বাঙালির আর একটা নতুন বছর শুরু হল। সকাল থেকেই শুরু মন্দিরে মন্দিরে বিশেষ পূজো, হাল খাতা, সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচিত, স্বল্প পরিচিত, আত্মীয়, বন্ধুদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় – বাংলা দূরদর্শনের নববর্ষের বৈঠক, খাওয়া দাওয়া দিয়ে। মনে পড়ছিল, ছোটবেলার দিনগুলোর কথা। ... ...
শীতের শেষে বাদামী ঝরাপাতারা বাতাসে ভেসে চলে গিয়েছিল পায়ের মল ছমছমিয়ে বনের ধারের লালমাটির পথ ধরে। বিষণ্ণতার ধূসর রঙ তখন প্রকৃতির অঙ্গ জুড়ে। রোদ্দুরের গায়ে ধীরে ধীরে এক এক পরৎ করে চড়া রঙের প্রলেপ লাগতে শুরু করবার কয়েকদিনের মধ্যেই শিমূল, পলাশের শূন্য ডালপালা ভরে উঠতে শুরু করেছে ফুলে ফুলে। কৃষ্ণচূড়ার শরীরে নরম, নতুন, সবুজ ঝিরিঝিরি পাতার আভাস। আমের বোলের মিঠে ঘ্রাণ বাতাসে। ... ...
জানলার কাঁচ ঝাপসা হয়ে আছে। অঝোরধারায় বৃষ্টি চলছে গত রাত থেকে। সন্ধ্যার একটু পর থেকেই ঝিপঝিপিয়ে শুরু হয়েছিল। রাত বাড়তেই বৃষ্টিও বাড়তে থাকল, সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া। গরম ধোঁওয়া ওঠা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বসলাম রোজকার মতোই জানলার পাশের বেতের চেয়ারটায়। পৌষ মাসের শেষের দিক। ঠাণ্ডা ছিলই। বৃষ্টিতে আরোও জাঁকিয়ে বসেছে ঠাণ্ডা। মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢাকতে হয়েছে ঠাণ্ডায়। গরম চায়ে চুমুক দিতেই প্রাণ জুড়িয়ে গেল যেন। ... ...
প্রিয়তমাসু, ভালো আছ তো? আমি ভালো আছি। আজ বড় সাধ জাগল মনের কথা লিখতে। জান? বলা নেই কওয়া নেই কাল রাতের অন্ধকারে পায়ের মল ঝমঝমিয়ে দস্যি মেয়েটা এসে হাজির হল। গতকাল দিনের ঝলমলে আলোয় কিছুই আভাস পাই নি তার আসার। বেশ চলছিল কিছুদিন ধরে ঘন সবুজ শাল, মহুয়া, আসান, ইউক্যালিপটাস গাছের জঙ্গল আর সুনির্মল আকাশের ভালোবাসার পর্ব। দূরের সবুজ পাহাড়টা, যাকে তুমি অহঙ্কারী পাহাড় নাম দিয়েছিলে, সেও বেশ চোখের নজরের আওতাতেই ছিল। শীতের রোদ গায়ে মেখে সারাদিন ধরেই চেনা অচেনা পাখিদের ডাকাডাকি, কাঠবিড়ালি র লাফালাফি। প্রকৃতি রাণীর এত রঙ এত রূপকে না ভালোবেসে তুমিও থাকতে পারতে না, আমি জানি। আর অলস দুপুরে দূর থেকে হলদে পাখির ... ...
কদিন ধরে প্রকৃতি ও সূর্যের মধ্যে বুঝি বা মান অভিমানের পালা চলছিল। আকাশে সূয্যিদেবের দেখা নেই। হেমন্তের আকাশে মেঘের আড়ালেই রয়ে গেলেন তিনি। তাই প্রকৃতির মুখ ভার। ম্লান চেহারা। সবুজ প্রকৃতিতে ধূসর মলিনতা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আকাশে মেঘের বেশ আনাগোনা চলছিল । সঙ্গে কেমন এক মন কেমন করা এলোমেলো ঠাণ্ডা হাওয়া । দুপুর গড়িয়ে বিকেলের দিকে বিরহিনী প্রকৃতির অশ্রু জল বৃষ্টি রূপে মাটির বুকে নামল। সন্ধ্যার পর থেকে আকাশ ধীরে ধীরে পরিষ্কার হতে শুরু করল। রাত বাড়তেই ঝলমলে পরিষ্কার আকাশ দেখা গেল। ভোররাতে ঘুম ভেঙে গেল। কান পেতে বাইরে পাখির ডাক শোনবার চেষ্টা করলাম। নাঃ! এখনোও তাদের ঘুম ... ...
বর্ষা যাই যাই করছে। আকাশ, বাতাস প্রকৃতিতে অদ্ভুত এক আনন্দের ছোঁওয়া জাগে যেন এই সময়। নীল আকাশের বুকে ধবধবে সাদা মেঘ দলে দলে ইতিউতি ভেসে চলেছে, কাজের শেষে ছুটি পাওয়ার আনন্দে। ধূ ধূ সবুজ মাঠ, প্রান্তরের রূপ দেখে চোখ যেন ফেরানো যায় না। রাস্তার ধার ঘেঁষা জঙ্গলে এক এক গাছের এক একরকম সবুজ সাজ। গাছে গাছে রঙবেরঙের পাখি, প্রজাপতি, মৌমাছিদের তো ব্যস্ততার শেষ নেই যেন। ঘরের কাছ দিয়ে বয়ে যাওয়া শীর্ণ নদীটির শরীরেও লেগেছে যৌবনের পরশ। শিশির ভেজা সবুজ ঘাসে সকালের প্রথম লালচে হলদে রোদ্দুরে জড়োয়ার ঝিকিমিকি।প্রকৃতির রাজ্যে পালাবদলের সূচনা হয়েছে। এমন এক সকালে বেরিয়ে পড়লাম নীলপাহাড়ের সঙ্গে আলাপের ইচ্ছা নিয়ে – ঘরের জানলা দিয়ে এতদিন যাকে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে দেখেছি।মনের ... ...
একটানা কয়েকদিন ভারী বৃষ্টির পরে মেঘমুক্ত নীল আকাশে আজ সূর্যদেব স্বমহিমায় বিরাজ করছেন। রোদ্দুরের দেখা পেয়ে প্রকৃতিতে কেমন একটা ব্যস্ততার ভাব। গাছেদের পরণে ঝকঝকে নতুন পোশাক। বুলবুলি, পাপিয়া, কুব, কোকিল, হলুদ বসন্তবৌড়ী ছাড়াও অচেনা পাখিদের প্রাত্যহিক আনাগোনা আমার ঘরের প্রায় লাগোয়া জঙ্গলে। বেশ কয়েকদিন পরে আজ তাদের কর্মব্যস্ত দিনের শুরু হল। প্রজাপতিরা তাদের রঙবেরঙের ডানায় রোদ্দুর লাগিয়ে এ গাছ থেকে সে গাছে উড়ে বেড়াচ্ছে। ... ...
সেই হল শুরু। দিনের বেলা যখন তখন কারণে অকারণে জানলার ধারে আমি। ঐ জঙ্গলের শাল, ইউক্যালিপটাস, মহুয়া, আসান ছাড়া বাকি সবই অচেনা। ভরা বর্ষায় টানা পাঁচ ছ দিন বৃষ্টি চলছেই। বর্ষাস্নাত প্রকৃতির রূপ, লাবণ্য বর্ণনা করবার ক্ষমতা আমার নেই। সবুজ যে কতরকমের হয়, তা ঐ জানলায় দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে দেখি। দেখি, শুধু দেখি। আশ মেটে না আর। কিন্তু তার দেখা পাওয়া ভার।মাঝে দুদিন ধরে বেশ গুমোট গরম। সেদিন সকাল থেকেই মেঘলা আকাশ। একটু জলো বাতাস বইতে শুরু করেছে। বৃষ্টি আসবে বোঝাই গেল। কাজের ফাঁকে গেলাম একবার ছাদে। আশায় ছিলাম তার দেখা পাওয়ার। বাতাসের জোর বাড়ছে। জঙ্গলে সাড়া পড়েছে। সড়সড়, মড়মড়..... যেন নেশায় মজেছে শাল, মহুয়া, আসান, পলাশ! পাখিরাও ব্যস্ত যার যার ... ...
প্রথম দেখা তা প্রায় বছর আড়াই এর কিছু বেশীই হবে। স্বামীর চাকরিসূত্রে বদলির ফলে নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশ, নতুন মানুষজনের মধ্যে এসে পৌঁছলাম। সরকারী কোয়ার্টার। বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকায় ঘরে একটা কেমন উদ্ভট গন্ধ আর আগের জায়গা ও পরিচিত জনেদের ছেড়ে আসার মন খারাপ নিয়ে ঘরের জানলাগুলো একে একে খুলতে শুরু করলাম। বর্ষা তখন মাঝপথে। জানলার বাইরে তখন ঘোলাটে মেঘলা আকাশ, আমার মনের আকাশেও তারই ছায়া। চারপাশে সবুজের সম্ভার। পিছনের অংশে বেশ জঙ্গলই বলা চলে। যতদূর চোখ যায় ততদূর ঘন সবুজ রঙা। দূরে কোনোও একলা অচেনা পাখির ডাক মন খারাপের মাত্রা আরোও বাড়িয়ে দিলেও বাস্তবে ফিরে আসতেই হল। আসবাবপত্র সমেত ট্রাক এসে পৌঁছেছে। চরম ব্যস্ততা। সারাদিন ব্যস্ততায় আর অন্যদিকে মন ... ...
সূর্যের প্রথম আলো সর্বাঙ্গে মেখেতোমাকে কেমন দেখায়আজও তা বলা হয় নি! বলা হয় নি কখনওঅস্তরাগের আবীর মেখে তোমার লাজুক মৃদু হাসি কেমন লাগে! দেখেছি নববরষার কালো মেঘের সঞ্চারে তোমার কৃষ্ণকলি রূপ ,ছাইরঙা মেঘের বুকে সাদা বকের দলকে।আরোও দেখেছি নীল আকাশের বুকে সাদা মেঘের ভেলায়, নদীর পাড়ের কাশফুলের মেলায় --- বলা হয় নি কখনও আমার মনের কথা। দুটি সতৃষ্ণ নয়ন খুঁজেছে তোমাকেই ,কোজাগরীর রেশমী জ্যোৎস্নায়,কুয়াশার চাদর জড়ান শীতের শেষবেলায় বা ভোরেরবেলায়---হেমন্তের বাদামী রঙ ঝরাপাতারা জেনেছিল সেকথা।ফাগুনের উত্তাল দখিনা বাতাসেপলাশ, কৃষ্ণচূড়ার লালরঙের নেশায় মত্ত তোমার আগুনঝরা রূপও --- শুধু চেয়ে দেখেছি। তবু বলা হয় নি কখনও সে কথা---তুমি সুন্দর, তুমি অনুপম--- ওগো সুন্দর! ভালোবাসি তোমায়। ... ...