লোকটির প্রশ্নগুলো কিছুই বুঝতে পারছিল না নিমাই। দুর্বোধ্য, অব্যক্ত একটা যন্ত্রণা হচ্ছিল তার ভেতরে। জেরার পর জেরায় খুবই ক্লান্ত বোধ করছিল। তীক্ষ দৃষ্টিতে শুধু তাকিয়ে ছিল সার্টিফিকেটটার দিকে। আর কান পেতে শুনছিল গির্জার ঘণ্টাধ্বনি। এই শব্দটি ওর খুব প্রিয়। গির্জার ফ্রেস্কোগুলোও খুব সুন্দর। কালই একবার গিয়ে দেখতে হবে। শুধু একবার যদি ওই ধুলোয় ধূসর হয়ে যাওয়া কাগজটা ওর হাতে দিত লোকটা। খুব যত্ন করে আগে ধুলোগুলো পরিষ্কার করত সে। তারপর সেটাকে ল্যামিনেশন করে নিজের আলমারির লকারে রেখে দিত। কিন্তু লোকটা এখনও দিচ্ছে না কেন? কেন ওইভাবে ধরে আছে কাগজের টুকরোটা? বিশ্রিভাবে ওর চোখের ওপর নাচাচ্ছে? চোখের ইশারায় ওকে ধুলোমাখা মেঝেতে হাঁটু মুড়ে বসতে আর ক্ষমা চাইতে বলছে? নিমাইয়ের হাতের মুঠো শক্ত হয়ে যায় ... ...
সময় জয়মালিকার কাছে বড় দামি। দু বছর তো এই কলেজেই সময় নষ্ট হয়ে গেলো তার, বিকাশদার কথা শুনে। শুনছে বিকাশদাও নাকি ছেড়ে দেবে, সরকারি কলেজে জয়েন করবে নাকি। কিন্তু জয়মালিকার তো সময় নেই, সে অপেক্ষা করতে চায় না। সে শুধু চায় আরও বেশি বেশি লোক তার ছবি দেখুক। মিসেস পাণ্ডে সেই স্কুলের সময়েই বলেছিলেন সে আঁকে অন্য সবায়ের মতো নয়, ঠিক নিজের মতো কোরে। তার মানে তার নিজের স্টাইল তো তৈরি হয়েই গেছে, তাহলে আর কেন কলেজে যাওয়া ! জয়মালিকা ভেবেছিলো অন্তত একজন তাকে ঠিক ঠিক বুঝবে। তাই শক্তিদার সমর্থন চেয়েছিলো ও। কিন্তু শক্তিদা, শক্তিদার মতো মানুষও, ঐ বিকাশদার মতোই কথা বললো। সব আর্টেই অনুশীলন করতে হয় রে জয়ি, কঠোর অনুশীলন, বলেছিলো শক্তিদা। কিন্তু কেন? কেন সবাইকেই অনুশীলন করতে হবে? ... ...
আমার ক্যাম্প অফিসে। করণ্ডায়। মানুষের মুখের কথা বলি। যে মুখগুলি মনে আছে তার ভিতরে প্রধান মুখটি নিখিল প্রধানের। নিখিলবাবুকে আমি প্রথম যখন দেখি আমি তখন ২৩, তিনি ৫০। তিনি সেটেলমেন্টের ডি-গ্রুপ কর্মচারী। উপরওয়ালা স্যার, বাবুদের কাছে পিয়ন। এখন পিয়ন শব্দটি ধীরে ধীরে অবলুপ্ত হচ্ছে। কর্মচারীদের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ —চার শ্রেণীতে ভাগ করে সেইভাবেই অভিহিত করা হয়। এর অন্যথা হলে প্রতিবাদ হয়। প্রতিবাদ এবং সংগঠিত থেকে তাঁরা কিছুটা সম্মান আদায় করে নিয়েছেন। তবে এখনো সামান্য হোমগার্ড জেলার এস,পি, র বাড়ির বাজার করেন কি না, জামা কাপড় কাচেন কি না, ফাই ফরমাস খাটেন কি না জানি না। হয়তো বদল হয়েছে, হয়তো বদল হয়নি, এ ঘটনা সামান্য কনস্টবলের মুখে শোনা। ... ...
আমরা এক সচেতন প্রয়াস-এর পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গে বিগত চার বছরে রামনবমী উত্তর পর্বে সাম্প্রদায়িক হিংসার স্বরূপ বুঝতে বিভিন্ন জনপদে তথ্যায়ন করা হচ্ছে। ২০১৮-২০২০ এই তিন বছর আমরা উত্তর ২৪ পরগণা জেলার ভাটপাড়ায় ক্ষেত্র গবেষণা চালিয়েছি, ইতিমধ্যে তার প্রতিবেদন প্রকাশিত। সেই ধারাবাহিকতায় তেলেনিপাড়া হোল দ্বিতীয় প্রতিবেদন। ... ...
জায়গাটার কথা ভাসা ভাসাই বলেছিলেন গণেশদা, কম কথা বলেন; খোঁজ কোরে কোরে জয়ি পৌঁছিয়ে গেলো একদিন জি-সি-লাহার দোকানের উল্টোদিকে ন্যূয়র্ক সোডা ফাউন্টেন রেস্টোর্যান্টে। এখানে ওখানে নানা টেবিলে ছড়িয়ে বসে আছে অনেক চেনা মুখ। দাড়িওয়ালা যে ভদ্রলোক এগজিবিশনে ওর ছবিটাকে বাঁধিয়ে আনতে বলেছিলেন দেখা গেলো তিনি বসে আছেন গণেশদার সাথে। জয়ির অভ্যেস আছে বিনা আহ্বানে বসার, কফি হাউজে এরকম বসেছে বিস্তর, বসে গেলো। ... ...
পেট্রাতে এখন গেলে যা দেখা যায় তার নব্বই শতাংশই হল সমাধিসৌধ। আর এগুলো সবই পাহাড় কেটে তৈরী- অজন্তার মত। আর বেশীরভাগই বাড়ীর মত দেখতে লাগলেও এদের খুব বেশী আভ্যন্তরীন অংশ নেই। অর্থাৎ সামনেটা বাড়ীর মত, কিন্তু ভেতরটা একটু এগোলেই নিরেট পাথর। মূলতঃ গ্রীক শৈলীতে তৈরী- কিছু মেসোপটেমীয় প্রভাব আছে। তবে মূল গ্রীক শিল্পে এই ধরনের পাহাড় কেটে তৈরী বাড়ী বিশেষ নেই। পেট্রার আগে এই ধরনের পাহাড় কেটে তৈরী সমাধি মিশর, তুরস্ক আর ইসরায়েলে দেখা যায়। ... ...
বাড়ি ফিরেছি একটু রাতে। বেরিয়েছিলাম আবার আড্ডা মারতে। ফিরছি যখন তখন দেখি লকাই( আমার লেখায় আগে এসেছে লকাই) সব ছোট ফ্লাগগুলো এক জায়গায় জড় করছে। ওপর থেকে ছিঁড়ে পড়েছে যেগুলো। বাকীগুলো ছিঁড়ে নামাচ্ছে। কেউ দেখছে না। আলো ঝলমল আমাদের পাড়ায় একটু দুরেই হুল্লোড় করছে কিছু ছেলে। আমি লকাইকে বললুম - কেন জড় করছিস এগুলো? কাল বেচে দিবি বলে? লকাই ফুল লোডেড থাকে সব সময়। কালও ছিল। কেঁদে ফেললো লকাই। বললো - কাকু, কাল এগুলো পা দিয়ে পাড়িয়েই সবাই যাবে। আমার দেশের ফেলাগের একটা দাম নেই। ... ...
আমার শীতলপাটি মাড়িয়ে চলে যায় মনিপিসি। হাতে কোহিনূর ফুপুর রেখে যাওয়া সেই কাঁসার গ্লাস। যতই গোলেনূর দাদীর বাড়ির ভেতর ঢুকতে থাকে মনিপিসি, ততই আবছা হতে থাকে তার ছায়া। একটি জামবাটি ভরা মেশানো মুড়ি আর মুড়কি। দাদুর জন্য মায়ের হাতে। আর প্রায় তার সাথে সাথেই ঠাকুমার হাতে গুড়ের চা। শীতল পাটিতে আমার পাশেই জমে ওঠে সবার চা খাওয়া। ... ...
আমরা এক সচেতন প্রয়াস-এর পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গে বিগত চার বছরে রামনবমী উত্তর পর্বে সাম্প্রদায়িক হিংসার স্বরূপ বুঝতে বিভিন্ন জনপদে তথ্যায়ন করা হচ্ছে। ২০১৮-২০২০ এই তিন বছর আমরা উত্তর ২৪ পরগণা জেলার ভাটপাড়ায় ক্ষেত্র গবেষণা চালিয়েছি, ইতিমধ্যে তার প্রতিবেদন প্রকাশিত। সেই ধারাবাহিকতায় তেলেনিপাড়া হোল দ্বিতীয় প্রতিবেদন। ... ...
অমলকান্তি সব শুনে বলে উঠল, “আমি শুধু একটা কথাই বলব, কাজের সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে এবার থেকে বাবাকে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে, সার্টিফিকেট দেওয়ার মতো কাজ। তিনি প্রাজ্ঞ, মহৎ, দূরদর্শী ও বিচক্ষণ, গোটা দেশ একথা জানে। তিনি যে এই ধরনের হঠকারিতা করতে পারেন না, সেকথাও সবার জানা। তিনি এখন অন্যের ওপরে নির্ভরশীল। কিন্তু সেই নির্ভরতা যেন তাঁর পক্ষে আশঙ্কাজনক না হয়ে ওঠে, সেটা আমাদের সবাইকেই দেখতে হবে...” ... ...
আমি গেছি দূর মফঃস্বলে চাকরি করতে। তখন যা দিন, মোবাইল ফোন কেন সেই মফঃস্বলে ইলেকট্রিকের আলো ছিল না, পোস্ট অফিস ছিল না। চিঠি ফেলতে ভিন গাঁয়ে যেতে হত। চিঠি দিলে একমাস আগে কলকাতা পৌঁছত না। বাস থেকে নেমে এক ঘন্টা পঁয়তাল্লিশ মিনিট হাঁটতে হত অফিস মানে হল্কা ক্যাম্পে পৌঁছতে, এমনই সে জায়গা। ছোটনাগপুরের মালভূমির লেজা সেই অঞ্চল। তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্রের একটি কন্যা। বয়স তার আড়াই তিন। সে তার ঠাকমাকে বলল, ছেলেধরা নিয়ে গেছে বাবুজিকাকাকে। হারিয়ে গেছে, আর ফিরবে না। শিশু যা শোনে তাই বলে। তাকে যা বলে ভয় দেখান হয়, সেও তাই বলে ভয় দেখায় ঠাকমাকে। মা তখন পিতামহী। মায়ের ঘুম আসে না। ছুটিতে বাড়ি এলে জিজ্ঞেস করে মা রাধারানি, কী খাই, কেমন জায়গা। ডাল আলু সেদ্ধ আর কুঁদরি পোস্ত ? মাছ হয় না? মাংস ? সকাল বিকেল মুড়ি, কেন পরোটা লুচি করে দিতে পারে না ? জানেই না মা ওসব। আমাদের দেশটা আসলে খুব গরিব। গ্রামটা আরো গরিব। শুনতে শুনতে মা চুপ। বুঝতে চাইছিলেন দেশটাকে আমার চোখ দিয়ে। ধরা গলায় বললেন, তুই বরং চাকরি ছেড়ে দিয়ে আয়, অন্য কিছু দেখ। না, চাকরি আমার কাছে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে, দেশটাকে আমি চিনতে পারছি দিনে দিনে। মা চুপ করে থাকলেন, অবশেষে বললেন, দেশ সব জায়গা থেকে চেনা যায়। জমি মাটি মানুষ না চিনলে বড় হওয়া যায় না। মা বলল, বড় হবি তুই ? কী করে, প্রমোশন কবে হবে ? প্রমোশন না মা, লিখতে চাই, গল্প লিখছি, শুনবে? আমি কী বুঝব, কিন্তু তুই যদি নিজে বুঝিস হচ্ছে, তবে ছাড়বিনে, ধরে রাখবি, ছাড়বিনে একদম। মন্ত্র পেয়ে গিয়েছিলাম। ... ...
আমি খেজুর চাচার তাঁতঘর পাড় হয়ে থানার ঘাটের দিকে হাঁটা শুরু করি। তাঁতঘরে একজন দু'জন তাঁতী এরইমধ্যে চলে এসেছে। মাকুরের খটাস খটাস শব্দ সকালের বাতাসে কেমন উদ্দেশ্যহীনভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। আমি মনিপিসির জন্য আর দেরী করি না। দ্রুত হাঁটতে থাকি থানার ঘাটের দিকে, মনিপিসিটা কিচ্ছু বোঝে না। ডলি ফুপুদের বাড়ি থেকে গন্ধরাজ ফুল নিতে হবে তো আমার। কিন্তু থানা ঘাটের মোড় আসতেই মনিপিসি গলা চড়ায়, মনি ওদিকে না, আগে কলমি ফুল নিয়ে আসি চল্। আমি চোখে প্রশ্ন নিয়ে তাকাই। উত্তরে শুধু মনিপিসিকে অনুসরণ করার ইঙ্গিত পাই। আমি পায়ে পায়ে থানা ঘাটের ঠিক পাড়ে এসে দাঁড়াই। ওটা নদী নাকী পুকুর আমি ঠিক বুঝতে পারি না। ... ...
সবচেয়ে আকর্ষণীয় ইভেন্ট স্থানীয় মহিলাদের বেকিং কম্পিটিশন। তা নিউজিল্যাণ্ড বেকিং এর সবচেয়ে তুখোড় উদাহরণ পাভলোভা আর পাই। আমাদের যেমন রোল, পাটিসাপটা, সিঙারা, যাকে সাদা বাংলায় পথের খাবার বা স্ট্রীট ফুড বলা যেতে পারে, নিউজিল্যাণ্ডের স্ট্রীট ফুড বলতে যদি কিছুকে নির্দেশ করতে হয়, সে হবে পাই | যে কোন মাংস (বীফ, পর্ক, ল্যাম্ব, মুরগী, মাছ, মায় মেটে) এবং শাকসবজি আর মিশিয়ে রান্না করে পাইয়ের খোলের মধ্যে ভরে দিন; তারপর তার ওপরে চীজ কুরিয়ে বা কেটে পরতে পরতে রাখুন, এবার পাইয়ের ময়দার খোলের “ঢাকনা” বন্ধ করে দিন, বন্ধ করার পর ২০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে ৩০ মিনিট রেখে বেক করুন | পাই তৈরী। ... ...
আরও কুড়িটা নাম। এবারও নিমাই বাদ। কুড়িবার যেন ছুরি মারল কেউ। নিমাইয়ের দিকে তাকিয়ে ছিল ধ্রুপদী। বেশ ভালোই প্রাপ্য জুটছে তার। অন্ধকারে ভালো দেখা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে, নির্বিকারভাবে তাকিয়ে রয়েছে মঞ্চের দিকে। ধ্রুপদী আগেই জানত। তবু একদম নির্বাক, স্তব্ধ হয়ে গেছে সে। দেশের পঁচিশজন তরুণ অভিনয়-প্রতিভার নাম! অথচ কোথাও নিমাই নেই! অচ্যুৎ সবার প্রথমে। এত এত সাধনা। কোনো স্বীকৃতি নেই তার? নিমাইয়ের পাণ্ডিত্যের কোনো শেষ নেই। ত্যাগ ও মগ্নতারও। অবিরাম তার সাধনা! এ দেশে তাহলে সাধনার জায়গা কোথায়? আস্তাকুঁড়ে? দেশের সেরা প্রতিভাদের আস্তাকুঁড়ে ফেলে দিলে সেই দেশের নিজেরও আস্তাকুঁড় হতে বেশি সময় লাগে না! জোরে চেঁচিয়ে প্রতিবাদ করতে ইচ্ছা করল ধ্রুপদীর। নিমাইয়ের জন্য নয়। নিজের জন্য। তার নিজের হাত-পা কেউ যেন বেঁধে দিয়েছে। কে সে? ফিসফিস করে নিজেকেই শোনালো ধ্রুপদী, নিয়তি! ... ...
আমরা এক সচেতন প্রয়াস-এর পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গে বিগত চার বছরে রামনবমী উত্তর পর্বে সাম্প্রদায়িক হিংসার স্বরূপ বুঝতে বিভিন্ন জনপদে তথ্যায়ন করা হচ্ছে। ২০১৮-২০২০ এই তিন বছর আমরা উত্তর ২৪ পরগণা জেলার ভাটপাড়ায় ক্ষেত্র গবেষণা চালিয়েছি, ইতিমধ্যে তার প্রতিবেদন প্রকাশিত। সেই ধারাবাহিকতায় তেলেনিপাড়া হোল দ্বিতীয় প্রতিবেদন। ... ...
মধ্য হাওড়ার এই অঞ্চলটিতে এক কামরার নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার অনেক। বেশির ভাগই কিঙ্করদের মতো দেশভাগতাড়িত, কিন্তু কিছু কিছু এমন পরিবারও আছে যারা হাওড়া-হুগলি-মেদনিপুরের গ্রাম থেকে আসা। এদের অল্প-স্বল্প জমিজমা আছে, এক সময় হয়তো বেশিই ছিল, কমতে কমতে এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে যে জমির আয়ে সংসার এখন আর চলবার মতো নয়। গ্রামের এই নিম্নবিত্ত ভদ্রলোকশ্রেণীর মানুষরা এখন শহরে ছোটখাটো চাকরি-বাকরি করে, তাদের আর্থিক সামর্থে ছোট কোন স্বয়ংসম্পূর্ণ বাড়ি বা অধুনা গজিয়ে-ওঠা কোন ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়া চলে না, অতএব বাঙাল-রিফিউজিদের সঙ্গে ঝগড়া-সমঝোতা করে ভদ্রলোকদের জন্যে চিহ্ণিত নাগরিক দোতলা-তিনতলা পাকাবস্তিই এদেরও আবাসস্থল। ... ...
আমি একটি গল্প লিখে নিয়ে নকুলদাদের কাছে গেলাম। নকুলদার বস্তিবাড়িতে রবিবার সকালে সাহিত্যের আড্ডা হত। সেই আড্ডায় একদিন সুবিমল মিশ্র এলেন। দুটি গল্প শোনালেন। আমি শিহরিত। তখন তাঁর হারাণ মাঝির মড়া… প্রকাশিত হয়েছে একাল প্রকাশনীর বই হিশেবে। একালের আড্ডায় আর আসতেন গল্পকার, ডাক্তারির ছাত্র কৃষ্ণ মণ্ডল, দিলীপ সেনগুপ্ত, অজু মুখোপাধ্যায়, যিশু চৌধুরী, আমার স্কুলের বন্ধু রণজিৎ দত্ত এবং অতি নবীন লেখক তপনজ্যোতি মিত্র। রণজিৎ এবং তপনজ্যোতি যাদবপুরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ত। এই সময়ে আমি একটি গল্প লিখেছিলাম মৃত্যুর প্রতীক্ষায়। কিছুই হয়নি এখন বুঝি। সেই গল্প ছাপাও হয়নি। এরপর ‘একটি আত্মহত্যার বিবরণ’। সেই গল্প অনেকের পছন্দ হয়েছিল। ছাপা হলো একাল পত্রিকায়। ... ...
আগের পর্বের আলোচনাটা অনেক বেশী দিল্লী-কেন্দ্রিক ছিল। এই পর্বে বিজাপুর, লক্ষ্ণৌ এবং মাইসোরের আলোচনা হল। এবার বলব বাংলার কথা। অর্থনৈতিকভাবে মুঘলযুগে বাংলার বিশেষ স্থান ছিল, কিন্তু যে কারণেই হোক, বাংলায় খুব আড়ম্বরপূর্ণ সমাধি নেই। বাংলার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সমাধিসৌধ হল ত্রিবেণীর জাফর খাঁ গাজী মসজিদ, মালদহের একলাখি সমাধিসৌধ আর ফতে খাঁর সমাধিসৌধ, এবং মুর্শিদাবাদের আজিমুন্নিসা বেগমের সমাধি। এর মধ্যে প্রথম দুটি সুলতানি যুগের, শেষের দুটি মুঘল বা মুঘল-পরবর্তী যুগের। প্রথমটি সমাধির থেকেও দরগা এবং মসজিদ হিসাবে বেশী পরিদৃষ্ট হয়। দিল্লীতে আমরা যেরকম দেখেছি, বাংলায়ও একইরকম বিবর্তন দেখা যায়। ... ...
মাওরী লোককথা অনুযায়ী আকাশপিতা রাঙি আর ধরিত্রীমাতা পাপার সন্তানেরা আমাদের খাবারের সংস্থান করেছেন, খাবার “উপহার” দিয়েছেন | তাঁদের আকাশরূপী সন্তান টানে আমাদের পাখী দিয়েছেন খাবার জন্য; সমুদ্র, আরেক সন্তান, যার নাম টাঙারোয়া, দিয়েছেন মাছ, হাউমিয়া দিয়েছেন জঙ্গলের বুনো খাবারদাবার, আর রঙো দিয়েছেন চাষবাস করে উৎপন্ন খাবার। সেকালে মাওরীরা প্রধানত তিন ভাবে রান্না করত, ঝলসে বা গ্রিল করে, সেদ্ধ করে, আর মাটির নীচে আগুণ জ্বালিয়ে উমু বা হাঙি পদ্ধতিতে। ... ...
১৯৭১-এ ভয়ের বাতাবরণ কেটেছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে। বরুণ সেনগুপ্ত লিখলেন সাতক্ষীরে অভিযানের কথা। আমরা সাতক্ষীরের লোক। বাড়ির সকলে হুমড়ি খেয়ে বরুণ সেনগুপ্তর প্রতিবেদন পড়লাম। বাঙালি লড়াই করছে স্বাধীনতার জন্য। ছেড়ে আসা মাটি, দেশ, গ্রাম, ভিটে কেমন ছিল তা আমার অজানা ছিল। ১৯৬৫ সালে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের পর দুই দেশে বৈরিতা আরও বেড়েছিল। পূর্ববঙ্গের খবর আসা ক্রমশ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। খবরের কাগজ এবং রেডিও খবর দিতে লাগল। পাকিস্তান ভেঙে যাচ্ছে। উদ্বাস্তু স্রোত আসছে সীমান্ত পার হয়ে। আমি তখন কী করব কী করব ভেবেই দিন কাটাচ্ছি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শামিল হতে চাই। একটা দেশ স্বাধীন হবে। সেই দেশটি আমার পিতৃকুল, মাতৃকুলের দেশ। ... ...