শ্যামলীদের নিয়ে হিমাংশু শোভাবাজারে পৌঁছল রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ। বাতাস থেকে শীতের হিম পড়ছে। ট্রামলাইন ধরে একটু হাঁটার পর ডানদিকের গলিতে ঢুকবে। গলির মুখে পৌঁছয়নি এখনও। একটা সোনালী রঙা কুকুর একলা বসে আছে। বসে থাকার ভঙ্গী ঠি ক রাস্তার আর পাঁচটা কুকুরের মতো নয়। কেমন যেন অসহায়, উদ্বিগ্ন, বিভ্রান্ত , ব্যথিত দৃষ্টি। মোলায়েম সোনালী পশমি লোমে ঢাকা শরীর। কান দুটো একটু ঝোলা। কৌতূহলবশত হিমাংশু ওর একদম সামনে গিয়ে দাঁড়াল। পেডিগ্রি কুকুর। হিমাংশু কুকুর চেনে। ... ...
গোপাল সাঁতরা চামড়ার থলেতে করে হরেক যন্ত্রপাতি নিয়ে সাতসকালে বেরোয়। তার দু:খু অনেক। কিন্তু শোনবার লোক নেই। সে কাজে যাবার পথে সকালবেলায় একবার করে মহাদেববাবুর উঠোনে ঢুঁ মারে। সেখানে তখন ত্রিকালসহ মহাদেব এবং দীনবন্ধু বাবু চা পানে ব্যস্ত।সে এসে সেখানে থলে নামিয়ে রেখে উবু হয়ে বসে।তার দু:খু অনেক। তিন তিনটে সোমত্ত ছেলে। সবাই বেকার। কেউ এক পয়সা কামায় না। দুটো বারো তেরো বছরের মেয়ে।বেওয়ারিশ যত্র তত্র চরে বেড়াচ্ছে। এত বড় সংসারের ভার তার একার ঘাড়ে। এই বুড়ো বয়সে সে আর খেটে খেটে পারে না। ছোটখাট কলকব্জা যন্ত্রপাতি সারিয়ে বেড়ায় সে। একরকম ফ্রি-ল্যান্সার মিস্ত্রি বলা যায়। বড় হাঁফ ধরে আজকাল। ... ...
এদিকে এক পাহাড় । ওদিকে এক পাহাড় । মাঝখানে নদী। সেই নদীতে বাঁধ দিয়ে তৈরী হয়েছে সরন্তি ড্যাম। শাল, পলাশ, শিশু, সেগুনের জঙ্গলে ঘেরা এই আদিবাসী গ্রাম। ফাগুন চোত মাসে রুখা সরন্তি সেজে ওঠে পলাশের সাজে। লাল মাটির পাশে সবুজ ধানক্ষেত।ওই ধানক্ষেতের ওপারে চার্চের জমি। সেন্ট অ্যাগনেস চার্চ। বেশ বড়সড় ইমারত। জমির চারপাশে দেড় মানুষ সমান লোহার রেলিং। গেট খুলে ভেতরে গেলে বেশ শান্তির পরশ লাগে যেন। পুব দিকে শাল সেগুনের বনের মাথা টপকে সূয্যির আলো পড়ে সকালবেলায়, চার্চের দুধসাদা দেয়ালের গায়ে। ওখানে মূল দরজার ওপরে প্রভু যীশুর শ্বেত পাথরের পূর্ণ মূর্ত্তি । মূর্ত্তির নীচে লেখা, “ হে ভারাক্রান্ত ও পরিশ্রাম্ত পথিকেরা আমার নিকট আইস আমি তোমাদিগকে বিশ্রাম দিব “ ... ...
রাস্তার ধারে বারোতলা ফ্ল্যাট বাড়ি উঠছে। গলির মুখে বালি স্টোন চিপস স্তুপাকার। পাশ কাটিয়ে একটা সাইকেল বের করতেও কসরত করতে হচ্ছে। গলির মধ্যে গাড়ি টাড়ি ঢোকা তো দূরের ব্যাপার।সজলবাবু পাড়ার পুরনো বাসিন্দা। বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে দাঁড়িয়ে ছিলেন গৌরের কচুরির দোকানের পাশে। অনিন্দ্য ঘোষ শালপাতার ঠোঙা থেকে তরকারি মাখিয়ে কচুরি মুখে পুরে চিবোচ্ছিল পরমানন্দে ... ...
থার্ড গিয়ারে ধুমায়িত হুল্লোড় আই পি এল। কে কাকে কিনল যেন সাড়ে এগারো কোটিতে, ঝটতি পড়তি খেলুড়ে বাছারাও পাঁচ ছ কোটিতে মারে মুঠোভরা খাবলা।
ঋষভের পুলকার গড়িয়ে যায় / মরণ নালায়, / ব্যস্ত মালিক, রাশভারি স্কুল, ঠেকা মারা অদলি বদলি ড্রাইভার,
দশদিন বাকি আর.... সামনের উঠোনটা বুড়োমানুষের মতো ঘ্যানঘেনে মেঘলা কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঝিমোয় খালি , সেলের গরাদে এসে পড়ে বারোমেসে ভাঙাচোরা রোদ্দুর, গেটের মুখে একটা সেপাই হাতের তেলোয় পরম যত্নে খইনি ডলছে,
চারিদিকে শুধু জল আর জল। দোতলা বাড়ি জলের তলায়। বাড়ি তেতলা হলে শুধু গলাটুকু বাইরে। দোতলা তেতলা এখানে আর কোথায় । যা দেখা যাচ্ছে তা অনেক দূরে দূরে। ও..ই দূর গঞ্জে। এ তো নিকষ্য গেরাম। কুঁড়েঘরে খড়ের ছাউনি। দু চারটে ইঁটের গাঁথনির কোঠা আছে। মাথায় টিনে র বা টালির ছাউনি। সব ডুবে আছে ... ...
বাবুমশায়দের পেন্নাম । মা জননীদের গড় করি।আজ্ঞে আমার নাম গণেশ হাঁসদা। মাঠের ওপারে ওই কুঁড়েটায় আমি থাকি । ছিটবেড়ায় মাটি লেপা । পচা খড়ের ছাউনি। তেমন বরষা হলে জল বাঁধে না। ঘর ভেসে যায়। আর ঘরে আমার কি বা আছে। একটা ছেঁড়া চাটাই – খেজুর পাতার, আমি নিজেই বুনেছিলাম। একটা মাটির হাঁড়ি। খুব সাবধানে নাড়াচাড়া করি। ভেঙে গেলে মুশকিল। ওটাতেই ভাত রাঁধি কিনা। যেদিন চাল জোটে আর কি। রোজ তো আর জোটে না। আর একটা টিনে র শানকি আছে। ভাত জুটলে ওটায় ঢেলে খাই। ... ...
ওসেইফ আর আজরার দুজনেরই বাড়ি শোপিয়ান থেকে বাইশ কিলোমিটার দূরের এক গ্রামে। গ্রামের নাম গুলসুমা। তাদের গাঁওয়ের মধ্যে দিয়ে ঝিলমের জল বয়ে গেছে। খুব শান্ত তীর - ঠিক ঝিলমের জলের মতোই ।সেখানে শোপিয়ানের মতো হালচাল নয়। মিলিটারিতে ছেয়ে থাকে না পথঘাট। লেড়কা লেড়কিরা নিয়মিত স্কুল করে। পড়াই লিখাই করে। সেখানে অবশ্য কাশ্মীরি ভাষার কোন জায়গা নেই। শুধু হিন্দী বা ইংরেজী ইস্তেমাল করা হয়। আব্বা আম্মা ক্ষেতি করে। গাঁওয়ের কেউ কেউ সোনমার্গে থাকে। ওখানে ডাল লেকে শিকারা চালায়। দুএকজনের হাউস বোট আছে পারিবারিক সূত্রে। ভাড়া খাটায়। এখন অবশ্য মার্কেট ডাল। হাল হকিকৎ খুব খারাপ ... ...
সতর্ক থাকা ছাড়া জোটভোটের রাজনীতিতে সিপিএমের আর কিই বা করার আছে।
রোল নিয়ে বাঙালির প্রেমের শেষ নেই । কলেজ পড়ুয়া প্রেমিক , অফিসে বসে কাছে ঝাড় খাওয়া সেলসম্যান থেকে কোচিং এর কিপটে ম্যাথের টিচার সবার ই সস্তায় পুষ্টি খেয়ে সন্তুষ্টি হল রোল, বাজেট একটু বেশি থাকলে চিকেন নাহলে ডিমেই সই ...তেমন ই এক বিখ্যাত রোলের মন্দির হল কলকাতার নিউ মার্কেট এরিয়ার নিজাম । *নিজামের কাঠি রোল*মুচমুচে পরোটার ভিতরে তুলতুলে চিকেন কাবাব, পেঁয়াজ স্লাইস আর হাল্কা লেবুর রস দিয়ে মুড়িয়ে খালি মুখে তোলার অপেক্ষা ... আর পকেটেও পড়বেনা টান , অক্ষুন্ন রোলের মান কলকাতার রোল প্রেমীদের স্বর্গরাজ্য ... ... ...
কাটারির কোপ, নেমে আসা / এক অভিশাপ অতি
মানব সভ্যতার ইতিহাসে চাকার আবিষ্কার এবং তার গুরুত্ব প্রশ্নাতীত! - তাই কি? একবার ভাবুন, গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রতি বছর প্রায় ১৩ লক্ষ লোক মারা যায় এবং গাড়ি চলবার জন্য যেহেতু চাকাই দায়ী তাই চাকার ব্যবহার বন্ধ করা হোক, অন্তত লক্ষ লক্ষ লোকের প্রাণ বাঁচবে। এবার আগুনের ব্যবহার নিয়েও ভাবুন, প্রতি বছর প্রায় ২ লক্ষ লোক আগুনে পুড়ে মারা যায় - কি মারাত্মক প্রযুক্তি! এর থেকে কাঁচা শাক-সবজি, মাছ-মাংস খাওয়া খুব ভালো, বাকি পশুপাখিরা যেভাবে থাকে; মানে প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে বেচে থাকা যাবে। আপনি বাড়িতে কি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করেন? এখুনি বন্ধ করুন, একটি একটি গ্যাস সিলিন্ডার যেন এক একটি বোমা, ... ...
অবশ্যই মানুষের কারণেই প্রকৃতির এই খামখেয়ালিপনা। মানুষ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে প্রকৃতিকে বিনষ্ট করে চলেছে নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য। মানুষের চাহিদার শেষ নেই। সে বাড়ি বানাচ্ছে, ফ্ল্যাট বানাচ্ছে এন্তার। গাছ কাটা চলছে পুরোদস্তুরে। তার জায়গায় নতুন গাছ তেমন ভাবে লাগানো হচ্ছে না। মানুষ পুকুর বোজাচ্ছে। গত কুড়ি বছরে শুধু কলকাতাতেই তিরিশ শতাংশ সবুজ আচ্ছাদন গায়েব হয়ে গিয়েছে। পুকুর নালার স্বাভাবিক বহমানতা শেষ হয়ে গিয়েছে। প্রাকৃতিক নিকাশী ব্যবস্থা সব শেষ। তাই জল জমছে একটু বৃষ্টিতেই। ডাঙার তাপমাত্রা বেশি উষ্ণ হয়ে চলেছে। তাই দু তিন মাস পর পরই আসছে নিম্নচাপ ও সাইক্লোন। প্রকৃতিও প্রতিশোধ নিচ্ছে এত অত্যাচারের।। ... ...
কোন আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে ইচ্ছে গুলো-পতাকা তুলতে পারবে? প্রিয় স্বাধীনতার! খুন হতে হবেনা! তেত্রিশ বছর কাটলো-ফতোয়া জারি ছিল, ছিল না হাদি মাতার। নীল সমুদ্রে শঙ্খচিল হিতোসি ইগারাশিমৌলিক মাঞ্জার ঘায়ে ভোকাট্টা সুনীলে! কতযুগ আর মানব জমিনে মূক রবে কৃষিকত শতাব্দী রইবে ধরা রক্তবীজের দখলে?
জোরকদমে বাঙালী অবাঙালী পূজোর তোড়জোড় চলছে। কোয়ার্টারের সামনের রাস্তার পূজো নবরাত্রির পূজো। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে পূজোর প্রস্তুতি দেখা বেশ উপভোগ করছি তখন। ঐ পূজো ছিল বাঁড়ুজ্যেদের staff দের পূজো। বেশিরভাগ উত্তরপ্রদেশ বা বিহারের বাসিন্দা। একদিন সন্ধ্যায় তাঁরাও দল বেঁধে এসে নিমন্ত্রণ জানিয়ে গেলেন। অষ্টমীর রাতে অর্কেস্ট্রা হবে। 'ভাভীজী কো লে কে জরুর আইয়েগা সাহাব' --- তাঁরা বলে চলে গেলেন।মহালয়া এসে গেল। জীবনে প্রথমবার মহিষাসুরমর্দিনী ক্যাসেটে শুনলাম সেই বছর। জানতে পারলাম মহালয়া নামটি আমাদেরই, বাংলার। ওখানে 'পিতৃ মোক্ষ অমাবস্যা'। গুরুত্বপূর্ণ দিন একটি। বাচ্চাদের সব স্কুল ছুটি থাকে সেদিন। বেলা বাড়তেই আমার "একান্ত আপন শশীকলা" এক ব্যাগ নিয়ে এসে হাজির, "ভাভী, ইয়ে রখো। নবরাত্রি মে লগেগা।" দেখলাম অনেকগুলো শাঁকালু। জিজ্ঞাসা করে ... ...
নিজের ঘরে বিছানার উপর বসতে না বসতেই, পুতুল হন্তদন্ত হয়ে মুখ ভার করে বলে, 'দিদিভাই, তুমি নিশ্চয়ই বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনতে গিয়েছিলে। বাড়িতে কাউকে কিছু বলে যাওনি। আমাকে তো সাথে নিতে পারতে।'কুসুম দু'হাতে জড়িয়ে ধরেন পুতুলকে, 'নারে বোনটি, আমার যাওয়ার কোনো ঠিক ছিল না। জানালা দিয়ে হঠাৎ দেখি মানুষের ঢল, সব চলেছে রমনা রেস কোর্সের দিকে। আমি একটা ঘোরের মধ্যে বেরিয়ে পড়ি ... ...
আজকের সমৃদ্ধ ইউরোপ গড়ে উঠেছে কলোনিয়াল যুগে সারা বিশ্ব থেকে লুট করে আনা সম্পদের উপর ভিত্তি করে।,সমৃদ্ধি অর্জন করে তারা এখন দু'চারটি ইমিগ্র্যান্ট ভিসা ইস্যু করে লিবারেল সাজতে চায় আর কলোনিয়াল যুগের রক্তাক্ত ইতিহাস ধামাচাপা দিতে চায়।,কিন্তু তাদের ভেতরে সেই ঘৃণ্য বর্ণবাদ আগের মতই রয়ে গেছে। একটু সুযোগ পেলেই তা বেরিয়ে আসে।,মেসুত ওজিল একবার দুঃখ করে বলেছিলেন তিনি যখন জেতেন তখন হয়ে যান জার্মান, আর যখন হারেন তখন হয়ে যান তার্কিশ ইমিগ্র্যান্ট। বর্ণবাদী আচরণের কারণে তিনি জার্মানি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।,বিশ্বকাপে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে শ্বেতাঙ্গ হ্যারি কেইন পেনাল্টি মিস করলে ব্রিটিশরা টু শব্দ করেনি। কিন্তু ইউরোর ফাইনালে পেনাল্টি শুট আউট মিস করায় ... ...