একটা ব্যাপার খেয়াল রাখবেন, টেকাপো শুধু ক্রাইস্ট চার্চ থেকে শুরু করলে তবেই পথে পড়বে, পুকাকি হ্রদ আপনি যে পথেই আসুন দেখতে পাবেন। পুকাকি থেকে ৫০ কিলোমিটার সড়কপথে মাউন্ট কুক, হাইওয়ে ধরুন। তবে পারলে আর কারও হাতে স্টিয়ারিং-এর ভার তুলে দিন, কারণ বাঁদিকে লেক পুকাকি পড়বে একটু পরেই, আর তার পর সারাটা পথ জুড়ে শুধু মাউন্ট কুক দেখতে পাবেন। সে এক অপার্থিব মনভোলানো দৃশ্য, এক গগনচুম্বী পর্বতমালা আপনার গোটা পথের সামনেটায়, একপাশে লেক পুকাকি, তারপর দু-পাশে উঠেছে অজস্র পাহাড়ের সারি, তাদের কারও কারও মাথায় বরফের চাদর, কোথাও খরস্রোতা নদী আর ব্রিজ পেরিয়ে একসময় আদিগন্ত বিস্তৃত উপত্যকার মাঝখান দিয়ে গাড়ি চলে দাঁড়াবে মাউন্ট কুক শহরের মাঝখানে। ... ...
কালিবাড়ির মোড় পেড়িয়ে বাড়ির রাস্তা ধরতেই আমার আবদার, দাদু রঙিন কাঠি লজেন্স নেবো। মোল্লা দাদুর দোকান থেকে আনারস আঁকা কাগজে মোড়ানো কাঠি লজেন্স হাতে নিয়ে দাদুকে পেছনে ফেলে আমি প্রায় দৌড়ে আমাদের তাঁতঘরের সামনে চলে আসি। ততক্ষণে প্রায় ফাঁকা আইনুল চাচার মোষের গাড়ি। দাদুকে রাস্তার কোণায় দেখা যেতেই আমি কাঠি লজেন্স মুখে পুড়ি, দাদু বস্তা আরোও আছে কিন্তু। আমি দাদুর হাত ধরে বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই বাড়ির উঠোনে মাষকলাই আর সরিষা গায়ে গা লাগিয়ে পড়ে আছে। আর বাটি ভরা মুড়ি, মুড়কি, গুড় নিয়ে আইনুল চাচা লাল বারান্দায় বসে আছে। ঠাকুমা গ্লাস ভরে চা এনে দিতেই আইনুল চাচার লাল দাঁতগুলো ঝিলিক দেয়, মা একটা পান দিয়েন। ... ...
মনে রেখো, এ এমন এক দেশ যেখানে বেশি মেধা দেখাতে যাওয়ার চেয়ে বিপজ্জনক আর কিছুই হতে পারে না। কেউ তোমাকে বুঝবে না। কেউ তোমার প্রতি সহানুভূতি দেখাবে না। সবাই মিলে তোমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। তোমাকে পিষে দলে ছিবড়া করে দিতে চাইবে। তোমার এমন হাল করবে যে, তোমার নিজের প্রতিই আর কোনো আস্থা থাকবে না। পাগল বা ভিখিরি হয়ে তোমাকে গোটা জীবন কাটাতে হবে। এখানে কম মেধা নিয়ে জন্মানো আশীর্বাদের মতোই... অচ্যুৎ লম্বা হয়ে শুয়ে বাবার পায়ে কপাল ঠেকিয়ে প্রণাম করল। ... ...
সকালের আলোয় নন্দাদেবী, ত্রিশূল অন্নপূর্ণা লালে লাল হয়ে বলে ওঠে, আজ যে হোলি। আমি অমনি শুনতে পাই পাহাড়ে ঢোলের আওয়াজ। দূর থেকে ভেসে আসছে। আজ তেওহার। এখানে বাড়ি বাড়ি ঘুরে সবাই রং মাখায়। সবাই একজায়গায় জড়ো হয়ে একে অন্যকে রং লাগিয়ে দিচ্ছে। কেউ তোমাকে জোর করে রং দেবে না। হাতে হাতে মিঠাই, আঙুর। মিঠাই-এর কথায় মনে হল, আজ হোলি। ঘরে কিছু মিছু আনিয়ে রাখা দরকার। অবিশ্যি কেই বা আসবে আমার বাড়ি। কিন্তু আয়োজনটি যে সম্পূর্ণ হওয়া চাই। যদি আমায় পড়ে তাহার মনে …। ভালো মিষ্টি কিনতে হলে আলমোড়া যেতে হবে। এই জায়গাটা তো একেবারেই গ্রাম। আলমোড়া বাজারে খিম সিং মোহন সিং রোউতালার দোকান থেকে বালমেঠাই, চকোলেট আর সিঙ্গোরি কিনে আনতে হবে। সিঙ্গোরি ভারী মজার। ... ...
হাওড়ায় এক নতুন জগতের মধ্যে এসে পড়লো যদুগোপাল। এতদিন পর্যন্ত সারিখোল গ্রাম আর নবদ্বীপের বাইরের জগৎ সম্বন্ধে কোন ধারণাই ছিলো না তার, এই তার প্রথম নাগরিক জীবন। শশধর বেদান্তবাগীশের বাড়িটি পাকা, চওড়া রাস্তার উপর ত্রিতল ইমারত। বাড়ির নীচের তলার সামনের অংশে, একেবারে রাস্তার উপর তাঁর দু কামরার চতুষ্পাঠী বা টোল। সাইনবোর্ডে লেখা শশধর শাস্ত্রীয় সংস্কৃত শিক্ষালয়। ঘর দুটোয় দুটো করে দরজা, কোনাকুনি। একটার সামনে দাঁড়ালে অন্যটা পেরিয়ে চোখ যায় না। একটা রাস্তার সঙ্গে সংযোগ করে, অন্যটা অন্দরের সঙ্গে। সেই দরজা পেরিয়ে অন্দরে ঢুকলে দেখা যাবে আরও তিনটে ঘর, সামনে টানা বারান্দা। বারান্দার সামনে উঠোন, পেরিয়ে রান্নাঘর। এই ঘর তিনটের একটা ব্যবহার করা হয় টোলের আবাসিক ছাত্রদের বাসস্থান হিসেবে, টানা চৌকিতে যেখানে শুতে পারে পাঁচ-ছ জন ছাত্র। বাকি ঘর দুটোর মধ্যে একটার ব্যবহার ভাঁড়ার ঘর হিসেবে, যে ভাঁড়ার উল্টো দিকের রান্নাঘরে ব্যবহৃত হয়। ... ...
২০১৭ সালের ঐ রায় কিন্তু মাইনিং কোম্পানিগুলিকে সতর্ক করে দিয়েছিল। ওই বিপুল ক্ষতিপূরণ উঠে এসেছিল কেবল উড়িষ্যার তিনটে জেলা থেকে, তাও শুধুমাত্র লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ আকরিক বেআইনি ভাবে নিষ্কাশনের জন্য। অন্য রাজ্যে অন্য আকরিকের জন্য এই হারে ক্ষতিপূরণ ধার্য হলে সরকারি কোষাগারে কত টাকা জমা পড়ত? এই রায় দেখিয়ে যারা ক্রমাগত বে আইনি খননে ব্যস্ত, তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা যেত না? কিন্তু গেরুয়া ভারতে তা না করে অবাধ লুন্ঠনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে। আর তা করা হচ্ছে ভীষণ তাড়াহুড়ো করে। যেন এই অতিমারির পর্দা সরে যাবার আগেই ঘোলা জলে মাছ ধরে ফেলতেই হবে। ... ...
আমি গেলেই ডাকতেন, ও খোকা, মিত্তিরবাবুর বাড়ির ছেলে না ? হ্যাঁ, বলতে তাঁর একের পর এক প্রশ্ন ধেয়ে আসত আমার দিকে। “ভাত খেয়েচ? কী দিয়ে ভাত খেলে ? মাছ খেইলে ? কী মাছ। মাছের কালিয়ায় কি ফুলকপি ছিল। টমটমের চাটনি ছিল কি ? ক্ষীর খেয়েচ কাঁটাল দিয়ে। মাংস কবে খেয়েচ খোকা…” এখন বুঝতে পারি ক্ষুধার্ত মানুষের জিজ্ঞাসা ওসব। গরিব কাহার পাড়ার মানুষের না ছিল জমি, না ছিল কাজ। অন্ন সংস্থান হবে কী করে ? ভোটো কাহার রিকশা করেছিল, তা তার নিজের না অন্য কারোর টাকায় কেনা তা জানতাম না। গ্রামের বাঁড়ুজ্যে বামুনের সঙ্গে ভোটো কাওরার খুব বিবাদ ছিল। রিকশায় চেপে তিনি এক টাকা ভাড়া হলে আট আনা দিতেন। আট আনা বাকি থাকল। বাকিটা শোধ দিতেন না। বাঁড়ুজ্জ্যে মশায়ের ছেলেদের নাম ছিল, ধরুন, অমলকিশোর, বিমলকিশোর, কমলকিশোর, কুনালকিশোর...। ভোটো কাহার কী করল, তার ছেলেদের নাম সব বদলে অমলকিশোর, বিমলকিশোর...। করে দিল। সেই নামে ডাকা শুরু করল। বাঁড়ুজ্জ্যে মশায় রেগে কাঁই। একদিন বেজায় খাপ্পা হয়ে রাস্তায় ঝগড়া, তাঁর ছেলের নামে নিজের ছেলের নাম রেখেছে কেন ভোটো ? ভোটো উদাসীন হয়ে জবাব দিয়েছিল, নাম কি কারোর নিজের সম্পত্তি। মেয়ের নামও বাঁড়ুজ্জ্যে মশায়ের মেয়ের নামে রেখেছিল, ছায়া, মায়া... ... ...
পুজোর গামছার প্রধান দুই সমস্যা ছিল তাদের দৈর্ঘ্য এবং ঘনত্বের। সবচেয়ে নিকৃষ্টমানের গামছা সাপ্লাই করা হত পুজোর সময় ব্রাহ্মণদের প্রণামীতে। সেই গামছা প্রায় মসলিনকেও হার মানিয়ে দেয়, অনেকে ভয়ে ভাঁজই খুলত না গামছার, এই যদি ফেঁসে যায়! তবে পুজোতে গামছা এক সিম্বলিক জিনিস ছিল প্রায় – ডাঁই করে রাখা গামছার উপরের কয়েকটায় কিছু সিঁদুর এবং ফুল-গঙ্গা জল পড়ত। তাদের তলার গুলো পুজো শেষ হয়ে গেলে ব্রাক্ষণ ঠাকুর নিজে গিয়ে বিক্রী করে দিয়ে আসত আমরা যেই দোকান থেকে কিনেছি। পরের বছর আবার সেই গামছা আমরা কিনতাম। ... ...
আজ খুব বেশী রান্না হবে না। দুপুরের খাওয়া সেড়ে আজ মুড়ির ধান বানা হবে যে। আজ বাজারের ব্যাগ নিয়ে কোনো রিক্সাওয়ালাও তাই আসবে না। রান্নাঘরের মাচার নীচে রাখা সবজির ধামার তলানিতে যা আছে তা দিয়েই দুপুরের পর্ব সারা হবে। ঠাকুমা কালো পাথরের বাটি হাতে বড়ঘরের দিকে যেতেই আমি পিছু পিছু হাঁটা ধরি, ও ঠাকুমা নেলপলিশের রঙটা কত সুন্দর দেখছো? ঠাকুমা পেছনে ফেরে না, ওসব রঙ ভাল না; আমার দিদি তো রঙ ছাড়াই সুন্দর। আমি থেমে যাই। লাল বারান্দায় বসে ভাবি, কাল ফেরিওয়ালা এলে সব ফিরিয়ে দেবো। ... ...
শুধুমাত্র ছবি আঁকার জোরে টাকা-পয়সা আয় করে কলকাতায় কাটিয়ে এসেছে জয়ি কয়েক মাস, শিল্পী-সাহিত্যিকদের অনেককেই চেনে সে এখন, জয়ি এখন স্বাভাবিক নেতা ওর বন্ধু-বান্ধবীদের। সবাই মিলে ঠিক হয়েছে পরের সংখ্যা থেকে শাম্ব ছাপানো হবে, আর হাতে-লেখা নয়। রাঁচি থেকে শ্যামলিমা-অরুণিমাও এলো; দুজন সম্পাদক, অরুণিমা আর জয়ি। তুলি প্রস্তাব দিয়েছিলো শাম্বর ঠিকানাটাও বদলিয়ে এখন কলকাতায় জেঠুর বাড়ির ঠিকানা দেওয়া হোক, সে প্রস্তাব নাকচ হয়ে গেলো। জয়ি বললো কলকাতার হাজারো লিট্ল্ ম্যাগাজিনের মধ্যে শাম্ব হারিয়ে যাবে, এখানকার ঠিকানাই ভালো। ... ...
তারপর প্রথম পৃষ্ঠায় সবুজ কালিতে লিখল, ‘আজ প্রথম সর্বশক্তিমানকে দেখলাম। ইনি কাউকে জোর করেন না। কারও ওপর কিছু চাপিয়ে দেন না। তাঁর কাছে গেলে তাঁর শক্তির কিছুই টের পাওয়া যায় না। তাঁর ব্যবহার অতি মধুর। এই মাধুর্য দিয়েই তিনি সবাইকে জয় করে নেন। আমাকেও তিনি জয় করে নিয়েছেন। একটা সকালেই আমার জীবন বদলে গেছে। এখন প্রতি মুহূর্তে আমার ওপরে তাঁর অপরিসীম প্রভাব আমি টের পাচ্ছি। সম্মোহিত হয়ে আছি আমি। তাঁর কাছে আমার কৃতজ্ঞতার কোনো শেষ নেই। যাদের শক্তি থাকে না, তারা প্রতি মুহূর্তে নিজেদের শক্তিকে জাহির করে। তিনি সর্বশক্তিমান, নিজের শক্তিকে তাই তিনি অনাবশ্যকভাবে টের পেতে দেন না।’ ... ...
অথচ উল্টোটাই হওয়া উচিত ছিল। মিডিয়ায় উল্টো ঘটনা দেখে আমরা অভ্যস্ত। ভরসার বিষয় মিডিয়ার বাইরেও একটা জগত আছে। বিশাল জগত। সেখানকার মানুষেরা হাজার প্রলোভন সত্বেও খুব খারাপ নন। কোন ঘটনা ঘটলেই চিকিৎসককে দলবেঁধে পেটাতে আসেন না। ক্ষতিপূরণের জন্য ঘনঘন “সিপিএ”তে কেস করেন না। ... ...
পক্ষীরাজের বয়েস হচ্ছিল। কলকব্জা গুলো বিগড়োচ্ছিল একে একে। এর মধ্যে অনিমেষ একটা বাস কিনে ফেলেছে৷ ৩বি /৩ডি ৩ডি/১ হয়ে সেই বাস আমাদের পাড়া থেকেই ছাড়ে রোজ৷ পক্ষীরাজ আর চলতে পারলো না ছিয়ানব্বুই এর গোড়া থেকেই৷ স্থায়ী ঠিকানা হল দত্তবাগান মোড় এর পেট্রল পাম্প৷ অনিমেষ ভাবে থাক ওখানেই। বিক্রী করবে না৷ কিন্তু লোক আসতে থাকে ওর কাছে। পক্ষীরাজকে স্ক্রাপ হিসেবে কিনতে চায় তারা। অনিমেষ রাজী হয় না৷ তারপর একদিন আসেন এক কালোয়ার। অনিমেষ তাকেও বলে ও বিক্রী করবে না পক্ষীরাজকে। সেই কালোয়ার ভদ্রলোক তখন এমন একটি কথা বলেন অনিমেষকে যে অনিমেষ তাঁকেই বিক্রী করে দেয় নিজের পক্ষীরাজকে। উনি বলেছিলেন - স্যার, আপনি তো এই গাড়িটাকে নিজের বাড়ির লোকের মত দেখেন। তো আপনার বাড়ির কেউ মারা গেলে কী তাকে বাড়িতেই রেখে দেন? ... ...
এই শিশুরা এখানে কেন? এদের সে এখানে আশাই করেনি। কিন্তু শিশুদের উপস্থিতি তার ভালোলাগল। শিশুরা থাকলে সে সবসময়ই নিরাপদ বোধ করে। মা আর বুড়ো অভিনেতা থাকলেও। মঞ্চে অভিনয় করার সময় এবং অভিনয় নিয়ে বইপত্র ঘাঁটার সময়ও সে একইভাবে নিরাপদ ভাবে নিজেকে। কিন্তু বাকি প্রতিটি মুহূর্তে কেমন একটা নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি হতে থাকে তার। সে কিছুতেই স্বস্তি বোধ করে না। কিছুতেই নিজেকে বয়স্ক লোকেদের একজন ভাবতে পারে না। বিশেষ করে শক্তি ও ক্ষমতার সামনে কেমন যেন গুটিয়ে যায়। এখনও গুটিয়েই ছিল। কিন্তু শিশুদের উপস্থিতি সমস্ত জড়তা থেকে মুক্তি দিয়ে স্বচ্ছন্দ ও সাবলীল করে তুলছিল তাকে। ... ...
এই পরিস্থিতির সাথে আমি আগেও পরিচিত। আমাদের আর একজন গৃহ সহায়িকা অঞ্জুদিকে পাশের পাড়ার এক বাড়িতে বলেছিল, 'তুমি ডাক্তারবাবুর বাড়িতে কাজ করো। ডাক্তারবাবু রোজ জ্বরের রোগী দেখছেন। ওই বাড়িতে কাজ না ছাড়লে আমাদের বাড়ি আর কাজ করতে পারবে না।' অঞ্জুদি আমাকে হেসে বলেছিলেন, 'বললুম, আপনাদের কাজটাই তাহলে ছেড়ে দিই। তবে আপনারা জ্বর হলে কোথায় যাবেন? ডাক্তার কি দেখাবেন না?’ ... ...
পবিত্র পরিচয় করিয়ে দিলো, এই আমিনুলদা, বিপ্লবের ভার বহন করতে করতে চিঁড়ে-চ্যাপ্টা হওয়ার যোগাড়; আর উজ্জয়িনী, উজ্জয়িনী ভৌমিক, এত বড় নামটা এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে, সাবজেক্টিভ আর অবজেক্টিভ কণ্ডিশন মিলে গেলেই ওজনদার নামটা ত্যাগ করে বিপ্লবকে নিয়ে নেবে মাথায়। আমিনুলদা, আমাদের নতুন কমরেড সোমেশ্বর, সোম বলে ডাকতে পারো, ফাটাফাটি কবিতা লেখে। লাল-টালের ছিটে আছে, রক্তপাতও ঘটাচ্ছে একটু একটু, আর এই ওর বন্ধু স্বরাজ। একে একে বিভিন্ন কলেজের কিছু কিছু ছেলেমেয়ে আসতে শুরু করলো, আড্ডা শুরু হলো, একটু-আধটু কবিতা, গান, আর তার পরেই জোর তর্ক। এ তর্কে যোগ দিতে পারলো না সোমেশ্বর, বিষয়টা প্রায় অজানাই ওর। তেনালী নামের কোন একটা জায়গায় কম্যুনিস্ট পার্টির লোকজনরা কিছু একটা মীটিং করেছে, সেই মীটিং নিয়েই তর্ক। ... ...
ঠাকুমা তাড়াহুড়ো করে উনুনে নিরামিষ কড়াই বসায়। তাতে সর্ষের তেল, আর কালোজিরা ফোড়ন। এরপর সবগুলো শিম পড়ে কড়াইয়ে। হলুদ আর লবণ সেই কচি শিমে পড়তেই তাদের রঙগুলো আরোও সবুজ হয়ে ওঠে। এরপর লম্বা ফালি করে রাখা আলুও ঢেলে দেয় ঠাকুমা কড়াইয়ে। অল্প সময় ঢেকে ঢেকে সেই শিম আর আলু মজায় ঠাকুমা। শিম আর আলুগুলো মজে আসতেই চন্দনের মতো মিহি করে বাটা সর্ষে আর কাঁচামরিচ বাটা পড়ে তাতে। এরপর একটু সেই সর্ষে বাটার বাটি ধোয়া জল। ... ...
সবে দোকানের ঝাঁপ খুলেছি। ঝিলমিল ঝিলমিল প্রজাপতি রোদ্দুর মিছিল করে দোকানে ঢুকে পড়ল আমার কফির দোকানে। আমিই মালিক আমিই বারিস্তা। আমার তো পুঁজি খুব কম। ছোট্ট দোকান। তবে জায়গাটা এক্কেবারে মোড়ের মাথায়। মোড়ের মাথা মানে চারদিক থেকে ঢালু পাথর বাঁধানো রাস্তা উঠে এসে এখানে মিলেছে। একটা দামাল ঝামড়া বেদানা গাছ। তার ঠিক পাশটায়। সেদিক থেকে মোটামুটি জমজমাট। এখন সবে ঠান্ডা পড়তে শুরু করেছে। আমি কফির মেশিন গুছিয়ে রাখছি। ক্যাকটাসগুলো জানালার কাছে রেখে দিচ্ছি। বোগেনভিলিয়া লালে লাল হয়ে আছে আমার দোকানের কাচের দরজার ওপর। আমি হাট করে দরজা খুলে রেখেছি। রোদ মেখে ফুলের একটা লালচে রং আমার লালসাদা চেক চেক কফিটেবিলের নকশা বুনছে। আন্দালুসিয়ার সেভিয়াতে বরাত জোরে একটু দোকানের ব্যবস্থা হয়ে গেল কোনোমতে। সে আর-এক গপ্প। পরে বলবখন। ... ...
আমরা, পাড়ার বন্ধুরা বেনারস গিয়েছিলাম চুয়াত্তর সালে। প্রায় এগারোজন। ফেরার সময় টাকাপয়সা শেষ। মোগলসরাই থেকে হাওড়া - দিল্লি জনতা এক্সপ্রেসের জেনারেল কামরায় ফিরছি। মোগলসরাই পেরিয়েই এক মোষ কাটা পড়লো ট্রেনে। ট্রেন আর চলেই না। জল ফুরিয়ে গেছে। প্রচন্ড গরম। কামরাটা ফুটছে গরমে। গার্ডসাহেব বললেন ঘন্টা দুয়েকের আগে ছাড়বেনা ট্রেন। আমাদের বললেন - মাঠ পেরিয়ে সামনের গ্রামে চলে যান। জল পেয়ে যাবেন। গাড়ি ছাড়বেনা। নিশ্চিন্তে যান।আমরা তো চললামই। আমাদের সংগে আরো জনা পঞ্চাশ লোক। সবার হাতে ওয়াটার বটল। ... ...
এই রিপোর্ট তৈরি করার পথে অনেক বাধা এসেছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে আমরা এইসব তথ্য পেয়েছি। তাঁদের নাম আমরা প্রকাশ করতে পারব না, কারণ তা অনৈতিক হবে। কিন্তু এই রিপোর্ট তৈরি করতে গিয়ে যে ইঙ্গিত আমরা পেয়েছি, তা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। আমরা যা বুঝছি তার সারকথা হল—‘এখানে ধর্মীয় মেরুকরণ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে, যার ফলে যে-কোনো সময় আবার দাঙ্গা লাগতে পারে।’ ... ...