সুনীতি চৌধুরী ১৯১৭ সালের ২২শে মে (১লা জৈষ্ঠ্য) তদানীন্তন বাংলার কুমিল্লা জেলায় শ্রী উমাচরণ চৌধুরী এবং শ্রীমতী সুরসুন্দরী দেবীর কোল আলো করে জন্মগ্রহণ করেন সুনীতি চৌধুরী। আদি পিতৃভূমি ছিল ত্রিপুরা জেলার নবীনগর থানার ইব্রাহিমপুর গ্রামে। তিনি কুমিল্লার ফৈজুন্নেসা চৌধুরী বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী এবং শান্তি ঘোষ, প্রফুল্লনলিনী ব্রহ্ম প্রমুখ তাঁর সহপাঠী ছিলেন। বাবা সরকারী কর্মী হলেও সুনীতি ও তাঁর দুই দাদা বিপ্লবী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন এবং 'যুগান্তর' দলের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। কুমিল্লা জেলার আর এক স্বনামধন্য বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তকে আদর্শ করেই তাঁদের বেড়ে ওঠা। লাঠিখেলা, ছোৱাখেলা, রিভলভার চালানো ইত্যাদিতে সুনীতি বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। কুমিল্লা জেলার অত্যাচারী ম্যাজিস্ট্রেট চার্লস জিওফ্রে বাকল্যান্ড স্টিভেন্স ... ...
আমাদের পরাধীনতার ইতিহাস যত বড় তেমনি স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসও দীর্ঘ। কত শত, সহস্র ভারতবাসী স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তার কোনো হিসেব নেই আমাদের ইতিহাসে। প্রত্যেকেরই লক্ষ্য ছিল পরাধীন মাতৃভূমিকে শৃঙ্খলামুক্ত করা। প্রত্যেকেই তাঁদের নিজস্ব ক্ষমতা অনুযায়ী অবদান রেখে গেছেন স্বাধীনতা সংগ্রামে। আমাদের মানে প্রতিটি ভারতবাসীর অতীব লজ্জার বিষয় যে, এঁদের বেশীরভাগেরই নাম ইতিহাসের অতল গহ্বরে তলিয়ে গেছে। ইতিহাসের পাতায় তাঁদের নামটুকুও খুঁজে পাওয়া যায় না। আমরা যখন আমাদের স্বাধীনতার ৭৫ তম বর্ষপূর্তি পালন করছি বিগত এক বছর ধরে, তখন কিছু কিছু স্বাধীনতা সংগ্রামীর নাম ও পরিচয় সামনে আনছি "অজ্ঞাত স্বাধীনতা সংগ্রামী" শিরোনাম দিয়ে। এটাও এক ধরণের অসম্মান বলেই মনে হয়। ... ...
শিরোনামটা দেখেই সকলের দুটো শব্দের কথা মাথায় আসবে, দ্বান্দিকতা আর প্যারাডক্স। দ্বান্দ্বিকতার অর্থ হল, দুটি পরস্পর বিরোধী সংঘাতজনিত প্রক্রিয়া। আর প্যারাডক্স কথার অর্থ হলো, যে উক্তি আপাতদৃষ্টিতে স্ববিরোধী মনে হলেও সত্য বর্জিত নয়। এককথায় সভ্যতা শব্দটিকে বিশ্লেষণ করলে বলতে হয়, সভ্যতার ইংরেজি শব্দ হল civilization যা ল্যাটিন শব্দ civis থেকে এসেছে এবং যার অর্থ হলো, নগরে বসবাসরত কোন ব্যক্তি। অর্থাৎ মানব ক্রমবিকাশের যে ইতিহাস আমরা জানি, আদিম থেকে ক্রমশঃ গোষ্ঠীবদ্ধ জীব, খোলা আকাশ থেকে ক্রমশঃ বাসস্থান তৈরী, উলঙ্গ থেকে ক্রমশঃ নিজের লজ্জা নিবারণ করা, গাছের ফল আর কাঁচা মাংস খাওয়া থেকে ক্রমশঃ চাষ-আবাদ করে খাদ্যদ্রব্য তৈরী ও ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ, গোষ্ঠী থেকে ... ...
নতুন প্রজন্ম, দিশাহীন গড্ডালিকা প্রবাহে প্রবাহিত নতুন সমাজের প্রায় সব সদস্যই দীর্ঘদিন ধরেই নিজস্ব স্পেস চেয়ে আসছে। সংসারে বাবা, মা, ছেলে, মেয়ে প্রত্যেকে প্রত্যেকের কাছে স্পেস চাইছে। সংসারের অংশ বলেই বাকী জীবনটা সংসারের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হতে হবে, এ দর্শন আমরা মানতে পারি না, আমাদের নিজস্ব স্পেস দরকার। সংসারের কর্তার নিজস্ব স্পেস চাই, কত্রীর নিজস্ব স্পেস চাই, পুচকে-পুচকে ছেলে-মেয়েগুলোরও নিজস্ব স্পেস চাই। ফলতঃ একই সংসারের মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চারটে সংসার। বাবা-মা, ছেলে-মেয়ে কাউরির চিন্তা-ভাবনা বা মতামত মেলে না। কেউই অন্যজনের মত মেনে নিতে রাজী নয়, অন্যজনকে স্পেস ছেড়ে দিতে রাজী নয়। এ সমস্যা যে আগে ছিল না, তা একেবারেই নয়, কিন্তু ... ...
সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, এযাবৎকালের বাংলা সাহিত্যের অগ্রণী মনীষীদের অন্যতম এক ঋষি। যিনি, বাংলা সাহিত্যকে যাঁরা আঁতুরঘর থেকে টেনে এনে নিজেদের চেষ্টায় প্রাপ্তবয়স্করূপে রূপান্তরিত করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য। তিনি সরকারী চাকুরীর পাশাপাশি সাহিত্যচর্চা চালিয়ে গেছেন আজীবন। বারুইপুরের প্রশাসনিক দিকের কথা বলতে গেলে বলা যায় যে, ১৮৫৮ সালে প্রথম বারুইপুর মহকুমা গঠিত হয়। আবার ১৮৮৩ সালে সেই মহকুমা মিশে যায় আলিপুর মহকুমার সঙ্গে ... ...
বাংলা ভাষার সেরা হাস্যকৌতুক সিনেমাগুলোর অন্যতম, বহু তারকাখচিত (ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, জহর রায়, কমল মিত্র, অসিতবরণ, রুমা গুহঠাকুরতা, রবি ঘোষ, তরুণকুমার অভিনীত) "আশিতে আসিও না" সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৬৭ সালে। সিনেমাটির সেইসময়ের ঈর্ষণীয় সাফল্য এবং সফল হাস্যকৌতুক আজও আপামর বাঙালীর মনের মণিকোঠায় ভাস্বর হয়ে আছে। সিনেমার মূল উপজীব্য ছিল, সাধারণ এক মধ্যবিত্ত পরিবারের আশি বছর বয়স্ক প্রধান সদানন্দ সংসারের ... ...
বাংলার মাটি, বাংলার নদী, বাংলার শস্য শ্যামলা বসুন্ধরা, সবুজ ধান ক্ষেতের পাশ দিয়ে হেঁটে চলা মানুষটির কানে যে সুরের অনুরণন সৃষ্টি করে তা বাউল কিংবা ভাটিয়ালি। ভাটির টানে নৌকার অনায়াস ভেসে চলার কারণে উদ্ভূত অবসরে নৌকার মাঝি-মল্লারদের যে সুরচর্চা বা উদাত্ত গলার যে গান, তাই ভাটিয়ালি। অন্যদিকে বাউল গান মুলতঃ সাধন-সঙ্গীত হলেও তা ভাটিয়ালির মতোই লোকসঙ্গীতের ধারাগুলোর একটি। বাউল ও ভাটিয়ালি দুটো ধারাতেই সাধারণ লোকের সুখ-দুঃখের কথা, সাধারণ মানুষের জীবনের কথা, প্রকৃতির কথা ... ...
ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে ব্রিটিশ চলে যাওয়ার পরে ভারতবর্ষ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা দেশগুলোর স্বাধীন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব মেনে নেয় জাতিসংঘ থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রগুলো। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে এরপরে এই দেশগুলোর অন্যান্য অনেক আবশ্যিক বিষয়ের সঙ্গে প্রয়োজন হয়ে পরে রাষ্ট্রের জাতীয় সংগীতের। ভারতবর্ষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'ভারত-বিধাতা' গানটির প্রথম স্তবকটিকেই জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণ করে। হঠাৎ করেই যে গানটি আমাদের জাতীয় সংগীত হিসেবে স্বীকৃতি পেল তা একদমই নয়, এর পেছনে এক দীর্ঘ ইতিহাস আছে। গানটির রচনাকাল থেকে জাতীয় সংগীত হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া অব্দি ইতিহাসটা এইরকম:'ভারত-বিধাতা' (জন গণ মন অধিনায়ক জয় হে) ... ...
এ খেলা কেমন খেলা,জীবন ওঠে শঙ্কা ভরে।যাপন হেথায় দুর্বিষহ,গান গাইছে নাকিসুরে।ফাঁকাই থাকে খেলার মাঠ,অফিসবাড়ী ধু ধু করে।কারখানার তালা বন্ধ সব,কল গিয়েছে চাবির তরে।নারীর মান শূন্যে লুটায়,ইজ্জত গড়ায় ধুলার পরে।লক্ষ্মী কবেই হাল ছেড়েছেন,বীনাও আর নেইকো সুরে।চতুর্দিকে অসুর ও বেসুর,শুধুই ভীড় নদীর তীরে।বিসর্জনের সুরটা শুধুই,বাজছে যে ভাই শরীর জুড়ে।তবুও সবাই বলছে শুধুই,খেলা হবে, খেলা হবে।খেলার মধ্যে লাভটা কি,উন্নয়ন কিছু দেখা যাবে?নাকি, শুধুই কাকতাড়ুয়া,জমির আলে দাঁড়িয়ে রবে? ... ...
"কবে তৃষিত এ মরু ছাড়িয়া যাইব তোমার রসালো নন্দনে"। চোখ দিয়ে বারিনবাবুর জল গড়িয়ে পড়ছে, বারিনবাবুর স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে লক্ষ্য করছে। তাদের চোখও ভিজে গেছে। বারিনবাবু কিন্তু গেয়েই চলেছেন, "কবে তাপিত এ চিত করিব শীতল, তোমারি করুণা চন্দনে"। প্রতিদিনই ঠাকুরঘরে কালীমায়ের ছবির সামনে বসে বারিনবাবু শ্যামাসঙ্গীত গেয়ে থাকেন এই সন্ধ্যাবেলায়, একনিষ্ঠ ভক্ত তিনি কালীমায়ের। তবে আজকে তিনি রজনীকান্তের গান গাইছেন, যদিও এটাও সমর্পণেরই সঙ্গীত। গানের গলাটাও চমৎকার বারিনবাবুর। এইসময় তাঁর কোনো বাহ্যিক জ্ঞান থাকেনা। স্ত্রী ও ছেলে বহুবার লক্ষ্য করে দেখেছে। বাহ্য জ্ঞান তিনি হারিয়ে ফেলেন, যখন তিনি নিজেকে সমর্পণ করেন মায়ের শ্রীচরণে। আজকে তাঁর গলায় গানটাও যেন অন্যদিনের ... ...