোখে স্বপ্ন নিয়ে, হৃদয়ে সাহস নিয়ে আমরা সবসময় মানুষের পাশে পাশেই থেকেছি। তাপিতকে শান্ত কর। ভ্রান্তকে পথ দেখাও আলমিত্রা। তোমার কাছে এসে যেন লোকে শান্তি পায়। মাছি হয়ো না, মৌমাছি হও। তুমি স্বেচ্ছায় আমার পথ বেছে নিয়েছ। আমি চলে যাবার পর থেকেই শুরু হোক তোমার পথ চলা। শেবার রানির বাকি কাহিনি লিখে গেলাম। রানির মত হও। একাকী, সাহসী, ব্যতিক্রমী, নির্জন । " ... ...
হিব্রু পঞ্জিকা অনুযায়ী আজ থেকে প্রায় চার হাজার বছর আগে মেসোপটেমিয়ার উর শহরে বাস করতেন আব্রাম এবং সেরাই। গোরু ভেড়া চড়িয়ে কাটে নিঃসন্তান জীবন। স্থানীয় রীতি রেওয়াজ অনুযায়ী আব্রাম বিশ্বাস করেন নানান দেব দেবতায়। একদিন ঈশ্বর প্রকট হলেন আব্রামের কাছে। বললেন ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয়। আমাকে মান্য করো। আব্রামকে নির্দেশ দিলেন- তোমার পৈত্রিক দেশ ত্যাগ করে চলো কানান অভিমুখে (আজকের ইজরায়েল, সিরিয়া – হাঁটা পথে বারো দিন) সেখানে বংশ প্রতিষ্ঠা করো। তোমার নাম হবে আব্রাহাম, বহু সন্তানের জনক।সেরাই হবে সারা (অভিজাত মহিলা / সুখী) । কানান তোমার ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বাসভূমি। ... ...
গা ছমছম করছিল ওদের। যেখানে সেখানে মনে হচ্ছে তখন - এই সেই ডেরা নয়তো! মানুষ দেখলে মনে হচ্ছে - এরা সেই ইরানের চাবাহারের টেররিস্ট নয়তো! এই বুঝি তুলে নিয়ে চলে যাবে ওই হলঘর থেকে। আট মাসে কোম্পানির আসল মালিকের দেখা পেয়েছিল মাত্র দু’দিন। এসেছিল ওয়ার্কশপে। সাথে লোকলস্কর নিয়ে। তার নিজস্ব শিপ আছে। গুডস এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট করে। বাস আছে অনেকগুলো। ট্রান্সপোর্টের বিজনেস আছে। সঙ্গে গোল্ডের কোম্পানি। নানা দেশ থেকে প্রচুর লেবারকে নিয়ে গিয়ে পুষতে পারে সে। ওই ইরানের মালিকটির ক্ষমতা যে কতটা হতে পারে, কী কী করে ফেলতে পারে সে, পশ্চিমবঙ্গের চাল-ডাল-তেল-নুন-চিনির মাসকাবারি মালের হিসেব দেখে বড় হয়ে ওঠা ছেলেদের সে কথা ভেবেই পা-হাত ঠান্ডা হয়ে আসছিল। হাত দিয়ে তাও গলছিল সোনা। ... ...
উচ্চৈঃস্বরে হাসলেন বিবেকানন্দ। তাঁর স্বচ্ছ ধারালো চোখে কোন ছায়া ঘনাল না, কণ্ঠস্বর তেমনি ভাবগম্ভীর এবং দৃঢ়। আপনার শরীর নিয়ে আমার কোন কৌতূহল ছিল না, জানতে চেয়েছিলাম এই পোশাক আপনি কোথায় পেলেন। সারার চোখ এবার আনন্দে চকচক করে উঠল। আমি অনেক খুঁজে এই পোশাকের প্রতিটা উপকরণ সংগ্রহ করেছি। প্যারিস আর লন্ডনের বিভিন্ন মিউজিয়ামে গিয়ে হিন্দু নারীর পোশাক দেখেছি, রাজদরবারের নর্তকীর সাজ সজ্জার ছবি দেখেছি। তারপর এই পোশাকের কথা ভেবেছি। তবে এর প্রতিটা উপকরণ সংগ্রহ করতে আমাকে অনেক কসরত করতে হয়েছে। ইস্ট ইন্ডিয়া গিয়েছিলেন বুঝি? ... ...
ক্লাস ফোর-এ বসেই পাশের ঘর থেকে প্রতুলবাবুর কণ্ঠস্বর শোনা যায়। ক্লাস টূ আর ক্লাস থ্রী একসাথে বসিয়ে পড়াচ্ছেন তিনি। শোনা যায় ছেলেমেয়েদের সমবেত কণ্ঠস্বরও। তারা মুখস্থ করছে কিছু একটা। সম্ভবত ইংরিজির পাঠ। এ-এন-টি অ্যান্ট, অ্যান্ট মানে পিঁপড়ে, তারপরেই এ-জি-ই এজ, এজ মানে বয়স, এবং পরেরটাই এ-ডবল এস অ্যাস, অ্যাস মানে গাধা। ছেলেমেয়েরা কী শিখছে বোঝা যায় না, কিন্তু ছাত্রশিক্ষকের সমবেত পরিশ্রমকে শ্রদ্ধা না কোরে পারা যায় না ! নিলীন স্থির করে এবার মেদনীপুর ফিরে গিয়ে ও নিজে যে স্কুলে পড়েছিলো সেখানকার শিক্ষকদের সাথে একটু আলোচনা করবে। ... ...
মিনিট দশেক পর এক জেলে এসে হাজির হল, দা হাতে। ঋষভের খুব হতভম্ব লাগছিল- মাছের জায়গায় মানুষ দেখে জেলে কী ভাববে, আর কিছু জিজ্ঞেস করলে ঋষভই বা কী উত্তর দেবে। তবে সে কিছু জিজ্ঞেস করল না, ঋষভ শুধু চোখমুখ দিয়ে আকুতি করল। দা হাতে নিয়ে জেলে কিছুক্ষণ ঋষভকে দেখল। দা দেখে ঋষভের ভয় লাগছিল। জেলে আর ঋষভ একে অপরের ভাষা বিশেষ বুঝবে না, তাই প্রশ্নোত্তরের বিশেষ সুযোগ নেই। জেলে বিশেষ প্রশ্ন না করেই জাল ছাড়িয়ে দিল। তার জালে মাছের বদলে মানুষ ধরা পড়লে তারও বিশেষ লাভ নেই- ছাড়িয়ে দিলেই তার পক্ষে কাজের কাজ। ঋষভ অনাবৃত দেহে বুক হাত দিয়ে চেপে বেরিয়ে এল। সংকোচ হচ্ছিল। জেলে মুচকি হেসে তার পিঠের ঝোলা থেকে কী একটা বের করে ঋষভের গায়ে ছুঁড়ে দিল। ঋষভেরই শার্ট। ... ...
দেশভাগের পর দখলি জমিতে কলোনি স্থাপনের সময়ই স্কুলের জন্য চারটি জায়গা চিহ্নিত করা ছিল৷ নিজেদের ঘর-বাড়ি তৈরির পাশাপাশি এর-ওর কাছ থেকে পাওয়া দানের টাকায় চলে স্কুল তৈরির কাজ৷ ‘বহিরাগত’ শিবপ্রসাদ নাগ কলোনি আর স্কুলের প্রতিষ্ঠাতাদের সেই লড়াইয়ের কথা মনে রাখতেন৷ পয়সার অভাবে কারও পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে, মানতে পারতেন না৷ তবু ম্যানেজিং কমিটির সদস্যেরা, তাঁরা আবার কলোনিরই মানুষ, রোজগার বাড়াতে নিয়ম করলেন, মাইনে এবং পরীক্ষার ফি বকেয়া যাদের, তাদের মার্কশিট দেওয়া হবে না৷ চাপের মুখে হেড স্যার সে নিয়ম মানলেন৷ ফলে বার্ষিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন দেখা গেল সব ক্লাসেই অর্ধেকের বেশিরভাগ ছাত্র অনুপস্থিত৷ ... ...
দুপুরে দুজনে বাবাবুদানগিরি ঘুরতে গেল। সেযুগে য়েমেনের আরবরাই একমাত্র কফি চাষ করত, ওরাই একমাত্র কফি রপ্তানি করত। ওখান থেকে পৃথিবীর কোনও প্রান্তে কফি বীজ নিয়ে আসা যেত না। ধরা পড়ে গেলে কঠিন শাস্তি। বাবা বুদান নামে এক সুফী সাধক মক্কা থেকে হজ করে ফেরার সময় লুকিয়ে কিছু কফির বীজ লুকিয়ে নিয়ে আসার ধৃষ্টতা করে আর এই পাহাড়ে পোঁতে। সেই থেকে ভারতবর্ষে প্রথম কফি চাষ শুরু। সারথি এইসব গল্প ঋষভকে বলছিল পাহাড়ের ঘাসে শুয়ে দূর-দূরান্তের উপত্যকাগুলো দেখাতে দেখাতে। ... ...
কখনো কখনো দুয়ের মধ্যে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন এক তৃতীয়জন, ‘লার্কিং ভেরিয়েবল’ অথবা ‘কনফাউণ্ডার’। চাদ্দিকে এর মেলাই উদাহরণ, এই যেমন আপনার মাইনেও বাড়ছে আর পাল্লা দিয়ে ব্লাড প্রেশার, হয়তো দেখা যাবে, মাইনে বাড়ছে বয়সের সাথে, রক্তচাপ-ও তাই ... আবার কিছু মাথামুন্ডু নেই এমন জিনিষেও কোরিলেশান বেশি হতেই পারে, Zআনতি পার না। আই-এস-আই-এর একটা মজার গল্প আছে এই নিয়ে। দেবপ্রিয়বাবুর কোর্স, মিড-সেমেস্টারে প্রশ্ন এসেছে, 'মানুষের উচ্চতাও যেমনি বাড়ছে, মাথার চুলের ঘনত্ব তেমনি কমছে ... ক্যায়সে?' আমার এক প্রিয় জুনিয়র দুর্ধর্ষ উত্তর লিখে এলো, 'লম্বা লোকের টাক সূর্যের অনেকটাই কাছে, সেখানে গরম বেশী, খুব ঘাম ... ঘেমো টাকে অল্প চুল যদি না-ই পড়লো, তা'লে আর ঘেমে লাভ কি?' (বলাই বাহুল্য, আসলে হাইট আর জেন্ডারের সম্পর্ক আছে, ‘জেণ্ডার’ এখানে লার্কিং ভেরিয়েবল।) ... ...
আমাদের আরো একটি প্রোগ্রাম হল “কম্যুনিটি হেল্থ প্রমোটার”। রেফিউজি হতে হবে। সিটিজেন হলেও রেফিউজি হিসেবে এ দেশে এসেছে এমন মহিলা ইংরেজী পড়তে লিখতে আর বলতে পারলে এই প্রোগ্রামে ঢোকা যায়। ১৮ বছর হতে হবে। ওদেরকে বেসিক ট্রেনিং দেওয়া হয় আর অনেক সাপোর্টিভ কাগজপত্র। মূল উদ্দেশ্য হল কম্যুনিটিকে স্বাস্থ্য সচেতনতার উপকারিতা নিয়ে বলা আর পরামর্শ দেওয়া। এই প্রোগ্রাম আমার হাত দিয়েই শুরু। কঠিন কাজ - কারণ, প্রথমত: ট্রেনিং এর জন্য উপযুক্ত স্পিকার খুঁজে বার করা, ওদের রেজ্যুমে জমা দিয়ে আ্যাপ্রুভ করা, এবং স্পিকাররা কোন সান্মানিক পাবে না। পুরোটাই স্বেচ্ছায় নিজের মূল্যবান সময় কম্যুনিটিকে উৎসর্গ করা। দ্বিতীয়ত: কারা কারা এই প্রোগ্রামের জন্য এলিজেবল। তৃতীয়ত: প্রত্যেক ভাষার একজনকে খুঁজে বের করে রাজী করানো- অনেক কাজ। যথারীতি কোন রোহিঙ্গা মহিলা পেলাম না। ... ...
নিঝুম রাতের বেলা হেঁটে হেঁটে ফেরা। বোম্বে বাজারে ফেরার রাস্তায় ওই অন্য রাজ্যে কাজে যাওয়া বাঙালি ছেলে দেখলে চুরি-ছিনতাই-গালাগাল ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। আর এই সোনার কারিগরদের আর একটা প্রাপ্তি প্রায় কমন। সামান্য কিছু ভুলভ্রান্তি বা এধার ওধার দেখলেই পিঠে পড়বে মার। অবাঙালি শেঠ মালিকদের হাতে বা লাঠিতে পেটানি। সঙ্গে অবাঙালি মুখের অন্য ভাষার গালাগাল। ওই টাইট রুটিনে সোনার কাজের কারিগরি শিখতে শিখতে মইনুদ্দিন হয়ে উঠল পাকা কারিগর। ওর হাতদুটো ওই সোনালি ধাতুতে কারুকার্য তুলতে হয়ে উঠল পারদর্শী। মইনুদ্দিনের পড়াশোনার বুদ্ধিটা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের স্ট্যাম্পমারা রেজাল্টের ছাপা কাগজে ছাপ না ফেললেও বারবার সে বুদ্ধি ছাপ ফেলেছে ওর লেবার জীবনে। ... ...
এই লাইনের মানে কী হলো? – জলধর বলে, ধারমুর শেখানো করম পুজো আমরা এখন সবাই মানি; মানি, তাই বাঁচি মাথা উঁচু করে। অনেক দিন আগে, তা প্রায় একশো বছর হবে, আমাদের পূর্ব পুরুষরা নিজেদের ভাষা প্রায় ভুলতে বসেছিলেন। তখন ইংরেজ আমল, আমাদেরই জঙ্গলের জমি কেটে খনি বানিয়ে ওরা আমাদের বাপ-দাদাদের তখন কুলি বানাচ্ছে, হাজার মাইল দূরে ওদের চা-বাগানে ধরে নিয়ে যাচ্ছে কুলির কাজ করার জন্যে, আর আমাদের বাপ-দাদারাও নিজেদের ভাষা ভুলে ওদের ভাষাই শেখার চেষ্টা করছেন। সেই সময়ে জন্ম নিলেন এক আশ্চর্য মানুষ যিনি অনুভব করলেন মাতৃভাষা মানুষের কাছে কত বড়ো সম্পদ। ... ...