এই মত্ত জনতা মেয়েদের মধ্যেও চার্লসকে খুঁজে পেল। কিংবা মেয়ে সেজে চার্লস লুকিয়েছে কিনা, সেটা বুঝতেই যেন তাদের পোশাক খুলে চামড়া মাংস ঘেঁটে তারপর নিকেশ করল। নিউ অরলিন্সের রাস্তায় রক্ত জমাট বাঁধছিল। আগের কাল আর নেই, যে নিগ্রো মানেই নিরস্ত্র, পড়ে পড়ে মার খাবে। তাদের কাছেও আছে বন্দুক, ছোরা, লাঠি। জায়গায় জায়গায় খণ্ডযুদ্ধ। নিউ অরলিন্স জ্বলছিল। হই হই করে সাদাদের দল ছুটল ট্রেমে, ওখানে গেলেই পাবে চার্লসকে, কিংবা তাদের জাতভাইদের। একজন পুলিশকে শুইয়ে দিয়েছে কিনা একটা নিগ্রোর বাচ্চা! ... ...
সনতের ঘাড় মাথা পিঠ টনটন করছিল; চোখ লাল, মাথা ধরে আছে। কাল থেকে ডেস্কটপে ইসরোর সাইট আর টিভির স্ক্রিনে নজর রেখে যাচ্ছে অবিরাম। মন্টুর মা সকালে লুচি আর মোহনভোগ করেছিল, তারপর রান্না করে খাবার বেড়ে রেখে গেছে দুপুরে। এই মধ্যরাতে সেই বাড়া ভাত, আর মাছের ঝোল থেকে আঁশটে গন্ধ সনতের ঘরদোরে ছড়িয়ে পড়ছিল। পিঁপড়ে ধরেছিল বাসি লুচি, মোহনভোগে। গালে হাত বোলাল সনৎ – খোঁচা খোঁচা দাড়ি; ল্যান্ডিং হয়ে যাক, কালই সেলুন যাবে, চুল কাটবে, ফিটফাট হয়েই মিঠুর বাড়ি। ... ...
‘রাইডিং দ্য ওয়াইল্ড হর্স মেডিটেশন’ আমি আর কখনো করিনি। ঐ পাঁচদিন আমার শরীরের, মনের ওপর যে ছাপ ফেলেছিল – তার জের সামলে উঠতে পারছিলাম না। আমি বুঝতে পেরে গেছিলাম, যে জীবনকে আমি এতদিন যা বলে জেনে এসেছি, তা ঐ পাঁচদিনে একেবারে শেষ হয়ে গেছে। সেই ‘আমি’ শেষ হয়ে গেছে তার সঙ্গেই। আমি বুনো ঘোড়ার পিঠে উঠতে গেছিলাম। বুনো ঘোড়ারা আমাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। ঐ ধুলোর মধ্যে এখন রয়েছি পড়ে ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের ক্রিচারের মত এই ‘আমি’। নিজের অচেনা। নতুন। হ্যাঁ, ঐ বুনো ঘোড়া আমার জন্মদাতা। ... ...
পথেঘাটে মেয়ে মোটে নেই। গঙ্গার ঘাটে দেখেছিল হিন্দুঘরের মেয়েরা জলে ডুব দিয়ে নাইতে নেমেছে। এদিকটায় এসে দুই একটা মেয়ে দেখেছে, তাদের চলনবলন একেবারেই আলাদা। কী টকটকে গায়ের রং, তেমনি অদ্ভুত চুলের রং। চুল কার এমন লাল হয়! আমিনা তাজ্জব বনে যাচ্ছিল! এদের সবারই সাজগোজের ভারি বাহার, ছোট ছোট ফ্রক, বুকের আঁচলটুকু অবধি নেই। পায়ে চামড়ার জুতো, তাতেই বা কত কায়দা। আমিনা জুতো পরা কোনো মেয়ে কোনোদিন দেখেনি। এমন দুই-একজনকে কোনো ফিরিঙ্গির হাতে হাত গলিয়ে হিহি হাহা করতে করতে যেতে দেখল আজ। ওরা মেয়ে, কিন্তু যেন মেয়ে নয় – অন্য জগতের। এদেরই কি ওয়াহিদ বেবুশ্যে বলেছিল? তাদের গ্রামেও বদনাম হওয়া মেয়ে থাকে, কিন্তু তাদের সাজ পোশাকে না আছে রং, চলা ফেরায় না এই ঢং। ... ...
একটি মেয়েকে হিজাব পরে অনবরত নেচে যেতে দেখে অবাক হই। - হিজাব মানেই তো জানি, ধর্মীয় অন্ধতা। - মেয়েটি বলে, তা কেন? আমার যতটুকু অংশ বেশি সুন্দর সে-টুকু দেখাচ্ছি। - এতে কি বেশি সুন্দর লাগে? - আমার তো লাগে। ... ...
দেকো, সিবিল ওয়ার হইচিল এখেনে, তারপর যতেক নিগ্রো ছিল সবাইকে বেবাক আজাদ করে দিল। দিল তো? কিন্তু সাদাদের সেটা কদ্দিন সইবে বল দিকিন? সব তো ফিরিঙ্গিদেরই জাতভাই। যা দেছেল, সব কুটুকুটু করে ফেরত নিতে চায়। সেটা কীরকম? ফের জুতে দেবে ওদের? না, তা নয়, কিন্তু নতুন আইন করেছে সরকার, অনেক নিগ্রোদের ভোট থাকবে নাকো। ভোট? সেইটা কি এস্রাক ভাই? প্রশ্নটা জয়নাল করল, কিন্তু শব্দটা অজানা তাদের সবার। এই দেশের লোক তা আমাদের মতুন নয়কো, এরা নিজেদের পছন্দমত সরকার বানায়, তাকেই বলে ভোট। মাথা চুলকিয়ে এটুকুই বলতে পারে এস্রাক। যা বলেছিল তার বউ-বেরাদর। নিগ্রোদের আর পছন্দ করতে দেবে না, যা করবে সাদারা। ... ...
কিঞ্চিৎ অর্থ আয়ের উদ্দেশ্যে কাঁটাকলে অর্থনীতি পড়ার সময় বাড়িতে দু জনকে পণ্ডিতি টোলের ধরনে পঠন পাঠন করিয়েছি। এখন পঁচিশ জন প্রাপ্তবয়স্ক ছাত্র ছাত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে কোন কায়দায় বিদ্যা বিতরণ করব? টেবিলে গাদা খানেক প্লাস্টিক অ্যাসিটেট। প্রজেক্টরে এক নম্বর স্লাইড গুঁজে বেয়াতে আলোক সম্পাতের জন্য প্রস্তুত। কেবল আমার ইঙ্গিতের অপেক্ষা। গুরু বাক্যি স্মরণ করে জেনে নিলাম কে কোন ব্যাঙ্কের কোন বিভাগে কতদিন কাজ করেছেন। প্রশ্নোত্তরের সুযোগে তাদের কথিত ইংরেজি বিদ্যার পরিচয় পাওয়া গেল। সিঁথি বরানগরে লালিত আমার ইংরেজি উচ্চারণ তাঁদের বোধগম্য হচ্ছে কিনা সে হদিশ নেওয়াটাও জরুরি ছিল। নিজের ব্যবসার তরিকা অন্যকে বোঝাতে হয় নি।কাঁটাকলের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্টেট ব্যাঙ্কে যোগ দিয়ে কাজ শিখেছি কাজ করে, ক্লাস রুমে বক্তৃতা শুনে নয়। পাতাটি ছিল সাদা। টাবুলা রোজা। কাগজে লেখো নাম, সে নাম রয়ে যাবে! ... ...
সুলভের সামনে কেউ নেই তখন। ভেতরে, মেঝে জুড়ে ভাঙা কাচ। দেওয়াল কাঁপছিল, দরজা, স্কাইলাইট – সব; ঘুলঘুলির সামনে পাখির বাসা মাটিতে ঠিকরে পড়তে তিনটে ডিমই ভাঙল। বাথরুমে ঢুকে কল খুলল প্রফুল্ল – লালচে জল চড়বড় করে পড়ছিল বালতির ভিতর। তারপর প্রফুল্লর চোখের সামনে কলের মাথা ফেটে ফিনকি দিয়ে জল বেরল, চিড় ধরল দেওয়ালে। পাশের স্নান করার খোপ থেকে জল বেরিয়ে আসছিল গব গব করে, মাথার ওপরে ছাদের আস্তর খসে পড়ল এইবার; জাহাজ তাহলে গলিতে ঢুকেছে – সাবান-মাখা, আদুল-গা প্রফুল্ল দৌড় মারল মন্দিরের দিকে। ... ...
আমাদের সব অনুভূতিই একেকটা মেসেঞ্জারের মত। একেক জন একেক খবর নিয়ে আসে। খবরটা দেবার জন্য ওরা আমাদের ডাকে। বলে "ওগো,তাকিয়ে দেখো। এমন ঘটনা ঘটলে তুমি নিরাপদে থাকবে। এমন ঘটলে তোমার সমূহ বিপদ। এই কাজ ভুলেও করতে যেওনা। এই কাজটা বারবার কোরো।" এইসব। এইবার আমাদের ওরা ডাকবে কী করে? ওরা মানুষের ভাষায় কথা বলতে পারেনা, গলার স্বর নেই ওদের। আঙুলও নেই যে ইমেল করবে, হোয়াট্স-অ্যাপ করবে। ... ...
মানুষের ভয়ের প্রতি এক আশ্চর্য আকর্ষণ আছে। সেই আকর্ষণ থেকেই শিশুরা ভূত বা জুজুবুড়ির গল্প শুনে ভয় পায় এবং বারবার সেই ভূত ও জুজুবুড়ির গল্প শুনতে চায়। বাঙালি তরুণ-তরুণীদের মানসিক বিকাশের এক বড় বাধা এই ভূত পেত্নী ও জুজুর গল্প। ... ...
অফিসের কাছাকাছি একটা ট্রাফিক সিগনালে রোজ দাঁড়াতে হয়। অভ্যাসের বশে দাঁড়িয়ে পড়ল সেখানে, অথচ আজ সিগনালের রঙ সবুজ। একশ’ কিলোমিটার স্পিডের রাস্তায় সবুজ আলোয় দাঁড়িয়ে পড়েই বুঝল – ভুল করেছে, তবু, শোধরানোর চেষ্টা করল না, দাঁড়িয়েই রইল, দাঁড়িয়ে রইল ঠায় – যেন সে চলচ্ছক্তিহীন; চোখ যতদূর যায়, ঢালা পিচরাস্তায় খণ্ড খণ্ড জলতল, বাষ্প উঠছে সেখান থেকে। পঙ্কজ তার ভাগ্যের কাছে নিজের হৃৎপিণ্ড বন্ধক দিয়ে বসে রইল – যা কিছু ঘটে যেতে পারে এই মুহূর্তে – হয়তো একটা কলিশন, হয়তো চুরচুর হয়ে যাবে গাড়ি, তালগোল পাকিয়ে যাবে পঙ্কজ নিজে – শেষ হয়ে যাবে সব। ... ...
নিজেদের জমি, নিজেদের শহর – যেখানে মাথার উপর ছড়ি ঘোরানোর জন্য কোনো সাদা লোক মজুত নেই, আসতে চাও না এমন একটা জায়গায়? যেখানে বাঁচার জন্য সারাক্ষণ বুকে পাথর নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হয় না, সাদা মেয়েদের দিকে চোখ তুলে চাইলে বেঘোরে মারা যাওয়ার কোন ভয় নেই। চাও না এমন একটা পিঠসোজা করা শান্তির জীবন? এভাবেই বলত ইশাইয়া। তার কথায় আগুনের ফুলকি থাকত, মুখে মুখে ছড়িয়ে যেত রঙমশাল। ... ...
সম্পূর্ণ ঘটনাচক্রে, একটি অখ্যাত গ্রামে ব্যাঙ্কিং শিক্ষাদানের সুযোগে, আমার যে শুধু পোল্যান্ড-সহ লৌহ-যবনিকার আড়ালে ঢাকা পূর্ব ইউরোপের দেশগুলির সঙ্গে প্রথম পরিচয় হল, তা-ই নয়, অ্যালান হার্স্টের মত এক অসাধারণ মানুষের কাছাকাছি আসার সৌভাগ্য অর্জন করলাম। সিটি ব্যাঙ্কে যোগ দেবার আগে তিনি আমেরিকার ডেমোক্রাট দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। হোয়াটসঅ্যাপ এবং আই টি সেল নামক আধুনিক জনসংযোগের তুখোড় মাধ্যম ভোটারদের তখনও অজানা। পার্টির ইস্তাহার, ম্যানিফেস্টো এবং বক্তৃতার ড্রাফট লিখতেন লেখাপড়া জানা ভদ্র মানুষজন। গুজব শুনেছি, উইলিয়াম জেফারসন ক্লিনটন নামক এক যুবকের নির্বাচনী ভাষণের খসড়া করেছেন অ্যালান। বত্রিশ বছর বয়েসে ক্লিনটন লিটল রক, আরকানসাসের (মতান্তরে আরকানস’) রাজ্যপালের অফিসে অধিষ্ঠিত হলে, আপন রাজনৈতিক কর্তব্য সমাপ্ত হয়েছে মনে করে অ্যালান ব্যাঙ্কিং-এ এলেন। সিটি ব্যাঙ্কে সিকি-শতাব্দী কর্ম করেন, মুখ্যত উন্নয়নশীল পূর্ব ইউরোপে। ... ...
মনে করুন সেই ছোট্টবেলার ভূগোল বই – সৌরজগতের ছবি আঁকা। প্লুটো তখন-ও লাইনের শেষে টিমটিম করে দাঁড়িয়ে আছে, আর বাকিরা আগে-পিছে উঁকি মারতে মারতে ঘুরে চলেছে – আমাদের দেখা সৌরজগতের প্রথম ‘মডেল’ এবং বলাই বাহুল্য, সেটিও খুঁটিয়ে দেখলে ‘ভুল’-ই। তবে এক্কেবারে ডাহা ভুল নয়, অন্তত সূর্য তো মধ্যিখানে, তাই না? একটা সময় তা-ও ছিল না, যেমন ধরুন টলেমি আর কোপারনিকাস – টলেমি-র মডেল ‘জিওসেন্ট্রিক’ আর কোপারনিকাসের ‘হেলিওসেন্ট্রিক’। ‘জিওসেন্ট্রিক’ অর্থাৎ পৃথিবীর চারদিকে সূর্য বা অন্য গ্রহ প্রদক্ষিণ করে এমন কথা এখন বাচ্চারাও শুনলে হাসবে। আর বড়দের মধ্যে? সেই এক বিখ্যাত কন্সপিরেসি-থোরিস্ট কে-সি-পাল ছাড়া আর কেউ এ কথা বিশ্বাস করবেন, এমন ভাবনা-ই অসম্ভব, কিন্তু টলেমি নেহাত বোকা বা গোঁড়া মানুষ ছিলেন না। ছিলেন একজন জিনিয়াস! ... ...
শরতের আকাশে যথারীতি হাল্কা নীলের উজ্জ্বলতম শেড সকালের দিকে – ত্যারছা রোদ এসে জবার টবে পড়েছে আপাতত, ঘুরে ঘুরে অন্য গাছের কাছে যাবে বেলা বাড়লে। এই একফালি রোদটুকু যেন মিঠুর ডাস্টার – যেন ক্লাসরুমের ব্ল্যাকবোর্ডে বড় করে লেখা আছে ক্যান্সার, লেখা আছে মৃত্যু, হাড়গোড়, নরকঙ্কাল – এই সব আঁকা রয়েছে যেন – দুষ্টু ছাত্ররা যেমন শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে বোর্ডে অকথা-কুকথা লেখে – কোনো শিক্ষক রিঅ্যাক্ট করেন, কেউ নির্লিপ্ত মুখে মুছে দেন, যেন কিছুই হয়নি – সকালের এই রোদ, এই নীল রঙ হাতে নিয়ে মিঠু সব মুছে দেয়, নতুন কিছু লিখবে বলে চক নেয় হাতে; রোদ চড়া হলে ছাদের দরজা বন্ধ করে নিচে নামে। সিঁড়িতে ওর চটির শব্দ হতেই ছন্দা এসে ল্যান্ডিং-এ দাঁড়ায়, তারপর মিঠু শেষ ধাপে পৌঁছলে, ওর দিকে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকায়। ছন্দার চোখে বিষণ্ণতা আর টেনশন চিরকালই, এখন সে’ চাহনিতে ভয়কে খুঁজে পাওয়া যাবে খুব সহজে। ইদানিং মা’র চোখে চোখ রাখলে প্রবল শোককেও চিনতে পারে মিঠু – সে যে তার মায়ের সামনে জলজ্যান্ত দাঁড়িয়ে, ছন্দা যেন তা বিস্মৃত হয়; ওর মনে হয়, ছন্দা যেন সিঁড়ির ধাপের নিচে দাঁড়িয়ে ঘোলা চোখে মিঠুর শব দেখছে। ... ...
রথে শুধু বাদশা নেই, আছে বেগমও। যদিও সবার মুখে মুখোশ, মেয়ে হলে তাদের আবার বুকের কাপড় আলগা। তোবা! তোবা! বেলুজ্জেরা তার মধ্যেই দু’হাত আসমানে তুলে নাচগান জুড়েছে। মাঝে মাঝে রাস্তার দু’ধারে মুঠো-মুঠো পুঁতি ছুঁড়ে দিচ্ছে। আলেফরা নিচু হয়ে পুঁতি কুড়াবে, না ঘাড় উঁচু করে ফর্সাপানা মেয়েছেলের কেচ্ছাকাণ্ড দেখবে? এত উৎসব, উত্তেজনা আর খাওয়া দাওয়ার ধূম কোনো বাপের জন্মে দেকিনিকো। রাতে বাড়ির পথ ধরে ওদের মুখে শুধু এই বুলি। মারদি গ্রাঁ দিনরাত মানে না, তেমনি চলছে যেন কারো কোনো ক্লান্তি নেই। ... ...
আমরা কোনো প্রশ্ন করি না কেন? কেন সব ঘাড় গুঁজে মেনে নিই? ততদিনে আমরা আর ক্রীতদাস নই, কিন্তু সে কেবল নামেই। মাথা ঝুঁকিয়ে কাজ করে যাওয়ার বাইরে কিছুই শিখিনি। রেভারেন্ড ওয়ালেস তার বক্তিমে থামিয়ে আমার দিকে সোজা চোখে তাকাল। কী বলতে চাইছ হে ছোকরা? আমার হাতে একটা বই ছিল, সেটার দিকে তাকিয়ে বলল, দু’পাতা পড়েই নিজেকে পন্ডিত ভাবছ বুঝি? শুনি তোমার বিদ্যের বহর। কী বলতে চাও? বললাম তো। যা দেখছি চারদিকে সব কিছুকে প্রশ্ন করতে হবে। আমরা এখানে ভগবানের কথা বলছি – জেসাস। সেটা কি মাথায় ঢুকেছে খোকা? তাকেও প্রশ্ন করো। চু-উ-প! ফেটে পড়েছিল রেভারেন্ড ওয়ালেস। আর একটা কথা না। আমার তখন রক্ত নবীন, হেঁকে উঠলাম, কেন চুপ করব? সাদাদের ভগবান নিয়ে আমাদের এত আহ্লাদ কিসের? দু’হাত দু’দিকে ছড়িয়ে জমায়েতের দিকে তাকিয়ে রেভারেন্ড ওয়ালেস বলে উঠল, দ্যাখো, এই জন্যেই কি আমরা নিগ্রো বাচ্চাদের পড়তে-লিখতে শেখাচ্ছি? আমার মাথায় তখন আগুন দপদপ করছে। আমিও সমানে চেঁচিয়ে বললাম, তুমি কিছুই শেখাচ্ছ না, সাদাদের বলে দেওয়া বুলি আওড়াচ্ছ। ... ...
স্মিতা এই অঞ্চলের পথঘাট চেনে না। ধনঞ্জয়কে সঙ্গে নেবে ভেবেছিল একবার; পায়েলও বলছিল – “এই বৃষ্টিতে যেও না দিদি।” শেষ অবধি একলাই বেরোল – একটা ট্যাক্সি নিয়ে সটান সাহেব-গলি। ধনঞ্জয় বলেছিল, “গলির ভেতরে একটা পোস্টাপিস আছে, ভাই বলছিল – ওখানে জিজ্ঞেস করলে কিছু জানা যেতে পারে।” ক্লাস সেভেন-এইট অবধি পঙ্কজরা এ’পাড়ার ভাড়া বাড়িতে, তারপর শহর বদলেছিল – স্মিতা এইটুকুই জানে। আজ এই বৃষ্টিতে অচেনা গলিঘুঁজিতে এলোপাথাড়ি ঘুরে সে পঙ্কজের অতীতকে খুঁজে পাবে না – নিজেও বোঝে। তবু সে সাহেব-গলিতে আসার ডিসিশন নেয় গতরাতে। ... ...