ভারতে যখন সুলতানী যুগ, তখনও পৃথিবীর বৃহত্তম গম্বুজ ছিল ১২৮ অব্দে নির্মিত রোমের প্যান্থেওন। দ্বিতীয় বৃহত্তম গম্বুজ ছিল ইস্তানবুলের আয়াসোফিয়া (তখন গীর্জা)। আয়াসোফিয়ার গম্বুজ ইঁটের। প্যান্থেওন ইঁটের গম্বুজ ছিল না, কংক্রীটের, তবে একই পদার্থবিদ্যার নিয়মে তৈরী। প্যান্থেওনের সমতুল্য মাপের গম্বুজ ভারতে তৈরী হয় অনেক পরে- সপ্তদশ শতকে- সেটিও একটি সমাধি, যার কথা আমরা পরে বলব। প্যান্থেওনের আরএকটা বিস্ময়কর ব্যাপার হল, এটিই এই বিশ্বে একমাত্র বাড়ী যা টানা ১৯০০ বছর ধরে সক্রিয়ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে- আগে রোমান মন্দির ছিল, পরবর্তীকালে গীর্জা। ... ...
সতীনাথ কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপর বললেন, আমি কলেজে ফিলসফি পড়তুম। প্রথম যখন হেগেল-মার্কস পড়েছি, আমরাও মনে মনে মার্কসকে শ্রদ্ধা করেছি; তোর এখন যে বয়েস, এ বয়েসে হয়তো এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা বেঁচে গিয়েছিলুম, মার্কসিস্ট হওয়ার কথা ভাবিওনি। কেন জানিস? নৈতিক সংঘাত। আমাদের আজন্ম শিক্ষা নাস্তিক মার্কসের মেটিরিয়ালিজ্ম্ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলো আমাদের। তোদের তো আমি সেভাবে মানুষ করতে পারিনি। এই তো, এখনই সন্ধ্যা-আহ্ণিক বন্ধ করে দিয়েছিস, বাইরে কার হাতে কী খেয়ে বেড়াস আমি ভয়ে জিজ্ঞাসাই করি না। আমি এখনো বেঁচে আছি, তা সত্ত্বেও পৈতেটা পর্যন্ত ফেলে দিয়েছিস তুই, যদুগোপাল ন্যায়রত্নের পৌত্র ! ... ...
বিশ্বরূপা থিয়েটারের সেই বাড়ি জুড়ে ছিল শিশিরকুমারের স্মৃতি। আমি দেখেছি কী অসম্ভব শ্রদ্ধা করতেন অভিনেতারা, কলাকুশলীরা শিশিরকুমারকে। শিশিরকুমারের দুই খাস অনুচরকে আমি দেখেছি। একজন তাঁর খাস চাকর রামচরণ। আমরা বলতাম রামচরণদা আর একজন তাঁর খাস ড্রেসার গোবিন্দ অধিকারী। আমাদের গোবিন্দ কাকা। এমনই প্রভাব ছিল শিশিরকুমারের যে বিশ্বরূপার তদানীন্তন মালিকদের দুজন, দক্ষিণেশ্বর সরকার এবং রাসবিহারী সরকারকে সকলে বলতেন মেজবাবু আর ছোটবাবু। বড়বাবু? নৈব নৈব চ। সেটা একমাত্র শিশিরকুমারের প্রাপ্য। প্রত্যেকদিন, কেউ না কেউ একবার শিশিরকুমাররের নাম নিতেনই। একটা শ্রদ্ধার জায়গা, সেই সময়েই আমার মনে ঢুকে গেছিল সে সব শুনে। ... ...
ঠাকুমাকে পেছনে ফেলে আমি দৌড়ে নামি কাঠের দোতলা থেকে। সিঁড়ির মাথায় দাঁড়িয়ে সঞ্জীব কাকু। বুকের কাছের আদর্শলিপি ধরে আমাকে ইশারায় ডাকে, কই স্লেট নিয়ে আয়। আমি দৌড়ে গিয়ে দাদুর রেডিও'র পাশ থেকে স্লেট হাতে নিয়েই কাকুর সামনে গিয়ে দাঁড়াই, আমি সব স্বরবর্ণ লিখতে পারলে সন্দেশ বিস্কুট দেবে তো? ঘাড় নেড়ে 'হ্যাঁ' বলে সঞ্জীব কাকু বড়ঘরের মেঝেয় পাটি পাড়ে। সন্দেশ বিস্কুট দেবো, তার আগে সবগুলো স্বরবর্ণ লিখে শুদ্ধ উচ্চারণে আমাকে শোনাতে হবে। আমি দেরী না করে পাটিতে বসেই কালো স্লেট সাদা দাগে ভরিয়ে তুলি। আর মুখে বলি, অ আ ই ঈ উ ঊ ঋ ৯(লী)। দেখেছো সঞ্জীব কাকু আজ কিন্তু ৯ (লী) লিখতে ভুল করিনি। ... ...
আমরা এক সচেতন প্রয়াস-এর পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গে বিগত চার বছরে রামনবমী উত্তর পর্বে সাম্প্রদায়িক হিংসার স্বরূপ বুঝতে বিভিন্ন জনপদে তথ্যায়ন করা হচ্ছে। ২০১৮-২০২০ এই তিন বছর আমরা উত্তর ২৪ পরগণা জেলার ভাটপাড়ায় ক্ষেত্র গবেষণা চালিয়েছি, ইতিমধ্যে তার প্রতিবেদন প্রকাশিত। সেই ধারাবাহিকতায় তেলেনিপাড়া হোল দ্বিতীয় প্রতিবেদন। ... ...
আট নম্বর তার আসলে একটি মানসিকতা, একটি মানসিক গঠন বলতে পারেন। কিউয়িদের মানসিক গঠন বোধহয়। খুব সামান্য জিনিসপত্র দিয়ে যতটুকু কাজ সারার সেরে নেওয়ার ক্ষমতা। এই জায়গাটাতে আমি আমাদের ভারতীয় মানসিকতার মিল খুঁজে পাই, আজকাল আবার তাকে অনেকে “জুগাড়” (ইং: Jugaad) নামে অভিহিত করে থাকেন। তবে কিউয়ির ‘Number eight mentality’ আর জুগাড় ঠিক একও নয়। সেভাবে দেখলে আট নম্বর তার একটা আট-গেজ বা চার মিলিমিটার বেড়ের তার বই কিছু নয়, এমনকি ১৯৬৭ সালের আগে অবধি (যে বছর বার্ট মানরো বোনেভিল ফ্ল্যাট রেস জিতে রেকর্ড গড়লেন) সে তার এদেশে আমেরিকা থেকে আমদানি করা হত। এদেশ যেহেতু অনেকটা কৃষি আর পশুপালনের ওপর আর্থিক ভাবে নির্ভরশীল, জমির বেড় দেবার জন্যই সে তার ব্যবহার করত লোকে। সেখান থেকে আট নম্বর তারের বহুধা ব্যবহারের গল্প এতটাই যে সে লোকসংস্কৃতির জায়গা নিল কীভাবে? ... ...
ইন্দ্র বিশ্বাস রোডের বাসাবাড়ি ছিল প্রায় এক মেসবাড়ি, জংশন ষ্টেশন। তখনো পূর্ব বঙ্গের লোকের আসায় বিরাম নেই। এপারে এসে আমাদের ফ্ল্যাটে সাময়িক আশ্রয় নিয়ে বাসা খুঁজে কাজ খুঁজে চলে যেতেন। অত ভীড়ে পড়ব কোথায় ? কে পড়া দেখায়? সকলেই কথা বলছে, হাসছে, গল্প করছে। ক্লাস নাইনে সায়েন্স পেলাম। নাইন থেকে টেনে উঠতে গিয়ে সেকেন্ড কলে পাস করলাম। খুব খারাপ। ভয়ে আমার বউদির ভাই গটুদা, যে দিল্লি থেকে পাস করে কলকাতায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ত আমাদের ফ্ল্যাটে থেকে, এক বুদ্ধি দিল। প্রগ্রেস রিপোর্টের নম্বরের কালি ব্লেড ঘষে তুলে বেশি নম্বর লিখে দেওয়ার কাজ দুজনে মিলে করলাম। এবং ধরা পড়ে গেলাম বাড়িতে। ... ...
স্কুলে যেতে শুরু করলো সতীনাথ, মহা উৎসাহে। বাবার টোলের মতো আসন পেতে বসতে হয় না সেখানে, চেয়ার-টেবিল-বেঞ্চি-ডেস্কের ব্যবস্থা। স্যররা চকখড়ি দিয়ে দেয়ালে টাঙানো ব্ল্যাকবোর্ডে লিখে লিখে পড়ান, সমস্ত ক্লাসের ছেলে একসাথে দেখতে পায় সে লেখা। টিফিনের ছুটিতে দৌড়োদৌড়ি-খেলাধুলো হয়, খুবই মজা। অনেক কিছু নতুন নতুন শিখেছে সে, কিন্তু বাড়িতে শেখাবার কাউকে পাওয়া যায় না। বড়দিকে পড়তে বললেই রান্নাঘরে মায়ের কাছে পালিয়ে যায়, ছোড়দির সাথে খুব ভাব তার, ভাইকে খুশি করার জন্যে খাতা পেনসিল নিয়ে পড়তে বসেও সে, কিন্তু কী বোকা ! এতদিনেও ঠিক ঠিক মতো এ-বি-সি-ডি শিখতেও পারলো না। দশ বার দিন পর পর ফুলকাকা আসে খড়গপুর থেকে, তাকেই সতীনাথ পড়ায়, সে শিখেও যায় চটপট। ... ...
রবীন্দ্রনাথ আমাদের বিশ্বকবি শুধু নন, এই মহামনীষীর লেখার সূত্রে আমরা অনেকেই জগৎ চিনেছি। অথচ কী আশ্চর্য, রবীন্দ্রনাথ পড়লে আপনার কখনও মনেই হবে না নিউজিল্যান্ড বলে কোনো কহতব্য দেশ আছে, বা সেদেশে ইংরেজ বাদে আর কেউ থাকে, বা আর কোনো পুরোনো সভ্যতা ছিল যার সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল। প্রকাশিত রবীন্দ্ররচনাবলি ঘাঁটলে নিউজিল্যান্ডের মাত্র একটি উল্লেখ পাবেন ইংরেজের কলোনি প্রতিষ্ঠার সূত্রে একটি প্রবন্ধে। অথচ দেখুন, রবীন্দ্রনাথের সময়, তাঁর বাল্যকালে বহু ভারতীয় তথা বাঙালি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে পাড়ি জমিয়েছেন, নানা অবস্থায়। রবীন্দ্রনাথ কি অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের কথা জানতেন না? রবীন্দ্রনাথের সমসাময়িক ক্যাথারিন ম্যানসফিল্ড (তখন ইংল্যান্ডে থাকতেন), নিউজিল্যান্ডে-জাত লেখিকা, রবীন্দ্রনাথ কি তাঁর কথা জানতেন না? নাকি মনে করার মতন কেউ নন বলে মনে করেননি? ... ...
আজ এক ভদ্রলোককে তিনজন যুবক পাজাকোলা করে আনল। সঙ্গে একজন সদ্য যুবতী। ভদ্রলোকের মেয়ে। সে শুধু বলছে, 'ডক্টর, আগে আমার বাবাকে দেখুন। খুব সিরিয়াস অবস্থা।' জিজ্ঞাসা করলাম, 'হয়েছেটা কি?' কিছুতেই বলতে চায়না। শুধু বলছে, 'জ্বর এসেছিলো। তারপর সিরিয়াস হয়ে গেছে।' অবশেষে কাগজপত্র ঘেঁটে বার করলাম তিনদিন আগের করোনার রিপোর্ট- পজিটিভ। বললাম, 'একি, একে এভাবে চেম্বারে নিয়ে এসেছেন কেন? আর আপনারা জড়াজড়ি করে যেভাবে আনলেন, তাতে তো আপনাদেরও করোনা হবে।' যুবক তিনজন হতবাক হয়ে আমার দিকে তাকাল। 'করোনা?? কিন্তু ওযে বলল..' বললাম, 'এনাকে বাঁচাতে হলে হাসপাতালে ভর্তি করতেই হবে। এই দেখুন অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৮২% এ নেমে গেছে। শিগগিরী একে এম্বুলেন্সে তুলুন।' কিন্তু এম্বুলেন্সে তোলার জন্য কেউই এগিয়ে এলো না। বস্তুত ওই তিন যুবককে আর খুঁজেই পাওয়া গেল না। ... ...
কেন, কী ভাবে ওখানে থাকে, ওর চাকরি এখানে কোন্ সূত্রে হলো, সবটা শুনে হালদার বাবু বললেন, তাহলে তো প্রথমেই আপনার শিফ্ট্ করা দরকার। ওখানে থাকবেন কেন? এখন তো আপনার এনটাইট্ল্মেন্ট ডী-ওয়ানে। দাঁড়ান, আমি দেখছি, বলে একটা ফাইল নিয়ে আসেন হালদার বাবু। উল্টে-পাল্টে বললেন, তিনটে কোয়ার্টার খালি আছে ডী-ওয়ানে, তেইশ নম্বর, একচল্লিশ আর আটাত্তর। আজ যাবার আগে আমার কাছ থেকে চাবি নিয়ে যাবেন তিনটে কোয়ার্টারের, দেখে নিন তিনটেই, বলে দেবেন কোন্টা পছন্দ। রিপেয়ার-পেন্টিং সব করিয়ে দেব তিন-চার দিনের মধ্যে। এই সপ্তাহেই শিফ্ট্ করে নিন, আমি কন্ট্রাক্টরের সঙ্গে কথা বলে রাখবো, গাড়ি-টাড়ি নিয়ে চলে যাবে, ওর লোকজনরাই সব গুছিয়ে গাছিয়ে দিয়ে আসবে। ... ...
একটা নতুন দেশে। বুখারা থেকে বদায়ুন। ইউরেশিয়ার স্টেপ অঞ্চল থেকে হিন্দ। হেরাট, কাবুল, কান্দাহার, গজনি, লাহোর। ক্যারাভান আর ভ্রমণকারীদের জন্য সেটাই ছিল নিরাপদ রাস্তা। তারা আরব তুর্ক সম্প্রদায়ের মানুষ। হিন্দ-এ এসে জুলেইখা তুর্ক দাস সুলতান ইলতুতমিসের নাম শোনে। ওই যাযাবর তুর্ক থেকেই এসেছেন সুলতান। কঠিন জীবন নতুন নয় জুলেইখার কাছে। যাযাবর তুর্ক কষ্টসহিষ্ণু। মধ্য এশিয়ার যাযাবর গোষ্ঠী হিন্দ-এ ঢুকে যতই সুস্থির জীবনকে ভালোবাসেছে ততই মেয়েদের লড়াক্কু ভাবটা ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে গেছে। ইলতুতমিসের মেয়ে রাজিয়ার মধ্যে জুলেইখা সেইসব যোদ্ধা আমাজনদের শেষ ছায়া দেখতে পান। মেয়েদের তিনি দাপিয়ে বেড়াতে দেখেছেন, তারা যুদ্ধ করত, পুজোর পুরুত হত, দলের নেত্রী হত। ... ...
পঁচাত্তরে চাকরী পেলাম আমি। বন্ধুদের মধ্যে সবচেয়ে শেষে। উনআশি তে বিয়ে করলাম শম্পাকে। আশীর মাঝামাঝি মনে হয়। তখন আমাদের ফ্লাটেই আড্ডা মারতাম সবাই। এক রবিবার সকালে হঠাৎ ঘনঘন "পেটো"র শব্দ। একেবারে আমাদের ফ্লাটের সামনে। রাস্তার ধারের ঘরে বাবা থাকতেন। স্পিন্টার ঢুকে এল ঘরে। বাইরে থেকে চিৎকার করে কে বললো - জানলা বন্ধ করে দিন। আমাদের ফ্লাটে তখন বন্ধুরা সবাই। বেশ কিছুক্ষন পর অবস্থা শান্ত হলে বেরিয়ে শোনা গেল মিল্কডেয়ারীর ভাঙা বোতল আর স্ক্রাপ কে পাবে তাই নিয়ে দু দল কংগ্রেসী দের মধ্যে ঝামেলা। তখন বোতলে দুধ দেওয়া হত। বড় বড় দুধের গাড়ি বেরতো ভোরের আলো ফোটার আগেই। ... ...
আমি ঝুরিভাজার ঠোঙাটা সেই বারান্দায় রেখেই বাড়ির ভেতরে ঢুকি, ঠাকুমা আমাকে খুঁজছিলে কেন? বাড়ির উঠোনে ক'খানা ধামায় ভরা আধা ভানা ধান। ক'দিন আগেই মাদলা গ্রাম থেকে হিজলদিঘি, কাদম্বিনী আর ঝিঙেশাইল ধান এসেছে। এক রোদ দেওয়া ধানগুলো ঠাকুমা কালথেকেই ঢেঁকিতে ভানছে। আজ শেষবার ধান ঢেঁকির গড়ে পড়বে। চালের গায়ে লেপ্টে থাকা শেষ ধানের পরতটুকু উঠে গেলেই ধবধবে সাদা চাল ঠাকুমার মাটির ডোলে জায়গা করে নেবে। ঢেঁকিতলা পরিষ্কার করতে করতেই ঠাকুমা উত্তর দেয়, সকালের ভাত খেয়েই বেরিয়েছো দিদি; কোথায় ছিলে? আহ্লাদী আসকারার আভাস পেয়ে আমি পায়ে পায়ে ঠাকুমার কাছে যাই, ও ঠাকুমা শংকর জ্যাঠার দোকানে আর কাঠি বিস্কুট আসবে না, জানো? ... ...
তরঙ্গার বিদায়গাথা শুনতে পেয়ে সমুদ্রের দেবতা টাঙারোয়া জেলি ফিশ, সমুদ্রের ফেনা, আর সমুদ্রের শৈবালকে পাঠিয়ে দিলেন শিশুটিকে রক্ষা করার জন্য | তারা তাকে নিয়ে গেল শিশুটির পূর্বপুরুষ টামানুই-টে-রা’য়ের দেশে | সেখানকার লোক শিশুটিকে বাঁচিয়ে তুলল। তারপর টামানুই মাউইকে অদেখা জগতের কত রহস্যই না শেখালেন। মাউই পাখিদের সঙ্গে কথা বলতে শিখল, পাখিরা তাকে দিল ওড়ার ক্ষমতা। মাছেরা তাকে দিল শ্বাস, মাছেদের সঙ্গে সে সাঁতার কেটে বেড়াত। হাওয়া তাকে দিল স্বর, মাটি তাকে দিল আপন পরিচয়, তারারা তাকে দিল দিকনির্ণয়ের ক্ষমতা, আর আকাশের কাছে সে পেল উচ্চাভিলাষ। যখন সে বড়ো হল, একদিন টামানুইয়ের সঙ্গে তার যুদ্ধ হল, সে-যুদ্ধে তার বজ্রের মতন দণ্ড দিয়ে সে আঘাত করল টামানুইকে, টামানুই পড়ে গেলেন। এখন মাউই হল নেতা। তখন টামানুই মাউইকে বললেন, “দ্যাখো, তুমি তো পৃথিবীকে টাঙারোয়ার দেওয়া উপহার। এবারে তুমি নিজেকে নিজে খুঁজে পাও, যাও বেরিয়ে পড়ো, সর্বত্র তোমার নাম প্রচারিত হোক মাউই-টিকি-টিকি-আ-তরঙ্গা বলে।” ... ...
লকডাউনের প্রথমদিকে রোগীর চাপ কম ছিলো। একটা যুদ্ধ যুদ্ধ আবহাওয়া ছিলো। খারাপ লাগছিলো না। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে তত অবসাদে ডুবে যাচ্ছি। করোনার বাড়বাড়ন্ত অবসাদকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ এক মহা জ্বালা। যুদ্ধে গো হারান হেরে গেছি। তবু যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হচ্ছে। রোজই একাধিক পরিচিত চিকিৎসকের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাচ্ছি। একাধিক চিকিৎসক মারাও যাচ্ছেন। যে কোনো কারণেই হোক মৃত্যুহার আমাদের মত খুপরিজীবী চিকিৎসকদের মধ্যে অত্যন্ত বেশি। চিকিৎসক মৃত্যু হাফসেঞ্চুরি পেরিয়েছে। তার মধ্যে অন্তত চল্লিশ জন প্রাইভেট প্রাকটিশনার। সাধারণ মানুষের মধ্যে করোনায় মৃত্যু হার ২% এর কম, আর খুপরিজীবী চিকিৎসকদের মধ্যে ২০% এর বেশি। ... ...
পরলোকের জীবনকে পান-ভোজনের মাধ্যমে উদযাপনে বিশ্বাস করত এট্রাস্কানরা, তাই কফিনের ঢাকনা আর দেয়ালচিত্র দুই জায়গাতেই এই ছবি। যৌনতা ও নাচগানের দেয়ালচিত্রও সমাধিগৃহে থাকত। দুই, নারী-পুরুষের বৈষম্যও এট্রাস্কান সমাজে কম ছিল। কীভাবে বোঝা যায়? এই ধরনের পানভোজনের দৃশ্যে, গ্রীক সংস্কৃতিতে নারী-পুরুষকে কখনওই একসাথে দেখা যেত না। গ্রীক নারী ছিল মূলতঃ অন্তঃপুরবাসিনী- রাজনীতি ও সমাজে তার ভূমিকা ছিল সীমিত। অতএব গ্রীক কুমোরশিল্পে গোষ্ঠীগত পানভোজনের দৃশ্যগুলোতে পুরুষেরাই একে অপরের সাথে থাকত। রোমানরাও এই ব্যাপারে গ্রীকদের থেকে খুব আলাদা ছিল না। অন্যদিকে এট্রাস্কানদের পানভোজনের দৃশ্যে নারী-পুরুষ একত্রে সামাজিকতা করত। ... ...
সেই প্রথম চিত্রকরের ঘরে প্রবেশ। রঙের ভিতরে প্রবেশ। তাঁর সেই ঘরখানিতে ছিল যেন রঙিন বাতাস। আমাদের বন্ধুর দাদা শ্যামল বরণ বালক লাল্টু ওই ঝিলের জলে ডুবে গিয়েছিল ক’বছর আগে, তার নামে একটি পাঠগার করব, শুধু ছোটদের বই থাকবে সেখানে, তিনি যদি একটি ছবি এঁকে দেন বা পোস্টার। তিনি তো এঁকে দিলেন, পয়লা বৈশাখের সকালে এসে উদ্বোধন করলেন সেই পাঠাগার। আমাদের সঙ্গে মিশে গেলেন বালকের মতো। সেই আমার প্রথম আড্ডা বড় মানুষের সঙ্গে। ... ...
দরবেশ শাহ্ হেমন্তকে দেখে খুব খুশি, ওর ধারণা ছিলো হেমন্ত বুঝি স্টীল প্লান্টেই চাকরি করছে, সেরকমই তো কথা ছিলো, তাই বুঝি যোগাযোগ রাখার সময় পায় না। জয়মালিকাকে দেখে অবাক ও, হেমন্তর মেয়ে এত বড়! তারপর অবিশ্যি হিসেব-টিসেব করে বললো, না এমনই তো হবার কথা! ও যে নিজেই বুড়ো হয়ে গেছে সেকথা ওকে মনে করিয়ে দেবার কেউ নেই, তাই ওর সব কিছু গুলিয়ে যায় এখন! কী প্রয়োজনে এসেছে জয়মালিকার কাছে শুনে ও পিঠ চাপড়ে দিলো জয়মালিকার। এ-হি তো চাই, খুব স্মার্ট তোমার মেয়ে হেমন্ত, কোথায় কোথায় সুযোগ আছে দু চোখ মেলে দেখতে জানে! এমনটা যদি তুমি হতে আমার পুরো কারবারটা আজ তোমারই হতো! ... ...
গোলেনুর দাদীর ডাকে রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়াতেই নাকে ধাক্কা দেয় বেশ অপরিচিত একটি ঘ্রাণ। উনুনের গনগনে আগুনের পাশে গোলেনুর দাদীর ফর্সা মুখটা লাল হয়ে উঠেছে। কালো লোহাড় কড়াইয়ের বলক আসা জলে ডুমো করা কাটা ওলকচু ফেলেই গোলেনুর দাদী আমার দিকে এগিয়ে আসে। ঠাকুমার জন্য কয়েকটা কাঁচামিঠা আম রাখছি, নিইয়্যা যাস। আমি ঘাড় ঘুড়িয়ে গোলেনুর দাদীর ঘর লাগোয়া আমগাছটার দিকে তাকাই। আমার চোখ আটকে যায় বারান্দায় জলচৌকিতে বসে থাকা মানুষটার সাথে। লম্বা জোব্বা পড়া মানুষটির দাড়িগুলো কী সুন্দর মেহেদী রঙা। লোকটির পাশে বসে সুমী পোড়াদহের গল্প শুনছে, জানো বু' পোড়াদহে কত্ত বড় মেলা হয়? কত্তরকমের মিষ্টি পাওয়া যায়, জানো? সেসব মিষ্টি কত্ত বড় হয় দেখবা? দু'হাত প্রসারিত করে মানুষটি দেখায় মিষ্টির বিশালতা। দাদাজান, পুতুল পাওয়া যায় না? বড়-কনে পুতুল? ... ...