মায়ের কথাগুলো মনে পড়ে - মোহনবাগান একটা আদর্শ, আমাদের পূর্বপুরুষদের অনেক আশা আর স্বপ্ন নিয়ে গড়া যখের ধন, ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতীক, আমাদের অস্তিত্ব। মোহনবাগানের হারজিত, আর আমাদের জেতা হারা এক। সেদিন না বুঝলেও, এবারে একটু একটু বুঝতে পারছি। মোহনবাগানের প্রথম দিকের দলের একটি নাম নিয়ে আমি খুবই আগ্রহী। ইনি কে? সেই নামটি হল দ্বিজেন্দ্রনাথ বসু। ... ...
তবে মোহনবাগানের জন্মটা কেবল বৃটিশ আমোদের অনুকরণ একথা আমার সত্যি বলে মনে হয় না, কারণ এই জন্মের সূত্রে ভূপেন বোস, সেন পরিবার ও অন্যান্য নক্ষত্রের এক বিরল সমাবেশ তৈরি হয়েছিল। মোহনবাগানের জন্মদাতারা তাঁদের জীবনের পরবর্তী অধ্যায়ে হয়ে উঠেছিলেন দেশমাতৃকার সৈনিক। কয়েকজনের কথা একে একে বলি। প্রথমে স্যার রাজেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়কে দিয়েই শুরু করি - কারণ তিনি আমার দেশের বাড়ি যেখানে, সেই বসিরহাটের লোক। রাজেন মুখুজ্যে হলেন তৎকালীন ভারতের এক যশস্বী শিল্পপতি ও সুদক্ষ ইঞ্জিনিয়ার। ... ...
মোহনবাগান ই-লাইব্রেরি ফেসবুক পেজে নবনীতা দেবসেনের একটা চমৎকার ছড়া পেলাম। "যদি মোহনবাগান জেতে,/ ঢাকঢোল আর সানাই নিয়ে / উঠবে শহর মেতে। / যদি মোহনবাগান হারে? / এক মিনিটে লোডশেডিং হয় / হৃদযন্ত্রের তারে।" ... ...
শোভাবাজারের রাজা রাধাকান্ত দেব তাঁর পালক পিতা গোপীমোহন দেবের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে ফড়িয়াপুকুরে এক বিরাট বাগান পেয়েছিলেন। সেই বাগানই মোহনবাগান, গোপীমোহনের উত্তরপুরুষের কাছ থেকে যা কিনে নেন প্রখ্যাত পাট ব্যবসায়ী কীর্তি মিত্র। তিনি ঐ বাগানে তখনকার ডাকসাইটে স্থপতি নীলমণি মিত্রকে দিয়ে নকশা করিয়ে মোহনবাগান ভিলা নামে শ্বেতপাথরের এক চোখ ধাঁধানো বিশাল প্রাসাদ নির্মাণ করেন এবং সেখানে বসবাস শুরু করেন, যদিও বেশিদিন এই প্রাসাদ তিনি ভোগ করতে পারেন নি। ... ...
ওই আবেগটা দেশভাগের পরে আরোপিত, একথাও জেনেছি। মোহনবাগান কেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই আর জাতীয়তার প্রতীক, তা একটু একটু বুঝতে শুরু করেছি। এমনকি ভবানীপুরের উত্তমকুমার আর পাবনার সুচিত্রা সেনের কালজয়ী বন্ধনের পিছনে ঐ ঘটি বাঙাল আবেগের ইন্ধন আছে, এসব জ্ঞানগর্ভ আলোচনাও পড়েছি। কিন্তু পূর্বপুরুষের ব্যাপারটা স্পষ্ট হলো আরও পরে। সে কথায় যাবার আগে আর একটা কথা বলে নিই। ... ...
যাই হোক খেলা চলছে। হাবিব, আকবর, শ্যাম - গো - ও - ও - ল। মা আমাকে জাপটে ধরে বলল, ওরে পেলের দলকে থাবড়া দিয়েছে শ্যাম থাপা। মায়ের কথা ডুবে গেল বাইরে পটকার আওয়াজে। মার মুখে এমন ভাষা আর আচরণ আমি এর আগে বা পরে কখনোই দেখিনি বা শুনিনি। মা বাগবাজারের নিবেদিতা ইস্কুলের শিক্ষিকা, সংযমী, রাশভারী। তখন অবশ্য এসব ভাবি নি। ছ বছরের আমি আর চারবছরের বোন, শ্যাম থা - পা, শ্যাম থা - পা বলে বলে তিড়িং বিড়িং নেচে নিলাম খানিকটা। রেডিওর ওধারে ইডেনেও মারকাটারি যুদ্ধ চলছে, আর এধারে দুই নারী, দুই শিশুর হৃদপেশীর কম্পন চলছে সেই যুদ্ধের তালে। একটু পরে আবার মোহনবাগানের গোল। ... ...