আলি আকবর বলল, আমি তো কবে থেকেই বলছি খবরের কাগজে চাকরি করে আপনি আপনার প্রতিভার অপচয় করছেন। ছেড়ে দিন ওসব চাকরি, আপনার উচিত সর্বক্ষণের সাহিত্যসেবী হওয়া। নজরুল পেট চাপড়িয়ে বলল, কিন্তু মধ্যপ্রদেশ কি রাজি হবে? আফজালুল বলল, ঠিক আছে, আমি আপনাকে একটা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। আপনি যদি সাহিত্যের হোলটাইমার হন, আর আপনার যাবতীয় রচনা আমাকে দেন মোসলেম ভারত-এর জন্যে, আমি তাহলে আপনাকে প্রতি মাসে একশো টাকা দেবার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। প্রমিস! আপনার প্রতিভার তুলনায় এ-টাকাটা কিছুই নয় আমি জানি, কিন্তু আপনার মধ্যপ্রদেশ মনে হয় শান্ত থাকবে এতে। ... ...
“সেইটা বলা খুব মুশকিল, বুঝলি। এটাই হল এই বিষটার মজা। সাঙ্ঘাতিক টক্সিক এই বিষটা কোনও পরীক্ষায় চট করে ধরা পড়ে না। আর কতক্ষণে কাজ করবে সেটা নির্ভর করে কীভাবে আর কতটা প্রয়োগ করা হয়েছে তার ওপর। তবে যেহেতু কয়েক ঘণ্টা আগেও পার্টিতে ও একেবারে স্বাভাবিক ছিল, তাই অনুমান করা যেতে পারে বেশ খানিকটাই শরীরে ঢুকেছে। তবে বেশ খানিকটা মানে আবার কয়েক গ্রাম ভাবিস না যেন। একটা আলপিনের মাথায় যতটুকু ধরে ততটা রাইসিনই একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষকে মেরে ফেলতে যথেষ্ট। ওই পরিমাণ বিষ যদি ইনজেক্ট করা হয়, তবে তিন থেকে ছ’ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু হতে পারে।” ... ...
কুঁদলি/কুঁদরি/তলি, নোনা এইসব ছিল প্রান্তিক মানুষ, কুড়ানিদের খাবার। এখানে ওখানে যারা অস্থায়ী সংসার পেতে থাকত। কয়েকজন বা একা। চট বা মাদুরে জড়ান সংসার পাতত, মাটির ছোট উনুন তুলে কদিন রেঁধে বেড়ে খেত, আবার চলে যেত। হাট থেকে কুড়ানো সবজি ফল, ছাঁট। এখান ওখান থেকে সংগ্রহ করা মেটে আলু, ডুমুর, ওল, নোনা, কচু, হরেক রকম শাক, গুগলি, কাঁকড়া এসব দিয়ে তাদের খাবার তৈরি হতো। ভাতে ভাত সেদ্ধ অথবা সব মিলিয়ে একটা ঝোল। ... ...
যাইহোক, ও তো স্বরূপ। সেই কথায় ফিরে আসি। এ হল আমাদের স্বরূপ। স্বরূপ বাজারে হাঁসের ডিমের দাম পায়নি। বাজারের স্বরূপ তার জানা নেই। জানার কথা নয়। এই না জানা তার খুব ক্ষতি করলেও অপরাধ তার একার নয়। স্বরূপের হাঁস মরে গেছে, সাদা মাছ সব মরে গেছে বন্যায়। কই স্বরূপকে দেখে আপনাদের তা মনে হচ্ছে? শ্রমের রঙ সাদা হয় কিনা জানিনা। কালো ধলো সবতো বলে জেনেটিক। কিন্তু এত বেশি মানুষ এত কম মানুষের হাতে অত্যাচারিত শোষিত যে শ্রমজীবী মানুষকে আমরা অনেকে হয়তো কালো বা বাদামী রঙে দেখতে ভালোবাসি। ... ...
চটের সিনেমা হলে রিল ঘোরার একটা আওয়াজ হতো। মাঝে মাঝে কেটে যেত। সামনে দিয়ে কেউ হেঁটে গেলে পর্দায় তার ছবি দেখা যেত। লোকে হাঁই হাঁই করে উঠতো। ছেলেমেয়েদের বসার জায়গা ছিল আলাদা। একসঙ্গে বসতে দিত না। লোকে চোঙা ফুঁকতে আসতো, মহিলাদের বসিবার ও সাইকেল রাখিবার সুবন্দোবস্ত আছে। আপনারা সবাই যাবে। যাবে। যাবেন নয়। টেনে টেনে সুর করে বলতো। আর রঙিন কাগজের লিফলেট ছড়াতো। আমরা বাচ্চারা সেই সাইকেলের পিছন পিছন ছুটতাম। আর পরে নকল করে বলতাম, আপনারা স বা ই যা বে এ এ এ। বাড়ি বাড়ি এসে সিজন টিকিট বেচে যেতেন চেনা উদ্যোক্তারা। গোলাপি ও সাদা রঙের কার্ড হতো। তলায় দিনের খোপকাটা থাকত। গেটে কেটে নিয়ে ঢুকতে দিত। বিদ্যুৎ নয় ডায়নামো বা জেনারেটরের সাহায্যে সিনেমা চলত। একদিকে সিনেমার রিল চলার আওয়াজ অন্যদিকে জেনারেটরের আওয়াজ। ঘ্যারঘ্যার। তাতে কী, কেঁদে ভাসিয়ে দিতাম নায়ক নায়িকার দুঃখে। ... ...
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মুরমানসকের ভূমিকা বিশাল। জার্মানদের রাশিয়া আক্রমণের পর এই বন্দর দিয়েই মিত্র শক্তি সাহায্য পাঠাতে থাকেন। লেনিনগ্রাদ ও স্টালিনগ্রাদের মত মুরমানসক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য একটি হিরো সিটি বা বীর শহর নামে পরিচিত। শহরের প্রায় চুড়োয় একটি বিশাল মূর্তি আছে, তার নাম আলইশা। সেটি সেই সংগ্রামের স্মারক। নিচের কোলা উপসাগরে বরফ ভেঙে সমুদ্রপথ পরিষ্কার করার প্রথম আণবিক শক্তি চালিত জাহাজ “লেনিন” বন্দরে নোঙর করা আছে। প্রায় চল্লিশ বছর ধরে অনেক বরফের দেয়াল খনন করে ১৯৮৯ সালে লেনিন এখানে বিশ্রান্তি গ্রহণ করেছে। এতটা উত্তরে এলে সারা দুনিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন মনে হয়! সেটি হয়তো সঠিক নয়। আলইশা স্ট্যাচুর পদতলে দাঁড়িয়ে কল্পনাকে হাওয়ায় উড়িয়ে দিলে মনে মনে হয়তো অনেক দূরে চলে যাওয়া যায় – এই তো সামনে কোলা উপসাগর, সেটি গিয়ে মিশেছে বারেনট সাগরে। সেখান থেকে একটু বাঁয়ে ঘুরলেই কানাডার সমুদ্রপথ। বছরে অন্তত পাঁচ মাস খোলা থাকে। এর নাম সুমেরু সেতু। মালবাহী জাহাজ যেতে পারে চার হাজার কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত ম্যানিটোবার চার্চিল বন্দরে। আর খাড়া উত্তরে গেলে মাত্র দেড় হাজার কিলোমিটার দূরত্বে উত্তর মেরু। পা আরেকটু বাড়ালেই তো খাঁটি উত্তর বা ট্রু নর্থ! ... ...
এখন পাড়ার ঠানদি বলিলেন, “ও হিদে! তোর খোকা হয়েছে।” শুনিয়া তাহার মুখ লজ্জায় রাঙা হইল।অথচ তাঁহার একান্ত ইচ্ছা একবার দৌড়িয়া গিয়া পুত্র ও স্ত্রীর মুখদর্শন করিয়া আসেন।রমনীরা তখন হাসিয়া উঠিয়াছে।তাহাতে তাহার লজ্জা অধিক বৃদ্ধি পাইল।সরিয়া যাইতে চাহিলেন।কিন্তু বাদ সাধিলেন তাঁহার মা।তিনি প্রসব পরবর্তী নিয়ম ও কর্মগুলি সমাধা করিতে ব্যস্ত ছিলেন।পুত্রকে ডাকিলেন, “হৃদয়, পরিস্কার হাতে একটা তাজা বাঁশের গা থেকে চোঁচ কেটে নিয়ে আয়।বাচ্ছার নাড়ি কাটতে হবে।” ... ...
মানসের কাছ থেকে যতটুকু জানা গেল, তা হল এই, যে শনিবার রাত ১১টা নাগাদ তুহিন আর ঋক পার্টিতে পৌঁছয়। তারপর যথারীতি হাই-হ্যালো, নাচ, ড্রিংক্স এসব চলছিল। সবাই বেশ ভাল মুডেই ছিল। কথা নেই, বার্তা নেই – কোথা থেকে ওই আমন শর্মা নামে ছেলেটা এসে তুহিনকে চুমু খেতেই পুরো সিচুয়েশন পাল্টে গেল। ঋক তো রেগে টং। তারপর খানিক কথা কাটাকাটির পর তুহিন আর ঋক দু’জন পার্টি ছেড়ে বেরিয়ে যায়। নাহ্, কোথায় গেছিল সেটা মানস জানে না। পার্টিতে তুহিনের হাতে গ্লাস ছিল, সে ব্যপারে মানস নিশ্চিত। কিন্তু কী খেয়েছে, কার থেকে খেয়েছে – তা মানস জানে না। ... ...
বর্ধমান ছাড়াবার পর নজরুল গান ধরেছে আবার, এমন সময় কামরায় উঠল তিন-চারজন বাউলের একটা দল। শান্তিনিকেতনের পথে রেলের কামরায় এই বাউলরা প্রায়ই ওঠে, আর উঠেই গান গায়। সঙ্গে থাকে তাদের একতারা, আর কোন কোন সময় পায়ে ঘুঙুরও। বাউল, ভিক্ষে করাই এদের পেশা, যাত্রীসাধারণেরও সেটা জানা। ফলে, ঠিক ঠিক চাইতেও হয়না ভিক্ষে, গান শেষ হলে অনেক যাত্রী নিজেরাই ডেকে সাধ্যমতো যা পারে, দেয়। আজ এই বাউলরা উঠে নজরুলের গান শুনে স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। একটু পর, তাদের মধ্যে একজন গানের সঙ্গে একতারায় মৃদু আওয়াজ তোলে, ঘুঙুরের শব্দে তালও রাখে কেউ। নজরুল চোখ মেলে হাসে, তারপর চোখ বুজে গাইতে থাকে আবারও। ... ...
লম্বা-চওড়া, জিম করা সুদর্শন তুহিনকে একবার দেখে চোখ ফেরানো শক্ত ছিল। সবথেকে আকর্ষণীয় ছিল ওর চোখ দুটো। ভাসা ভাসা স্বপ্নালু। আর হাসলে গালে টোল পড়ত। সব মিলিয়ে মনে হত, যেন বলিউডের কোনও রোম্যান্টিক হিরো। ওরকম চেহারা আর ওই রকম ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড থাকলে যে কেউ অন্তত গোটা কতক প্রেম তো করতই। কিন্তু তুহিন ছিল লাজুক, একটু অন্তর্মুখী। সম্ভবত নিজের সেক্সুয়ালিটিকে অন্যদের, বিশেষত আগ্রহী মেয়েদের থেকে দূরে রাখতেই, নিজের চারপাশে একটা গণ্ডি টেনে রাখত তুহিন। তার জন্য কেউ কেউ ওকে অহংকারী ভাবলেও, সৌম্য অন্তত জানে, যে ও আদপেই ওরকম ছিল না। সৌম্যর সঙ্গে একটা সুন্দর বন্ধুত্বের সম্পর্ক শুরুতেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল তুহিনের। তবে একে অন্যের ওরিয়েন্টেশনের ব্যপারে জানতে সময় লেগেছিল আরো অনেকদিন। ... ...
ওলায় বসে জানলার কাচটা নামিয়ে দিল সৌম্য। এমনিতেই এসি ওর পছন্দ নয়, তার ওপর এই প্যানডেমিকের সময় মনে হয় একটু খোলামেলা থাকাই ভাল। সৌম্য ভেবেছিল তুহিনদের বাড়ি যেতে যেতে ও রজতের সাথে মায়ের এখানে আসার ব্যপারটা নিয়ে একটু কথা বলে নেবে। সোহিনীদেবী রজতকে চেনেন সৌম্যর বন্ধু এবং ওদের ডিটেক্টিভ এজেন্সি সৌরলোকের পার্টনার হিসেবে। তিনি জানেন, যে কাজের প্রয়োজনে রজতকে প্রায়ই সৌম্যর বাড়ি থেকে যেতে হয়। তাই সৌম্যর বাড়িতে সব সময়ই রজতের জন্য স্পেয়ার টুথব্রাশ, জামাকাপড়, ঘরে পরার পায়জামা, চপ্পল ইত্যাদি থাকে। কিন্তু রজত আর সৌম্য যে কাজের পার্টনারের থেকেও বেশি কিছু, সেটা ওঁর জানা নেই। ফলে, সোহিনীদেবী কলকাতায় এলেই রজতকে কিছু দিনের জন্য পাততাড়ি গোটাতে হয়। এবং প্রতিবারই এই নিয়ে একটা মন কষাকষি হয়। ... ...
আমার জীবনে এই শিক্ষকদের প্রচুর অবদান। সব শিক্ষকের কাছেই আমি ঋণী। তবে বিতর্ক, তাৎক্ষণিক বক্তৃতা, কুইজের জগৎ আমাকে চেনান শিশির দত্ত। সত্তর দশকে স্কুলেই ছুরি খেয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে আমার আলাপ অদ্ভুতভাবে। ইংরেজির ক্লাস। ... ...
চাষে প্রচুর বিষের ব্যবহার আর অন্যদিকে ঝড় বন্যার ফ্রিকোয়েন্সি বাড়তে থাকায় চ্যাং, বাসা, শাল, খলসি, সরপুঁটি ও জিওল রা প্রায় বিদায় নিলো। পুরানো কিছু পুকুরে কোনোরকমে বেঁচে আছে। মাগুরের দেশী জাত খুঁজে পাওয়া কঠিন। জমিদারী যুগে পুকুরের অন্য সম্মান ছিলো তার অন্যতম কারণ পুকুরের জল পানীয় হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এখন সে কাল গেছে। পুকুরের প্রতি খুব অবহেলা। পুকুর আগে পুরো সেচে দিতোনা। আর দিলেও হাপা করে কালো মাছ রেখে দিতো। এমন করে পুকুর সংস্কার করতো যে জলের মান নষ্ট হতোনা। এখন সেসব জ্ঞান গেছে। দিকে দিকে মেশিন। হাতে সময় কম। শ্রমিক কম। সবুজ বিপ্লবের পর থেকে কৃষিকে অলাভজনক করে তোলা হয়েছে বলে যুবসমাজের অনেকাংশের প্রবল অনীহা... ... ...
বলতে বলতে, কী আশ্চর্য, দাদুর গলায় আক্ষেপ ঝরে পড়ে! আগের কথার রেশ টেনে বলেন – “তবু ভাতেরও অভাব কিছু মানুষের।” কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন দাদু। তারপর আবার বলতে থাকেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে, বিশ্বযুদ্ধের পরে পরে পঞ্চাশের দুর্ভিক্ষের ছায়া বাংলার এই শস্যগোলাকেও গ্রাস করল।তারপর স্বাধীনতা লাভ। এদিকে স্বাধীনতার পঞ্চাশ -ষাট বছরেই অতিরিক্ত রাসায়নিক সার আর কীটনাশক মাটির গুণ অনেকটা নষ্ট করে দিলো। বড় বড় দেশী আর বিদেশি কোম্পানিগুলো মানুষকে কম শোষণ করল? কোটি কোটি ডলার লুঠ করে নিয়ে গেল। বেশি ফসলের আশায় চাষীরা তা দিল! কী করবে তারা? লোভের দেখানো পথের বাইরে আর কোনো বিকল্প তারা নিজেরা ভাবতে পারল না, কেউ ভাবাল না।” ... ...
মিনিট পাঁচেকের মধ্যে একটি বিশাল কাঠের বাড়ির সামনে থামার নির্দেশ পেলাম। বোঝা গেলো এটি মানুষ পরীক্ষা করার কারখানা। তার চত্বরে কয়েকটা ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। ইউনিফরম ধারি পুলিশ ইঙ্গিতে আদেশ করল গাড়ি ছেড়ে অফিসে ঢুকতে। পাঁচ ধাপ সিঁড়ি ভেঙ্গে উঠতে যাব, আমার দৃষ্টি আকর্ষিত হল বহু ভাষায় লিখিত একটি সাবধান বাণীর প্রতি। রাশিয়ান নরওয়েজিয়ান সহ সকল নরডিক, ইংরেজি, জার্মান ও ফরাসি ভাষায় লেখা আছে: এই সীমান্ত চৌকিতে কোন প্রকার ঘুষ দান করা অথবা ঘুষ দান করার প্রচেষ্টা একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। ছবি তুলতে গেলে রক্ষী বাধা দিলো। আমি পিরকোকে বললাম তার মানে এখানে টাকা দেয়া নেয়ার ব্যবসা চলে। সে চিন্তিত হয়ে বললে আমার কাছে তো রুবল নেই। ... ...
আসল কারণটা অন্য। গতকাল ওই যে খিলাফৎ কমিটির নোটিশটা ছাপানো হয়েছিল, সেটার জন্যেই বন্ধ করল কাগজটা, রাগ আর সামলাতে পারল না। আপনি কি লক্ষ্য করেছেন ওই নোটিশ কাল বসুমতীতেও বেরিয়েছে? কই, তাদের তো বন্ধ করেনি। কিন্তু, সে যাই হোক, করেছে, ভালোই হবে। আজকের কাগজের জন্যে যে এডিটরিয়ালটা লিখেছিলাম – দুর্যোগের পাড়ি – সেটা মোসলেম ভারতে ছাপিয়ে দেবার ব্যবস্থা করছি। নবযুগকে আজ জুলুম করে বন্ধ করার খবরটা নিশ্চয়ই বেরোবে দুয়েকটা অন্য কাগজেও। যারা এতদিনেও নবযুগ পড়েনি, বাংলা খবরের কাগজের সেই পাঠকদেরও নবযুগের ব্যাপারে কৌতূহল বাড়বে। এখন যতদূর তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের কাগজটা আবার বের করা চাই। আমার তো মনে হয় একটু কষ্ট করে হলেও ওই দুহাজার টাকা আজই জমা দিয়ে দেওয়া উচিত। ... ...
আর ছিল চাঁদা মাছ। মাথায় পাথর থাকতো। থাকতো তারার চিহ্ন। আর ছিল পুঁটি। নানা রকম আকারের। বড় বা মাঝারিগুলো পদোন্নতি পেয়ে আলাদা হতো চুনোমাছ থেকে। পুঁটি মাছ ভাজা, চচ্চড়ি, ঝাল, টক--সব ভাবেই খাওয়া হতো। আর দেদার হতো পুঁটি শুঁটকি। সেগুলো ক্যানেলের ধারে ক্যানেলের পাড়ে বেশি হতো। আশ্বিন কার্তিক মাস জুড়ে। সারা রাত ধরে লোকে ক্যানেলের পাড়ে সাপের ভয় এড়িয়ে আড়া বসাতো। রাতে আড়া পাহারা দিত। তাতে শোল, চ্যাং, ল্যাঠা মাছও পড়তো্। চ্যাং বোড়া বলে একটা সাপ ছিল বিষাক্ত। চ্যাং মাছের মতোই দেখতে। আমি ভয়ে কোনোদিন খাই নি। সাপের মতো দেখতে ভেবে ল্যাঠা মাছও খেতাম না। শোল মাছ দেখি শহরে খুব দামি। ... ...
আজ ২০২২ সাল, ঝড় বন্যায় বিধ্বস্ত সুন্দরবনের চাষবাস পশুপালন নিয়ে নতুন ভাবনা চলছে। গরু পোষা ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে। এখন তাই গাড়োল ভেড়ার নাম উঠে আসছে খুব। সে এই সুন্দরবনের জলবায়ুতে সবচেয়ে উপযুক্ত। দু একটা NGO এসব ভাবছে। কিছুদিন পর দূর থেকে বিশেষজ্ঞ নিয়ে তারা হাজিরও হবে কিন্তু সুন্দরবনের মাটিতে বছরের পর বছর পশুপালন করে মণি যে অভিজ্ঞান লাভ করেছিলো তা আর আমরা পাবোনা। মণি আজ থেকে কুড়ি বছর আগে একপাল গাড়োল ভেড়াই পালন করেছিলো! ... ...
বুড়ি জানে হাতে একটু টাকা রাখতে হয়। এদিকটা না দেখলে হবেনা। গঞ্জনা জুটবে, না খেয়েও মরতে হতে পারে। ক্রয়ক্ষমতাই তো ক্ষমতা এখন! বুড়ি বোঝে। এদিকটা না সামলালে চলবেনা, অরণ্যের জীবন তো আজ আর পাওয়া যাবেনা। তাই সে এটুকু করে। বাদবাকি সবসময় তুমি দেখো, বুড়ি আর প্রকৃতি। বুড়ি যেনো কথা বলে, "কীগো কেমন আছ তোমরা সবাই? আমার মন ভালো নেই। বাঁশবাগানে চ্যাং মাছ নেই। খালে শাল মাছ নেই। প্যাঁচার ডাক শুনতে পাইনা। শেয়ালরা কেউ নেই।" ... ...
মিষ্টির রসে ডুবে থাকা মাছি উঠে আসতে পারে না সেই রসকুণ্ড থেকে। ডানা, পা, শুঁড় রসে ভারি। নিয়তির হাতে নিজেকে সঁপে দিয়ে অন্ধের মতো এদিক ওদিক ঘোরে।আয়ু থাকলে সে বাঁচে আরও কিছুদিন। কিছুদিন আরও স্বাধীনভাবে জীবনকে নেড়েচেড়ে দেখে নেয়।কিন্তু তার দৃষ্টির ঘোরাফেরা একটা নির্দিষ্ট সীমায়, জীবনকালও সেই গণ্ডির ভেতরেই সীমাবদ্ধ। অধিকাংশ মানুষের জীবনই এই। এই অঞ্চলের মানুষও তার ব্যতিক্রম নয়, বরং নারীপুরুষ নির্বিশেষে সবাই একরকম। নিশ্চেষ্ট, উদ্যমহীন।খেয়েপরে অর্থ উপার্জন করার আত্মকেন্দ্রিকতার বাইরে হাজার অপমান আর অসম্মানেও তারা বোবা। চেনা ছকের বাইরেও যে জীবনের যে একটা উদ্দেশ্য থাকতে পারে এমন কথা তারা সম্ভবত চিন্তাতেই আনতে সক্ষম নয়। ... ...